জিহাদ বিমুখতার আরেক খোঁড়া উজর: জিহাদ হাসান লিগাইরিহি।
এরপর হাসান লিগাইরিহির মনগড়া বিভিন্ন ব্যাখ্যা। যেমন,
- জিহাদ হাসান লিগাইরিহি আর দাওয়াত হাসান লিআইনিহি। কাজেই জিহাদের চেয়ে দাওয়াত উত্তম, বা দাওয়াতের সুযোগ থাকাবস্থায় জিহাদের প্রয়োজন নেই, কিংবা আরেকটু আগে বেড়ে- দাওয়াত ফরয, জিহাদ হারাম। সাধারণত তাবলিগপন্থীদের মাঝে এ ধরণের ধারণা প্রচলিত।
- আবার কেউ কেউ বলেন, হাসান লিগাইরিহি মানে একান্তু জরুরত না হলে জিহাদ করা যাবে না। তবে এ একান্ত জরুরত কখন দেখা দেয় তার কোনো হদ-সীমা নেই। বরং এ শ্রেণীর উদ্দেশ্য জিহাদ সম্পূর্ণ হারাম করে দেয়া।
মোটকথা, ‘জিহাদের তুলনায় দাওয়াত উত্তম’ বা ‘জিহাদের প্রয়োজন নেই’ থেকে শুরু করে ‘জিহাদ হারাম’ পর্যন্ত বিভিন্ন ধারণা হাসান লিগাইরিহির প্রচলিত আছে। এ সংশয়টি সাধারণত কিছু কিছু আলেম ও তালিবুল ইলমের মাঝে দেখা যায়। তাবলিগি হালকায় এর আলোচনা না উঠলে হয়তো সাধারণ মানুষ পর্যন্ত এ সংশয় ছড়াতো না।
একটি প্রশ্ন
হাসান লিগাইরিহির যে ব্যাখ্যা জিহাদের বেলায় করা হচ্ছে, এ ব্যাখ্যা কি শুধু জিহাদের বেলায়ই প্রযোজ্য না’কি অন্যান্য যেসব বিধানকে হাসান লিগাইরিহি বলা হয়েছে সেগুলোর বেলায়ও প্রযোজ্য? যেমন অযু এবং জানাযার নামায। এ দু’টোকে হাসান লিগাইরিহি বলা হয়েছে। তাহলে কি বলা যাবে, এগুলো না করলেও চলবে, বা না করা ভাল, বা একান্তু জরুরতের হালতেই কেবল করা যাবে, কিংবা করা হারাম? যদি না বলা যায় তাহলে জিহাদের বেলায় ব্যতিক্রম কেন?
হাসান লি আইনিহি-গাইরিহির ভিত্তিতে মূল বিধানে কোনো ব্যবধান আসবে না
আইনিহি গাইরিহির সাথে ফরয হওয়া না হওয়া বা উত্তম হওয়া না হওয়ার সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ এমন নয় যে, কোনো জিনিস হাসান লিআইনিহি সাব্যস্ত হলে তাকে ফরয বলা হবে আর গাইরিহি হলে তাকে অনুত্তম বা হারাম বলা হবে। আইনিহি গাইরিহি থেকে কোনো বিধান সাব্যস্ত হবে না। বরং বিষয়টি হলো, যেসব বিষয় আগে থেকেই শরীয়ত ফরয ওয়াজিব করে রেখেছে সেগুলো নিয়ে গবেষণা করে বের করা হয়েছে যে, কোনটি আইনিহি আর কোনটি গাইরিহি। অতএব, কোন বিধান সম্পর্কে আইনিহি গাইরিহির প্রশ্ন তখনই আসবে যখন দলীল প্রমাণ দিয়ে সাব্যস্ত হবে যে, শরীয়ত এ বিষয়টি করতে আদেশ দিয়েছে। শরীয়তের আদেশ আসার পর এবং বিধানটি অবশ্যকরণীয় সাব্যস্ত হবার পর আলোচনা আসবে যে, আদেশটা যে দেয়া হয়েছে তা কি আইনিহি হিসেবে না’কি গাইরিহি হিসেবে। এরপর সেটা আইনিহি সাব্যস্ত হোক আর গাইরিহি-ই সাব্যস্ত হোক তার দ্বারা মূল বিধানে কোন তফাৎ আসবে না। মূল বিধান করণীয় করণীয়-ই থেকে যাবে। আইনিহি গাইরহির কারণে তাতে কোনো তফাৎ আসবে না, তবে বিধানের হিকমত ও রহস্য জানা যাবে।
