নাফিরে আম সম্পর্কে আমরা ইতিপূর্বে আলোচনা করেছি। সেখানে স্পষ্ট হয়েছে যে, নাফিরে আম ইমামুল মুসলিমিনের আহ্বানের নাম নয়, নাফিরে আম হচ্ছে- যখন মুসলমানদের উপর আক্রমণ হয় আর তা প্রতিহত করার জন্য ব্যাপকভাবে মুসলমানদের জিহাদে বের হতে হয়। যেমনটা ইবনু আবিদিন রহ. (১২৫২ হি.) বলেছেন,
وَهَذِهِ الْحَالَةُ تُسَمَّى "النَّفِيرُ الْعَامُّ"
“এ অবস্থাকে ‘নাফিরে আম’ বলা হয়।”- রদ্দুল মুহতার ৪/১২৭
“এ অবস্থাকে ‘নাফিরে আম’ বলা হয়।”- রদ্দুল মুহতার ৪/১২৭
এ অবস্থায় জিহাদ ফরযে আইন। ইমামুল মুসলিমিন আহ্বান করুক বা না করুক, ইমাম থাকুক বা না থাকুক- সর্বাবস্থায় জিহাদ ফরযে আইন। যাদের উপর আক্রমণ হয়েছে প্রথমত তাদের উপর ফরযে আইন। তারা না পারলে বা না করলে তাদের প্রতিবেশীদের উপর। এভাবে এক সময় তা সমগ্র দুনিয়াব্যাপী ফরয হয়ে যায়।
তবে যফর আহমদ উসমানী রহ. ই’লাউস সুনানে যে আলোচনা করেছেন, তা থেকে অনেকে বুঝে নিতে পারেন যে, নাফিরে আম হচ্ছে ইমামুল মুসলিমিনের আহ্বানের নাম। ইমামুল মুসলিমিন আহ্বান না করলে নাফিরে আম হয় না। তাই বিষয়টি আরেকটু পরিষ্কার করে দেয়া ভাল মনে হচ্ছে। এজন্য শরহুস সিয়ার থেকে দু’টি উদ্ধৃতি পেশ করছি ইনশাআল্লাহ-
এক.
ইমাম মুহাম্মাদ রহ. (১৮৯ হি.) বলেন,
وعند النفير العام لا بأس له أن يخرج وإن كره ذلك أبواه. وإذا لم يكن النفير عاما، وأمره الإمام بالخروج فليخبره خبر أبويه، فإن أمره بالخروج مع ذلك، فليطعه. اهـ
“নাফিরে আমের সময় পিতা-মাতা নারাজ হলেও জিহাদে যেতে পারবে। আর নাফিরে আম না হলে যদি ইমাম জিহাদে যেতে আদেশ দেন, তাহলে পিতা-মাতার নারাজির বিয়ষটা তাকে অবগত করবে। এরপরও বের হতে আদেশ দিলে, ইমামের কথাই মানবে।”- শরহুস সিয়ারিল কাবির ১৪৫৫দুই.
সারাখসী রহ. (৪৯০ হি.) বলেন,
إذا وقع النفير عاما كان له أن يجبر الناس على الخروج. اهـ
“নাফিরে আম হলে ইমামুল মুসলিমিন জনগণকে জিহাদে বের হতে বাধ্য করতে পারবেন।”- শরহুস সিয়ারিল কাবির ৫১৭প্রথম বক্তব্যে বলা হচ্ছে, নাফিরে আম না হলে যদি ইমাম জিহাদে যেতে আদেশ দেন …। বুঝা গেল, নাফিরে আম আর ইমামের আহ্বান ভিন্ন ভিন্ন বিষয়। নাফিরে আম ভিন্ন কারণে হয়ে থাকে, ইমামের আহ্বানের উপর নির্ভরশীল নয়। সে ভিন্ন কারণ না পাওয়া গেলেও যদি ইমাম জিহাদে যেতে আদেশ দেন, তাহলেও জিহাদে বের হতে হবে।
দ্বিতীয় বক্তব্যে বলা হচ্ছে, নাফিরে আম হয়ে গেলে ইমাম জনসাধারণকে জিহাদে যেতে বাধ্য করতে পারবেন। বুঝা গেল, নাফিরে আম ভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। সে ভিন্ন কারণে যখন নাফিরে আম হয়ে যাবে, তখন জনগণ জিহাদে বের হতে না চাইলে ইমামুল মুসলিমিন জনগণকে জিহাদে বের হতে বাধ্য করতে পারবেন। কারণ, মুসলমাননা আক্রান্ত হলে জিহাদ ফরযে আইন। আর কোন মুসলমান কোন ফরয আদায় করতে রাজি না হলে ইমামুল মুসলিমিন তাকে তা আদায় করতে বাধ্য করবেন। যেমন, যাকাত দিতে রাজি না হলে কিতাল করে হলেও যাকাত আদায় করবেন।
উপরোক্ত উদ্ধৃতি দু’টি থেকে আশাকরি পরিষ্কার যে, নাফিরে আম ইমামের আহ্বানের নাম নয়। নাফিরে আম একটা অবস্থা ও পরিস্থিতির নাম, যে পরিস্থিতিতে ব্যাপকভাবে জিহাদে অংশগ্রহণের দরকার পরে।
Comment