আইম্মায়ে আরবাআর জিহাদ প্রসঙ্গ:
হযরতওয়ালা বহু জোর গলায় দাবি করেছেন যে, আইম্মায়ে আরবাআ কেউ জিহাদ করেননি। তরবারি ধরেননি। ধরতেও বলেননি। এর দ্বারা তিনি জিহাদ হারাম হওয়ার পক্ষে দলীল দিয়েছেন।
ইতিহাস সম্পর্কে সামান্য ধারণা রাখেন এমন কারো কাছেই অস্পষ্ট নয় যে, হযরতওয়ালা এখানে কত মাত্রার অজ্ঞতার প্রমাণ দিয়েছেন। যদি ইতিহাসের কিতাবাদির দিকে একটু নজর দেন, তাহলে তিনি নিজেও লজ্জিত হবেন। আমরা ইনশাআল্লাহ আইম্মায়ে আরবাআর জিহাদ সম্পর্কে কিঞ্চিত আলোচনা করবো।
এর আগে প্রথমেই বলে রাখি- যেমনটা আগেও বলেছি:
- আইম্মায়ে আরবাআর যামানায় জিহাদ ফরযে কিফায়া ছিল। তাই তখন কেউ জিহাগে না গেলে আপত্তির কিছু নেই। এর দ্বারা ফরযে আইনের সময়েও জিহাদে না যাওয়ার কিংবা জিহাদ হারাম সাব্যস্ত হয় না।
- দ্বিতীয়ত তখনকার সময়ে যত জিহাদ হয়েছে আইম্মায়ে আরবাআ সেগুলো সমর্থন করেছেন। হাদিস ও ফিকহ সংকলন করে জিহাদের মাসআলা মুজাহিদদের সামনে তুলে ধরেছেন। অধিকন্তু আইম্মায়ে আরবাআর শাগরেদ, অনুসারি ও ভক্তবৃন্দদের দ্বারাই তখনকার জিহাদগুলো হয়েছিল। এরপরও তাদেরকে জিহাদ বিরোধী দাঁড় করানো তাদের নামে অপবাদ ছাড়া কিছুই নয়।
***
ইমাম আবু হানিফা রহ. এবং জিহাদ:
আশ্চর্যের বিষয় যে, হযরতওয়ালা আবু হানিফা রহ. এর মুকাল্লিদ হয়েও নিজ ইমাম সম্পর্কে এতটা অজ্ঞ। অথচ সকলেরই জানা যে, জালেম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কারণেই আবু হানিফা রহ. নির্যাতিত হয়েছেন এবং অবশেষে শহীদি মৃত্যু লাভ করেছেন। উমাইয়া-আব্বাসী উভয় আমলেই জালেম শাসকের বিরুদ্ধে আবু হানিফা রহ. বিদ্রোহ করেছিলেন। এ কারণে উভয় যামানাতেই তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।
উমাইয়াদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
জুলুম-অত্যাচার এবং আহলে বাইতের প্রতি নির্যাতনের কারণে আবু হানিফা রহ. উমাইয়াদের প্রতি নারাজ হয়ে পড়েছিলেন। এ শাসন পরিবর্তন হয়ে ইনসাফের শাসন প্রতিষ্ঠা হওয়ার তিনি স্বপ্ন দেখতেন। এ সময়ে ১২১ হিজরিতে আহলে বাইতের হযরত হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর নাতি যাইনুল আবিদিন হযরত যায়দ বিন আলি রহ. গোপনে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আহ্বান জানান। আস্তে আস্তে তার দল ভারি হতে থাকে। বিভিন্ন দিক থেকে উলামা-মাশায়েখ ও সাধারণ মুসলমান গোপনে তার হাতে বাইয়াত হতে থাকে।
ইবনে কাসীর রহ. (৭৭৪ হি.) বলেন,
استمر يبايع الناس في الباطن في الكوفة، على كتاب الله وسنة رسوله حتى استفحل أمره بها في الباطن. اهـ