যেমন ধরুন, অযু। শরীয়ত প্রথমে নামাযের জন্য অযু ফরয করেছে। অযুর আদেশ আসার পর এবং অযু অবশ্যকরণীয় সাব্যস্ত হবার পর উসূলবিদগণ গবেষণা করেছেন যে, অযুর আদেশটা কি আইনিহি হিসেবে না’কি গাইরিহি হিসেবে। দেখা গেল, অযুর আদেশটা গাইরিহি হিসেবে। অর্থাৎ অযুর আদেশটা এসেছে মূলত নামাযের প্রয়োজনে। অন্যথায় অযুর আদেশ দেয়ার দরকার পড়তো না। গাইরিহি হওয়ার অর্থ এটাই। সামনে ইনশাআল্লাহ আমরা এ বিষয়টি একটু স্পষ্ট আলোচনা করবো। অযুর ব্যাপারে যখন বুঝা গেল যে, এটি মূলত হাসান লিগাইরিহি, তখন এর দ্বারা অযুর বিধানে কোনো ব্যবধান আসেনি। অযু ফরয ফরযই রয়ে গেল। তবে অযুর হিকমতটা জানা গেল যে, অযু তথা কয়েকটি অঙ্গ ধৌত ও মাসেহ করা মূলত এমন কোনো কাজ নয় যা ফরয করা দরকার বা এর উপর সওয়াব-গুনাহর হিসাব নিকাশ হওয়া দরকার। তবে নামাযের জন্য যেহেতু পবিত্রতা জরুরী সে হিসেবে অযুর আদেশ দেয়া হয়েছে এবং এর বিনিময়ে সওয়াব নির্ধারণ করা হয়েছে। এর দ্বারা অযুর হিকমত ও রহস্য জানা গেল, অযুর মূল বিধানে কোনো ব্যবধান আসলো না।
অন্য সকল বিধানের বেলায়ও এমনই। জিহাদের বেলায়ও এমন। আগে শরীয়তের আদেশ দ্বারা জিহাদ ফরয সাব্যস্ত হয়েছে। করলে সওয়াব না করলে গুনাহ ও শাস্তির ফায়সালা হয়ে গেছে। এরপর উসূলবিদগণ গবেষণা করেছেন যে, জিহাদ তথা মারামারি, হত্যাকাণ্ড ও ধ্বংসাযজ্ঞ মূলত ফরয করা হয়েছে কুফরের শক্তি চূর্ণ করার জন্য এবং আল্লাহ তাআলার দ্বীন বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। কুফর যদি না থাকতো জিহাদের প্রয়োজন পড়তো না। এ হিসেবে জিহাদ হাসান লিগাইরিহি। তবে আইনিহি হোক গাইরিহি হোক তা ফরয। আইনিহি গাইরিহির গবেষণার দ্বারা জিহাদ ফরয হওয়ার হিকমতটা জানা গেল, কিন্তু জিহাদ ফরয ফরযই রয়ে গেল। গাইরিহি হওয়ার দ্বারা ফরযে কোনো ব্যবধান আসেনি।
***
উপরোক্ত কথাগুলো বুঝার পর বিষয়টি আরেকটু পরিষ্কার করার চেষ্টা করছি ইনশাআল্লাহ।
উসূলবিদগণ আইনিহি গাইরিহির আলোচনাটা এনেছেন ‘আমর’ (الأمر) তথা আদেশের আলোচনায়।
