Announcement

Collapse
No announcement yet.

উত্তরার একটি জামে মসজিদের খতিব সাহেবের চরম বিভ্রান্তিকর বক্তব্য

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • উত্তরার একটি জামে মসজিদের খতিব সাহেবের চরম বিভ্রান্তিকর বক্তব্য

    উত্তরার একটি জামে মসজিদের খতিব সাহেবের চরম বিভ্রান্তিকর বক্তব্য

    গতকাল রোজ শুক্রবার ০৩-১২-২১ ইং তারিখে উত্তরার একটি জামে মসজিদের খতিব সাহেব জুমার খুতবায় যে বয়ান দিয়েছেন তার প্রায় পুরো আলোচনা গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনেছি। তার পুরো আলোচনার মাঝে কেমন যেন দ্বীনের সাথে একটা বিরাট গরমিল খুঁজে পেয়েছি। ওয়াল্লাহি তার সমালোচনা করছি না, বরং দ্বীনের স্বার্থেই কিছু কথা বলতে হচ্ছে। প্রথমত বলে নিচ্ছি তার পুরো আলোচনা ব্যখ্যা-বিশ্লেষণ করা সম্ভব না। তাছাড়া তার পুরো আলোচনাতে অবশ্য অনেক ভালো দিকও রয়েছে। ওয়াল্লাহি নিঃসন্দেহে সম্মানিত আলেম-উলামা, মাসজিদের খতিব, মুয়াজ্জিনদেরকে আল্লাহর জন্যই ভালোবাসি। তাদের ভালো কাজগুলোর প্রশংসা করি। কিন্তু তাদের মাঝে কেউ যদি দ্বীনের সাথে খেয়ানত করার চেষ্টা করে তবে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারি না। এমনিতেই তাগুতের ভয়ে আলেম-উলামাদের অনেকেই হক কথা বলতে সাহস পান না। উপরন্তু যারা দুই চারটি হক কথা বলার চেষ্টা করেন তাদেরকে বিভিন্নভাবে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়। এই অবস্থায় যদি দ্বীনের খেদমতে হক কথা বলার মানুষগুলোকে দমিয়ে রাখা হয়, তবে ইসলাম ও মুসলিমদের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। তার উপর দ্বীনের খেদমতের নামে যদি দ্বীনের সাথে খেয়ানত করা হয় তবে দরবারি আলেমদের বিচ্যুতির সাথে সাথে আম মুসলিমদেরও বিচ্যুতি ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। যাইহোক আজকের আলোচনায় খতিব সাহেবের ত্রুটিযুক্ত বক্তব্যের (অনেকটা মদের সাথে পানি মিশিয়ে হালাল বলে চালিয়ে দেওয়ার মত) বিষয়ে কিছু কথা বলতে চাই। প্রথমত তিনি তার পুরো আলোচনায় সাধারণ আম মুসলিম তথা জনগণের বিচ্যুতি কথা ঢালাওভাবে তুলে ধরেছেন। অপর দিকে তিনি তাগুত তথা জালিম (স্পষ্ট কুফর ও শিরকের উপর প্রতিষ্ঠিত শাসক) শাসকের মারাত্নক মারাত্নক বিচ্যুতি বিষয়গুলো তিনি সুকৌশলে এড়িয়ে গেছেন। বরং তিনি তাগুত তথা জালিম (স্পষ্ট কুফর ও শিরকের উপর প্রতিষ্ঠিত শাসক, যারা আল্লাহর পরিবর্তে মানবরচিত আইন তৈরি করে এবং সেই অনুযায়ী ফায়সালা করে) শাসকের পক্ষে পুরো আলোচনায় এক রকম সাফাই গেয়েছেন। কেন তিনি শুধু সাধারণ আম মুসলিম তথা জনগণের বিচ্যুতি কথাগুলো ঢালাওভাবে তুলে ধরলেন? কুফর প্রধান হিন্দুত্ববাদী জালিম হাসিনা সরকারের মারাত্নক মারাত্নক বিচ্যুতির বিষয়গুলো মানুষের সামনে কেন তুলে ধরলেন না? এখানে একটি বিষয় পরিষ্কার করা দরকার যে হাজার হাজার সাধারণ জনগণের বিচ্যুতির চেয়ে রাষ্ট্রের শাসকের বিচ্যুতি অনেক বেশি মারাত্নক ও গোমরাহি। কেননা একজন শাসকের বিচ্যুতির কারণে হাজার হাজার মানুষ গোমরাহ হতে পারে। পক্ষান্তরে একজন সৎ ও ন্যায়বান শাসকের কারণে হাজার হাজার মানুষ সুপথ পেতে পারে। বর্তমান সামাজিক অবক্ষয়ের জন্য কেন তিনি শুধু সাধারণ জনগণকে ঢালাওভাবে দোষারোপ করলেন? তিনি তো সাধারণ জনগণের বিচ্যুতির বিষয়গুলো বর্ণনার সাথে সাথে