ইসলামি গণতন্ত্রীদের আরেকটি ধোঁকা ও অলীক কল্পনা :
কিছু ভাই মনে করেন, গণতন্ত্র কুফরি তন্ত্র, এটা আমরা স্বীকার করি। তবে বর্তমান যুগে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যেহেতু গণতান্ত্রিক নির্বাচন ছাড়া কোনো উপায় নেই, তাই আমরা এটাকে মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাব। প্রথমেই যেটা আমরা করব, তা হলো, সংসদের কুফরি সিস্টেমকে আমরা উৎখাত করে ফেলব। সংসদে শরিয়তের নির্ধারিত কোনো আইন নিয়ে ভোটাভুটি হবে না; বরং শরিয়তের আইনই অটোমেটিক আইন বলে বিবেচিত হবে। দ্রুত সংবিধান সংশোধন করে এ আইন পাশ করে ফেলব যে, শরিয়তের আইনের সাথে সাংঘর্ষিক যেকোনো আইন বাতিল বলে বিবেচিত হবে। এমনটা করলে এতে আর কুফর থাকছে না। সুতরাং এর মাধ্যমে ইসলামি শরিয়ত কায়েম করতে কোনো বাধা নেই।
আমি বলি, বাহ্যত চমকপ্রদ পরিকল্পনা ও শক্তিশালী দলিল মনে হচ্ছে। কিন্তু একটু পর্যালোচনা করে দেখতে তো দোষ নেই। আসুন দেখি, এতে কী কী সমস্যা রয়েছে :
এক : তাদের উক্তি //তবে বর্তমান যুগে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যেহেতু গণতান্ত্রিক নির্বাচন ছাড়া কোনো উপায় নেই//
আমি বলি, এটা চরম এক ভ্রান্তি ও শরিয়া সম্বন্ধে অজ্ঞতার ফসল। আপনি যখন স্বীকার করলেন, গণতন্ত্র হলো কুফরি তন্ত্র, তাহলে আপনার উপরিউক্ত মন্তব্য বলে কি এটাই বুঝাতে চাচ্ছেন যে, আল্লাহ উম্মতকে ব্যাপকভাবে এমন এক সংকটে ফেলেছেন, কুফরের পথ মাড়ানো ছাড়া যা থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নেই? এমনটা চিন্তা করাও তো আল্লাহর শানে চরম ধৃষ্টতার শামিল।
আপনাদের কাছে ক্ষমতায় যাওয়াটাই মূখ্য বিষয়, নাকি আল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠা? যদি প্রথমটা হয়ে থাকে, তাহলে আপনার পথ ও পদ্ধতি ঠিক আছে, তবে এটাকে ইসলাম বলে প্রচার করার কোনো অধিকার আপনাদের নেই। করলে তা হবে মুসলমানদের সাথে স্পষ্ট প্রতারণা। আর যদি দ্বিতীয়টিই আপনাদের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে তো গণতান্ত্রিক নির্বাচন ছাড়াই আল্লাহ নির্দেশিত জিহাদের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এটা শুধু তাত্ত্বিক বিশ্লেষণই নয়; বরং বর্তমান সময়ের অপ্রকাশিত চরম এক সত্য, তাগুতি মিডিয়ার ষড়যন্ত্রে যার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহ অনবগত ও উদাসীন।
দুই : তাদের উক্তি //তাই আমরা এটাকে মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাব।//
আমি বলি, কুফরকে কখন মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করা যাবে আর কখন গ্রহণ করা যাবে না, সেজন্য শরয়ি মূলনীতির গ্রন্থগুলোতে বিশদ বিবরণ রয়েছে। শরয়ি ইকরাহ ছাড়া এবং একান্ত বাধ্য না হলে কি কুফরকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করার অনুমতি অনুসরণীয় কোনো ফকিহ দিয়েছেন? দিয়ে থাকলে তার নাম, কিতাবের নাম ও উদ্ধৃতি পেশ করুন। আর ইকরাহ ও একান্ত বাধ্য না হলে কুফরকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করার অনুমতি না থাকলে বলুন, আপনাদের গণতান্ত্রিক কুফরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কোন ইকরাহ পাওয়া গিয়েছে, যদ্দরুন এটা জায়েজ হয়ে যাচ্ছে?
