ইলম নিয়ে ব্যস্ততার অজুহাত
জিহাদবিমুখ উলামা-তুলাবাদের একটি মুখরোচক অজুহাত হল, ‘আমরা ইলম নিয়ে ব্যস্ত আছি। জিহাদ করতে গেলে ইলম ছুটে যাবে। সমাজের মানুষের ইলম ও মাসায়েলের সমাধান তাহলে দেবে কে- যদি আমরা জিহাদে চলে যাই’?
বাহ্যত যুক্তিটি অনেক সুন্দর। যে কেউ কথাটি শুনবে আপাত দৃষ্টিতে সমর্থন না করে পারবে না। তবে আমি এখানে একটি কথা জিজ্ঞেস করতে চাই: ইলম কি শুধু অজু-গোসল, হায়েয-নেফাস, নামায-রোযা, নিকাহ-তালাকের মাঝেই সীমাবদ্ধ? না’কি গোটা শরীয়তের সকল দিক, সকল বিধি-বিধানই ইলম? ঈমান-কুফর, তাকফিরুত তাওয়াগিত, সিয়াসত-খিলাফত-ইমারাত, জিহাদ-কিতাল-সিয়ার এগুলো কি ইলমের গণ্ডিতে পড়ে?
যদি বলেন, পড়ে; তাহলে আপনারা কি এগুলো নিয়ে ব্যস্ত? স্বাভাবিক প্রায় সকলেরই উত্তর আসবে, না। একান্ত যারা কিছুটা অধ্যয়ন করেনও তারাও বলতে গেলে ভাসা ভাসা দৃষ্টিতে। নিকাহ-তালাকের মাসআলা যেভাবে বুঝতে পারছেন এবং ফতোয়া দিতে পারছেন, এসব মাসআলায় তার দশ ভাগের এক ভাগ বরং বলতে গেলে একশ ভাগের এক ভাগও দক্ষতা নেই। তাহলে এখন যদি পর্যালোচনা করা হয় দেখা যাবে আপনারা ইলমের খুব কম অংশ নিয়েই লিপ্ত আছেন, আর বাকি সকল ইলমই আপনাদের ব্যস্ততার বাহিরে। তাহলে বলা যায় ইলমের অজুহাতের দাবিতেও আপনারা সত্যবাদি নন।
যদি সত্য সত্যই আপনারা ইলম নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, তাহলে তো আপনারাই আমাদের রাহবার হতেন। আপনারা যা বলতেন আমরা নির্দ্বিধায় মেনে নিতাম। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, বর্তমান পরিস্থিতিতে উম্মাহর সর্বাপেক্ষা বেশি প্রয়োজনীয় ইলমটুকুর ধারে কাছেও আপনারা নেই বরং বিনা ইলমে উল্টো উল্টে ফতোয়া দিয়ে দিয়ে উম্মাহকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় আমরা কিভাবে আপনাদের কথা মেনে চলতে পারি? বরং আপনাদের অজুহাত কবূল করার মতো কোন সুযোগও তো দেখছি না। বরং সত্য কথা বলতে গেলে: আপনারা ইলমের কেবল ততটুকু নিয়েই ব্যস্ত যতটুকুতে আপনাদের রুজি রোজগারের বন্দোবস্ত হবে, যতটুকুতে রাষ্ট্রের বিরোধীতার কিছু নেই এবং যতটুকুতে তাগুত শাসক শ্রেণী আপনাদের প্রতি নারাজ হবে না। তাহলে বলা যায়, ‘ইলম নিয়ে ব্যস্ত আছি’- উজরটা একেবারেরই অবাস্তব।
আমরা তো ইলমের দাবিই জানাচ্ছি
ইলমী ব্যস্ততার অজুহাত অবাস্তব হওয়ার একটা বড় দলীল হচ্ছে, আপনাদের জিহাদ বিমুখতা। কারণ, মুজাহিদরা যখন আপনাদেরকে জিহাদের দাওয়াত দিচ্ছেন, তখন তো আপনাদেরকে এ কথা বলছেন না যে, আপনারা এখনই অস্ত্র হাতে রাস্তায় বেরিয়ে শহীদ হয়ে যান। আপনাদেরকে কাছে দাবি হচ্ছে, আপনারা প্রথমে সত্য জানুন। সত্য জেনে উম্মাহর সামনে সত্য তুলে ধরুন। উম্মাহকে দ্বীন ও জিহাদ বুঝান। তাহলে বলা যায়, যে ইলম নিয়ে আপনারা ব্যস্ত বলে দাবি করছেন, মুজাহিদগণ আপনাদের কাছে সে ইলমই দাবি করছেন এবং আপনাদের সামনে ইলমের বিশাল এক ময়দান খুলে দিচ্ছেন। কিন্তু আপনারা যদি সারা না দেন, তাহলে কিভাবে আমরা বিশ্বাস করতে পারি যে, আপনারা ইলম নিয়ে আছেন? বরং তখন তো সন্দেহ জাগে যে, আপনারা ইলমের নামে ইলম ও জিহাদ উভয়টা থেকেই বিমুখ হয়ে আছেন।
বি.দ্র.
