আজ হঠাৎ গোলাম-বাঁদির কথাটা মনে আসল। মনে হল: গোলাম-বাঁদির বিধান আল্লাহ তাআলার অনেক বড় রহমত ছিল। কাফেররা ষড়যন্ত্র করে এ রহমতটা বন্ধ করে দিয়েছে।
রহমত কিভাবে হল- এটা বুঝার আগে বাঁদির পর্দা সম্পর্কে বলি: ইসলামে বাঁদির পর্দার বিধান হুররাহ্ তথা স্বাধীন মহিলাদের তুলনায় লঘু। হুররাহ্ মহিলাদের সতর যেখানে সমগ্র শরীর, বাঁদির সতর সে তুলনায় অর্ধেক। বাঁদির সতর তার পেট, পিঠ আর নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। বাকি শরীর সতর নয়। মাথা, চেহারা, গলা, বুক এবং হাটুর নিচ থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সতর নয়। খাহেশাতের আশঙ্কা না হলে এগুলো দেখাও যাবে, ছোঁয়াও যাবে। আর মালিকের সামনে তো কোন পর্দাই নেই। মালিকের কাছে বাঁদি তার বিবির মতোই।
দ্বিতীয়ত: গোলাম-বাঁদি স্ত্রী-সন্তানের মতো নয়। অর্থাৎ স্ত্রী সন্তানকে যেমন নিজ সম্পদ খরচ করে লালন-পালন করতে হয়, গোলাম-বাঁদি এমন নয়। গোলাম-বাঁদি বরং নিজেরাই কামাই করে মালিককে দেবে। মালিক সে উপার্জন নিজে এবং নিজ স্ত্রী-সন্তান, পিতা-মাতা ও অন্যদের জন্য খরচ করবে। গোলাম-বাঁদির ভরণ-পোষণও সেখান থেকে দেবে। এ হিসেবে গোলাম-বাঁদি ধরতে গেলে বিনা পুঁজিতে ব্যবসা।
এবার আসুন রহমতের কথা বলি। একটা উদাহরণ দেই-
আপনার ৭ সন্তান। ৪ জন বড়। তারা পড়াশুনা করে। বাকি ৩ জন ছোট ছোট। একটা একেবারে দুধের শিশু। আপনি আপনার মাদ্রাসা, ফ্যাক্টরী বা অন্য কোন ব্যবসায় ব্যস্ত। কিংবা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বেড়িয়েছেন। আপনার পিতা-মাতা অসুস্থ। তাদের খেদমতের দরকার। আপনি বাড়িতে থাকেন না। তাদের খেদমতের কি ব্যবস্থা হবে? আপনার বাজার-সদাই কে করবে? আপনার ছেলেরাও পড়াশুনায় দিন-রাত ব্যস্ত। কিংবা তারা আবাসিক প্রতিষ্ঠানে পড়ে। মাঝে মাঝে বাড়িতে আসে। আর ছোটগুলো খেদমতের যোগ্য হয়নি এখনও। তাদেরই বরং উল্টো খেদমত করতে হয়। অধিকন্তু আপনার একশো কাটা জমি আছে। সেগুলো ধান, পাট, তরিতরকারি চাষ করেছেন। ফসল কাটার সময় হয়ে গেছে। আপনার পিতা-মাতা অসুস্থ। আপনার বিবি বাড়ির বাহিরে আসতে পারছেন না। আপনার চাকরির ব্যস্ততা আছে। বাড়িতে সার্বক্ষণিক থাকার সুযোগ আপনার নাই। এখন আপনার জমি-জিরাত আর ফল-ফসলের কি হবে?
