আলহামদুলিল্লাহি ওয়াহদাহ ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু ‘আলা মান-লা নাবিয়্যা বা’দাহ।
মহান আল্লাহ্* তা’আলার হামদ ও সানা এবং প্রিয় নবী সাঃ এর উপর দুরুদ ও সালাম পাঠের পর অত্যন্ত মনোবেদনার সাথে বলতে হচ্ছে, যে বিষয়টি নিয়ে এই লেখাটি লিখতে হচ্ছে,তা লেখার মোটেও ইচ্ছা ছিলো না। ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে যে, গ্লোবাল জিহাদের একটি তাৎপর্যপূর্ণ অংশ তথা ইরাকের জিহাদের সাথে জড়িত মুজাহিদদের ব্যাপারে এই লেখাটি লিখতে হচ্ছে। আল্লাহ্* তা’আলা মুমিনদেরকে সর্বাবস্থায় সত্য বলার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ্* তা’আলার সেই নির্দেশের পূর্ণ আনুগত্য করতেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইরাকের মুজাহিদদের উত্তরসূরী হিসেবে বর্তমান ইসলামিক স্টেইট(পূর্বের ইসলামিক স্টেইট ইন ইরাক্ব এন্ড শাম, তার পূর্বে ইসলামিক স্টেইট ইন ইরাক্ব,তার পূর্বে আল-কায়েদা ইন ইরাক্ব) এর তাকফীরের ক্ষেত্রে পরিবর্তিত অবস্থান ও তৎসংশ্লিষ্ট জরুরি কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেই এই ভূমিকার অবতারণা।
আইএসের বর্তমান বাস্তবতা নিয়ে আলোচনার পূর্বে একটি আয়াত পেশ করা জরুরি মনে করছি।
আল্লাহ্* তা’আলা ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ ! আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা ন্যায়বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো। আর কোনো জাতির প্রতি বিদ্বেষ যেনো তোমাদেরকে ইনসাফ থেকে বিরত রাখতে প্ররোচিত না করে। তোমরা ইনসাফ কর,কারণ তা তাক্বওয়ার অধিক নিকটবর্তী। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর, সে বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। ”(সূরাহ মায়িদাহ-০৮)
অত্যন্ত মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে যখন শাইখ উসামা বিন লাদেন রাহিঃ এর প্রতিষ্ঠিত মানহাজ থেকে তাদের বিচ্যুতি নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে,তখনও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য রব্বুল ‘আলামীনের রহমত ও তাউফীক্ব কামনা করছি। আল্লাহ্* তা’আলা আমাদেরকে যেখানে কুফফারদের বিরুদ্ধেও ইনসাফ কায়েম করতে বলেছেন,সেখানে মুসলিমদের প্রতি ইনসাফ না করার মতো অবিচার থেকে সুমহান রব্বের পানাহ চাচ্ছি।
ইসলামিক স্টেইট বা আইএস গ্লোবাল-জিহাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। গ্লোবাল জিহাদের মহানায়ক শাইখ উসামা রাহিঃ এর হাত ধরে তাদের উত্থান হলেও আজ তারা এমন এক অবস্থানে নিজেদের প্রকাশ করছে,যাতে প্রমাণিত হ্য়,তারা শাইখ উসামা রাহিঃ এর প্রতিষ্ঠিত সঠিক মানহাজ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। তথাপি যেহেতু তাদের জন্ম আল-কায়েদার হাত ধরে এবং তারা এখনো শাইখ উসামা রাহিঃ এর প্রতিষ্ঠিত সঠিক মানহাজের প্রতিষ্ঠিত বলে নিজেদেরকে পেশ করে থাকে,তাই তাদের বর্তমান বাস্তবতা স্পষ্ট করা অতীব জরুরী। আলোনায় মূলত ৩ টি বিষয় উপস্থাপনের চেষ্টা করেছিঃ-
১। তাকফীরের ক্ষেত্রে আইএসের বিচ্যুতি,যা তাদেরকে এমন এক অবস্থানে পৌছে দিয়েছে,যা রীতিমত ভীতিকর ও আতঙ্কজনক। তারা আজ যাদেরকে তাকফীর করছে,বিগত ২ বছর পূর্বে তারা এসব ক্ষেত্রে তাকফীর করাকে স্পষ্ট ভাষায় অস্বীকার করতো।তাদের এই তাকফীর প্রথমত শুরু হয় সিরিয়ার কিছু দলকে দিয়ে। অতঃপর তাদের এই তাকফীরের ব্যাপ্তি আল-কায়েদা ব্যতীত সিরিয়ার সব ইসলামী দলের উপর পতিত হয়। অতঃপর তারা সিরিয়ার আল-কায়েদার শাখা জাবহাতুন নুসরাকে তাকফীর করে। আর এখন আইএস গ্লোবাল জিহাদের নেতৃত্ব দেয়া আল-কায়েদা ও তালিবান মুজাহিদদেরকে সরাসরি তাকফীর করে অর্থাৎ মুরতাদ বলে সম্বোধন করে। এখন থেকে ২ বছর বা তার কিছু পূর্বে তারা তাকফীর নিয়ে কী বক্তব্য দিয়েছিলো আর বর্তমানে কী বলছে, তাদের এ দু’টো বক্তব্য একত্রিত করলে প্রতিটি আক্বলবান ব্যক্তির কাছে তাদের মানহাজচ্যুতির বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হবে। তাদের পূর্বের বক্তব্য দেখলে আজকের আইএসকে অপরিচিত মনে হবে। আর আজকের আইএসের তাকফীর করার ধরণ দেখলে,পূর্বে দেয়া তাদের বক্তব্যগুলোকে তাদের বলে মেনে নিতে অত্যন্ত কষ্ট হবে বলে আশা করি। আর তাই তাকফীরের ক্ষেত্রে তাদের আকীদা ও মানহাজগত বিচ্যুতি স্পষ্ট করা অতীব জরুরি।
