উম্মাহর এই দুর্দিনে আমাদের কর্তব্য ছিল সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে এক হয়ে কুফফারদের বিরুদ্ধে লড়াই করা । কিন্তু আমরা নিজেদের মধ্যেই লড়াইয়ের অসংখ্য ময়দান খুলে নিচ্ছি । অতি সামান্য কারণেই নিজের অপর মুসলিম ভাইকে নিজের শত্রু বানিয়ে নিচ্ছি । এ ব্যাপারে অনেকে তো রীতিমত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে । সামান্য কারণকে কেন্দ্র করে দিনের পর দিন তার পেছনে মূল্যবান সময় ও শ্রম নষ্ট করছে । অথচ এই সময় আর শ্রম যদি আমার আমাদের নির্যাতিত মুসলিম ভাই বোনদের কল্যাণে ব্যয় করতাম তাহলে কতইনা ভালো হতো ।
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে গ্লোবাল জিহাদের প্রত্যক্ষ কাজকর্ম শুরু হয়েছে খুব বেশীদিন হয়নি । যার কারণে এ অঞ্চলের মানুষ এই কর্মপন্থার সাথে ততটা পরিচিত না । অন্যদিকে ঘনজনবসতিপূর্ণ এলাকাতে সাধারণ মানুষের সমর্থন ছাড়া সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব । তাই তো আল কায়েদা উপমহাদেশের আচরণবিধিতে সর্বসাধারণের সমর্থনকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ।
আর এটা সর্বজনবিদিত যে যেকোনো জাতির সমর্থন লাভের জন্য তার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সমর্থন লাভ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে উলামায়ে কেরাম হলেন সর্বসাধারণের মুকুটবিহীন সম্রাট । তাই উলামায়ে কেরামকে পেছনে রেখে এ দেশে জিহাদী কার্যক্রম পরিচালনা করা এক রকম অসম্ভবই ধরা যায় ।
আচরণবিধির দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের সপ্তম ধারায় বলা হয়েছে :
জামাআত শরঈ বিষয়গুলোতে স্থানীয় আহলুল হক্ব আলেমদের অনুসরণ করে এবং সমকালীন ঐসব আলেমদের থেকে ফায়দা নেওয়াকে জরুরী মনে করে যাদের তাক্বওয়া , ইলম ও অভিজ্ঞতা প্রতিষ্ঠিত । একই ভাবে নব উদ্ভূত বিষয়গুলোতে তাদের ফায়সালার দিকে ফিরে যাওয়ার মত পোষণ করে ।
তৃতীয় অনুচ্ছেদের পঞ্চম ধারায় বলা হয়েছে :
যেহেতু উলামায়ে কেরাম এই উম্মতের প্রকৃত নেতা তাদের মাধ্যমেই সমাজের ইসলাহ বা সংশোধন , তালীম ও তারবিয়তের কাজ সম্পাদিত হয় কাজেই তাদের চারপাশে জনসাধারণকে জড়ো করে আমরা সমাজে উলামায়ে কেরামের সম্মান ও গুরুত্বকে বাড়ানো ও তাদের ভূমিকাতে প্রভাব প্রতিপত্তি সম্পন্ন করতে চাই ।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে , বুঝে বা না বুঝে অনেকেই সম্মানিত উলামায়ে কেরামের ব্যাপারে অমুক আলেম তাগুতের গোলাম , অমুক কাফের , অমুক মুরতাদ হেন তেন ইত্যাদি লকব লাগিয়ে দিচ্ছেন । তাও আবার এমন সব উলামায়ে কেরামের ব্যাপারে যাদের তাক্বওয়া , ইলম ও অভিজ্ঞতা প্রতিষ্ঠিত । কিন্তু কারা এই ঘৃণিত কাজটি করছে ??