“যায়দ বিন আলী রহ. গোপনে কূফায় কুরআন সুন্নাহর উপর লোকদের থেকে বাইয়াত নিতে থাকেন। এভাবে গোপনে গোপনে সেখানে তার দল ভারি হতে থাকে।”- আলবিদায়া ওয়ান নিহায়া ৯/৩৫৮আবু হানিফা রহ. গোপনে যায়দ বিন আলি রহ.কে সমর্থন করেন। তার পক্ষে যোগ দেয়ার জন্য লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করেন। নিজে অসুস্থ থাকায় যুদ্ধে শরীক হতে পারেননি। তবে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেন। অবশ্য শেষ পর্যন্ত যায়দ বিন আলি রহ. কামিয়াব হতে পারেননি। বিপদ মূহুর্তে কূফাবাসী তাকে পরিত্যাগ করে। বর্ণিত আছে, আবু হানিফা রহ. এমনটাই আশঙ্কা করেছিলেন। তথাপি তিনি গোপনে তার পক্ষাবলম্বন করেন।
ইমাম জাসসাস রহ. (৩৭০ হি.) বলেন,
وكان مذهبه مشهورا في قتال الظلمة وأئمة الجور، ولذلك قال الأوزاعي: احتملنا أبا حنيفة على كل شيء حتى جاءنا بالسيف يعني قتال الظلمة فلم نحتمله، وكان من قوله: وجوب الأمر بالمعروف والنهي عن المنكر فرض بالقول، فإن لم يؤتمر له فبالسيف، على ما روي عن النبي صلى الله عليه وسلم ... وقضيته في أمر زيد بن علي مشهورة وفي حمله المال إليه وفتياه الناس سرا في وجوب نصرته والقتال معه وكذلك أمره مع محمد وإبراهيم ابني عبد الله بن حسن. اهـ
“জালেম ও অত্যাচারি শাসকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে আবু হানিফা রহ. এর অভিমত প্রসিদ্ধ। এ কারণেই আওযায়ী রহ. বলেন, ‘আবু হানিফাকে আমরা সকল বিষয়ে বরদাশত করেছি। কিন্তু যখন তিনি তরবারি তথা জালেমদের বিরুদ্ধে কিতালের পর্ব নিয়ে আসলেন, তখন আর বরদাশত করতে পারিনি’।
আবু হানিফা রহ. এর অভিমত ছিল, আমর বিল মা’রূফ ও নাহি আনিল মুনকার (প্রথমে) যবান দ্বারা ফরয, তাতে কাজ না হলে তরবারি দ্বারা; যেমনটা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে। ...
যায়দ বিন আলী রহ. এর সাথে তার ঘটনা প্রসিদ্ধ। তিনি গোপনে তার কাছে আর্থিক সাহায্য প্রেরণ করেছিলেন এবং ফতোয়া দিয়েছিলেন যে, তাকে নুসরত করা এবং তার পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করা আবশ্যক। তদ্রূপ, আব্দুল্লাহ বিন হাসান তনয় মুহাম্মাদ ও ইব্রাহিমের সাথেও তার ঘটনা প্রসিদ্ধ।”- আহাকমুল কুরআন ১/৮৭
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ রহ. ও ইব্রাহিম বিন আব্দুল্লাহ রহ.- এর আলোচনা ইনশাআল্লাহ আব্বাসীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আলোচনায় আসবে।
১২১ হিজরির আলোচনায় ইবনুল ইমাদ রহ. (১০৮৯ হি.) বলেন,
وفيها قتل الإمام الشهيد زيد بن عليّ بن الحسين، رضي الله عنهم، بالكوفة، وكان قد بايعه خلق كثير، وحارب متولي العراق يومئذ لهشام بن عبد الملك، يوسف بن عمر الثقفي ... وكان ممن بايعه منصور بن المعتمر، ومحمّد بن عبد الرّحمن بن أبي ليلى، وهلال بن خبّاب بن الأرتّ، قاضي المدائن، وابن شبرمة، ومسعر بن كدام، وغيرهم، وأرسل إليه أبو حنيفة بثلاثين ألف درهم، وحثّ النّاس على نصره، وكان مريضا. اهـ