আপনারাই তো বলেন, এটা মন্দের ভালো হিসাবে করছি। এটা আদৌ মন্দের ভালো কিনা, সেটা ভিন্ন একটি বিষয়। এটা নিয়ে আলাদা পোস্টে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। আপনাদের এ মন্তব্যেই তো প্রমাণ হয়ে যায়, এটা ইকরাহ নয়; বরং কল্যাণকামিতা বা মাসলাহাত। শুধু কল্যাণকামিতা বা মাসলাহাতের জন্য কি কুফরি মাধ্যম গ্রহণ করার অনুমতি আছে? আমার জানামতে তো এর জন্য কুফরকে মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে আপনারা কীসের ভিত্তিতে এটাকে মাধ্যম বলে বিষয়টি হালকা করার অপচেষ্টা করছেন???
তিন : তাদের উক্তি //প্রথমেই যেটা আমরা করব, তা হলো, সংসদের কুফরি সিস্টেমকে আমরা উৎখাত করে ফেলব। আর সংসদে শরিয়তের নির্ধারিত কোনো আইন নিয়ে ভোটাভুটি হবে না; বরং শরিয়তের আইন অটোমেটিক আইন বলে বিবেচিত হবে। এমনটা করলে এতে আর কুফর থাকছে না।//
আমি বলি, এটা জাস্ট আপনাদের অলীক একটি কল্পনা মাত্র, যা কোনোদিনও বাস্তবায়ন হওয়ার নয়। তাছাড়াও আরেকটি কথা বলুন তো, এই যে আইন বা সংশোধন করার কথা বলছেন, এটার জন্যও তো প্রথমে গণতান্ত্রিক কুফরি সিস্টেমেই ভোটাভুটি করতে হবে। এটার জন্যও তো শরয়ি অনুমোদন থাকতে হবে। এখানে কি সে অনুমোদন আছে? আর এ সংশোধনের নিশ্চয়তাই বা কয়দিনের? আপনাদের পরে অন্যরা এসে তো এটা আবার পরিবর্তন করে দেবে। বিষয়টি এমন হয়ে গেল না, যে কিছু কাল ইসলামি আইনে দেশ চলবে। আর কিছু কাল কুফরি সিস্টেমে দেশ চলবে? এটার বিপরীতই কি সুরা কাফিরুন নাজিল হয়নি? এখানে কি পরিস্কার করে বলে দেওয়া হয়নি যে, কুফর ও ইসলামের মাঝে কোনো আপোষ নেই? আল্লাহর রাসুল সা. কি এ আপোষের মাধ্যমে মক্কায় ইসলাম কায়েম করতে পারতেন না? তাহলে আপোষহীন ইসলামকে আপনারা আপোষের ইসলাম প্রমাণ করতে চাচ্ছেন কেন? বিশ্বের কাছে ভুল ও বিকৃত ইসলাম কেন প্রচার করছেন? এটা আপনাদের ইসলাম হতে পারে, আল্লাহ কর্তৃক রাসুলুল্লাহ সা.-এর ওপর নাজিলকৃত ইসলাম নয়।
চার : তাদের উক্তি //দ্রুত সংবিধান সংশোধন করে এ আইন পাশ করে ফেলব যে, শরিয়তের আইনের সাথে সাংঘর্ষিক যেকোনো আইন বাতিল বলে বিবেচিত হবে।//
আমি বলি, আপনাদের সংবিধান ও গণতন্ত্র বিষয়ক পড়াশোনা খুবই সীমিত মনে হয়। আপনারা এটাও জানেন না, সংবিধানের সব অনুচ্ছেদই সংশোধন করা যায় না। যেমন উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে :
"এই সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদ সদস্যদের মোট সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয় যা সংবিধানের ১৪২ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে। তবে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭খ তে বলা হয়ছে সংবিধানের ১৪২ নং অনুচ্ছেদে যাই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদের বিধানবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হবে।"
সুতরাং আপনারা যদি আপনাদের ভাবনা বাস্তবায়ন করতে চান তাহলে তো গণতন্ত্রই থাকছে না। সেটা তো গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার নামান্তর হলো। গণতান্ত্রিক সিস্টেমে থেকে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কীভাবে এ্যাকশন নিবেন? আদালত, সেনাবাহিনী, জনগণ কেউ কি এটা মেনে নেবে? এর চাইতে তো খিলাফত ঘোষণা করাই অধিক সহজ। এমন অবাস্তব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিন্তা করেন কীভাবে?
আর গণতন্ত্রের মানসপুত্ররাই বা আপনাদের এমন আইন কেন করতে দেবে? আমেরিকা, ব্রিটেন কি বসে থাকবে ভাবছেন?? আপনাদের কি এমন সক্ষমতা অর্জন হয়েছে, যদ্বারা আপনি এসব শক্তির মোকাবেলা করতে পারবেন???
