আকীদা নিয়ে বিতর্ক - কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবদার
যুদ্ধকৌশলের একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতি হচ্ছে; যখন কোন বাহিনীর মূল ঘাটিতে আক্রমণের শিকার হয় তখন তারা সবচেয়ে খারাপ সময় পার করে।
কারণ মূল ঘাটি হচ্ছে পূরা বাহিনীর শক্তির কেন্দ্র, এটা ধ্বংস হয়ে গেলে বাহিনীর অন্যান্য শক্তির আর কোন মূল্য থাকে না। তাই যুদ্ধে একপক্ষ সর্বদা যত দ্রুত সম্ভব অপর পক্ষের মূলকেন্দ্র ধ্বংস করে ফেলার চেষ্টা করে। ইহা থেকে বাচার জন্য সকল বাহিনীই বিভিন্ন প্রক্সি ওয়ার বা পার্শ্বীয় যুদ্ধ চালু করে রাখে, ছোট ছোট দল বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করে বিরোধীদেরকে ব্যস্ত রাখে, যাতে তাদের মূল কেন্দ্র নিরাপদ থাকে ও শত্রুর শক্তি আস্তে আস্তে নিঃশেষ হয়ে যায়।
আমেরিকার দিকে লক্ষ্য করলেই তা বুঝা যাবে, তাদের দেশের অভ্যন্তরে একটি আক্রমণ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে শত আক্রমণের চেয়েও বেশী প্রভাবশীল। কারণ নিজ দেশের আক্রান্ত হওয়ার অর্থ হচ্ছে তাদের বিদায় ঘণ্টা বেজে যাওয়া।
এই নীতিটা শুধু যুদ্ধ ক্ষেত্রেই নয়, অন্যান্য স্থানেও প্রয়োগ যোগ্য। তানজীমের আকীদা-মানহাজ ও উমারাগণ হচ্ছেন আমাদের দাওয়াহ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে শক্তির মূলকেন্দ্র। তাই এদেরকে সকল ইখতিলাফ ও বিতর্ক থেকে মুক্ত রাখা হয়। কারণ, তানজীম দাওয়াহ বা যুদ্ধের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় থাকে তখনই যখন তাদের উমারাগণ বা আকীদা-মানহাজের উপর আক্রমণ আসে।
আল্লাহ তায়ালার সিফাতের মাসায়ালা নিয়ে অনলাইনে প্রায় সময় ব্যাপক আলোচনা হয় এবং তা হতেই পারে। কারা করছে বা কেন করছে তা লক্ষণীয় নয়। আগেও হয়েছে, সামনেও হবে; কেহই এগুলো বন্ধ করতে পারবে না। তবে এই ক্ষেত্রে দুঃখজনক ভাবে কেহ কেহ নিজেদের পক্ষে বিতর্কে উমারাগণকে ব্যবহার করছেন। একপক্ষ তানজীমের উমারাদের উদাহরণ দিচ্ছেন তো আরেক পক্ষ তালেবান উমারাগণের উদাহরণ দিচ্ছেন। কিন্তু এই কাজগুলো কখনোই ভাল ফল বয়ে আনে না।
কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই সমস্ত ইখতিলাফ মাসলাক প্রীতি জাগিয়ে তুলে, যা এক দলের প্রতি অপর দলের বিদ্বেষ সৃষ্টি করে। প্রত্যেকটা বিতর্কেই এমন দুইটা ভাগ হয়ে যায়, এখন উমারাগণের আকিদা ও সম্মানকে নিজেদের বিতর্কে ব্যবহারের ফলে মানুষকে আসলে তাদের প্রতি বিরোধী করে তুলা হবে। এক পক্ষ অপর পক্ষের উমারাগণের প্রতি ভুল ধারণা রাখা শুধু করবে, যা গ্লোবাল জিহাদের ক্ষেত্রে চরম ক্ষতিকর।
অন্যদিকে উমারাগণের উপর আঘাত আসার অর্থ হচ্ছে বিতর্কের অংশগ্রহণকারীগণ দলীল দিয়ে নিজেদের মতকে টিকাতে পারছেন না ফলে উনাদেরকে ব্যবহার করছেন। আর একবার যখন মানুষ উমারাগণকে নিয়ে কথা বলার সুযোগ পেয়ে যাবে তখন পরবর্তীতে যে কেহই যেই কোন ইস্যুতে তাদের উপর কথা বলতে শুরু করবে, যা হবে দাওয়াহ ক্ষেত্রে অনেক খারাপ মুহূর্ত।
সর্বশেষ উমারাগণের আলোচনা থেকে যতটুকু বুঝা যায়, উনারা যদি এই সমস্ত ঘটনা শুনতেন কখনোই কি এগুলোর অনুমতি দিতেন? উনারা কি এগুলোতে সন্তুষ্ট হতেন? কখনোই না। কোন দাওয়াতের ভূমিতে এই ধরণের সমস্যা শুরু হওয়া ভাল কিছু ইংগিত বহন করে না।
তাই আমাদেরকে অনেক বেশী সতর্ক হতে হবে। যেকোনো মূল্যে হোক, আলোচনার মোড় তানজীম বা তালেবান উমারাগণের থেকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে হবে। তা না হলে এখান থেকে ইতিবাচকের তুলনায় নেতিবাচক ফলাফলের আশঙ্কা অনেক বেশী। আল্লাহু আ’লাম।
আল্লাহ তায়ালা এই ভূমিতে জিহাদের দাওয়াহকে কবুল করে নিন, আমীন।
Comment