২। গ্লোবাল জিহাদের নেতৃত্ব দেয়া আল-কায়েদার একটি শাখা থেকেই আজকের আইএসের জন্ম এবং তারা আল-কায়েদা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাদের আমীরের উপর আল-কায়েদার আমীর শাইখ আইমান আল-যাওয়াহিরী হাফিঃ এর বাই’আত বিদ্যমান ছিলো। কিন্তু বর্তমানে আইএস এই দাবী করে যে, শাইখ আইমান আল-যাওয়াহিরী হাফিঃ এর কাছে তাদের বাই’আত ছিলো না ! তারা আল-কায়েদার অংশ ছিলো এটিও অস্বীকার করে। এমনকি তারা আল-কায়েদার বাই’আতের অধীনে থাকার বিষয়টি এড়াতে কূট-কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। তাদের পূর্বের অফিসিয়াল বক্তব্য ও বর্তমান বক্তব্যগুলো উপস্থাপনের মাধ্যমে আল-কায়েদার কাছে তাদের বাই’আতের ধরণ ও প্রকৃতি প্রত্যেকের কাছে স্পষ্ট হবে আশা করি ইনশাআল্লাহ্*।
৩। গ্লোবাল জিহাদের উমারা ও আলিমদের ব্যাপারে তারা পূর্বে কী বলতো এবং বর্তমানে কী বলে তা মিলালে প্রত্যেক ইনসাফগার ব্যক্তির কাছে স্পষ্ট হবে গ্লোবাল জিহাদের মানহাজ ও আচরণ অনুসরণ করার ব্যাপারে তারা কোথায় অবস্থান করছে।
*** সিরিয়ায় বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের ব্যাপারে প্রাথমিক কিছু কথাঃ
২০১৪ সালের ৩ জানুয়ারি ISIS এর বিরুদ্ধে সিরিয়ার যেসব দল লড়াই শুরু করেছিলো,তাদের সবার লক্ষ্য এক ছিলো না। প্রকৃত সত্য হচ্ছে আমেরিকাপন্থী ফ্রি সিরিয়ান আর্মির একটি অংশ ‘জাইশুল মুজাহিদীন’ নামে এবং আমেরিকার দালাল জামাল মারুফের গ্রুপ মিলে সর্বপ্রথম ISIS এর বিরুদ্ধে হামলা চালায়। এটাই হচ্ছে সত্য কথা,যা স্বয়ং ফ্রি সিরিয়ান আর্মির মুখপাত্র স্বীকার করেছিলো। আর আহরার আশ-শাম ও ইসলামিক ফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন দল তাদেরকে তাকফীর করা এবং তাদের কিছু নেতাকে ISIS কর্তৃক হত্যার কারণে তারা প্রথম থেকেই এই হামলার সাথে যুক্ত হয়,যা আহরার আশ-শামের সাবেক প্রধান এবং ইসলামিক ফ্রন্টের সাবেক রাজনৈতিক প্রধান হাসান আব্বুদ সাহেব স্বীকার করেছেন। আর সেসময়ে সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা জাবহাতুন নুসরাহ আইএসের ভাইদেরকে আশ্রয় দেয়াসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে,যা আইএসের শামের একজন শার’য়ী স্পষ্ট ভাষায় স্বীকার করেছেন। নিম্নে তার প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। আর এই লড়াই শুরু হওয়ার পর জাবহাতুন নুসরাহ সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে তা থামানোর জন্য,কিন্তু আইএস তাতে সাড়া দেয়নি। অথচ আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে, যেই জাবহাতুন নুসরাহ ISIS এর ভাইদেরকে নিজেদের নিরাপত্তার ঝুকি নিয়ে সাহায্য করেছে,সেই ISIS জাবহাতুন নুসরার রাক্কা প্রদেশের আমীরসহ আরো বহু মুজাহিদকে হত্যা করেছে। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে জাবহাতুন নুসরাহও আইএসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক লড়াইয়ে শরীক হয়েছে। আর তারই ধারাবাহিকতায় আইএস জাবহাতুন নুসরাহকে তাকফীর তথা মুরতাদ বলে ঘোষণা দিয়েছে।
সিরিয়ার বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে যখন অভ্যন্তরীণ লড়াই শুরু হয়,তখন তৎকালীন ISIS এর বিরুদ্ধে সিরিয়ার অন্যান্য জিহাদী গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে তাকফীরের অভিযোগ উঠে অর্থাৎ ‘আইএস (তৎকালীন ISIS বা ইসলামিক স্টেইট ইন ইরাক্ব এন্ড শাম) অন্যান্য জিহাদী দলগুলোকে মুরতাদ মনে করে’ এই অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছিলো। কিন্তু আইএসের শামের একজন শার’য়ীর পক্ষ থেকে দেয়া তাদের অফিসিয়াল বার্তার মাধ্যমে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করা হয়েছিলো। এমনকি আইএসের উক্ত শার’য়ী দ্ব্যার্থহীন ভাষায় একথাও বলেছিলেন, যে ব্যক্তি এধরণের তাকফীর করবে তারা খাওয়ারিজদের অন্তর্ভুক্ত ।
*** আইএসের বিরুদ্ধে তাকফীরের অভিযোগের ব্যাপারে আইএসের শামের একজন শার’য়ীর বক্তব্যঃ
তৎকালীন ISIS(বর্তমান আইএস) এর বিরুদ্ধে সিরিয়ার অন্যান্য জিহাদী গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে তাকফীরের অভিযোগ উত্থাপনের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের জানুয়ারির ২১ তারিখ তৎকালীন ISIS এর শামের একজন শার’য়ীর(শরী’আহ বিশেষজ্ঞ) “يا ليت قومي يعلمون" رسالة من مجاهد في الدولة الإسلامية إلى العلماء الصادقين والدعاة الناصحين وإخوانه المجاهدين وسائر المسلمين
অর্থাৎ “ইসলামিক স্টেইটের একজন মুজাহিদের পক্ষ থেকে ‘সত্যবাদী আলিম’, নাসীহাহ প্রদানকারী ‘দায়ী’, মুজাহিদ ভাই ও সমস্ত মুসলিমদের প্রতি বার্তা” শিরোনামে একটি বার্তা দেন।
বার্তাটির লিংক...... https://justpaste.it/e5vd অথবা https://dawaalhaq.com/post/10064 (এই সাইটটি আইএসের সমর্থক মিডিয়া এবং তাতে আইএসের প্রায় সকল সংবাদ,বার্তা প্রচার করা হয়ে থাকে। ) অথবা http://tinyurl.com/hhgf2bv
নিম্নে অনূদিত উক্ত বার্তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
তৎকালীন ISIS এর শার’য়ী “أبو عبادة المغربي محمد سموح الراشد” উনার বার্তায় বলেন........
