নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও মোকাবেলা করা জায়েয বরং প্রশংসনীয়
সুন্নাহ থেকে দলীল
ক. বদরের যুদ্ধে সাহাবায়ে কেরামের সংখ্যা ছিল তিনশোর চেয়ে কিছু বেশি, পক্ষান্তরে শত্রু সংখ্যা ছিল তিনগুণ বা তারও বেশি।
খ. উহুদ যুদ্ধে সাহাবায়ে কেরাম ছিলেন সাতশোর মতো, পক্ষান্তরে শত্রু সংখ্যা ছিল তিন হাজারের মতো।
গ. খন্দকের যুদ্ধে কাফেরদের সম্মিলিত জোটে সৈন্য সংখ্যা ছিল দশ হাজারের অধিক, যা সাহাবায়ে কেরামের কয়েক গুণ।
ঘ. অনেক সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপস্থিতিতেই কোনো কোনো সাহাবি একা একা কাফের বাহিনির উপর হামলা করতেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের প্রশংসা করতেন।
ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
فعلم: أن القوم يشرع لهم أن يقاتلوا من يزيدون على ضعفهم، ولا فرق في ذلك بين الواحد والعدد، فمقاتلة الواحد لثلاثة كمقاتلة الثلاثة للعشرة. اهـ
“বুঝা গেল, শত্রু বাহিনি দ্বিগুণের বেশি হলেও কিতাল জায়েয। এক্ষেত্রে একক ব্যক্তি জামাতের মাঝে কোন তফাৎ নেই। কেননা, এক ব্যক্তি তিনজনের মোকাবেলা করা তিন ব্যক্তি মিলে দশজনের মোকাবেলা করারই মতো।”- কায়িদাতুন ফিলইনগিমাসি ফিলআদুউ ৪৫ঙ. আসিম ইবনু সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহুর ঘটনা। ইমাম বুখারি রহ. আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন,
بعث رسول الله صلى الله عليه و سلم عشرة رهط سرية عينا وأمر عليهم عاصم بن ثابت الأنصاري جد عاصم بن عمر فانطلقوا حتى إذا كانوا بالهداة وهو بين عسفان ومكة ذكروا لحي من هذيل يقال لهم بنو لحيان فنفروا لهم قريبا من مائتي رجل كلهم رام فاقتصوا آثارهم حتى وجدوا مأكلهم تمرا تزودوه من المدينة فقالوا هذا تمر يثرب فاقتصوا آثارهم فلما رآهم عاصم وأصحابه لجؤوا إلى فدفد وأحاط بهم القوم فقالوا لهم انزلوا وأعطونا بأيديكم ولكم العهد والميثاق ولا نقتل منكم أحدا .
قال عاصم بن ثابت أمير السرية أما أنا فوالله لا أنزل اليوم في ذمة كافر اللهم أخبر عنا نبيك فرموهم بالنبل فقتلوا عاصما في سبعة فنزل إليهم ثلاثة رهط بالعهد والميثاق منهم خبيب الأنصاري وابن دثنة ورجل آخر فلما استمكنوا منهم أطلقوا أوتار قسيهم فأوثقوهم فقال الرجل الثالث هذا أول الغدر والله لا أصحبكم إن في هؤلاء لأسوة يريد القتلى فجرروه وعالجوه على أن يصحبهم فأبى فقتلوه فانطلقوا بخبيب وابن دثنة حتى باعوهما بمكة بعد وقعة بدر
“রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গোয়েন্দাগিরির জন্য দশ সদস্যের একটি সারিয়্যা পাঠান। আসিম ইবনু সাবিত আনসারি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে তাদের আমীর নির্ধারণ করেন। তারা রওয়ানা হন। উসফান ও মক্কার মধ্যস্থ হাদআ নামক স্থানে যখন পৌঁছলেন, হুজাইল গোত্রের বনু লিহইয়ান কবিলার কানে তাদের সংবাদ গেল। প্রায় দু’শো লোক, যাদের প্রত্যেকেই দক্ষ তীরন্দাজ ছিল, তাদেরকে ধরার জন্য রওয়ানা দিল। ... আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহু ও তার সঙ্গীগণ যখন এদেরকে দেখলেন, একটি উঁচু স্থানে গিয়ে আশ্রয় নিলেন। লোকেরা চতুর্দিক থেকে তাদেকে ঘিরে ফেলল। বললো, ‘নেমে এস। আত্মসমর্পণ কর। আমরা অঙ্গিকার করছি, তোমাদের কাউকে হত্যা করবো না’। قال عاصم بن ثابت أمير السرية أما أنا فوالله لا أنزل اليوم في ذمة كافر اللهم أخبر عنا نبيك فرموهم بالنبل فقتلوا عاصما في سبعة فنزل إليهم ثلاثة رهط بالعهد والميثاق منهم خبيب الأنصاري وابن دثنة ورجل آخر فلما استمكنوا منهم أطلقوا أوتار قسيهم فأوثقوهم فقال الرجل الثالث هذا أول الغدر والله لا أصحبكم إن في هؤلاء لأسوة يريد القتلى فجرروه وعالجوه على أن يصحبهم فأبى فقتلوه فانطلقوا بخبيب وابن دثنة حتى باعوهما بمكة بعد وقعة بدر
