আল কায়েদা বনাম আইএস
প্যারিস এবং মালিতে সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে ভাবতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে। প্যারিসে হামলার দায়-দায়িত্ব ইসলামিক স্টেট নিলেও, মালিতে হামলার দায়িত্ব নিয়েছে আল কায়েদা। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্যারিসে হামলার পাশাপাশি মালিতে হামলাও ইসলামিক স্টেটের হাতে হবারই কথা ছিল। কারণ দীর্ঘদিন ফরাসি উপনিবেশে থাকার ফলে মালির আভ্যন্তরে ফ্রান্সবিরোধী শক্তি বেশ জোরদার। তবে সেই জোরদার জাতীয়তাবাদী শক্তি ইসলামিক স্টেটকে শক্তি না জুগিয়ে আল কায়েদাকে সমর্থন দিচ্ছে। কিন্তু কেন মালির এই হামলা? ইসলামিক স্টেটে একটা সময় আল কায়েদার প্রভাব ছিল এটা স্বীকৃত ব্যাপার। কারণ একটা সময় গোটা বিশ্বে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং আলোচিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছিল আল কায়েদা। যার প্রমাণ আমরা নাইন ইলেভেনের ঘটনার ভেতর দিয়ে দেখতে পাই। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামিক স্টেটের হাতে শিরñেদসহ অনেক বর্বর ঘটনার পর বিশ্ববাসীকে একযোগে স্বীকার করতে হচ্ছে যে ইসলামিক স্টেটই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। আর এই ঘটনায় মূলত আল কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের মধ্যকার বিরোধিতাই পরিষ্কার হয়েছে। কারণ আল কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেট দুটি গোষ্ঠীই মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা শাসনের অবসান চাইছে, কিন্তু আল কায়েদা শাসক গোষ্ঠীকে হামলা করেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছুতে চাইলেও ইসলামিক স্টেট লক্ষ্যাধিক সাধারণ মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে তা অর্জন করতে চায়। আল কায়েদা যেখানে মুসলিম বিশ্বকে একত্রিত করে পশ্চিমা শক্তিকে নিষ্ক্রিয় করতে চায়, সেখানে ইসলামিক স্টেট মুসলিমদের মধ্যেই প্রত্যক্ষ সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি করে দ্বিধা-বিভক্তির বাড়াচ্ছে। আজকের যে আরব বসন্ত পরবর্তী অবস্থা, এর জন্য আল কায়েদার অবদান থাকলেও সুবিধা ভোগ করছে ইসলামিক স্টেট। যে কারণ অনেকদিন ধরেই আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদি এবং আল কায়েদা নেতা ডাক্তার আয়মান আল জাওয়াহিরির মধ্যে লিখিত বাদানুবাদ চলছে অনেকদিন। গত সেপ্টেম্বরে জাওয়াহিরি ইসলামিক স্টেটের ঘোষিত খিলাফতকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সেখানে তিনি আরও বলেন, ‘বাগদাদি ও তার ভাইদের দ্বারা আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা যতটা সম্ভব অল্প করে এর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি। তাদের রাষ্ট্রদ্রোহিতার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু বাগদাদি ও তার ভাইয়েরা আমাদের সামনে কোনো উপায় রাখেনি। তাদের দাবি সকল মুজাহিদীনরা ত্যাগ করেছে, কারণ তাদের সঙ্গে কোনো জোট করা সম্ভব নয়।’ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই ইয়েমেনভিত্তিক আল কায়েদার একটি শাখা ফ্রান্সের শার্লি হেবদোর অফিসে হামলা চালায়। নিউইয়র্ক টাইমসের ইউরোপিয়ান বিশ্লেষকদের বিশ্বাস মতে, শার্লি হেবদোর হামলার সফলতার পরেই প্যারিসে এই বড় হামলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে প্যারিসের ঘটনার পর পর মালিতে যে হামলা চালানো হয় তার পেছনে আছে আল কায়েদা। এই হামলার মাধ্যমে আল কায়েদা যে শুধু পশ্চিমাদের শায়েস্তা করার চেষ্টা করেছে তা নয়, পাশাপাশি ইসলামিক স্টেটকেও তারা জানান দিল যে তারা হাঙ্গামা ও হত্যাকাণ্ড চালাতে সক্ষম। সাবেক এমআইসিক্স কর্মকর্তা রিচার্ড ব্যারেট নিউইয়র্ক টাইমসকে জানান, ‘তাদের পূর্ণ মনোযোগ হলো ইরাক এবং সিরিয়া। মালিতে হামলার ফলে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে তাদের কার্যত নিষ্ক্রিয় মনে হলেও আসলে সক্রিয়।’ অধ্যাপক হুদিত রনেনের মতে, ‘মালিতে হামলা হলো ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদার মধ্যকার বৈরিতার ফল। এই হামলাকে এই অঞ্চলের জন্য একটা বার্তা হিসেবেও ধরা যেতে পারে।’ কিন্তু বিশ্লেষক জলিল লুনের হিসেব মতে, ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু হলেও আল কায়েদা যে এখনো অপারেশন চালাতে সক্ষম এবং সেই আদর্শেই তারা চলছে তার প্রমাণ মালিতে এই হামলা। গোটা বিশ্বে এখনো আল কায়েদার নেটওয়ার্ক অনেকাংশেই অক্ষত আছে। ইসলামিক স্টেট এবং আল কায়েদার মধ্যে সংঘর্ষ শুধুমাত্র বক্তব্য বা লেখালেখির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সিলিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে অনেকদিন ধরেই ইসলামিক স্টেট বাহিনীর সঙ্গে আল কায়েদার লড়াই চলছে। সর্বশেষ ইসলামিক স্টেটের একজন নেতৃস্থানীয় নেতা মুহাম্মদ আবু আল বারাদিকে আত্মঘাতী বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে আল নুসরা টুইটার মারফত এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, সিরিয়াতে বিবদমান দুই পক্ষই মুলত সুন্নি মুসলমান। অনেক ক্ষেত্রে তাদের মতাদর্শিক অবস্থানও এক, কিন্তু ভৌগোলিক রাজনীতির তুলনায় সিরিয়াতে অঞ্চলভিত্তিক রাজনীতিই সর্বশেষ কথা। যে কারণ অনেক ক্ষেত্রে নুসরা ফ্রন্ট ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হলেও, আবার এই সংগঠনটির সঙ্গেই বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করছে। তবে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক কিছু বিশ্লেষকের মতে, আল কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের মধ্যকার সংঘর্ষ মূলত আদর্শিক নয়, ক্ষমতার ভাগাভাগী নিয়ে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আল কায়েদার ভেতর থেকেই ইসলামিক স্টেটের জš§ এবং ২০১৩ সালে আদর্শগত অবস্থানের কথা বলে ইসলামিক স্টেট আল কায়েদা ছেড়ে চলে যায়। তখনো কিন্তু আয়মান আল জাওয়াহিরি এই বিষয়টা নিয়ে কোনো বক্তব্য প্রদান করেননি। কিন্তু যখনই ইসলামিক স্টেট একের পর এক এলাকা দখল করে, অগণিত মানুষ হত্যা করে খিলাফত প্রতিষ্ঠান ঘোষণা দিল তখনই মূলত বাগদাদি এবং জাওয়াহিরির দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পাঁচ মিশালি ডেস্ক -
See more at: http://www.manobkantha.com/2015/12/1....ehfmK8rY.dpuf
প্যারিস এবং মালিতে সন্ত্রাসী হামলার পর নতুন করে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে ভাবতে হচ্ছে বিশ্ববাসীকে। প্যারিসে হামলার দায়-দায়িত্ব ইসলামিক স্টেট নিলেও, মালিতে হামলার দায়িত্ব নিয়েছে আল কায়েদা। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্যারিসে হামলার পাশাপাশি মালিতে হামলাও ইসলামিক স্টেটের হাতে হবারই কথা ছিল। কারণ দীর্ঘদিন ফরাসি উপনিবেশে থাকার ফলে মালির আভ্যন্তরে ফ্রান্সবিরোধী শক্তি বেশ জোরদার। তবে সেই জোরদার জাতীয়তাবাদী শক্তি ইসলামিক স্টেটকে শক্তি না জুগিয়ে আল কায়েদাকে সমর্থন দিচ্ছে। কিন্তু কেন মালির এই হামলা? ইসলামিক স্টেটে একটা সময় আল কায়েদার প্রভাব ছিল এটা স্বীকৃত ব্যাপার। কারণ একটা সময় গোটা বিশ্বে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর এবং আলোচিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছিল আল কায়েদা। যার প্রমাণ আমরা নাইন ইলেভেনের ঘটনার ভেতর দিয়ে দেখতে পাই। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসলামিক স্টেটের হাতে শিরñেদসহ অনেক বর্বর ঘটনার পর বিশ্ববাসীকে একযোগে স্বীকার করতে হচ্ছে যে ইসলামিক স্টেটই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। আর এই ঘটনায় মূলত আল কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের মধ্যকার বিরোধিতাই পরিষ্কার হয়েছে। কারণ আল কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেট দুটি গোষ্ঠীই মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা শাসনের অবসান চাইছে, কিন্তু আল কায়েদা শাসক গোষ্ঠীকে হামলা করেই কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছুতে চাইলেও ইসলামিক স্টেট লক্ষ্যাধিক সাধারণ মানুষ হত্যার মধ্য দিয়ে তা অর্জন করতে চায়। আল কায়েদা যেখানে মুসলিম বিশ্বকে একত্রিত করে পশ্চিমা শক্তিকে নিষ্ক্রিয় করতে চায়, সেখানে ইসলামিক স্টেট মুসলিমদের মধ্যেই প্রত্যক্ষ সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি করে দ্বিধা-বিভক্তির বাড়াচ্ছে। আজকের যে আরব