হিন্দুত্ববাদী জালিম হাসিনা সরকারের বিচ্যুতির বিষয়গুলোও বর্ণনা করতে পারতেন? দ্বীনের স্বার্থে কিছুটা হলেও তিনি জালিম শাসকের বিচ্যুতির বিষয়গুলো সাধারণ মুসলিমদের সামনে তুলে ধরতে পারতেন। জালিম শাসকের অত্যাচার থেকে কিভাবে বের হওয়া যায় সেই বিষয়ে কিঞ্চিৎ হলেও সাধারণ মুসলিমদের ধারণা দিতে পারতেন। বরং তার পুরো আলোচনায় তিনি সুকৌশলে জিহাদবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। বরং তিনি স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছেন যে সবধরনের দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য নাকি তাগুতের কুফর ও শিকর মিশ্রিত প্রচলিত আইনের মাধ্যমে করতে হবে। নাউযুবিল্লাহ। আল্লাহ্‌ আমাদের এধরনের গোমরাহি থেকে হেফাজত করুন। যেখানে প্রচলিত তাগুতি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাই একটা সমস্যা সেখানে কিরূপে সমস্যার সমাধান আশা করা যায়? এধরনের আশা করা তো মরুভূমির মরিচিকা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাছাড়া তিনি তার পুরো আলোচনায় সহিংস আন্দোলনের বিষয়টি পুরোপুরি স্পষ্ট করেননি। সহিংস আন্দোলনের সাথে জিহাদের পার্থক্যও করেননি। সহিংস আন্দোলন কি জিনিস আর আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করা কি জিনিস সেই বিষয়টি তিনি আম মুসলিমের সামনে স্পষ্টরূপে বর্ণনা করেননি। যেহেতু তাগুতি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রধানেরা সহিংস আন্দোলনের সাথে জিহাদের একটি যোগসূত্র খুঁজে পান, তাই এখানে তাকে এই বিষয়টি আম মুসলিমদের সামনে স্পষ্ট করা উচিত ছিল। সহিংস আন্দোলনের বিষয়টি যে কয়েকটি উদাহরণের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন তাতে আকার ইংগিতে তিনি মুসলিমদের ফরজ বিধান জিহাদকেই বুঝিয়েছেন, যদিও তিনি জিহাদের কথা বলেননি। তিনি মূলত এই বিষয়টির মাধ্যমে খুব সুকৌশলে মুসলিমদেরকে এই বার্তা দিয়েছেন যে তারা যেন তাগুতের বিরুদ্ধে স্বসস্ত্র জিহাদে লিপ্ত না হন। তার আরেকটি কথার মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট হয়। তিনি একরকম প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিলেন যে তাগুত শাসকের বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলন কিংবা কোনো ধরনের বিদ্রোহ করা যাবে না। বরং তার ভাষ্য অনুযায়ী প্রচলিত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে থেকেই সবধরনের সমস্যার সমাধান করতে হবে। তার বর্ণনা অনুযায়ী এটাও নাকি ইসলাম অনুমোদন দিয়েছে। নাউযুবিল্লাহ। হ্যাঁ আমরাও স্পষ্টরূপে বলি সহিংস আন্দোলনের (যা প্রকৃতপক্ষে জিহাদের অন্তর্ভূক্ত নয়) নামে সাধারণ জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করা শরিয়ত অনুমোদন করে না। সহিংস আন্দোলনের (ফিতনা-ফাসাদ, যা প্রকৃতপক্ষে অন্য মুসলিমের জানমালের বিঘ্ন ঘটায়) নামে কোন মুসলিমের রক্ত ঝরানো তো প্রশ্নই আসে না। শরিয়তের ভাষ্য অনুযায়ী প্রতি মুসলিমই আমাদের ভাই। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক হবে সৌহার্দ ও সম্প্রতির। কোন মুসলিমের রক্ত ঝরানো তো দূরের কথা তাদের সাথে অহেতুক ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত হওয়াও তো শরিয়ত অনুমোদন করে না। তাদের সাথে আমাদের সম্পর্ক হবে আল ওয়ালা আল বারার মাফকাঠিতে।

