এক ভাই একটা হাদিস উল্লেখ করে বর্তমান যামানার আলোকে হাদিসটির ব্যাখ্যা জানতে চেয়েছিলেন। ভাইয়ের উদ্দেশ্য সম্ভবত এই যে, এ হাদিসের আলোকে বর্তমান যামানায় - যেখানে খেলাফত নেই – অন্য কোন জিহাদি তানজীম গঠন করা বা তাতে যোগ দেয়া নাজায়েয প্রমাণিত হয়। হাদিসটি সহীহ বুখারীসহ অন্যান্য কিতাবে এসেছে। সহীহ বুখারীতে হাদিসটি এমন:
“হুযাইফাহ ইবনু ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কল্যাণের বিষয়াবলী জিজ্ঞেস করত। কিন্তু আমি তাঁকে অকল্যাণের বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম এ ভয়ে যে, অকল্যাণ আমাকে পেয়ে না বসে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো জাহিলীয়্যাত ও অকল্যাণের মাঝে ছিলাম। এরপর আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদেরকে এ কল্যাণের মধ্যে নিয়ে আসলেন। এ কল্যাণের পর আবারও কি অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে এর মধ্যে কিছুটা ধূম্রজাল থাকবে। আমি প্রশ্ন করলাম, এর ধূম্রজাল কিরূপ? তিনি বললেনঃ এক জামা‘আত আমার তরীকা ছেড়ে লোকদেরকে অন্য পথে পরিচালিত করবে। তাদের থেকে ভাল কাজও দেখবে এবং মন্দ কাজও দেখবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে কল্যাণের পর কি আবার অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটবে। যে ব্যক্তি তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে, তাকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের কিছু স্বভাবের কথা আমাদের বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, তারা আমাদের লোকই এবং আমাদের ভাষায়ই কথা বলবে। আমি বললাম, যদি এমন অবস্থা আমাকে পেয়ে বসে, তাহলে কী করতে হুকুম দেন? তিনি বললেন, মুসলিমদের জামা‘আত ও তাদের ইমামকে আঁকড়ে থাকবে। আমি আরজ করলাম, যদি তখন মুসলিমদের কোন (সংঘবদ্ধ) জামা‘আত ও ইমাম না থাকে? তিনি বললেন, তাহলে তুমি তখন ঐ সকল (গোমরাহ) দল-মত পরিত্যাগ করে আলদা হয়ে যাবে। এ কারণে যদি কোন গাছের শিকড় কামড়িয়ে পড়ে থাকতে হয়-তাহলেও। যতক্ষণ না সে (বিচ্ছিন্ন) অবস্থায় তোমার মৃত্যু উপস্থিত হয়।” – সহীহ বুখারী, কিতাবুল ফিতান, হাদিস নং ৬৬৭৩
হাদিসে সংশয়ের অংশটুকু হল, فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا (তুমি তখন ঐ সকল দল-মত পরিত্যাগ করে আলদা হয়ে যাবে।)
সংশয়ে যারা পড়েছেন তারা বলতে চাচ্ছেন, এ অংশ থেকে বুঝা যায়, খেলাফত না থাকলে অন্য সকল দলমত পরিত্যাগ করে আলাদা হয়ে যেতে হবে। কোন দল বা তানজীমে যোগ দেয়া যাবে না। বর্তমানে যেহেতু খেলাফত নেই, তাই কোন জিহাদি তানজীম করা যাবে না। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ও একাকী থাকতে হবে।
এ হলো সংশয়। যেহেতু এ পোস্ট যাদের নজরে পড়বে, তাদের কেউ কেউ হাদিসের সহীহ ব্যাখ্যা না জানার কারণে সন্দেহের শিকার হয়ে পড়তে পারেন, তাই সন্দেহ নিরসনকল্পে হাদিসের সহীহ ব্যাখ্যা তুলে ধরা আবশ্যক মনে করছি। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ্।
হাদিসের সহীহ ব্যাখ্যায় গেলে দুই দিক থেকে সন্দেহটা খণ্ডন হয়ে যায়:
এক.
