ব্যথিত হৃদয়ের আহাজারি- শুনার কেউ আছে কি?
অনেক দিন ধরেই কথাটা মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল। বলার সুযোগ আসছিল না। আজ মনে হলো, বলে দিই। যদি কেউ শুনে তো কাজে আসবে। অন্তত আমার দায়িত্ব কিছুটা তো আদায় হলো।
আমরা জানি, আল্লাহ তাআলার শরীয়ত গ্রহণ করে নেয়া এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে শরীয়ত অনুযায়ী বিচার ফায়াসালা করা ও করানো ঈমানের অঙ্গ।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا
“কিন্তু না (হে নবী!), আপনার রবের কসম, তারা ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মাঝে সৃষ্ট বিবাদের বিষয়ে আপনাকে বিচারক নির্ধারণ করবে, অতঃপর আপনি যে ফায়সালা দেন সে ব্যাপারে নিজেদের অন্তরে কোন দ্বিধা-সংকোচ অনুভব না করবে এবং পরিপূর্ণরূপে শিরধার্য করে নিবে।” –নিসা ৬৫আল্লাহ তাআলার শরীয়ত থেকে মুখ ফিরানো মুনাফিকের সিফাত।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا • وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ الله وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنْكَ صُدُودًا •
“(হে নবী) আপনি কি তাদের দেখেননি, যারা দাবী করে, যা আপনার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে, তার উপর তারা ঈমান এনেছে; অথচ তারা তাগুতের কাছে বিচার প্রার্থনার ইচ্ছা পোষণ করে, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ ছিল, তারা যেন তাকে বর্জন করে। বস্তুত শয়তান ইচ্ছা করছে তাদেরকে পরিপূর্ণ পথভ্রষ্ট করে ফেলতে। যখন ওদের বলা হয়, ‘আস সে বিধানের দিকে যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং আস রাসূলের দিকে’, তখন আপনি মুনাফিকদের দেখবেন, ওরা আপনার থেকে সম্পূর্ণ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।” –নিসা ৬০-৬১মুমিনের জীবনের প্রতিটি বিষয় কুরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী ফায়াসালা করা অত্যাবশ্যক।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى الله وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِالله وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا
“যদি কোন বিষয়ে তোমাদের মতবিরোধ দেখা দেয়, তাহলে তা আল্লাহ ও রাসূলের কাছে নিয়ে যাও- যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি ঈমান রেখে থাক। এটাই উৎকৃষ্টতর পন্থা এবং এর পরিণতিও সর্বাপেক্ষা শুভ।” –নিসা ৫৯আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে দিয়েছেন, কোনো বিষয়ে যেন আমরা শরীয়তের বিধান ছেড়ে কাফেরদের বানানো আইন-কানুনের দ্বারস্থ না হয়ে পড়ি।
ইরশাদ হচ্ছে,
وَأَنِ احْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَنْ يَفْتِنُوكَ عَنْ بَعْضِ مَا أَنْزَلَ اللَّهُ إِلَيْكَ
“আপনার উপর আল্লাহ তাআলা যে আইন কানুন নাযিল করেছেন আপনি তাদের মাঝে তা দিয়ে বিচার ফায়াসালা করুন এবং কখনো তাদের প্রবৃত্তির চাহিদার অনুসরণ করবেন না। সতর্ক থাকবেন, যে আইন কানুন আল্লাহ তাআলা আপনার উপর নাযিল করেছেন, তার কোনো কিছু থেকে যেন তারা আপনাকে ফিরিয়ে ফেলতে না পারে।” -মায়েদা ৪৯কিন্তু কালের পরিক্রমায় আমরা এমন এক সমাজে বাস করছি যেখানে আল্লাহ তাআলার শরীয়ত প্রত্যাখ্যিত। এর বিপরীতে চলছে মানবরচিত কুফরি আইন কানুন। কিন্তু মুসলমান তো এ কুফরি আইন কানুনের দ্বারস্থ হতে পারে না। এসব কুফরি আইন দিয়ে বিচার করাতে যাওয়া একজন মুমিনের জন্য হারাম। এমনকি ক্ষেত্রে বিশেষে কুফরও।
তাহলে মুমিনরা এখন কি করবে? তাদের সমস্যাবলীর সমাধান কোন্ আইনে করাবে?
এ প্রশ্নটি প্রতিটি মুমিনকে পেরেশান করে রাখার কথা ছিল। বিশেষত সমাজের রাহবার উলামায়ে কেরামকে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এ নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই। যেন কুফরি কানুনই আমাদের জীবন বিধান। আল্লাহ তাআলার শরীয়ত যেন আমাদের দরকার নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজিঊন!
