২০১৪ সালের ১৬ই ডিসেম্বর তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্থান (টিটিপি) পেশোয়ারে পাকিস্থান সামরিক বাহীনি কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত একটি স্কুলে হামলা পরিচালনা করেছিলো। এই ঘটনার জের ধরে তৎকালীন এ্যামেরিকান অফিশিয়াল'স থেকে বলা হয়েছিলো যে, "পাকিস্থানী তালিবান খারাপ আফগানী তালিবান ভালো"।
যারা দীর্ঘ সময় ধরে আফগানী তথা তালিবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে আসছে সেই তারাই এমন কথা বলার কারণ কি? এর একাধিক কারণ থাকতে পারে। তবে, এ্যামেরিকা সবসময়ই যা চেয়েছে তা হচ্ছে তালিবানরা আফগান তাগুত ও জাতীয়তাবাদী সরকারের সাথে সমন্বিত হয়ে কাজ করুক। মানে, এ্যামেরিকার জোর প্রচেষ্টা ছিলো তালিবানকে যে কোন ভাবে জাতীয়তাবাদী আদর্শে সহনশীল করে তোলা। কিন্তু আগত পার্লামেন্টারি ইলেকশনকে উদ্দেশ্য করে এই জাতীয়তাবাদী তাগুতি শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তালিবানের চূড়ান্ত ভাষ্য ছিলো এরুপ, "এটাকে চূর্ণবিচূর্ণ করাই আমাদের ধর্মীয় দায়বদ্ধতা"
আলহামদুলিল্লাহ, ২০১৯ সালের আজকের দিনে এসে জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে তালিবানের অবস্থান আরো সুসংহত ও কঠোর। এটা বুঝার জন্য ক্যাম্প বোস্টন হামলার মতো চমৎকার উদাহরণ আর হতেই পারে না!
তবে, তালিবানের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত যে ফিৎনাটি এ্যামেরিকা ছড়াতে চেয়ে অতীতে ব্যর্থ হয়েছে পরবর্তীতে সেই ফিৎনার ছাইয়ে আগুন দেয়ার চেষ্টা করে মাথামোটা খারেজী আইএস। আর স্বাভাবিকভাবেই গ্লোবাল জিহাদ সম্পর্কে ধারণা কম রাখেন এমন ভাইয়েরা খারেজীদের সৃষ্ট ফিৎনায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। আর যারা সংশয়গ্রস্থ তারাতো তাদের হৃদয়ের বক্রতার জন্যই সংশয়গ্রস্থ।
যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিংবা জেনে বা না জেনে একথা বলছেন/ প্রচার করছেন যে তালিবান জাতীয়তাবাদী তাদের অনেকেরই আসলে জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা সম্পর্কেই পরিচ্ছন্ন ধারণা নেই বলে আমার মনে হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কয়েকটি পয়েন্ট নিচে উল্লেখ করছি যার মধ্যে কারো কারো জন্য চিন্তার খোরাক থাকবে ইনশাআল্লাহ।
১. উইকিপিডিয়া অনুযায়ী - "জাতীয়তাবাদ একটি আদর্শ যেখানে জাতিকে মানব সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয়, এবং অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেয়া হয়"
তবে জাতীয়তাবাদের এই সংজ্ঞায় উইকিপিডিয়া অনুবাদের ক্ষেত্রে দু'টি শব্দ কৌশলগতভাবে এড়িয়ে গেছে। প্রথমত, "জাতিকে" এর পূর্বে "কোন" বা "একটি" এবং দ্বিতীয়ত, "সামাজিক" এর পূর্বে "ধর্মীয়" শব্দটি।