হাদিসে হক-বাতিল সকল দল ও তানজীম পরিত্যাগ করতে বলা হয়নি, বরং গোমরাহ দল পরিত্যাগ করতে বলা হয়েছে। এসব গোমরাহ দলের পরিচয় হাদিসে একটু আগেই এভাবে দেয়া হয়েছে,
হাদিসের পরের অংশে এদের ব্যাপারেই বলা হয়েছে, فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا (তুমি তখন ঐ সকল দল-মত পরিত্যাগ করে আলদা হয়ে যাবে।)
হাদিসের উদ্দেশ্য, খেলাফতে রাশেদা পার হওয়ার পর ফেতনা দেখা দেবে। তখন যদিও খেলাফত থাকবে, কিন্তু খেলাফতের রাশেদার মতো হবে না। তারা বিভিন্ন *জুলুম অত্যাচার ও গোমরাহির শিকার হবে। এ সময় জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী বিভিন্ন ফেরকা সৃষ্টি হবে। তোমরা তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে না। ইমামুল মুসলিমীন ও তার জামাতকে আঁকড়ে ধরে থাকবে। যদিও তারা জালেম ও অত্যাচারি হয়, তথাপি তাদের আনুগত্য পরিত্যাগ করে ঐসব বিচ্ছিন্ন ও গোমরাহ এবং জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী দলসমূহের কোনটাতে গিয়ে মিলিত হবে না। আর যদি খেলাফত না থাকে, তাহলে বিচ্ছিন্ন থাকবে। তবুও কোন গোমরাহ দলে মিলিত হবে না। কোন গোমরাহ দলে যোগ দেয়ার চেয়ে একাকী মৃত্যুবরণ করা ভাল।
মোল্লা আলী কারী রহ. (১০১৪ হি.) বলেন,
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তাহলে তুমি তখন ঐ সকল দল-মত পরিত্যাগ করে আলাদা হয়ে যাবে’- অর্থাৎ ঐ সকল দল-মত, যেগুলো আহলুস সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআর সঠিক রাস্তা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে।” – মিরকাত: ১৫/৩৪২
তাহলে হাদিসের অর্থ দাঁড়ালো, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর আকীদা মানহাজ থেকে বিচ্যুত সকল দলমত পরিত্যাগ করতে হবে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর আকীদা মানহাজের উপর প্রতিষ্ঠিত দলের সাথে মিলিত হতে হাদিসে নিষেধ করা হয়নি।
এ হাদিসের মর্ম পরিষ্কার হয় অন্য একটি হাদিস দ্বারা। ইমাম তিরিমিযি রহ. বর্ণনা করেন; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
হাদিসটি বিভিন্ন কিতাবে বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। সবগুলো মিলে হাদিসটি হাসান পর্যায়ের তথা দলীল হওয়ার উপযুক্ত।
এ হাদিসে যে গোমরাহ বায়াত্তর (৭২) ফেরকার কথা বলা হয়েছে, তাদের ব্যাপারেই আমাদের আলোচ্য হাদিসে বলা হয়েছে, فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا (তুমি তখন ঐ সকল দল-মত পরিত্যাগ করে আলদা হয়ে যাবে।) অবশিষ্ট একদল, যারা মুক্তিপ্রাপ্ত হবে, তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের ত্বরীকার উপর প্রতিষ্ঠিত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর দল- তাদের সাথে মিলিত হতে নিষেধ করা হয়নি।
দুই.