সারিয়্যার আমীর আসিম ইবনু সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আর যাই হোক, আল্লাহর কসম! আজকের দিনে আমি কোনো কাফেরের আশ্রয়ে নামবো না। হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সংবাদ আপনার নবীর কাছে পৌঁছে দিন’। এতে কাফেররা তাদের প্রতি তীর নিক্ষেপ করতে শুরু করলো। আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহু সহ সাতজনকে হত্যা করল। বাকি তিনজন অঙ্গিকার মতো নিচে নেমে এলেন। খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহু, ইবনু দাসিনা রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং আরেকজন। যখন কাফেররা তাদেরকে বাগে পেল, তাদের তীরের রশিগুলো কেটে দিল এবং তাদেরকে বেঁধে ফেল। তখন তৃতীয়জন বললেন, ‘এই তো প্রথম গাদ্দারি। আল্লাহর কসম আমি তোমাদের সাথে যাব না। ঐসব (নিহত) সঙ্গীদের মাঝে গ্রহণ করার মতো আদর্শ আমার জন্য আছে (অর্থাৎ আমিও তাদের মতো শহীদ হয়ে যাব)’। কাফেররা তাকে টেনে হেঁচড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু তিনি কোনো মতেই গেলেন না। ফলে তারা তাকে হত্যা করে দিল এবং খুবাইব ও ইবনু দাসিনা রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে নিয়ে চললো। অবশেষে বদরের পর মক্কায় তাদেরকে বিক্রি করে দিল।”- সহীহ বুখারি ২৮৮০
দীর্ঘ হাদিস। এরপর খুবাইব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করার ঘটনা এবং আসিম রাদিয়াল্লাহু আনহুর লাশ মৌমাছির দ্বারা সংরক্ষণের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।
ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,
فهؤلاء عشرة أنفس قاتلوا أولئك المائة أو المائتين، ولم يستأسروا لهم حتى قتلوا منهم سبعة. ثم لما استأسروا الثلاثة امتنع الواحد من إتباعهم حتى قتلوه. اهـ
“এই যে এরা মাত্র দশজন লোক। ঐ একশো বা দুইশো লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। আত্মসমর্পণ করেননি। এভাবে তাদের সাতজন শহীদ হয়েছেন। এরপর যখন তিনজন আত্মসমর্পণ করলেন, একজন তাদের সাথে চলতে অস্বীকৃতি জানালেন, ফলে তারা তাকেও হত্যা করে দিল।”- কায়িদাতুন ফিলইনগিমাসি ফিলআদুউ ৫২শামসুল আইম্মা সারাখসী রহ. (৪৯০হি.) বলেন,
ولا بأس بالصبر أيضا بخلاف ما يقوله بعض الناس إنه إلقاء النفس في التهلكة، بل في هذا تحقيق بذل النفس لابتغاء مرضاة الله تعالى، فقد فعله غير واحد من الصحابة - رضي الله عنهم -، منهم عاصم بن ثابت حمي الدبر، وأثنى عليهم رسول الله - صلى الله عليه وسلم - بذلك، فعرفنا أنه لا بأس به.اهـ
“ময়দানে টিকে থাকতেও কোন অসুবিধে নেই। কিন্তু কতক লোক এর বিপরীত কথা বলে। তারা বলে, এটা না’কি নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়ার নামান্তর। তাদের কথা সঠিক নয়। বরং এ তো হচ্ছে বাস্তবিক অর্থেই আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করে দেয়া। অনেক সাহাবী রাদিয়াল্লাহু আনহুম এমনটা করেছেন। হযরত আসিম ইবনু সাবিত রাদিয়াল্লাহু আনহু তাদেরই একজন। যাকে মৌমাছি দিয়ে হেফাযত করা হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ কারণে তাদের প্রশংসা করেছেন। বুঝা গেল, এতে কোন অসুবিধে নেই।”- শরহুস সিয়ারিল কাবীর ১/ ৮৫ইবনে তাইমিয়া রহ. এছাড়াও আরো দলীল পেশ করেছেন। আলোচনা সংক্ষেপণার্থে আমরা আর সামনে বাড়বো না। যতটুকু উল্লেখ করেছি, সত্যানুসন্ধানীর জন্য এতেই অনেক খোরাক আছে। হে আল্লাহ! আমাদেরকে সত্য বুঝার ও মেনে চলার তাওফিক দান কর!
(চলমান)
Comment