    শেষ কথা, সম্মানিত খতিব সাহেব যে ত্রুটিযুক্ত বক্তব্য দিয়েছেন তার ব্যখ্যা-বিশ্লেষণ করার কোনই ইচ্ছা আমার ছিল না। কিন্তু দ্বীন ও মুসলিমদের স্বার্থেই কিছু কথা বলতে হলো। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় যে সম্মানিত খতিব সাহেবের বক্তব্য অনুযায়ী যেহেতু জালিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যাবে না বা সহিংস আন্দোলন করা যাবে না, তাই কেয়ামত পর্যন্তও জিহাদ সম্ভব না (যদি তিনি সহিংস আন্দোলন আর জিহাদের বিষয়টি আলাদা-আলাদাভাবে স্পষ্ট করতেন তবে বিষয়টা ভিন্ন ছিল, কিন্তু তিনি তা করেননি, ফলে সাধারণ মুসলিমের সামনে বিষয়টা ধোঁয়াশাপূর্ণ থেকে গেছে)। আর ফরজ জিহাদ (আলোচনায় তিনি ফরজ জিহাদকে কৌশলে সহিংস আন্দোলন বলে চালিয়ে দিয়েছেন, যদিও তিনি জিহাদের কথা মুখ দিয়ে বলেননি) ব্যতীত পরিপূর্ণরূপে ইসলামের হুকুমতগুলোও কায়েম করা সম্ভব না। তাই সম্মানিত খতিব সাহেব ও দরবারি আলেমদের কাছে আমার প্রশ্ন ফরজ জিহাদের পরে আর কোন পথ রয়েছে যে পথে পরিপূর্ণরূপে দ্বীন কায়েম করা সম্ভব? তার এই ত্রুটিযুক্ত বক্তব্যের মাধ্যমে শত শত মুসলিমের কাছে যে ভুল বার্তা পৌছলো তাতে সাধারণ মুসলিম তাওহীদ ও কুফরের গণ্ডি পার্থক্য করতে পারবে না। বরং তারা কুফর ও শিরক মিশ্রিত জীবন ব্যবস্থার সাথে নিজেদেরকে আরও বেশি করে মানিয়ে নেবে এবং তাওহীদ ভুলে যাবে। এতে করে তারা ইসলামের শত্রুদের চিনতে ভুল করবে। ফলে মুসলিমরা কখনো মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারবে না। তারা ইসলামের সঠিক রাস্তাও কখনো খুঁজে পাবে না। আমরা জানি যেহেতু কুফরী রাষ্ট্র প্রধানদের পক্ষ থেকে চাপ রয়েছে, তাই তিনি আজকের আলোচনা এভাবে সাধারণ মুসলিদের সামনে তুলে নাও ধরতে পারতেন। তিনি আজকের বিষয় এভাবে আলোচনা না করে সাধারণ দ্বীনি বিষয় আলোচনা করতে পারতেন। এতে করে সাধারণ মুসলিদের উপকার হতো, সাথে আমাদের দ্বীনেরও কল্যাণ হতো। অন্ততপক্ষে তিনি এবিষয়ে চুপ থাকতে পারতেন। আজকের এই স্পর্শকাতর বিষয়ে তিনি যে ভুল বার্তা দিলেন, এতে করে অনেক সাধারণ মুসলিমের পদস্খলিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আজকের আলোচনায় আল ওয়ালা আল বারা নিয়ে আলোচনা করতে পারতেন। এতে করে মুসলিমরা দ্বীনের সঠিক মানহাজ শিখতে পারতো। উল্টো তিনি কৌশলে মুসলিমদের শত্রুদের সাথে বন্ধুত্বের বার্তা দিলেন। একজন মুসলিম হিসেবে এটা কি করে সম্ভব? আমার বুঝে আসে না। আল্লাহ্‌ তা’আলাই ভালো জানেন। আমার কথাগুলোর মাঝে যদি কোন বাড়াবাড়ি কিংবা ছাড়াছাড়ি হয়ে থাকে তবে তার জন্য মাফ চাই এবং আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।

