Announcement

Collapse
No announcement yet.

ফরযে কিফায়ার হাকিকত ও স্বরূপ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ফরযে কিফায়ার হাকিকত ও স্বরূপ

    জিহাদ ফরযে কিফায়া বলতে কেউ কেউ মনে করেন, কিছু মানুষের উপর ফরয, সকলের উপর ফরয নয়। এরপর এর ফলাফল বের করেন, যে কিছু সংখ্যকের উপর ফরয আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই। তাই আমার উপর ফরয নয়।

    আর কেউ কেউ হয়তো আরেকটু উদারতা দেখান যে, কিছু মানুষ তো করছে। আমি না করলেও চলবে। আলেম হওয়া যেমন সকলের উপর ফরয নয়, জিহাদ করারও সকলের উপর ফরয নয়।


    এখানে উভয় শ্রেণী বিভ্রান্তির শিকার।


    প্রথম শ্রেণীর বিভ্রান্তি,
    কারণ: ফরযে কিফায়ার অর্থ এই নয় যে, কিছু সংখ্যকের উপর ফরয, বাকিদের উপর ফরয নয়। বরং ফরযে কিফায়ার অর্থ সকলের উপর ফরয, তবে সকলের পক্ষ থেকে কিছু সংখ্যক মিলে যথাযথভাবে আঞ্জাম দিয়ে দিলে বাকিদের দায়িত্ব রহিত হয়ে যাবে, তাদের উপর আর ফরয থাকবে না। আর ফরযটি আদায় না হলে সক্ষম সকলে গুনাহগার হবে, কেউ গুনাহ থেকে রেহাই পাবে না।

    ফরযে আইনের সাথে এখানেই পার্থক্য। ফরযে আইনে একজনের আদায়ের দ্বারা আরেকজনের দায়িত্ব রহিত হবে না। প্রত্যেককেই নিজ নিজ দায়িত্ব আলাদা আলাদা আঞ্জাম দিতে হবে। যেমন, নামায। প্রত্যেকের নামায প্রত্যেককে আদায় করতে হবে। একজনের আদায়ের দ্বারা আরেকজনের দায়িত্ব রহিত হবে না।

    মোটকথা, ফরযে কিফায়া শুরুতে ফরযে আইনের মতোই সকলের উপর ফরয। তবে এখানে তা অন্যের মাধ্যমে আদায় করানোর সুযোগ আছে। কিছু লোক মিলে আদায় করলে বাকিদের দায়িত্ব রহিত হয়ে যাবে। আর কেউই আদায় না করলে সকলে ফরয তরকের গুনাহগার হবে।

    যেমন, মৃত ব্যক্তির কাফন দাফন। কোনো এলাকায় কোনো মুসলমান মারা গেলে উক্ত এলাকার বাকি মুসলমানদের দায়িত্ব তার কাফন দাফন করা। এটা সকলের দায়িত্ব। তবে কিছু সংখ্যক লোক স্বেচ্ছায় তা করে ফেললে বাকিরা ফরয থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে। কেউ করতে না চাইলে হয়তো নিজে করতে হবে, নয়তো বলে কয়ে অন্যকে দিয়ে করাতে হবে। এটা সকলের দায়িত্ব। যদি কেউই না করে আর মুসলমানের লাশ এভাবে পড়ে থাকে তাহলে সকলে গুনাহগার হবে।


    জিহাদ ফরযে কিফায়ার অর্থ এটাই। হয় নিজে আদায় করতে হবে, নয়তো অন্যকে উৎসাহ দিয়ে আদায় করাতে হবে। যদি কেউই আদায় না করে আর এভাবেই বছর চলে যায়, তাহলে সকলে ফরয তরকের গুনাহগার হবে। এমনকি যারা মা’জূর তারাও মাফ পাবে না। কারণ, তাদের দায়িত্ব ছিল সক্ষমদেরকে বলে কয়ে উৎসাহ দিয়ে জিহাদে পাঠানো। তারা যখন তা করেনি, তারাও গুনাহগার হবে। সক্ষমরা জিহাদ না করায় এবং অন্যকে উৎসাহিত না করায়, আর মা’জূররা সক্ষমদের উৎসাহিত না করায় গুনাহগার হবে।