“এ বৎসরে শহীদ ইমাম যায়দ বিন আলী বিন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুম *কূফায় শহীদ হন। অসংখ্য লোক তার হাতে বাইয়াত দিয়েছিল। তিনি তখনকার খলিফা হিশাম বিন আব্দুল মালিকের পক্ষ থেকে নির্ধারিত ইরাকের গভর্নর ইউসুফ বিন উমার আসসাকাফির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। ... তার হাতে যারা বাইয়াত দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে ছিলেন: মানসূর ইবনুল মু’তামির, মুহাম্মাদ বিন আব্দুর রহমান বিন আবি লাইলা, মাদায়িনের কাযি হিলাল ইবনু খাব্বাব ইবনুল আরাত্ত, ইবনু শুবরুমা, মিসআর বিন কিদাম এবং আরো অনেকে। আবু হানিফা রহ. তার কাছে ত্রিশ হাজার দিরহাম (আর্থিক সাহায্য) পাঠান এবং তাকে নুসরত করার জন্য লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করেন। তখন তিনি অসুস্থ ছিলেন (তাই যুদ্ধে শরীক হতে পারেননি)।”- শাযারাতুয যাহাব ২/২৩০তবে আল্লাহ তাআলার ফায়াসালা ভিন্ন ছিল। যায়দ বিন আলী রহ. পরাজিত ও নিহত হন। তার পর আহলে বাইতের আরো কয়েকজন উমাইয়াদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। তবে সবাই পরাজিত হন। আহলে বাইতের পক্ষাবলম্বন করায় আবু হানিফা রহ.কে নির্যাতনের শিকার হতে হয়। জেলে বন্দী হন। অমানবিক প্রহারের শিকার হন। অবশেষে নির্যাতনের মুখে তিনি কূফা ছেড়ে মক্কায় চলে যান। সেখানকার মুহাদ্দিসিন ও ফুকাহাদের থেকে ইলম তলব ও গবেষণায় মগ্ন হন। অবশেষে যখন আব্বাসীদের হাতে উমাইয়াদের পতন হয় এবং পরিস্থিতি শান্ত হয়, তখন আবার কূফায় ফিরে আসেন।
আব্বাসীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
আব্বাসীদের হাতে উমাইয়াদের পতনের পর যখন পরিস্থিতি শান্ত হয়, তখন আবু হানিফা রহ. মক্কা থেকে আবার কূফায় ফিরে আসেন। আব্বাসীরা ক্ষমতা লাভের পূর্বে আহলে বাইতের পক্ষে ছিল। অধিকন্তু তারা ছিল রাসূল বংশের লোক। তিনি ধারণা করেছিলেন, আব্বাসীরা ইনসাফ করবে। আহলে বাইতের প্রতি সুবিচার করবে। জুলুম-অত্যাচারমুক্ত শাসন করবে। কিন্তু ক্ষমতা লাভের পর আব্বাসীরা জুলুম শুরু করে। আহলে বাইতের লোকদের ধরে ধরে হত্যা করতে থাকে। অমানবিক পন্থায় নির্যাতন করতে থাকে। সন্দেহজনকভাবে মুসলমানদের হত্যা করতে থাকে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ অন্যায়ভাবে ব্যয় করতে থাকে। আবু হানিফা রহ. এর ধারণা পাল্টে যায়। পরিস্থিতি আবার অশান্ত হয়ে পড়ে। আহলে বাইতের পক্ষ থেকে আব্বাসীদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের মেঘ দানা বাঁধতে থাকে।
একসময় আহলে বাইতের দুই ভাই মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন হাসান রহ. (নফসে যাকিয়্যা) এবং ইব্রাহিম বিন আব্দুল্লাহ বিন হাসান রহ. গোপনে আব্বাসী খলিফা আবু জা’ফর মানসূরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের আহ্বান জানান। মুহাম্মাদ রহ. মদীনায় এবং ইব্রাহিম রহ. বসরায় লোকদের থেকে বাইয়াত নেন। প্রথমে নফসে যাকিয়্যা রহ. মদীনায় বিদ্রোহ করেন। ইমাম মালেক রহ. তার হাতে বাইয়াত হওয়ার ফতোয়া দেন (যার আলোচনা সামনে আসবে ইনশাআল্লাহ)। তবে তিনি কামিয়াব হতে পারেননি। ১৪৫ হিজরিতে তিনি পরাজিত ও শহীদ হন।
