بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে তাঁর খলিফারুপে আমাদেরকে পাঠিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন কেবলই তাঁর ইবাদত করার জন্য। অর্থাৎ, নবী রাসূল ও কিতাবের মাধ্যমে তিনি আমাদের জন্য যে জীবনব্যবস্থা প্রেরণ করেছেন তার যথাযথ অনুসরণের জন্য। তিনি আমাদেরকে পালনীয় বা বর্জনীয় যে দায়িত্বগুলো অর্পণ করেছেন গুরুত্বের বিচারে সেসবের সবগুলো একরকম নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার দেয়া সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ কর্তব্য হল তাঁর প্রতি ইমান আনা, তাঁর একত্বের স্বীকৃতি দেওয়া। এক্ষেত্রে পৃথিবীতে আগত তাঁর সব বান্দারাই একরকম নয়। তাদের কেউ এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি আদায় করে, আর অন্য অনেকে আদায় করে না। বরং, বলা ভাল, বান্দাদের অধিকাংশই তাঁর দেয়া এই দায়িত্বটি পালন করে না। যারা পালন করে তাদের সকলেই আবার আন্তরিকভাবে পালন করে না। আল্লাহ তায়ালা যদিও বান্দাদের মনের খবর জানেন, কে আন্তরিকভাবে ইমান এনেছে আর কে আনেনি এটা যদিও তিনি জানেন কিন্তু বান্দার উপর বাস্তবিক প্রমাণ পূর্ণ করার জন্য তিনি বাহ্যিকভাবেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের ইমানের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন, তিনি দেখতে চান, কারা আন্তরিকভাবে ইমান এনেছে আর কারা শুধু মুখেই ইমানের দাবীদার। পরীক্ষার মাধ্যমগুলো সবগুলো একরকম না, আবার সকলের ক্ষেত্রেও একরকম নয়। কেয়ামতের আগে আল্লাহ তায়ালা নিকৃষ্ট এক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে নিজ বান্দাদের ইমানের পরীক্ষা নিবেন। যে ব্যাপারটিকে আমরা দাজ্জালের ফিতনা নামে জানি। এই পরীক্ষাটি হবে সবচেয়ে কঠিন ও ভয়াবহ। দাজ্জালের ফিতনার ভয়াবহতার কিছু চিত্র চলুন আমরা দেখে আসি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র হাদীস থেকে। এক হাদীসে নবীজি ইরশাদ ফরমান-
পৃথিবীতে প্রেরিত প্রতিজন নবীই নিজ নিজ উম্মাহকে মিথ্যাবাদী ও কানা দাজ্জালের ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। -সুনানে আবু দাউদ ৪৩১৬
আবু উমামা আল বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত অপর এক হাদীসে নবীজি বলেন-
বনু আদমের সৃষ্টির পর দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে ভয়াবহ ও বিপদজনক কোন ফিতনা এ পৃথিবীতে আসবে না। আল্লাহ তায়ালা যত নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন তাঁরা সকলেই নিজ নিজ উম্মাহকে দাজ্জালের ব্যাপার সতর্ক করেছেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০৭৭, [আল্লামা কাশ্মিরী রহ. এ হাদীসের ব্যাপারে বলেছেন وإسناده قوي অর্থাৎ, হাদীসটির সনদ শক্তিশালী। ফয়জুল বারী ৪/৪০৬]
প্রিয় ভাইয়েরা! লক্ষ করুন, দাজ্জালের ফিতনা এমন একটি ফিতনা যার ব্যাপারে সকল নবী রাসূলই নিজ উম্মাহকে সতর্ক করেছেন। হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে, এ পৃথিবীতে যত ফিতনা এসেছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও বিপদজনক ফিতনা হল দাজ্জালের ফিতনা। দাজ্জালের পৃথিবীতে আসার সময় তো হল কেয়ামাতের পূর্বক্ষণে। শেষ নবীর পৃথিবী হতে বিদায় গ্রহণের পর। অন্যান্য নবীর সময়ে তো সে আসবে না। কিন্তু তারপরও এই ফিতনার ভয়াবহতার কারণে তাঁরা নিজ নিজ উম্মাহকে তার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তায়ালাও নবী রাসূলদের এ ব্যাপারে কোনরূপ নিষেধ করেননি যা থেকে এ ফিতনার ভয়বহতা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়। আমরা শেষ নবীর উম্মাহ যারা দাজ্জালের ফিতনার মূল টার্গেট তাদেরকেও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে নিকৃষ্ট কানা দাজ্জালের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। এক হাদীসে এসেছে-
