১০ নং মহাবিপদ সংকেত:
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সমগ্র বিশ্ব আজ অস্থির ও দিকভ্রান্ত। সকলের মাথায়ই এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যে, ইমাম মাহদির আগমন কি অত্যাসন্ন? খুব শীঘ্রই কি দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে? প্রশ্নটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এর প্রামাণ্য পর্যালোচনার। এককথায় উত্তর দিতে হলে বলব, হ্যাঁ ভাই, খুবই অত্যাসন্ন, একেবারেই নিকটে; এত নিকটে যে, গভীরভাবে একটু কান পাতলেই আমরা এর পদধ্বনি শুনতে পাব।
বিষয়টি নিয়ে অনেকে কিছু লেখালেখি করলেও প্রামাণ্য হাদিস ও সঠিক তথ্যসূত্র সহকারে আলোচনা না করায় তা ঘোলাটে রূপ ধারণ করেছে। তাই আমি এ বিষয়ে তথ্যবহুল এমন কিছু আলোচনা পেশ করার ইচ্ছা পোষণ করেছি, যদ্বারা আপনি বিস্ময়াভূত না হয়ে পারবেন না।
আজ শুধু একটি হাদিস ও এর প্রেক্ষাপটে একটি ঘটনা শোনাব আপনাদের।
এক : ইমাম নুআইম বিন হাম্মাদ রহ. (মৃত্যু: ২২৮ হি.) 'আল-ফিতান’ গ্রন্থে বলেন :
حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، عَنْ صَدَقَةَ بْنِ خَالِدٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ حُمَيْدٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنْ تُبَيْعٍ، قَالَ: سَيَعُوذُ بِمَكَّةَ عَائِذٌ فَيُقْتَلُ، ثُمَّ يَمْكُثُ النَّاسُ بُرْهَةً مِنْ دَهْرِهِمْ، ثُمَّ يَعُوذُ عَائِذٌ آخَرُ، فَإِنْ أَدْرَكْتَهُ فَلَا تَغْزُوَنَّهُ، فَإِنَّهُ جَيْشُ الْخَسْفِ
'তুবাই রহ. বলেন, সত্ত্বরই মক্কায় এক আশ্রয়প্রার্থী আশ্রয় নিবে। অতঃপর তাকে হত্যা করা হবে। এরপর লোকেরা কিছুকাল অতিক্রান্ত করতে না করতেই আরেকজন আশ্রয়প্রার্থী (মক্কায়) আশ্রয় নিবে। সুতরাং তুমি যদি তাঁর যুগ পাও তাহলে তাঁর বিরূদ্ধে যুদ্ধে যেও না। কেননা, তারা হবে ভুমিধসে ধ্বংসপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী।' (আল ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ : ১/৩২৭ হাদীস নং ৯৩৫)
হাদীসটির সনদ বিশ্লেষণ : এটা প্রখ্যাত তাবেয়ি তুবাই বিন আমের হুমাইরি রহ.-এর বর্ণিত হাদিস, যাকে হাদিসের পরিভাষায় 'হাদিসে মাকতু’ বলা হয়। রাসুলুলাহ সা.-এর যুগ পেলেও তিনি আবু বকর রা.-এর খেলাফত আমলে ইসলাম গ্রহণ করেন । তিনি বিখ্যাত তাবেয়ি কাবে আহবার রহ.-এর স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান। তিনি আবু দারদা রা., কাবে আহবার রহ.-সহ প্রমূখ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। আর তাঁর থেকে আতা রহ., মুজাহিদ রহ.-সহ বিখ্যাত তাবেয়িগণ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি সাহাবিদের মাঝে খুবই গ্রহণযোগ্য ও বিজ্ঞ আলেম হিসাবে পরিচিত ছিলেন। সর্বাধিক হাদিস সংরক্ষণকারী আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রা. এর মতো জলিলুল কদর সাহাবি পর্যন্ত তাকে "শামের সবচেয়ে জ্ঞানী" বলে অভিহিত করেছেন এবং তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞাসা করতেন। (দেখুন, তাহজিবুল কামাল : ৪/৩১৬, জীবনী নং ৭৯৬) এ হাদিসটির সনদ সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহিহ না হলেও যথেষ্ঠ মানসম্পন্ন ও শক্তিশালী।
