সংশয়.ক: আক্রান্তরা না দাঁড়ালে কি বাকিদের উপর ফরয নয়?
সংশয়.খ: পার্শ্ববর্তীরা সহযোগিতা না করলে কি পরবর্তীদের উপর ফরয নয়?
ফিকহের কিতাবাদিতে এ দু’টি সংশয়ের জওয়াব এক জায়গায় বরং একই লাইনে দেয়া হয়েছে। আমরাও তাই একসাথেই আলোচনা করবো।
সংশয়: শায়খ বলছেন,
- কাশ্মিরিরা যদি জিহাদে না দাঁড়ায়, তাহলে তাদের সহায়তার জন্য যাওয়া অন্য মুসলিমদের কোন দায়িত্ব নয়, বরং হারাম।
- কাশ্মিরিদের সহায়তা করার প্রথম দায়িত্ব পাকিস্তানের। তারা না করলে পরবর্তীদের জন্য সাহায্যে যাওয়া হারাম।
(লক্ষ্যণীয়, শায়খ কিন্তু কাশ্মিরিরা জিহাদে দাঁড়ালে নাজায়েয হবে বলেছেন। কারণ, ভারতের সৈন্য অনেক বেশি। আবার বলছেন, তারা না দাঁড়ালে বাহিরের মুসলমানরা যেতে পারেবে না। গেলে হারাম হবে। এক দিকে কাশ্মিরিরা দাড়ালে হারাম হবে, অপরদিকে বাইরের মুসলমান গেলেও হারাম হবে। ভিতর থেকেও জিহাদ হারাম, বাহির থেকেও জিহাদ হারাম। মুসলমানকে যাতাকলে পিষে ফেলার স্বপক্ষে এমন ফতোয়া মনে হয় কাফের বিশ্ব কমই পেয়ে থাকে।)
শায়খের এ দু’টো সংশয় দেখে বড়ই অবাক হতে হলো। কিতাবুল জিহাদের প্রথম দিকের কিছু পৃষ্ঠাও যাদের পড়া আছে, তারাও অবাক না হয়ে পারবে না। বুঝলাম না যে, আহকামুস সিয়ারের ব্যাপারে শায়খ কি আসলেই এতোটা অজ্ঞ? না’কি শায়খ উপরের নির্দেশে সত্যকে মিথ্যা বানাচ্ছেন? স্বার্থপরতা বা হুমকি ধমকি কি উম্মাহকে গোমরাহ করার পথে টেনে নিয়েছে শায়খকে? আল্লাহ মা’লূম। আমি প্রথমে ফিকহের কয়েকটি বক্তব্য তুলে ধরছি-
বিভিন্ন কিতাবের বরাতে আল্লামা ইবনু আবিদিন শামী রহ. (১২৫২হি.) বলেন,
আল্লামা ইবনু নুজাইম মিসরী রহ. (৯৭০ হি.) বলেন,
আল্লামা ইবনে হাযম রহ. (৪৫৬হি.) বলেন,
দাগ দেয়া অংশটুকু লক্ষ করুন-
- আক্রান্তদের ব্যাপারে ইবনে আবিদিন রহ. এর বক্তব্য: আক্রান্তরা ‘যদি শত্রু প্রতিরোধে অপারগ হয় বা অলসতাবশত জিহাদ না করে, তাহলে তাদের পার্শ্ববর্তীদের উপর জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যাবে; যেমন নামাজ-রোজা ফরজে আইন’।
- পার্শ্ববর্তীরা সহায়তা না করলে ইবনু নুজাইম রহ. এর বক্তব্য: যদি তাদের পার্শ্ববর্তী মুসলমানরাও যথেষ্ট না হয় অথবা (আল্লাহর) নাফরমানী করে অলসতা করে (জিহাদ না করে), তাহলে তাদের পার্শ্ববর্তীদের উপর এই হুকুম বর্তাবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে পূর্ব থেকে পশ্চিম; সমগ্র বিশ্বের সকল মুসলমানের উপর জিহাদ ফরজ হয়ে যাবে’।
পরিষ্কার যে, আক্রান্তরা যদি অলসতা করে জিহাদ না করে তাহলে অন্যদের উপর ফরযে আইন। তদ্রূপ পার্শ্ববর্তীরা যদি অলসতা করে জিহাদ না করে তাহলে অন্যদের উপর জিহাদ ফরযে আইন। আর ইবনে হাযমের বক্তব্য তো আরো স্পষ্ট। যেই সহায়তা করতে সক্ষম তাকেই সহায়তা করতে হবে।
বক্তব্যগুলোর সাথে শায়খের বক্তব্য মিলেয়ে দেখুন। শায়খ কি এসব বক্তব্য দেখেননি? না দেখে থাকলে এ ব্যাপারে কথা বলার আগে অন্তত ফিকহের দুয়েকটি কিতাব পড়ে দেখার দরকার ছিল। আর যদি দেখে থাকেন, তাহলে তো স্পষ্টই ধোঁকাবাজি।
সংশয়.খ: পার্শ্ববর্তীরা সহযোগিতা না করলে কি পরবর্তীদের উপর ফরয নয়?
