Announcement

Collapse
No announcement yet.

সাইয়িদুনা উসমান রা. : যুগে যুগে বিকারগ্রস্তদের সমালোচনার শিকার এক মাজলুম সাহাবি

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সাইয়িদুনা উসমান রা. : যুগে যুগে বিকারগ্রস্তদের সমালোচনার শিকার এক মাজলুম সাহাবি

    সাইয়িদুনা উসমান রা. : যুগে যুগে বিকারগ্রস্তদের সমালোচনার শিকার এক মাজলুম সাহাবি

    দ্বীনের যেসব অধ্যায়ে কোনো ছাড় নেই, যেসব ক্ষেত্রে নীরব থাকার কোনো অবকাশ নেই, যেসব স্থানে কোনো ধরনের আপোষের সুযোগ নেই; সেগুলোর অন্যতম হলো সাহাবা সমালোচনা। কত মানুষ এ ভয়ংকর পথে পা দিয়ে ধ্বংসের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। যে-ই এ বিপদ সংকুল সাগরে ঝাপ দিয়েছে, সে-ই ডুবে মরেছে, কখনো আর কিনারে ফিরে আসতে পারেনি।
    মুহাদ্দিসিনে কিরাম রিজাল শাস্ত্র নিয়ে এত মেহনত করেছেন, যা পুরো মানবজাতির ইতিহাসে বিরল। হাদিসের বর্ণনাকারীদের দোষ-গুণ এমন নিখুঁতভাবে তুলে ধরেছেন, যা স্বয়ং বর্ণনাকারীর স্ত্রী ও নিকটাত্মীয়রা পর্যন্ত জানত না। কিন্তু এখানে এসে তাঁরা সাহাবিদের ব্যাপারে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, সাহাবিগণ এ শাস্ত্রের কাঁচি থেকে পুরোপুরি মুক্ত। তাঁদের ওপর সামান্য এতটুকু কাঁচি লাগানোও সহ্য করা হবে না। কারণ, তাঁরা নবুওয়াতের পরশ পাথরে খাঁটি সোনায় রূপান্তরিত হয়েছেন, যেখানে খুঁত খুঁজতে যাওয়া বস্তুত নবুওয়াতের ওপর অনাস্থা সৃষ্টির নামান্তর। তাই এক বাক্যে সবাই বলেছেন, ‘সাহাবায়ে কিরাম রা. সবাই নির্ভরযোগ্য, সবাই-ই বিশ্বস্ত’। এভাবেই হাদিস বর্ণনার মতো স্পর্শকাতর বিষয়েও উম্মাহর বিদগ্ধ উলামায়ে কিরাম সাহাবা সমালোচনার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছেন। তাহলে অন্যান্য বিষয়ে তাঁদের সমালোচনা করা কতটা অপরাধের হবে, একটু চিন্তা করে দেখুন!

    আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর অন্যতম আকিদা হলো, সাহাবায়ে কিরামের সমালোচনা করা যাবে না। তাঁরা সমালোচনার উর্ধ্বে। তাঁদের সমালোচনা করা ফিতনায় নিপতিত হওয়ার প্রথম সোপান। মাওলানা মওদুদিকে আমরা যেসব কারণে গোমরাহ বলে থাকি, তার অন্যতম হলো, এই সাহাবা সমালোচনা। তাঁদের মর্যাদার ওপর সামান্য আঘাতও আমরা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ সহ্য করতে পারি না। সমালোচনাকারী সে যে-ই হোক না কেন। এখানে এসে নিজ ঘরানা ও ভিন্ন ঘরানার পার্থক্য ভুলে যেতে হবে। একবাক্যে, একযোগে সবাইকে এর বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।
    মওদুদিকে যদি আমরা মুআবিয়া রা.-এর সমালোচনা করার কারণে গোমরাহ বলি, তাহলে চরমোনাইয়ের পির মুফতি ফয়জুল করিমকে কেন আমরা উসমান রা.-এর মতো জলিলুল কদর সাহাবির সমালোচনা করার কারণে গোমরাহ বলব না? আমি তো বলি, সে এখানে শুধু উসমান রা.-এর সমালোচনাই করেনি; বরং পুরো সাহাবিদেরই সমালোচনা করেছে। কেননা, উসমান রা. খলিফা হয়েছিলেন সকল সাহাবিদের ইজমার ভিত্তিতে। সবাই বুঝেশুনেই তাঁর খলিফা হওয়ার পক্ষে রায় পেশ করেছিলেন। একক সিদ্ধান্ত ভুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তে ভুল হওয়ার কোনোই সম্ভাবনা নেই। তাহলে উসমান রা. এর মতো মহান সাহাবি যদি নরম দিলের মানুষ হওয়ার কারণে খিলাফতের মতো গুরুদায়িত্ব সামলাতে না-ই পারেন, তাহলে কি সব সাহাবির চিন্তা-ভাবনা ভুল ছিল? আসলেই কি উসমান রা. এত দুর্বল ও বিচক্ষণতাহীন ছিলেন। কক্ষনোই নয়; তিনি ছিলেন বিচক্ষণ সাহবিদের মধ্যে অন্যতম, ইতিহাসে যারে উজ্জ্বল প্রমাণ রয়েছে; যদিও ইতিহাস অজ্ঞরা তা চোখে দেখে না। আসুন আগে আমরা দেখে নিই, ফয়জুল করিম সাহেব উসমান রা.-এর ব্যাপারে কী মন্তব্য করলেন, এরপর আমরা এর খণ্ডন নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