    পরিশেষে আপনাদেরকে কুরআনের একটি আয়াত স্মরণ করিয়ে দিয়েই শেষ করতে চাই।
    لَاۤ اِكْرَاهَ فِى الدِّيْنِ ۗ قَدْ تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ ۚ فَمَنْ يَّكْفُرْ بِا لطَّا غُوْتِ وَيُؤْمِنْ بِۢا للّٰهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِا لْعُرْوَةِ الْوُثْقٰى لَا انْفِصَا مَ لَهَا ۗ وَا للّٰهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ

    "দীনের মধ্যে জবরদস্তির অবকাশ নেই, নিশ্চয় হিদায়াত গোমরাহী হতে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে। কাজেই যে ব্যক্তি মিথ্যে মা’বুদদেরকে (তাগুতকে) অমান্য করল এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনল, নিশ্চয়ই সে দৃঢ়তর রজ্জু ধারণ করল যা ছিন্ন হওয়ার নয়। আল্লাহ সর্বশ্রোতা এবং সর্বজ্ঞাতা।" (সূরা আল বাকারা, আয়াত ২৫৬)

    এই আয়াতে সবধরনের মিথ্যে মা’বুদদেরকে ( অর্থাৎ তাগুতকে) অস্বীকার ও অমান্য করার কথা বলা হয়েছে। এখানে তাগুত বলতে তাদেরকেও বোঝানো হয়েছে যারা কুফরী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার অধীনে থেকে আল্লাহর পরিবর্তে মানবরচিত কুফরি আইন প্রণয়ন করে এবং সেই অনুযায়ী ফায়সালা করে। এই আয়াতের আলোকে এটা স্পষ্ট যে একটি কুফরী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার অধীনে যারা শাসনকার্য পরিচালনা করে তাদের মিথ্যা আনুগত্য তো দূরের কথা, বরং তাদেরকে অস্বীকার ও অমান্য করার কথা বলা হয়েছে। এখন এতো সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকা সত্বেও কেউ যদি তাদের পক্ষে মিথ্যা আনুগত্যের ছবক দেয়, তবে তা কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়। বরং তাদের এই দাবি মিথ্যা এবং ভ্রান্ত। হিন্দুত্ববাদী হাসিনা সরকারের কুফরি যে সুস্পষ্ট এর শত শত প্রমাণ রয়েছে। আর এখন তো তারা তাদের কুফরিগুলোকে প্রকাশ্যে স্বীকৃতি দিচ্ছে। এই কুফরি শাসক প্রধানেরা তো মুসলিমদের পরিবর্তে নাপাক ইয়াহুদ, নাসারা এবং মুশরিকদের অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে। আল ওয়ালা আল বারার মাপকাঠিতে এরা তো ইসলামের শত্রু। তাহলে কি করে এদের পক্ষে সাফাই গাওয়া সম্ভব? তাছাড়া তাদের ফিতনা হত্যার চেয়েও জঘন্য। এখন কেউ যদি এই বলে জিহাদ বিরোধী ফতোয়া দেয় যে এখানে তো মুসলিমদের বসবাস, এখানে জিহাদের ঢাক দিলে তো অনেক রক্তপাত হবে, এখানে জিহাদের পরিবেশ নেই, এখন জিহাদ করার সময় না ইত্যাদি ইত্যাদি তবে কিরূপে তাদের এই ফতোয়া গ্রহণযোগ্য হতে পারে?
    Last edited by আবু আব্দুল্লাহ; 12-04-2021, 02:05 PM.
Working...
X