উলামায়ে সূ’দের থেকে সাবধান!!!
সকল প্রশংসা ঐ সত্ত্বার, যিনি মুজাহিদিনে কেরামের রাহবার হয়ে আলমে জিহাদের জিম্মাদারি গ্রহণ করেছেন। দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক; ঐ নবীর উপর, যিনি তাঁর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠত করেছেন সাইফের মাধ্যমে ও তাঁর পরিবার পরিজন এবং সাহাবায়ে কেরামের উপর, যারা এভাবেই তাঁর দ্বীনকে আগে বাড়িয়েছেন। অতঃপর শান্তি বর্ষিত হোক, ঐ সমস্ত উলামায়ে হকের উপর, যারা নিজেদের খুতবা ও আলোচনার মাধ্যমে সঠিক দ্বীন উম্মাহর সামনে পেশ করছেন।
আরো প্রশংসা করছি- উম্মাহর সেসব নওজোয়ানদের, যারা খিলাফাহ আলা মিনহাজিন নুবুওয়্যাহ পুন: প্রতিষ্ঠার লক্ষে কালো পতাকার তলে সমবেত হয়েছেন। আল্লাহর পথে জীবন বিলাবার জন্য তারা মারেকার পর মারেকা চষে বেড়াচ্ছেন। জিহাদী তৎপরতার মাধ্যমে ক্রুসেডারদের ঘুম হারাম করে দিয়েছেন।
আলহামদু লিল্লাহ, আজ উম্মাহর প্রতিটি কদম বিজয়ের দিকে বাড়ছে। আকাশে বাতাসে শুধু বিজয়ের সংবাদ ভেসে বেড়াচ্ছে। বিশ্বের সকল পরাশক্তি তাদের হাতে নাকানী চুবানীর শিকার হচ্ছে। এতসব বিজয়ের ধারাবাহিকতায় উম্মাহর প্রতিটি সদস্য খুশি হবেন, মুজাহিদদের স্তুতি গাইবেন এটাই ছিল স্বাভাবিক, কিন্তু ধিক উলামায়ে সূ’দের; তারা এখনো আল্লাহর বাহিনীর উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। তারা এখনো ভরসা করে বসে আছে তাগুতি শক্তির উপর। তাই তারা নিজেদের পার্থিব জীবন হারিয়ে ফেলার ভয়ে এখনো আশ্রয় নিচ্ছে তাগুতের পতাকা তলে। আর তারা তাগুতের হয়ে বিরোধিতা করে যাচ্ছে উম্মাহর সিংহতুল্য সন্তানদের। আজ পৃথিবীব্যাপী মুজাহিদগণকে দুইটি অপশক্তির মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
এক. ক্রুসেডার ও তাদের মিত্রশক্তি মুরতাদ শাসকগোষ্ঠি।
দুই. তাগুতের প্লাটফর্মে আশ্রয় গ্রহণকারী উলামায়ে সূ’।
তাই উম্মাহর সিংহরা যেভাবে জিহাদ বিস সাইফের মাধ্যমে প্রথম শক্তির মোকাবেলা করে যাচ্ছেন, তেমনি কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাতে রাসূলের মাধ্যমে ২য় শক্তির মোকাবেলা করছেন। (শুরুতে ও শেষে কেবল আল্লাহরই প্রশংসা)
উলামায়ে সূ’ কুরআন ও হাদিসে বহুল আলোচিত একটি বিষয়। কুরআনুল কারীমে তাদের ব্যাপারে লজ্জাজনক ও লাঞ্ছনাকর আলোচনা করা হয়েছে। হাদিসে পাকে তাদেরকে ‘শেরারুল খালক’ তথা সৃষ্টির নিকৃষ্ট জীব আখ্যা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সর্বদা তাদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। এসব আয়াত ও হাদিস থেকে যে বিষয়টি বুঝে আসে, তা হল: সব সময় এ উম্মতের মাঝে উলামায়ে সূ’দের একটি জামাত থাকবে। তারা এ উম্মাহকে গোমরাহ করার ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করে যাবে। এর বিপরীতে উম্মাহর হক্বপন্থি ওলামাদের দায়িত্ব হবে, এ জাতীয় ওলামাদের মুখোশ জাতির সামনে পেশ করা। আর জাতির দায়িত্ব হবে, এসব আলেমদেরকে চিনে, তাদের নোংরা থাবা থেকে নিজেদের ঈমান আমাল হিফাজত করা। সেই ধারাবাহিকতায় আমাদের আজকের আয়োজন।
প্রথমেই আমাদের চিনে নিতে হবে উলামায়ে সূ’দের সংজ্ঞা কি?