    এ গেল প্রথম শ্রেণীর কথা।
    দ্বিতীয় শ্রেণীর বিভ্রান্তি,
    কারণ: কিছু লোক করলেই বাকিরা দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে তা নয়। দায়িত্ব মুক্তির জন্য ফরযটি আদায় হওয়া শর্ত। কিছু লোকে করলো কিন্তু ফরযটি আদায় হলো না, তাহলে বাকিরা মাফ পাবে না। মাফ পাওয়ার জন্য ফরযটি আদায় হতে হবে।


    যেমন, এক এলাকায় একশ লোক মারা গেল। মাত্র দু’জন লোক গিয়ে কয়েক জনের দাফন কাফন করে চলে আসলো। কেউ কি বলবে যে, দু’জনের করার দ্বারা বাকিদের দায়িত্ব আদায় হয়ে গেছে? না! কেউ বলবে না। একশ জনের কাফন দাফন যতক্ষণ সম্পন্ন না হবে ততক্ষণ কেউই মুক্তি পাবে না। হ্যাঁ, ১০/২০জনে মিলে যদি সকলের কাফন দাফন করে ফেলে তাহলে বাকিরা মাফ পেয়ে যাবে।

    সারকথা দাঁড়ালো:

    - ফরযে কিফায়া অর্থ সকলের উপর ফরয। তবে কিছু সংখ্যকে মিলে ফরযটি আদায় করে ফেললে বাকিরা দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে।

    - শুধু কিছু লোক নেমে পড়লেই সকলের দায়িত্ব আদায় হয়ে যাবে না। দায়িত্ব আদায় হওয়ার জন্য ফরযটি আদায় হওয়া শর্ত। ফরয আদায় না হলে কেউই মুক্তি পাবে না। অতএব, খোঁজ খবর নিতে হবে এবং তৎপর থাকতে হবে যে, ফরযটি যথাযথ আদায় হচ্ছে কি’না।


    বিষয়টি বুঝার জন্য কয়েকজন আহলে ইলমের উদ্ধৃতি দিচ্ছি,

    কাসানি রহ. (৫৮৭হি.) বলেন,
    فإن لم يكن النفير عاما فهو فرض كفاية ، ومعناه : أن يفترض على جميع من هو من أهل الجهاد ، لكن إذا قام به البعض سقط عن الباقين. اهـ
    “নাফিরে আম না হলে জিহাদ ফরযে কিফায়া। এর অর্থ, জিহাদে সক্ষম সকলের উপর ফরয। তবে কিছু সংখ্যক আদায় করে ফেললে বাকিরা দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে।” –বাদায়িউস সানায়ি ১৫/২৭০

    মারগিনানি রহ. (৫৯৩হি.) বলেন,
    " الجهاد فرض على الكفاية إذا قام به فريق من الناس سقط عن الباقين " ... كصلاة الجنازة ورد السلام " فإن لم يقم به أحد أثم جميع الناس بتركه " لأن الوجوب على الكل. اهـ
    “জিহাদ ফরযে কিফায়া। একদল মিলে আদায় করে ফেললে বাকিদের থেকে রহিত হয়ে যাবে। … যেমনটা জানাযার নামায ও সালামের উত্তর দেয়ার বিধান। যদি কেউই তা আদায় না করে তাহলে তরক করার কারণে সকলেই গুনাহগার হবে। কেননা, ফরয মূলত সকলের উপরই।” –হিদায়া ২/৩৭৮

    ইবনে কুদামা রহ. (৬২০হি.) বলেন,
    معنى فرض الكفاية، الذي إن لم يقم به من يكفي، أثم الناس كلهم، وإن قام به من يكفي، سقط عن سائر الناس. فالخطاب في ابتدائه يتناول الجميع، كفرض الأعيان، ثم يختلفان في أن فرض الكفاية يسقط بفعل بعض الناس له، وفرض الأعيان لا يسقط عن أحد بفعل غيره. اهـ
    “ফরযে কিফায়ার অর্থ- প্রয়োজন পরিমাণ লোকে যদি তা আদায় না করে তাহলে সকলে গুনাহগার হবে, আর প্রয়োজন পরিমাণ লোকে আদায় করে ফেলল বাকিদের থেকে রহিত হয়ে যাবে। অতএব, শুরুতে ফরযে আইনের মতো দায়িত্ব সকলেরই। ব্যবধান এখানে যে, ফরযে কিফায়া কিছু সংখ্যক লোকের আদায় করার দ্বারা রহিত হয়ে যাবে, আর ফরযে আইন অন্যের করার দ্বারা রহিত হবে না।” –মুগনি ৯/১৯৬


