কা’ব বিন আশরাফ মদীনায় ইয়াহুদিদের সর্দার ছিল। সে মুসলমানদের সাথে চুক্তিবদ্ধ ছিল। বদর যুদ্ধের পর চুক্তি ভঙ্গ করে। মক্কায় গমন করে মুশরিকদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে উস্কে দেয়। সে বড় কবি ছিল। কবিতা দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়ে কটুক্তি ও ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করতো। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে গোপনে হত্যা করে দেয়ার জন্য হযরত মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা রাদিয়াল্লাহু আনহুর নেতৃত্বে পাঁচজন সাহাবিকে পাঠান। তারা হলেন,
১. মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা (কা’ব বিন আশরাফের ভাগিনা)।
২. আবু নায়িলা (কা’ব বিন আশরাফের দুধ ভাই)।
৩. আব্বাদ ইবনে বিশর।
৪. আবু আবস ইবনে জাবর।
৫. আলহারিস ইবনে মুআজ- রাদিয়াল্লাহু আনহুম। [দেখুন: ফাতহুল বারি ৭/৪১১, কিতাবুল মাগাজি, বাব: কতলু কা’ব ইবনিল আশরাফ]
ইমাম বুখারি রহ. (২৫৬ হি.) কিতাবুল মাগাজিতে কা’ব ইবনে আশরাফের গুপ্ত হত্যার ঘটনা এভাবে বর্ণনা করেছেন,
“জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে আছ যে কা’ব ইবনে আশরাফকে হত্যা করতে পারো? সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দিয়েছে’। সাহাবি মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা দাঁড়িয়ে গেলেন। বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি চান, আমি তাকে হত্যা করি? বললেন, হাঁ; চাই। ইবনে মাসলামা আরজ করলেন, তাহলে আমাকে আপনার সমালোচনামূলক কিছু বলার অনুমতি দিন। বললেন, ঠিক আছে অনুমতি দেওয়া হলো।...
মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা কা’বের কাছে গেলেন। বললেন, এই মুহাম্মাদ লোকটা আমাদের কাছে দান দক্ষিণা চায়, সে আমাদেরকে বড় কষ্টে ফেলে দিল! তোমার কাছে এসেছি কিছু ঋণের জন্য। (মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামার এসব কথায় সুযোগ পেয়ে) কা’ব বলে উঠল, মাত্র তো শুরু! আল্লাহর কসম! তার প্রতি তোমরা অতিষ্ঠ হয়ে যাবে!
মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা বলেলেন, তা ঠিক! তবে যেহেতু তাকে মেনেই ফেলেছি, তাই এখনই মনে হয় তার সঙ্গ ত্যাগ করা ঠিক হবে না। শেষটা কোনদিকে গড়ায়, একটু দেখা দরকার। যা হোক, তো তুমি আমাকে কিছু খাবার ধার দাও। এই ধরো দু’-এক ‘ওয়াসাক’ হলেই চলবে।...
ঠিক আছে, তাহলে কিছু একটা বন্ধক রাখ আমার কাছে ।
কী চাও তুমি?
তোমাদের নারীদের বন্ধক রাখ।
কী যে বলো, এটা কী করে সম্ভব! তুমি হলে আরবের সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ! (তোমাকে ছেড়ে আমাদের মহিলারা আর যেতে চাইবে না।)
আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে তোমাদের ছেলেদের বন্ধক রাখ।
না, সেটাই বা কীভাবে করি! ভবিষ্যতে লোকে আমাদের ছেলেদের গালি দিয়ে বলবে, তোমাকে তো এক দুই ওয়াসাক খাবারের জন্য বন্ধক রাখা হয়েছিল! এটা আমাদের জন্য খুব লজ্জার বিষয়। তার চেয়ে বরং আমরা তোমার কাছে কিছু অস্ত্র বন্ধক রাখি। (অস্ত্রের কথা বলেছেন, যাতে হত্যার সময় অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করতে কোন আপত্তি না হয়।)
ঠিক আছে, তা-ই কর।
মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা রাদিয়াল্লাহু আনহু অস্ত্র নিয়ে আসার ওয়াদা করে চলে গেলেন।...