“উলামায়ে সূ’” আরবী শব্দ, বাংলায় এর অর্থ হল, মন্দ আলেম। তবে ওলামাদের মাঝে মন্দ কিছু দেখলেই, তাদেরকে উলামায়ে সূ’ বলে আখ্যা দেওয়া যাবে না। কারণ ওলামাগণ তো মানুষই হয়ে থাকেন। তাই তাদের থেকে কিছু অপরাধ হয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তাই শুধু শাব্দিক অর্থ দিয়ে কাউকে উলামায়ে সূ’ আখ্যা দেয়া যাবে না। বরং যেহেতু এটা ইসলামের একটি পরিভাষা, তাই ইসলামের ভাষ্য গ্রন্থ থেকেই এর অর্থ নিতে হবে। প্রথমে আমরা দেখি কুরআনুল কারীম এ ব্যাপারে কি বলে। মহান আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِي آتَيْنَاهُ آيَاتِنَا فَانسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِينَ ﴿الأعراف: ١٧٥﴾ وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلَٰكِنَّهُ أَخْلَدَ إِلَى الْأَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ الْكَلْبِ إِن تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَث ذَّٰلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ ﴿الأعراف: ١٧٦﴾ سَاءَ مَثَلًا الْقَوْمُ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَأَنفُسَهُمْ كَانُوا يَظْلِمُونَ ﴿الأعراف: ١٧٧﴾ مَن يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِي وَمَن يُضْلِلْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ ﴿الأعراف: ١٧٨﴾ وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا أُولَٰئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ أُولَٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ ﴿الأعراف: ١٧٩﴾ অনুবাদ: আর আপনি তাদেরকে শুনিয়ে দিন, সে লোকের অবস্থা, যাকে আমি নিজের নিদর্শনসমূহ দান করেছিলাম, অথচ সে তা পরিহার করে বেরিয়ে গেছে। আর তার পেছনে লেগেছে শয়তান, ফলে সে পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়েছে। অবশ্য আমি ইচ্ছা করলে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিতাম সে সকল নিদর্শনসমূহের দৌলতে। কিন্তু সে যে অধঃপতিত এবং নিজের রিপুর অনুগামী হয়ে রইল। সূতরাং তার অবস্থা হল কুকুরের মত; যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাঁপাবে আর যদি ছেড়ে দাও তবুও হাঁপাবে। এ হল সেসব লোকের উদাহরণ; যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার নিদর্শনসমূহকে। অতএব, আপনি বিবৃত করুন এসব কাহিনী, যাতে তারা চিন্তা করে। তাদের উদাহরণ অতি নিকৃষ্ট, যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার আয়াত সমূহকে এবং তারা নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছে। যাকে আল্লাহ পথ দেখাবেন, সেই পথপ্রাপ্ত হবে। আর যাকে তিনি পথ ভ্রষ্ট করবেন, সে হবে ক্ষতিগ্রস্ত। আর আমি সৃষ্টি করেছি দোযখের জন্য বহু জ্বিন ও মানুষ। তাদের অন্তর রয়েছে, তার দ্বারা বিবেচনা করে না, তাদের চোখ রয়েছে, তার দ্বারা দেখে না, আর তাদের কান রয়েছে, তার দ্বারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মত; বরং তাদের চেয়েও নিকৃষ্টতর। তারাই হল গাফেল, শৈথিল্যপরায়ণ। (সূরা আ‘রাফ: ১৭৫-১৭৯)