চিন্তা করে দেখুন, যদি আপনার কিছু গোলাম-বাঁদি থাকতো তাহলে কোন সমস্যাই হতো না। বাহিরের ভারি কাজগুলো শ্রমিক আর গোলাম মিলে করতে পারতো। ধান উড়ানো, সিদ্ধ করা, শুকানো এগুলো বাঁদিরা করতে পারতো। বাঁদিদের তো তেমন পর্দা নেই। কাজের স্বার্থে আল্লাহ তাআলা তাদের পর্দার বিধান লঘু করে দিয়েছেন। তারা এগুলো করতে পারতো। ভিন পুরুষরা দেখলেও কোন সমস্যা হতো না। গোলাম-বাঁদি মিলে মিশেও কাজ করতে পারতো। কারণ, তাদেরও পরস্পর পর্দা ঐ অতটুকুই।
কিন্তু এ কাজগুলোর জন্য এখন আপনাকে পেরেশান হতে হচ্ছে। কারণ, আপনার বিবি বাহিরে আসতে পারছেন না। আর বাহিরের মহিলাদের দিয়েও আপনি একজন দ্বীনদার পুরষ সেগুলো করাতে পারছেন না। কারণ, বাহিরের মহিলাদের সতর সারা শরীর। আপনার বিবির মতো তারাও বাহিরে আসতে পারবে না। আপনি কিংবা কোন ভিন পুরুষ তাদের দেখতে পারবে না। আর বাহিরের পুরুষদের দিয়ে করালেও ঝামেলা থেকেই যাচ্ছে। কারণ, তারা ঠিকমতো বাড়ির ভেতর যেতে পারছে না। আপনার মা, বিবি আর মেয়েরাও তাদের সামনে যেতে পারছে না। পুরুষ দিয়ে কাজ করালেও কিন্তু ঝামেলা বেশ হচ্ছে। আর শ্রমিকদের পারিশ্রমিকের ব্যাপারটাতো আছেই।
পক্ষান্তরে আপনার যদি কয়েকটা বাঁদি থাকতো! তাহলে বড়ই সুবিধা হতো। এরা আপনার সব কাজ করতে পারতো। এদের সাথে আপনাদেরও পর্দা নেই, বাহিরের লোকেরও পর্দা নেই। এরা কাজ করবে। বাহিরের লোক দেখলে দেখুক। সমস্যা নেই। গোলামেরা বাহিরের ভারি কাজগুলো করে ফেললে আর বাঁদিরা ভেতরের কাজগুলো করে ফেললে ঝামেলাই হতো না। পর্দারও খেলাফ হতো না, কাজেরও ব্যাঘাত ঘটতো না।
আপনার অসুস্থ পিতা-মাতার খেদমতের দরকার। আপনি ঠিকমতো বাড়িতে থাকেন না। আপনার বিবি সব খেদমত করতে পারেন না। কারণ, শরীয়তে নিষেধ আছে। এখন যদি আপনার বাঁদি থাকতো? তারা খেদমত করতে পারতো। আর যেসব খেদমত আপনার নিজের বাঁদিরা করতে পারবে না, সেগুলোর জন্য আপনার একটা বাঁদি আপনার পিতাকে দিয়ে দিলেই হতো। সে আপনার পিতার সব খেদমত করতে পারতো। অধিকন্তু দেয়ারও দরকার পড়তো না। আপনার পিতার তো দুয়েকটা বাঁদি থাকবেই।
দেখতেই পাচ্ছেন- অনেক সহজ হয়ে যেত।
আবার ধরুন, আপনার বাড়িতে অনুষ্ঠান। অনেক অতিথি এসেছে। এদের আপ্যায়ন খেদমত। অনেক কথা। আপনার মা-মেয়েরা অতিথিদের সামনে যেতে পারছে না। আবার গোলাম দিয়েও সব কাজ হচ্ছে না। কারণ, গোলামদের সাথে হুররাহ্ মহিলাদের পর্দা আছে। তারা আপনার মা-মেয়েদের সামনেও যেতে পারবে না, আপনার মহিলা অতিথিদের সামনেও যেতে পারবে না। ঝামেলা তো। এখন যদি আপনার বাঁদি থাকতো? বড় সুবিধা হতো। এরা অন্দর মহলেও যেতে পারতো। অতিথিদের সামনেও যেতে পারতো। মহিলাদের সামনেও। পুরুষদের সামনেও। এরা আপ্যায়নের সব কাজ করতে পারতো। অনেক সুবিধার ব্যাপার ছিল। বাঁদি না থাকায় আপনার মেয়েদের দিয়ে করাচ্ছেন। তাদের অপমান হচ্ছে। পর্দা লঙ্গন হচ্ছে। হারাম হচ্ছে। অমুক বাড়ির মেয়েদের দিয়ে করাচ্ছেন। অমুক ফ্ল্যাটের মেয়েদের দিয়ে করাচ্ছেন। এটাও হারাম হচ্ছে। কমিউনিটি সেন্টারে করাচ্ছেন। এখানেও হারাম হচ্ছে। বাঁদি থাকলে তা হতো না। কমিউনিটি সেন্টারে করালেও হতো না। সেখানেও বাঁদিরা করতে পারতো। তাদের সাথে তো পর্দা নেই। বাড়িতেও নেই। সেন্টারেও নেই। অনেক সুবিধা ছিল।