বেশি না, কিছুদিন আগের শুধু মিসরের অবস্থাটাই দেখুন। মুসলিম ব্রাদারহুড আপনাদের চেয়ে অর্থ, কৌশল, সমর্থন, অভিজ্ঞতা সবদিক থেকে শতগুণ শক্তিশালী। কিন্তু গণতান্ত্রিক সিস্টেমে এসে কয়দিন টিকতে পারল? এক বছরও নয়। কেন? কারণ, তারাও আপনাদের মতো ভুল চিন্তায় বিভোর ছিল। বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার পর এখন তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারছে। এদের থেকে কি আপনারা শিক্ষা নিবেন না? যতদিন না কুফরের মূলে আঘাত করবেন, যতদিন না তাদের শক্তি দুর্বল করতে পারবেন, ততদিন যতই সুষ্ঠু নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসেন না কেন, এক বছরও টিকতে পারবেন না। তাই এমন অলীক কল্পনা বাস্তবায়নের চিন্তা পরিত্যাগ করে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা.-এর নির্দেশিত সঠিক পথে ফিরে আসুন। বিজয় তো আপনাদের জন্যই অপেক্ষা করছে।
মূলত, গণতন্ত্র মুসলিমদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া এমন একটি জঞ্জাল, যা থেকে মুক্ত হওয়া খুব কঠিন। কিন্তু এ লোহার জিঞ্জির যতদিন আমরা ভাঙতে পারব না ততদিন খিলাফাহ নাম সোনার হরিণের দেখাও পাব না।
শেষ একটি আয়াত বলে আলোচনা শেষ করছি। হয়তবা এ একটি আয়াতই আপনার অন্তর্চক্ষু খুলে দিতে পারে। একটু গভীরভাবে খেয়াল করে বারংবার পড়ুন আর ভাবুন। আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ
'ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা কখনো আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না আপনি তাদের ধর্ম ও রীতিনীতির অনুসরণ করেন। (সুরা বাকারা : ১২০)
#সংগৃহীত
কিছু ভাই মনে করেন, গণতন্ত্র কুফরি তন্ত্র, এটা আমরা স্বীকার করি। তবে বর্তমান যুগে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যেহেতু গণতান্ত্রিক নির্বাচন ছাড়া কোনো উপায় নেই, তাই আমরা এটাকে মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাব। প্রথমেই যেটা আমরা করব, তা হলো, সংসদের কুফরি সিস্টেমকে আমরা উৎখাত করে ফেলব। সংসদে শরিয়তের নির্ধারিত কোনো আইন নিয়ে ভোটাভুটি হবে না; বরং শরিয়তের আইনই অটোমেটিক আইন বলে বিবেচিত হবে। দ্রুত সংবিধান সংশোধন করে এ আইন পাশ করে ফেলব যে, শরিয়তের আইনের সাথে সাংঘর্ষিক যেকোনো আইন বাতিল বলে বিবেচিত হবে। এমনটা করলে এতে আর কুফর থাকছে না। সুতরাং এর মাধ্যমে ইসলামি শরিয়ত কায়েম করতে কোনো বাধা নেই।
আমি বলি, বাহ্যত চমকপ্রদ পরিকল্পনা ও শক্তিশালী দলিল মনে হচ্ছে। কিন্তু একটু পর্যালোচনা করে দেখতে তো দোষ নেই। আসুন দেখি, এতে কী কী সমস্যা রয়েছে :
এক : তাদের উক্তি //তবে বর্তমান যুগে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যেহেতু গণতান্ত্রিক নির্বাচন ছাড়া কোনো উপায় নেই//
আমি বলি, এটা চরম এক ভ্রান্তি ও শরিয়া সম্বন্ধে অজ্ঞতার ফসল। আপনি যখন স্বীকার করলেন, গণতন্ত্র হলো কুফরি তন্ত্র, তাহলে আপনার উপরিউক্ত মন্তব্য বলে কি এটাই বুঝাতে চাচ্ছেন যে, আল্লাহ উম্মতকে ব্যাপকভাবে এমন এক সংকটে ফেলেছেন, কুফরের পথ মাড়ানো ছাড়া যা থেকে উত্তরণের কোনো উপায় নেই? এমনটা চিন্তা করাও তো আল্লাহর শানে চরম ধৃষ্টতার শামিল।