নাওয়াস বিন সামআন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, এক সকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জালের আলোচনা করলেন, তিনি এক্ষেত্রে কখনো আওয়াজ নীচু করলেন আর কখনো আওয়াজ উঁচু করলেন। (তাঁর আলোচনার ধরণে) আমরা মনে করতে লাগলাম, সে মনে হয় খেজুর গাছের সারির কাছে এসে পড়েছে। -সহিহ মুসলিম ২৯৩৭
দেখুন, নবীজি দাজ্জালের ব্যাপারটা কতটা ভয়াবহরূপে তাদের সামনে তুলে ধরেছেন, যার ফলে তাদের কাছে মনে হয়েছে, দাজ্জাল সম্ভবত মদীনার অদূরে অবস্থিত খেজুর গাছের সারির কাছে চলে এসেছে। এছাড়াও এ ফিতনার ভয়াবহতার ব্যাপারে নবীজি হতে আরো হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তো ভাইয়েরা আসুন, আমরা এ ফিতনার ব্যাপারে নবীজির বর্ণিত হাদীসগুলো পাঠ করে তার ভয়াবহতা উপলব্ধি করি, এ ফিতনা হতে বাঁচার চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করি।
আমাদের সালাফ আমাদের মত এ ফিতনার ব্যাপারে অসচেতন ছিলেন না। তাদের সতর্কতার ব্যাপারে পূর্বোক্ত হাদীসটির সাথে চলুন আরো কিছু নমুনা দেখে আসি।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহ তায়ালার কাছে পানাহ চেয়ে নামাযের শেষ বৈঠকে একটি দোয়া পড়তেন। সাহাবায়ে কেরামকেও পড়তে বলতেন। হাদীসটির বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে এই দোয়াটি ঠিক সেভাবে শিক্ষা দিতেন যেমন তিনি তাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমরা বলো, “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জাহান্নামের আযাব হতে আশ্রয় চাই, কবরের আযাব হতে আশ্রয় চাই, দাজ্জালের ফিতনা হতে আশ্রয় চাই এবং আমি আপনার কাছে জীবন মৃত্যুর ফিতনা হতে আশ্রয় চাই”। -সহিহ মুসলিম ৫৯০
অন্য রেওয়ায়েতে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে-
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান, তোমরা সকলেই যখন তাশাহহুদ পড়বে তখন চারটি বিষয় হতে আশ্রয় চাইবে, বলবে, “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের আযাব হতে, কবরের আযাব হতে, জীবন মৃত্যুর ফিতনা হতে ও দাজ্জালের ভয়াবহ ফিতনা হতে। -সহিহ মুসলিম ৫৮৮
প্রথমোক্ত হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন প্রখ্যাত তাবেয়ী তাউস বিন কায়সান রহ.। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক এই দোয়াটির প্রতি অত্যধিক গুরুত্বের কারণে তিনি নামাযে তা পড়া ওয়াজিব মনে করতেন। একবার তাঁর ছেলে নামায পড়ার তিনি তাকে এই দোয়াটি পড়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি নাসূচক উত্তর করলেন। তখন তাউস বললেন, যাও! পুনরায় নামায পড়। -সহিহ মুসলিম ৫৯০ নং হাদীসের পরের অংশ
ইবনু মাজাহ রহ. নিজ সুনানে ৪০৭৭ সংখ্যায় দাজ্জালের ব্যাপারে দীর্ঘ একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি বর্ণনার পর তিনি আব্দুর রহমান আলমুহারেবী রহ. এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন-
এই হাদীসটি মক্তবের শিক্ষককে দেওয়া প্রয়োজন, যেন তিনি হাদীসটি মকতবের শিশুদের শিক্ষা দেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪০৭৭ নং হাদীসের পরের অংশ।