আবার ধরুন, আপনি গরীব মানুষ। বিবাহ করতে মন চাচ্ছে। কিন্তু পারছেন না। মোহরের টাকা নেই। বসে বসে বউ খাওয়াতে হবে। পয়সা আসবে কোত্থেকে? বউকে তো আর গার্মেন্টে দিতে পারবেন না। অনেক কষ্টে তিরিশ হাজার টাকা জমিয়েছেন। এটা দিয়ে তো মোহরের টাকাই হবে না। কি করবেন এখন? যদি একটা বাঁদি কিনে নিতেন, অনেক সুবিধা হতো। আপনার বাঁদি কাজ করতো। আপনার চলার খরচ হতো। তাকে দিয়ে আপনার বিবির হাজতও পুরা হতো।
হাসপাতালে নার্স লাগে। যদি বাঁদি থাকতো! সুবিধা হতো। রোগীর সাথেও পর্দা নেই, ডাক্তারের সাথেও পর্দা নেই। এখন হুররাহ্ মহিলা দিয়ে করানো হচ্ছে। হারাম হচ্ছে।
আরেকটা সুবিধার কথা বলি। একজন পুরুষ কিন্তু চারের অধিক বিবাহ করতে পারে না একসাথে। আর বউ খাওয়াতে হয় ঘরে বসিয়ে বসিয়ে। মোহর দিতে হয়। খরচ অনেক। তাই চারটা করাও কঠিন। কিন্তু বাঁদি আপনি যত ইচ্ছে রাখতে পারবেন। খরচও কম। তারা কাজ করবে। উপার্জন করবে। আপনার আয়ও হবে, মনের চাহিদাও পূরণ হবে। আল্লাহ তাআলা পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন মহিলাদের প্রতি আকর্ষণ দিয়ে। এক মহিলা দিয়ে আপনার মন ভরবে না। আরেকটা চাইবে। সেটা দিয়েও ভরবে না। আরো চাইবে। কিন্তু চারের বেশি তো পারবেন না। কিন্তু মন তো চাচ্ছে। যদি বাঁদি থাকতো। সুবিধে হতো। যত ইচ্ছা রাখতে পারতেন। বাকেরাও পারতেন, সায়্যিবাও পারতেন। খরচও কম। অনেক সুবিধা ছিল।
এখন বাঁদি নেই। কিন্তু মনের চাহিদা তো আগের মতোই। দশটা চাচ্ছে। বিশটা চাচ্ছে। অবৈধ প্রেম হচ্ছে। গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরছে। হারাম হচ্ছে। বাঁদি থাকলে! যত ইচ্ছা রাখতে পারতেন। সাথে নিয়েও ঘুরতে পারতেন। বাড়িতেও রাখতে পারতেন। অফিসেও রাখতে পারতেন। রাস্তায়ও রাখতে পারতেন। ভিন পুরুষে দেখলে সমস্যা নেই। পর্দা নেই যে। বড় সুবিধে ছিল। চাহিদাও মিটতো। হারামও হতো না।
শুধু তাই, বাঁদি থাকলে খরচ কম হতো। কিন্তু প্রেম কি আর ফ্রিতে পাওয়া যায়? হাজারে-লাখো খরচ হচ্ছে। হারামও হচ্ছে। খরচও হচ্ছে।
চাহিদাও কিন্তু সহজে মেটছে না। বদনামের ভয় আছে। আর এক মেয়ে দশ ছেলের সাথে প্রেম করে। এতে হচ্ছে মারামারি। কাটাকাটি। বাঁদি থাকলে কিছুই হতো না। আপনার বাঁদি আপনার থাকতো। তারটা তার। মারামারিও হতো না। বদনামও হতো না। হারামও হতো না। চাহিদাও মিটতো। খরচও কমতো। সুবহানাল্লাহ। আল্লাহর বিধান কতই না সুন্দর!