দ্বিতীয়ত যদি এ হাদিস দ্বারা ব্যাপক অর্থ তথা সকল দলমত ত্যাগ করে বিচ্ছিন্ন থাকার অর্থও গ্রহণ করা হয়, তাহলেও সঠিক আকীদা মানহাজের কোন তানজীম গড়ে তোলা বা তাতে যোগ দেয়া নাজায়েয সাব্যস্ত হয় না। কেননা, শরীয়তের বিধান শুধু দুয়েকটা আয়াত বা হাদিসে থেকে নেয়া যায় না, শরীয়তের বিধান নিতে হয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত সকল আয়াত ও হাদিসের সমষ্টি থেকে। সকল আয়াত ও হাদিস একত্র করলে দেখা যাবে একটা হাদিস বাহ্যত আম, কিন্তু অন্য হাদিসের দ্বারা সেটা খাছ। আরেকটা হাদিস বাহ্যত মুতলাক, কিন্তু অন্য হাদিসের দ্বারা সেটা মুকাইয়্যাদ। এভাবে সকল আয়াত হাদিস জমা করে আম-খাছ, মুতলাক-মুকাইয়্যাদ নির্ধারণ করার পর শরীয়তের বিধান গ্রহণ করতে হয়। তখন সঠিক ফলাফল অর্জন হবে। অন্যথায় শুধু বিশেষ কিছু আয়াত বা হাদিসের দিকে তাকিয়ে বিধান গ্রহণ করে নিলে, আর বাকি আয়াত হাদিস ত্যাগ করলে ফলাফল ভুল হবে এবং গোমরাহির শিকার হতে হবে।
আমরা দেখতে পাই, অসংখ্য হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুসংবাদ দিয়ে গেছেন, পরিস্থিতি যা-ই হোক, হকের উপর প্রতিষ্ঠিত, দ্বীনের জন্য কিতালরত একটা দল সর্বদাই বিদ্যমান থাকবে। যাদেরকে ‘তায়েফায়ে মানুসুরাহ্’ বলা হয়। তাদের মাঝেই ঈসা আলাইহিস সালাম অবতরণ করবেন এবং সর্বশেষ তারাই দাজ্জালের সাথে কিতাল করবে। এ ব্যাপারে অসংখ্য হাদিস এসেছে। যেমন, সহীহ মুসলিম শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
“আমার উম্মতের একটা দল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে কেয়ামত পর্যন্ত কিতাল করতে থাকবে। (এই ধারাবাহিকতা চলতে চলতে) অবশেষে ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম (তাদের মাঝে) অবতরণ করবেন। তখন তাদের আমীর (অর্থাৎ ইমাম মাহদি) তাঁকে বলবেন, ‘আসুন, আমাদের নিয়ে নামায পড়ান।’ তিন বলবেন, না। তোমরা নিজেরাই পরস্পর পরস্পরের আমীর। এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এ উম্মতের সম্মানস্বরূপ।” – সহীহ মুসলিম: ৪১২
এ ধরণের অসংখ্য হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, হকের উপর প্রতিষ্ঠিত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা-মানহাজবিশিষ্ট একটা দল সর্বদাই কিতাল করতে থাকবে।
অন্যদিকে বিভিন্ন হাদিস থেকে এটাও প্রমাণিত [যেমনটা আমাদের আলোচ্য হাদিসের এ অংশ থেকেও বুঝা যায়- فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلاَ إِمَامٌ - যদি তখন মুসলিমদের কোন (সংঘবদ্ধ) জামাআত ও ইমাম না থাকে?] এমন একটা সময় আসবে, যখন মুসলমানদের কোন একক খলিফা থাকবে না। কিন্তু তায়েফায়ে মানুসুরার হাদিস থেকে বুঝা যাচ্ছে, খলিফা না থাকার এ সময়েও একটা দল জিহাদরত থাকবে।
যদি খলিফা না থাকাবস্থায় যেকোন দল ও তানজীম নাজায়েয হতো, তাহলে তায়েফায়ে মানুসুরাও নাজায়েয হতো। অথচ হাদিসে এ তায়েফাকে মুসলমানদের জন্য সুসংবাদরূপে বিষয় বলা হয়েছে। এ তায়েফার সাথে মিলিত হওয়ার কথা এসেছে। সকলে একমত যে, সামর্থ্য পেলে ফেতনার সময় এ তায়েফার সাথে মিলিত হতে হবে। তার সাথে মিলে কাফের মুরতাদদের বিরুদ্ধে কিতাল করতে হবে।
এবার যদি আমরা উভয় শ্রেণীর হাদিস সমন্বয় করি, তাহলে স্পষ্ট বুঝে আসবে, যে হাদিসে বলা হয়েছে- فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا , সে হাদিসে তায়েফায়ে মানুসুরা অন্তর্ভুক্ত নয়। তায়েফায়ে মানসুরার হাদিস দ্বারা এ হাদিস এবং এ ধরণের অন্যান্য হাদিস মাখসূস হয়ে যাবে। অর্থাৎ ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা উদ্দেশ্য না হয়ে বিশেষ ফেরকা তথা গোমরাহ ফেরকা থেকে নিষেধ করা উদ্দেশ্য হবে। ইমাম ইবনে বাত্তাল রহ. (৪৪৯ হি.) এ বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি বলেন,