ইবনে মাসলামা রাদিয়াল্লাহু আনহু অঙ্গিকারমতো কা’বের কাছে এলেন। রাতের বেলা। তার সাথে আসলেন কা’বের দুধ ভাই আবু নায়িলা। (এ ছাড়াও আরো তিনজন সহ মোট পাঁচজন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বাকিউল গারকাদ পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলেন এবং তাদের জন্য দোয়া করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে রাতে নামায ও দোয়ায় লিপ্ত থাকেন।)
ইবনে মাসলামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বাসায় এসে কা’বকে ডাক দিলেন এবং দূর্গে আসতে আহ্বান করলেন। ডাক শুনে কা’ব নেমে এল। (কা’ব তখন মাত্র বিয়ে করেছে)। স্ত্রী আপত্তি করল, এই অসময়ে কোথায় যাচ্ছ তুমি?
কা’ব বলল, এই তো, মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা এবং আমার ভাই আবু নায়িলা এসেছে।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, স্ত্রী বলল, আমার তো মনে হচ্ছে আমি রক্তঝরা আওয়াজ শুনছি। কা’ব বলল, আরে সে তো আমারই ভাই মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা এবং আমার দুধভাই আবু নায়িলা! সম্ভ্রান্ত পুরুষ রাতের বর্শা লড়াইয়ে ডাক পড়লেও সাড়া দিতে ভয় করে না।
মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা তার সঙ্গে আরো দু’জন লোক নিয়ে এসেছেন। তদের বলে রাখলেন, কা’ব আসলে আমি তার চুলে ধরে সুগন্ধি গ্রহণ করব। যখন দেখবে, মাথাটা শক্ত করে ধরেছি, এক আঘাতে মাথাটা গর্দান থেকে আলাদা করে ফেলবে। কা’ব একটি চাদর জড়িয়ে বেরিয়ে আসল। তার শরীর থেকে খুশবু ছড়াচ্ছে। মুহাম্মাদ বললেন, এত চমৎকার সুগন্ধ তো আর কখনো পাইনি! আমি কি তোমার এই সুঘ্রাণ নিতে পারি? কা’ব বলল, হাঁ, ‘অবশ্যই পারো’। মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা কা’বের চুল ধরে গন্ধ শোঁকলেন। তারপর সঙ্গীদেরও শোঁকালেন। কিছুক্ষণ পর মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা আবার গন্ধ শোঁকার অনুমতি চাইলেন। কা’ব আবারও অনুমতি দিল। এবার তিনি সুযোগ মতো কা’বের মাথাটা ঝাপটে ধরে সঙ্গীদের ইশারা করলেন- দাও কোপ। এভাবে তারা তাকে হত্যা করলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (অভিযান সফল হবার) সুসংবাদ দিলেন।” -সহীহ বোখারী, হাদীস নং ৪০৩৭, বাব: কতলু কা’ব ইবনিল আশরাফ
অন্য বর্ণনায় এসেছে, সাহাবায়ে কেরাম তার মাথা কেটে নিয়ে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে নিক্ষেপ করেন।
বর্ণনায় এসেছে, আঘাত খেয়ে কা’ব বিন আশরাফ চিৎকার দিয়ে উঠে। চিৎকার শুনে ইয়াহুদিরা জমায়েত হয়ে যায় এবং সাহাবায়ে কেরামের পশ্চাদ্ভাবন করে। তবে ভিন্ন পথে রওয়ানা হওয়ায় তারা সাহাবায়ে কেরামকে পায়নি।
