ইসলামের দায়ীদের দুর্নাম রটনা: শালীন জবাবের একটি কৌশলী পন্থা
অন্ধ ভক্তি আর অন্ধ অনুকরণের বিরুদ্ধে আমরা যত কিছুই বলি না কেন, সাধারণ মুসলমানদের মাঝে একটি মাত্রা পর্যন্ত এ বিষয়টা অবশ্যই কাজ করে। একটা মানুষের প্রতি ভক্তি শ্রদ্ধা ও নির্ভরতা তখনই কেউ অনুভব করে যখন তার প্রশংসা শুনতে পায়। মানুষের সহজাত প্রবণতাকে পুঁজি করে বাতিলপন্থীরা সত্যপন্থীদের দুর্নাম রটিয়ে থাকে মানুষের মনে তাদের সম্পর্কে কু-ধারণা সৃষ্টি করার জন্য। যদিও যুগ যুগ ধরে এটাই প্রমাণিত যে, একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহে সত্যের অপ্রতিরোধ্য শক্তির দরুন বাতিলপন্থীদের এমন কাজ সত্যপন্থীদের জন্য সুফল ছাড়া আর কিছু বয়ে আনে না। কিন্তু তবুও আল্লাহর হুকুমের ভেতর থেকে বস্তুবাদী উপায় মাধ্যম অবলম্বন করা শরীয়তের নির্দেশনা। তাই ইসলামের প্রকৃত দায়ীদের চরিত্রে বাতিলপন্থীদের অযাচিত কলঙ্ক লেপন আর এর দরুন সেসব দায়ীদের প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে অনবহিত সাধারণ মুসলমানদের মনে সংশয় সৃষ্টির প্রতিকারে সর্বতোভাবে শালীনতা রক্ষা করে আবেগ নির্ভর না হয়ে বাতিলপন্থীদের জবাব দানের একটি কৌশলগত পন্থা এখানে আলোচনা করছি। আল্লাহ তাআলা সর্বোত্তম তৌফিক দাতা!!
যদি ইসলামের দায়ীদের কারো মাঝে সত্যিকার অর্থে কোন ত্রুটি থাকে, যদি তাঁর ব্যক্তিগত অথবা পারিবারিক জীবনে কিংবা এমন কোন ক্ষেত্রে যার সঙ্গে তাঁর নিখাদ আন্তরিকতাপূর্ণ বিশুদ্ধ ইসলামী দাওয়াতের কোন সম্পর্ক নেই, জীবনের তেমনি কোন অধ্যায়ে কোন ভুল-ভ্রান্তি থেকে থাকে, (আর একজন মানুষের পক্ষে এমনটা ঘটাই স্বাভাবিক) তবে সেগুলোর পক্ষে সাফাই গাওয়ার কোন যৌক্তিকতা আমরা দেখতে পাই না। বরঞ্চ এমন কাজ করাকে অন্ধভক্তি বলা হবে যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এক্ষেত্রে এগুলোকে পুঁজি করে কোন বাতিলপন্থী তার বিশুদ্ধ দাওয়াতকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইলে এ ব্যাপারটা পরিস্কার করে দেয়াটাই যথেষ্ট যে, ব্যক্তির দাওয়াতি কার্যকলাপের সঙ্গে ত্রুটির কোন সম্পর্ক নেই। এই পোস্টে আমার মূল আলোচ্য বিষয় এই পয়েন্টকে ঘিরে নয়।
আমার আলোচনা হচ্ছে সেসব বাহ্যিক ত্রুটি-বিচ্যুতি নিয়ে, যেগুলো প্রকৃত অর্থে শরীয়তের দৃষ্টিতে এবং সামাজিকভাবেও তেমন কোনো ভুলই নয়। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে এবং বাতিলপন্থীদের অপপ্রচারে সেটাকে ত্রুটি বলে মনে হয়।
এক্ষেত্রে আমাদেরকে যেটা করতে হবে, দাওয়াতের স্বার্থে এবং সবচেয়ে বড় কথা ইসলামী অনুশাসনের কারণে কোন প্রকার অশালীন পন্থা অবলম্বন করা যাবে না। গালিগালাজের তো প্রশ্নই আসে না। বরং এসবের দ্বারা দাওয়াতের ক্ষতি হবে।
আমাদেরকে প্রথমেই তাকাতে হবে নববী জীবনের দিকে। আমাদেরকে বুঝতে হবে, কোরআন ও ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা আর তারই প্রতিচ্ছবি হচ্ছে নববী জীবন। তাই জবাব দেয়ার ক্ষেত্রে আমরা নববী জীবন থেকে কোনো না কোনো সূত্র অবশ্যই পেয়ে যাবো। নববী জীবনের ওই সূত্রকে কাজে লাগিয়ে ইসলামের যে দায়ীকে অকারণে কিংবা বলা যায় বাহ্যিক ত্রুটির কারণে—প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে, ঠিক সে জাতীয় কোন একটি বাহ্যিক ত্রুটি (!) তুলে ধরে আমরা দেখাতে চাইবো যে, বাতিল পন্থীরা যেটাকে ত্রুটি হিসেবে দেখাতে চাচ্ছে সেটা আদতে কোন ত্রুটি নয় কারণ নবী জীবনে এমন ত্রুটির (!) উপস্থিতি রয়েছে।