    ফয়জুল করিম সাহেব বলেন :
    “যখনই শোনছে ওমার, ফেতনাটা তো এমনিই দাইবা গেছে। কী, কথা ঠিক না? আল্লাহু আকবার! ওমার রা. থাকাকালে তেমন কোনো ইসলামি জগতের মধ্যে ফেতনা শোনা যায় না। শুধু বিজয় আর বিজয়, শুধু বিজয় আর বিজয়, শুধু বিজয় আর বিজয়। কথাটা বুঝাতে পারছি? ফেতনা কম, শুধু বিজয় আর বিজয়। ওমার বিন খাত্তার রা. দুনিয়া থেকে বিদায় হওয়ার পরে উসমান রা.-রিক্কতে কালব ছিলেন, নরম দিলওয়ালা, একটু মায়াবি লোক, হায়াআন উসমান, লজ্জাশীলা এবং তিনি খুব বেশি বিশ্বাস করতেন। যেও কেউ কিছু একটু কান্নাকাটি করিয়া, পাগড়ি-পোট্টা বান্দিয়া লম্বা দাড়ি রাখিয়া দরবেশের ভেশে যদি কোনো কথা উসমান বিন খাত্তাব রা. উসমান গনি রা. বলতেন, ওমনি বিশ্বাস করতেন। আহারে খোদা! এই লোক কি মিথ্যা কথা বলতে পারে? এত বড় দরবেশ! এত আহলে এলেম! এত বিশাল জানুয়া! এর জ্ঞানে কোনো অভাব নেই! আরো কানতেছে ব্যক্তি! নাহ, এই ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলতে পারেই না! কথাটা বুঝাতে পারছি? এ ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলতে পারে না! বেশি একটু নরমি দিল ছিলেন। বিশ্বাস করতেন সবাইকে। এই দুর্বলতায় মুনাফেকরা সব জায়গায় আস্তে আস্তে শিকড় গাড়ছে। কী গাড়ছে? শিকড় গাড়ছে। ঠিক না ভাই? মনে রাখতে হবে, এখান থেকে নুখতা বের করতে হবে, মারাত্মক নুখতা, মারাত্মক নুখতা। এই জন্য যেই বুজুর্গির মধ্যে হুশ নাই, সেই বুজুর্গিকে নেতৃত্ব দিলে সে নিজেও ধ্বংস হবে, জাতিও ধ্বংস হবে। এটা মনে রাখতে হবে। এজন্য মুহাদ্দিসিনে কেরাম কোনো বেশি বুজুর্গি থেকে হাদিস রেওয়ায়েত করতেন না। যার হুশ কম, এমন মুহাদ্দিস থেকে বেশি হাদিস রেওয়ায়েত করতেন না। কেন? কারণটা কী? বুজুর্গানে কেরাম সবাইকে বিশ্বাস করে ফেলায়। সবাইকে কী? সবাইকে বিশ্বাস করে ফেলায়। মোল্লা জিয়ুন রহ.-এর মতো বুজুর্গ, কত বড় মুহাদ্দিস, কত বড় আলেম, কত বড় আহলুল এলেম! এই নুরুল আনওয়ারের এত বড় উসুলি কিতাব মুখস্ত লেখে ফেলাইছে, মুখস্ত। বন্ধুরা বলছে, একটা কিতাব লেখে দেন। মুখস্ত লেখে ফেলাইছে। এখন মনে করছেন এলেমের অবস্থা কী! একদিন এক ব্যক্তি বলতেছে, হুজুর, আপনার স্ত্রী বিধবা হয়ে গেছে। কইল ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বেচারির কী অবস্থা! বেচারির কী অবস্থা! আহারে কীভাবে খাবে? কীভাবে চলবে? আহা আফসুস! বেচারির কী অবস্থা! আরেকজনে বলতেছে, আপনে থাকতে আপনার স্ত্রী বিধবা হয় কেমনে? আপনি তো দুনিয়া থেকে বিদায় হলে আপনার স্ত্রী বিধবা হবে। আপনে তো এখনও আছেন! আপনার স্ত্রী বিধবা হয় কী করে? কয়, ইন্না লিল্লাহ। মুসলমান মিথ্যা কথা বলতে পারে? তাদের খেয়াল কতদূর মারাত্মক! মুসলমান মিথ্যা কথা বলতে পারে না। আর আমাদের অবস্থা কী বর্তমানে? মুসলমান কি সত্য কথা বলতে পারে? এখন অবস্থা কী, বুঝছেন?”