আরেকটা অফারের কথা বলি। আসলেই কিন্তু অফার। আপনার এক ফ্রেন্ড। তার অনেকগুলো বাঁদি। একটা বাঁদি আপনার পছন্দ হয়েছে। এখন কি করবেন? আপনার ফ্রেন্ডকে বলুন। দোস্ত! তোমার ঐ যে রাশিয়ান বাঁদিটা! ঐ যে সেপ্টেম্বরের যুদ্ধে গনিমত পেলে। আমার কিন্তু দোস্ত অনেক পছন্দ। বাঁদিটা দোস্ত আমাকে দিয়ে দাও। না দিয়ে পারবে না। আপনার ক্লোজ ফ্রেন্ড। তাছাড়া তার তো আছেই আরো কত! একটা দিয়ে দিলেই কি! অধিকন্তু সামনের তিন মাস পরে আবার যুদ্ধ হবে না! তখন তো আবার পাওয়াই যাবে। আপনাকে কিন্তু দিয়েই দেবে। দিয়ে দিলেই কিন্তু হলো। বিবাহ লাগবে না। অনুষ্ঠান নেই। মোহরও নেই। বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোও নেই। আপেল গিফটের মতোই সহজ। দিলেই আপনার হয়ে গেল। আপনার মালিকানায় চলে এলো। তবে কষ্ট করে এক হায়েয পার করে একটু ইসতিবরা করাতে হবে। ব্যস এতটুকুই।
সুবহানাল্লাহ। আল্লাহর বিধান কত সুন্দর। আল্লাহ তো আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তিনি তো জানেন কিভাবে কি দিয়ে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আমাদের মনের চাহিদা তিনি বুঝেন। এজন্যই তো এত সহজ বিধান দিয়েছিলেন। কিন্তু হায়! এটা না’কি মানবতা বিরোধী! লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। আর এখন যে হুররাহ মহিলাদের দিয়ে বাঁদির কাজ করানো হচ্ছে- এটা মানবতা বিরোধী হচ্ছে না? এটা অপমান হচ্ছে না? বাঁদির চেয়েও নিকৃষ্ট পন্থায় যে এদের ব্যবহার করা হচ্ছে, ভোগ করা হচ্ছে- এগুলো মানবতা বিরোধী হচ্ছে না? এক ছেলে দশ মেয়ে নিয়ে ঘুরলে, এক মেয়ে দশ ছেলের সাথে ঘুরলে মানবতা বিরোধী হয় না?