আসলে সত্যিকার অর্থে জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞাটি হচ্ছে এরুপ, "জাতীয়তাবাদ একটি আদর্শ যেখানে কোন জাতিকে মানব সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয়, এবং অন্যান্য ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেয়া হয়"
আর এই জাতীয়তাবাদ সংক্রমণের কারনেই বাংলাদেশের একজন মুসলিম ভাই অন্যান্য দেশের মুসলিমকে তার ভাই ভাবতে পারে না, নির্যাতিত মুসলিম জনপদের জন্য তার অন্তর কেঁদে ওঠে না, অবরুদ্ধ বায়তুল আকসার জন্য তার চোখ অশ্রুসিক্ত হয় না হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হয় না, উম্মাহর সমস্যাকে নিজের সমস্যা হিসেবে দেখতে পারে না, সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে একটি দেহের ন্যায় মনে করতে পারে না যেমনটি প্রিয় নাবী সল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লাম বলে গেছেন।
তাই, স্রেফ জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞাটিই যদি কেউ ভালোভাবে অনুধাবন করে থাকে তাহলেই তার বুঝা উচিত তালিবানকে জাতীয়তাবাদী বলে ট্যাগ দেয়া মানে নিজেরই অজ্ঞতা প্রকাশ করা। তবে, এটা খারেজী আইএসের জন্য ঠিক আছে কারণ এদের ফিৎরাতই হচ্ছে এরা ঈলমহীন মাথামোটা এবং মুসলিম জামাতগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থানকারী জাহান্নামের কুকুর।
এখানে উল্লেখ্য যে, স্বয়ং কুফ্ফাররাই জাতীয়তাবাদকে একটি আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। আর মুসলিমদের জন্য একমাত্র আদর্শ হচ্ছে মিল্লাতে ইব্রাহীমের আদর্শ। যে ব্যক্তি, সংগঠন বা জামাত জাতীয়তাবাদের কিঞ্চিৎ অংশকেও স্বীকার করে নেয় সে ব্যক্তি, সংগঠন বা জামাত নিশ্চিতভাবেই মিল্লাতে ইব্রাহীমের আদর্শ থেকে বিচ্যূত।
পাশাপাশি উইকিপিডিয়ার সংজ্ঞানুযায়ী অন্যান্য ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শের উপর জাতীয়তাবাদ স্থান পাবে।
এখন যারা এই বলে গলা ফাঁটাচ্ছে যে, তালিবান জাতীয়তাবাদী দল তাদের প্রাথমিকভাবে নিচের দু'টি বিষয় প্রমাণ করা উচিত যদি তারা বুঝে থাকে "হোয়াট ইজ ন্যাশনালিজম"।
- তালিবান জাতীয়তাবাদের আদর্শকে সমর্থন করে।
- তালিবান জাতীয়তাবাদের আদর্শকে মিল্লাতে ইব্রাহীমের আদর্শের উপর স্থান দেয়।
অথচ যারা তালিবানের গায়ে জাতীয়তাবাদের তকমা লাগাতে ব্যতিব্যস্ত তাদের হাতে এমন একটিও প্রমান নেই আলহামদুলিল্লাহ। আর যে জামাত প্রায় ২ যুগ আগে থেকে এ যুগের হুবাল এ্যামেরিকার সাথে বরকতময় জিহাদ পরিচালনা করে আসছে ২ যুগ পরে এসে সেই হুবালের দেয়া জাতীয়তাবাদ গ্রহণ করার কি যৌক্তিকতা আছে? বরং আসল ব্যাপারটি এমন যে ইসলামিক ইমারাত আফগানিস্থানের পুনঃর্গঠন হিংসুকদের গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২. জাতীয়তাবাদের আদর্শে বিশ্বাসী কোন দল তাদেরই আদর্শে বিশ্বাসী সবাইকে তাদের ভূমিতে চলে আসার এবং নিরাপদে থাকার আমন্ত্রণ জানাবে না। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইতিহাসে এমন কোন নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু, ১৯৯৬ সালের সেপেম্বরে রাজধানী কাবুল পতনের পর তালিবান যখন ইমারাতে ইসলামী আফগানিস্থান গঠনের মাধ্যমে আফগানিস্থানে শরঈ শাসন ব্যবস্থা চালু করে তখন সারাবিশ্বের মুসলিমদেরকে (খাস করে যারা নির্যাতিত) তালিবানদের ভূমিতে চলে আসার উন্মুক্ত আহ্বান জানানো হয়। আলহামদুলিল্লাহ, বিভিন্ন জনপদ থেকে অসংখ্য মুসলিম তখন আফগানিস্থানে হিজরত করেছিলো। অথচ রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতীয়তাবাদী এরদোয়ানদের ভূমিকা কতই না সুস্পষ্ট উদাহরণ।
৩. সেক্যুলারিজম তথা ধর্মনিরপেক্ষতা জাতীয়তাবাদের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর, তালিবানের হাতে ধর্মনিরপেক্ষতা জবাই হয়েছে তাদের উত্থানের মাধ্যমেই। অথচ সেকুলার জাতীয়তাবাদী পারভেজ মোশারফদের কতশত উদাহরণ আছে আমাদের চারপাশে।
৪. তৃতীয় বিশ্বের যেকোন জাতীয়তাবাদী দল এ্যামেরিকার তাবেদারী করতে বাধ্য সেটা হোক ইসলামি নামধারী অথবা সাধারণ জাতীয়তাবাদী দল। এটা হোক হামাস, মুসলিম ব্রাদারহুড অথবা জামায়াতে ইসলামী। এরকম দলগুলোর এমন কোন এজেন্ডা নেই যা তাদের প্রভূ রাষ্ট্রের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায়। অথচ, ১৭ বছর তালিবানের সাথে যুদ্ধ পরিচালনা করার পর এ্যামেরিকা আজ তাদের সাথে আপোষ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এই আপোষ নামায় তালিবানের প্রথম শর্তই হচ্ছে, এ্যামেরিকার সমস্ত সৈনিককে আফগানিস্থান থেকে ফিরিয়ে নিতে হবে। আর এ বিষয়টিই খুঁজে পাওয়া যায় মোল্লা মুহাম্মাদ উমার (রহিমাহুল্লাহ)-র কথায় যা প্রায় ২ যুগ আগে তিনি বলে গেছেন, "এ্যামেরিকা আফগানিস্থানে এসেছে নিজের ইচ্ছায় কিন্তু আফগানিস্থান থেকে ফিরে যাবে আমাদের ইচ্ছায়"।
৫. তৃতীয় বিশ্বের কোন জাতীয়তাবাদী দল অথবা জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র তাদের দেশে অবস্থিত এ্যামেরিকান সেনা ক্যাম্পে হামলা করা তো দূরের কথা সেই ক্যাম্পে কোন কর্তৃত্বও খাটানোর সাহস রাখে না। অথচ তালিবানের সাথে এ্যামেরিকার শান্তি আলোচনা চলমান থাকতেই বোস্টন ক্যাম্প নামে খ্যাত এ্যামেরিকান বেসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা পরিচালনা করলো তালিবান যোদ্ধারা। এই বরকতময় হামলায় নিহত হয় ৩৯৭ জন তাগুত সেনা যার মধ্যে আছে ১৫ জন পাইলট ও ১৮ জন বিমান প্রকৌশলীসহ মোট ১৩৭ জন ক্রুসেডার মার্কিন সন্ত্রাসী।
৬. জাতীয়তাবাদী যেকোন দল/ জামাত জিহাদের মাধ্যমে নয় বরং তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করে এবং আসে। কিন্তু, একথা তো সবারই জানা যে তালিবান আগত পার্লামেন্টারি নির্বাচনকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। যা একটি জাতীয়তাবাদী জামাতের পক্ষে সম্ভব নয়।