    খতিব শারবিনি রহ. (৯৭৭হি.) বলেন,
    ويأثم بتعطيل فرض الكفاية كل من علم بتعطيله وقدر على القيام به وإن بعد عن المحل، وكذا يأثم قريب منه لم يعلم به لتقصيره في البحث عنه، ويختلف هذا بكبر البلد وصغره. اهـ
    “ফরযে কেফায়া আদায় না হলে প্রত্যেক এমন ব্যক্তি গুনাহগার হবে, যে জানে যে, তা আদায় হয়নি এবং সে তা আদায়ে সক্ষম; যদিও (ঘটনাস্থল থেকে) তার অবস্থান দূরবর্তী হয়। আর নিকটস্থ ব্যক্তি যদি না জেনে থাকে, তাহলে যথাযথ অনুসন্ধান না করার কারণে সেও গুনাহগার হবে। এলাকা ছোট-বড় হওয়ার ভিত্তিতে গুনাহতে ব্যবধান হবে।” –মুগনিল মুহতাজ ৬/১৬


    বর্তমান দুনিয়ার মুসলমানদের অজানা নয় যে, তার দেশে ইসলামি শাসন বিদ্যমান নেই এবং বিশ্বের কোনো না কোনো প্রান্তে তার মুসলিম ভাই-বোনেরা নির্যাতনের শিকার। কাজেই কেউ মাফ পাবে না। যদি কেউ না জেনে থাকে তাহলে শত শত বৎসর যাবৎ এবং যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ কুফর ও নির্যাতনের সংবাদ না জানার কারণে সেও গুনাহগার হবে। ইসলাম ও মুসলিমদের ব্যাপারে এমন অবহেলা আর উদাসীনতায় যে বিভোর সে কিভাবে মাফ পাবে? অধিকন্তু আমাদের আলোচনা ফরযে কিফায়া নিয়ে, ফরযে আইন তো আরো ভয়াবহ।


    ফরযে কিফায়া নিয়ে শায়খ আব্দুল কারীম যায়দানের সুন্দর বক্তব্য আছে। সেটার একাংশ তুলে ধরা সমীচিন মনে করছি। তিনি বলেন,
    وإنما يأثم الجميع إذا لم يحصل الواجب الكفائي لأنه مطلوب من مجموع الأمة، فالقادر على الفعل عليه أن يفعله، والعاجز عنه عليه أن يحث القادر ويحمله على فعله. فإذا لم يحصل الواجب كان ذلك تقصيرا من الجميع: من القادر لأنه لم يفعله، ومن العاجز لأنه لم يحمل القادر على فعله ويحثه عليه. اهـ
    “ফরযে কিফায়া আদায় না হলে সকলেই গুনাহগার হওয়ার কারণ হচ্ছে, তা সমষ্টিগতভাবে উম্মাহ থেকে আদায় হওয়া উদ্দেশ্য। সক্ষম ব্যক্তির জন্য আবশ্যক তা আদায় করা আর অক্ষমের দায়িত্ব হলো তাকে উৎসাহ দেয়া ও উদ্বুদ্ধ করা। ফরযটি যখন আদায় হয়নি, তখন সকলেরই অবহেলা হয়েছে। সক্ষম ব্যক্তি না করার কারণে আর অক্ষম ব্যক্তি সক্ষমকে উৎসাহ না দেয়া ও উদ্বুদ্ধ না করার কারণে।” –আলওয়াজিয ফি উসূলিল ফিকহ ৩৬


    জিহাদ প্রত্যেক বছর ফরয। ফরযে কিফায়া। কোনো বছর জিহাদ না হলে অবহেলাকারী সক্ষম অক্ষম সকলে গুনাহগার হবে। তাহলে ফরযে আইনের কি হবে তা বলাই বাহুল্য।
    ***