আমাদের আইম্মায়ে কেরাম পরিষ্কার বলে গেছেন, এ ধরনের কুফরি বিধান দিয়ে বিচার করাতে যাওয়া ঈমান পরিপন্থী।
ইবনে কাসির রহ. (৭৭৪হি.) এর ফতোয়া তো আমাদের সকলের জানা-
فمن ترك الشرع المحكم المنزل على محمد بن عبد الله خاتم الأنبياء وتحاكم إلى غيره من الشرائع المنسوخة كفر، فكيف بمن تحاكم إلى الياسا وقدمها عليه؟ من فعل ذلك كفر بإجماع المسلمين. اهـ
“যে ব্যক্তি সর্বশেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অবতীর্ণ সুদৃঢ় শরীয়ত ছেড়ে অন্য কোনো রহিত শরীয়তের নিকট বিচারপ্রার্থী হবে সে কাফের হয়ে যাবে; তাহলে ঐ ব্যক্তির কি বিধান হতে পারে যে ইয়াসিকের নিকট বিচারপ্রার্থী হয় এবং তাকে শরীয়তের উপর অগ্রগণ রাখে? যে ব্যক্তি এমনটি করবে সে সকল মুসলমানের ঐক্যমতে কাফের হয়ে যাবে।” –আলবিদায়া ওয়াননিহায়া ১৩/১৩৯অতএব, মুসলমানদের ফরয দায়িত্ব- আপন শরীয়ত অনুযায়ী বিচারাচারের ব্যবস্থা করা। আইম্মায়ে কেরাম এ জন্য নিম্নোক্ত দু’টি ব্যবস্থাপনা বাতলিয়েছেন:
প্রথমত: কাফের-মুরতাদদের থেকে বলে কয়ে হলেও মুসলমানরা নিজেদের জন্য পারস্পরিক সম্মতিতে একজন মুসলিম প্রশাসক নিয়োগ দেবে। তিনি মুসলমানদের বিচারাচারের জন্য কাযি নিযুক্ত করবেন, কিংবা নিজেই শরীয়ত অনুযায়ী বিচারাচার করে দেবেন।
দ্বিতীয়ত: প্রশাসক নিয়োগ সম্ভব না হলে মুসলমানরা দখলদার কাফের-মুরতাদদের থেকে নিজেদের বিচারাচারের জন্য নিজেদের মধ্য থেকে একজন কাযি নিয়োগের অনুমতি নেবে। এরপর তাদের পারস্পরিক সম্মতিতে একজনকে কাযি নিযুক্ত করবে। কাযি সাহেব তাদের মাঝে শরীয়ত অনুযায়ী বিচার-ফায়সালা করে দেবেন।
ইবনুল হুমাম রহ. (৮৫২হি.) বলেন,
وإذا لم يكن سلطان ولا من يجوز التقلد منه كما هو في بعض بلاد المسلمين غلب عليهم الكفار كقرطبة في بلاد المغرب الآن وبلنسية وبلاد الحبشة وأقروا المسلمين عندهم على مال يؤخذ منهم يجب عليهم أن يتفقوا على واحد منهم يجعلونه واليا فيولى قاضيا أو يكون هو الذي يقضي بينهم وكذا ينصبوا لهم إماما يصلي بهم الجمعة. اهـ
“যদি সুলতানও না থাকে এবং এমন কেউও না থাকে যার পক্ষ থেকে কাযি নিযুক্তি বৈধ- যেমনটা বর্তমানে কিছু মুসলিম ভূমিতে বিরাজ করছে, যেগুলোতে কাফেররা দখলদারিত্ব বসিয়েছে এবং মালের বিনিময়ে মুসলিমদের থাকতে দিচ্ছে। যেমন, বর্তমান মাগরিবের করডোবা, ভ্যালেন্সিয়া এবং (আফ্রিকার) হাবশা ভূমি- তাহলে সেখানকার মুসলমানদের ফরয দায়িত্ব হলো, সকলে মিলে একজনকে তাদের প্রশাসক বানিয়ে নেবে। এরপর তিনি একজনকে কাজি নিয়োগ দেবেন, কিংবা তিনি নিজেই তাদের বিচারাচার মীমাংসা করে দেবেন। তদ্রূপ (তাদের আরেকটা ফরয দায়িত্ব হলো) জুমআর জন্য একজন ইমাম নিয়োগ করে নেবে, যিনি তাদের নিয়ে জুমআ আদায় করবেন।” –ফাতহুল কাদির ৭/২৬৪ইবনুল হুমাম রহ. তিনটি মুসলিম ভূমির উদাহরণ দিয়েছেন:
ক. করডোবা খ. ভ্যালেন্সিয়া গ. হাবশা।
এগুলো নাসারাদের করতলগত হয়ে গিয়েছিল ততদিনে। তখন মুসলমানদের করণীয় বলেছেন,
- সকলে মিলে একজন মুসলিমকে তাদের শাসক বানিয়ে নেবে। কারণ শাসক ছাড়া মুসলমানরা চলতে পারবে না। এরপর উক্ত শাসক কাউকে কাযি নিয়োগ দেবেন, কিংবা নিজেই শরীয়ত মতে বিচারাচার করে দেবেন।
- জুমআর জন্য একজন ইমাম নিয়োগ দেবে।
কিন্তু যদি এমন হয় যে, মুসলিম শাসক নিয়োগ দেয়ার অনুমতি কাফেররা দিচ্ছে না, তাহলে কি করণীয়?