পরের দিন সকাল বেলা ইয়াহুদিরা ভীত-সন্ত্রস্ত্র অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে নালিশ করে যে, আমাদের সর্দার গতরাত গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন কা’বের অপরাধগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেন। এতে ইয়াহুদিরা ভয় পেয়ে যায়। আর কিছু বলার সাহস পায়নি। [দেখুন: ফাতহুল বারি, কিতাবুল মাগাজি, বাব: কতলু কা’ব ইবনিল আশরাফ]
এ ঘটনা গুপ্ত হত্যার সুস্পষ্ট দলীল। ইমাম বুখারী রহ. কিতাবুল জিহাদে এ ঘটনা নিম্নোক্ত শিরোনামে এনেছেন,
মুহাদ্দিসিনে কেরাম এ শিরোনামের ব্যাখ্যায় বিষয়টি পরিষ্কার করে দিয়েছেন। যেমন, হাফেয ইবনে হাজার রহ. (৮৫২ হি.) বলেন,
কাস্তাল্লানি রহ. (৯২৩ হি.) বলেন,
ইবনে বাত্তাল রহ. (৪৪৯ হি.) বলেন,
হাফেজ ইবনে হাজার রহ. (৮৫২ হি.) কিতাবুল মাগাজিতে এ হাদিসের ব্যাখ্যা শেষে বলেন,
১. মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা (কা’ব বিন আশরাফের ভাগিনা)।
২. আবু নায়িলা (কা’ব বিন আশরাফের দুধ ভাই)।
৩. আব্বাদ ইবনে বিশর।
৪. আবু আবস ইবনে জাবর।
৫. আলহারিস ইবনে মুআজ- রাদিয়াল্লাহু আনহুম। [দেখুন: ফাতহুল বারি ৭/৪১১, কিতাবুল মাগাজি, বাব: কতলু কা’ব ইবনিল আশরাফ]
ইমাম বুখারি রহ. (২৫৬ হি.) কিতাবুল মাগাজিতে কা’ব ইবনে আশরাফের গুপ্ত হত্যার ঘটনা এভাবে বর্ণনা করেছেন,
قال عمرو: سمعت جابر بن عبد الله رضي الله عنهما، يقول: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «من لكعب بن الأشرف، فإنه قد آذى الله ورسوله»، فقام محمد بن مسلمة فقال: يا رسول الله، أتحب أن أقتله؟ قال: «نعم»، قال: فأذن لي أن أقول شيئا، قال: «قل»، فأتاه محمد بن مسلمة فقال: إن هذا الرجل قد سألَنا صدقة، وإنه قد عنانا وإني قد أتيتك أستسلفك، قال: وأيضا والله لتملنه، قال: إنا قد اتبعناه، فلا نحب أن ندعه حتى ننظر إلى أي شيء يصير شأنه، وقد أردنا أن تسلفنا وسقا أو وسقين ... فقال: نعم، ارهنوني، قالوا: أي شيء تريد؟ قال: ارهنوني نساءكم، قالوا: كيف نرهنك نساءنا وأنت أجمل العرب، قال: فارهنوني أبناءكم، قالوا: كيف نرهنك أبناءنا، فيسب أحدهم، فيقال: رهن بوسق أو وسقين، هذا عار علينا، ولكنا نرهنك اللأمة - قال سفيان: يعني السلاح - فواعده أن يأتيه، فجاءه ليلا ومعه أبو نائلة، وهو أخو كعب من الرضاعة، فدعاهم إلى الحصن، فنزل إليهم، فقالت له امرأته: أين تخرج هذه الساعة؟ فقال إنما هو محمد بن مسلمة، وأخي أبو نائلة، وقال غير عمرو، قالت: أسمع صوتا كأنه يقطر منه الدم، قال: إنما هو أخي محمد بن مسلمة ورضيعي أبو نائلة إن الكريم لو دعي إلى طعنة بليل لأجاب، قال: ويُدخل محمد بن مسلمة معه رجلين ... فقال: إذا ما جاء فإني قائل بشعره فأشمه، فإذا رأيتموني استمكنت من رأسه، فدونكم فاضربوه، وقال مرة: ثم أشمكم، فنزل إليهم متوشحا وهو ينفح منه ريح الطيب، فقال: ما رأيت كاليوم ريحا، أي أطيب ... فقال أتأذن لي أن أشم رأسك؟ قال: نعم، فشمه ثم أشم أصحابه، ثم قال: أتأذن لي؟ قال: نعم، فلما استمكن منه، قال: دونكم، فقتلوه، ثم أتوا النبي صلى الله عليه وسلم فأخبروه (صحيح البخاري: 4037)
“জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবিদের জিজ্ঞেস করলেন, ‘কে আছ যে কা’ব ইবনে আশরাফকে হত্যা করতে পারো? সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে কষ্ট দিয়েছে’। সাহাবি মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা দাঁড়িয়ে গেলেন। বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি কি চান, আমি তাকে হত্যা করি? বললেন, হাঁ; চাই। ইবনে মাসলামা আরজ করলেন, তাহলে আমাকে আপনার সমালোচনামূলক কিছু বলার অনুমতি দিন। বললেন, ঠিক আছে অনুমতি দেওয়া হলো।...
মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা কা’বের কাছে গেলেন। বললেন, এই মুহাম্মাদ লোকটা আমাদের কাছে দান দক্ষিণা চায়, সে আমাদেরকে বড় কষ্টে ফেলে দিল! তোমার কাছে এসেছি কিছু ঋণের জন্য। (মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামার এসব কথায় সুযোগ পেয়ে) কা’ব বলে উঠল, মাত্র তো শুরু! আল্লাহর কসম! তার প্রতি তোমরা অতিষ্ঠ হয়ে যাবে!
মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা বলেলেন, তা ঠিক! তবে যেহেতু তাকে মেনেই ফেলেছি, তাই এখনই মনে হয় তার সঙ্গ ত্যাগ করা ঠিক হবে না। শেষটা কোনদিকে গড়ায়, একটু দেখা দরকার। যা হোক, তো তুমি আমাকে কিছু খাবার ধার দাও। এই ধরো দু’-এক ‘ওয়াসাক’ হলেই চলবে।...
ঠিক আছে, তাহলে কিছু একটা বন্ধক রাখ আমার কাছে ।
কী চাও তুমি?
তোমাদের নারীদের বন্ধক রাখ।
কী যে বলো, এটা কী করে সম্ভব! তুমি হলে আরবের সবচেয়ে সুদর্শন পুরুষ! (তোমাকে ছেড়ে আমাদের মহিলারা আর যেতে চাইবে না।)
আচ্ছা ঠিক আছে, তাহলে তোমাদের ছেলেদের বন্ধক রাখ।
না, সেটাই বা কীভাবে করি! ভবিষ্যতে লোকে আমাদের ছেলেদের গালি দিয়ে বলবে, তোমাকে তো এক দুই ওয়াসাক খাবারের জন্য বন্ধক রাখা হয়েছিল! এটা আমাদের জন্য খুব লজ্জার বিষয়। তার চেয়ে বরং আমরা তোমার কাছে কিছু অস্ত্র বন্ধক রাখি। (অস্ত্রের কথা বলেছেন, যাতে হত্যার সময় অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করতে কোন আপত্তি না হয়।)
ঠিক আছে, তা-ই কর।
মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা রাদিয়াল্লাহু আনহু অস্ত্র নিয়ে আসার ওয়াদা করে চলে গেলেন।...