“এ সকল হাদিস এবং এ জাতীয় অন্যান্য হাদিসের দ্বারা বিশেষ অর্থ উদ্দেশ্য (ব্যাপকতা উদ্দেশ্য নয়)। এমনটা উদ্দেশ্য নয় যে, দুনিয়ার সকল ভূখণ্ড থেকে দ্বীনে ইসলাম এমনভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে যে, তার কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছে যে, কেয়ামত পর্যন্তই দ্বীনে ইসলাম টিকে থাকবে। তবে দুর্বল হয়ে পড়বে। ইসলামের শুরু যামানার মতো গরীব-অসহায় হয়ে পড়বে। যেমন, হযরত ইমরান ইবনে হুছাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার উম্মতের একটা দল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে সর্বদা কিতাল করতে থাকবে। (এই ধারাবাহিকতা চলতে চলতে) অবশেষে তাদের সর্বশেষ দলটি মাসীহে দাজ্জালের সাথে কিতাল করবে।’ ... রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদিসে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এ হাদিসের দ্বারা (বাহ্যত) ব্যাপকতা নির্দেশক অন্য সকল হাদিস খাছ হয়ে যাবে তথা বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হবে।” – শরহু সহীহিল বুখারী লি ইবনি বাত্তাল: ১০/৬০
হাফেয ইবনে হাজার রহ. (৮৫২ হি.) তিনিও একই কথা বলেছেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আশাকরি স্পষ্ট যে, হাদিসের নিষেধাজ্ঞা গোমরা দলের ব্যাপারে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর আকীদা মানহাজ বিশিষ্ট দল গঠন করতে বা তাতে যোগ দিতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। বরং জিহাদের প্রয়োজনে অনেক সময় তা আবশ্যক- যেমনটা অন্যান্য পোস্টে আলোচনা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন।
بَاب كَيْفَ الأَمْرُ إِذَا لَمْ تَكُنْ جَمَاعَةٌ مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ حَدَّثَنَا ابْنُ جَابِرٍ حَدَّثَنِي بُسْرُ بْنُ عُبَيْدِ اللهِ الْحَضْرَمِيُّ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا إِدْرِيسَ الْخَوْلاَنِيَّ أَنَّهُ سَمِعَ حُذَيْفَةَ بْنَ الْيَمَانِ يَقُولُ كَانَ النَّاسُ يَسْأَلُونَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَنْ الْخَيْرِ وَكُنْتُ أَسْأَلُهُ عَنْ الشَّرِّ مَخَافَةَ أَنْ يُدْرِكَنِي فَقُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّا كُنَّا فِي جَاهِلِيَّةٍ وَشَرٍّ فَجَاءَنَا اللهُ بِهَذَا الْخَيْرِ فَهَلْ بَعْدَ هَذَا الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ نَعَمْ قُلْتُ وَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الشَّرِّ مِنْ خَيْرٍ قَالَ نَعَمْ وَفِيهِ دَخَنٌ قُلْتُ وَمَا دَخَنُهُ قَالَ قَوْمٌ يَهْدُونَ بِغَيْرِ هَدْيِي تَعْرِفُ مِنْهُمْ وَتُنْكِرُ قُلْتُ فَهَلْ بَعْدَ ذَلِكَ الْخَيْرِ مِنْ شَرٍّ قَالَ نَعَمْ دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا قُلْتُ يَا رَسُولَ اللهِ صِفْهُمْ لَنَا قَالَ هُمْ مِنْ جِلْدَتِنَا وَيَتَكَلَّمُونَ بِأَلْسِنَتِنَا قُلْتُ فَمَا تَأْمُرُنِي إِنْ أَدْرَكَنِي ذَلِكَ قَالَ تَلْزَمُ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَإِمَامَهُمْ قُلْتُ فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلاَ إِمَامٌ قَالَ فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا وَلَوْ أَنْ تَعَضَّ بِأَصْلِ شَجَرَةٍ حَتَّى يُدْرِكَكَ الْمَوْتُ وَأَنْتَ عَلَى ذَلِكَ.