এসবই কাফেরদের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র। মানবতাবিরোধীর স্লোগান তুলে তারা গোলাম-বাঁদি তুলে দিয়েছে। আমরাও বেশ সহজেই মেনে নিয়েছি। আমাদের চেয়ে বোকা আর হয়! কিন্তু চাহিদা কি আর থেমে আছে? ফিতরাত কি আর বদলে গেছে? তা তো আগের মতোই আছে। গোলাম তো নেই। কিন্তু গোলামের কাজ তো করানোই হচ্ছে। বাঁদি নেই। কিন্তু বাঁদির চাহিদা তো পূরণ করাই হচ্ছে। বেশকম শুধু এতটুকু- হালালটা হারাম দিয়ে হচ্ছে। সওয়াবটা গুনাহের পথে হচ্ছে। শান্তিু অশান্তিতে পরিণত হয়েছে। আল্লাহর রহমতের বদলে গজব নাযিল হচ্ছে। ফিতনা ফাসাদের সয়লাবে দুনিয়া নরকে পরিণত হয়েছে।
রহমত কিভাবে হল- এটা বুঝার আগে বাঁদির পর্দা সম্পর্কে বলি: ইসলামে বাঁদির পর্দার বিধান হুররাহ্ তথা স্বাধীন মহিলাদের তুলনায় লঘু। হুররাহ্ মহিলাদের সতর যেখানে সমগ্র শরীর, বাঁদির সতর সে তুলনায় অর্ধেক। বাঁদির সতর তার পেট, পিঠ আর নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। বাকি শরীর সতর নয়। মাথা, চেহারা, গলা, বুক এবং হাটুর নিচ থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত সতর নয়। খাহেশাতের আশঙ্কা না হলে এগুলো দেখাও যাবে, ছোঁয়াও যাবে। আর মালিকের সামনে তো কোন পর্দাই নেই। মালিকের কাছে বাঁদি তার বিবির মতোই।
দ্বিতীয়ত: গোলাম-বাঁদি স্ত্রী-সন্তানের মতো নয়। অর্থাৎ স্ত্রী সন্তানকে যেমন নিজ সম্পদ খরচ করে লালন-পালন করতে হয়, গোলাম-বাঁদি এমন নয়। গোলাম-বাঁদি বরং নিজেরাই কামাই করে মালিককে দেবে। মালিক সে উপার্জন নিজে এবং নিজ স্ত্রী-সন্তান, পিতা-মাতা ও অন্যদের জন্য খরচ করবে। গোলাম-বাঁদির ভরণ-পোষণও সেখান থেকে দেবে। এ হিসেবে গোলাম-বাঁদি ধরতে গেলে বিনা পুঁজিতে ব্যবসা।
এবার আসুন রহমতের কথা বলি। একটা উদাহরণ দেই-
আপনার ৭ সন্তান। ৪ জন বড়। তারা পড়াশুনা করে। বাকি ৩ জন ছোট ছোট। একটা একেবারে দুধের শিশু। আপনি আপনার মাদ্রাসা, ফ্যাক্টরী বা অন্য কোন ব্যবসায় ব্যস্ত। কিংবা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে বেড়িয়েছেন। আপনার পিতা-মাতা অসুস্থ। তাদের খেদমতের দরকার। আপনি বাড়িতে থাকেন না। তাদের খেদমতের কি ব্যবস্থা হবে? আপনার বাজার-সদাই কে করবে? আপনার ছেলেরাও পড়াশুনায় দিন-রাত ব্যস্ত। কিংবা তারা আবাসিক প্রতিষ্ঠানে পড়ে। মাঝে মাঝে বাড়িতে আসে। আর ছোটগুলো খেদমতের যোগ্য হয়নি এখনও। তাদেরই বরং উল্টো খেদমত করতে হয়। অধিকন্তু আপনার একশো কাটা জমি আছে। সেগুলো ধান, পাট, তরিতরকারি চাষ করেছেন। ফসল কাটার সময় হয়ে গেছে। আপনার পিতা-মাতা অসুস্থ। আপনার বিবি বাড়ির বাহিরে আসতে পারছেন না। আপনার চাকরির ব্যস্ততা আছে। বাড়িতে সার্বক্ষণিক থাকার সুযোগ আপনার নাই। এখন আপনার জমি-জিরাত আর ফল-ফসলের কি হবে?