৭. কোন জাতীয়তাবাদী ইসলামী দল শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য রাখে না। অথচ তালিবানের প্রথম এবং প্রধান এজেন্ডা হচ্ছে, আফগানিস্থানের ভূমিতে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করা। আর তাদের এ উদ্দেশ্য গোপন নয় এবং কুফ্ফারদেরও অজানা নয়।
যারা দীর্ঘ সময় ধরে আফগানী তথা তালিবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করে আসছে সেই তারাই এমন কথা বলার কারণ কি? এর একাধিক কারণ থাকতে পারে। তবে, এ্যামেরিকা সবসময়ই যা চেয়েছে তা হচ্ছে তালিবানরা আফগান তাগুত ও জাতীয়তাবাদী সরকারের সাথে সমন্বিত হয়ে কাজ করুক। মানে, এ্যামেরিকার জোর প্রচেষ্টা ছিলো তালিবানকে যে কোন ভাবে জাতীয়তাবাদী আদর্শে সহনশীল করে তোলা। কিন্তু আগত পার্লামেন্টারি ইলেকশনকে উদ্দেশ্য করে এই জাতীয়তাবাদী তাগুতি শাসন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে তালিবানের চূড়ান্ত ভাষ্য ছিলো এরুপ, "এটাকে চূর্ণবিচূর্ণ করাই আমাদের ধর্মীয় দায়বদ্ধতা"
আলহামদুলিল্লাহ, ২০১৯ সালের আজকের দিনে এসে জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে তালিবানের অবস্থান আরো সুসংহত ও কঠোর। এটা বুঝার জন্য ক্যাম্প বোস্টন হামলার মতো চমৎকার উদাহরণ আর হতেই পারে না!
তবে, তালিবানের বিরুদ্ধে জাতীয়তাবাদ সংক্রান্ত যে ফিৎনাটি এ্যামেরিকা ছড়াতে চেয়ে অতীতে ব্যর্থ হয়েছে পরবর্তীতে সেই ফিৎনার ছাইয়ে আগুন দেয়ার চেষ্টা করে মাথামোটা খারেজী আইএস। আর স্বাভাবিকভাবেই গ্লোবাল জিহাদ সম্পর্কে ধারণা কম রাখেন এমন ভাইয়েরা খারেজীদের সৃষ্ট ফিৎনায় বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। আর যারা সংশয়গ্রস্থ তারাতো তাদের হৃদয়ের বক্রতার জন্যই সংশয়গ্রস্থ।
যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিংবা জেনে বা না জেনে একথা বলছেন/ প্রচার করছেন যে তালিবান জাতীয়তাবাদী তাদের অনেকেরই আসলে জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা সম্পর্কেই পরিচ্ছন্ন ধারণা নেই বলে আমার মনে হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কয়েকটি পয়েন্ট নিচে উল্লেখ করছি যার মধ্যে কারো কারো জন্য চিন্তার খোরাক থাকবে ইনশাআল্লাহ।
১. উইকিপিডিয়া অনুযায়ী - "জাতীয়তাবাদ একটি আদর্শ যেখানে জাতিকে মানব সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয়, এবং অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেয়া হয়"
তবে জাতীয়তাবাদের এই সংজ্ঞায় উইকিপিডিয়া অনুবাদের ক্ষেত্রে দু'টি শব্দ কৌশলগতভাবে এড়িয়ে গেছে। প্রথমত, "জাতিকে" এর পূর্বে "কোন" বা "একটি" এবং দ্বিতীয়ত, "সামাজিক" এর পূর্বে "ধর্মীয়" শব্দটি।
আসলে সত্যিকার অর্থে জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞাটি হচ্ছে এরুপ, "জাতীয়তাবাদ একটি আদর্শ যেখানে কোন জাতিকে মানব সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয়, এবং অন্যান্য ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেয়া হয়"