“نعم في صفوف الدولة بعض الجنود عندهم نوع غلو بل ويمكن أن يكون ذلك عند بعض الشرعيين ، ولكن ذلك ليس من سياسة الدولة ولا منهجها ولا عقيدتها وليس تلكم الآراء هي ما يحرك الدولة أو يحكم قراراتها بحمد الله
অনুবাদঃ হ্যাঁ, দাওলার সারিতে এমন কিছু সৈন্য রয়েছে,যাদের মধ্যে গুলু বা বাড়াবাড়ির কোনো প্রকার রয়েছে; বরং এটা সম্ভব হতে পারে যে উক্ত গুলু কতিপয় শার’য়ীর মধ্যেও রয়েছে। কিন্তু তা দাওলার মূলনীতি,মানহাজ,আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত নয়। আর আল্লাহর প্রশংসায় ঐসব মত এমন নয়, যা দাওলাকে (তার মানহাজ থেকে)সরিয়ে দিবে অথবা তার মূলকে শাসন (প্রভাবিত) করবে।”
তৎকালীন ISIS(বর্তমান IS) এর উক্ত শার’য়ী আরো বলেন,
ولا يجوز لأحد أن يطلق أحكاما بالتكفير ونحوها على حركة أحرار الشام أو أي حركة أو جماعة...........
..................................... فإياكم إياكم والغلو ، ولو صدر ذلك عن أسماء معروفة ناصرتنا سابقا
অনুবাদঃ “কারো জন্য জায়েয নয় আহরার আশ-শাম অথবা যেকোনো সংগঠন বা জামা’আত এর উপর তাকফীর অথবা অনুরুপ কোনো হুকুম প্রয়োগ করা,যাদের দাবী অনুযায়ী প্রমাণ করে যে তারা আমাদের সাথে লড়াই করছে প্রতিরোধের জন্য।উভয়ের মাঝে সরাসরি সংঘর্ষের ফলে অন্যায্য বিষয়ের কারণে যে ব্যক্তি তাদেরকে তাকফীর করবে সে খাওয়ারিজদের মতের অধিক নিকটবর্তী,যাদেরকে এবং যাদের মতকে আমরা প্রত্যাখ্যান করি।
দাওলার শার’য়ী ও সৈন্য ভাইদের এ ব্যাপারে বক্তব্য হচ্ছে, এসব মুসলিম দলগুলোর জন্য রক্তের পবিত্রতা বহাল থাকবে যে পর্যন্ত না,আমাদের কাছে ইয়াক্বীনের সাথে প্রমাণিত হয়, যাতে তাদের ইসলাম ভঙ্গের কোনো কারণ স্পষ্ট হয় । নিশ্চয়ই তারা শুধুমাত্র আক্রমণকারীকে প্রতিহত করার জন্য মোকাবেলা করছে। আমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে এই লড়াইয়ের কারণ বন্ধের জন্য চেষ্টা করা।
আর এর উপর ভিত্তি করে তাদের হেডকোয়ার্টারগুলোকে লক্ষ্য করে প্রথমে বিস্ফোরণ ঘটানো বা অনুরুপ কিছু করা যাবে না। আমরা এধরণের কাজ থেকে আল্লাহর কাছে নিজেদের সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করছি। তবে যদি তাতে চর কিংবা মুরতাদ থাকে,তাহলে বিচার-বিশ্লেষণ ও প্রমাণ সাপেক্ষে প্রয়োজনের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুতরাং পবিত্র রক্ত তুচ্ছ করার ব্যাপারে সাবধান !
অনুরুপভাবে ফ্রি সিরিয়ান আর্মির উপর হুকুম প্রয়োগের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ফ্রি সিরিয়ান আর্মির সাথে যুক্ত থাকার কারণে ‘আমভাবে তাদেরকে তাকফীর করা বৈধ হবে না। অথচ আমরা সকলেই জানি ফ্রি সিরিয়ান আর্মির কর্নেল রিয়াদ আল-আসাদ এর অবস্থান ইনসাফপূর্ণ। আর ফ্রি সিরিয়ান আর্মির সাথে যুক্ত এমন অনেকে রয়েছে যারা বিভিন্ন ইসলামী গ্রুপের সাথে যুক্ত কারো কারো থেকে উত্তম।
আর এখানে এমন অনেক দল রয়েছে যারা ফ্রি সিরিয়ান আর্মির সাথে নামমাত্র সংযোগ রাখে কিন্তু তাদের সাথে মুজাহিদদের সম্পর্ক ভালো। সুতরাং এই নামে কোনো হুকুম যুক্ত করা যে, ফ্রি সিরিয়ান আর্মি মুরতাদ এধরণের প্রয়োগ করা সঠিক হবে না। আর যে তাদের(ফ্রি সিরিয়ান আর্মি) উপর ‘আমভাবে মুরতাদ হুকুম প্রয়োগ করে,তাহলে তা গুলু বা বাড়াবাড়ি যা নিষিদ্ধ। আর যেকোনো গ্রুপের উপর বিদ্রোহ কিংবা রিদ্দা বা মুরতাদ হওয়ার হুকুম প্রয়োগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ও যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে।
