Announcement

Collapse
No announcement yet.

বাঙালিত্ব : দেশপ্রেম না ধর্ম?

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বাঙালিত্ব : দেশপ্রেম না ধর্ম?

    ১.

    মানুষ নস্টালজিক প্রাণী। সে যেখানে বেড়ে উঠেছে তার সাথে হৃদ্যতা থেকে যায় মৃত্যু অবধি। বাংলা অভিধানমতে দেশ মানে স্থান। শৈশব-কৈশর-তারুণ্যের স্মৃতিবিজড়িত স্থানটিকে মানুষ ভালোবাসে। এই ভালোবাসার নাম দেয়া যায় দেশপ্রেম। যে মানুষগুলোকে সে ছোট থেকে দেখে এসেছে তাদের জন্য টান থেকে যায় মনে। এই টানের জন্মও সেই দেশপ্রেম থেকেই।

    মানুষ বাঁচে কেন? একটা স্বপ্ন নিয়ে। গরু স্বপ্ন দেখে না, তার প্রতিবেলা দু'আঁটি ঘাস আর রাতে একটা খুঁটি হলেই চলে। মানুষের চলে না। কেউ যদি মানুষ হয় তাহলে সে শুধু নিজেকে নিয়ে থাকতে পারে না। ব্যক্তিভেদে স্বপ্নের পরিসর বদলায়। সবচেয়ে যে ছোট, তার স্বপ্ন শুধুই তার সন্তানদের নিয়ে। তার চেয়ে যে বড় সে স্বপ্ন দেখে একটা গরীব বাচ্চার পড়ার খরচ দেবে। আরো যে বড়, সে স্বপ্ন দেখে গাঁয়ে কোন অভাবী লোক থাকবে না, খালের ওপরকার নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোটার জায়গায় একটা ছোট্ট ব্রিজ হবে। কেউ স্বপ্ন দেখে একটা হাসপাতালের। সামর্থ্য নেই, তবু আশা থাকে মনের কোণে। মানুষ যখন আত্মকেন্দ্রিকতার উপরে ওঠে তখন সে তার চারপাশের এলাকার জন্য, কাছেপিঠের এলাকার মানুষের জন্য কিছু করতে চায়। এ স্বপ্নগুলোর জন্ম একটা আদর্শ থেকে। এই আদর্শের নাম দেশপ্রেম।

    বিশ্বায়নের এ যুগে এই আদর্শটা ক্রমেই রূপ বদলাচ্ছে। মানুষ স্বদেশ পাড়ি দিয়ে পরবাসে গিয়ে থিতু হচ্ছে ভালো থাকার লোভে, ভালো খাওয়ার লোভে, তথাকথিত উন্নত জীবনযাপনের মোহে। মাতৃভূমিতে যারা আছে তারাও মত্ত ভোগবাদী জীবনধারাতে। রাতদিন জীবনকে উপভোগের পালায় যখন হঠাৎ ছেদ পড়ে, বিবেকবোধ আত্মাকে সজোরে ধাক্কা মারে। সে মূহর্তে বিবেককে স্তব্ধ করতে যে আত্মপ্রবঞ্চনার সাহায্য নেওয়া হয় তার নামও দেশপ্রেম বটে।


    ২.

    ধর্মবোধ সাধারণত মানুষের আদর্শের উৎস হিসেবে কাজ করে। চার্চের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ইউরোপের মানুষেরা জেগে উঠেছিল এক সময়। অত্যাচারী-অনাচারী খ্রিষ্ট ধর্মকে তারা তাড়িয়ে দেয় আদর্শগত অবস্থান থেকে। কিন্তু আদর্শের স্থানটা খালি থাকে না কখনোই। আধুনিক মননে আদর্শের শূন্যস্থান পূরণ করে জাতীয়তাবাদ। মাতৃভাষা ও মাতৃভূমির প্রতি মানুষের সহজাত ভালোবাসাকে পুঁজি করে ভাষা ও সংস্কৃতি কেন্দ্রিক বিভাজন শুরু হয়। ইতিহাসকে ভেঙ্গে গড়া হয়, স্বজাতির দুর্বৃত্তদের জাতীয় বীর হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। রক্তখেকো নেপোলিয়নকে হাজির করা হয় আদর্শ ফরাসী নেতা হিসেবে। গণহত্যার দায়ে দুষ্ট অলিভার ক্রমওয়েলকে ব্রিটিশরা নির্বাচিত করে সেরা দশ ব্রিটিশদের একজনে, ভুলে যায় যে এই লোকই বিদ্রোহ দমনের নামে আইরিশ মেয়েদের মুখ চিরে দিত ক্ষুর দিয়ে। পৃথিবীর সভ্যতার দু'হাজার বছরের ইতিহাসের ঐক্যের কলতানকে ছাপিয়ে ভাঙ্গনের বাঁশি প্রবল হয়। মিলগুলোকে বলা হয় গৌণ, অমিলগুলোকে মুখ্য। দার্শনিকেরা আপন জাতিকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে প্রমাণের জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক দুর্বৃত্তপনায় নেমে পড়েন নির্দ্বিধায়। জর্জ অরওয়েলের ভাষায় :