    ভিডিও লিংক [২৪.২৭ মিনিট থেকে ২৮.০৯ মিনিট পর্যন্ত দেখুন] :


    আফসোস, হে পির সাহেব! আপনি তো মওদুদিকেও ছাড়িয়ে গেলেন!! মওদুদি সাহেবও তো মুআবিয়া রা.-এর ব্যাপারে এমন জঘন্য মন্তব্য করেনি, যেমনটা আপনি করলেন!!! আপনি উসমান রা.-কে নরম দিলের মানুষ বলে প্রমাণ করলেন, উনার মধ্যে কঠোরতা ছিল না! আর এজন্য তার খিলাফত আমলে সব ফিতনা প্রকাশ পেয়েছে! প্রমাণ করলেন, তার দুর্বলতায় উম্মাহর অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেছে। আপনি উসমান রা.-এর ব্যাপারে কী কী অপবাদ দিলেন, একটু ঠান্ডা মাথায় কি চিন্তা করে দেখবেন? একটু দেখুন :

    এক :
    আপনি বলছেন, //যখনই শোনছে ওমার, ফেতনাটা তো এমনিই দাইবা গেছে। কী, কথা ঠিক না? আল্লাহু আকবার! ওমার রা. থাকাকালে তেমন কোনো ইসলামি জগতের মধ্যে ফেতনা শোনা যায় না। শুধু বিজয় আর বিজয়, শুধু বিজয় আর বিজয়, শুধু বিজয় আর বিজয়। কথাটা বুঝাতে পারছি? ফেতনা কম, শুধু বিজয় আর বিজয়। ওমার বিন খাত্তার রা. দুনিয়া থেকে বিদায় হওয়ার পরে উসমান রা.-রিক্কতে কালব ছিলেন, নরম দিলওয়ালা, একটু মায়াবি লোক, হায়াআন উসমান, লজ্জাশীলা এবং তিনি খুব বেশি বিশ্বাস করতেন।//

    খণ্ডন :
    আপনি কি কোনোদিন ইতিহাস পড়েছেন? এত জাহালাত নিয়ে আপনাকে ওয়াজে নামতে বলেছে কে? উমর রা.-এর সময়ে বিজয় আর বিজয়, আর উসমান রা.-এর সময়ে শুধু ফিতনা আর ফিতনা, শুধু পরাজয় আর পরাজয়!!! এসব কই যে পান, আল্লাহই ভালো জানেন। একটু ইতিহাসের পাতা উল্টিয়ে দেখুন, উসমান রা.-এর সময়ে ইসলামি সাম্রাজ্যের কী বিজয় ও অভূতপূর্ব উন্নতি হয়েছিল। তাঁর আমলে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, সামরিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে প্রভূত সাফল্য অর্জন হয়েছিল। তাঁর জনহিতকর কার্যাবলি সমাজের আদলই পরিবর্তন করে দিয়েছিল। তিনি মদিনা শহর রক্ষাবাধ ‘মাহরু’ নির্মাণ করেন। খাল খনন করে কৃষিতে প্রভূত উন্নয়ন সাধন করেন। পয়ঃপ্রণালী ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করে সবার প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন। মসজিদে নববির আধুনিকায়ন করেন। তাঁর আমলে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে গিয়েছিল।
    ওমর রা. যেখানে বিজয় রেখে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে তিনি তা আরও সম্প্রসারণ করেন। তাঁর সময়ে ইসলামি খিলাফত পূর্বে কাবুল ও বেলুচিস্তান এবং পশ্চিমে ত্রিপোলি পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তাঁর সময়েই প্রথম নৌবাহিনী গঠিত হয়। নৌ-অভিযানে সাইপ্রাস ও রোডস দ্বীপপুঞ্জ মুসলমানদের দখলে আসে। তাঁর আমলেই রোম ও পারস্য শক্তির ঔদ্ধত্য পূর্ণরূপে নির্মূল করা হয়। তাঁর আমলে সবচেয়ে বড় যে কাজটি করা হয়, তা হলো কুরআন সংকলন। ইতিহাসের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এ কাজটি তাঁর হাতেই পূর্ণতা লাভ করে। আজ আমরা যে কুরআন পড়ি, সেটা তাঁরই নেতৃত্বে সংকলিত কুরআন, যাকে মুসহাফে উসমানি বলা হয়।