এ হাদিসটির বর্ণনাকারীদের সবাই নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত। শুধুমাত্র অলিদ বিন মুসলিম নামক একজন বর্ণনাকারী মুদাল্লিস হওয়ায় বর্ণনায় একটু দুর্বলতা সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য সহিহ মুসলিমের একটি বর্ণনার দ্বারা এ দুর্বলতা অনেকটাই দূর হয়ে যায়। মুসলিম শরিফের বর্ণনাটি হলো :
فَقَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَعُوذُ عَائِذٌ بِالْبَيْتِ، فَيُبْعَثُ إِلَيْهِ بَعْثٌ، فَإِذَا كَانُوا بِبَيْدَاءَ مِنَ الْأَرْضِ خُسِفَ بِهِمْ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ فَكَيْفَ بِمَنْ كَانَ كَارِهًا؟ قَالَ: يُخْسَفُ بِهِ مَعَهُمْ، وَلَكِنَّهُ يُبْعَثُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى نِيَّتِهِ
'উম্মে সালামা রা. বলেন, নবি কারিম সা. বলেছেন, কাবা ঘরের পাশে একজন লোক আশ্রয় নিবে। তাঁর বিরুদ্ধে একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন বায়দা নামক স্থানে পৌঁছবে তখন তাদেরকে নিয়ে জমিন ধসে যাবে। উম্মে সালামা রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা.-কে জিজ্ঞেস করলাম, অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে যারা তাদের সাথে যাবে তাদের কী অবস্থা হবে? উত্তরে নবি কারিম সা. বললেন, তাকে সহ জমিন ধসে যাবে। তবে কিয়ামতের দিন সে আপন নিয়তের ওপর পুনরুত্থিত হবে। (সহিহ মুসলিম : ৪/২২০৮, হাদীস নং ২৮৮২)
তাই সর্বদিক বিবেচনায় উপরোক্ত হাদিসটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের বলা যায়।
হাদিসটির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা :
এ হাদিসে বাইতুল্লাহ শরিফে যিনি আশ্রয়প্রার্থী হবেন বলা হয়েছে, তিনি হলেন মাহদি। তবে এখানে দুজন মাহদি আসবে। প্রথমজন হবে মিথ্যুক ও ভণ্ড, যার বিরূদ্ধে সৈন্যবাহিনী পাঠানো হলে সৈন্যবাহিনী ধ্বংস হবে না; বরং সে নিজেই নিহত হয়ে যাবে। আর দ্বিতীয় ব্যক্তিটি হবেন সত্যিকার মাহদি, যার বিরূদ্ধে প্রেরিত বাহিনী ভুমিধসে সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে। হাদিসে বলা হয়েছে, সত্য ও মিথ্যা মাহদির মাঝের ব্যবধান হবে কিছুকাল। হাদিসে بُرْهَةً শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষায় এর অর্থ হলো, কিছু সময়। উলামায়ে কিরামের মতে এ 'কিছু সময়' বলতে ৩০ থেকে ৪০ বছর, কারও মতে ৫০ বছর এবং কারও মতে ৯০ বছর উদ্দেশ্য। তবে সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত হলো, এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কোনো বছর নির্ধারণ করার কোনো সুযোগ নেই। সেটা 40 বছর পরও হতে পারে, 50 বছর পরও হতে পারে, 90 বছর পরও হতে পারে, আবার এর কিছু আগেপরেও হতে পারে। আল্লাহই ভালো জানেন। তবে এটা নিশ্চিত যে, মিথ্যা মাহদির মৃত্যুর কিছুকালের মধ্যেই সত্য মাহদির আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