প্রথমে আলোচনা করেছেন যে, ‘আমর’ উজূব (الوجوب)-এর জন্য আসে। অর্থাৎ শরীয়ত যে বিষয়টি করার আদেশ দিয়েছে সেটি করা আবশ্যক। এ আদিষ্ট বিষয়টিকে ‘মা’মূর বিহি’ (المأمور به) বলে। দলীল প্রমাণের আলোকে কোনো কোনো মামূর বিহি ফরয (যেমন নামায, জিহাদ) আর কোনো কোনোটা ওয়াজিব (যেমন, সাদাকায়ে ফিতর)।
দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনা করেছেন যে, মামূর বিহি অবশ্যই ‘হাসান’ (حسن) তথা ভাল, প্রশংসনীয় ও সওয়াবের কাজ হয়ে থাকে। অর্থাৎ শরীয়ত যে কাজটি করার আদেশ দিয়েছে সেটি অবশ্যই ভাল, প্রশংসনীয় এবং সওয়াবের কাজ। কেননা, আল্লাহ তাআলা কোনো মন্দ কাজের আদেশ দেন না। যেমনটা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
إِنَّ اللَّهَ لَا يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ
“আল্লাহ তাআলা মন্দ কাজের আদেশ দেন না।” –আ’রাফ ২৮
“আল্লাহ তাআলা মন্দ কাজের আদেশ দেন না।” –আ’রাফ ২৮
তৃতীয় পর্যায়ে আইনিহি ও গাইরিহির আলোচনা এনেছেন। অর্থাৎ মামূর বিহিটি যে ভাল, প্রশংসনীয় ও সওয়াবের কাজ তা কেন? এ আলোচনাটি মূলত মামূর বিহিটি হাসান কেন হল তার হিকমত ও রহস্য নিয়ে আলোচনা।
যেমন ধরুন নামায। আল্লাহ তাআলা এ জাতীয় আয়াতের মাধ্যমে নামাযের আদেশ দিয়েছেন,
أَقِيمُوا الصَّلَاةَ
“নামায কায়েম কর।’ –আনআম ৭২
“নামায কায়েম কর।’ –আনআম ৭২
উসূলবিদদের তারতিব অনুযায়ী প্রথমে আলোচনা হবে, নামায হলো মামূর বিহি। আল্লাহ তাআলা এর আদেশ দিয়েছেন। অতএব, নামায ফরয।
দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনা আসবে, নামায যেহেতু মামূর বিহি অতএব, তা অবশ্যই হাসান তথা ভাল, প্রশংসনীয় ও সওয়াবের কাজ।
তৃতীয় পর্যায়ে আলোচনা আসবে, নামায যে হাসান তা কেন? অর্থাৎ নামায কেন ভাল, প্রসংশনীয় ও সওয়াবের কাজ। এটি মূলত নামায ভাল কেন তার হিকমত নিয়ে আলোচনা।
জিহাদের বেলায়ও এমনই। উসূলে ফিকহের তারতিব অনুযায়ী প্রথমে আলোচনা আসবে, আল্লাহ তাআলা জিহাদের আদেশ দিয়েছেন বিভিন্ন আয়াতে। অতএব, জিহাদ একটি মামূর বিহি। কাজেই তা ফরয।
দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনা আসবে, যেহেতু জিহাদ মামূর বিহি কাজেই তা অবশ্যই হাসান তথা ভাল, প্রশংসনীয় ও সওয়াবের কাজ।
তৃতীয় পর্যায়ে আলোচনা আসবে, জিহাদ যে হাসান তথা ভাল, প্রশংসনীয় ও সওয়াবের কাজ তার কারণ ও হিকমত কি?