ফিকহের কিতাবাদিতে এ দু’টি সংশয়ের জওয়াব এক জায়গায় বরং একই লাইনে দেয়া হয়েছে। আমরাও তাই একসাথেই আলোচনা করবো।
সংশয়: শায়খ বলছেন,
- কাশ্মিরিরা যদি জিহাদে না দাঁড়ায়, তাহলে তাদের সহায়তার জন্য যাওয়া অন্য মুসলিমদের কোন দায়িত্ব নয়, বরং হারাম।
- কাশ্মিরিদের সহায়তা করার প্রথম দায়িত্ব পাকিস্তানের। তারা না করলে পরবর্তীদের জন্য সাহায্যে যাওয়া হারাম।
(লক্ষ্যণীয়, শায়খ কিন্তু কাশ্মিরিরা জিহাদে দাঁড়ালে নাজায়েয হবে বলেছেন। কারণ, ভারতের সৈন্য অনেক বেশি। আবার বলছেন, তারা না দাঁড়ালে বাহিরের মুসলমানরা যেতে পারেবে না। গেলে হারাম হবে। এক দিকে কাশ্মিরিরা দাড়ালে হারাম হবে, অপরদিকে বাইরের মুসলমান গেলেও হারাম হবে। ভিতর থেকেও জিহাদ হারাম, বাহির থেকেও জিহাদ হারাম। মুসলমানকে যাতাকলে পিষে ফেলার স্বপক্ষে এমন ফতোয়া মনে হয় কাফের বিশ্ব কমই পেয়ে থাকে।)
শায়খের এ দু’টো সংশয় দেখে বড়ই অবাক হতে হলো। কিতাবুল জিহাদের প্রথম দিকের কিছু পৃষ্ঠাও যাদের পড়া আছে, তারাও অবাক না হয়ে পারবে না। বুঝলাম না যে, আহকামুস সিয়ারের ব্যাপারে শায়খ কি আসলেই এতোটা অজ্ঞ? না’কি শায়খ উপরের নির্দেশে সত্যকে মিথ্যা বানাচ্ছেন? স্বার্থপরতা বা হুমকি ধমকি কি উম্মাহকে গোমরাহ করার পথে টেনে নিয়েছে শায়খকে? আল্লাহ মা’লূম। আমি প্রথমে ফিকহের কয়েকটি বক্তব্য তুলে ধরছি-
বিভিন্ন কিতাবের বরাতে আল্লামা ইবনু আবিদিন শামী রহ. (১২৫২হি.) বলেন,
الجهاد إذا جاء النفير إنما يصير فرض عين على من يقرب من العدو، فأما من وراءهم ببعد من العدو فهو فرض كفاية عليهم، حتى يسعهم تركه إذا لم يحتج إليهم. فإن احتيج إليهم بأن عجز من كان يقرب من العدو عن المقاومة مع العدو أو لم يعجزوا عنها، لكنهم تكاسلوا ولم يجاهدوا: فإنه يفترض على من يليهم فرض عين كالصلاة والصوم، لا يسعهم تركه ثم وثم إلى أن يفترض على جميع أهل الإسلام شرقا وغربا على هذا التدريج. اهـ
“যদি শত্রুরা মুসলমানদের উপর আক্রমণ চালায়, তাহলে (প্রথমত) জিহাদ ফরজে আইন হয় ঐসব মুসলমানের উপর, যারা শত্রুর সবচেয়ে নিকটবর্তী। আক্রান্ত এলাকা থেকে যারা দূরে অবস্থান করছে, (শত্রু প্রতিহত করতে) যদি তাদের সাহায্যের প্রয়োজন না হয়, তাহলে তাদের উপর জিহাদ (ফরজে আইন নয়; বরং) ফরজে কেফায়া। এ অবস্থায় তাদের জিহাদে শরীক না হওয়ার অবকাশ থাকে। তবে শত্রুর নিকটে যারা রয়েছে, তারা যদি শত্রু প্রতিরোধে অপারগ হয় বা অলসতাবশত জিহাদ না করে, তাহলে তাদের পার্শ্ববর্তীদের উপর জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যাবে; যেমন নামাজ-রোজা ফরজে আইন। তখন তাদের জন্য জিহাদ না করার কোনো অবকাশ থাকে না। এভাবে তার পরের এবং তার পরের মুসলমানদের উপর জিহাদ ফরজে আইন হতে থাকে। পর্যায়ক্রমে মাশরিক-মাগরিব; সমগ্র বিশ্বের সকল মুসলমানের উপর জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যায়।”- রদ্দুল মুহতার: ৪/১২৪আল্লামা ইবনু নুজাইম মিসরী রহ. (৯৭০ হি.) বলেন,