মিথ্য মাহদির আত্মপ্রকাশ :
২০ নভেম্বর ১৯৭৯ সালে ফজরের সময় জুহাইমান আল ওতাইবি নামক এক ব্যক্তি অস্ত্র ও লোকবল নিয়ে আকস্মিকভাবে বাইতুল্লাহর দখল নিয়ে নেয়। তারপর মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সৌদি সরকারের বিভিন্ন দূর্নীতি ও দুঃশাসনের বিবরণ দিয়ে ঘোষণা করল যে, এখন এ থেকে মুক্তির সময় এসে গেছে। রাসুল সা. হাদিসে যে মাহদির কথা বলেছিলেন সে মাহদি এখানে উপস্থিত। তারপর সে লোকদের মধ্য হতে এক ব্যক্তিকে সামনে আসতে বলল। লোকটি ধীরগতিতে উঠে এসে রুকনে ইয়ামানি ও মাকামে ইবরাহিমের মধ্যবর্তী স্থানে দাঁড়াল। এরপর জুহাইমান বলল, এই হলো সে প্রতিশ্রুত মাহদি। দেখো, এর নাম মুহাম্মাদ, পিতার নাম আব্দুল্লাহ। সে কুরাইশের কাহতান বংশের লোক। রাসুলুল্লাহ সা.-এর ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ী কুরাইশ বংশীয় সে প্রতিশ্রুত মাহদি এই স্থানেই বাইআত গ্রহণ করবে। অতএব তোমরা সবাই তার হাতে বাইআত হয়ে যাও। লোকেরা ভয়ে সবাই তার হাতে বাইআত গ্রহণ করে। জুহাইমান কাবা শরিফের বিভিন্ন কক্ষে আগে থেকেই গোপনে এবং জানাজাবাহী খাটিয়ায় করে অনেক অস্ত্র মজুদ করে রেখেছিল। সে টেলিফোনসহ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিল। তারপর তিনদিন পর্যন্ত কাবা দখল করে থাকল। অবশেষে সৌদি সেনাবাহিনী ফ্রান্স ও পাকিস্তানের স্পেশাল ফোর্সের সাহায্যে তাদের বিরূদ্ধে অভিযান শুরু করে। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর তারা কাবা শরিফকে মিথ্যা মাহদির দখলমুক্ত করতে সক্ষম হয়। এতে ১২৭ জন সেনা ও পুলিশ নিহত এবং ৪৫১ জন আহত হয়। তাদের ২৬৯ জন নিহত হয় এবং জুহাইমান-সহ তার ৭০ জন সহচর গ্রেফতার হয়। তিনদিন পর তাদের ৬৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় এবং বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
ঘটনাটির লিংক :
(ভিডিও ইংরেজি)
(ভিডিও বাংলা)
(বিবিসি বাংলা)
এ ঘটনার আলোকে দেখা যাচ্ছে, কাবা শরিফে মিথ্যা মাহদির আত্মপ্রকাশ ইতিমধ্যে ঘটে গেছে। আর হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী তার কিছুকাল পর তথা ৪০ বা ৫৯ বা ৯০ বছর কিংবা এর কিছু আগেপরে সত্যিকার মাহদির আবির্ভাব ঘটবে। এখন ২০১৮ সাল। ইতিমধ্যে ঘটনার ৩৯ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। জানি না, দু,এক বছর বা আট, দশ বছরের মধ্যে কিংবা আমাদের জীবদ্দশায়ই সত্য মাহদির আত্মপ্রকাশ ঘটে কি না? প্রবল সম্ভাবনা মনে হচ্ছে। বাকি আল্লাহই ভালো জানেন। তবে দাজ্জালের আবির্ভাব সংক্রান্ত এর চেয়েও আশ্চর্যজনক আরেকটি ঘটনা আমাদেরকে শক্তিশালী ধারণা দিচ্ছে যে, ইমাম মাহদি দু,চার বছরের মধ্যেই সম্ভবত আত্মপ্রকাশ করবেন। সে ঘটনা আজ না হয় থাক। আল্লাহ চাহে তো পরবর্তী পোস্টে এর বিশদ বিবরণ হাদিসের আলোকে পর্যালোচনা করে দেখাব।