চিন্তা করে দেখুন, যদি আপনার কিছু গোলাম-বাঁদি থাকতো তাহলে কোন সমস্যাই হতো না। বাহিরের ভারি কাজগুলো শ্রমিক আর গোলাম মিলে করতে পারতো। ধান উড়ানো, সিদ্ধ করা, শুকানো এগুলো বাঁদিরা করতে পারতো। বাঁদিদের তো তেমন পর্দা নেই। কাজের স্বার্থে আল্লাহ তাআলা তাদের পর্দার বিধান লঘু করে দিয়েছেন। তারা এগুলো করতে পারতো। ভিন পুরুষরা দেখলেও কোন সমস্যা হতো না। গোলাম-বাঁদি মিলে মিশেও কাজ করতে পারতো। কারণ, তাদেরও পরস্পর পর্দা ঐ অতটুকুই।
কিন্তু এ কাজগুলোর জন্য এখন আপনাকে পেরেশান হতে হচ্ছে। কারণ, আপনার বিবি বাহিরে আসতে পারছেন না। আর বাহিরের মহিলাদের দিয়েও আপনি একজন দ্বীনদার পুরষ সেগুলো করাতে পারছেন না। কারণ, বাহিরের মহিলাদের সতর সারা শরীর। আপনার বিবির মতো তারাও বাহিরে আসতে পারবে না। আপনি কিংবা কোন ভিন পুরুষ তাদের দেখতে পারবে না। আর বাহিরের পুরুষদের দিয়ে করালেও ঝামেলা থেকেই যাচ্ছে। কারণ, তারা ঠিকমতো বাড়ির ভেতর যেতে পারছে না। আপনার মা, বিবি আর মেয়েরাও তাদের সামনে যেতে পারছে না। পুরুষ দিয়ে কাজ করালেও কিন্তু ঝামেলা বেশ হচ্ছে। আর শ্রমিকদের পারিশ্রমিকের ব্যাপারটাতো আছেই।
পক্ষান্তরে আপনার যদি কয়েকটা বাঁদি থাকতো! তাহলে বড়ই সুবিধা হতো। এরা আপনার সব কাজ করতে পারতো। এদের সাথে আপনাদেরও পর্দা নেই, বাহিরের লোকেরও পর্দা নেই। এরা কাজ করবে। বাহিরের লোক দেখলে দেখুক। সমস্যা নেই। গোলামেরা বাহিরের ভারি কাজগুলো করে ফেললে আর বাঁদিরা ভেতরের কাজগুলো করে ফেললে ঝামেলাই হতো না। পর্দারও খেলাফ হতো না, কাজেরও ব্যাঘাত ঘটতো না।
আপনার অসুস্থ পিতা-মাতার খেদমতের দরকার। আপনি ঠিকমতো বাড়িতে থাকেন না। আপনার বিবি সব খেদমত করতে পারেন না। কারণ, শরীয়তে নিষেধ আছে। এখন যদি আপনার বাঁদি থাকতো? তারা খেদমত করতে পারতো। আর যেসব খেদমত আপনার নিজের বাঁদিরা করতে পারবে না, সেগুলোর জন্য আপনার একটা বাঁদি আপনার পিতাকে দিয়ে দিলেই হতো। সে আপনার পিতার সব খেদমত করতে পারতো। অধিকন্তু দেয়ারও দরকার পড়তো না। আপনার পিতার তো দুয়েকটা বাঁদি থাকবেই।
দেখতেই পাচ্ছেন- অনেক সহজ হয়ে যেত।
আবার ধরুন, আপনার বাড়িতে অনুষ্ঠান। অনেক অতিথি এসেছে। এদের আপ্যায়ন খেদমত। অনেক কথা। আপনার মা-মেয়েরা অতিথিদের সামনে যেতে পারছে না। আবার গোলাম দিয়েও সব কাজ হচ্ছে না। কারণ, গোলামদের সাথে হুররাহ্ মহিলাদের পর্দা আছে। তারা আপনার মা-মেয়েদের সামনেও যেতে পারবে না, আপনার মহিলা অতিথিদের সামনেও যেতে পারবে না। ঝামেলা তো। এখন যদি আপনার বাঁদি থাকতো? বড় সুবিধা হতো। এরা অন্দর মহলেও যেতে পারতো। অতিথিদের সামনেও যেতে পারতো। মহিলাদের সামনেও। পুরুষদের সামনেও। এরা আপ্যায়নের সব কাজ করতে পারতো। অনেক সুবিধার ব্যাপার ছিল। বাঁদি না থাকায় আপনার মেয়েদের দিয়ে করাচ্ছেন। তাদের অপমান হচ্ছে। পর্দা লঙ্গন হচ্ছে। হারাম হচ্ছে। অমুক বাড়ির মেয়েদের দিয়ে করাচ্ছেন। অমুক ফ্ল্যাটের মেয়েদের দিয়ে করাচ্ছেন। এটাও হারাম হচ্ছে। কমিউনিটি সেন্টারে করাচ্ছেন। এখানেও হারাম হচ্ছে। বাঁদি থাকলে তা হতো না। কমিউনিটি সেন্টারে করালেও হতো না। সেখানেও বাঁদিরা করতে পারতো। তাদের সাথে তো পর্দা নেই। বাড়িতেও নেই। সেন্টারেও নেই। অনেক সুবিধা ছিল।