জাবহাতুন নুসরাহ এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলোতে আমাদের ভাইদের ব্যাপারে বক্তব্য হচ্ছে ,যারা চরম গুলু ও অতিরঞ্জনের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে,তাদের জন্য সত্যের দিকটি স্পষ্ট হবে। অথবা তাদের উপর মুরতাদ ও সাহাওয়াতদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঙ্গে ফিতনার লড়াই মিশে গেছে,ফলে তারা বিরত থাকাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। আর আলী রাঃ সাহাবীদের মধ্যে যারা উনার থেকে বিরত থেকেছে তাদেরকে ভৎসনা করেননি। অথচ অধিকাংশ আহলুল হাল্লি ওয়া-‘আক্বদের ঐক্যমত্যে তিনি শর’য়ী খলীফা ছিলেন। তদুপরি জাবহাতুন নুসরাহ এবং অন্যান্যদের মধ্যে সত্যপন্থী অনেক ভাই আমাদেরকে সাহায্য করেছেন। আর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্* তা’আলার।
আর আমাদের সাথে যারা যুদ্ধ করে তাদের প্রত্যেকের উপর ব্যক্তিগতভাবে মুরতাদের হুকুম গ্রহণ করা আবশ্যক করে না। বরং তাদের মধ্যে কিছু খিয়ানতকারী মুরতাদ রয়েছে,আবার তাদের মধ্যে কিছু প্রবৃত্তি পূজারী কবীরাহ গুণাহকারীও রয়েছে। আবার তাদের মধ্যে কিছু অজ্ঞও রয়েছে। আবার তাদের মধ্যে কিছু তাবীল বা ব্যাখ্যার আশ্রয়গ্রহণকারীও রয়েছে।আর যদিও ব্যাখার দরজা অনেককে সংকীর্ণ করে দিবে। যেহেতু রিদ্দার প্রকল্পই অধিক সুস্পষ্ট।
কিন্তু যদি তারা সকলেই একই পতাকার অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয় অতঃপর তারা ক্বিতালের আহবান করে,তাহলে তারা তাদের নিয়্যাতের উপর পুনরুত্থিত হবে। যেহেতু তাদের মধ্যে পার্থক্য করা শরীয়ত আমাদের উপর বাধ্য করেনি।
আর যদি তারা পৃথকভাবে করে অতঃপর কিছু ইসলামী দল আমাদের বিরুদ্ধে ক্বিতাল করে,তবে তা অবশ্যই রিদ্দার লড়াই হবে না । আর যে ব্যক্তি এমনটি বলে, সে খাওয়ারিজদের মত অবলম্বন করলো। বরং এই লড়াই হচ্ছে হামলাকারীকে প্রতিহত করার জন্য, অন্য কিছু নয়। অতঃপর সবচেয়ে সহজ পন্থায় তা মোকাবেলা করা হবে।
আর সর্বসম্মতিক্রমে ইসলামিক স্টেইটের বিরুদ্ধে লড়াই করা কাফিরকারী নয় এবং ঈমান ভঙ্গের কারণগুলোর মধ্যে ভঙ্গকারী কোনো কারণ নয়। বরং এধরনের লড়াইয়ের দিকে আমরা অগ্রসর হবো না এবং তা থেকে বিরত থাকার জন্য কারণ অন্বেষণ করা আমাদের জন্য আবশ্যক হবে। কিন্তু তারা যদি আমাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে,তাহলে আমরা শুধুমাত্র আমাদের পক্ষ থেকে তা প্রতিহত করবো। আর সেগুলো হবে প্রতিরক্ষামূলক।
আর সাহাওয়াত শব্দের ব্যবহার আপনারা জেনে রাখুন, এই শব্দটি কোনো শর’য়ী শব্দ নয়,যার ভিত্তিতে কোনো শর’য়ী হুকুম নির্ভর করে। বরং এটি একটি নতুন বৈশিষ্ট্য। আর মূলনীতি হচ্ছে এটিকে ‘আমভাবে প্রয়োগ না করা। কেননা এটি যুক্ত হয়েছে যে, সাহাওয়াত হচ্ছে কুফফারদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পৃক্ততা,যা রিদ্দা বা দ্বীনত্যাগ। সুতরাং আমাদের আহরার আশ-শামের ভাইদেরকে অথবা এমনকি ইসলামিক ফ্রন্টের সৈন্যদেরকে ‘আমভাবে সাহাওয়াত বলা সঠিক হবে না। এটি জুলুম এবং ভুল,যা থেকে বিরত থাকা আমাদের জন্য আবশ্যক। আর আপনারা ধারণা করবেন না, শাইখ আদনানী হাফিঃ ঐসব ইসলামী দলগুলোকে তাকফীর করার ভিত্তিতে সাহাওয়াত বৈশিষ্ট্যের বুঝাতে চেয়েছেন। এটি অবশ্যই গুলু বা বাড়াবাড়ি যা থেকে শাইখ আদনানী হাফিঃ আমাদেরকে নিষেধ করেছেন।
হে আমার ভাইয়েরা ! আপনারা জেনে রাখুন, আপনারা সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ইসলামিক স্টেইটকে সহযোগিতার দাবী করবে এমন অপরিচিত নামগুলো থেকে এমন বক্তব্য পাবেন যা জাবহাতুন নুসরার উপর পতিত হবে এবং জাবহাতুন নুসরাহকে কুফরের অপবাদ আরোপ করবে। অনুরুপভাবে আমভাবে সকল জিহাদী সংগঠনের উপর তাকফীরের অপবাদ আরোপ করবে। এধরণের কথা বাতিল এবং তা থেকে আপনাদের ভাইদের উপর আক্রমণ,তাদেরকে তাকফীর করা ও অনুরুপ বিষয় থেকে আপনাদের প্রতিরোধ কাম্য ।
সাবধান ! গুলু'র (বাড়াবাড়ি) ব্যাপারে সাবধান ! যদিও তা আমাদেরকে পূর্বে সাহায্য করেছে এমন পরিচিত মুখ থেকে আসে !”
(আইএসের শার’য়ীর অফিসিয়াল বক্তব্যের অনুবাদ। )
চলবে ইনশাআল্লাহ........