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সমগ্র বিশ্ব আজ অস্থির ও দিকভ্রান্ত। সকলের মাথায়ই এ প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে যে, ইমাম মাহদির আগমন কি অত্যাসন্ন? খুব শীঘ্রই কি দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে? প্রশ্নটি যেমন গুরুত্বপূর্ণ তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এর প্রামাণ্য পর্যালোচনার। এককথায় উত্তর দিতে হলে বলব, হ্যাঁ ভাই, খুবই অত্যাসন্ন, একেবারেই নিকটে; এত নিকটে যে, গভীরভাবে একটু কান পাতলেই আমরা এর পদধ্বনি শুনতে পাব।
বিষয়টি নিয়ে অনেকে কিছু লেখালেখি করলেও প্রামাণ্য হাদিস ও সঠিক তথ্যসূত্র সহকারে আলোচনা না করায় তা ঘোলাটে রূপ ধারণ করেছে। তাই আমি এ বিষয়ে তথ্যবহুল এমন কিছু আলোচনা পেশ করার ইচ্ছা পোষণ করেছি, যদ্বারা আপনি বিস্ময়াভূত না হয়ে পারবেন না।
আজ শুধু একটি হাদিস ও এর প্রেক্ষাপটে একটি ঘটনা শোনাব আপনাদের।
এক : ইমাম নুআইম বিন হাম্মাদ রহ. (মৃত্যু: ২২৮ হি.) 'আল-ফিতান’ গ্রন্থে বলেন :
حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، عَنْ صَدَقَةَ بْنِ خَالِدٍ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ حُمَيْدٍ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنْ تُبَيْعٍ، قَالَ: سَيَعُوذُ بِمَكَّةَ عَائِذٌ فَيُقْتَلُ، ثُمَّ يَمْكُثُ النَّاسُ بُرْهَةً مِنْ دَهْرِهِمْ، ثُمَّ يَعُوذُ عَائِذٌ آخَرُ، فَإِنْ أَدْرَكْتَهُ فَلَا تَغْزُوَنَّهُ، فَإِنَّهُ جَيْشُ الْخَسْفِ
'তুবাই রহ. বলেন, সত্ত্বরই মক্কায় এক আশ্রয়প্রার্থী আশ্রয় নিবে। অতঃপর তাকে হত্যা করা হবে। এরপর লোকেরা কিছুকাল অতিক্রান্ত করতে না করতেই আরেকজন আশ্রয়প্রার্থী (মক্কায়) আশ্রয় নিবে। সুতরাং তুমি যদি তাঁর যুগ পাও তাহলে তাঁর বিরূদ্ধে যুদ্ধে যেও না। কেননা, তারা হবে ভুমিধসে ধ্বংসপ্রাপ্ত সেনাবাহিনী।' (আল ফিতান, নুআইম বিন হাম্মাদ : ১/৩২৭ হাদীস নং ৯৩৫)
হাদীসটির সনদ বিশ্লেষণ : এটা প্রখ্যাত তাবেয়ি তুবাই বিন আমের হুমাইরি রহ.-এর বর্ণিত হাদিস, যাকে হাদিসের পরিভাষায় 'হাদিসে মাকতু’ বলা হয়। রাসুলুলাহ সা.-এর যুগ পেলেও তিনি আবু বকর রা.-এর খেলাফত আমলে ইসলাম গ্রহণ করেন । তিনি বিখ্যাত তাবেয়ি কাবে আহবার রহ.-এর স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান। তিনি আবু দারদা রা., কাবে আহবার রহ.-সহ প্রমূখ থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। আর তাঁর থেকে আতা রহ., মুজাহিদ রহ.-সহ বিখ্যাত তাবেয়িগণ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি সাহাবিদের মাঝে খুবই গ্রহণযোগ্য ও বিজ্ঞ আলেম হিসাবে পরিচিত ছিলেন। সর্বাধিক হাদিস সংরক্ষণকারী আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস রা. এর মতো জলিলুল কদর সাহাবি পর্যন্ত তাকে "শামের সবচেয়ে জ্ঞানী" বলে অভিহিত করেছেন এবং তাঁর কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় জিজ্ঞাসা করতেন। (দেখুন, তাহজিবুল কামাল : ৪/৩১৬, জীবনী নং ৭৯৬) এ হাদিসটির সনদ সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহিহ না হলেও যথেষ্ঠ মানসম্পন্ন ও শক্তিশালী।
