গত পর্বে আমরা ইসলামে গোপনীয়তা এবং সামরিক কাজে গোপনীয়তার আবশ্যকতা সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। এ পর্বে ইনশাআল্লাহ আমরা গুপ্ত হত্যার শরয়ী দৃষ্টিকোণ নিয়ে আলোচনা করবো।
গুপ্ত হত্যার বিষয়টি মুসলমানদের নিকট সুবিদিত ছিল। আজকাল মুহিউস সুন্নাহ নামধারী কিছু যিন্দিকমার্কা আলেম এতে সন্দেহের বীজ বপনের পায়তারা চালিয়েছে। বুঝে না বুঝে অনেক মুসলমান ধোঁকায় পড়ে যাচ্ছে যে- ইসলাম যা করে তো প্রকাশ্যে করে; কাউকে হত্যা করতে হলে প্রকাশ্যে করবে, গোপনে কেন? অথচ গুপ্ত হত্যা কুরআনে কারীমের নির্দেশ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও সাহাবায়ে কেরামের ত্বরীক। বরং দুনিয়ার স্বাভাবিক যুদ্ধনীতিই এমন যে, বড় বড় ও নেতৃত্বস্থানীয়; যাদের সচরাচর যুদ্ধের ময়দানে পাওয়া যায় না বা হত্যা করা সম্ভব হয় না, তাদেরকে গোপনে হত্যা করা হয়। যেসব দরবারি আলেম মুজাহিদদের গুপ্ত হত্যার উপর আপত্তি করে, তারা কিন্তু কাফের, মুরতাদ ও তাগুতরা যখন গুপ্ত হত্যা বা গ্রেফতার করে, তখন আপত্তি করে না। মনে হয় যেন, তাদের জীবনের টার্গেটই হচ্ছে দ্বীনের মুজাহিদগণের উপর আক্রমণ, তাদের বিভ্রান্ত প্রমাণ করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা এবং সম্ভাব্য সকল পন্থায় উম্মাহকে জিহাদ থেকে ফিরানো।
যাহোক, কুরআন-সুন্নাহয় গুপ্ত হত্যা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট ও সুপ্রমাণিত। আমরা ইনশাআল্লাহ কুরআন সুন্নাহ থেকে দলীল পেশ করবো।
কুরআনে কারীমের দলীল দুইভাবে:
ক. আম দলীল;
খ. খাস দলীল।
সুন্নাহ থেকে আমরা চারটি ঘটনা পেশ করবো:
ক. ইয়াহুদি কা’ব বিন আশরাফের গুপ্ত হত্যা;
খ. ইয়াহুদি আব্দুল্লাহ ইবনে আবিল হুকাইকের গুপ্ত হত্যা;
গ. মুশরিক খালেদ ইবনে সুফিয়ান আলহুজালির গুপ্ত হত্যা;
ঘ. আবু বাসীর রাদিয়াল্লাহু আনহু কতৃক মক্কার মুশরিকদের গুপ্ত হত্যা।
কুরআনে কারীমে গুপ্ত হত্যা
কুরআনে কারীমে গুপ্ত হত্যার দুই ধরণের নির্দেশনা বিদ্যমান: ক. আম; খ. খাস।
আম দলীল
আম দলীল দ্বারা ঐসব আয়াত উদ্দেশ্য, যেগুলোতে কাফেরদের হত্যার নিঃশর্ত নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন-
এ ধরণের যত আয়াতে কাফেরদের বিরুদ্ধে কিতাল ও হত্যার নিঃশর্ত নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সবগুলো গুপ্ত হত্যার দলীল। কেননা, আল্লাহ তাআলা নিঃশর্তভাবে হত্যার অনুমতি দিয়েছেন। প্রকাশ্যে করা যাবে, গোপনে যাবে না- এমন কোন শর্ত করা হয়নি। অতএব, গোপনে-প্রকাশ্যে যেভাবেই সম্ভব হত্যা করা যাবে।
ইমাম জাসসাস রহ. (৩৭০ হি.) বলেন,
খাস দলীল