আল্লামা সাফফারিনী রহ. (১১৮৮ হি.) বলেন-
আলিমদের উচিত দাজ্জালের হাদীসসমূহ শিশু, মহিলা ও পুরুষ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। … এ কাজটি সকল আলিমেরই করা উচিত। বিশেষত আমাদের এই যামানায়, যখন বিভিন্ন ফিতনা মাথা উঁচু করেছে, বিপদাপদ বেড়ে গেছে, সুন্নাহ এতটাই মিটে গেছে যে সুন্নাহই হয়ে গেছে বিদআত আর বিদআত হয়ে গেছে অনূসরণীয় শরিয়ত । -লাওয়ামিউল আনওয়ারুল বাহিয়্যাহ ২/১০৬, ১০৭
তো প্রিয় ভাইয়েরা! আসুন, পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাধিক ভয়াবহ ফিতনার ব্যাপারে সতর্ক হই, তার থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি সহ দোয়া করি। বিশেষত, নবীজির বলে দেওয়া দোয়াটি গুরুত্বের সাথে পাঠ করি, এ ফিতনাসহ অন্যান্য সব ফিতনার ব্যাপারে সালাফের মত সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহায় হোন।
ফিতনাতুদ দাজ্জাল সালাফ ও আমরা
আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে তাঁর খলিফারুপে আমাদেরকে পাঠিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন কেবলই তাঁর ইবাদত করার জন্য। অর্থাৎ, নবী রাসূল ও কিতাবের মাধ্যমে তিনি আমাদের জন্য যে জীবনব্যবস্থা প্রেরণ করেছেন তার যথাযথ অনুসরণের জন্য। তিনি আমাদেরকে পালনীয় বা বর্জনীয় যে দায়িত্বগুলো অর্পণ করেছেন গুরুত্বের বিচারে সেসবের সবগুলো একরকম নয়। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার দেয়া সর্বাধিক গুরুত্বপুর্ণ কর্তব্য হল তাঁর প্রতি ইমান আনা, তাঁর একত্বের স্বীকৃতি দেওয়া। এক্ষেত্রে পৃথিবীতে আগত তাঁর সব বান্দারাই একরকম নয়। তাদের কেউ এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বটি আদায় করে, আর অন্য অনেকে আদায় করে না। বরং, বলা ভাল, বান্দাদের অধিকাংশই তাঁর দেয়া এই দায়িত্বটি পালন করে না। যারা পালন করে তাদের সকলেই আবার আন্তরিকভাবে পালন করে না। আল্লাহ তায়ালা যদিও বান্দাদের মনের খবর জানেন, কে আন্তরিকভাবে ইমান এনেছে আর কে আনেনি এটা যদিও তিনি জানেন কিন্তু বান্দার উপর বাস্তবিক প্রমাণ পূর্ণ করার জন্য তিনি বাহ্যিকভাবেও বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মাধ্যমে তাদের ইমানের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন, তিনি দেখতে চান, কারা আন্তরিকভাবে ইমান এনেছে আর কারা শুধু মুখেই ইমানের দাবীদার। পরীক্ষার মাধ্যমগুলো সবগুলো একরকম না, আবার সকলের ক্ষেত্রেও একরকম নয়। কেয়ামতের আগে আল্লাহ তায়ালা নিকৃষ্ট এক ব্যক্তিকে পাঠিয়ে নিজ বান্দাদের ইমানের পরীক্ষা নিবেন। যে ব্যাপারটিকে আমরা দাজ্জালের ফিতনা নামে জানি। এই পরীক্ষাটি হবে সবচেয়ে কঠিন ও ভয়াবহ। দাজ্জালের ফিতনার ভয়াবহতার কিছু চিত্র চলুন আমরা দেখে আসি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র হাদীস থেকে। এক হাদীসে নবীজি ইরশাদ ফরমান-
ما بعث نبي إلا قد أنذر أمته الدجال الأعور الكذاب.
পৃথিবীতে প্রেরিত প্রতিজন নবীই নিজ নিজ উম্মাহকে মিথ্যাবাদী ও কানা দাজ্জালের ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। -সুনানে আবু দাউদ ৪৩১৬
আবু উমামা আল বাহেলী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত অপর এক হাদীসে নবীজি বলেন-
إنه لم تكن فتنة في الأرض منذ ذرأ الله ذرية آدم، أعظم من فتنة الدجال، وإن الله لم يبعث نبيا إلا حذر أمته الدجال.