المراد هجومه على بلدة معينة من بلاد المسلمين فيجب على جميع أهل تلك البلدة، وكذا من يقرب منهم إن لم يكن بأهلها كفاية، وكذا من يقرب ممن يقرب إن لم يكن ممن يقرب كفاية أو تكاسلوا وعصوا وهكذا إلى أن يجب على جميع أهل الاسلام شرقا وغربا. اهـ
“এখানে উদ্দেশ্য হল, কোনো নির্দিষ্ট মুসলিম ভূখণ্ডে আক্রমণ। তখন সে এলাকার সকলের উপর জিহাদ ফরজ হয়ে যাবে। যদি তারা যথেষ্ট না হয়, তাহলে তাদের পার্শ্ববর্তীদের উপর একই হুকুম বর্তাবে। যদি তাদের পার্শ্ববর্তী মুসলমানরাও যথেষ্ট না হয় অথবা (আল্লাহর) নাফরমানী করে অলসতা করে (জিহাদ না করে), তাহলে তাদের পার্শ্ববর্তীদের উপর এই হুকুম বর্তাবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে পূর্ব থেকে পশ্চিম; সমগ্র বিশ্বের সকল মুসলমানের উপর জিহাদ ফরজ হয়ে যাবে।”- আলবাহরুর রায়েক ১৩/২৮৯আল্লামা ইবনে হাযম রহ. (৪৫৬হি.) বলেন,
ولا يجوز الجهاد إلا بإذن الأبوين إلا أن ينزل العدو بقوم من المسلمين ففرض على كل من يمكنه إعانتهم: أن يقصدهم مغيثا لهم . اهـ
“পিতা-মাতার অনুমতি ব্যতীত জিহাদ বৈধ হবে না। তবে শত্রুরা কোনো মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ করলে তখন যে ব্যক্তিই তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম, তার উপরই ফরজ তাদের সাহায্যে এগিয়ে যাওয়া।”- আলমুহাল্লা ৫/১২২দাগ দেয়া অংশটুকু লক্ষ করুন-
- আক্রান্তদের ব্যাপারে ইবনে আবিদিন রহ. এর বক্তব্য: আক্রান্তরা ‘যদি শত্রু প্রতিরোধে অপারগ হয় বা অলসতাবশত জিহাদ না করে, তাহলে তাদের পার্শ্ববর্তীদের উপর জিহাদ ফরজে আইন হয়ে যাবে; যেমন নামাজ-রোজা ফরজে আইন’।
- পার্শ্ববর্তীরা সহায়তা না করলে ইবনু নুজাইম রহ. এর বক্তব্য: যদি তাদের পার্শ্ববর্তী মুসলমানরাও যথেষ্ট না হয় অথবা (আল্লাহর) নাফরমানী করে অলসতা করে (জিহাদ না করে), তাহলে তাদের পার্শ্ববর্তীদের উপর এই হুকুম বর্তাবে। এভাবে পর্যায়ক্রমে পূর্ব থেকে পশ্চিম; সমগ্র বিশ্বের সকল মুসলমানের উপর জিহাদ ফরজ হয়ে যাবে’।
পরিষ্কার যে, আক্রান্তরা যদি অলসতা করে জিহাদ না করে তাহলে অন্যদের উপর ফরযে আইন। তদ্রূপ পার্শ্ববর্তীরা যদি অলসতা করে জিহাদ না করে তাহলে অন্যদের উপর জিহাদ ফরযে আইন। আর ইবনে হাযমের বক্তব্য তো আরো স্পষ্ট। যেই সহায়তা করতে সক্ষম তাকেই সহায়তা করতে হবে।
বক্তব্যগুলোর সাথে শায়খের বক্তব্য মিলেয়ে দেখুন। শায়খ কি এসব বক্তব্য দেখেননি? না দেখে থাকলে এ ব্যাপারে কথা বলার আগে অন্তত ফিকহের দুয়েকটি কিতাব পড়ে দেখার দরকার ছিল। আর যদি দেখে থাকেন, তাহলে তো স্পষ্টই ধোঁকাবাজি।
***
Comment