  • #2
    জাযাকাল্লাহ প্রিয় ভাই! খুব উত্তম আলোচনা। আল্লাহপাক আমাদের কবুল করুন এবং সব ভ্রান্তি থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

    সক্ষম ব্যক্তির জন্য আবশ্যক তা আদায় করা আর অক্ষমের দায়িত্ব হলে তাকে উৎসাহ দেয়া ও উদ্বুদ্ধ করা।
    হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।

    Comment


    • #3
      আল্লাহ তায়ালা আপনার ইলম ও জিহাদকে কবুল করুন
      আমীন।
      إن الله معنا

      Comment


      • #4
        সম্ভাবত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেবের মতামত হল,জিহাদ সবসময়ের জন্য ফরজে আঈন ৷ তিনার মতে কোন সময় জিহাদ ফরজে কেফায় হয় না ৷ এই মতামতটা অত্যন্ত সুন্দর মতামত ৷
        "জিহাদ ঈমানের একটি অংশ ৷"-ইমাম বোখারী রহিমাহুল্লাহ

        Comment


        • #5
          জাযাকাল্লাহ ভাই! বিষয়টিকে অনেক সুন্দর করে দলীলের মাধ্যমে বুঝিয়ে দিয়েছেন।আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা আপনার ইলমে বারাকাহ দান করুন।

          Comment


          • #6
            Originally posted by আলী ইবনুল মাদীনী View Post
            সম্ভাবত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেবের মতামত হল,জিহাদ সবসময়ের জন্য ফরজে আঈন ৷ তিনার মতে কোন সময় জিহাদ ফরজে কেফায় হয় না ৷ এই মতামতটা অত্যন্ত সুন্দর মতামত ৷

            সম্ভবত সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যেবের মতামত হল, জিহাদ সবসময়ের জন্য ফরজে আইন ৷ তিনার মতে কোন সময় জিহাদ ফরজে কেফায়া হয়না ৷ এই মতামতটা অত্যন্ত সুন্দর মতামত ৷
            হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।

            Comment


            • #7
              আল্লাহ সকলকে বুঝার এবং আমল করার তৌফিক দান করুন ৷ আমিন
              গোপনে আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে বেঁচে থাকার মধ্যেই রয়েছে প্রকৃত সফলতা ৷

              Comment


              • #8
                জাযাকাল্লাহ।গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় তুলে ধরেছেন।

                আরেকটা বিষয়, ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটা একটা গালি হিসাবে প্রচলিত করা হয়েছে। হঠাৎ করেই এক সাথে সারা বাংলাদেশে এই গালিটা কিভাবে সবার মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ল!! আমি দেখেছি, মোটামোটি এক সময়ই এটা সর্বত্র চালু হয়েছে।

                নিশ্চয়ই প্রথমে এ ধরণের কোন নাটক, সিনেমা বা শর্টক্লিপ বানানো হয়েছে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে। আর রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে সারা বাংলাদেশে ব্যাপক ঘৃণা ছড়ানো হয়েছে, এমনকি আজ কিছু কিছু ভালো আলেমও না বুঝে বলে ফেলেছে, তারা তো খুব খারাপ, তারা আমাদের দেশেও সমস্যা সৃষ্টি করছে... পরে বুঝানোর পরে বুঝেছে।

                এজন্য এই শব্দটা বলার ব্যাপারে এবং রোঙ্গিাদের ব্যাপারে ধারাবাহিক অপপ্রচারের ব্যাপারে একটা আর্টিকেল ও একটা অডিও/ভিডিও বানালে ভালো হত। আল্লাহ আমাদের ভাইদের সকল খেদমতগুলো কবুল করে নিন।

                Comment


                • #9
                  আল্লাহ পাক মুহতারাম ভাইয়ের মেহনত কবুল করুন। খুবই চমৎকার ইলমী আলোচনা। নতুন কিছু গুরুত্বপূর্ণ তাহক্বীক্ব পেলাম।
                  "সিদ্ধান্ত গ্রহণে একবার কাপুরুষতা ময়দানে পঞ্চাশবার কাপুরুষতার চেয়েও মারাত্মক" (মাকদিসী)

                  Comment

                  Working...
                  X