ইবনে আবিদিন রহ. (১২৫২হি.) ফাতাওয়া তাতারখানিয়া থেকে বর্ণনা করেন,
وأما بلاد عليها ولاة كفار فيجوز للمسلمين إقامة الجمع والأعياد ويصير القاضي قاضيا بتراضي المسلمين، فيجب عليهم أن يلتمسوا واليا مسلما منهم اهـ
“কাফেরদের করতলগত ঐসব ভূমি যেগুলোর শাসক স্বয়ং কাফেররাই, সেগুলোতেও মুসলিমদের জুমআ ও ঈদ আদায় সহীহ হবে। (কাফেররা যাকে কাযি নিয়োগ দেবে) মুসলমানদের পরস্পরের সম্মতি হলে (উক্ত) কাযি শরয়ী কাযিতে পরিণত হবেন। তবে মুসলমানদের ফরয দায়িত্ব হলো, তাদের থেকে একজন মুসলিম শাসক নিয়োগের প্রচেষ্টা করা।” –রদ্দুর মুহতার ৫/৩৬৯অর্থাৎ মুসলিম শাসক নিয়োগের অনুমতি না হলে অন্তত কাফেরদের কাছে একজন মুসলিম কাযি নিয়োগের আবেদন করবে। কাফেররা নিয়োগ দিলে সে নিয়োগ সহীহ নয়। তাদের নিয়োগের দ্বারা কেউ কাযি হবে না। তবে তারা নিয়োগ দেয়ার পর মুসলমানরা যখন তাকে মেনে নেবে, তখন তাদের পরস্পরের সম্মতি থাকার কারণে উক্ত নিয়োগকৃত কাযি শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে কাযি হয়ে যাবেন। তার বিচার ফায়াসালা সব সহীহ হবে এবং মানতে হবে। পাশাপাশি মুসলমানদের ফরয দায়িত্ব থেকে যাবে একজন মুসলিম শাসক নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া।
মুহতারাম পাঠক! কুফরি আইনের দ্বারস্থ হওয়ার অনুমতি কোন অবস্থাতেই নেই। কাফেরদের থেকে বলে কয়ে হলেও একজন মুসলিম কাযি নিয়োগ দেয়া জরুরী, যিনি শরীয়ত মতে মুসলমানদের সকল সমস্যা ও বাদানুবাদের সমাধান দেবেন। নিকাহ, তালাক, মুআমালা, লেন-দেন সব কিছু শরীয়ত মতে পরিচালনা করবেন।
তৃতীয় ব্যবস্থা সালিশ
কাফের পক্ষ যদি কোনো কাযি নিযুক্তির অনুমতিও না দেয়, তাহলে সর্বশেষ শরীয়ত আরেকটি দরজা খোলা রেখেছে, যাকে ফিকহের ভাষায় বলে التحكيم তথা সালিশি ব্যবস্থা। মুসলমানদের কোনো সমস্যা বা বাদানুবাদ দেখা দিলে বাদি বিবাদি উভয় পক্ষ মিলে একজন মুসলিমকে সালিশ তথা বিচারক নির্ধারণ করবে। তিনি তাদের মাঝে শরীয়ত মতে বিচার ফায়াসালা করে দেবেন। এ সালিশি ব্যবস্থা ইসলামী রাষ্ট্রেও সহীহ আছে। যোগ্য বড় আলেম না পাওয়া গেলে অন্তত তালিবুল ইলম দিয়েও কাজ চালানো যাবে। যে বিষয়ে ফায়াসালা দেবে সে বিষয়ের ইলম থাকলেই যথেষ্ট। সাহাবায়ে কেরামও এ পদ্ধতিতে নিজেদের অনেক বিষয় মীমাংসা করে নিতেন, কাযির দরবারে যেতেন না। অপারগতার সময়ে সর্বশষ এ অবলম্বনটি গ্রহণ করার কোনো বিকল্প নেই।
নাসাফি রহ. (৭১০হি.) বলেন,
حكّما رجلًا ليحكم بينهما فحكم ببيّنةٍ أو إقرارٍ أو نكولٍ ... صحّ لو صلح المحكّم قاضيًا ولكلّ واحدٍ من المحكّمين أن يرجع قبل حكمه، فإن حكم لزمهما. اهـ