বসন্ত পরবর্তী অবস্থা, এর জন্য আল কায়েদার অবদান থাকলেও সুবিধা ভোগ করছে ইসলামিক স্টেট। যে কারণ অনেকদিন ধরেই আইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদি এবং আল কায়েদা নেতা ডাক্তার আয়মান আল জাওয়াহিরির মধ্যে লিখিত বাদানুবাদ চলছে অনেকদিন। গত সেপ্টেম্বরে জাওয়াহিরি ইসলামিক স্টেটের ঘোষিত খিলাফতকে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সেখানে তিনি আরও বলেন, ‘বাগদাদি ও তার ভাইদের দ্বারা আমাদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আমরা যতটা সম্ভব অল্প করে এর উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি। তাদের রাষ্ট্রদ্রোহিতার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু বাগদাদি ও তার ভাইয়েরা আমাদের সামনে কোনো উপায় রাখেনি। তাদের দাবি সকল মুজাহিদীনরা ত্যাগ করেছে, কারণ তাদের সঙ্গে কোনো জোট করা সম্ভব নয়।’ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেই ইয়েমেনভিত্তিক আল কায়েদার একটি শাখা ফ্রান্সের শার্লি হেবদোর অফিসে হামলা চালায়। নিউইয়র্ক টাইমসের ইউরোপিয়ান বিশ্লেষকদের বিশ্বাস মতে, শার্লি হেবদোর হামলার সফলতার পরেই প্যারিসে এই বড় হামলার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে প্যারিসের ঘটনার পর পর মালিতে যে হামলা চালানো হয় তার পেছনে আছে আল কায়েদা। এই হামলার মাধ্যমে আল কায়েদা যে শুধু পশ্চিমাদের শায়েস্তা করার চেষ্টা করেছে তা নয়, পাশাপাশি ইসলামিক স্টেটকেও তারা জানান দিল যে তারা হাঙ্গামা ও হত্যাকাণ্ড চালাতে সক্ষম। সাবেক এমআইসিক্স কর্মকর্তা রিচার্ড ব্যারেট নিউইয়র্ক টাইমসকে জানান, ‘তাদের পূর্ণ মনোযোগ হলো ইরাক এবং সিরিয়া। মালিতে হামলার ফলে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে তাদের কার্যত নিষ্ক্রিয় মনে হলেও আসলে সক্রিয়।’ অধ্যাপক হুদিত রনেনের মতে, ‘মালিতে হামলা হলো ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদার মধ্যকার বৈরিতার ফল। এই হামলাকে এই অঞ্চলের জন্য একটা বার্তা হিসেবেও ধরা যেতে পারে।’ কিন্তু বিশ্লেষক জলিল লুনের হিসেব মতে, ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু হলেও আল কায়েদা যে এখনো অপারেশন চালাতে সক্ষম এবং সেই আদর্শেই তারা চলছে তার প্রমাণ মালিতে এই হামলা। গোটা বিশ্বে এখনো আল কায়েদার নেটওয়ার্ক অনেকাংশেই অক্ষত আছে। ইসলামিক স্টেট এবং আল কায়েদার মধ্যে সংঘর্ষ শুধুমাত্র বক্তব্য বা লেখালেখির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। সিলিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে অনেকদিন ধরেই ইসলামিক স্টেট বাহিনীর সঙ্গে আল কায়েদার লড়াই চলছে। সর্বশেষ ইসলামিক স্টেটের একজন নেতৃস্থানীয় নেতা মুহাম্মদ আবু আল বারাদিকে আত্মঘাতী বোমা হামলার মাধ্যমে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে আল নুসরা টুইটার মারফত এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে। খেয়াল করলে দেখা যাবে, সিরিয়াতে বিবদমান দুই পক্ষই মুলত সুন্নি মুসলমান। অনেক ক্ষেত্রে তাদের মতাদর্শিক অবস্থানও এক, কিন্তু ভৌগোলিক রাজনীতির তুলনায় সিরিয়াতে অঞ্চলভিত্তিক রাজনীতিই সর্বশেষ কথা। যে কারণ অনেক ক্ষেত্রে নুসরা ফ্রন্ট ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হলেও, আবার এই সংগঠনটির সঙ্গেই বিভিন্ন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করছে। তবে মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক কিছু বিশ্লেষকের মতে, আল কায়েদা এবং ইসলামিক স্টেটের মধ্যকার সংঘর্ষ মূলত আদর্শিক নয়, ক্ষমতার ভাগাভাগী নিয়ে। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, আল কায়েদার ভেতর থেকেই ইসলামিক স্টেটের জš§ এবং ২০১৩ সালে আদর্শগত অবস্থানের কথা বলে ইসলামিক স্টেট আল কায়েদা ছেড়ে চলে যায়। তখনো কিন্তু আয়মান আল জাওয়াহিরি এই বিষয়টা নিয়ে কোনো বক্তব্য প্রদান করেননি। কিন্তু যখনই ইসলামিক স্টেট একের পর এক এলাকা দখল করে, অগণিত মানুষ হত্যা করে খিলাফত প্রতিষ্ঠান ঘোষণা দিল তখনই মূলত বাগদাদি এবং জাওয়াহিরির দ্বন্দ্ব শুরু হয়। পাঁচ মিশালি ডেস্ক -
See more at: http://www.manobkantha.com/2015/12/1....ehfmK8rY.dpuf
Comment