ইবনে মাসলামা রাদিয়াল্লাহু আনহু অঙ্গিকারমতো কা’বের কাছে এলেন। রাতের বেলা। তার সাথে আসলেন কা’বের দুধ ভাই আবু নায়িলা। (এ ছাড়াও আরো তিনজন সহ মোট পাঁচজন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে বাকিউল গারকাদ পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে গেলেন এবং তাদের জন্য দোয়া করলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে রাতে নামায ও দোয়ায় লিপ্ত থাকেন।)
ইবনে মাসলামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বাসায় এসে কা’বকে ডাক দিলেন এবং দূর্গে আসতে আহ্বান করলেন। ডাক শুনে কা’ব নেমে এল। (কা’ব তখন মাত্র বিয়ে করেছে)। স্ত্রী আপত্তি করল, এই অসময়ে কোথায় যাচ্ছ তুমি?
কা’ব বলল, এই তো, মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা এবং আমার ভাই আবু নায়িলা এসেছে।
অন্য বর্ণনায় এসেছে, স্ত্রী বলল, আমার তো মনে হচ্ছে আমি রক্তঝরা আওয়াজ শুনছি। কা’ব বলল, আরে সে তো আমারই ভাই মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা এবং আমার দুধভাই আবু নায়িলা! সম্ভ্রান্ত পুরুষ রাতের বর্শা লড়াইয়ে ডাক পড়লেও সাড়া দিতে ভয় করে না।
মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা তার সঙ্গে আরো দু’জন লোক নিয়ে এসেছেন। তদের বলে রাখলেন, কা’ব আসলে আমি তার চুলে ধরে সুগন্ধি গ্রহণ করব। যখন দেখবে, মাথাটা শক্ত করে ধরেছি, এক আঘাতে মাথাটা গর্দান থেকে আলাদা করে ফেলবে। কা’ব একটি চাদর জড়িয়ে বেরিয়ে আসল। তার শরীর থেকে খুশবু ছড়াচ্ছে। মুহাম্মাদ বললেন, এত চমৎকার সুগন্ধ তো আর কখনো পাইনি! আমি কি তোমার এই সুঘ্রাণ নিতে পারি? কা’ব বলল, হাঁ, ‘অবশ্যই পারো’। মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা কা’বের চুল ধরে গন্ধ শোঁকলেন। তারপর সঙ্গীদেরও শোঁকালেন। কিছুক্ষণ পর মুহাম্মাদ ইবনে মাসলামা আবার গন্ধ শোঁকার অনুমতি চাইলেন। কা’ব আবারও অনুমতি দিল। এবার তিনি সুযোগ মতো কা’বের মাথাটা ঝাপটে ধরে সঙ্গীদের ইশারা করলেন- দাও কোপ। এভাবে তারা তাকে হত্যা করলেন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে (অভিযান সফল হবার) সুসংবাদ দিলেন।” -সহীহ বোখারী, হাদীস নং ৪০৩৭, বাব: কতলু কা’ব ইবনিল আশরাফ
অন্য বর্ণনায় এসেছে, সাহাবায়ে কেরাম তার মাথা কেটে নিয়ে এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে নিক্ষেপ করেন।
বর্ণনায় এসেছে, আঘাত খেয়ে কা’ব বিন আশরাফ চিৎকার দিয়ে উঠে। চিৎকার শুনে ইয়াহুদিরা জমায়েত হয়ে যায় এবং সাহাবায়ে কেরামের পশ্চাদ্ভাবন করে। তবে ভিন্ন পথে রওয়ানা হওয়ায় তারা সাহাবায়ে কেরামকে পায়নি।