আপনাদের কাছে ক্ষমতায় যাওয়াটাই মূখ্য বিষয়, নাকি আল্লাহর শাসন প্রতিষ্ঠা? যদি প্রথমটা হয়ে থাকে, তাহলে আপনার পথ ও পদ্ধতি ঠিক আছে, তবে এটাকে ইসলাম বলে প্রচার করার কোনো অধিকার আপনাদের নেই। করলে তা হবে মুসলমানদের সাথে স্পষ্ট প্রতারণা। আর যদি দ্বিতীয়টিই আপনাদের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তাহলে তো গণতান্ত্রিক নির্বাচন ছাড়াই আল্লাহ নির্দেশিত জিহাদের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এটা শুধু তাত্ত্বিক বিশ্লেষণই নয়; বরং বর্তমান সময়ের অপ্রকাশিত চরম এক সত্য, তাগুতি মিডিয়ার ষড়যন্ত্রে যার ব্যাপারে মুসলিম উম্মাহ অনবগত ও উদাসীন।
দুই : তাদের উক্তি //তাই আমরা এটাকে মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাব।//
আমি বলি, কুফরকে কখন মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করা যাবে আর কখন গ্রহণ করা যাবে না, সেজন্য শরয়ি মূলনীতির গ্রন্থগুলোতে বিশদ বিবরণ রয়েছে। শরয়ি ইকরাহ ছাড়া এবং একান্ত বাধ্য না হলে কি কুফরকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করার অনুমতি অনুসরণীয় কোনো ফকিহ দিয়েছেন? দিয়ে থাকলে তার নাম, কিতাবের নাম ও উদ্ধৃতি পেশ করুন। আর ইকরাহ ও একান্ত বাধ্য না হলে কুফরকে মাধ্যম হিসাবে গ্রহণ করার অনুমতি না থাকলে বলুন, আপনাদের গণতান্ত্রিক কুফরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কোন ইকরাহ পাওয়া গিয়েছে, যদ্দরুন এটা জায়েজ হয়ে যাচ্ছে?
আপনারাই তো বলেন, এটা মন্দের ভালো হিসাবে করছি। এটা আদৌ মন্দের ভালো কিনা, সেটা ভিন্ন একটি বিষয়। এটা নিয়ে আলাদা পোস্টে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। আপনাদের এ মন্তব্যেই তো প্রমাণ হয়ে যায়, এটা ইকরাহ নয়; বরং কল্যাণকামিতা বা মাসলাহাত। শুধু কল্যাণকামিতা বা মাসলাহাতের জন্য কি কুফরি মাধ্যম গ্রহণ করার অনুমতি আছে? আমার জানামতে তো এর জন্য কুফরকে মাধ্যম হিসাবে ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই। তাহলে আপনারা কীসের ভিত্তিতে এটাকে মাধ্যম বলে বিষয়টি হালকা করার অপচেষ্টা করছেন???
তিন : তাদের উক্তি //প্রথমেই যেটা আমরা করব, তা হলো, সংসদের কুফরি সিস্টেমকে আমরা উৎখাত করে ফেলব। আর সংসদে শরিয়তের নির্ধারিত কোনো আইন নিয়ে ভোটাভুটি হবে না; বরং শরিয়তের আইন অটোমেটিক আইন বলে বিবেচিত হবে। এমনটা করলে এতে আর কুফর থাকছে না।//
আমি বলি, এটা জাস্ট আপনাদের অলীক একটি কল্পনা মাত্র, যা কোনোদিনও বাস্তবায়ন হওয়ার নয়। তাছাড়াও আরেকটি কথা বলুন তো, এই যে আইন বা সংশোধন করার কথা বলছেন, এটার জন্যও তো প্রথমে গণতান্ত্রিক কুফরি সিস্টেমেই ভোটাভুটি করতে হবে। এটার জন্যও তো শরয়ি অনুমোদন থাকতে হবে। এখানে কি সে অনুমোদন আছে? আর এ সংশোধনের নিশ্চয়তাই বা কয়দিনের? আপনাদের পরে অন্যরা এসে তো এটা আবার পরিবর্তন করে দেবে। বিষয়টি এমন হয়ে গেল না, যে কিছু কাল ইসলামি আইনে দেশ চলবে। আর কিছু কাল কুফরি সিস্টেমে দেশ চলবে? এটার বিপরীতই কি সুরা কাফিরুন নাজিল হয়নি? এখানে কি পরিস্কার করে বলে দেওয়া হয়নি যে, কুফর ও ইসলামের মাঝে কোনো আপোষ নেই? আল্লাহর রাসুল সা. কি এ আপোষের মাধ্যমে মক্কায় ইসলাম কায়েম করতে পারতেন না? তাহলে আপোষহীন ইসলামকে আপনারা আপোষের ইসলাম প্রমাণ করতে চাচ্ছেন কেন? বিশ্বের কাছে ভুল ও বিকৃত ইসলাম কেন প্রচার করছেন? এটা আপনাদের ইসলাম হতে পারে, আল্লাহ কর্তৃক রাসুলুল্লাহ সা.-এর ওপর নাজিলকৃত ইসলাম নয়।