এই প্রশ্নটির কয়েকটি উত্তর হতে পারে ।
প্রথমত : তাগুতের নিযুক্ত গোয়েন্দারা উম্মাহর মাঝে মুজাহিদীনের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করার লক্ষ্যে এই নিকৃষ্ট কাজটি করছে ।
দ্বিতীয়ত : উগ্র তাকফিরী জামাআতুল বাগদাদীর সমর্থকগোষ্ঠী এই কাজটি করছে ।
তৃতীয়ত : আমাদেরই কিছু ভাই যারা নতুন নতুন জিহাদের সহিহ বুঝ পেয়েছেন তারা বুঝে বা না বুঝে এই কাজটি করছেন ।
কাজটি যাদেরই হোক ক্ষতির সম্মুখীন কিন্তু আমাদের সকলেরই হতে হচ্ছে ।
অন্যদিকে আমাদেরই কওমী - দেওবন্দী ঘরানার কিছু ভাই জেনে হোক বা না জেনে হোক আরেকটি ফেতনার সূচনা করছেন । তারা ঢালাওভাবে জিহাদী মনোভাব পোষণকারী সকলকে আকাবিরবিরোধী তাকফিরী ইত্যাকার লকব দিচ্ছেন । মানহাজি লকব দিয়ে তাচ্ছিল্য করছেন । আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে শাইখুল ইসলাম তাকী উসমানী হাফি: এর উপর ন্যাক্কারজনক আক্রমণের জন্য তো অনেকেই অতি জযবাতি জিহাদী মানহাজিদের দায়ী করছেন । নাউযুবিল্লাহ ।
কিছুদিন পূর্বেও এই দ্বন্দ্ব স্বাভাবিক মনে হলেও এখন মনে হচ্ছে এটি অন্য কোনো দিকে মোড় নিবে । দ্বীনি কাজে সহযোগিতার পরিবর্তে এই ধরণের বিরোধী মনোভাব পোষণ করাটা আসলেই কতটুকু দ্বীন সমর্থিত তা সকলেরই ভেবে দেখা উচিত । পরস্পরের মাঝে এই ধরণের গালাগালি কতটুকু শরীয়ত সম্মত? আল্লাহ তাআলা বলেন :
يا أيها الذين آمنوا لا يسخر قوم من قوم عسى أن يكونوا خيرا منهم و لا نساء من نساء عسى أن يكن خيرا منهن و لا تلمزوا أنفسكم ولا تنابزوا بالألقاب بئس الاسم الفسوق بعد الإيمان و من لم يتب فأولئك هم الظالمون
হে মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, যাকে নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী যেন অপর নারীকে নিয়ে উপহাস না করে। কেননা, যাকে নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি তাচ্ছিল্যভরে চোখ দ্বারা ইশারা করো না । এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। [ সুরা হুজুরাত ৪৯:১১ ]
ইজতিহাদী বিষয়গুলোতে মতপার্থক্য হওয়া কোনো বিস্ময়কর ব্যাপার না । কারো সাথে একমত না হওয়ার অর্থ তাকে বিভ্রান্ত বা কাফের মনে করা না ।
তেমনিভাবে কারো দুই একটি বিষয় ভুল হওয়ার অর্থ তার সবকিছু ভুল হওয়া না । কোনো একটি বিষয়ে কারো মত গ্রহণ না করার অর্থ এটা না যে কোনো বিষয়েই তার মত গ্রহণ করা যাবে না ।
এই মতপার্থক্য নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে । কে কওমী কে আলিয়া কে মাযহাবী কে আহলে হাদীস এইসব ভিন্নতাকে আপন আপন স্থানে রেখে ইসলামের সূত্রে আবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে । সমালোচনা হবে । তবে শালীন ভাষায় যৌক্তিক ভাবে । দলিল প্রমাণের ভিত্তিতে । আমার মত ভুল হলে সেটা মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে । আমার অনুসৃত শাইখের মতই সবসময় শক্তিশালী হবে এমন ভাবনা একটি ভ্রান্তি । কোনো একজনের ভুলকে সকলের উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না ।