মূল লিখার লিঙ্কঃ https://justpaste.it/takfir_is
মহান আল্লাহ্* তা’আলার হামদ ও সানা এবং প্রিয় নবী সাঃ এর উপর দুরুদ ও সালাম পাঠের পর অত্যন্ত মনোবেদনার সাথে বলতে হচ্ছে, যে বিষয়টি নিয়ে এই লেখাটি লিখতে হচ্ছে,তা লেখার মোটেও ইচ্ছা ছিলো না। ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে যে, গ্লোবাল জিহাদের একটি তাৎপর্যপূর্ণ অংশ তথা ইরাকের জিহাদের সাথে জড়িত মুজাহিদদের ব্যাপারে এই লেখাটি লিখতে হচ্ছে। আল্লাহ্* তা’আলা মুমিনদেরকে সর্বাবস্থায় সত্য বলার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছেন। আল্লাহ্* তা’আলার সেই নির্দেশের পূর্ণ আনুগত্য করতেই অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইরাকের মুজাহিদদের উত্তরসূরী হিসেবে বর্তমান ইসলামিক স্টেইট(পূর্বের ইসলামিক স্টেইট ইন ইরাক্ব এন্ড শাম, তার পূর্বে ইসলামিক স্টেইট ইন ইরাক্ব,তার পূর্বে আল-কায়েদা ইন ইরাক্ব) এর তাকফীরের ক্ষেত্রে পরিবর্তিত অবস্থান ও তৎসংশ্লিষ্ট জরুরি কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেই এই ভূমিকার অবতারণা।
আইএসের বর্তমান বাস্তবতা নিয়ে আলোচনার পূর্বে একটি আয়াত পেশ করা জরুরি মনে করছি।
আল্লাহ্* তা’আলা ইরশাদ করেন, “হে ঈমানদারগণ ! আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তোমরা ন্যায়বিচারের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকো। আর কোনো জাতির প্রতি বিদ্বেষ যেনো তোমাদেরকে ইনসাফ থেকে বিরত রাখতে প্ররোচিত না করে। তোমরা ইনসাফ কর,কারণ তা তাক্বওয়ার অধিক নিকটবর্তী। আর আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয়ই তোমরা যা কর, সে বিষয়ে তিনি অবগত আছেন। ”(সূরাহ মায়িদাহ-০৮)
অত্যন্ত মানসিক যন্ত্রণা নিয়ে যখন শাইখ উসামা বিন লাদেন রাহিঃ এর প্রতিষ্ঠিত মানহাজ থেকে তাদের বিচ্যুতি নিয়ে আলোচনা করতে হচ্ছে,তখনও ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য রব্বুল ‘আলামীনের রহমত ও তাউফীক্ব কামনা করছি। আল্লাহ্* তা’আলা আমাদেরকে যেখানে কুফফারদের বিরুদ্ধেও ইনসাফ কায়েম করতে বলেছেন,সেখানে মুসলিমদের প্রতি ইনসাফ না করার মতো অবিচার থেকে সুমহান রব্বের পানাহ চাচ্ছি।
আলোচনার বিষয়বস্তু
ইসলামিক স্টেইট বা আইএস গ্লোবাল-জিহাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্য বিষয়। গ্লোবাল জিহাদের মহানায়ক শাইখ উসামা রাহিঃ এর হাত ধরে তাদের উত্থান হলেও আজ তারা এমন এক অবস্থানে নিজেদের প্রকাশ করছে,যাতে প্রমাণিত হ্য়,তারা শাইখ উসামা রাহিঃ এর প্রতিষ্ঠিত সঠিক মানহাজ থেকে অনেক দূরে সরে গেছে। তথাপি যেহেতু তাদের জন্ম আল-কায়েদার হাত ধরে এবং তারা এখনো শাইখ উসামা রাহিঃ এর প্রতিষ্ঠিত সঠিক মানহাজের প্রতিষ্ঠিত বলে নিজেদেরকে পেশ করে থাকে,তাই তাদের বর্তমান বাস্তবতা স্পষ্ট করা অতীব জরুরী। আলোনায় মূলত ৩ টি বিষয় উপস্থাপনের চেষ্টা করেছিঃ-
১। তাকফীরের ক্ষেত্রে আইএসের বিচ্যুতি,যা তাদেরকে এমন এক অবস্থানে পৌছে দিয়েছে,যা রীতিমত ভীতিকর ও আতঙ্কজনক। তারা আজ যাদেরকে তাকফীর করছে,বিগত ২ বছর পূর্বে তারা এসব ক্ষেত্রে তাকফীর করাকে স্পষ্ট ভাষায় অস্বীকার করতো।তাদের এই তাকফীর প্রথমত শুরু হয় সিরিয়ার কিছু দলকে দিয়ে। অতঃপর তাদের এই তাকফীরের ব্যাপ্তি আল-কায়েদা ব্যতীত সিরিয়ার সব ইসলামী দলের উপর পতিত হয়। অতঃপর তারা সিরিয়ার আল-কায়েদার শাখা জাবহাতুন নুসরাকে তাকফীর করে। আর এখন আইএস গ্লোবাল জিহাদের নেতৃত্ব দেয়া আল-কায়েদা ও তালিবান মুজাহিদদেরকে সরাসরি তাকফীর করে অর্থাৎ মুরতাদ বলে সম্বোধন করে। এখন থেকে ২ বছর বা তার কিছু পূর্বে তারা তাকফীর নিয়ে কী বক্তব্য দিয়েছিলো আর বর্তমানে কী বলছে, তাদের এ দু’টো বক্তব্য একত্রিত করলে প্রতিটি আক্বলবান ব্যক্তির কাছে তাদের মানহাজচ্যুতির বিষয়টি দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হবে। তাদের পূর্বের বক্তব্য দেখলে আজকের আইএসকে অপরিচিত মনে হবে। আর আজকের আইএসের তাকফীর করার ধরণ দেখলে,পূর্বে দেয়া তাদের বক্তব্যগুলোকে তাদের বলে মেনে নিতে অত্যন্ত কষ্ট হবে বলে আশা করি। আর তাই তাকফীরের ক্ষেত্রে তাদের আকীদা ও মানহাজগত বিচ্যুতি স্পষ্ট করা অতীব জরুরি।
২। গ্লোবাল জিহাদের নেতৃত্ব দেয়া আল-কায়েদার একটি শাখা থেকেই আজকের আইএসের জন্ম এবং তারা আল-কায়েদা থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত তাদের আমীরের উপর আল-কায়েদার আমীর শাইখ আইমান আল-যাওয়াহিরী হাফিঃ এর বাই’আত বিদ্যমান ছিলো। কিন্তু বর্তমানে আইএস এই দাবী করে যে, শাইখ আইমান আল-যাওয়াহিরী হাফিঃ এর কাছে তাদের বাই’আত ছিলো না ! তারা আল-কায়েদার অংশ ছিলো এটিও অস্বীকার করে। এমনকি তারা আল-কায়েদার বাই’আতের অধীনে থাকার বিষয়টি এড়াতে কূট-কৌশলের আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে। তাদের পূর্বের অফিসিয়াল বক্তব্য ও বর্তমান বক্তব্যগুলো উপস্থাপনের মাধ্যমে আল-কায়েদার কাছে তাদের বাই’আতের ধরণ ও প্রকৃতি প্রত্যেকের কাছে স্পষ্ট হবে আশা করি ইনশাআল্লাহ্*।