তাহলে লিআইনিহি বা গাইরিহির আলোচনার আগে আরো দু’টি আলোচনা আছে, যে দু’টি আলোচনার দ্বারা দু’টি হুকুম সাব্যস্ত হয়ে গেছে,
এক. জিহাদ ফরয।
দুই. জিহাদ হাসান তথা ভাল, প্রশংসনীয় ও সওয়াবের কাজ।
ইসলামের সকল বিধানের বেলায়ই এ তিন স্তরের আলোচনা প্রযোজ্য। তবে তৃতীয় আলোচনাটি আসলে কোন জরুরী আলোচনা নয়। নামায কেন ভাল, যাকাত কেন ভাল, হজ কেন ভাল, জিহাদ কেন ভাল- এগুলো না জানলেও কোনো সমস্যা নেই। এ হিকমত জানা আবশ্যক নয়। অনেকাংশে এটি একটি আকলি বহস। এতটুকু জানাই যথেষ্ট যে, আল্লাহ তাআলা নামায, রোযা, হজ, যাকাত, জিহাদ ইত্যাদি বিধান ফরয করেছেন। কেন ফরয, কি কারণে ফরয, এর হিকমত কি- এসব আকলি বহসে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি আল্লাহর গোলাম। আল্লাহ আমাকে করতে আদেশ দিয়েছেন, এখন আমাকে করতে হবে। ব্যস্। এতটুকুই যথেষ্ট। এত বেশি কেনো কোনো-তে যাওয়ার দরকার নেই। এ কারণে দেখা গেছে, এ আইনিহি গাইরিহির মারপ্যাঁচে উসূলবিদদের একটা বিশেষ শ্রেণীই কেবল গিয়েছেন, বাকিরা এসব আলোচনা এড়িয়ে গেছেন। আল্লাহ তাআলা সকলের প্রতি রহম করুন।
বুঝার স্বার্থে কয়েকজন উসূলবিদের উদ্ধৃতি দিচ্ছি-
ইমাম নাসাফি রহ. (৭১০হি.) ‘আলমানার’ এ বলেন (পৃ. ৫),
ولا بد للمأمور به من صفة الحسن ضرورة أن الآمر حكيم ... وهو أما أن يكون لعينه ... كالتصديق والصلاة والزكاة، أو لغيره ... كالوضوء والجهاد. اهـ
“অবশ্যই অবশ্যই মা’মূর বিহি হাসান হতে হবে। কেননা, আদেশদাতা হচ্ছেন হাকিম তথা সীমাহীন হিকমতের অধিকারী সত্তা (যিনি মন্দের আদেশ দিতে পারেন না)। তবে তা লিআইনিহি হতে পারে। যেমন (যেসব বিষয়ে ঈমান জরুরী সেগুলোতে) আন্তরিক বিশ্বাস এবং নামায ও যাকাত। কিংবা লিগাইরিহি হতে পারে। যেমন অযু ও জিহাদ।”
এখানে ঈমান, নামায, যাকাত, অযু ও জিহাদ এ পাঁচটি মামূর বিহি তথা ফরয। এগুলোর ব্যাপারে বলা হচ্ছে যে, এগুলো অবশ্যই ভাল, প্রশসংনীয় ও সওয়াবের কাজ। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে ভাল হওয়ার দিক থেকে এগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে: লিআইনিহি, লিগাইরিহি।
ইমাম সারাখসী রহ. (৪৯০হি.) বলেন,
اعلم أن مطلق مقتضى الأمر كون المأمور به حسنا شرعا ... وبيان كونه ثابتا شرعا أن الله تعالى لم يأمر بالفحشاء كما نص عليه في محكم تنزيله والأمر طلب إيجاد المأمور به بأبلغ الجهات ولهذا كان مطلقه موجبا شرعا والقبيح واجب الإعدام شرعا فما هو واجب الإيجاد شرعا تعرف صفة الحسن فيه شرعا.
