بسم الله الرحمن الرحيم
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وصحبه أجمعين، أما بعد
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله وصحبه أجمعين، أما بعد
জিহাদ দমানোর জন্য যেসকল ষড়যন্ত্র হয়েছে, তার মধ্যে বড় একটি ষড়যন্ত্র: ইলমকে জিহাদের বিপরীতে দাঁড় করানো। যার ফলে আমাদের সমাজের উলামা-তুলাবাদের মাঝে ব্যাপকভাবে এই ভ্রান্ত্র ধারণা গেড়ে বসেছে যে, ইলম আর জিহাদ একত্র হতে পারে না। যারা ইলম নিয়ে থাকবে, তারা জিহাদ করবে না। জিহাদ করে ইলম শিখা যায় না। পাশাপাশি এ ধারণাও আছে যে, ইলম হল সর্বশ্রেষ্ঠ। যারা ইলম নিয়ে ব্যস্ত তারা সর্বশ্রেষ্ঠ কাজে লিপ্ত। ইলম ছেড়ে জিহাদে যাওয়ার অর্থ আফজাল ও শ্রেষ্ঠ ইবাদত ছেড়ে নিম্নমানের কাজে লিপ্ত হওয়া।
এই ভ্রান্ত আকীদার পক্ষে কুরআন সুন্নাহর কোনো দলীল তো অবশ্যই তারা দিতে সক্ষম নয়, তবে যে কাজটি তারা করেছে, তা হলো- জেনে না জেনে- আইম্মায়ে কেরামের সীরাতকে বিকৃত ও অপব্যাখ্যা করেছে। আপনি যদি জিহাদবিরোধী কোনো আলেমের সাথে কথা বলেন, তাহলে তিনি অকপটেই বলে দেবেন যে, আপনি কি বেশি বুঝেন? আবু হানিফা, শাফিয়ি, মালেক, আহমাদ, বুখারি, মুসলিম- এরা কি আপনার চেয়ে কম বুঝে? এরা তো কেউ ইলম ছেড়ে জিহাদে যায়নি?
মোটকথা তাদের বিশ্বাস, আমাদের পূর্বসূরি সালাফে সালেহীন আইম্মায়ে কেরাম জিহাদ করেননি। শুধু তাই নয়, বরং তাদেরকে জিহাদ বিরোধী বলে চালিয়ে দিতেও অনেকের দ্বিধা হয় না। গত রমযানে ঢালকানগরের পীর আব্দুল মতীন সাহেবের একটি বিভ্রান্তিকর বক্তব্য হয়তো অনেকে শুনেছেনও।
সালাফে সালেহীনকে জিহাদের বিপরীতে দাঁড় করানোর পেছনে বড় কয়েকটি কারণ হল:
ক. অজ্ঞতা।
আপনি দেখবেন যে, যারা সালাফে সালেহীনকে জিহাদের বিপরীতে দাঁড় করায়, তারা আসলে সালাফের জীবন চরিত সম্পর্কে অজ্ঞ। যেমন, ঢালাকানগরের পীর সাহেবের বক্তব্যে হয়তো আপনারা লক্ষ করেছেন যে, অজ্ঞতার কারণে তিনি আইম্মায়ে আরবাআ সকলকেই জিহাদের বিপরীতে দাঁড় করিয়েছেন এবং তাদেরকে জিহাদ নাজায়েয হওয়ার পক্ষে দলীল বানিয়েছেন। যদি তারা মন্তব্য করার আগে একটু কষ্ট করে সালাফের জীবনী পড়ে দেখতো, তাহলে হয়তো এমন আজগুবি কথা মুখে আসতো না।
খ. একপেশে ভাবনা।
সালাফকে জিহাদ বিরোধী ধারণা করার এটাও একটা বড় কারণ। আমাদের বর্তমান উলামা-তুলাবারা ইলমকেই সবচেয়ে বড় করে দেখে। সালাফের কারো জীবনী যদি তারা পড়েও, তাহলেও সালাফের ইলমী দিকটিই শুধু তাদের নজরে পড়ে। তাদের সিয়াসী ও জিহাদি জীবন, আমর বিল মা’রূফ-নাহি আনিল মুনকার, হকের পথে জীবন দেয়া: এগুলো তাদের নজরে তেমন পড়ে না। এগুলো ভাসা ভাসা নজরে দেখে চলে যায়। তারা শুধু দেখে যে, তিনি হাদিসের কি কি খিদমাত করেছেন, ফিকহে তার কি অবদান ইত্যাদি। এই একপেশে ভাবনা প্রবল হওয়ার কারণে অন্য দিকগুলো তাদের নজর কাড়ে না।