    এত সব কাজ কি দুর্বল, সাধারণ ও সরল-সোজা কোনো লোক করতে পারে বলে আপনার মনে হয়? তিনি যদি এতই সাদাসিধা হতেন, যদি তিনি ডান-বাম কিছু নাই বুঝতেন, সবাইকে যদি সরল মনে বিশ্বাসই করতেন, তাহলে কি তিনি এ বিশাল সাম্রাজ্য জয় করতে পারতেন? পারতেন কি তিনি মুসলিম উম্মাহর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটাতে? তিনি কি সক্ষম হতেন কুরআন সংকলনের মতো কঠিন ও গুরুদায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে? না, আপনি যে বুজুর্গের কথা বলছেন, উসমান রা. সে বুজুর্গ ছিলেন না। তিনি ছিলেন বুদ্ধিমান বিচক্ষণ, লজ্জাশীল ও নরম দিলের আলোকিত মানুষ। শুধু তাঁর সরলতা ও লজ্জাশীলতার কথা বর্ণনা করে তাঁকে দুর্বল খলিফা আখ্যা দেওয়া আপনার চরম অজ্ঞতা ও সাহাবি বিদ্বেষিভাব প্রকাশ করে।
    আপনি প্রমাণ করতে চেষ্টা করেছেন, তিনি শুধুই নরম ছিলেন। অথচ আল্লাহ তাআলা সাহাবিদের প্রশংসা করেছেন এভাবে, “তাঁর সাহাবিগণ কাফিরদের প্রতি কঠোর আর নিজেদের মধ্যে পরস্পরে সহানুভূতিশীল।” [সুরা আল-ফাতহ : ২৯ ] এ আয়াতে সকল সাহাবি উদ্দিষ্ট হলেও উসমান রা. নন, এমন কথা কোনো মুফাসসির কি কখনো বলেছেন? যদি না বলে থাকেন, তাহলে উসমান রা.-এর মুমিনদের প্রতি দয়াদ্রতা ও তাঁ লাজুকতার কথা বলে তাঁকে দুর্বল খলিফা প্রমাণ করার মিশনে নামছেন কেন? আল্লাহর কুরআনে বিশ্বাস করে থাকলে আপনার এই একপেশে কথা থেকে দ্রুত রুজু করুন। ইতিহাস সাক্ষ্য, উসমান রা. দুর্বল ও বোকা ছিলেন না। যেখানে যে গুণ থাকা দরকার, আল্লাহ তাঁকে সেসব গুণ যথাযথই দান করেছিলেন। তিনি ছিলেন খলিফায়ে রাশিদ, উম্মাহর আলোকিত ও চিরউজ্জ্বল এক সন্তান।

    দুই :
    আপনি বলেছেন, //যেও কেউ কিছু একটু কান্নাকাটি করিয়া, পাগড়ি-পোট্টা বান্দিয়া লম্বা দাড়ি রাখিয়া দরবেশের ভেশে যদি কোনো কথা উসমান বিন খাত্তাব রা. উসমান গনি রা. বলতেন, ওমনি বিশ্বাস করতেন। আহারে খোদা! এই লোক কি মিথ্যা কথা বলতে পারে? এত বড় দরবেশ! এত আহলে এলেম! এত বিশাল জানুয়া! এর জ্ঞানে কোনো অভাব নেই! আরো কানতেছে ব্যক্তি! নাহ, এই ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলতে পারেই না!//

    খণ্ডন :
    আপনি কোন রিওয়ায়াতে পেয়েছেন যে, তিনি এত দুর্বল ছিলেন? কোন বর্ণনায় পেয়েছেন যে, সবাইকে তিনি এক কথায় বিশ্বাস করতেন? কোন হাদিসে পেয়েছেন যে, তিনি দাড়ি, টুপি দেখলেই বিগলিত হয়ে যেতেন? এমন গাজাখুরি কথা কোন ইতিহাসে পেয়েছেন? তিনি লজ্জাশীল ছিলেন সেটা ঠিক আছে, কিন্তু তাই বলে তার বুদ্ধি-জ্ঞান, বিচক্ষণতা কিছুই ছিল না বলে আপনি এত বড় অপবাদ দিতে পারেন না! এমন জঘন্য অপবাদ গোমরাহ ফিরকার লোকেরা ছাড়া আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর কোনো লোক আজ অবধি দিতে পারেনি। আপনার কথা থেকে বুঝা যায়, তিনি ডান-বামও বুঝতেন না। একেবারে সরল শিশু ও বোকা টাইপের ছিলেন। অথচ তাঁর ব্যাপারে হাদিসে কী বলে, আসুন আমরা একটু দেখি :
    ক. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে উসমান রা. ছিলেন সার্বিক দিক বিবেচনায় তৃতীয় মর্যাদাসম্পন্ন সাহাবি। প্রথমে আবু বকর রা., এরপর উমর রা., এরপর উসমান রা.। ইলম, আমল ও বিচক্ষণতাসহ সকল ভালো গুণাবলিতে সাহাবায়ে কিরাম হলেন পুরো উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তান। আর তাঁদের মধ্যে তৃতীয় হলেন উসমান রা.। এমন একজন জলিলুল কদর সাহাবিকে শিশুসুলভ সরল ও দুর্বলচিত্তের মনে করা আমরা চরম বেআদবি ও সাহাবিদের শানে গোস্তাখি মনে করি। দেখুন সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে :
    عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «كُنَّا فِي زَمَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لاَ نَعْدِلُ بِأَبِي بَكْرٍ أَحَدًا، ثُمَّ عُمَرَ، ثُمَّ عُثْمَانَ، ثُمَّ نَتْرُكُ أَصْحَابَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، لاَ نُفَاضِلُ بَيْنَهُمْ
    ‘ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সময়ে আবু বকর রা.-এর ন্যায় মর্যাদাবান কাউকে মনে করতাম না, অতঃপর উমর রা.-কে, অতঃপর উসমান রা.-কে, অতঃপর সাহাবিগণের মধ্যে কাউকে কারও ওপর মর্যাদা দিতাম না।’ (সহিহুল বুখারি : ৫/১৫, হা. নং ৩৬৯৭)