    Nationalism is power-hunger tempered by self-deception. Every nationalist is capable of the most flagrant dishonesty, but he is also since he is conscious of serving something bigger than himself unshakeably certain of being in the right.

    জাতীয়তাবাদ কী? এনসাইক্লোপেডিয়া ব্রিটানিকার মতে যখন কোন ব্যক্তির আনুগত্য এবং অনুরাগ সব কিছুকে ছাপিয়ে দেশের প্রতি ন্যস্ত হয় তখন সেই আদর্শকে জাতীয়তাবাদ বলে।
    তার মানে রাষ্ট্র যা করবে তাকে শুধু মেনে নিলেই চলবে না, তাকে আদর্শে লালনও করতে হবে। এই আদর্শের মূল যে কত গভীরে যেতে পারে তার প্রমাণ পাওয়া যায় ভিয়েতনামে আমেরিকান নৃশংসতার সমর্থকদের স্লোগানে :

    "My country, right or wrong" কিংবা "America,love it or leave it."

    এই স্লোগান অতীত হয়ে গেছে এমন ভাবার অবকাশ নেই। আজো এই বাংলাদেশে প্রচলিত 'মুক্তিযুদ্ধের চেতনা'র বিপক্ষে কিছু বললে তাকে পাকিস্তান বা আফগানিস্তানে চলে যেতে বলা হয়।

    দেশপ্রেমের মত সহজাত একটি প্রবৃত্তির দুর্বৃত্তায়ন হলো কিভাবে? জাতীয়তাবাদের হাতে দেশপ্রেম ছিনতাই হয় সেকুলার জাতিভিত্তিক রাষ্ট্রের ধারণা পৃথিবীতে প্রবল হবার পর। রাষ্ট্রনায়করা পরিকল্পিতভাবেই দেশপ্রেম আর জাতিয়তাবাদের সীমানা মুছে একে অপরের সমার্থক করে ফেলেছিল। কেন? কারণ দেশপ্রেম মানুষকে তাড়িয়ে নেবে এমন একটা হাতিয়ার। অন্যায়কে ন্যায় বানাতে একটা আদর্শিক ভিত্তি লাগে-দেশপ্রেম সেই ভিতটা দেয়। ১৯৭১ সালে যারা পাকিস্তান নামক দেশটার প্রেমে অন্ধ ছিল তারা পাকি আর্মিদের নৃশংসতায় সাহায্য করেছে। রাষ্ট্রের আনুগত্যের সংজ্ঞায় এরাও দেশপ্রেমিক ছিল। যদি আজ বাংলাদেশ স্বাধীন না হতো-রাজাকারের বদলে এরা এখন পরিচিত হতো দেশপ্রেমিক,দেশের সূর্যসন্তান হিসেবে। আর মুক্তিযোদ্ধারা বিবেচিত হতো বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী হিসেবে, কুলাঙ্গার হিসেবে। এভাবেই জাতীয়তাবাদী দেশপ্রেম ভাল-মন্দের ব্যবধান ঘুচিয়ে দেয়, নতুন একটা সীমারেখা তৈরী করে। যত অত্যাচারী শাসকই হোক না কেন, যত আহবানই হোক না কেন-দেশপ্রেমের দাবী হচ্ছে সে অন্যায়কে ন্যায় মেনে তার পক্ষে কাজ করা। একই কাজ হিটলার করিয়েছিল জার্মান জাতিকে দিয়ে। পিতৃভূমির উচ্চ মর্যাদার রক্ষার্থে লক্ষ মানুষের মৃত্যুও আপত্তিকর মনে হয়নি সাধারণ জার্মানদের কাছে। দেশপ্রেমের থাবা থেকে বাঁচতে পালিয়ে যেতে হয়েছে বিবেকবানদের। এই দেশপ্রেমের দোহাইয়ে পাকিরা তৈরী করে দিল শান্তিবাহিনী-মানুষ মেরে শান্তি আনতে চাইল এ বাংলায়। এই দেশপ্রেমের ডাক আমরা আজও শুনতে পাই: 'শিক্ষা-শান্তি-প্রগতি' যাদের মূলমন্ত্র তারা মানুষ ধরে ধরে জবাই করে দেয়ার আহবান জানায়। যে মঞ্চ থেকে বিচারের দাবি ওঠে সেই একই মঞ্চ থেকে বিচারের রায় দিয়ে দেয়া হয়। আকাঙ্খিত রায় না পেলে কি পরিণাম হবে তাও জানিয়ে দেয়া হয়। রাষ্ট্রাধীন আদালতে অবনমিত হতে ভুলে যান। আমরা দেশপ্রেমের ঠুলি চোখে বেঁধে পুরো ব্যাপারটার প্রহসন উপেক্ষা করি।