৩। গ্লোবাল জিহাদের উমারা ও আলিমদের ব্যাপারে তারা পূর্বে কী বলতো এবং বর্তমানে কী বলে তা মিলালে প্রত্যেক ইনসাফগার ব্যক্তির কাছে স্পষ্ট হবে গ্লোবাল জিহাদের মানহাজ ও আচরণ অনুসরণ করার ব্যাপারে তারা কোথায় অবস্থান করছে।
তাকফীরের ক্ষেত্রে আইএসের বিচ্যুতিঃ
*** সিরিয়ায় বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ের ব্যাপারে প্রাথমিক কিছু কথাঃ
২০১৪ সালের ৩ জানুয়ারি ISIS এর বিরুদ্ধে সিরিয়ার যেসব দল লড়াই শুরু করেছিলো,তাদের সবার লক্ষ্য এক ছিলো না। প্রকৃত সত্য হচ্ছে আমেরিকাপন্থী ফ্রি সিরিয়ান আর্মির একটি অংশ ‘জাইশুল মুজাহিদীন’ নামে এবং আমেরিকার দালাল জামাল মারুফের গ্রুপ মিলে সর্বপ্রথম ISIS এর বিরুদ্ধে হামলা চালায়। এটাই হচ্ছে সত্য কথা,যা স্বয়ং ফ্রি সিরিয়ান আর্মির মুখপাত্র স্বীকার করেছিলো। আর আহরার আশ-শাম ও ইসলামিক ফ্রন্টের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন দল তাদেরকে তাকফীর করা এবং তাদের কিছু নেতাকে ISIS কর্তৃক হত্যার কারণে তারা প্রথম থেকেই এই হামলার সাথে যুক্ত হয়,যা আহরার আশ-শামের সাবেক প্রধান এবং ইসলামিক ফ্রন্টের সাবেক রাজনৈতিক প্রধান হাসান আব্বুদ সাহেব স্বীকার করেছেন। আর সেসময়ে সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা জাবহাতুন নুসরাহ আইএসের ভাইদেরকে আশ্রয় দেয়াসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে,যা আইএসের শামের একজন শার’য়ী স্পষ্ট ভাষায় স্বীকার করেছেন। নিম্নে তার প্রমাণ পেশ করা হয়েছে। আর এই লড়াই শুরু হওয়ার পর জাবহাতুন নুসরাহ সর্বাত্মক চেষ্টা করেছে তা থামানোর জন্য,কিন্তু আইএস তাতে সাড়া দেয়নি। অথচ আশ্চর্য্যের বিষয় হচ্ছে, যেই জাবহাতুন নুসরাহ ISIS এর ভাইদেরকে নিজেদের নিরাপত্তার ঝুকি নিয়ে সাহায্য করেছে,সেই ISIS জাবহাতুন নুসরার রাক্কা প্রদেশের আমীরসহ আরো বহু মুজাহিদকে হত্যা করেছে। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে জাবহাতুন নুসরাহও আইএসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক লড়াইয়ে শরীক হয়েছে। আর তারই ধারাবাহিকতায় আইএস জাবহাতুন নুসরাহকে তাকফীর তথা মুরতাদ বলে ঘোষণা দিয়েছে।
সিরিয়ার বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে যখন অভ্যন্তরীণ লড়াই শুরু হয়,তখন তৎকালীন ISIS এর বিরুদ্ধে সিরিয়ার অন্যান্য জিহাদী গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে তাকফীরের অভিযোগ উঠে অর্থাৎ ‘আইএস (তৎকালীন ISIS বা ইসলামিক স্টেইট ইন ইরাক্ব এন্ড শাম) অন্যান্য জিহাদী দলগুলোকে মুরতাদ মনে করে’ এই অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছিলো। কিন্তু আইএসের শামের একজন শার’য়ীর পক্ষ থেকে দেয়া তাদের অফিসিয়াল বার্তার মাধ্যমে এসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করা হয়েছিলো। এমনকি আইএসের উক্ত শার’য়ী দ্ব্যার্থহীন ভাষায় একথাও বলেছিলেন, যে ব্যক্তি এধরণের তাকফীর করবে তারা খাওয়ারিজদের অন্তর্ভুক্ত ।
তাকফীরের ক্ষেত্রে আইএসের পূর্বের বক্তব্যঃ
*** আইএসের বিরুদ্ধে তাকফীরের অভিযোগের ব্যাপারে আইএসের শামের একজন শার’য়ীর বক্তব্যঃ
তৎকালীন ISIS(বর্তমান আইএস) এর বিরুদ্ধে সিরিয়ার অন্যান্য জিহাদী গ্রুপগুলোর পক্ষ থেকে তাকফীরের অভিযোগ উত্থাপনের প্রেক্ষিতে ২০১৪ সালের জানুয়ারির ২১ তারিখ তৎকালীন ISIS এর শামের একজন শার’য়ীর(শরী’আহ বিশেষজ্ঞ) “يا ليت قومي يعلمون" رسالة من مجاهد في الدولة الإسلامية إلى العلماء الصادقين والدعاة الناصحين وإخوانه المجاهدين وسائر المسلمين
অর্থাৎ “ইসলামিক স্টেইটের একজন মুজাহিদের পক্ষ থেকে ‘সত্যবাদী আলিম’, নাসীহাহ প্রদানকারী ‘দায়ী’, মুজাহিদ ভাই ও সমস্ত মুসলিমদের প্রতি বার্তা” শিরোনামে একটি বার্তা দেন।
বার্তাটির লিংক...... https://justpaste.it/e5vd অথবা https://dawaalhaq.com/post/10064 (এই সাইটটি আইএসের সমর্থক মিডিয়া এবং তাতে আইএসের প্রায় সকল সংবাদ,বার্তা প্রচার করা হয়ে থাকে। ) অথবা http://tinyurl.com/hhgf2bv
নিম্নে অনূদিত উক্ত বার্তার গুরুত্বপূর্ণ কিছু অংশ মনোযোগ দিয়ে পড়ুন।
তৎকালীন ISIS এর শার’য়ী “أبو عبادة المغربي محمد سموح الراشد” উনার বার্তায় বলেন........