    খ. হুদাইবিয়ার সন্ধি ইতিহাসের অন্যতম যুগান্তকারী চুক্তি ছিল। এখানে এক পক্ষে ছিলেন মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর তাঁর পক্ষ থেকে মক্কায় প্রতিনিধি হিসাবে পাঠনো হয় তাঁরই প্রিয় সাহাবি উসমান রা.-কে। তিনি যদি এতই সরল ও বোকা টাইপের হতেন, যিনি ডান-বাম বোঝেন না, তাহলে ইতিহাসখ্যাত এ সন্ধিচুক্তির আলোচনার জন্য আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উসমান রা.-কে মক্কায় পাঠাতেন না। দেখুন সুনানে তিরমিজিতে সহিহ সনদে বর্ণিত হয়েছে :
    عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: لَمَّا أُمِرَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِبَيْعَةِ الرِّضْوَانِ كَانَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ رَسُولَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أَهْلِ مَكَّةَ قَالَ: فَبَايَعَ النَّاسَ، قَالَ: فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ عُثْمَانَ فِي حَاجَةِ اللهِ وَحَاجَةِ رَسُولِهِ. فَضَرَبَ بِإِحْدَى يَدَيْهِ عَلَى الأُخْرَى، فَكَانَتْ يَدُ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعُثْمَانَ خَيْرًا مِنْ أَيْدِيهِمْ لأَنْفُسِهِمْ.
    ‘আনাস বিন মালিক রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (লোকদেরকে) স্বতঃস্ফূর্তভাবে আনুগত্যের শপথ (বাইআতুর রিজওয়ান) করার হুকুম দেন তখন উসমান বিন আফফান রা. রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে মক্কার বাসিন্দাদের নিকট গিয়েছিলেন। আনাস রা. বলেন, লোকেরা আনুগত্যের শপথ করেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, উসমান আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রয়োজনীয় কাজে গেছে। তারপর তিনি (উসমান রা.-এর বাইআতস্বরূপ) নিজের এক হাত অপর হাতের ওপর রাখেন। রাবি বলেন, উসমান রা.-এর জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাতখানা লোকদের নিজেদের জন্য তাদের হাতের চাইতে বেশি ভালো ছিল।’ (সুনানুত তিরমিজি : ৬/৬৭, হা. নং ৩৭০২)

    তিনি শুধু মুসলমানদের মধ্যেই সম্ভ্রান্ত ও মর্যাদাবান ছিলেন না; বরং তারা শারাফাত ও মর্যাদার কথা মুসলিম ও কাফির সবাই স্বীকার করত। দেখুন সহিহ বুখারির বর্ণনা :
    وَأَمَّا تَغَيُّبُهُ عَنْ بَيْعَةِ الرِّضْوَانِ، فَلَوْ كَانَ أَحَدٌ أَعَزَّ بِبَطْنِ مَكَّةَ مِنْ عُثْمَانَ لَبَعَثَهُ مَكَانَهُ، فَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عُثْمَانَ وَكَانَتْ بَيْعَةُ الرِّضْوَانِ بَعْدَ مَا ذَهَبَ عُثْمَانُ إِلَى مَكَّةَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِيَدِهِ اليُمْنَى: «هَذِهِ يَدُ عُثْمَانَ. فَضَرَبَ بِهَا عَلَى يَدِهِ، فَقَالَ: هَذِهِ لِعُثْمَانَ
    ‘ইবনে উমর রা. বললেন, আর বাইআত রিজওয়ান হতে তাঁর অনুপস্থিতির কারণ হলো, মক্কার বুকে তাঁর চেয়ে সম্ভ্রান্ত অন্য কেউ যদি থাকত, তবে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকেই উসমান রা.-এর বদলে পাঠাতেন। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উসমান রা.-কে মক্কায় পাঠান। তাঁর চলে যাবার পরই বাইআতে রিজওয়ান অনুষ্ঠিত হয়। তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডান হাতের প্রতি ইঙ্গিত করে বললেন, এটি উসমানের হাত। অতঃপর ডান হাত বাম হাতে স্থাপন করে বললেন, এ হলো উসমানের বাইআত।’ (সহিহুল বুখারি : ৫/১৫, হা. নং ৩৬৯৮)

    গ. উসমান রা.-এর খিলাফত তো স্বয়ং আল্লাহ দান করেছেন, যা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যতবাণী করে গিয়েছিলেন। আল্লাহর নির্বাচিত খলিফার ব্যাপারে যদি বলা হয়, তিনি এমন সরল ছিলেন যে, ভালো-মন্দ, ধোঁকা ও সততার মাঝে পার্থক্য করতে পারতেন না, তাহলে তো (নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক) খোদ আল্লাহর ওপরই অভিযোগ চলে আসে। দেখুন সুনানে তিরমিজিতে হাসান সনদে বর্ণিত হয়েছে :
    عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: يَا عُثْمَانُ إِنَّهُ لَعَلَّ اللَّهَ يُقَمِّصُكَ قَمِيصًا، فَإِنْ أَرَادُوكَ عَلَى خَلْعِهِ فَلاَ تَخْلَعْهُ لَهُمْ.
    ‘আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে উসমান, আল্লাহ তাআলা হয়ত তোমাকে একটি জামা পরিধান করাবেন (খিলাফত দান করবেন)। তোমার থেকে লোকেরা তা খুলে নিতে চাইলে তুমি তাদের দাবিতে তা ত্যাগ করো না।’ (সুনানুত তিরমিজি : ৬/৬৯, হা. নং ৩৭০৫)