“হুযাইফাহ ইবনু ইয়ামান রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, লোকেরা রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কল্যাণের বিষয়াবলী জিজ্ঞেস করত। কিন্তু আমি তাঁকে অকল্যাণের বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতাম এ ভয়ে যে, অকল্যাণ আমাকে পেয়ে না বসে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা তো জাহিলীয়্যাত ও অকল্যাণের মাঝে ছিলাম। এরপর আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদেরকে এ কল্যাণের মধ্যে নিয়ে আসলেন। এ কল্যাণের পর আবারও কি অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তবে এর মধ্যে কিছুটা ধূম্রজাল থাকবে। আমি প্রশ্ন করলাম, এর ধূম্রজাল কিরূপ? তিনি বললেনঃ এক জামা‘আত আমার তরীকা ছেড়ে লোকদেরকে অন্য পথে পরিচালিত করবে। তাদের থেকে ভাল কাজও দেখবে এবং মন্দ কাজও দেখবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, সে কল্যাণের পর কি আবার অকল্যাণ আসবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটবে। যে ব্যক্তি তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে, তাকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! তাদের কিছু স্বভাবের কথা আমাদের বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, তারা আমাদের লোকই এবং আমাদের ভাষায়ই কথা বলবে। আমি বললাম, যদি এমন অবস্থা আমাকে পেয়ে বসে, তাহলে কী করতে হুকুম দেন? তিনি বললেন, মুসলিমদের জামা‘আত ও তাদের ইমামকে আঁকড়ে থাকবে। আমি আরজ করলাম, যদি তখন মুসলিমদের কোন (সংঘবদ্ধ) জামা‘আত ও ইমাম না থাকে? তিনি বললেন, তাহলে তুমি তখন ঐ সকল (গোমরাহ) দল-মত পরিত্যাগ করে আলদা হয়ে যাবে। এ কারণে যদি কোন গাছের শিকড় কামড়িয়ে পড়ে থাকতে হয়-তাহলেও। যতক্ষণ না সে (বিচ্ছিন্ন) অবস্থায় তোমার মৃত্যু উপস্থিত হয়।” – সহীহ বুখারী, কিতাবুল ফিতান, হাদিস নং ৬৬৭৩
হাদিসে সংশয়ের অংশটুকু হল, فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا (তুমি তখন ঐ সকল দল-মত পরিত্যাগ করে আলদা হয়ে যাবে।)
সংশয়ে যারা পড়েছেন তারা বলতে চাচ্ছেন, এ অংশ থেকে বুঝা যায়, খেলাফত না থাকলে অন্য সকল দলমত পরিত্যাগ করে আলাদা হয়ে যেতে হবে। কোন দল বা তানজীমে যোগ দেয়া যাবে না। বর্তমানে যেহেতু খেলাফত নেই, তাই কোন জিহাদি তানজীম করা যাবে না। সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ও একাকী থাকতে হবে।
এ হলো সংশয়। যেহেতু এ পোস্ট যাদের নজরে পড়বে, তাদের কেউ কেউ হাদিসের সহীহ ব্যাখ্যা না জানার কারণে সন্দেহের শিকার হয়ে পড়তে পারেন, তাই সন্দেহ নিরসনকল্পে হাদিসের সহীহ ব্যাখ্যা তুলে ধরা আবশ্যক মনে করছি। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ্।
হাদিসের সহীহ ব্যাখ্যায় গেলে দুই দিক থেকে সন্দেহটা খণ্ডন হয়ে যায়:
এক.