উল্লিখিত দ্বিতীয় আয়াতের দ্বিতীয় অংশ গুপ্ত হত্যার খাস দলীল। সেখানে আদেশ দেয়া হয়েছে, وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ- ‘তাদের জন্য প্রতিটি ঘাটিতে (ওঁৎপেতে) বসে থাক’। আল্লাহ তাআলা কাফেরদের হত্যা ও বন্দী করার জন্য ওঁৎপেতে বসে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যখনই বাগে পাওয়া যাবে, পাকড়াও করে বন্দী বা হত্যা করা হবে। এর নামই গুপ্ত হত্যা।
কাযি ইবনে আরাবী রহ. (৫৪৩ হি.) বলেন,
গুপ্ত হত্যার বিষয়টি মুসলমানদের নিকট সুবিদিত ছিল। আজকাল মুহিউস সুন্নাহ নামধারী কিছু যিন্দিকমার্কা আলেম এতে সন্দেহের বীজ বপনের পায়তারা চালিয়েছে। বুঝে না বুঝে অনেক মুসলমান ধোঁকায় পড়ে যাচ্ছে যে- ইসলাম যা করে তো প্রকাশ্যে করে; কাউকে হত্যা করতে হলে প্রকাশ্যে করবে, গোপনে কেন? অথচ গুপ্ত হত্যা কুরআনে কারীমের নির্দেশ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নত ও সাহাবায়ে কেরামের ত্বরীক। বরং দুনিয়ার স্বাভাবিক যুদ্ধনীতিই এমন যে, বড় বড় ও নেতৃত্বস্থানীয়; যাদের সচরাচর যুদ্ধের ময়দানে পাওয়া যায় না বা হত্যা করা সম্ভব হয় না, তাদেরকে গোপনে হত্যা করা হয়। যেসব দরবারি আলেম মুজাহিদদের গুপ্ত হত্যার উপর আপত্তি করে, তারা কিন্তু কাফের, মুরতাদ ও তাগুতরা যখন গুপ্ত হত্যা বা গ্রেফতার করে, তখন আপত্তি করে না। মনে হয় যেন, তাদের জীবনের টার্গেটই হচ্ছে দ্বীনের মুজাহিদগণের উপর আক্রমণ, তাদের বিভ্রান্ত প্রমাণ করার ঘৃণ্য প্রচেষ্টা এবং সম্ভাব্য সকল পন্থায় উম্মাহকে জিহাদ থেকে ফিরানো।
যাহোক, কুরআন-সুন্নাহয় গুপ্ত হত্যা দিবালোকের ন্যায় সুস্পষ্ট ও সুপ্রমাণিত। আমরা ইনশাআল্লাহ কুরআন সুন্নাহ থেকে দলীল পেশ করবো।
কুরআনে কারীমের দলীল দুইভাবে:
ক. আম দলীল;
খ. খাস দলীল।
সুন্নাহ থেকে আমরা চারটি ঘটনা পেশ করবো:
ক. ইয়াহুদি কা’ব বিন আশরাফের গুপ্ত হত্যা;
খ. ইয়াহুদি আব্দুল্লাহ ইবনে আবিল হুকাইকের গুপ্ত হত্যা;
গ. মুশরিক খালেদ ইবনে সুফিয়ান আলহুজালির গুপ্ত হত্যা;
ঘ. আবু বাসীর রাদিয়াল্লাহু আনহু কতৃক মক্কার মুশরিকদের গুপ্ত হত্যা।
***
কুরআনে কারীমে গুপ্ত হত্যা
আম দলীল
আম দলীল দ্বারা ঐসব আয়াত উদ্দেশ্য, যেগুলোতে কাফেরদের হত্যার নিঃশর্ত নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন, আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَاقْتُلُوهُمْ حَيْثُ ثَقِفْتُمُوهُمْ وَأَخْرِجُوهُمْ مِنْ حَيْثُ أَخْرَجُوكُمْ وَالْفِتْنَةُ أَشَدُّ مِنَ الْقَتْلِ وَلَا تُقَاتِلُوهُمْ عِنْدَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ حَتَّى يُقَاتِلُوكُمْ فِيهِ فَإِنْ قَاتَلُوكُمْ فَاقْتُلُوهُمْ كَذَلِكَ جَزَاءُ الْكَافِرِينَ – البقرة 191