আর এই জাতীয়তাবাদ সংক্রমণের কারনেই বাংলাদেশের একজন মুসলিম ভাই অন্যান্য দেশের মুসলিমকে তার ভাই ভাবতে পারে না, নির্যাতিত মুসলিম জনপদের জন্য তার অন্তর কেঁদে ওঠে না, অবরুদ্ধ বায়তুল আকসার জন্য তার চোখ অশ্রুসিক্ত হয় না হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হয় না, উম্মাহর সমস্যাকে নিজের সমস্যা হিসেবে দেখতে পারে না, সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে একটি দেহের ন্যায় মনে করতে পারে না যেমনটি প্রিয় নাবী সল্লাল্লাহুআলাইহিওয়াসাল্লাম বলে গেছেন।
তাই, স্রেফ জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞাটিই যদি কেউ ভালোভাবে অনুধাবন করে থাকে তাহলেই তার বুঝা উচিত তালিবানকে জাতীয়তাবাদী বলে ট্যাগ দেয়া মানে নিজেরই অজ্ঞতা প্রকাশ করা। তবে, এটা খারেজী আইএসের জন্য ঠিক আছে কারণ এদের ফিৎরাতই হচ্ছে এরা ঈলমহীন মাথামোটা এবং মুসলিম জামাতগুলোর বিরুদ্ধে অবস্থানকারী জাহান্নামের কুকুর।
এখানে উল্লেখ্য যে, স্বয়ং কুফ্ফাররাই জাতীয়তাবাদকে একটি আদর্শ হিসেবে উপস্থাপন করে থাকে। আর মুসলিমদের জন্য একমাত্র আদর্শ হচ্ছে মিল্লাতে ইব্রাহীমের আদর্শ। যে ব্যক্তি, সংগঠন বা জামাত জাতীয়তাবাদের কিঞ্চিৎ অংশকেও স্বীকার করে নেয় সে ব্যক্তি, সংগঠন বা জামাত নিশ্চিতভাবেই মিল্লাতে ইব্রাহীমের আদর্শ থেকে বিচ্যূত।
পাশাপাশি উইকিপিডিয়ার সংজ্ঞানুযায়ী অন্যান্য ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শের উপর জাতীয়তাবাদ স্থান পাবে।
এখন যারা এই বলে গলা ফাঁটাচ্ছে যে, তালিবান জাতীয়তাবাদী দল তাদের প্রাথমিকভাবে নিচের দু'টি বিষয় প্রমাণ করা উচিত যদি তারা বুঝে থাকে "হোয়াট ইজ ন্যাশনালিজম"।
- তালিবান জাতীয়তাবাদের আদর্শকে সমর্থন করে।
- তালিবান জাতীয়তাবাদের আদর্শকে মিল্লাতে ইব্রাহীমের আদর্শের উপর স্থান দেয়।
অথচ যারা তালিবানের গায়ে জাতীয়তাবাদের তকমা লাগাতে ব্যতিব্যস্ত তাদের হাতে এমন একটিও প্রমান নেই আলহামদুলিল্লাহ। আর যে জামাত প্রায় ২ যুগ আগে থেকে এ যুগের হুবাল এ্যামেরিকার সাথে বরকতময় জিহাদ পরিচালনা করে আসছে ২ যুগ পরে এসে সেই হুবালের দেয়া জাতীয়তাবাদ গ্রহণ করার কি যৌক্তিকতা আছে? বরং আসল ব্যাপারটি এমন যে ইসলামিক ইমারাত আফগানিস্থানের পুনঃর্গঠন হিংসুকদের গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২. জাতীয়তাবাদের আদর্শে বিশ্বাসী কোন দল তাদেরই আদর্শে বিশ্বাসী সবাইকে তাদের ভূমিতে চলে আসার এবং নিরাপদে থাকার আমন্ত্রণ জানাবে না। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইতিহাসে এমন কোন নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু, ১৯৯৬ সালের সেপেম্বরে রাজধানী কাবুল পতনের পর তালিবান যখন ইমারাতে ইসলামী আফগানিস্থান গঠনের মাধ্যমে আফগানিস্থানে শরঈ শাসন ব্যবস্থা চালু করে তখন সারাবিশ্বের মুসলিমদেরকে (খাস করে যারা নির্যাতিত) তালিবানদের ভূমিতে চলে আসার উন্মুক্ত আহ্বান জানানো হয়। আলহামদুলিল্লাহ, বিভিন্ন জনপদ থেকে অসংখ্য মুসলিম তখন আফগানিস্থানে হিজরত করেছিলো। অথচ রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতীয়তাবাদী এরদোয়ানদের ভূমিকা কতই না সুস্পষ্ট উদাহরণ।