পরের দিন সকাল বেলা ইয়াহুদিরা ভীত-সন্ত্রস্ত্র অবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে নালিশ করে যে, আমাদের সর্দার গতরাত গুপ্ত হত্যার শিকার হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন কা’বের অপরাধগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দেন। এতে ইয়াহুদিরা ভয় পেয়ে যায়। আর কিছু বলার সাহস পায়নি। [দেখুন: ফাতহুল বারি, কিতাবুল মাগাজি, বাব: কতলু কা’ব ইবনিল আশরাফ]
***
এ ঘটনা গুপ্ত হত্যার সুস্পষ্ট দলীল। ইমাম বুখারী রহ. কিতাবুল জিহাদে এ ঘটনা নিম্নোক্ত শিরোনামে এনেছেন,
باب الفتك بأهل الحرب
‘হরবি কাফেরদের সুযোগ বুঝে হত্যা করে দেয়া(র বৈধতা) সংক্রান্ত পরিচ্ছেদ’।
‘হরবি কাফেরদের সুযোগ বুঝে হত্যা করে দেয়া(র বৈধতা) সংক্রান্ত পরিচ্ছেদ’।
মুহাদ্দিসিনে কেরাম এ শিরোনামের ব্যাখ্যায় বিষয়টি পরিষ্কার করে দিয়েছেন। যেমন, হাফেয ইবনে হাজার রহ. (৮৫২ হি.) বলেন,
قوله باب الفتك بأهل الحرب أي جواز قتل الحربي سرا. اهـ
“হরবিকে গোপনে হত্যা করে দেয়ার বৈধতা সংক্রান্ত পরিচ্ছেদ।” -ফাতহুল বারি ৬/২০৫
“হরবিকে গোপনে হত্যা করে দেয়ার বৈধতা সংক্রান্ত পরিচ্ছেদ।” -ফাতহুল বারি ৬/২০৫
কাস্তাল্লানি রহ. (৯২৩ হি.) বলেন,
(باب) جواز (الفتك) بفتح الفاء وسكون الفوقية آخره كاف (بأهل الحرب) أي قتلهم على غفلة. اهـ
“অন্যমনস্কতার সুযোগে হরবিকে হত্যা করে দেয়ার বৈধতা সংক্রান্ত পরিচ্ছেদ।”- ইরশাদুস সারি ৫/১৫৫
“অন্যমনস্কতার সুযোগে হরবিকে হত্যা করে দেয়ার বৈধতা সংক্রান্ত পরিচ্ছেদ।”- ইরশাদুস সারি ৫/১৫৫
ইবনে বাত্তাল রহ. (৪৪৯ হি.) বলেন,
قاله بعض شيوخنا قال : إن قتل ابن الأشرف هو من باب أن من آذى الله ورسوله قد حل دمه ، ولا أمان له يعتصم به فقتله جائز على كل حال ؛ لأن الرسول ( صلى الله عليه وسلم ) إنما قتله بوحى من الله وأذن فى قتله فصار ذلك أصلا فى جواز قتل من كان لله ولرسوله حربًا. اهـ بطال 5\190
“আমাদের কতক মাশায়িখ বলেন, কা’ব বিন আশরাফকে হত্যা এ দৃষ্টিকোণ থেকে বৈধ হয়েছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলকে কষ্ট দেবে, তার রক্ত হালাল হয়ে যাবে এবং কোন আমান তার রক্তের সুরক্ষা দিতে পারবে না। বিধায় সর্বাবস্থায় তাকে হত্যা করা বৈধ। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ওহী ও অনুমতি প্রাপ্ত হয়ে হত্যা করেছেন। ফলে এটি একটি সার্বজনীন মূলনীতিতে পরিণত হয়েছে যে, আল্লাহ ও রাসূলের বিরোধীদের হত্যা করে দেয়া বৈধ।”- শরহু ইবনি বাত্তাল লি সহীহিল বুখারি ৫/১৯০ হাফেজ ইবনে হাজার রহ. (৮৫২ হি.) কিতাবুল মাগাজিতে এ হাদিসের ব্যাখ্যা শেষে বলেন,
وفيه جواز قتل المشرك بغير دعوة إذا كانت الدعوة العامة قد بلغته. اهـ
“এ হাদিস দলীল যে, কোন মুশরিকের কাছে যখন সাধারণ দাওয়াত পৌঁছে যায়, তখন (দ্বিতীয়বার) দাওয়াত দেয়া ছাড়াই তাকে হত্যা করে দেয়া বৈধ।” –ফাতহুল বারি ৭/৪১২ ***
Comment