আবার ধরুন, আপনি গরীব মানুষ। বিবাহ করতে মন চাচ্ছে। কিন্তু পারছেন না। মোহরের টাকা নেই। বসে বসে বউ খাওয়াতে হবে। পয়সা আসবে কোত্থেকে? বউকে তো আর গার্মেন্টে দিতে পারবেন না। অনেক কষ্টে তিরিশ হাজার টাকা জমিয়েছেন। এটা দিয়ে তো মোহরের টাকাই হবে না। কি করবেন এখন? যদি একটা বাঁদি কিনে নিতেন, অনেক সুবিধা হতো। আপনার বাঁদি কাজ করতো। আপনার চলার খরচ হতো। তাকে দিয়ে আপনার বিবির হাজতও পুরা হতো।
হাসপাতালে নার্স লাগে। যদি বাঁদি থাকতো! সুবিধা হতো। রোগীর সাথেও পর্দা নেই, ডাক্তারের সাথেও পর্দা নেই। এখন হুররাহ্ মহিলা দিয়ে করানো হচ্ছে। হারাম হচ্ছে।
আরেকটা সুবিধার কথা বলি। একজন পুরুষ কিন্তু চারের অধিক বিবাহ করতে পারে না একসাথে। আর বউ খাওয়াতে হয় ঘরে বসিয়ে বসিয়ে। মোহর দিতে হয়। খরচ অনেক। তাই চারটা করাও কঠিন। কিন্তু বাঁদি আপনি যত ইচ্ছে রাখতে পারবেন। খরচও কম। তারা কাজ করবে। উপার্জন করবে। আপনার আয়ও হবে, মনের চাহিদাও পূরণ হবে। আল্লাহ তাআলা পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন মহিলাদের প্রতি আকর্ষণ দিয়ে। এক মহিলা দিয়ে আপনার মন ভরবে না। আরেকটা চাইবে। সেটা দিয়েও ভরবে না। আরো চাইবে। কিন্তু চারের বেশি তো পারবেন না। কিন্তু মন তো চাচ্ছে। যদি বাঁদি থাকতো। সুবিধে হতো। যত ইচ্ছা রাখতে পারতেন। বাকেরাও পারতেন, সায়্যিবাও পারতেন। খরচও কম। অনেক সুবিধা ছিল।
এখন বাঁদি নেই। কিন্তু মনের চাহিদা তো আগের মতোই। দশটা চাচ্ছে। বিশটা চাচ্ছে। অবৈধ প্রেম হচ্ছে। গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরছে। হারাম হচ্ছে। বাঁদি থাকলে! যত ইচ্ছা রাখতে পারতেন। সাথে নিয়েও ঘুরতে পারতেন। বাড়িতেও রাখতে পারতেন। অফিসেও রাখতে পারতেন। রাস্তায়ও রাখতে পারতেন। ভিন পুরুষে দেখলে সমস্যা নেই। পর্দা নেই যে। বড় সুবিধে ছিল। চাহিদাও মিটতো। হারামও হতো না।
শুধু তাই, বাঁদি থাকলে খরচ কম হতো। কিন্তু প্রেম কি আর ফ্রিতে পাওয়া যায়? হাজারে-লাখো খরচ হচ্ছে। হারামও হচ্ছে। খরচও হচ্ছে।
চাহিদাও কিন্তু সহজে মেটছে না। বদনামের ভয় আছে। আর এক মেয়ে দশ ছেলের সাথে প্রেম করে। এতে হচ্ছে মারামারি। কাটাকাটি। বাঁদি থাকলে কিছুই হতো না। আপনার বাঁদি আপনার থাকতো। তারটা তার। মারামারিও হতো না। বদনামও হতো না। হারামও হতো না। চাহিদাও মিটতো। খরচও কমতো। সুবহানাল্লাহ। আল্লাহর বিধান কতই না সুন্দর!