কিন্তু আমরা এই অপরাধগুলোতেই বেশী জড়িয়ে পড়ছি । গ্লোবাল জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত বা একে ভালোবাসেন এমন প্রত্যেকের জন্য উচিত এমন কাজ থেকে বিরত থাকা যার কারণে মানুষের মাঝে এই মানহাজ প্রশ্নবিদ্ধ হয় বা এর দাওয়াতী কাজ ব্যাহত হয় ।
বিশেষকরে কোনো আলেমের ব্যাপারে মুখ খোলার ক্ষেত্রে বিপুল সাবধানতা প্রয়োজন । এই ধরণের কাজ থেকে বিরত থেকে দাওয়াতী কাজে মনোনিবেশ করাটাই কাম্য । আমাদের সামান্য ভুল ভাইদের হাজারো মেহনতের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে । আর তাছাড়া মনে রাখতে হবে আমরা উলামায়ে কেরামেরই সন্তান । তাই তাদের ব্যাপারে কোনো অনাকাঙ্খিত কথা যেন আমাদের থেকে প্রকাশ না পায় । তবে যদি কখনো কোনো আলেমের দ্বারা (আল্লাহ না করুন ) ফিতনা সৃষ্টি হয় তবে সেই ফিতনার মুকাবিলার জন্য যোগ্য ও প্রাজ্ঞ আলেমগণই এগিয়ে আসবেন ।
আর যারা না বুঝে মুজাহিদীনদের সমালোচনা করছেন তাদের প্রতি আবেদন থাকবে : আল্লাহর ওয়াস্তে এই কাজ থেকে ফিরে আসুন । হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
من عادى لي وليا فقد آذنته بالحرب
যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সাথে শত্রুতা পোষণ করবে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম । সহীহুল বুখারী ।
মনে রাখতে হবে , জিহাদপসন্দ তালিবে ইলম বা আম লোক তারা কেউ ফেরেশতা না । তাদেরও ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক । তাই বলে তাদের নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা তাদেরকে বিভিন্ন ট্যাগ লাগানো এটা নি:সন্দেহে গুনাহে কাবিরাহ । তাই এটা থেকে বেঁচে থাকা উচিত । গঠনমূলক সমালোচনা করে তাদের কল্যাণকামী হওয়া উচিত ।
এরপরও হয়ত কিছু মানুষ থেকেই যাবে যারা বিরোধিতা করবে । প্রোপাগান্ডা ছড়াবে । উস্কানীমূলক কথা বলবে । সমাজে কথার বিষ ছড়াবে । মানুষের সামনে আমাদের ব্যাপারে বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করবে । তাগুতের গোলামি আর মুজাহিদীনের বিরোধিতাই যাদের ভাগ্যের লিখন । তাদের ব্যাপারে আমাদের লাগামহীন হওয়া যাবে না । সঠিক তথ্য ও যুক্তি দিয়ে আমরা তাদের মুকাবিলা করব । শরীয়তের গন্ডিতে থেকে আমরা তাদের যথাযথ উত্তর দেব । অহেতুক তর্ক থেকে দূরে থাকবে । আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবেন ইনশাআল্লাহ ।
إنا كفيناك المستهزئين
তাচ্ছিল্যকারীদের জন্য আমিই যথেষ্ট । সূরা হিজর : ৯৫
সর্বোপরি সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান থাকবে :