বনু আদমের সৃষ্টির পর দাজ্জালের ফিতনার চেয়ে ভয়াবহ ও বিপদজনক কোন ফিতনা এ পৃথিবীতে আসবে না। আল্লাহ তায়ালা যত নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন তাঁরা সকলেই নিজ নিজ উম্মাহকে দাজ্জালের ব্যাপার সতর্ক করেছেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ ৪০৭৭, [আল্লামা কাশ্মিরী রহ. এ হাদীসের ব্যাপারে বলেছেন وإسناده قوي অর্থাৎ, হাদীসটির সনদ শক্তিশালী। ফয়জুল বারী ৪/৪০৬]
প্রিয় ভাইয়েরা! লক্ষ করুন, দাজ্জালের ফিতনা এমন একটি ফিতনা যার ব্যাপারে সকল নবী রাসূলই নিজ উম্মাহকে সতর্ক করেছেন। হাদীসে স্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে, এ পৃথিবীতে যত ফিতনা এসেছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ও বিপদজনক ফিতনা হল দাজ্জালের ফিতনা। দাজ্জালের পৃথিবীতে আসার সময় তো হল কেয়ামাতের পূর্বক্ষণে। শেষ নবীর পৃথিবী হতে বিদায় গ্রহণের পর। অন্যান্য নবীর সময়ে তো সে আসবে না। কিন্তু তারপরও এই ফিতনার ভয়াবহতার কারণে তাঁরা নিজ নিজ উম্মাহকে তার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তায়ালাও নবী রাসূলদের এ ব্যাপারে কোনরূপ নিষেধ করেননি যা থেকে এ ফিতনার ভয়বহতা সুস্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়। আমরা শেষ নবীর উম্মাহ যারা দাজ্জালের ফিতনার মূল টার্গেট তাদেরকেও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সে নিকৃষ্ট কানা দাজ্জালের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। এক হাদীসে এসেছে-
عن النواس بن سمعان، قال: ذكر رسول الله صلى الله عليه وسلم الدجال ذات غداة، فخفض فيه ورفع، حتى ظنناه في طائفة النخل.
নাওয়াস বিন সামআন রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি বলেন, এক সকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জালের আলোচনা করলেন, তিনি এক্ষেত্রে কখনো আওয়াজ নীচু করলেন আর কখনো আওয়াজ উঁচু করলেন। (তাঁর আলোচনার ধরণে) আমরা মনে করতে লাগলাম, সে মনে হয় খেজুর গাছের সারির কাছে এসে পড়েছে। -সহিহ মুসলিম ২৯৩৭
দেখুন, নবীজি দাজ্জালের ব্যাপারটা কতটা ভয়াবহরূপে তাদের সামনে তুলে ধরেছেন, যার ফলে তাদের কাছে মনে হয়েছে, দাজ্জাল সম্ভবত মদীনার অদূরে অবস্থিত খেজুর গাছের সারির কাছে চলে এসেছে। এছাড়াও এ ফিতনার ভয়াবহতার ব্যাপারে নবীজি হতে আরো হাদীস বর্ণিত হয়েছে। তো ভাইয়েরা আসুন, আমরা এ ফিতনার ব্যাপারে নবীজির বর্ণিত হাদীসগুলো পাঠ করে তার ভয়াবহতা উপলব্ধি করি, এ ফিতনা হতে বাঁচার চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করি।
আমাদের সালাফ আমাদের মত এ ফিতনার ব্যাপারে অসচেতন ছিলেন না। তাদের সতর্কতার ব্যাপারে পূর্বোক্ত হাদীসটির সাথে চলুন আরো কিছু নমুনা দেখে আসি।
নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাজ্জালের ফিতনা থেকে আল্লাহ তায়ালার কাছে পানাহ চেয়ে নামাযের শেষ বৈঠকে একটি দোয়া পড়তেন। সাহাবায়ে কেরামকেও পড়তে বলতেন। হাদীসটির বর্ণনাকারী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন-
أن رسول الله صلى الله عليه وسلم كان يعلمهم هذا الدعاء كما يعلمهم السورة من القرآن يقول قولوا: اللهم إنا نعوذ بك من عذاب جهنم، وأعوذ بك من عذاب القبر، وأعوذ بك من فتنة المسيح الدجال، وأعوذ بك من فتنة المحيا والممات.