ثم هو في صفة الحسن نوعان حسن لمعنى في نفسه وحسن لمعنى في غيره. اهـ
ثم هو في صفة الحسن نوعان حسن لمعنى في نفسه وحسن لمعنى في غيره. اهـ
“ভাল করে জেনে রাখো, কোনো বিষয়ে আদেশ দেয়ার দাবি হচ্ছে শরীয়তের দৃষ্টিতে মা’মূর বিহি তথা আদিষ্ট বিষয়টি হাসান। কারণ, আল্লাহ তাআলা কোনো মন্দ কাজের আদেশ দেন না, যেমনটা আল্লাহ তাআলা কুরআনে কারীমে সুস্পষ্ট জানিয়েছেন। … তবে এক্ষেত্রে তা দু’ভাগে বিভক্ত: হাসান লিআইনিহি ও হাসান লিগাইরিহি।” –উসূলে সারাখসী ১/৬০
এরপর হাসান লিআইনিহির উদাহরণ দেন ঈমান, নামায, রোযা ও যাকাত দিয়ে। হাসান লিআইনিহি হাসান লিগাইরিহি উভয়ে আবার বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত। সে আলোচনায় আমরা যাচ্ছি না।
তারপর হাসান লিগাইরিহির উদাহরণ দেন জুমআর নামাযে যাওয়ার জন্য চলা, অযু, জানাযার নামায, জিহাদ ও হুদুদ দিয়ে। কিতাল ও হুদুদ প্রসঙ্গে বলেন,
القتال مع المشركين حسن لمعنى في غيره وهو كفر الكافر أو قصده إلى محاربة المسلمين وذلك مضاف إلى اختياره
وكذلك القتال مع أهل البغي حسن لدفع فتنتهم ومحاربتهم عن أهل العدل
وكذا إقامة الحدود حسن لمعنى الزجر عن المعاصي وتلك المعاصي تضاف إلى كسب واختيار ممن تقام عليه ولكن لا يتم إلا بحصول ما لأجله كان حسنا.
وحكم هذا النوع أنه يسقط بعد الوجوب بالأداء وبانعدام المعنى الذي لأجله كان يجب حتى إذا تحقق الانزجار عن ارتكاب المعاصي أو تصور إسلام الخلق عن آخرهم لا تبقى فرضيته إلا أنه خلاف للخبر لأنه لا يتحقق انعدام هذا المعنى في الظاهر. اهـ
وكذلك القتال مع أهل البغي حسن لدفع فتنتهم ومحاربتهم عن أهل العدل
وكذا إقامة الحدود حسن لمعنى الزجر عن المعاصي وتلك المعاصي تضاف إلى كسب واختيار ممن تقام عليه ولكن لا يتم إلا بحصول ما لأجله كان حسنا.
وحكم هذا النوع أنه يسقط بعد الوجوب بالأداء وبانعدام المعنى الذي لأجله كان يجب حتى إذا تحقق الانزجار عن ارتكاب المعاصي أو تصور إسلام الخلق عن آخرهم لا تبقى فرضيته إلا أنه خلاف للخبر لأنه لا يتحقق انعدام هذا المعنى في الظاهر. اهـ
“মুশরিকদের বিরুদ্ধে কিতাল হাসান লিগাইরিহি তথা ভিন্ন একটি বিষয়ের কারণে তা হাসান। আর তা হল কাফেরের কুফরি কিংবা মুসলমানদের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধের প্রবণতা। … তদ্রূপ বাগিদের বিরুদ্ধে কিতাল করা এ দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান যে, এর দ্বারা আহলে আদলের উপর থেকে বাগিদের পক্ষ থেকে নিক্ষিপ্ত ফিতনা ও মারামারি প্রতিহত করা যাচ্ছে।
তদ্রূপ হুদুদ কায়েম করা এ দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান যে, এর দ্বারা গুনাহ থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে। …
এ ধরণের মা’মূর বিহির বিধান হল (দুই জিনিসের কোনো একটার দ্বারা এর যিম্মাদারি আদায় হবে),