১ - উলামায়ে কেরামের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই । তাদের ভুল নিয়ে আলোচনা করা সকলের দায়িত্ব না । জটিল বিষয়গুলোতে উলামায়ে কেরামের শরণাপন্ন হই ।
২ - জিহাদের জন্য কাজ করতে ইচ্ছুক ভাইদেরকে সহযোগিতা করি । তাদের ভুলগুলো স্নেহের সাথে ধরিয়ে দেই । সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করি । নিজে জিহাদের প্রতি আগ্রহী না থাকলে অন্য ভাইদেরকে বাঁধা না দেই । তাদের বিরুদ্ধে তাগুতের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি না করি ।
৩ - সকলে নিজ নিজ পরিমন্ডলে জিহাদের পরিবেশ গড়ে তুলি এবং খিলাফতে রাশিদাহ ফিরিয়ে আনার জন্য সকল ভেদাভেদ ভুলে একতাবদ্ধ হই ।
আল্লাহ তাআলা সকলকে তাওফীক দান করুন । আমীন ।
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে গ্লোবাল জিহাদের প্রত্যক্ষ কাজকর্ম শুরু হয়েছে খুব বেশীদিন হয়নি । যার কারণে এ অঞ্চলের মানুষ এই কর্মপন্থার সাথে ততটা পরিচিত না । অন্যদিকে ঘনজনবসতিপূর্ণ এলাকাতে সাধারণ মানুষের সমর্থন ছাড়া সামরিক কার্যক্রম পরিচালনা করা অসম্ভব । তাই তো আল কায়েদা উপমহাদেশের আচরণবিধিতে সর্বসাধারণের সমর্থনকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ।
আর এটা সর্বজনবিদিত যে যেকোনো জাতির সমর্থন লাভের জন্য তার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের সমর্থন লাভ করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । বাংলাদেশসহ উপমহাদেশে উলামায়ে কেরাম হলেন সর্বসাধারণের মুকুটবিহীন সম্রাট । তাই উলামায়ে কেরামকে পেছনে রেখে এ দেশে জিহাদী কার্যক্রম পরিচালনা করা এক রকম অসম্ভবই ধরা যায় ।
আচরণবিধির দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের সপ্তম ধারায় বলা হয়েছে :
জামাআত শরঈ বিষয়গুলোতে স্থানীয় আহলুল হক্ব আলেমদের অনুসরণ করে এবং সমকালীন ঐসব আলেমদের থেকে ফায়দা নেওয়াকে জরুরী মনে করে যাদের তাক্বওয়া , ইলম ও অভিজ্ঞতা প্রতিষ্ঠিত । একই ভাবে নব উদ্ভূত বিষয়গুলোতে তাদের ফায়সালার দিকে ফিরে যাওয়ার মত পোষণ করে ।
তৃতীয় অনুচ্ছেদের পঞ্চম ধারায় বলা হয়েছে :
যেহেতু উলামায়ে কেরাম এই উম্মতের প্রকৃত নেতা তাদের মাধ্যমেই সমাজের ইসলাহ বা সংশোধন , তালীম ও তারবিয়তের কাজ সম্পাদিত হয় কাজেই তাদের চারপাশে জনসাধারণকে জড়ো করে আমরা সমাজে উলামায়ে কেরামের সম্মান ও গুরুত্বকে বাড়ানো ও তাদের ভূমিকাতে প্রভাব প্রতিপত্তি সম্পন্ন করতে চাই ।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে , বুঝে বা না বুঝে অনেকেই সম্মানিত উলামায়ে কেরামের ব্যাপারে অমুক আলেম তাগুতের গোলাম , অমুক কাফের , অমুক মুরতাদ হেন তেন ইত্যাদি লকব লাগিয়ে দিচ্ছেন । তাও আবার এমন সব উলামায়ে কেরামের ব্যাপারে যাদের তাক্বওয়া , ইলম ও অভিজ্ঞতা প্রতিষ্ঠিত । কিন্তু কারা এই ঘৃণিত কাজটি করছে ??