চার : তাদের উক্তি //দ্রুত সংবিধান সংশোধন করে এ আইন পাশ করে ফেলব যে, শরিয়তের আইনের সাথে সাংঘর্ষিক যেকোনো আইন বাতিল বলে বিবেচিত হবে।//
আমি বলি, আপনাদের সংবিধান ও গণতন্ত্র বিষয়ক পড়াশোনা খুবই সীমিত মনে হয়। আপনারা এটাও জানেন না, সংবিধানের সব অনুচ্ছেদই সংশোধন করা যায় না। যেমন উইকিপিডিয়ায় বলা হয়েছে :
"এই সংবিধান সংশোধনের জন্য সংসদ সদস্যদের মোট সংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ ভোটের প্রয়োজন হয় যা সংবিধানের ১৪২ নং অনুচ্ছেদে বর্ণিত হয়েছে। তবে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭খ তে বলা হয়ছে সংবিধানের ১৪২ নং অনুচ্ছেদে যাই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদের বিধানবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হবে।"
সুতরাং আপনারা যদি আপনাদের ভাবনা বাস্তবায়ন করতে চান তাহলে তো গণতন্ত্রই থাকছে না। সেটা তো গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার নামান্তর হলো। গণতান্ত্রিক সিস্টেমে থেকে গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে কীভাবে এ্যাকশন নিবেন? আদালত, সেনাবাহিনী, জনগণ কেউ কি এটা মেনে নেবে? এর চাইতে তো খিলাফত ঘোষণা করাই অধিক সহজ। এমন অবাস্তব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চিন্তা করেন কীভাবে?
আর গণতন্ত্রের মানসপুত্ররাই বা আপনাদের এমন আইন কেন করতে দেবে? আমেরিকা, ব্রিটেন কি বসে থাকবে ভাবছেন?? আপনাদের কি এমন সক্ষমতা অর্জন হয়েছে, যদ্বারা আপনি এসব শক্তির মোকাবেলা করতে পারবেন???
বেশি না, কিছুদিন আগের শুধু মিসরের অবস্থাটাই দেখুন। মুসলিম ব্রাদারহুড আপনাদের চেয়ে অর্থ, কৌশল, সমর্থন, অভিজ্ঞতা সবদিক থেকে শতগুণ শক্তিশালী। কিন্তু গণতান্ত্রিক সিস্টেমে এসে কয়দিন টিকতে পারল? এক বছরও নয়। কেন? কারণ, তারাও আপনাদের মতো ভুল চিন্তায় বিভোর ছিল। বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার পর এখন তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পারছে। এদের থেকে কি আপনারা শিক্ষা নিবেন না? যতদিন না কুফরের মূলে আঘাত করবেন, যতদিন না তাদের শক্তি দুর্বল করতে পারবেন, ততদিন যতই সুষ্ঠু নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসেন না কেন, এক বছরও টিকতে পারবেন না। তাই এমন অলীক কল্পনা বাস্তবায়নের চিন্তা পরিত্যাগ করে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সা.-এর নির্দেশিত সঠিক পথে ফিরে আসুন। বিজয় তো আপনাদের জন্যই অপেক্ষা করছে।
মূলত, গণতন্ত্র মুসলিমদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া এমন একটি জঞ্জাল, যা থেকে মুক্ত হওয়া খুব কঠিন। কিন্তু এ লোহার জিঞ্জির যতদিন আমরা ভাঙতে পারব না ততদিন খিলাফাহ নাম সোনার হরিণের দেখাও পাব না।
শেষ একটি আয়াত বলে আলোচনা শেষ করছি। হয়তবা এ একটি আয়াতই আপনার অন্তর্চক্ষু খুলে দিতে পারে। একটু গভীরভাবে খেয়াল করে বারংবার পড়ুন আর ভাবুন। আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ
'ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা কখনো আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যতক্ষণ না আপনি তাদের ধর্ম ও রীতিনীতির অনুসরণ করেন। (সুরা বাকারা : ১২০)
#সংগৃহীত
Comment