বিবিধ ফাওয়ায়েদ
আলহামদুলিল্লাহ! আমরা কুরআন-সুন্নাহ থেকে গুপ্ত হত্যার দালিলিক আলোচনা দেখলাম। আমাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু যদিও গুপ্ত হত্যার বৈধতা, তবে গুপ্ত হত্যার এ দলীলগুলো থেকে আরো অনেক বিষয় উৎসারিত হয়। আমরা সেসব উৎসারিত ফাওয়ায়েদের কয়েকটি এখানে উল্লেখ করবো।ফায়েদা-১: জিহাদের মাসলাহাত ও জরুরতে ক্ষেত্রবিশেষে তাওরিয়া করা (কথা ঘুরিয়ে বলা) এমনকি মিথ্যা ও কুফরি কথা বলাও জায়েয। যেমনটা কা’ব বিন আশরাফ ও খালেদ ইবনে সুফিয়ান আলহুজালিকে হত্যা করতে গিয়ে সাহাবায়ে কেরাম করেছেন। অবশ্য নিরেট মিথ্যা বলা বৈধ কি’না তা নিয়ে আইম্মায়ে কেরামের মাঝে মতভেদ আছে। তবে সবচেয়ে ভাল হল নিরেট মিথ্যা না বলে তাওরিয়া করা। অবশ্য যদি তাওরিয়া সম্ভব না হয়, তাহলে মিথ্যা না বলে উপায় নেই।
ফায়েদা-২: স্বল্পসংখ্যক মুসলমান বিপুল সংখ্যক কাফেরের মোকাবেলায় অবতীর্ণ হওয়া বৈধ। আমরা দেখেছি, গুপ্ত হত্যা করতে গিয়ে সাহাবায়ে কেরাম কাফের নেতাদের প্রাণকেন্দ্রে ঢুকে গেছেন, যেখানে বিপুল সংখ্যক কাফের বিদ্যমান ছিল। এমনকি কাফেররা সাহাবায়ে কেরামের পশ্চাদ্ভাবনও করেছে- যদিও আল্লাহর রহমতে তাদের ধরতে পারেনি।
ফায়েদা-৩: একাকি সারিয়্যা ও অভিযান বৈধ। যেমনটা খালেদ ইবনে সুফিয়ানের হত্যার ঘটনায় এবং আবু বাসীর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘটনায় দেখেছি।
ফায়েদা-৪: মাসলাহাত মনে হলে কাফের নেতাদের হত্যা করে মাথা কেটে নিয়ে আসা জায়েয। যেমন সাহাবায়ে কেরাম কা’ব বিন আশরাফ ও হুজালির মাথা নিয়ে এসেছেন।
ফায়েদা-৫: যারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ব্যাপারে কটুক্তি করবে বা তার শানের অবমাননা করবে, তাদের কোন আমান নেই। তাকে আমান দিয়েও হত্যা করা যাবে। যেমন সাহাবায়ে কেরাম কা’ব বিন আশরাফকে আমান দিয়েও হত্যা করেছেন। অবশ্য এ ব্যাপারে আইম্মায়ে কেরামের মাঝে দ্বিমত আছে।
ফায়েদা-৬: যেসব কাফেরের কাছে একবার ইসলামের দাওয়াত পৌঁছে গেছে কিন্তু সে কুফর পরিত্যাগ করেনি, তাদেরকে দ্বিতীয়বার দাওয়াত দেয়া ছাড়াই হত্যা করা যাবে।
ফায়েদা-৭: কাফেরদের থেকে আত্মরক্ষার জন্য পালানো ও আত্মগোপন করা জায়েয। যেমন সাহাবায়ে কেরাম কা’ব বিন আশরাফ, আবু রাফে ও হুজালিকে হত্যা করে পালিয়েছেন এবং আত্মগোপন করেছেন।
ফায়েদা-৮: ঘুমন্ত কাফেরকে হত্যা করা জায়েয- যদি জানা যায় যে, সে কুফরে অটল আছে। যেমন আবু রাফের উপর ঘুমন্ত অবস্থায় হামলা করা হয়েছে।
ফায়েদা-৯: ইমাম না থাকাবস্থায় জিহাদ জায়েয; যেমনটা আবু বাসীর রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘটনায় দেখেছি যে, তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আয়ত্বাধীন না থাকা সত্ত্বেও জিহাদ করেছেন।
ফায়েদা-১০: যদি মুসলমানদের সার্বজনীন এক ইমাম না থাকে এবং তারা বিভিন্ন শাসকের অধীনে থাকেন, তাহলে কাফেরদের সাথে এক শাসকের কৃত চুক্তি অন্য শাসক ও তার অধীনস্তদের উপর বর্তাবে না। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কৃত চুক্তি আবু বাসীর রাদিয়াল্লাহু আনহুর উপর বর্তায়নি। ফলে তিনি মক্কার মুশরিকদের হত্যা ও লুণ্টন করেছেন।
ফায়েদা-১১: দুর্বলতা ও ভীরুতা মুমিনের শান নয়, বরং বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতা কাম্য। উল্লিখিত চারটি ঘটনাতেই আমরা সাহাবায়ে কেরামের অকল্পনীয় বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার পরিচয় পেয়েছি।
ফায়েদা-১২: যুদ্ধের মূল উপাদান হল কৌশল। জনবল ও অস্ত্রবলের *সাথে সাথে কৌশলের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রত্যেকটি ঘটনাতেই দেখেছি যে, কৌশলের কারণে সাহাবায়ে কেরাম কিভাবে সফলতা পেয়েছেন, যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে সম্ভবপর মনে হচ্ছিল না।
ফায়েদা-১৩: কাফেরদের অস্ত্র দিয়ে কাফেরদের হত্যা করা বৈধ। যেমন আবু বাসীর রাদিয়াল্লাহু আনহু মুশরিকটির নিজের অস্ত্র দিয়েই তাকে হত্যা করেছেন।
এছাড়াও আরো অনেক ফাওয়ায়েদ আছে। আপাত দৃষ্টিতে এ ক’টিই মনে পড়ছে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দ্বীনের জন্য ফিদা হওয়ার তাওফিক দান করুন। কৌশল, বুদ্ধিমত্তা ও সাহসিকতার সাথে কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমীন!
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وعلى آله وصحبه وسلم
Comment