    ঘ. উসমান রা.-এর খিলাফতলাভ সকল সাহাবিদের ইজমার ভিত্তিতে হয়েছিল। উমর রা. মৃত্যুর পূর্বে ছয়জন শুরা বানিয়ে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, এদের মধ্য হতে কাউকে যেন খলিফা বানানো হয়। অতঃপর শুরাসদস্য আব্দুর রহমান বিন আওফ রা. অন্যান্য সাহাবিদের মতামত যাচাই করে উসমান রা.-এর পক্ষে সবার মত জানতে পারলেন। অতঃপর সবাই তাঁর হাতে বাইআত হন। তো এখানে আনসার ও মুহাজির সকল সাহাবির দৃষ্টিতে সেসময় তিনিই ছিলেন খিলাফতের সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি। যদি তিনি একই দুর্বল ও বুদ্ধিহীন বুজুর্গ হতেন, তাহলে সাহাবায়ে কিরাম রা. কিছুতেই তাকে খলিফা বানানোর ব্যাপারে মত দিতেন না। অতএব তাঁদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত এটাই প্রমাণ করে যে, উসমান রা. খিলাফতের জন্য সার্বিক বিবেচনায় উপযুক্ত ছিলেন। রাষ্ট্র পরিচালনার মতো সব ধরনের যোগ্যতা ও বিচক্ষণতা তাঁর ছিল। সুতরাং তাকে খিলাফতের অযোগ্য আখ্যা দেওয়া মানে সাহাবিদের ব্যাপারে অনাস্থা সৃষ্টি করা, সাহবিদের রায়কে ভুল মনে করা, যা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর আকিদায় বিশ্বাসী কোনো মুমিনের কাজ হতে পারে না।

    ঙ. উসমান রা.-কে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পরপর (একজনের মৃত্যুর পর আরেকজন) নিজের দুকন্যাকে বিবাহ দিয়েছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ছিল এক বিরল সৌভাগ্য। কোনো নবির দুই কন্যাকে এককভাবে কেউ বিবাহ করতে পারেননি। এজন্যই তাঁকে জিন্নুরাইন (দুই আলোর অধিকারী) বলা হয়। তাহলে যিনি শ্রেষ্ঠ মানবের দুই মেয়ের জামাতা ছিলেন, তাঁর ব্যাপারে এমন মন্তব্য করা কীভাবে বরদাশত করা যায় যে, তিনি নাকি হাবলা টাইপের ছিলেন। তার নাকি কোনো বিচক্ষণতা ছিল না। এমন কথা তো মক্কার কাফিররা পর্যন্ত বলতে পারেনি। এমন কথা বলা কি সাহাবি ও আলে রাসুলের সাথে স্পষ্ট বেয়াদবি নয়?

    তিন :
    আপনি বলেছেন, //বেশি একটু নরমি দিল ছিলেন। বিশ্বাস করতেন সবাইকে। এই দুর্বলতায় মুনাফেকরা সব জায়গায় আস্তে আস্তে শিকড় গাড়ছে। কী গাড়ছে? শিকড় গাড়ছে। ঠিক না ভাই? মনে রাখতে হবে, এখান থেকে নুখতা বের করতে হবে, মারাত্মক নুখতা, মারাত্মক নুখতা। এই জন্য যেই বুজুর্গির মধ্যে হুশ নাই, সেই বুজুর্গিকে নেতৃত্ব দিলে সে নিজেও ধ্বংস হবে, জাতিও ধ্বংস হবে। এটা মনে রাখতে হবে। এজন্য মুহাদ্দিসিনে কেরাম কোনো বেশি বুজুর্গি থেকে হাদিস রেওয়ায়েত করতেন না। যার হুশ কম, এমন মুহাদ্দিস থেকে বেশি হাদিস রেওয়ায়েত করতেন না। কেন? কারণটা কী? বুজুর্গানে কেরাম সবাইকে বিশ্বাস করে ফেলায়। সবাইকে কী? সবাইকে বিশ্বাস করে ফেলায়।//