হাদিসে হক-বাতিল সকল দল ও তানজীম পরিত্যাগ করতে বলা হয়নি, বরং গোমরাহ দল পরিত্যাগ করতে বলা হয়েছে। এসব গোমরাহ দলের পরিচয় হাদিসে একটু আগেই এভাবে দেয়া হয়েছে,
دُعَاةٌ عَلَى أَبْوَابِ جَهَنَّمَ مَنْ أَجَابَهُمْ إِلَيْهَا قَذَفُوهُ فِيهَا
‘জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী সম্প্রদায়ের উদ্ভব ঘটবে। যে ব্যক্তি তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে, তাকে তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ করে ছাড়বে।’ হাদিসের পরের অংশে এদের ব্যাপারেই বলা হয়েছে, فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا (তুমি তখন ঐ সকল দল-মত পরিত্যাগ করে আলদা হয়ে যাবে।)
হাদিসের উদ্দেশ্য, খেলাফতে রাশেদা পার হওয়ার পর ফেতনা দেখা দেবে। তখন যদিও খেলাফত থাকবে, কিন্তু খেলাফতের রাশেদার মতো হবে না। তারা বিভিন্ন *জুলুম অত্যাচার ও গোমরাহির শিকার হবে। এ সময় জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী বিভিন্ন ফেরকা সৃষ্টি হবে। তোমরা তাদের আহ্বানে সাড়া দেবে না। ইমামুল মুসলিমীন ও তার জামাতকে আঁকড়ে ধরে থাকবে। যদিও তারা জালেম ও অত্যাচারি হয়, তথাপি তাদের আনুগত্য পরিত্যাগ করে ঐসব বিচ্ছিন্ন ও গোমরাহ এবং জাহান্নামের দিকে আহ্বানকারী দলসমূহের কোনটাতে গিয়ে মিলিত হবে না। আর যদি খেলাফত না থাকে, তাহলে বিচ্ছিন্ন থাকবে। তবুও কোন গোমরাহ দলে মিলিত হবে না। কোন গোমরাহ দলে যোগ দেয়ার চেয়ে একাকী মৃত্যুবরণ করা ভাল।
মোল্লা আলী কারী রহ. (১০১৪ হি.) বলেন,
قال: "فاعتزل تلك الفرق كلها" أي الفرق الضالة الواقعة على خلاف الجادة من طريق أهل السنة والجماعة. اهـ
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তাহলে তুমি তখন ঐ সকল দল-মত পরিত্যাগ করে আলাদা হয়ে যাবে’- অর্থাৎ ঐ সকল দল-মত, যেগুলো আহলুস সুন্নাহ্ ওয়াল জামাআর সঠিক রাস্তা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে।” – মিরকাত: ১৫/৩৪২
তাহলে হাদিসের অর্থ দাঁড়ালো, আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর আকীদা মানহাজ থেকে বিচ্যুত সকল দলমত পরিত্যাগ করতে হবে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর আকীদা মানহাজের উপর প্রতিষ্ঠিত দলের সাথে মিলিত হতে হাদিসে নিষেধ করা হয়নি।
এ হাদিসের মর্ম পরিষ্কার হয় অন্য একটি হাদিস দ্বারা। ইমাম তিরিমিযি রহ. বর্ণনা করেন; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
وتفترق أمتي على ثلاث وسبعين ملة كلهم في النار إلا ملة واحدة، قالوا ومن هي يا رسول الله؟ قال ما أنا عليه وأصحابي.
“আমার উম্মত তেয়াত্তর (৭৩) দলে বিভক্ত হয়ে পড়বে। তাদের এক দল ব্যতীত বাকি সব জাহান্নামী হবে। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! সে (মুক্তিপ্রাপ্ত) দলটি কোনটি? তিনি উত্তর দিলেন, তারা হল সেই দল, যারা আমি ও আমার সাহাবাদের ত্বরীকার উপর প্রতিষ্ঠিত।” – তিরমিযি: ১৭১হাদিসটি বিভিন্ন কিতাবে বিভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে। সবগুলো মিলে হাদিসটি হাসান পর্যায়ের তথা দলীল হওয়ার উপযুক্ত।
এ হাদিসে যে গোমরাহ বায়াত্তর (৭২) ফেরকার কথা বলা হয়েছে, তাদের ব্যাপারেই আমাদের আলোচ্য হাদিসে বলা হয়েছে, فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا (তুমি তখন ঐ সকল দল-মত পরিত্যাগ করে আলদা হয়ে যাবে।) অবশিষ্ট একদল, যারা মুক্তিপ্রাপ্ত হবে, তথা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের ত্বরীকার উপর প্রতিষ্ঠিত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর দল- তাদের সাথে মিলিত হতে নিষেধ করা হয়নি।
দুই.