নফসে যাকিয়্যা রহ. শহীদ হওয়ার পর তার ভাই ইব্রাহিম রহ. বসরায় মানসূরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের বাইয়াত নেন। গোপনে গোপনে তার দল যথেষ্ট ভারি হতে থাকে। সৈন্য সংখ্যা এক লাখে পৌঁছে যায়। আবু হানিফা রহ. কূফায় ছিলেন। তিনি ইব্রাহিম রহ.কে সমর্থন করেন। তার পক্ষে যোগ দেয়ার জন্য গোপনে লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করেন। অবশ্য শেষে তিনিও কামিয়াব হতে পারেননি। পরাজিত ও শহীদ হন। খলিফা মানসূর বিভিন্নভাবে আন্দাজ করতে পারে যে, আবু হানিফা তার বিরোধী। ফলে তার উপর নির্যাতনের খড়গ নেমে। অবশেষে নির্যাতনের মুখেই তিনি শহীদ হন।
ইবনুল ইমাদ রহ. (১০৮৯ হি.) বলেন,
وكان خرج مع إبراهيم كثير من القرّاء، والعلماء، منهم: هشيم، وأبو خالد الأحمر [3] وعيسى بن يونس، وعبّاد بن العوّام، ويزيد بن هارون، وأبو حنيفة، وكان يجاهر في أمره، ويحثّ النّاس على الخروج معه، كما كان مالك يحثّ النّاس على الخروج مع أخيه محمّد.
وقال أبو إسحاق الفزاريّ لأبي حنيفة: ما اتّقيت الله حيث حثثت أخي على الخروج مع إبراهيم فقتل، فقال: إنه كما لو قتل يوم بدر. اهـ
“ইব্রাহিম রহ. এর পক্ষ হয়ে অনেক মাশায়েখ ও আলেম-উলামা বিদ্রোহ করেছিলেন। যেমন: হুশাইম, আবু খালেদ আলআহমার, ঈসা বিন ইউনুস, আব্বাদ ইবুল আওয়াম, ইয়াজিদ বিন হারুন ও আবু হানিফা রহ.। আবু হানিফা রহ. প্রকাশ্যেই তার পক্ষ নিয়েছিলেন। তার সাথে মিলে বিদ্রোহ করার জন্য লোকদের উদ্বুদ্ধ করতেন, যেমন ইমাম মালেক রহ. তার ভাই মুহাম্মাদের সাথে মিলে বিদ্রোহের জন্য লোকদের উদ্বুদ্ধ করতেন। وقال أبو إسحاق الفزاريّ لأبي حنيفة: ما اتّقيت الله حيث حثثت أخي على الخروج مع إبراهيم فقتل، فقال: إنه كما لو قتل يوم بدر. اهـ
আবু ইসহাক ফাযারি রহ. আপত্তি করে আবু হানিফা রহ.কে বলেছিলো, ‘আপনি তো আল্লাহকে ভয় করেননি। আপনি আমার ভাইকে ইব্রাহিমের পক্ষ হয়ে বিদ্রোহে করতে উৎসাহ দিয়েছেন ফলে সে নিহত হয়েছে।’ তিনি উত্তর দেন, ‘তোমার ভাইয়ের শাহাদাত বদরের দিনে শহীদ হওয়ার মতোই মর্যাদাপূর্ণ’।”- শাজারাতুয যাহাব ২/২০৩
খতীব বাগদাদি রহ. (৪৬৩ হি.) আবু ইসহাক ফাযারি রহ. থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন,
قتل أخي مع إبراهيم الفاطمي بالبصرة، فركبت لأنظر في تركته، فلقيت أبا حنيفة، فقال لي: من أين أقبلت؟ وأين أردت؟ فأخبرته أني أقبلت من المصيصة، وأردت أخا لي قتل مع إبراهيم، فقال لو أنك قتلت مع أخيك كان خيرا لك من المكان الذي جئت منه، قلت: فما منعك أنت من ذاك؟ قال: لولا ودائع كانت عندي وأشياء للناس، ما استأنيت في ذلك. اهـ
“ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু আনহার বংশধর ইব্রাহিমের সাথে বসরায় আমার ভাই নিহত হয়। আমি তার রেখে যাওয়া সম্পদ দেখার জন্য সওয়ার হয়ে রওয়ানা দিলাম। পথিমধ্যে আবু হানিফার সাথে দেখা হল। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, কোথা থেকে এসেছে, আর কোথায় যাচ্ছে? আমি জানালাম যে, মিসসিসাহ্ থেকে এসেছি। আমার এক ভাই যে ইব্রাহিমের সাথে নিহত হয়েছে, তাকে দেখতে যাচ্ছি। তিনি বললেন, তুমি যেখান থেকে এসেছো, তার চেয়ে যদি তুমি তোমার ভাইয়ের সাথে নিহত হতে তাহলে সেটাই তোমার জন্য অধিক ভাল ছিল। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তাহলে এ থেকে আপনাকে কিসে বাঁধা দিল? তিনি উত্তর দিলেন, যদি আমার কাছে লোকজনের রাখা অনেকগুলো আমানত ও গচ্ছিত সম্পদ না থাকতো, তাহলে আমি এতে কোন শিথিলতা করতাম না।”- তারিখে বাগদাদ ১৫/৫১৬-৫১৭অর্থাৎ আবু হানিফা রহ. এর কাছে অনেকের রাখা অনেক আমানতের মাল ছিল। তিনি ভয় করছিলেন যে, যদি তিনি যুদ্ধে নিহত হয়ে যান, তাহলে এ আমানতের মালগুলো লোকজনের হাতে পৌঁছাতে পারবেন না। এ জন্য তিনি সরাসরি যুদ্ধে যোগ দেননি।
ইমাম যাহাবি রহ. (৭৪৮ হি.) বলেন,
وقد روي أن المنصور سقاه السم فمات شهيداً رحمه الله؛ سمّه لقيامه مع إبراهيم. اهـ
“বর্ণিত আছে, ইব্রাহিম রহ. এর পক্ষালম্বনের কারণেই খলিফা মানসূর আবু হানিফা রহ.কে বিষ প্রয়োগে শহীদ করে।”- আলইবার ফি খাবারি মান গাবার ১/১৬৪প্রিয় পাঠক! এই হলেন আবু হানিফা রহ.। জালেম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে যিনি শহীদ হয়েছেন। আর আমাদের হযরতওয়ালার বলছেন, আবু হানিফা রহ. না’কি কোনো জিহাদ করেননি। কোনো তরবারি ধরেননি। ধরতেও বলেননি। এ যেন দিবালোকে সূর্য অস্বীকার করারই নামান্তর।
লক্ষ্যণীয়, উমাইয়া-আব্বাসী উভয় খেলাফতই কুরআন সুন্নাহর উপর প্রতিষ্ঠিত ছিল। তবে ক্ষমতার দখল ও টিকানোর স্বার্থে তারা অনেকের উপর জুলুম করেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ অনেক সময় অন্যায় ব্যবহার করেছে। কিন্তু শাসন সম্পূর্ণই ইসলামী ছিল। বরং সে যুগটাই তো ছিল ইসলামের স্বর্ণ যুগ। হাদিস ও ফিকহ সংকলনের কাজ তো সে যামানাতেই হয়েছে। সালাফে সালেহিন আইম্মায়ে কেরাম তো সে যুগেই জন্মগ্রহণ করেছেন। এতদসত্বেও শুধু ফিসক-জুলুমের কারণে আবু হানিফা রহ. তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন। তাহলে আজ যদি তিনি এ তাগুতি শাসন দেখতেন- যারা ইসলামকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখান করে কুফর গ্রহণ করেছে এবং ইসলামকে দুনিয়া থেকে মিটিয়ে দেয়ার জন্য তাদের সর্ব-সামর্থ্য ব্যয় করছে- যদি আবু হানিফা রহ. এ তাগুতি শাসন দেখতেন, তাহলে তিনি কি করতেন? উত্তরের আর প্রয়োজন নেই। কিন্তু উম্মাহর বীর সন্তানরা যখন সালাফে সালেহিনের পথ ধরে জীবন বাজি রেখে আল্লাহর শরীয়তের জন্য তাগুতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছেন, তখন আমাদের হযরতওয়ালারা তাদের শানে খাহেশপূজারি, জযবাতি ইত্যাদি ঘৃণ্য বিশেষণ ব্যবহার করছেন। হে আল্লাহ! তোমার কাছেই সকল অভিযোগ। তুমিই তোমার দ্বীনের হিফাজতকারী।
Comment