    (লেখাটি কিছুটা দীর্ঘ বিধায় পড়তে পাঠকের অস্বস্তি লাগবে ভেবে বাকি অংশটুকু আলাদাভাবে ২য় থ্রেডে দেয়া হলো)

    যারা ঈমানদার তারা যে, ক্বিতাল করে আল্লাহর রাহেই । আল-ক্বুরআনুল কারীম ।

  • #2
    বাঙালিত্ব: দেশপ্রেম না ধর্ম?

    ৩.

    দেশপ্রেমকে ব্যবহার করার সবচেয়ে সফল অস্ত্র-তাকে একটি ধর্ম হিসেবে গড়ে তোলা। ফরাসী সমাজতান্ত্রিক তাত্ত্বিক গুস্তাভো হার্ভে বলেছিলেন:

    ”For the patriotism of modern nations is a religion"

    এ দেশেও মানুষের আবেগকে পুঁজি করে ক্ষমতালোভীরা নতুন একটি ধর্মের প্রবর্তন করেছিল-বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ। সে ধর্মের দোহাই দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে উর্দুভাষীদের কচুকাটা করা হয়েছিল। পাকিরা না, বাঙ্গালিরা করেছিল। যারা বেঁচে গিয়েছিল তাদের করা হয়েছিল খোঁয়ারে বন্দী। এখনও ঢাকার বুকে সেই 'ক্যাম্প'গুলো সগর্বে বিদ্যমান। দেশ স্বাধীনের পরে ১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি অবাঙ্গালীদের উদেশ্য করে বলা হয়েছিল: 'বাঙ্গালি হয়ে যাও'। একটি ধর্ম নাযিল হতে সময় লাগে। বাঙ্গালি ধর্ম নাযিল হয়নি এ পৃথিবীতে, বঙ্গদেশে উৎপাদিত হয়েছিল। (এখনও বিদ্যমান সেই ধর্ম)

    প্রতিটি ধর্মের দুটি দিক আছে- বিশ্বাস, creed ও আচার-প্রথা, rituals। বাঙ্গালি ধর্মের বিশ্বাস-বাঙ্গালি সংস্কৃতি এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রযন্ত্রের আনুগত্য। নামে 'ধর্মনিরপেক্ষ' হলেও মূলত হিন্দু বিশ্বাস ও সংস্কৃতিকে বেছে নেয়া হয়েছে বাঙ্গালি ধর্মের জন্য। ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং পূর্বপুরুষের দেবীপূজার রীতি থাকায় দেশকে মা হিসেবে মেনে নিতে সমস্যা হয়নি বাঙ্গালি মুসলিমদের। জাতীয় সঙ্গীতে গাওয়া হলো: 'মা, তোর বদনখানি মলিন হলে.....'। যে তরুণ প্রজন্ম বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে গর্ব করছে তারাও ভেবে দেখে না প্রকৃতির মুখাবয়ব আছে কি না। যা নেই তা মলিন হতে পারে কি না। দেশাত্মবোধে সেজদা করা হলো বিশ্বমাতাকে:

    ও আমার দেশের মাটি, তোমার 'পরে ঠেকাই মাথা।

    তোমাতে বিশ্বময়ীর, তোমাতে বিশ্বমায়ের আঁচল পাতা।।

    তুমি অন্ন মুখে তুলে দিলে,

    তুমি শীতল জলে জুড়াইলে,

    তুমি যে সকল-সহা সকল-বহা মাতার মাতা।।


    কৃষক রোদে জ্বলে, পানিতে ভিজে ধান উৎপাদন করে তার পেটে লাথি মারতে হবে ধানের দাম কমিয়ে। আর বন্দনা করতে হবে অন্নদাত্রী মায়ের, (নাঊযুবিল্লাহ্*) আল্লাহ্*র এক নাম যে আর-রযযাক-সে কথা ভুলেও মুখে আনা যাবে না। 'রব্বুল 'আলামীন' নামটা সূরা ফাতি'হাতে তালা মেরে আটকে রেখে দিতে হবে, বাস্তব জীবনে গাইতে হবে মাতার জয়গান।। আসলে কী রাষ্ট্র আর মা এক?? মা কি বদলানো যায়?? আমার দাদার 'মা'' ভারতকে ভেঙ্গে নতুন 'মা' বানানো হয়েছিল পাকিস্তান। আমার বাবারা নতুন 'মা'কে আবার ভাঙলেন, এলো বাংলাদেশ। আমার বাবারা ভারত মাকে ঘৃণা করা শিখলেন, আর আমাদের ঘৃণা করতে শেখানো হল পাকিস্তানকে। নতুন মাকে ভালোবাসার শর্ত এটাই-আগের মাকে ঘৃণা করতে হবে। যে মা, মাটিকে রক্ষা করার জন্য প্রাণত্যাগের সংকল্প করা সেই মায়ের উপরেই হামলে পড়তে হবে ক'দিন পরে। যে মাকে মানুষ কাটে, মানুষ জোড়া লাগায় তাকে 'ইলাহ্*' হিসেবে মেনে নিতে হবে বাঙ্গালি হতে হলে।

    নানা ধর্মের মতো বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদ ধর্মে নানা প্রথাগত আচরণও আছে-বিমূর্ত মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে পুষ্প অর্ঘ্য দেয়া, চেহারায় পতাকার তিলক আঁকা, মোমবাতি জ্বেলে শোক জানানো, মৃতদের উদ্দেশ্যে চিঠি লেখা কিংবা আকাশে ফানুশ ওড়ানো। এ ধর্মে আছে উৎসব-শহীদ, স্বাধীনতা কিংবা বিজয় দিবস। আছে তীর্থস্থান-শিখা অনির্বাণ, শহীদ মিনার আর স্মৃতিসৌধ। আছে উৎসর্গ-বিরুদ্ধবাদীদের জীবন, সাধারণ মানুষের জীবন। এ ধর্মে দীক্ষিতরা ছওয়াব কামানো চকচকে চোখে স্লোগান দিয়ে রাজপথ কাঁপায়:- 'ধরে ধরে জবাই করো'; পিছনে থাকে রাষ্ট্রের রক্ষীবাহিনী। বাঙ্গালি ধর্মের জন্য আলাদা উপাসনালয় প্রয়োজন পড়ে না, বিদ্যালয়ই আচ্ছাহ্*। শিশুরা জাতীয় পতাকাকে সালাম করে, জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে দিন শুরু করে। 'চেতনা'ধারীরা নবী সেজে ধর্মগ্রন্থ লেখেন-শিশুরা তা পড়ে পাঠ্যবইয়ে, বুড়োরা সংবাদপত্রে। লিও তলস্তয় বড় চমৎকারভাবে বর্ণনা করে গেছেন পদ্ধতিটা:

    In the schools, they kindle patriotism in the children by means of histories describing their own people as the best of all peoples and always in the right. Among adults they kindle it by spectacles, jubilees,monuments, and by a lying patriotic press.