আমার এ কথা শুধু ঐসব উলামা-তুলাবার ব্যাপারে যারা আসলেই নিজেদের দাবিতে মিথ্যাবাদি। সকলের ব্যাপারে নয়।
জিহাদ ফরযে আইন হওয়ার সময় ইলমী ব্যস্ততায় জিহাদ ছাড়ার সুযোগ নেই
সর্বোপরি জিহাদ ফরযে আইন হওয়ার সূরতে ইলম নিয়ে পড়ে থেকে জিহাদ ছাড়ার কোন অবকাশ নেই। ইলমী ব্যস্ততা যদিও সর্বশ্রেষ্ঠ একটি আমল, কিন্তু যখন উম্মাহর উপর কাফের-মুরতাদরা সওয়ার হয়ে পড়ে, তখন আলেম-গাইরে আলেম সকলেরই প্রথম দায়িত্ব শত্রু প্রতিহত করা। এমন সময় ইলম নিয়ে পড়ে থাকা হারাম। স্বাভাবিক অবস্থায় ইলম-জিহাদ উভয়টাই ফরযে কিফায়া। মুজাহিদগণ যদি জিহাদের ফরয আঞ্জাম দিতে থাকেন, তাহলে জিহাদের প্রয়োজনে যে সংখ্যক আলেম জিহাদে অংশগ্রহণ জরুরী, তারা বাদে বাকি আলেমদের উপর জিহাদে যাওয়া জরুরী নয়। তাদের জন্য তখন ইলম-জিহাদ উভয়টিই বরাবর। ইচ্ছা করলে জিহাদও করতে পারেন, ইচ্ছা করলে ইলমেও লিপ্ত থাকতে পারেন। অবশ্য এ সময় কোনটা উত্তম তা নিয়ে মতভেদ আছে।
জিহাদবিরোধীরা যেসকল আইম্মাদের দোহাই দিয়ে জিহাদ হারাম-নাজায়েয ফতোয়া দেয়, সেসকল আইম্মার যামানায় জিহাদের মূলত এ অবস্থাটিই ছিল। তাদের জন্য ইলম-জিহাদ উভয়টিই বরাবর ছিল। তখন কেউ কেউ ইলমের পাশাপাশি জিহাদ ও রিবাতের দায়িত্বও পালন করেছেন, আর কেউ কেউ ইলম নিয়েই ব্যস্ত থেকেছেন। তবে মুজাহিদদের প্রয়োজনীয় হাদিস ও মাসায়েল বর্ণনা ও সংকলন করে দিয়েছেন। এভাবে ময়দানে না গিয়েও তারা জিহাদের খিদমাত করেছেন। আর উলামায়ে কেরামের অনেকের জন্য তখন জিহাদের ময়দানে যাওয়া জায়েযেও ছিল না। কারণ: শীয়া, খাওয়ারিজ, মু’তাজিলি, বাতিনি ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো তো তখনই মাথাছাড়া দিয়ে গজিয়েছিল। এদেরকে দমন করা উলামাদের উপর ফরযে আইন ছিল। সকলেই যদি জিহাদে চলে যেতো তাহলে এদের দমন কে করতো? এমতাবস্থায় জিহাদে যাওয়ার অর্থ ছিল ফরযে কিফায়া আদায় করতে গিয়ে ফরযে আইন তরক করা যা হারাম। তাই, উলামায়ে কেরামের বিশাল একটা অংশ সার্বক্ষণিক ইলমে লিপ্ত থাকা আবশ্যক ছিল। তাদের জন্য জিহাদে যাওয়া নাজায়েয ছিল।