এই প্রশ্নটির কয়েকটি উত্তর হতে পারে ।
প্রথমত : তাগুতের নিযুক্ত গোয়েন্দারা উম্মাহর মাঝে মুজাহিদীনের গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট করার লক্ষ্যে এই নিকৃষ্ট কাজটি করছে ।
দ্বিতীয়ত : উগ্র তাকফিরী জামাআতুল বাগদাদীর সমর্থকগোষ্ঠী এই কাজটি করছে ।
তৃতীয়ত : আমাদেরই কিছু ভাই যারা নতুন নতুন জিহাদের সহিহ বুঝ পেয়েছেন তারা বুঝে বা না বুঝে এই কাজটি করছেন ।
কাজটি যাদেরই হোক ক্ষতির সম্মুখীন কিন্তু আমাদের সকলেরই হতে হচ্ছে ।
অন্যদিকে আমাদেরই কওমী - দেওবন্দী ঘরানার কিছু ভাই জেনে হোক বা না জেনে হোক আরেকটি ফেতনার সূচনা করছেন । তারা ঢালাওভাবে জিহাদী মনোভাব পোষণকারী সকলকে আকাবিরবিরোধী তাকফিরী ইত্যাকার লকব দিচ্ছেন । মানহাজি লকব দিয়ে তাচ্ছিল্য করছেন । আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে শাইখুল ইসলাম তাকী উসমানী হাফি: এর উপর ন্যাক্কারজনক আক্রমণের জন্য তো অনেকেই অতি জযবাতি জিহাদী মানহাজিদের দায়ী করছেন । নাউযুবিল্লাহ ।
কিছুদিন পূর্বেও এই দ্বন্দ্ব স্বাভাবিক মনে হলেও এখন মনে হচ্ছে এটি অন্য কোনো দিকে মোড় নিবে । দ্বীনি কাজে সহযোগিতার পরিবর্তে এই ধরণের বিরোধী মনোভাব পোষণ করাটা আসলেই কতটুকু দ্বীন সমর্থিত তা সকলেরই ভেবে দেখা উচিত । পরস্পরের মাঝে এই ধরণের গালাগালি কতটুকু শরীয়ত সম্মত? আল্লাহ তাআলা বলেন :
يا أيها الذين آمنوا لا يسخر قوم من قوم عسى أن يكونوا خيرا منهم و لا نساء من نساء عسى أن يكن خيرا منهن و لا تلمزوا أنفسكم ولا تنابزوا بالألقاب بئس الاسم الفسوق بعد الإيمان و من لم يتب فأولئك هم الظالمون
হে মুমিনগণ, কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, যাকে নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী যেন অপর নারীকে নিয়ে উপহাস না করে। কেননা, যাকে নিয়ে উপহাস করা হচ্ছে সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি তাচ্ছিল্যভরে চোখ দ্বারা ইশারা করো না । এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। [ সুরা হুজুরাত ৪৯:১১ ]
ইজতিহাদী বিষয়গুলোতে মতপার্থক্য হওয়া কোনো বিস্ময়কর ব্যাপার না । কারো সাথে একমত না হওয়ার অর্থ তাকে বিভ্রান্ত বা কাফের মনে করা না ।
তেমনিভাবে কারো দুই একটি বিষয় ভুল হওয়ার অর্থ তার সবকিছু ভুল হওয়া না । কোনো একটি বিষয়ে কারো মত গ্রহণ না করার অর্থ এটা না যে কোনো বিষয়েই তার মত গ্রহণ করা যাবে না ।
এই মতপার্থক্য নিয়েই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে । কে কওমী কে আলিয়া কে মাযহাবী কে আহলে হাদীস এইসব ভিন্নতাকে আপন আপন স্থানে রেখে ইসলামের সূত্রে আবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে । সমালোচনা হবে । তবে শালীন ভাষায় যৌক্তিক ভাবে । দলিল প্রমাণের ভিত্তিতে । আমার মত ভুল হলে সেটা মেনে নেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে । আমার অনুসৃত শাইখের মতই সবসময় শক্তিশালী হবে এমন ভাবনা একটি ভ্রান্তি । কোনো একজনের ভুলকে সকলের উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না ।