এ হাদিসটির বর্ণনাকারীদের সবাই নির্ভরযোগ্য ও বিশ্বস্ত। শুধুমাত্র অলিদ বিন মুসলিম নামক একজন বর্ণনাকারী মুদাল্লিস হওয়ায় বর্ণনায় একটু দুর্বলতা সৃষ্টি হয়েছে। অবশ্য সহিহ মুসলিমের একটি বর্ণনার দ্বারা এ দুর্বলতা অনেকটাই দূর হয়ে যায়। মুসলিম শরিফের বর্ণনাটি হলো :
فَقَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَعُوذُ عَائِذٌ بِالْبَيْتِ، فَيُبْعَثُ إِلَيْهِ بَعْثٌ، فَإِذَا كَانُوا بِبَيْدَاءَ مِنَ الْأَرْضِ خُسِفَ بِهِمْ فَقُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ فَكَيْفَ بِمَنْ كَانَ كَارِهًا؟ قَالَ: يُخْسَفُ بِهِ مَعَهُمْ، وَلَكِنَّهُ يُبْعَثُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى نِيَّتِهِ
'উম্মে সালামা রা. বলেন, নবি কারিম সা. বলেছেন, কাবা ঘরের পাশে একজন লোক আশ্রয় নিবে। তাঁর বিরুদ্ধে একদল সৈনিক প্রেরণ করা হবে। সৈন্যরা যখন বায়দা নামক স্থানে পৌঁছবে তখন তাদেরকে নিয়ে জমিন ধসে যাবে। উম্মে সালামা রা. বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সা.-কে জিজ্ঞেস করলাম, অনিচ্ছা সত্ত্বেও বাধ্য হয়ে যারা তাদের সাথে যাবে তাদের কী অবস্থা হবে? উত্তরে নবি কারিম সা. বললেন, তাকে সহ জমিন ধসে যাবে। তবে কিয়ামতের দিন সে আপন নিয়তের ওপর পুনরুত্থিত হবে। (সহিহ মুসলিম : ৪/২২০৮, হাদীস নং ২৮৮২)
তাই সর্বদিক বিবেচনায় উপরোক্ত হাদিসটি গ্রহণযোগ্য পর্যায়ের বলা যায়।
হাদিসটির সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা :
এ হাদিসে বাইতুল্লাহ শরিফে যিনি আশ্রয়প্রার্থী হবেন বলা হয়েছে, তিনি হলেন মাহদি। তবে এখানে দুজন মাহদি আসবে। প্রথমজন হবে মিথ্যুক ও ভণ্ড, যার বিরূদ্ধে সৈন্যবাহিনী পাঠানো হলে সৈন্যবাহিনী ধ্বংস হবে না; বরং সে নিজেই নিহত হয়ে যাবে। আর দ্বিতীয় ব্যক্তিটি হবেন সত্যিকার মাহদি, যার বিরূদ্ধে প্রেরিত বাহিনী ভুমিধসে সমূলে ধ্বংস হয়ে যাবে। হাদিসে বলা হয়েছে, সত্য ও মিথ্যা মাহদির মাঝের ব্যবধান হবে কিছুকাল। হাদিসে بُرْهَةً শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আরবী ভাষায় এর অর্থ হলো, কিছু সময়। উলামায়ে কিরামের মতে এ 'কিছু সময়' বলতে ৩০ থেকে ৪০ বছর, কারও মতে ৫০ বছর এবং কারও মতে ৯০ বছর উদ্দেশ্য। তবে সবচেয়ে বিশুদ্ধ মত হলো, এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কোনো বছর নির্ধারণ করার কোনো সুযোগ নেই। সেটা 40 বছর পরও হতে পারে, 50 বছর পরও হতে পারে, 90 বছর পরও হতে পারে, আবার এর কিছু আগেপরেও হতে পারে। আল্লাহই ভালো জানেন। তবে এটা নিশ্চিত যে, মিথ্যা মাহদির মৃত্যুর কিছুকালের মধ্যেই সত্য মাহদির আত্মপ্রকাশ ঘটবে।