দ্বিতীয়ত যদি এ হাদিস দ্বারা ব্যাপক অর্থ তথা সকল দলমত ত্যাগ করে বিচ্ছিন্ন থাকার অর্থও গ্রহণ করা হয়, তাহলেও সঠিক আকীদা মানহাজের কোন তানজীম গড়ে তোলা বা তাতে যোগ দেয়া নাজায়েয সাব্যস্ত হয় না। কেননা, শরীয়তের বিধান শুধু দুয়েকটা আয়াত বা হাদিসে থেকে নেয়া যায় না, শরীয়তের বিধান নিতে হয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত সকল আয়াত ও হাদিসের সমষ্টি থেকে। সকল আয়াত ও হাদিস একত্র করলে দেখা যাবে একটা হাদিস বাহ্যত আম, কিন্তু অন্য হাদিসের দ্বারা সেটা খাছ। আরেকটা হাদিস বাহ্যত মুতলাক, কিন্তু অন্য হাদিসের দ্বারা সেটা মুকাইয়্যাদ। এভাবে সকল আয়াত হাদিস জমা করে আম-খাছ, মুতলাক-মুকাইয়্যাদ নির্ধারণ করার পর শরীয়তের বিধান গ্রহণ করতে হয়। তখন সঠিক ফলাফল অর্জন হবে। অন্যথায় শুধু বিশেষ কিছু আয়াত বা হাদিসের দিকে তাকিয়ে বিধান গ্রহণ করে নিলে, আর বাকি আয়াত হাদিস ত্যাগ করলে ফলাফল ভুল হবে এবং গোমরাহির শিকার হতে হবে।
আমরা দেখতে পাই, অসংখ্য হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুসংবাদ দিয়ে গেছেন, পরিস্থিতি যা-ই হোক, হকের উপর প্রতিষ্ঠিত, দ্বীনের জন্য কিতালরত একটা দল সর্বদাই বিদ্যমান থাকবে। যাদেরকে ‘তায়েফায়ে মানুসুরাহ্’ বলা হয়। তাদের মাঝেই ঈসা আলাইহিস সালাম অবতরণ করবেন এবং সর্বশেষ তারাই দাজ্জালের সাথে কিতাল করবে। এ ব্যাপারে অসংখ্য হাদিস এসেছে। যেমন, সহীহ মুসলিম শরীফে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
« لا تزال طائفة من أمتى يقاتلون على الحق ظاهرين إلى يوم القيامة - قال - فينزل عيسى ابن مريم -صلى الله عليه وسلم- فيقول أميرهم تعال صل لنا. فيقول لا. إن بعضكم على بعض أمراء. تكرمة الله هذه الأمة ».
“আমার উম্মতের একটা দল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে কেয়ামত পর্যন্ত কিতাল করতে থাকবে। (এই ধারাবাহিকতা চলতে চলতে) অবশেষে ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম (তাদের মাঝে) অবতরণ করবেন। তখন তাদের আমীর (অর্থাৎ ইমাম মাহদি) তাঁকে বলবেন, ‘আসুন, আমাদের নিয়ে নামায পড়ান।’ তিন বলবেন, না। তোমরা নিজেরাই পরস্পর পরস্পরের আমীর। এটা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে এ উম্মতের সম্মানস্বরূপ।” – সহীহ মুসলিম: ৪১২
এ ধরণের অসংখ্য হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, হকের উপর প্রতিষ্ঠিত আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের আকীদা-মানহাজবিশিষ্ট একটা দল সর্বদাই কিতাল করতে থাকবে।
অন্যদিকে বিভিন্ন হাদিস থেকে এটাও প্রমাণিত [যেমনটা আমাদের আলোচ্য হাদিসের এ অংশ থেকেও বুঝা যায়- فَإِنْ لَمْ يَكُنْ لَهُمْ جَمَاعَةٌ وَلاَ إِمَامٌ - যদি তখন মুসলিমদের কোন (সংঘবদ্ধ) জামাআত ও ইমাম না থাকে?] এমন একটা সময় আসবে, যখন মুসলমানদের কোন একক খলিফা থাকবে না। কিন্তু তায়েফায়ে মানুসুরার হাদিস থেকে বুঝা যাচ্ছে, খলিফা না থাকার এ সময়েও একটা দল জিহাদরত থাকবে।
যদি খলিফা না থাকাবস্থায় যেকোন দল ও তানজীম নাজায়েয হতো, তাহলে তায়েফায়ে মানুসুরাও নাজায়েয হতো। অথচ হাদিসে এ তায়েফাকে মুসলমানদের জন্য সুসংবাদরূপে বিষয় বলা হয়েছে। এ তায়েফার সাথে মিলিত হওয়ার কথা এসেছে। সকলে একমত যে, সামর্থ্য পেলে ফেতনার সময় এ তায়েফার সাথে মিলিত হতে হবে। তার সাথে মিলে কাফের মুরতাদদের বিরুদ্ধে কিতাল করতে হবে।