গ. উলামাদের জীবনীতে ইলমী দিকের প্রাবল্য।
উলামায়ে কেরামের জীবনের মৌলিক দিকটি হচ্ছে ইলম। কেউ যখন তাদের জীবনী অধ্যয়ন করতে যাবে, তাদের ইলমী দিকটিই স্বাভাবিক বেশি নজরে আসবে। অন্যান্য দিকগুলো তাদের মৌলিক ব্যস্ততা না হওযায় সেগুলোর আলোচনা আসে প্রসঙ্গত। এ কারণে ভাসা ভাসা দৃষ্টিতে যারা সালাফের জীবনী অধ্যয়ন করে তাদের কাছে ইলমী দিকটিই প্রবল হয়ে আসে। অন্যান্য দিকগুলো প্রচ্ছন্ন হয়ে থাকে।
ঘ. পাঠকদের জিহাদ বিমুখীতা।
জিহাদ বিরোধীরা যদি সালাফের জীবনী পড়েও, তাহলেও নিজেদের অন্তরে সুপ্ত জিহাদ বিমুখীতার কারণে সালাফের জিহাদি জীবনটা তাদের দৃষ্টি কাড়ে না। নজরে পড়ে গেলে বা কেউ দেখিয়ে দিলে নিজেদের জিহাদ বিমুখীতার কারণে সালাফকেও তারা নিজেদের মতো জিহাদবিমুখী ধারণা করে এবং সালাফের জিহাদি দিকগুলোকে তাবিল, তাহরিফ ও অপব্যাখ্যা করে নিজেদের অনুকূল বানিয়ে নেয়।
এ সমস্ত কারণসহ আরো বিভিন্ন কারণে সালাফে সালিহীনের জিহাদি দিকগুলো প্রচ্ছন্ন থেকে যায় এবং অপব্যাখ্যার শিকার হয়। জিহাদবিরোধীরা গর্বভরে বলে বেড়ায়, আমাদের সালাফ জিহাদ করেননি, তাহলে আমাদের না করাতে কি দোষ? শুধু তাই নয়, বরং সালাফকে জিহাদ বিরোধী দাঁড় করিয়ে জিহাদ নাজায়েয-হারাম ফতোয়া দিয়ে বেড়ায়।
ঢালকানগরের পীর সাহেবের অজ্ঞতাপ্রসূত বিভ্রান্তিমূলক বয়ানের প্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলার তাওফিকে কিছু দিন আগে আইম্মায়ে আরবাআর জিহাদ প্রসঙ্গে কিছু আলোচনা করেছি। আইম্মায়ে আরবাআর জিহাদি জীবনের মতো আরো কতক আইম্মার জিহাদি জীবনটাও যদি পাঠকদের সামনে তুলে ধরা যায়, তাহলে একটা বড় খিদমাত হয়। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা একটা বিভ্রান্তির কিছুটা হলেও অপনোদন হয়। বিশেষত আমাদের নিজেদের ভাইদের উপকার হবে এবং দাওয়াতের কাজে সহায়ক হবে। এ ধারণা থেকেই এ ব্যাপারে কলম ধরা। আল্লাহ চাহেন তো আমাদের আইম্মায়ে কেরাম যে ইলমের পাশাপাশি জিহাদের ময়দানেও বিচরণ করেছেন তার কিঞ্চিত তুলে ধরার চেষ্টা করবো। আমরা তো তাদের থেকেই জিহাদ শিখেছি। তাদেরকে জিহাদবিরোধী দাঁড় করানো অজ্ঞতা, অপবাদ ও স্বার্থপরতা ছাড়া কিছুই নয়। সকল ভাইয়ের কাছে দোয়ার দরখাস্ত। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ।
Comment