“نعم في صفوف الدولة بعض الجنود عندهم نوع غلو بل ويمكن أن يكون ذلك عند بعض الشرعيين ، ولكن ذلك ليس من سياسة الدولة ولا منهجها ولا عقيدتها وليس تلكم الآراء هي ما يحرك الدولة أو يحكم قراراتها بحمد الله
অনুবাদঃ হ্যাঁ, দাওলার সারিতে এমন কিছু সৈন্য রয়েছে,যাদের মধ্যে গুলু বা বাড়াবাড়ির কোনো প্রকার রয়েছে; বরং এটা সম্ভব হতে পারে যে উক্ত গুলু কতিপয় শার’য়ীর মধ্যেও রয়েছে। কিন্তু তা দাওলার মূলনীতি,মানহাজ,আক্বীদার অন্তর্ভুক্ত নয়। আর আল্লাহর প্রশংসায় ঐসব মত এমন নয়, যা দাওলাকে (তার মানহাজ থেকে)সরিয়ে দিবে অথবা তার মূলকে শাসন (প্রভাবিত) করবে।”
তৎকালীন ISIS(বর্তমান IS) এর উক্ত শার’য়ী আরো বলেন,
ولا يجوز لأحد أن يطلق أحكاما بالتكفير ونحوها على حركة أحرار الشام أو أي حركة أو جماعة...........
..................................... فإياكم إياكم والغلو ، ولو صدر ذلك عن أسماء معروفة ناصرتنا سابقا
অনুবাদঃ “কারো জন্য জায়েয নয় আহরার আশ-শাম অথবা যেকোনো সংগঠন বা জামা’আত এর উপর তাকফীর অথবা অনুরুপ কোনো হুকুম প্রয়োগ করা,যাদের দাবী অনুযায়ী প্রমাণ করে যে তারা আমাদের সাথে লড়াই করছে প্রতিরোধের জন্য।উভয়ের মাঝে সরাসরি সংঘর্ষের ফলে অন্যায্য বিষয়ের কারণে যে ব্যক্তি তাদেরকে তাকফীর করবে সে খাওয়ারিজদের মতের অধিক নিকটবর্তী,যাদেরকে এবং যাদের মতকে আমরা প্রত্যাখ্যান করি।
দাওলার শার’য়ী ও সৈন্য ভাইদের এ ব্যাপারে বক্তব্য হচ্ছে, এসব মুসলিম দলগুলোর জন্য রক্তের পবিত্রতা বহাল থাকবে যে পর্যন্ত না,আমাদের কাছে ইয়াক্বীনের সাথে প্রমাণিত হয়, যাতে তাদের ইসলাম ভঙ্গের কোনো কারণ স্পষ্ট হয় । নিশ্চয়ই তারা শুধুমাত্র আক্রমণকারীকে প্রতিহত করার জন্য মোকাবেলা করছে। আমাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে এই লড়াইয়ের কারণ বন্ধের জন্য চেষ্টা করা।
আর এর উপর ভিত্তি করে তাদের হেডকোয়ার্টারগুলোকে লক্ষ্য করে প্রথমে বিস্ফোরণ ঘটানো বা অনুরুপ কিছু করা যাবে না। আমরা এধরণের কাজ থেকে আল্লাহর কাছে নিজেদের সম্পর্কহীনতা ঘোষণা করছি। তবে যদি তাতে চর কিংবা মুরতাদ থাকে,তাহলে বিচার-বিশ্লেষণ ও প্রমাণ সাপেক্ষে প্রয়োজনের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সুতরাং পবিত্র রক্ত তুচ্ছ করার ব্যাপারে সাবধান !
অনুরুপভাবে ফ্রি সিরিয়ান আর্মির উপর হুকুম প্রয়োগের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র ফ্রি সিরিয়ান আর্মির সাথে যুক্ত থাকার কারণে ‘আমভাবে তাদেরকে তাকফীর করা বৈধ হবে না। অথচ আমরা সকলেই জানি ফ্রি সিরিয়ান আর্মির কর্নেল রিয়াদ আল-আসাদ এর অবস্থান ইনসাফপূর্ণ। আর ফ্রি সিরিয়ান আর্মির সাথে যুক্ত এমন অনেকে রয়েছে যারা বিভিন্ন ইসলামী গ্রুপের সাথে যুক্ত কারো কারো থেকে উত্তম।
আর এখানে এমন অনেক দল রয়েছে যারা ফ্রি সিরিয়ান আর্মির সাথে নামমাত্র সংযোগ রাখে কিন্তু তাদের সাথে মুজাহিদদের সম্পর্ক ভালো। সুতরাং এই নামে কোনো হুকুম যুক্ত করা যে, ফ্রি সিরিয়ান আর্মি মুরতাদ এধরণের প্রয়োগ করা সঠিক হবে না। আর যে তাদের(ফ্রি সিরিয়ান আর্মি) উপর ‘আমভাবে মুরতাদ হুকুম প্রয়োগ করে,তাহলে তা গুলু বা বাড়াবাড়ি যা নিষিদ্ধ। আর যেকোনো গ্রুপের উপর বিদ্রোহ কিংবা রিদ্দা বা মুরতাদ হওয়ার হুকুম প্রয়োগের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ও যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে।