৩. সেক্যুলারিজম তথা ধর্মনিরপেক্ষতা জাতীয়তাবাদের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর, তালিবানের হাতে ধর্মনিরপেক্ষতা জবাই হয়েছে তাদের উত্থানের মাধ্যমেই। অথচ সেকুলার জাতীয়তাবাদী পারভেজ মোশারফদের কতশত উদাহরণ আছে আমাদের চারপাশে।
৪. তৃতীয় বিশ্বের যেকোন জাতীয়তাবাদী দল এ্যামেরিকার তাবেদারী করতে বাধ্য সেটা হোক ইসলামি নামধারী অথবা সাধারণ জাতীয়তাবাদী দল। এটা হোক হামাস, মুসলিম ব্রাদারহুড অথবা জামায়াতে ইসলামী। এরকম দলগুলোর এমন কোন এজেন্ডা নেই যা তাদের প্রভূ রাষ্ট্রের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যায়। অথচ, ১৭ বছর তালিবানের সাথে যুদ্ধ পরিচালনা করার পর এ্যামেরিকা আজ তাদের সাথে আপোষ করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এই আপোষ নামায় তালিবানের প্রথম শর্তই হচ্ছে, এ্যামেরিকার সমস্ত সৈনিককে আফগানিস্থান থেকে ফিরিয়ে নিতে হবে। আর এ বিষয়টিই খুঁজে পাওয়া যায় মোল্লা মুহাম্মাদ উমার (রহিমাহুল্লাহ)-র কথায় যা প্রায় ২ যুগ আগে তিনি বলে গেছেন, "এ্যামেরিকা আফগানিস্থানে এসেছে নিজের ইচ্ছায় কিন্তু আফগানিস্থান থেকে ফিরে যাবে আমাদের ইচ্ছায়"।
৫. তৃতীয় বিশ্বের কোন জাতীয়তাবাদী দল অথবা জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র তাদের দেশে অবস্থিত এ্যামেরিকান সেনা ক্যাম্পে হামলা করা তো দূরের কথা সেই ক্যাম্পে কোন কর্তৃত্বও খাটানোর সাহস রাখে না। অথচ তালিবানের সাথে এ্যামেরিকার শান্তি আলোচনা চলমান থাকতেই বোস্টন ক্যাম্প নামে খ্যাত এ্যামেরিকান বেসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা পরিচালনা করলো তালিবান যোদ্ধারা। এই বরকতময় হামলায় নিহত হয় ৩৯৭ জন তাগুত সেনা যার মধ্যে আছে ১৫ জন পাইলট ও ১৮ জন বিমান প্রকৌশলীসহ মোট ১৩৭ জন ক্রুসেডার মার্কিন সন্ত্রাসী।
৬. জাতীয়তাবাদী যেকোন দল/ জামাত জিহাদের মাধ্যমে নয় বরং তারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করে এবং আসে। কিন্তু, একথা তো সবারই জানা যে তালিবান আগত পার্লামেন্টারি নির্বাচনকে দ্ব্যর্থহীনভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। যা একটি জাতীয়তাবাদী জামাতের পক্ষে সম্ভব নয়।
৭. কোন জাতীয়তাবাদী ইসলামী দল শরীয়াহ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য রাখে না। অথচ তালিবানের প্রথম এবং প্রধান এজেন্ডা হচ্ছে, আফগানিস্থানের ভূমিতে শরীয়াহ প্রতিষ্ঠা করা। আর তাদের এ উদ্দেশ্য গোপন নয় এবং কুফ্ফারদেরও অজানা নয়।
Comment