    খণ্ডন :
    প্রথমত, আপনি বলতে চাইছেন, উসমান রা.-এর দুর্বলতায় মুনাফিকরা খিলাফতের সব জায়গায় শিকড় গেড়েছিল। এখানে দুর্বলতা বলতে নিশ্চয়ই উসমান রা.-এর বিচক্ষণতাকে উদ্দেশ্য করেছেন। বুঝাতে চেয়েছেন, তিনি বিচক্ষণ হলে এসব মুনাফিকরা শিকড় গাড়তে পারত না। আসলেই কি তাই? মুনাফিকদের শেকড় গাড়া কি এ কথা প্রমাণ করে যে, তিনি বিচক্ষণ ছিলেন না? তাঁর আমলে ফিতনার উত্থান কি এ কথা প্রমাণ করে যে, তিনি খিলাফতের যোগ্য ছিলেন না? কক্ষনো নয়। এটা মূলত নববি যুগ থেকে জমানা দূরে সরে যাওয়ায় খারাপ লোকদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে হয়েছিল। হাদিসের ভাষ্য থেকে স্পষ্ট বুঝা যায়, নববি যুগ থেকে জমানা যত দূরে যাবে, ততই ফিতনা বৃদ্ধি পেতে থাকবে। যদি তাই না হতো, তাহলে আলি রা.-এর বিচক্ষণতা নিয়ে তো আপনার কোনো প্রশ্ন বা সন্দেহ থাকার কথা নয়। অথচ তাঁর খিলাফত আমলে কি উসমান রা.-এর খিলাফত আমলের চেয়ে বেশি ফিতনা হয়নি? এতে কি এ কথা বলা ঠিক হবে যে, আলি রা. দুর্বল ছিলেন? তিনি খিলাফতের যোগ্য ছিলেন না? বিষয়টি মূলত এমনই। আলি রা.-এর বিচক্ষণতা ঠিকই ছিল, কিন্তু দুষ্ট লোকদের আনাগোনা বেড়ে গিয়েছিল। কারও বিচক্ষণতা থাকার অর্থ এ নয় যে, তার নেতৃত্বে থাকাকালীন কোনো ফিতনা আসতে পারবে না।

    দ্বিতীয়ত, এরপর উসমান রা.-এর বদনাম করে আপনি ইজতিহাদ শুরু করলেন। ইজতিহাদের ভাষ্যও ছিল বিদ্বেষ ও তাচ্ছিল্যে ভরপুর। আপনি এখানে এসে নুখতা বের করছেন! দাবি করলেন, যে বুজুর্গের মাঝে হুশ নেই, তাকে নেতৃত্ব দিলে নেতা ও জাতি সবাই ধ্বংস হবে। প্রকারান্তরে তো এটাই বলতে চাইলেন, উসমান রা. বুজুর্গ সাহাবি হলেও তিনি যেহেতু নেতৃত্বের উপযোগী ছিলেন না, বিধায় তিনি খলিফা হয়ে নিজেও ধ্বংস হয়েছেন এবং উম্মতকে ধ্বংস করে ছেড়েছেন! আপনি কি জানেন, আপনি কী বলেছেন? এত বড় মারাত্মক বেআদবি করতে রাফিজিরাও ভয় পাবে। হাদিসের ভাষ্যনুসারে যার খিলাফত স্বয়ং আল্লাহ দিয়েছেন, যার খিলাফতের কথা স্বয়ং আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে গেছেন, যার খিলাফতের ব্যাপারে মুহাজির-আনসারসহ সকল সাহাবি ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন, তাঁর খিলাফতের যোগ্যতা নিয়েও যদি আপনার সন্দেহ হয়, তাহলে আপনার গোমরাহি নিয়ে কেন আমি সন্দেহ করব না; বরং আমি তো নিশ্চিত যে, এ কথার কারণে আপনি গোমরাহির ওপর আছেন।

    তৃতীয়ত, আপনি শেষে বলছেন, মুহাদ্দিসিনে কিরাম বেশি বুজুর্গ মানুষ থেকে হাদিস বর্ণনা করতেন না। কেননা, তারা সবাইকে বিশ্বাস করে ফেলে। সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পারে না। কাউকে মিথ্যাবাদী ভাবতে পারে না। এক্ষেত্রে যেটা সাব্যস্ত হয়, তা হলো, এমন বুজুর্গ মুহাদ্দিসের ওপর হাদিসের ক্ষেত্রে আস্থা রাখা যায় না। তাহলে কি আপনি এখানে এ কথা বলতে চাচ্ছেন যে, উসমান রা. যেহেতু বুজুর্গ সাহাবি ছিলেন এবং সরল খলিফা ছিলেন, তাই খিলাফতের ক্ষেত্রে তিনি আমাদের আদর্শ নন? আমাদের আদর্শ শুধু আবু বকর রা. আর উমর রা.? বাকিরা তাহলে বাদ? এমন কথা তো আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহর কোনো লোক বলতে পারে না। আমরা আহলুস সুন্নাহ ওয়ালা জামাআহ তো চার খলিফাকে খুলাফায়ে রাশিদিন বলে বিশ্বাস করি। তাঁরা চারজনই পরবর্তী উম্মাহর জন্য আদর্শ। তাঁদের খিলাফত পূর্ণ নবুওয়াতের মানহাজের ওপর ছিল। অথচ আপনি উসমান রা.-কে সহজ-সরল আখ্যা দিয়ে, তাঁকে বড় বুজুর্গ বানিয়ে দিয়ে শেষে তাঁকে আস্থাহীন ও দুর্বল এক খলিফা বানিয়ে দিলেন। এটা কেমন বুজুর্গি, যার ওপর আস্থা রাখা যায় না! আমরা তো কোনো সাধারণ থেকে সাধারণ সাহাবিকেও এমন অদ্ভূদ ও অনাস্থাপূর্ণ বুজুর্গ মনে করি না। তাহলে উসমান রা.-কে এভাবে অনাস্থার পাত্র বানিয়ে আপনি কোন এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চান, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