জাবহাতুন নুসরাহ এবং অন্যান্য ইসলামী দলগুলোতে আমাদের ভাইদের ব্যাপারে বক্তব্য হচ্ছে ,যারা চরম গুলু ও অতিরঞ্জনের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে,তাদের জন্য সত্যের দিকটি স্পষ্ট হবে। অথবা তাদের উপর মুরতাদ ও সাহাওয়াতদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সঙ্গে ফিতনার লড়াই মিশে গেছে,ফলে তারা বিরত থাকাকে অগ্রাধিকার দিয়েছে। আর আলী রাঃ সাহাবীদের মধ্যে যারা উনার থেকে বিরত থেকেছে তাদেরকে ভৎসনা করেননি। অথচ অধিকাংশ আহলুল হাল্লি ওয়া-‘আক্বদের ঐক্যমত্যে তিনি শর’য়ী খলীফা ছিলেন। তদুপরি জাবহাতুন নুসরাহ এবং অন্যান্যদের মধ্যে সত্যপন্থী অনেক ভাই আমাদেরকে সাহায্য করেছেন। আর সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্* তা’আলার।
আর আমাদের সাথে যারা যুদ্ধ করে তাদের প্রত্যেকের উপর ব্যক্তিগতভাবে মুরতাদের হুকুম গ্রহণ করা আবশ্যক করে না। বরং তাদের মধ্যে কিছু খিয়ানতকারী মুরতাদ রয়েছে,আবার তাদের মধ্যে কিছু প্রবৃত্তি পূজারী কবীরাহ গুণাহকারীও রয়েছে। আবার তাদের মধ্যে কিছু অজ্ঞও রয়েছে। আবার তাদের মধ্যে কিছু তাবীল বা ব্যাখ্যার আশ্রয়গ্রহণকারীও রয়েছে।আর যদিও ব্যাখার দরজা অনেককে সংকীর্ণ করে দিবে। যেহেতু রিদ্দার প্রকল্পই অধিক সুস্পষ্ট।
কিন্তু যদি তারা সকলেই একই পতাকার অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয় অতঃপর তারা ক্বিতালের আহবান করে,তাহলে তারা তাদের নিয়্যাতের উপর পুনরুত্থিত হবে। যেহেতু তাদের মধ্যে পার্থক্য করা শরীয়ত আমাদের উপর বাধ্য করেনি।
আর যদি তারা পৃথকভাবে করে অতঃপর কিছু ইসলামী দল আমাদের বিরুদ্ধে ক্বিতাল করে,তবে তা অবশ্যই রিদ্দার লড়াই হবে না । আর যে ব্যক্তি এমনটি বলে, সে খাওয়ারিজদের মত অবলম্বন করলো। বরং এই লড়াই হচ্ছে হামলাকারীকে প্রতিহত করার জন্য, অন্য কিছু নয়। অতঃপর সবচেয়ে সহজ পন্থায় তা মোকাবেলা করা হবে।
আর সর্বসম্মতিক্রমে ইসলামিক স্টেইটের বিরুদ্ধে লড়াই করা কাফিরকারী নয় এবং ঈমান ভঙ্গের কারণগুলোর মধ্যে ভঙ্গকারী কোনো কারণ নয়। বরং এধরনের লড়াইয়ের দিকে আমরা অগ্রসর হবো না এবং তা থেকে বিরত থাকার জন্য কারণ অন্বেষণ করা আমাদের জন্য আবশ্যক হবে। কিন্তু তারা যদি আমাদের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে,তাহলে আমরা শুধুমাত্র আমাদের পক্ষ থেকে তা প্রতিহত করবো। আর সেগুলো হবে প্রতিরক্ষামূলক।
আর সাহাওয়াত শব্দের ব্যবহার আপনারা জেনে রাখুন, এই শব্দটি কোনো শর’য়ী শব্দ নয়,যার ভিত্তিতে কোনো শর’য়ী হুকুম নির্ভর করে। বরং এটি একটি নতুন বৈশিষ্ট্য। আর মূলনীতি হচ্ছে এটিকে ‘আমভাবে প্রয়োগ না করা। কেননা এটি যুক্ত হয়েছে যে, সাহাওয়াত হচ্ছে কুফফারদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পৃক্ততা,যা রিদ্দা বা দ্বীনত্যাগ। সুতরাং আমাদের আহরার আশ-শামের ভাইদেরকে অথবা এমনকি ইসলামিক ফ্রন্টের সৈন্যদেরকে ‘আমভাবে সাহাওয়াত বলা সঠিক হবে না। এটি জুলুম এবং ভুল,যা থেকে বিরত থাকা আমাদের জন্য আবশ্যক। আর আপনারা ধারণা করবেন না, শাইখ আদনানী হাফিঃ ঐসব ইসলামী দলগুলোকে তাকফীর করার ভিত্তিতে সাহাওয়াত বৈশিষ্ট্যের বুঝাতে চেয়েছেন। এটি অবশ্যই গুলু বা বাড়াবাড়ি যা থেকে শাইখ আদনানী হাফিঃ আমাদেরকে নিষেধ করেছেন।
হে আমার ভাইয়েরা ! আপনারা জেনে রাখুন, আপনারা সাম্প্রতিক সময়গুলোতে ইসলামিক স্টেইটকে সহযোগিতার দাবী করবে এমন অপরিচিত নামগুলো থেকে এমন বক্তব্য পাবেন যা জাবহাতুন নুসরার উপর পতিত হবে এবং জাবহাতুন নুসরাহকে কুফরের অপবাদ আরোপ করবে। অনুরুপভাবে আমভাবে সকল জিহাদী সংগঠনের উপর তাকফীরের অপবাদ আরোপ করবে। এধরণের কথা বাতিল এবং তা থেকে আপনাদের ভাইদের উপর আক্রমণ,তাদেরকে তাকফীর করা ও অনুরুপ বিষয় থেকে আপনাদের প্রতিরোধ কাম্য ।
সাবধান ! গুলু'র (বাড়াবাড়ি) ব্যাপারে সাবধান ! যদিও তা আমাদেরকে পূর্বে সাহায্য করেছে এমন পরিচিত মুখ থেকে আসে !”
(আইএসের শার’য়ীর অফিসিয়াল বক্তব্যের অনুবাদ। )
চলবে ইনশাআল্লাহ........
মূল লিখার লিঙ্কঃ https://justpaste.it/takfir_is
Comment