কিন্তু আমরা এই অপরাধগুলোতেই বেশী জড়িয়ে পড়ছি । গ্লোবাল জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত বা একে ভালোবাসেন এমন প্রত্যেকের জন্য উচিত এমন কাজ থেকে বিরত থাকা যার কারণে মানুষের মাঝে এই মানহাজ প্রশ্নবিদ্ধ হয় বা এর দাওয়াতী কাজ ব্যাহত হয় ।
বিশেষকরে কোনো আলেমের ব্যাপারে মুখ খোলার ক্ষেত্রে বিপুল সাবধানতা প্রয়োজন । এই ধরণের কাজ থেকে বিরত থেকে দাওয়াতী কাজে মনোনিবেশ করাটাই কাম্য । আমাদের সামান্য ভুল ভাইদের হাজারো মেহনতের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে । আর তাছাড়া মনে রাখতে হবে আমরা উলামায়ে কেরামেরই সন্তান । তাই তাদের ব্যাপারে কোনো অনাকাঙ্খিত কথা যেন আমাদের থেকে প্রকাশ না পায় । তবে যদি কখনো কোনো আলেমের দ্বারা (আল্লাহ না করুন ) ফিতনা সৃষ্টি হয় তবে সেই ফিতনার মুকাবিলার জন্য যোগ্য ও প্রাজ্ঞ আলেমগণই এগিয়ে আসবেন ।
আর যারা না বুঝে মুজাহিদীনদের সমালোচনা করছেন তাদের প্রতি আবেদন থাকবে : আল্লাহর ওয়াস্তে এই কাজ থেকে ফিরে আসুন । হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
من عادى لي وليا فقد آذنته بالحرب
যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সাথে শত্রুতা পোষণ করবে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দিলাম । সহীহুল বুখারী ।
মনে রাখতে হবে , জিহাদপসন্দ তালিবে ইলম বা আম লোক তারা কেউ ফেরেশতা না । তাদেরও ভুল হওয়াটা স্বাভাবিক । তাই বলে তাদের নিয়ে হাসি ঠাট্টা করা তাদেরকে বিভিন্ন ট্যাগ লাগানো এটা নি:সন্দেহে গুনাহে কাবিরাহ । তাই এটা থেকে বেঁচে থাকা উচিত । গঠনমূলক সমালোচনা করে তাদের কল্যাণকামী হওয়া উচিত ।
এরপরও হয়ত কিছু মানুষ থেকেই যাবে যারা বিরোধিতা করবে । প্রোপাগান্ডা ছড়াবে । উস্কানীমূলক কথা বলবে । সমাজে কথার বিষ ছড়াবে । মানুষের সামনে আমাদের ব্যাপারে বিকৃত তথ্য উপস্থাপন করবে । তাগুতের গোলামি আর মুজাহিদীনের বিরোধিতাই যাদের ভাগ্যের লিখন । তাদের ব্যাপারে আমাদের লাগামহীন হওয়া যাবে না । সঠিক তথ্য ও যুক্তি দিয়ে আমরা তাদের মুকাবিলা করব । শরীয়তের গন্ডিতে থেকে আমরা তাদের যথাযথ উত্তর দেব । অহেতুক তর্ক থেকে দূরে থাকবে । আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবেন ইনশাআল্লাহ ।
إنا كفيناك المستهزئين
তাচ্ছিল্যকারীদের জন্য আমিই যথেষ্ট । সূরা হিজর : ৯৫
সর্বোপরি সকলের প্রতি উদাত্ত আহ্বান থাকবে :
১ - উলামায়ে কেরামের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হই । তাদের ভুল নিয়ে আলোচনা করা সকলের দায়িত্ব না । জটিল বিষয়গুলোতে উলামায়ে কেরামের শরণাপন্ন হই ।
২ - জিহাদের জন্য কাজ করতে ইচ্ছুক ভাইদেরকে সহযোগিতা করি । তাদের ভুলগুলো স্নেহের সাথে ধরিয়ে দেই । সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করি । নিজে জিহাদের প্রতি আগ্রহী না থাকলে অন্য ভাইদেরকে বাঁধা না দেই । তাদের বিরুদ্ধে তাগুতের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তি না করি ।
৩ - সকলে নিজ নিজ পরিমন্ডলে জিহাদের পরিবেশ গড়ে তুলি এবং খিলাফতে রাশিদাহ ফিরিয়ে আনার জন্য সকল ভেদাভেদ ভুলে একতাবদ্ধ হই ।
আল্লাহ তাআলা সকলকে তাওফীক দান করুন । আমীন ।
Comment