মিথ্য মাহদির আত্মপ্রকাশ :
২০ নভেম্বর ১৯৭৯ সালে ফজরের সময় জুহাইমান আল ওতাইবি নামক এক ব্যক্তি অস্ত্র ও লোকবল নিয়ে আকস্মিকভাবে বাইতুল্লাহর দখল নিয়ে নেয়। তারপর মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সৌদি সরকারের বিভিন্ন দূর্নীতি ও দুঃশাসনের বিবরণ দিয়ে ঘোষণা করল যে, এখন এ থেকে মুক্তির সময় এসে গেছে। রাসুল সা. হাদিসে যে মাহদির কথা বলেছিলেন সে মাহদি এখানে উপস্থিত। তারপর সে লোকদের মধ্য হতে এক ব্যক্তিকে সামনে আসতে বলল। লোকটি ধীরগতিতে উঠে এসে রুকনে ইয়ামানি ও মাকামে ইবরাহিমের মধ্যবর্তী স্থানে দাঁড়াল। এরপর জুহাইমান বলল, এই হলো সে প্রতিশ্রুত মাহদি। দেখো, এর নাম মুহাম্মাদ, পিতার নাম আব্দুল্লাহ। সে কুরাইশের কাহতান বংশের লোক। রাসুলুল্লাহ সা.-এর ভবিষ্যতবাণী অনুযায়ী কুরাইশ বংশীয় সে প্রতিশ্রুত মাহদি এই স্থানেই বাইআত গ্রহণ করবে। অতএব তোমরা সবাই তার হাতে বাইআত হয়ে যাও। লোকেরা ভয়ে সবাই তার হাতে বাইআত গ্রহণ করে। জুহাইমান কাবা শরিফের বিভিন্ন কক্ষে আগে থেকেই গোপনে এবং জানাজাবাহী খাটিয়ায় করে অনেক অস্ত্র মজুদ করে রেখেছিল। সে টেলিফোনসহ সকল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে দিল। তারপর তিনদিন পর্যন্ত কাবা দখল করে থাকল। অবশেষে সৌদি সেনাবাহিনী ফ্রান্স ও পাকিস্তানের স্পেশাল ফোর্সের সাহায্যে তাদের বিরূদ্ধে অভিযান শুরু করে। রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর তারা কাবা শরিফকে মিথ্যা মাহদির দখলমুক্ত করতে সক্ষম হয়। এতে ১২৭ জন সেনা ও পুলিশ নিহত এবং ৪৫১ জন আহত হয়। তাদের ২৬৯ জন নিহত হয় এবং জুহাইমান-সহ তার ৭০ জন সহচর গ্রেফতার হয়। তিনদিন পর তাদের ৬৩ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় এবং বাকিদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়।
ঘটনাটির লিংক :
(ভিডিও ইংরেজি)
(ভিডিও বাংলা)
(বিবিসি বাংলা)
এ ঘটনার আলোকে দেখা যাচ্ছে, কাবা শরিফে মিথ্যা মাহদির আত্মপ্রকাশ ইতিমধ্যে ঘটে গেছে। আর হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী তার কিছুকাল পর তথা ৪০ বা ৫৯ বা ৯০ বছর কিংবা এর কিছু আগেপরে সত্যিকার মাহদির আবির্ভাব ঘটবে। এখন ২০১৮ সাল। ইতিমধ্যে ঘটনার ৩৯ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। জানি না, দু,এক বছর বা আট, দশ বছরের মধ্যে কিংবা আমাদের জীবদ্দশায়ই সত্য মাহদির আত্মপ্রকাশ ঘটে কি না? প্রবল সম্ভাবনা মনে হচ্ছে। বাকি আল্লাহই ভালো জানেন। তবে দাজ্জালের আবির্ভাব সংক্রান্ত এর চেয়েও আশ্চর্যজনক আরেকটি ঘটনা আমাদেরকে শক্তিশালী ধারণা দিচ্ছে যে, ইমাম মাহদি দু,চার বছরের মধ্যেই সম্ভবত আত্মপ্রকাশ করবেন। সে ঘটনা আজ না হয় থাক। আল্লাহ চাহে তো পরবর্তী পোস্টে এর বিশদ বিবরণ হাদিসের আলোকে পর্যালোচনা করে দেখাব।
#সংগৃহীত
Comment