কিছু উদাহরণ দেই। ইসলামের কোন দায়ীর কারণে কখনো যদি অন্য কেউ বিপদে পড়ে আর দায়ী ব্যক্তি বিপদ মুক্ত থাকে, আর এটাকে বাতিলপন্থীরা যদি ত্রুটি হিসেবে এভাবে প্রচার করতে থাকে যে, 'অন্যদেরকে বিপদে ফেলে নিজে ইসলামের খেদমত দেখাচ্ছে', তখন আমরা বিচিত্র ভঙ্গিমায় ক্ষুরধার উপস্থাপনায় দেখাতে পারি, হযরত সুমাইয়া রাদিয়াল্লাহু আনহা-কে যখন শহীদ করে দেয়া হয়, আবু তালেবের কারণে তখন পর্যন্ত নবীজিকে ﷺ তেমন একটা উল্লেখযোগ্য হারে কিংবা বলতে গেলে একেবারেই আবু জাহেলের কাছে শারীরিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়নি। আত্মরক্ষার জন্য কোন দা'য়ী ব্যক্তি যদি আত্মগোপন করে আর সেটা নিয়ে যদি মশকরা করা হয়, তাহলে নবীজির ﷺ আত্মগোপনের ঘটনা আমাদের সবার সামনে। কোন দায়ী ব্যক্তি যদি বৈধ পন্থায় কিছুটা ছলচাতুরী অবলম্বন করে, তবে হিজরতের রাতে হযরত আলীকে নিজ বিছানায় শুতে বলার নববী ঘটনা আমাদের সবার সামনে। এভাবে বলে শেষ করা যাবেনা।
এক্ষেত্রে বাতিলপন্থীদেরকে চূড়ান্ত রকম চপেটাঘাত করার জন্য ঘটনাগুলো তুলে ধরার যে পন্থাটি বিশেষভাবে বিবেচ্য, জানিনা তা কতটুকু উচিত হবে কিন্তু বিবেকবানদের বিবেককে নাড়া দেয়ার জন্য পন্থাটি খুবই উপযোগী বলে মনে হচ্ছে। আর তা হচ্ছে—বাতিল পন্থীরা যে যে বাক্যে, যে যে পন্থায়, যে যে ভঙ্গিমাতে, যে ধরনের উপস্থাপনায় ইসলামের কোন দায়ী ব্যক্তিকে অকারণে প্রশ্নবিদ্ধ করবে, ঠিক সেই সেই বাক্যে, সেই সেই পন্থায়, এবং সেই সেই ভঙ্গিমায় এবং সেই একই ধরনের উপস্থাপনায় নবী জীবনের কোন ঘটনাকে তুলে ধরা। এতে বিবেকবানরা বুঝতে পারবে, বাতিলপন্থীদের এসব অকারণ সমালোচনা আর প্রশ্নবাণ পক্ষান্তরে যেন নবী চরিত্রকেই আঘাত করছে। এই পন্থার দরুন খুবই অল্প কথায় গালিগালাজ এড়িয়ে—শালীনতা রক্ষা করে—অপবাদ আরোপকারীদেরকে শায়েস্তা করা যাবে ইনশা-আল্লাহ তা'আলা!
সর্বোপরি আল্লাহপাক সঠিক পথের দিশা দানকারী!!
إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَسْتَحْىِۦٓ أَن يَضْرِبَ مَثَلًا مَّا بَعُوضَةً فَمَا فَوْقَهَا فَأَمَّا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ فَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ ٱلْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ وَأَمَّا ٱلَّذِينَ كَفَرُوا۟ فَيَقُولُونَ مَاذَآ أَرَادَ ٱللَّهُ بِهَٰذَا مَثَلًا يُضِلُّ بِهِۦ كَثِيرًا وَيَهْدِى بِهِۦ كَثِيرًا وَمَا يُضِلُّ بِهِۦٓ إِلَّا ٱلْفَٰسِقِينَ
অর্থঃ আল্লাহ পাক নিঃসন্দেহে মশা বা তদুর্ধ্ব বস্তু দ্বারা উপমা পেশ করতে লজ্জাবোধ করেন না। বস্তুতঃ যারা মুমিন তারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করে যে, তাদের পালনকর্তা কর্তৃক উপস্থাপিত এ উপমা সম্পূর্ণ নির্ভূল ও সঠিক। আর যারা কাফের তারা বলে, এরূপ উপমা উপস্থাপনে আল্লাহর মতলবই বা কি ছিল। এ দ্বারা আল্লাহ তা’আলা অনেককে বিপথগামী করেন, আবার অনেককে সঠিক পথও প্রদর্শন করেন। তিনি অনুরূপ উপমা দ্বারা অসৎ ব্যক্তিবর্গ ভিন্ন কাকেও বিপথগামী করেন না।
Comment