আসূন এবার দেখি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি বলেছেন। হাদীস শরীফে রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
“তিন শ্রেণীর মানুষকে সর্বপ্রথম জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এর মাঝে প্রথম শ্রেণীটা হচ্ছে-একদল জ্ঞাণী আলেম, যারা দুনিয়াবী স্বার্থে ইলম গোপন করতো এবং জালেম শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলতো না।”(সংক্ষেপিত)-জামে আত-তিরমিজি ও ইবনে হিব্বান।
হযরত কা’ব ইবনে উজরা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বের হয়ে আমাদের সামনে আসলেন। আমরা সংখ্যায় ছিলাম নয়জন; পাঁচজন আরব এবং চারজন অনারব অথবা এর বিপরীত। তিনি বললেন, তোমরা শুন, তোমরা কি শুনছ? আমার পর অচিরেই অনেক জালিম শাসক আসবে। যারা সেই সকল শাসকদের সাথে আঁতাত করবে, তাদের অন্যায় গুলোকে সমর্থন দিবে এবং তাদের জুলুমে সহযোগিতা করবে, সে আমার উম্মত নয় এবং আমিও তার দায়িত্ব নিবো না এবং (কিয়ামতের দিন) তাকে আমার হাউজে কাউসারের সামনে আসতে দেয়া হবে না।
আর যারা সেই সকল জালিম শাসকদের সাথে আঁতাত করবে না, তাদের জুলুমে সহায়তা করবে না বরং তাদের অন্যায়সমূহের বিরোধিতা করবে তারা আমার উম্মত এবং আমি তাদের দায়িত্ব নিবো এবং তাদেরকে (কিয়ামতের দিন) হাউজে কাউসারের পানি পান করানো হবে।” (জামে আত-তিরমিজি ও নাসায়ী, হাদীস নং ৪২০৭)
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ অচিরেই আমার উম্মতের মাঝে কিছু সংখ্যক লোক দীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করবে এবং কুরআন মাজীদ পড়বে। তারা বলবে, ‘আমরা রাষ্ট্রনায়ক ও ক্ষমতাসীনদের কাছে যাই তাদের পার্থিব স্বার্থে কিছুটা ভাগ বসানোর জন্য এবং আমরা নিজেদের দ্বীনকে অক্ষুন্ন রেখেই তাদের নিকট হতে সরে পড়ব।’ কিন্তু তা সম্ভব নয়। যেমন কাঁটাযুক্ত গাছ থেকে কাঁটা ব্যতীত কোন ফল লাভ করা যায় না, তেমনি এদের নিকট থেকেও কোন ফল লাভ করা যায় না, কিন্তু……।” [ইবনে মাজাহ]
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, “আল্লাহ্ তা’আলার নিকট সবচেয়ে নিকৃষ্ট আলেম হল তারা, যারা সমসাময়িক শাসক গোষ্ঠীর দরবারে যাতায়াত করে।” [ইবনে মাজাহ]
রাবী মুহারিবী (রঃ) বলেন, ‘এখানে শাসক গোষ্ঠী বলতে সমসাময়িক স্বৈরাচারী শাসক গোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে।
আয়াত ও হাদিস থেকে আমরা একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পেলাম। তা হল উলামায়ে সূ’ দের বড় বৈশিষ্ট হবে, তারা সত্যকে গোপন করবে। তারা দুনিয়ার পিছনে দৌঁড়াবে । সর্বদা ক্ষমতাসীনদের মনোতুষ্টিতে মগ্ন থাকবে এবং শরীয়তের যে সব বিষয় কষ্টকর ও তাদের স্বার্থবিরোধী, তারা সব সময় তার বিরোধিতা ও তার ব্যাপারে সংশয় ছড়াবে। কোরআন সুন্নাহর অপব্যাখ্যার মাধ্যমে জনগণকে সঠিক ইসলাম থেকে ফিরিয়ে রাখবে । যে সব হক্কানী আলেমদের কার্যকলাপ তাদের পার্থিব স্বার্থে আঘাত হানবে, তাদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিবে। তাদেরকে উশৃঙ্খল বলবে।