এবার যদি আমরা উভয় শ্রেণীর হাদিস সমন্বয় করি, তাহলে স্পষ্ট বুঝে আসবে, যে হাদিসে বলা হয়েছে- فَاعْتَزِلْ تِلْكَ الْفِرَقَ كُلَّهَا , সে হাদিসে তায়েফায়ে মানুসুরা অন্তর্ভুক্ত নয়। তায়েফায়ে মানসুরার হাদিস দ্বারা এ হাদিস এবং এ ধরণের অন্যান্য হাদিস মাখসূস হয়ে যাবে। অর্থাৎ ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা উদ্দেশ্য না হয়ে বিশেষ ফেরকা তথা গোমরাহ ফেরকা থেকে নিষেধ করা উদ্দেশ্য হবে। ইমাম ইবনে বাত্তাল রহ. (৪৪৯ হি.) এ বিষয়টি ফুটিয়ে তুলেছেন। তিনি বলেন,
هذه الأحاديث وما جانسها معناها الخصوص، وليس المراد بها أن الدين ينقطع كله فى جميع أقطار الأرض حتى لا يبقى منه شىء؛ لأنه قد ثبت عن النبى (صلى الله عليه وسلم) أن الإسلام يبقى إلى قيام الساعة إلا أنه يضعف ويعود غريبًا كما بدأ، وروى حماد بن سلمة، عن قتادة، عن مطرف، عن عمران بن حصين قال: قال النبى (صلى الله عليه وسلم) : (لا تزال طائفة من أمتى يقاتلون على الحق ظاهرين حتى يقاتل آخرهم المسيح الدجال) ... فبين (صلى الله عليه وسلم) فى هذا الخبر خصوصه سائر الأخبار التى خرجت مخرج العموم. اهـ
“এ সকল হাদিস এবং এ জাতীয় অন্যান্য হাদিসের দ্বারা বিশেষ অর্থ উদ্দেশ্য (ব্যাপকতা উদ্দেশ্য নয়)। এমনটা উদ্দেশ্য নয় যে, দুনিয়ার সকল ভূখণ্ড থেকে দ্বীনে ইসলাম এমনভাবে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে যে, তার কোন কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত আছে যে, কেয়ামত পর্যন্তই দ্বীনে ইসলাম টিকে থাকবে। তবে দুর্বল হয়ে পড়বে। ইসলামের শুরু যামানার মতো গরীব-অসহায় হয়ে পড়বে। যেমন, হযরত ইমরান ইবনে হুছাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার উম্মতের একটা দল হকের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে সর্বদা কিতাল করতে থাকবে। (এই ধারাবাহিকতা চলতে চলতে) অবশেষে তাদের সর্বশেষ দলটি মাসীহে দাজ্জালের সাথে কিতাল করবে।’ ... রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদিসে স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, এ হাদিসের দ্বারা (বাহ্যত) ব্যাপকতা নির্দেশক অন্য সকল হাদিস খাছ হয়ে যাবে তথা বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত হবে।” – শরহু সহীহিল বুখারী লি ইবনি বাত্তাল: ১০/৬০
হাফেয ইবনে হাজার রহ. (৮৫২ হি.) তিনিও একই কথা বলেছেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আশাকরি স্পষ্ট যে, হাদিসের নিষেধাজ্ঞা গোমরা দলের ব্যাপারে। আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআর আকীদা মানহাজ বিশিষ্ট দল গঠন করতে বা তাতে যোগ দিতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। বরং জিহাদের প্রয়োজনে অনেক সময় তা আবশ্যক- যেমনটা অন্যান্য পোস্টে আলোচনা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে সহীহ বুঝ দান করুন। আমীন।
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وصحبه أجمعين
Comment