কিন্তু আমাদের বর্তমান অবস্থা এর বিপরীত। এখন জিহাদ ফরযে আইন। আর জিহাদ যখন ফরযে আইন হয়ে যায়, তখন অন্য সব বাদ দিয়ে আগে শত্রু প্রতিহত করা ফরয। কারণ, এখন যদি শত্রু প্রতিহত করা না যায়, তাহলে দ্বীন-দুনিয়া সবই বরবাদ হয়ে যাবে। শত্রু প্রতিহত হয়ে গেলে তখন দ্বীনের সকল শাখার সকল খিদমাত করা যাবে। এজন্য উম্মাহর আইম্মায়ে কেরামের ইজমা: জিহাদ ফরযে আইন হয়ে গেলে তখন আলেমদেরকেও জিহাদে চলে যেতে হবে।
তবে বর্তমান বিশ্বের সকল এলাকার অবস্থা এক রকম নয়। যেখানে সরাসরি যুদ্ধ চলছে, সেখানে আলেমদেরকেও জিহাদে বের হতে হবে। আর আমাদের দেশের মতো যেসব এলাকায় দাওয়াত ও ই’দাদি কাজ চলছে, সেখানে ময়দানে যাওয়া আবশ্যক নয়। দাওয়াত ও ই’দাদের জন্য আলেমদের যে ধরণের ভূমিকা প্রয়োজন, সে ধরণের ভূমিকা রাখাই তাদের কাজ। বিশেষত ইলমী কাজটাই তাদের মূল কাজ। হ্যাঁ, কখনও যদি সরাসরি ময়দানে নেমে পড়ার দরকার পড়ে- এদেশে হোক বা অন্য দেশে- তাহলে তখনকার কথা ভিন্ন।
মোটকথা, সালাফে সালিহীন আইম্মায়ে কেরামের যামানায় আলেমদের জন্য জিহাদ ফরযে আইন ছিল না। করাতে কোন সমস্যা ছিল না। বরং অনেকের জন্য ইলমে লিপ্ত থাকাই ফরযে আইন ছিল, জিহাদে যাওয়া নাজায়েয ছিল। পক্ষান্তরে আমাদের অবস্থা ভিন্ন। এখন ইলমের নাম করে জিহাদের ইলমী-আমলী সকল ধরণের সহায়তা থেকে দূরে থাকার কোন সুযোগ নেই।
যাহোক, ভূমিকা দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। সামনের পর্ব থেকে ইনশাআল্লাহ মুজাহিদ ও মুরাবিত উলামাদের আলোচনা শুরু করবো। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ।
জিহাদবিমুখ উলামা-তুলাবাদের একটি মুখরোচক অজুহাত হল, ‘আমরা ইলম নিয়ে ব্যস্ত আছি। জিহাদ করতে গেলে ইলম ছুটে যাবে। সমাজের মানুষের ইলম ও মাসায়েলের সমাধান তাহলে দেবে কে- যদি আমরা জিহাদে চলে যাই’?
বাহ্যত যুক্তিটি অনেক সুন্দর। যে কেউ কথাটি শুনবে আপাত দৃষ্টিতে সমর্থন না করে পারবে না। তবে আমি এখানে একটি কথা জিজ্ঞেস করতে চাই: ইলম কি শুধু অজু-গোসল, হায়েয-নেফাস, নামায-রোযা, নিকাহ-তালাকের মাঝেই সীমাবদ্ধ? না’কি গোটা শরীয়তের সকল দিক, সকল বিধি-বিধানই ইলম? ঈমান-কুফর, তাকফিরুত তাওয়াগিত, সিয়াসত-খিলাফত-ইমারাত, জিহাদ-কিতাল-সিয়ার এগুলো কি ইলমের গণ্ডিতে পড়ে?