উলামায়ে সূ’দের ইতিহাস
فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ وَرِثُوا الْكِتَابَ يَأْخُذُونَ عَرَضَ هَٰذَا الْأَدْنَىٰ وَيَقُولُونَ سَيُغْفَرُ لَنَا وَإِن يَأْتِهِمْ عَرَضٌ مِّثْلُهُ يَأْخُذُوهُ أَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِم مِّيثَاقُ الْكِتَابِ أَن لَّا يَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ وَدَرَسُوا مَا فِيهِ وَالدَّارُ الْآخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَ أَفَلَا تَعْقِلُونَ ﴿الأعراف: ١٦٩﴾
অনুবাদ: তারপর তাদের পেছনে এসেছে কিছু অপদার্থ, যারা উত্তরাধিকারী হয়েছে কিতাবের; তারা নিকৃষ্ট পার্থিব উপকরণ আহরণ করছে এবং বলছে, আমাদের ক্ষমা করে দেয়া হবে। বস্তুতঃ এমনি ধরনের উপকরণ যদি আবারো তাদের সামনে উপস্থিত হয়, তবে তাও তুলে নেবে। তাদের কাছথেকে কিতাবে কি অঙ্গীকার নেয়া হয়নি যে, আল্লাহর প্রতি সত্য ছাড়া কিছু বলবে না? অথচ তারা সে সবই পাঠ করেছে, যা তাতে লেখা রয়েছে। বস্তুতঃ আখেরাতের আলয় ভীতদের জন্য উত্তম-তোমরা কি তা বোঝ না ?”(সূরা আ‘রাফ:১৬৯)
বনূ ইসরাইলের বালআম বাউরা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত কোন যুগই খালি ছিলনা এ ভয়াবহ গোষ্ঠিটি থেকে। বালআম বাউরা, মুসিলের শাসক মুজাফফার উদ্দীনের দরবারি আলেম, স্পেনের দাউদ, আকবরের দরবারি আলেমরা, সৌদি আরবের দরবারি আলেমরা এবং ভারত পাকিস্তানের ও বাংলাদেশের দরবারি আলেমরা।
আমরা এখানে শুধু আমাদের ধারে কাছের কিছু আলেমের চিত্র তুলে ধরলাম। নতুবা খোঁজা হলে আরো বহু নামের সন্ধান পাওয়া যাবে।
উলামায়ে সূ’দের প্রতি কোরআন সুন্নাহর ধমকি
এই সব দুনিয়ালোভী, জেনেশুনে ইলম গোপনকারী “দরবারী আলেমদেরকে” সতর্ক করে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন-
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَىٰ مِن بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ أُولَٰئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ ﴿البقرة: ١٥٩﴾
অনুবাদ: নিশ্চয় যারা গোপন করে, আমি যেসব বিস্তারিত তথ্য এবং হেদায়েতের কথা নাযিল করেছি মানুষের জন্য কিতাবের মধ্যে বিস্তারিত বর্ণনা করার পরও; সে সমস্ত লোকের প্রতিই আল্লাহর অভিসম্পাত এবং অন্যান্য অভিসম্পাতকারীগণের ও। (সূরা বাকারাহ:১৫৯)
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ مِنَ الْكِتَابِ وَيَشْتَرُونَ بِهِ ثَمَنًا قَلِيلًا أُولَٰئِكَ مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ وَلَا يُكَلِّمُهُمُ اللَّهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ ﴿البقرة: ١٧٤﴾