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে এই দোয়াটি ঠিক সেভাবে শিক্ষা দিতেন যেমন তিনি তাদেরকে কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন। তিনি বলতেন, তোমরা বলো, “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জাহান্নামের আযাব হতে আশ্রয় চাই, কবরের আযাব হতে আশ্রয় চাই, দাজ্জালের ফিতনা হতে আশ্রয় চাই এবং আমি আপনার কাছে জীবন মৃত্যুর ফিতনা হতে আশ্রয় চাই”। -সহিহ মুসলিম ৫৯০
অন্য রেওয়ায়েতে আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত আছে-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: " إذا تشهد أحدكم فليستعذ بالله من أربع يقول: اللهم إني أعوذ بك من عذاب جهنم، ومن عذاب القبر، ومن فتنة المحيا والممات، ومن شر فتنة المسيح الدجال ".
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান, তোমরা সকলেই যখন তাশাহহুদ পড়বে তখন চারটি বিষয় হতে আশ্রয় চাইবে, বলবে, “হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই জাহান্নামের আযাব হতে, কবরের আযাব হতে, জীবন মৃত্যুর ফিতনা হতে ও দাজ্জালের ভয়াবহ ফিতনা হতে। -সহিহ মুসলিম ৫৮৮
প্রথমোক্ত হাদীসটি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন প্রখ্যাত তাবেয়ী তাউস বিন কায়সান রহ.। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক এই দোয়াটির প্রতি অত্যধিক গুরুত্বের কারণে তিনি নামাযে তা পড়া ওয়াজিব মনে করতেন। একবার তাঁর ছেলে নামায পড়ার তিনি তাকে এই দোয়াটি পড়ার কথা জিজ্ঞাসা করলে তিনি নাসূচক উত্তর করলেন। তখন তাউস বললেন, যাও! পুনরায় নামায পড়। -সহিহ মুসলিম ৫৯০ নং হাদীসের পরের অংশ
ইবনু মাজাহ রহ. নিজ সুনানে ৪০৭৭ সংখ্যায় দাজ্জালের ব্যাপারে দীর্ঘ একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি বর্ণনার পর তিনি আব্দুর রহমান আলমুহারেবী রহ. এর সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন-
ينبغي أن يدفع هذا الحديث إلى المؤدب، حتى يعلمه الصبيان في الكتاب.
এই হাদীসটি মক্তবের শিক্ষককে দেওয়া প্রয়োজন, যেন তিনি হাদীসটি মকতবের শিশুদের শিক্ষা দেন। -সুনানে ইবনে মাজাহ, ৪০৭৭ নং হাদীসের পরের অংশ।
আল্লামা সাফফারিনী রহ. (১১৮৮ হি.) বলেন-
مما ينبغي لكل عالم أن يبث أحاديث الدجال بين الأولاد والنساء والرجال... فينبغي لكل عالم ولا سيما في زماننا هذا الذي اشرأبت فيه الفتن وكثرت فيه المحن واندرست فيه معالم السنن وصارت السنة فيه كالبدع والبدعة شرعا يتبع.
আলিমদের উচিত দাজ্জালের হাদীসসমূহ শিশু, মহিলা ও পুরুষ সকলের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া। … এ কাজটি সকল আলিমেরই করা উচিত। বিশেষত আমাদের এই যামানায়, যখন বিভিন্ন ফিতনা মাথা উঁচু করেছে, বিপদাপদ বেড়ে গেছে, সুন্নাহ এতটাই মিটে গেছে যে সুন্নাহই হয়ে গেছে বিদআত আর বিদআত হয়ে গেছে অনূসরণীয় শরিয়ত । -লাওয়ামিউল আনওয়ারুল বাহিয়্যাহ ২/১০৬, ১০৭
তো প্রিয় ভাইয়েরা! আসুন, পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাধিক ভয়াবহ ফিতনার ব্যাপারে সতর্ক হই, তার থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি সহ দোয়া করি। বিশেষত, নবীজির বলে দেওয়া দোয়াটি গুরুত্বের সাথে পাঠ করি, এ ফিতনাসহ অন্যান্য সব ফিতনার ব্যাপারে সালাফের মত সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা করি। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহায় হোন।
Comment