আরেকটা অফারের কথা বলি। আসলেই কিন্তু অফার। আপনার এক ফ্রেন্ড। তার অনেকগুলো বাঁদি। একটা বাঁদি আপনার পছন্দ হয়েছে। এখন কি করবেন? আপনার ফ্রেন্ডকে বলুন। দোস্ত! তোমার ঐ যে রাশিয়ান বাঁদিটা! ঐ যে সেপ্টেম্বরের যুদ্ধে গনিমত পেলে। আমার কিন্তু দোস্ত অনেক পছন্দ। বাঁদিটা দোস্ত আমাকে দিয়ে দাও। না দিয়ে পারবে না। আপনার ক্লোজ ফ্রেন্ড। তাছাড়া তার তো আছেই আরো কত! একটা দিয়ে দিলেই কি! অধিকন্তু সামনের তিন মাস পরে আবার যুদ্ধ হবে না! তখন তো আবার পাওয়াই যাবে। আপনাকে কিন্তু দিয়েই দেবে। দিয়ে দিলেই কিন্তু হলো। বিবাহ লাগবে না। অনুষ্ঠান নেই। মোহরও নেই। বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোও নেই। আপেল গিফটের মতোই সহজ। দিলেই আপনার হয়ে গেল। আপনার মালিকানায় চলে এলো। তবে কষ্ট করে এক হায়েয পার করে একটু ইসতিবরা করাতে হবে। ব্যস এতটুকুই।
সুবহানাল্লাহ। আল্লাহর বিধান কত সুন্দর। আল্লাহ তো আমাদের সৃষ্টিকর্তা। তিনি তো জানেন কিভাবে কি দিয়ে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আমাদের মনের চাহিদা তিনি বুঝেন। এজন্যই তো এত সহজ বিধান দিয়েছিলেন। কিন্তু হায়! এটা না’কি মানবতা বিরোধী! লা-হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। আর এখন যে হুররাহ মহিলাদের দিয়ে বাঁদির কাজ করানো হচ্ছে- এটা মানবতা বিরোধী হচ্ছে না? এটা অপমান হচ্ছে না? বাঁদির চেয়েও নিকৃষ্ট পন্থায় যে এদের ব্যবহার করা হচ্ছে, ভোগ করা হচ্ছে- এগুলো মানবতা বিরোধী হচ্ছে না? এক ছেলে দশ মেয়ে নিয়ে ঘুরলে, এক মেয়ে দশ ছেলের সাথে ঘুরলে মানবতা বিরোধী হয় না?
এসবই কাফেরদের সুদূরপ্রসারী ষড়যন্ত্র। মানবতাবিরোধীর স্লোগান তুলে তারা গোলাম-বাঁদি তুলে দিয়েছে। আমরাও বেশ সহজেই মেনে নিয়েছি। আমাদের চেয়ে বোকা আর হয়! কিন্তু চাহিদা কি আর থেমে আছে? ফিতরাত কি আর বদলে গেছে? তা তো আগের মতোই আছে। গোলাম তো নেই। কিন্তু গোলামের কাজ তো করানোই হচ্ছে। বাঁদি নেই। কিন্তু বাঁদির চাহিদা তো পূরণ করাই হচ্ছে। বেশকম শুধু এতটুকু- হালালটা হারাম দিয়ে হচ্ছে। সওয়াবটা গুনাহের পথে হচ্ছে। শান্তিু অশান্তিতে পরিণত হয়েছে। আল্লাহর রহমতের বদলে গজব নাযিল হচ্ছে। ফিতনা ফাসাদের সয়লাবে দুনিয়া নরকে পরিণত হয়েছে।
হে আল্লাহ আমাদের হেফাজত কর! আমাদের সহীহ বুঝ দান কর!
Comment