    বাঙ্গালি ধর্মে পীর প্রথাও বিদ্যমান। রাজনৈতিক নেতারা মুরিদদের পার্থিব স্বপ্ন দেখায়-দশ টাকার চাল, ঘরে ঘরে চাকুরি, পদ্মা সেতু ইত্যাদি ইত্যাদি। পীরদের খাদেম হিসেবে থাকে মুক্তমনারা, বণিকেরা, প্রশাসনিক চাটুকারেরা। পীর এবং খাদেমদের গাড়ির বহর, বাড়ির উচ্চতা দীর্ঘ হতে থাকে। মানুষ সবই বোঝে তাও পাঁচ বছরে একবার গিয়ে ভোটের নজরানা দিয়ে আসে। ভোট কিনে পীরেরা রাষ্ট্রের মালিক বনে যায়-সুখ আর সুখ। বিদেশী গ্যাস-তেল কোম্পানির কাছে মায়ের রক্ত বিক্রির সুখ। মায়ের আকাশ মুক্ত রাখতে বিমান কেনার সুখ। সুখের আগুন থেকে বেরিয়ে আসে শেয়ার বাজার, হলমার্ক, ডেস্টিনি, কাল বেড়াল নামের কিছু স্ফুলিঙ্গ। সুখের আগুনের জ্বালানী হয় সীমান্তের মানুষ, পিলখানার সেনাকর্মকর্তা, ক্ষমতাচ্যুত পীরের অবুঝ মুরিদেরা। ১৯০৫ সালে গুস্তাভো হার্ভে যা বুঝেছিলেন তা আমরা আজো বুঝিনি:

    A country of the present time is nothing but this monstrous social inequality, this monstrous exploitation of man by man.

    আস্তে আস্তে পৈত্রিকসূত্রে ধর্ম পাওয়া মুসলিমরা বিশ্বাস আনে বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদে, সংস্কৃতি হিসেবে তারা যেটা ধারণ করে তাকে দেখতে কখনও কখনও ইসলামের মতই লাগে বৈকি। তার পরেও হঠাৎ একদিন বাঙ্গালি ইসলাম আর বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদে ঠুকোঠুকি লেগে যায়। তখন বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের দীক্ষা দেয়া হয় ইসলাম শিক্ষা বই থেকে: দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ।


    ৪.

    ধর্ম হিসেবে দেশপ্রেম বড্ড একচোখা। রবীন্দ্রনাথের উপাধি 'বিশ্বকবি' আমরা জানি। উদ্দেশ্য- বাংলা পরীক্ষায় বেশি নম্বর। তিনি যে সীমান্তের বেড়াজাল কাটিয়ে বিশ্বমানবতার মধ্যে ঐক্যের সূত্র বাঁধতে চেয়েছিলেন সে উপলব্ধিটা আমাদের কখনোই শেখানো হলো না। দেশ বলতে যদি রাষ্ট্র ধরা হয় তবে তার উপকরণ দুটি- মাটি ও মানুষ। মাটি মানে প্রকৃতি-অবোধ নদী, মূক পাহাড়, শ্যামল সবুজ, সজীব সব না-মানুষ। এদের সবার জীবন আছে, ভাষা আছে-যদিও তা আমাদের বোধের বাইরে। দেশপ্রেম বলতে যদি আমরা বুঝি রাষ্ট্রের সীমানাকে ঘিরে ভালোবাসা তাহলে পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইলের বাইরের প্রকৃতিকে কি ভালোবাসতে নেই? সবই তো একই স্রষ্টার সৃষ্টি। আর যদি দেশপ্রেম বলতে আমরা বুঝি দেশের মানুষকে ভালোবাসা তাহলে প্রশ্ন আসে কেন শুধু দেশের মানুষকে ভালোবাসতে হবে, কেন গোটা দুনিয়ার মানুষকে নয়? মানবিকতাকে কাঁটাতারে আবদ্ধ করার যুক্তি কী? ? ?

    ১৯৪৭ সালের ৮ই জুলাই জীবনে প্রথমবারের মতো ভারতে আসার পর সাইরিল রেডক্লিফকে দায়িত্ব দেয়া হল ভারত ভাগ করে দাও। তিনি টেবিলে বসে কলম চালালেন, সীমান্ত তৈরী হলো। আমার দাদাকে বলা হলো পশ্চিম দিনাজপুরে যে গ্রামটিতে তুমি বড় হয়েছ সেটা এখন ভারত। তুমি পাকিস্তানী। তল্পি-তল্পা গোটাও। এক অপরিচিত জায়গায় বসিয়ে তাকে জানানো হল এটা তোমার দেশ-একেই তোমার ভালবাসা দিতে হবে। শৈশবের গ্রাম, গ্রামের মানুষগুলো আর তোমার আপন কেউ না। তোমাকে এখন প্রেম করতে হবে চট্টগ্রামের মানুষের সাথে যাদের একটা কথাও তুমি বোঝ না। রাষ্ট্রীয় আদেশে প্রেম। ধর্ম হিসেবে বাঙ্গালি দেশপ্রেম যে আসলে প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রভুদের সংজ্ঞার উপরে টিকে আছে এই তথ্যটুকুই ধর্মটা মিথ্যা হবার জন্য যথেষ্ট।