যদি বলেন, পড়ে; তাহলে আপনারা কি এগুলো নিয়ে ব্যস্ত? স্বাভাবিক প্রায় সকলেরই উত্তর আসবে, না। একান্ত যারা কিছুটা অধ্যয়ন করেনও তারাও বলতে গেলে ভাসা ভাসা দৃষ্টিতে। নিকাহ-তালাকের মাসআলা যেভাবে বুঝতে পারছেন এবং ফতোয়া দিতে পারছেন, এসব মাসআলায় তার দশ ভাগের এক ভাগ বরং বলতে গেলে একশ ভাগের এক ভাগও দক্ষতা নেই। তাহলে এখন যদি পর্যালোচনা করা হয় দেখা যাবে আপনারা ইলমের খুব কম অংশ নিয়েই লিপ্ত আছেন, আর বাকি সকল ইলমই আপনাদের ব্যস্ততার বাহিরে। তাহলে বলা যায় ইলমের অজুহাতের দাবিতেও আপনারা সত্যবাদি নন।
যদি সত্য সত্যই আপনারা ইলম নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন, তাহলে তো আপনারাই আমাদের রাহবার হতেন। আপনারা যা বলতেন আমরা নির্দ্বিধায় মেনে নিতাম। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি, বর্তমান পরিস্থিতিতে উম্মাহর সর্বাপেক্ষা বেশি প্রয়োজনীয় ইলমটুকুর ধারে কাছেও আপনারা নেই বরং বিনা ইলমে উল্টো উল্টে ফতোয়া দিয়ে দিয়ে উম্মাহকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছেন। এমতাবস্থায় আমরা কিভাবে আপনাদের কথা মেনে চলতে পারি? বরং আপনাদের অজুহাত কবূল করার মতো কোন সুযোগও তো দেখছি না। বরং সত্য কথা বলতে গেলে: আপনারা ইলমের কেবল ততটুকু নিয়েই ব্যস্ত যতটুকুতে আপনাদের রুজি রোজগারের বন্দোবস্ত হবে, যতটুকুতে রাষ্ট্রের বিরোধীতার কিছু নেই এবং যতটুকুতে তাগুত শাসক শ্রেণী আপনাদের প্রতি নারাজ হবে না। তাহলে বলা যায়, ‘ইলম নিয়ে ব্যস্ত আছি’- উজরটা একেবারেরই অবাস্তব।
আমরা তো ইলমের দাবিই জানাচ্ছি
ইলমী ব্যস্ততার অজুহাত অবাস্তব হওয়ার একটা বড় দলীল হচ্ছে, আপনাদের জিহাদ বিমুখতা। কারণ, মুজাহিদরা যখন আপনাদেরকে জিহাদের দাওয়াত দিচ্ছেন, তখন তো আপনাদেরকে এ কথা বলছেন না যে, আপনারা এখনই অস্ত্র হাতে রাস্তায় বেরিয়ে শহীদ হয়ে যান। আপনাদেরকে কাছে দাবি হচ্ছে, আপনারা প্রথমে সত্য জানুন। সত্য জেনে উম্মাহর সামনে সত্য তুলে ধরুন। উম্মাহকে দ্বীন ও জিহাদ বুঝান। তাহলে বলা যায়, যে ইলম নিয়ে আপনারা ব্যস্ত বলে দাবি করছেন, মুজাহিদগণ আপনাদের কাছে সে ইলমই দাবি করছেন এবং আপনাদের সামনে ইলমের বিশাল এক ময়দান খুলে দিচ্ছেন। কিন্তু আপনারা যদি সারা না দেন, তাহলে কিভাবে আমরা বিশ্বাস করতে পারি যে, আপনারা ইলম নিয়ে আছেন? বরং তখন তো সন্দেহ জাগে যে, আপনারা ইলমের নামে ইলম ও জিহাদ উভয়টা থেকেই বিমুখ হয়ে আছেন।
বি.দ্র.
আমার এ কথা শুধু ঐসব উলামা-তুলাবার ব্যাপারে যারা আসলেই নিজেদের দাবিতে মিথ্যাবাদি। সকলের ব্যাপারে নয়।
জিহাদ ফরযে আইন হওয়ার সময় ইলমী ব্যস্ততায় জিহাদ ছাড়ার সুযোগ নেই