(এক.) ফরয হওয়ার পর সম্পাদন করে নিলে এর যিম্মাদারি আদায় হয়ে যাবে।
(দুই.) যে কারণে তা ফরয হয়েছিল সে কারণটি না থাকলেও এর দায়িত্ব রহিত হয়ে যাবে। অতএব, যদি কেউই গুনাহে লিপ্ত না হয় কিংবা জগতবাসী সকলেই যদি মুসলমান হয়ে যায়, তাহলে (হুদুদ ও জিহাদ)-এর ফরয দায়িত্ব আর থাকবে না। তবে হাদিসের ভাষ্যমতে এমনটি হবে না। কেননা, যে কারণে তা ফরয সে কারণটি স্বাভাবিক দূরীভূত হয়ে যাবে না।” –উসূলে সারাখসী ১/৬২
অর্থাৎ দারুল ইসলামের অধিবাসীরা কখনও কখনও হলেও হদ-জাতীয় কোনো না কোনো অপরাধ করবেই স্বাভাবিক। যার ফলে তাদের উপর হদ কায়েম করতে হবে। আর কাফেররাও সকলেই যে মুসলমান বা যিম্মা হয়ে যাবে তা নয়। ফলে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেই যেতে হবে কিয়ামত অবধি। হাদিসে এমনটাই পরিষ্কার এসেছে।
আব্দুল আজিজ বুখারি রহ. (৭৩০হি.) বিষয়টি পরিষ্কার করে বলেন,
لأنه روي عن النبي - صلى الله عليه وسلم - أنه قال «لن يبرح هذا الدين قائما تقاتل عليه عصابة من المسلمين حتى تقوم الساعة» وعن عمران بن حصين - رضي الله عنه - قال قال رسول الله - صلى الله تعالى عليه وسلم - «لا تزال طائفة من أمتي يقاتلون على الحق ظاهرين على من ناوأهم حتى يقاتل آخرهم المسيح الدجال» . اهـ
“কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত যে, তিনি ইরশাদ করেন, ‘এ দ্বীন সর্বদাই প্রতিষ্ঠিত থাকবে। (কারণ,) কেয়ামাত সংঘটিত হওয়া পর্যন্ত মুসলমানদের একটা দল বিজয়ী বেশে (দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে) কিতাল করতে থাকবে’।
হযরত ইমরান ইবনে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আমার উম্মতের একটা দল কেয়ামত পর্যন্ত কিতাল করতে থাকবে। তারা থাকবে হকের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাদের বিরোধীদের উপর হবে প্রতাপশালী। (এ ধারাবাহিকতা চলতে চলতে) তাদের সর্বশেষ দলটি মাসিহে দাজ্জালের সাথে কিতাল করবে’।” –কাশফুল আসরার ১/১৯০
প্রথম হাদিসটি ইমাম মুসলিম রহ. রিওয়ায়াত করেছেন (সহীহ মুসলিম: কিতাবুল ইমারা, হাদিস নং ৫০৬২)।
দ্বিতীয় হাদিসটি ইমাম আবু দাউদ রহ. রিওয়ায়াত করেছেন (সুনানে আবু দাউদ, বাবু: ফি দাওয়ামিল জিহাদ, হাদিস নং ২৪৮৬)।
সারকথা
আইনিহি-গাইরিহির আলোচনা দ্বারা ফরয হয়ে থাকা বিধানগুলোর হিকমত জানা যাবে, মূল ফরযে কোন ভিন্নতা আসবে না। নামায লিআইনিহি হয়ে যেমন ফরয; জুমআর নামাযের জন্য গমন, জানাযার নামায, অযু ও জিহাদ গাইরিহি হয়ে তেমনই ফরয। ফরযে কোনো তারতম্য নেই। অধিকন্তু এ আলোচনা আকলি তথা আকল প্রসূত। এর পিছে না পড়াই ভাল।
পাশাপাশি এও জানা গেল, কুফরের যে শক্তি চূর্ণ করার জন্য জিহাদ ফরয করা হয়েছে তা কেয়ামত অবধি বহাল থাকবে বিধায় জিহাদের ফরযও কেয়ামত অবধি বহাল থাকবে। ওয়াল্লাহু আ’লাম।
***
Comment