    চার :
    আপনি বলেছেন, //মোল্লা জিয়ুন রহ.-এর মতো বুজুর্গ, কত বড় মুহাদ্দিস, কত বড় আলেম, কত বড় আহলুল এলেম! এই নুরুল আনওয়ারের এত বড় উসুলি কিতাব মুখস্ত লেখে ফেলাইছে, মুখস্ত। বন্ধুরা বলছে, একটা কিতাব লেখে দেন। মুখস্ত লেখে ফেলাইছে। এখন মনে করছেন এলেমের অবস্থা কী! একদিন এক ব্যক্তি বলতেছে, হুজুর, আপনার স্ত্রী বিধবা হয়ে গেছে। কইল ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বেচারির কী অবস্থা! বেচারির কী অবস্থা! আহারে কীভাবে খাবে? কীভাবে চলবে? আহা আফসুস! বেচারির কী অবস্থা! আরেকজনে বলতেছে, আপনে থাকতে আপনার স্ত্রী বিধবা হয় কেমনে? আপনি তো দুনিয়া থেকে বিদায় হলে আপনার স্ত্রী বিধবা হবে। আপনে তো এখনও আছেন! আপনার স্ত্রী বিধবা হয় কী করে? কয়, ইন্না লিল্লাহ। মুসলমান মিথ্যা কথা বলতে পারে? তাদের খেয়াল কতদূর মারাত্মক! মুসলমান মিথ্যা কথা বলতে পারে না। আর আমাদের অবস্থা কী বর্তমানে? মুসলমান কি সত্য কথা বলতে পারে? এখন অবস্থা কী, বুঝছেন?//

    খণ্ডন :
    এমন বর্ণনা কোথায় পেয়েছেন? বিশুদ্ধ সূত্র বর্ণনা করুন। মুল্লা জিয়ুন ভারত উপমাহদেশের ওই সব বিরল আলিমদের একজন ছিলেন, যাঁরা একবার কোনো কিছু পড়লেই মুখস্ত হয়ে যেত। তাঁর মতো এমন ধী-শক্তির অধিকারী শুধু ভারতে নয়, পুরো বিশ্বেই বিরল। লাখনৌর অধিবাসী এ আলিমের নাম হলো, শাইখ আহমাদ মুল্লা জিয়ুন রহ.। সিদ্দিকি বংশের সন্তান। বাদশাহ আলমগির ছিলেন তার ছাত্র। রাজপরিবারের অনেকেই তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। আজন্ম তাদরিস ও তাসনিফে সময় ব্যয় করেছেন। ১১৩০ হিজরিতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। (নুরুল আনওয়ার, মুকাদ্দামা : পৃ. ০৫)

    তাঁর জীবনী কিছু কমবেশ এতটুকুই পাওয়া যায়। কিন্তু আপনার বর্ণিত ঘটনার কোনো রেফারেন্স পেলাম না। এ ধরনের কাহিনী বলতে হলে তো বিশুদ্ধ সূত্র লাগবে। নইলে এত বড় একজন আলিমের ব্যাপারে এমন অবাস্তব কিসসা-কাহিনী বলে আপনার মজলিস গরম করার কোনো অধিকার নেই। এমন প্রমাণহীন ও সূত্রবিহীন ঘটনা বলে আপনি আপনার উদ্ভট দাবি প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এ ঘটনারই তো নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্র নেই, আপনার দাবি প্রমাণ তো দূরে থাক।

    বি. দ্র. : আপনার এসব বক্তব্য সুস্পষ্ট গোমরাহি ও সাহাবি বিদ্বেষের পরিচায়ক। আপনার এ বক্তব্য থেকে রুজু না করলে আমরা আপনাকে গোমরাহ আখ্যা দেবো; যেমন আমরা মওদুদিকে গোমরাহ বলে অভিহিত করেছি। আপনার বক্তব্য যেহেতু প্রকাশ্য, তাই আপনার রুজুও হতে হবে প্রকাশ্যে এবং জনসম্মুখে। এর আগ পর্যন্ত আপনার সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই এবং আমাদের সাথে আপনাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহ আপনাকে হিদায়াত দান করে সুপথে ফিরিয়ে আনুন।

    সংগৃহীত

  • #2
    মাসাআল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ তা‘আলা আপনার খেদমতকে কবুল করুন। আমীন
    ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

    Comment


    • #3
      এটি তো অজ্ঞতার পরিচয় ও চরমভাবে বেয়াদবী করা।
      والیتلطف ولا یشعرن بکم احدا٠انهم ان یظهروا علیکم یرجموکم او یعیدو کم فی ملتهم ولن تفلحو اذا ابدا

      Comment

      Working...
      X