সর্বোপরি জিহাদ ফরযে আইন হওয়ার সূরতে ইলম নিয়ে পড়ে থেকে জিহাদ ছাড়ার কোন অবকাশ নেই। ইলমী ব্যস্ততা যদিও সর্বশ্রেষ্ঠ একটি আমল, কিন্তু যখন উম্মাহর উপর কাফের-মুরতাদরা সওয়ার হয়ে পড়ে, তখন আলেম-গাইরে আলেম সকলেরই প্রথম দায়িত্ব শত্রু প্রতিহত করা। এমন সময় ইলম নিয়ে পড়ে থাকা হারাম। স্বাভাবিক অবস্থায় ইলম-জিহাদ উভয়টাই ফরযে কিফায়া। মুজাহিদগণ যদি জিহাদের ফরয আঞ্জাম দিতে থাকেন, তাহলে জিহাদের প্রয়োজনে যে সংখ্যক আলেম জিহাদে অংশগ্রহণ জরুরী, তারা বাদে বাকি আলেমদের উপর জিহাদে যাওয়া জরুরী নয়। তাদের জন্য তখন ইলম-জিহাদ উভয়টিই বরাবর। ইচ্ছা করলে জিহাদও করতে পারেন, ইচ্ছা করলে ইলমেও লিপ্ত থাকতে পারেন। অবশ্য এ সময় কোনটা উত্তম তা নিয়ে মতভেদ আছে।
জিহাদবিরোধীরা যেসকল আইম্মাদের দোহাই দিয়ে জিহাদ হারাম-নাজায়েয ফতোয়া দেয়, সেসকল আইম্মার যামানায় জিহাদের মূলত এ অবস্থাটিই ছিল। তাদের জন্য ইলম-জিহাদ উভয়টিই বরাবর ছিল। তখন কেউ কেউ ইলমের পাশাপাশি জিহাদ ও রিবাতের দায়িত্বও পালন করেছেন, আর কেউ কেউ ইলম নিয়েই ব্যস্ত থেকেছেন। তবে মুজাহিদদের প্রয়োজনীয় হাদিস ও মাসায়েল বর্ণনা ও সংকলন করে দিয়েছেন। এভাবে ময়দানে না গিয়েও তারা জিহাদের খিদমাত করেছেন। আর উলামায়ে কেরামের অনেকের জন্য তখন জিহাদের ময়দানে যাওয়া জায়েযেও ছিল না। কারণ: শীয়া, খাওয়ারিজ, মু’তাজিলি, বাতিনি ইত্যাদি বাতিল ফিরকাগুলো তো তখনই মাথাছাড়া দিয়ে গজিয়েছিল। এদেরকে দমন করা উলামাদের উপর ফরযে আইন ছিল। সকলেই যদি জিহাদে চলে যেতো তাহলে এদের দমন কে করতো? এমতাবস্থায় জিহাদে যাওয়ার অর্থ ছিল ফরযে কিফায়া আদায় করতে গিয়ে ফরযে আইন তরক করা যা হারাম। তাই, উলামায়ে কেরামের বিশাল একটা অংশ সার্বক্ষণিক ইলমে লিপ্ত থাকা আবশ্যক ছিল। তাদের জন্য জিহাদে যাওয়া নাজায়েয ছিল।
কিন্তু আমাদের বর্তমান অবস্থা এর বিপরীত। এখন জিহাদ ফরযে আইন। আর জিহাদ যখন ফরযে আইন হয়ে যায়, তখন অন্য সব বাদ দিয়ে আগে শত্রু প্রতিহত করা ফরয। কারণ, এখন যদি শত্রু প্রতিহত করা না যায়, তাহলে দ্বীন-দুনিয়া সবই বরবাদ হয়ে যাবে। শত্রু প্রতিহত হয়ে গেলে তখন দ্বীনের সকল শাখার সকল খিদমাত করা যাবে। এজন্য উম্মাহর আইম্মায়ে কেরামের ইজমা: জিহাদ ফরযে আইন হয়ে গেলে তখন আলেমদেরকেও জিহাদে চলে যেতে হবে।
তবে বর্তমান বিশ্বের সকল এলাকার অবস্থা এক রকম নয়। যেখানে সরাসরি যুদ্ধ চলছে, সেখানে আলেমদেরকেও জিহাদে বের হতে হবে। আর আমাদের দেশের মতো যেসব এলাকায় দাওয়াত ও ই’দাদি কাজ চলছে, সেখানে ময়দানে যাওয়া আবশ্যক নয়। দাওয়াত ও ই’দাদের জন্য আলেমদের যে ধরণের ভূমিকা প্রয়োজন, সে ধরণের ভূমিকা রাখাই তাদের কাজ। বিশেষত ইলমী কাজটাই তাদের মূল কাজ। হ্যাঁ, কখনও যদি সরাসরি ময়দানে নেমে পড়ার দরকার পড়ে- এদেশে হোক বা অন্য দেশে- তাহলে তখনকার কথা ভিন্ন।
মোটকথা, সালাফে সালিহীন আইম্মায়ে কেরামের যামানায় আলেমদের জন্য জিহাদ ফরযে আইন ছিল না। করাতে কোন সমস্যা ছিল না। বরং অনেকের জন্য ইলমে লিপ্ত থাকাই ফরযে আইন ছিল, জিহাদে যাওয়া নাজায়েয ছিল। পক্ষান্তরে আমাদের অবস্থা ভিন্ন। এখন ইলমের নাম করে জিহাদের ইলমী-আমলী সকল ধরণের সহায়তা থেকে দূরে থাকার কোন সুযোগ নেই।
যাহোক, ভূমিকা দীর্ঘ হয়ে যাচ্ছে। সামনের পর্ব থেকে ইনশাআল্লাহ মুজাহিদ ও মুরাবিত উলামাদের আলোচনা শুরু করবো। ওয়ামা তাওফিকি ইল্লা বিল্লাহ।
***
Comment