অনুবাদ: নিশ্চয় যারা সেসব বিষয় গোপন করে, যা আল্লাহ কিতাবে নাযিল করেছেন এবং সেজন্য অল্প মূল্য গ্রহণ করে, তারা আগুন ছাড়া নিজের পেটে আর কিছুই ঢুকায় না। আর আল্লাহ কেয়ামতের দিন তাদের সাথে না কথা বলবেন, না তাদের পবিত্র করা হবে, বস্তুতঃ তাদের জন্যে রয়েছে বেদনাদায়ক আযাব। (সূরা বাকারাহ:১৭৪)
তাছাড়া আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতেন যে, তারপর একদল আলেমদের জন্ম হবে, যারা দ্বীনের ব্যাপারে যথেষ্ট জ্ঞান অর্জন করবে, কিন্তু সে জ্ঞানকে দুনিয়াবানী স্বার্থে ব্যবহার করবে, জেনে শুনে ইলম গোপন করবে, জালেম-কুফফার শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলবে না। তাই তিনি আমাদেরকে এইসব দুনিয়ালোভী আলেমদের ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
“তিন শ্রেণীর মানুষকে সর্বপ্রথম জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। এর মাঝে প্রথম শ্রেণীটা হচ্ছে-একদল জ্ঞাণী আলেম যারা দুনিয়াবী স্বার্থে ইলম গোপন করতো এবং জালেম শাসকদের বিরুদ্ধে কথা বলতো না। (সংক্ষেপিত)-জামে আত তিরমিজি ও ইবনে হিব্বান।
হযরত আলী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ''আমি অচিরেই লোকদের উপর এমন একটি সময় আসার আশংকা করছি, যখন কেবলমাত্র নাম ছাড়া ইসলামের আর কিছুই থাকবে না এবং কুরআনের লিখিত রূপটি ছাড়া তার বাস্তবায়ন থাকবে না। মসজিদগুলো চাকচিক্যে ভরপুর হলেও হিদায়াত থেকে বঞ্চিত হবে। ঐ সময়কার আলেমরা হবে আসমানের নিচে বিচরণকারী সর্ব নিকৃষ্ট জীব। তাদের থেকেই বিভিন্ন ফিৎনা ছড়াবে এবং তারা নিজেরাও সেই ফিৎনায় আবর্তিত হবে।''(বায়হাকী, শু'আবুল ঈমান। হাদিস সহীহ।)
হযরত আবূ যার (রাযিঃ) বলেছেন, “আমি রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকটে একদিন উপস্থিত ছিলাম এবং আমি তাকে বলতে শুনেছি, ‘এমন কিছু রয়েছে যেটির ব্যাপারে আমি আমার উম্মাহ্*-এর জন্য দাজ্জালের অপেক্ষাও অধিক ভয় করি।’ তখন আমি ভীত হয়ে পড়লাম, তাই আমি বললাম, ‘হে আল্লাহ্*র রাসূল রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এটি কোন জিনিস, যার ব্যাপারে আপনি আপনার উম্মাহ্*-এর জন্য দাজ্জালের চাইতেও অধিক ভয় করেন?’ তিনি [রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, ‘পথভ্রষ্ট ’আলিমগণ।’”
(মুসনাদ আহমাদ, হাদীস নং. ২০৩৩৫)
দরবারী এবং দুনিয়ালোভী আলেমদের ব্যাপারে অত্যন্ত কড়া কথা বলেছেন শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ। শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহ) বলেন-
"যদি কোন শাইখ কুরআন এবং সুন্নাহ হতে অর্জিত শিক্ষা অনুযায়ী আমল ত্যাগ করে এবং এমন বিচারকের অনুসরণ করে, যে আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলের শিক্ষা অনুযায়ী বিচার করেনা, তখন সে একজন ধর্মত্যাগী এবং কাফের হিসেবে বিবেচিত হবে যে দুনিয়া ও আখিরাতে শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত।"-আল ফতোয়া, ইবন তাইমিয়া, খন্ড-৩৫, পৃষ্টা-৩৭৩
“দরবারী/ দুনিয়াবী আলেমদের” মুখোশ উন্মোচন করা কি জরুরী?? কিভাবে “দরবারী আলেমদের” চিহ্নিত করবেন???