    আমরা বিশ্বাস করি এই মহাবিশ্বের সৃষ্টিকর্তা একজনই এবং এই পৃথিবীর মালিক তিনিই। আমাদের আগে বহু মানুষ এসেছিল যারা 'দেশ আমার, মাটি আমার' বলে মিথ্যা গর্ব করেছিল। এই দেশ, মাটি একই আছে কিন্তু সেই মানুষগুলো মাটির তলায় চলে গেছে। যখন আমরা এই পৃথিবীতে আসিনি তখন আমাদের দেশ কী ছিল? আমরা যখন মরে যাবো তখন আমাদের দেশ হবে কোনটা? মাটির তলায় কোন রাজত্ব চলে? কোন পুলিশ ডাণ্ডা মারে? কোন আদালত বিচার করে? যিনি বলছেন তিনি আগে বাঙ্গালি পরে মুসলিম তিনি কি দেশের নেতাদের আল্লাহ্*র উপরে স্থান দিচ্ছেন না? এই নেতাদের চরিত্র কী আমরা ভালো করে জানি না? এরা যে আমাদের আখিরাতে কেন দুনিয়াতেই জাহান্নাম দেখানোর জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করে সেটা কি আমরা বুঝি না? এদের আমরা আল্লাহ্*র চেয়েও বেশি ভালোবাসছি??? এদের ক্ষমতা দখলের লোভে আমরা আমাদের জীবন বিকিয়ে দিচ্ছি? আমরা এত জেনে-বুঝেও এদের হাতের পুতুল হচ্ছি???

    আমরা মুসলিমরা বিশ্বাস করি এই বাংলাদেশ না, পৃথিবীটাও না-আমাদের সত্যিকারের দেশ জান্নাত। আমরা সেই জান্নাতের জন্য কাজ করি যেখানে আমরা একদিন ছিলাম, যেখানে আমরা একদিন যেতে চাই। তাই আমরা প্রকৃতির বদলে প্রকৃতির স্রষ্টা আল্লাহ্*কে একমাত্র 'ইলাহ্*' হিসেবে মেনে নিয়েছি। আমরা এই পৃথিবীর ভণ্ডদের না, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমাদের নেতা হিসেবে মেনে নিয়েছি। দুটোই আমাদের সচেতন প্রয়াস। আমরা জানি কেন এই বেছে নেয়া। যদি এই অবস্থানকে অক্ষুণ্ন রাখতে গিয়ে পৃথিবী থেকে চলে যেতেও হয় আমরা রাজি। পৃথিবী কখনই আমাদের ছিলো না, সেটাকে ঘিরে স্বপ্নও তাই আমরা সাজাই না। আমরা সাধারণ মানুষের পার্থিব ও পরলৌকিক মঙ্গলের জন্য সাধ্যে যা কুলায় করতে চাই। এই মঙ্গল কামনাটাও সীমানা দিয়ে আবদ্ধ নয়। আমরা এই দেশের মানুষের জন্য যা চাই-সারা দুনিয়ার মানুষের জন্যেও তাই চাই। আমাদের কাছে এটাই দেশপ্রেম। আর এই দেশপ্রেমের উদ্দেশ্য মানুষের মনোতুষ্টি নয়, একুশে পদক পাওয়া নয়- আল্লাহ্*কে সন্তুষ্ট করা। আল্লাহ্* যেন আমাদের আবেগটাকে সৎ কাজে ব্যবহার করার তাওফিক্ব দান করেন, মন্দ মানুষদের চক্রান্ত বোঝার তাওফীক্ব দান করেন, ইসলাম বুঝে জীবনটাকে অর্থবহ করার তাওফীক্ব দান করেন। আমীন ইয়া রব্বাল 'আলামীন।

    সংগৃহীত
    {বাক্সের বাহিরে}

    যারা ঈমানদার তারা যে, ক্বিতাল করে আল্লাহর রাহেই । আল-ক্বুরআনুল কারীম ।

    Comment


    • #3
      জাযাকাল্লাহু খাইরান আহসানাল জাযা........