“তোমরা যেখানেই তাদের পাবে হত্যা করবে। যেসব স্থান হতে তারা তোমাদের বহিষ্কার করে দিয়েছে, তোমারাও তাদের সেসব স্থান হতে বের করে দাও। (জেনে রেখো) ফিতনা (দাঙ্গা হাঙ্গামা ও) হত্যার চেয়েও জঘন্য অপরাধ। (লড়াই করার ব্যাপারে আরেকটি কথা মনে রাখবে) মসজিদে হারামের আশেপাশে তোমরা কখনও তাদের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ো না। অবশ্য তারা নিজেরাই যদি সেখানে তোমাদের উপর আক্রমণ করে, তাহলে (প্রতিরোধের জন্য) তোমরাও লড়াই কর। এটাই হচ্ছে কাফেরদের যথাযথ শাস্তি।”- বাকারা ১৯১অন্য আয়াতে ইরশাদ করেন-
فَإِذَا انْسَلَخَ الْأَشْهُرُ الْحُرُمُ فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدْتُمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ
‘অতঃপর যখন নিষিদ্ধ মাসগুলো অতিবাহিত হয়ে যাবে, তখন তোমরা মুশরিকদেরকে যেখানেই পাও হত্যা কর এবং তাদেরকে পাকড়াও কর, তাদেরকে অবরোধ কর এবং তাদের জন্য প্রতিটি ঘাঁটিতে (ওঁৎপেতে) বসে থাক। তবে তারা যদি তাওবা করে মুসলমান হয়ে যায় এবং সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয়- তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ বড় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’- তাওবা: ৫এ ধরণের যত আয়াতে কাফেরদের বিরুদ্ধে কিতাল ও হত্যার নিঃশর্ত নির্দেশ দেয়া হয়েছে, সবগুলো গুপ্ত হত্যার দলীল। কেননা, আল্লাহ তাআলা নিঃশর্তভাবে হত্যার অনুমতি দিয়েছেন। প্রকাশ্যে করা যাবে, গোপনে যাবে না- এমন কোন শর্ত করা হয়নি। অতএব, গোপনে-প্রকাশ্যে যেভাবেই সম্ভব হত্যা করা যাবে।
ইমাম জাসসাস রহ. (৩৭০ হি.) বলেন,
فإنه أمر بقتل المشركين إذا ظفرنا بهم وهي عامة في قتال سائر المشركين من قاتلنا منهم ومن لم يقاتلنا. اهـ أحكام القرآن 1\321
“এ আয়াতে আদেশ দেয়া হচ্ছে, যখনই বাগে পাওয়া যায়- কাফেরদের হত্যা করে দিতে। আমাদের বিরুদ্ধে কিতাল করুক বা না করুক- সকল কাফেরের বেলায়ই আয়াতের কিতালের নির্দেশ প্রযোজ্য।”- আহকামুল কুরআন ১/৩২১খাস দলীল
উল্লিখিত দ্বিতীয় আয়াতের দ্বিতীয় অংশ গুপ্ত হত্যার খাস দলীল। সেখানে আদেশ দেয়া হয়েছে, وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ- ‘তাদের জন্য প্রতিটি ঘাটিতে (ওঁৎপেতে) বসে থাক’। আল্লাহ তাআলা কাফেরদের হত্যা ও বন্দী করার জন্য ওঁৎপেতে বসে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। যখনই বাগে পাওয়া যাবে, পাকড়াও করে বন্দী বা হত্যা করা হবে। এর নামই গুপ্ত হত্যা।
কাযি ইবনে আরাবী রহ. (৫৪৩ হি.) বলেন,
واقعدوا لهم كل مرصد- قال علماؤنا: في هذا دليل على جواز اغتيالهم قبل الدعوة أ.هـ
“আল্লাহ তাআলার বাণী ‘তাদের জন্য প্রতিটি ঘাটিতে (ওঁৎপেতে) বসে থাক’; আমাদের আইম্মায়ে কেরাম বলেন, এ আয়াত দলীল যে, (যেসব কাফেরের কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে) তাদেরকে দাওয়াত দেয়ার আগেই গুপ্ত হত্যা করা বৈধ।”- আহকামুল কুরআন: ৪/২০৮ ***
Comment