যদি দরবারী/দুনিয়াবী আলেমদের চিহ্নিতই করতে না-ই পারেন, তাহলে তো আপনি দুনিয়ায় বিভ্রান্তির মধ্যে ঘুরপাক খেতেই থাকবেন। এইজন্য তাঁদের চিহ্নিত করাটা জরুরী। কারা দুনিয়াবী আলেম আর কারা প্রকৃত আলেম তা চিহ্নিত করার জন্য কুরআন-সুন্নাহই অবশ্যই কিছু criteria বলে দেয়া আছে। তার মধ্যে অন্যতম criteria হচ্ছে-যারা জালিম শাসকের বিরুদ্ধে কথা বলে না, তারা জাহান্নামে নিক্ষেপ হবে। এভাবে কুরআন-সুন্নাহর সাহায্যে আপনি খুব সহজেই দুনিয়াবী আলেমদের চিহ্নিত করতে পারবেন। কিন্তু আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে আমরা যেন কুরআন-সুন্নাহর বাইরে গিয়ে কোন সত্যিকারের আলেমের বিরুদ্ধে অপবাদ না দেই। কারন সত্যিকারের আলেমরাই নবীগনের উত্তরসূরী, আমাদের নেতা, আমাদের পথ প্রদর্শক। কুরআন-সুন্নাহর সাহায্যে একটু এদিক-সেদিক তাকালেই আমরা দেখতে পাবো, কারা দুনিয়াবী আলেম আর কারা সত্যিকারের আলেম ইনশা আল্লাহ।
সবশেষে স্মরণ করিয়ে দেই, এই দরবারী আলেমদের ব্যাপারে আমাদের কর্তব্য হবে তাদের বিভ্রান্তিগুলোর জবাব দেওয়া। তাদের গতি প্রকৃতি সম্পর্কে উম্মাহাকে সতর্ক করা॥
সঠিক দলের অনুসারী হয়ে যান
এ ব্যাপারে ইবনে তাইমিয়্যাহ (রঃ) বলেছেন, "যে কোন যুগে তুমি যদি সঠিক ইসলামপন্থী দলটি খুজে না পাও, তাহলে চিহ্নিত ইসলাম বিদ্বেষী এবং ইসলামের শত্রুদের দিকে তাকাও, তারা কোন দলটির প্রতি সবচেয়ে বেশি ক্ষিপ্ত। কারন সঠিক ইসলামি দল চিনতে মুসলমানেরা ভুল করলেও ইসলামের চিহ্নিত শত্রুরা কখনো ভুল করেনা।"
আশা করি আপনাদের বুঝতে বাকি থাকার কথা না যে, বর্তমানে চিহ্নিত ইসলাম বিদ্বেষী এবং ইসলামের শত্রুরা কোন দলটির উপর সবচেয়ে বেশী ক্ষিপ্ত! তার পরেও বলছি শুনুন: তারা হলেন- মুজাহিদীনের জামা‘আত বা দল।
অতএব, আপনার করণীয় কি? তা আপনি নিজেই ঠিক করে নিন।
উদাত্ত আহবান
হে আমার মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আজ বাংলাদেশ সহ বিভিন্ন মুসলিম দেশে মুরতাদ সরকার থাকার কারণে, সাধারণ মুসলিমরা মুরতাদ, নাস্তিক, কুফফারদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে, অপদস্থ হচ্ছে। বিশেষকরে বর্তমানে কাশ্মিরের অবস্থা সচেতন কোন ব্যক্তির অজানা থাকার কথা নয়।
আল্লাহ্ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে নানা অশালীন বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে এবং কুটুক্তি করা হচ্ছে, যেগুলো এমনকি কাফেররাও বলতে সাহস পায়নি। এতদ্বসত্ত্বেও আমাদের উলামায়ে সূ’রা চুপ মেরে বসে আছে। কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারছে না। নিবেও না।
তাই, আজ সময় এসেছে জেগে উঠার। নাস্তিক মুরতাদদের হাত থেকে ইসলাম তথা আল্লাহ্* ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সম্মান বাঁচাতে আপনাদের এগিয়ে আসার। নির্যাতিত মুসলমান ভাই-বোনদেরকে হেফাযত করার। সর্বোপরি কুফফারদের আগ্রাসী আক্রমণের বিরুদ্ধে নিজেদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়ার। কারণ, গাযওয়ায়ে হিন্দের পটভূমি তৈরী হয়ে গেছে। তাই আর বসে থাকার কোন সুযোগ নেই।
মনে রাখবেন, নিন্দুকের নিন্দার চেয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অনেক বড়। আর আপনার হেফাযতের চিন্তা কিন্তু আপনাকেই করতে হবে। কোন মুরতাদ শাসক করবে না। অথবা কোন উলামায়ে সূ’রা করবে না।
পরিশেষে আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা- তিনি যেন আমাদেরকে খেলাফত প্রতিষ্ঠার একজন যোগ্য সিপাহসালার হওয়ার তাওফিক দান করেন। আল্লাহুম্মা আমীন
ডাউনলোড লিংক:
পিডিএফ
ওয়ার্ড
************************************************** *****************
সংগৃহীত, সংযোজিত, পরিমার্জিত
Comment