      মা-শা-আল্লহ খুবি জরুরী যুগোপযুগী, ইলমে ভরপুর, যুক্তিযুক্ত আলোচনা! ইয়া আল্লাহ! উম্মাতে মুসলিমাকে এ থেকে পূর্ণরুপে ফায়দা হাসিল করার তাওফিক দান করুন আমিন!

      পোষ্টকারী ভাইকে আপনার শান অনুযায়ী প্রতিদান দান করুন! আমিন!
      হয় শাহাদাহ নাহয় বিজয়।

      Comment


      • #4
        মাশাআল্লাহ ৷
        ভাই চমৎকার লিখেছেন ৷ খুবই সুন্দর আলোচনা ৷
        আল্লার সবাইকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুক ৷
        আল্লাহ আপনার ইলমে ও কলমে বারাকাহ দান করুক ৷ আমীন ৷
        আমি জঙ্গি, আমি নির্ভীক ৷
        আমি এক আল্লাহর সৈনিক ৷

        Comment


        • #5
          Originally posted by ALQALAM View Post
          জাযাকাল্লাহু খাইরান আহসানাল জাযা........

          মা-শা-আল্লহ খুবি জরুরী যুগোপযুগী, ইলমে ভরপুর, যুক্তিযুক্ত আলোচনা! ইয়া আল্লাহ! উম্মাতে মুসলিমাকে এ থেকে পূর্ণরুপে ফায়দা হাসিল করার তাওফিক দান করুন আমিন!

          পোষ্টকারী ভাইকে আপনার শান অনুযায়ী প্রতিদান দান করুন! আমিন!

          আল্লাহ্ তা'আলা ক্ববুল করুন, জান্নাতে মিলিত হওয়ার তাওফীক্ব দান করুন, আমীন ইয়া রব্বাল 'আলামীন।
          যারা ঈমানদার তারা যে, ক্বিতাল করে আল্লাহর রাহেই । আল-ক্বুরআনুল কারীম ।

          Comment


          • #6
            Originally posted by muhammad sadik View Post
            মাশাআল্লাহ ৷
            ভাই চমৎকার লিখেছেন ৷ খুবই সুন্দর আলোচনা ৷
            আল্লার সবাইকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দান করুক ৷
            আল্লাহ আপনার ইলমে ও কলমে বারাকাহ দান করুক ৷ আমীন ৷
            আমীন ইয়া রব্বাল 'আলামীন।
            যারা ঈমানদার তারা যে, ক্বিতাল করে আল্লাহর রাহেই । আল-ক্বুরআনুল কারীম ।

            Comment


            • #7
              ধর্ম হিসেবে দেশপ্রেম বড্ড একচোখা। রবীন্দ্রনাথের উপাধি 'বিশ্বকবি' আমরা জানি। উদ্দেশ্য- বাংলা পরীক্ষায় বেশি নম্বর। তিনি যে সীমান্তের বেড়াজাল কাটিয়ে বিশ্বমানবতার মধ্যে ঐক্যের সূত্র বাঁধতে চেয়েছিলেন সে উপলব্ধিটা আমাদের কখনোই শেখানো হলো না।


              ** হা হা হা *** বাংলা পরীক্ষায় বেশি নাম্বার। আমি গুরুজন থেকে জেনেছি, ভারত উপমহাদেশে সবচেয়ে বড় ইসলাম বিদ্বেসী ছিল এই রবীন্দ্র নামেল মালাঊনটি। আল্লাহ্ এই নাপাক মালাঊন থেকে আমাদের হিফাযত করুন।আমীন।
              পোস্টকারী ভাই! {বাক্সের বাহিরে} বলে কি বুঝিয়েছেন? বুঝতে পারিনি। বুঝিয়ে বললে ভালো হব্র ইনশাল্লাহ্

              Comment


              • #8
                Originally posted by munasir View Post

                পোস্টকারী ভাই! {বাক্সের বাহিরে} বলে কি বুঝিয়েছেন? বুঝতে পারিনি। বুঝিয়ে বললে ভালো হব্র ইনশাল্লাহ্
                বাক্সের বাহিরে বলে বইয়ের নাম বুঝিয়েছি ভাই।
                সংগৃহীত লেখা হয়নি তাই অস্পষ্ট ছিল। এডিট করে দিয়েছি।
                শুকরিয়া। ভাই
                যারা ঈমানদার তারা যে, ক্বিতাল করে আল্লাহর রাহেই । আল-ক্বুরআনুল কারীম ।

                Comment

                Working...
                X