“দু’জনে মিলে তৃতীয় একজনকে সালিশ নির্ধারণ করলো যেন তিনি তাদের উভয়ের মাঝে ফায়সালা করে দেন। যদি তিনি কাযি হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন হন এবং সাক্ষ্য-প্রমাণ, স্বীকারোক্তি বা কসম করতে অস্বীকৃতির ভিত্তিতে ফায়সালা দেন: তাহলে তা সহীহ আছে। সালিশ ফায়সালা দেয়ার আগ পর্যন্ত সালিশ নির্ধারণকারী দু’জনের প্রত্যেকেরই ফিরে যাওয়ার অধিকার থাকবে। কিন্তু যখন তিনি ফায়সালা দিয়ে দেবেন, তখন তা তাদের উপর অবশ্যম্ভাবীভাবে বর্তিয়ে যাবে।” -কানযুদ দাকায়িক ৪৬৫ অর্থাৎ তখন আর না মানার কোন সুযোগ থাকবে না। না মানলে গুনাহগার হবে। সালিশের ক্ষমতা থাকলে জোর করে মানাতে বাধ্য করতে পারবেন।
উল্লেখ্য, কাযি হওয়ার যোগ্যতা দ্বারা উদ্দেশ্য- সুস্থমস্তিষ্কবিশিষ্ট স্বাধীন ও বালেগ মুসলমান হওয়া।
মুহতারাম পাঠক! যেকোনো ভাবেই হোক, মুসলমানদের নিজেদের বিচারাচার শরীয়ত মতেই করতে হবে। এতে কোন ছাড় নেই। কুফরি বিধান দিয়ে কুফরি আদালতে বিচার করানোর কোনো বৈধতা নেই। এজন্য মুসলিমদের অবশ্যকরণীয় দায়িত্ব- তাগুত সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে হলেও নিজেদের বিচারাচারের জন্য শরয়ী কাযি নিয়োগ দেয়া। সম্ভব না হলে অন্তত মুসলিম পঞ্চায়েতের মাধ্যমে বা সালিশের মাধ্যমে নিজেদের বিষয়াশয় শরীয়ত মতে ফায়াসালা করিয়ে নেয়া। তাগুতের আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কোনো বৈধতা নেই। এ দায়িত্ব সর্বপ্রথম বর্তাবে সমাজের উলামা শ্রেণীর উপর। তারা জনগণকে এ ফরয সম্পর্কে অবগত করবে। কাযির মাধ্যমেই হোক বা পঞ্চায়েত বা সালিশের মাধ্যমেই হোক শরয়ী বিচারের ব্যবস্থা করবে। কোনো অবস্থায়ই তাগুতের আদালতে যাবে না। আবার মুসলমানদের বিচারব্যবস্থাহীনও ছেড়ে রাখবে না।
আফসোস! আমাদের উলামা সমাজ উদাসীনতার ঘুমে বিভোর। এখন পর্যন্ত উলামাদেরকে এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখিনি। মনে হয় যেন এটি আমাদের দায়িত্বের আওতায়ই পড়ে না। এটি যে একটি ফরয- বরং ঈমানের অংশ- এ কথাটি যেন আলেম সমাজ জানেও না। নিজ নিজ মাদ্রাসা, খানকাহ আর মসজিদ নিয়ে সবাই পড়ে আছে। আল্লাহ তাআলার শরীয়ত নিয়ে কোনো ফিকিরই দেখা যাচ্ছে না। তাগুতের কুফরি আদালতে মুসলিমদের জনস্রোত। উলামাদের নীরবতা দেখে মনে হচ্ছে, এতে কোনো সমস্যা নেই। এভাবে হাজারো লাখো মুসলমান হারামে লিপ্ত হচ্ছে। আর উলামায়ে কেরাম নীরব ভঙ্গিতে এর অনুমোদন দিচ্ছেন। যদি হলফ করে বলি, আল্লাহ তাআলা অন্তত এ কারণে হলেও উলামাদের পাকড়াও করবেন, আশাকরি আমার হলফ মিথ্যে হবে না। আহ! আমার কথাগুলো যদি উলামাদের কানে একটু আঘাত হানতো।
ভাইদের কাছে আবেদন থাকবে, আমার এ কথাগুলো আপনারা উলামাদের কানে পৌঁছে দিন। অন্তত প্রশ্ন রাখুন, আল্লাহ তাআলার শরীয়ত মতে বিচার ফায়সালার ব্যবস্থা করা আমাদের ফরয কি ফরয না? সম্ভব না হলে অন্তত পঞ্চায়েত সালিশের মাধ্যমে হলেও ফরয কি’না? আশাকরি কিছু না কিছু মানুষের ঘুম ভাঙবে। আল্লাহ তাআলা তাওফিক দিন। আমীন। ওয়ালহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন।
Comment