হালাল হারাম ভাল মন্দের মানদণ্ড কি?
হালাল: যা করার অনুমতি আছে।
হারাম: যা করার অনুমতি নেই।
মা’রূফ: ভাল কাজ।
মুনকার: মন্দ কাজ।
এই যে হালাল হারাম, ভাল মন্দ- এগুলোর মানদণ্ড কি?
কিভাবে নির্ধারণ হবে যে, এ কাজটি হালল ঐটি হারাম, এটি ভাল ঐটি মন্দ?
স্যাকুলার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে এর মানদণ্ড হলো জনগণের অভিব্যক্তি। জনগণ যেটাকে হালাল বেবেচনা করবে সেটা হালাল, যেটাকে হারাম সেটা হারাম। যেটাকে ভাল সেটা ভাল, যেটাকে মন্দ সেটা মন্দ।
তবে বাস্তব হলো, গুটি কয়েক তাগুতের খাহেশ আর স্বার্থই এসবের মানদণ্ড। জনগণ শুধু একটা দোহাইয়ের পাত্র। নতুবা যে দেশের শতকরা ৯০/৯৫ ভাগ মানুষ মুসলিম, সে দেশের ফ্যাক্টরিতে কেনো নামায চালু করা গেল না?
# আপনি শুনবেন দুর্নীতি দমনের কথা। কিন্তু নীতির মানদণ্ড কি, দুর্নীতিরই বা মানদণ্ড কি?
# আপনি শুনবেন সন্ত্রাস দমনের কথা। কিন্তু সন্ত্রাসের সংজ্ঞা কি?
- আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার নাম সন্ত্রাস।
# আপনি শুনবেন অপরাধ দমনের কথা। কিন্তু অপরাধ কাকে বলে?
- শাতিমে রাসূলকে জাহান্নামে পাঠানো অপরাধ।
- জিহাদের পক্ষে বলা অপরাধ।
- পর্দার পক্ষে বলা অপরাধ।
- সহশিক্ষার বিপক্ষে বলা অপরাধ।
- অন্যায়ে বাধা দেয়া অপরাধ।
# আপনি শুনবেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার কথা। তো সাম্প্রদায়িকতা কি?
- কাফেরকে কাফের বলা সাম্প্রদায়িকতা।
- মুসলিমদের পক্ষে বলা সাম্প্রদায়িকতা।
- ওয়ালা বারার নাম সাম্প্রদায়িকতা।
- আল-হুব্বু ফিল্লাহ ওয়াল-বুগদু ফিল্লাহ তথা আল্লাহ যাকে ভালবাসতে বলেছেন তাকে ভালবাসা, যাকে ঘৃণা করতে বলেছেন তাকে ঘৃণা করার নাম সাম্প্রদায়িকতা।
# শুনবেন মানবাধিকার লঙ্ঘনের কথা। ‘তালেবান ক্ষমতায় আসার পর আফগানিস্তানে চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে মানবতা (!!!)।’ তো মানব কে আর মানবের অধিকারই বা কি?
- যে ব্যক্তি তার সৃষ্টিকর্তার নাযিলকৃত দ্বীন ধর্ম উপেক্ষা করে সম্পূর্ণ আপন খেয়াল খুশি ও খাহেশমতো জীবন যাপনে বিশ্বাসী সে মানব (শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে আসলে যে একটা শয়তান)। আর এই খাহেশি যেন্দেগী (তথা শয়তানি যিন্দেগীর) ব্যবস্থাপনার নাম মানবাধিকার। এখানে সৃষ্টিকর্তার বিধি নিষেধ আরোপ করা হবে মানবাধিকার লঙ্ঘন।
- যারা এই শয়তানি যিন্দেগীকে লাথি মেরে আপন রবের দেয়া জীবন ব্যবস্থা মেনে চলতে চায় তারা মানব নয় তাদের কোনো অধিকারও নেই। এ কারণে আমেরিকা যখন হাজার হাজার নারী-শিশু-বৃদ্ধকে বোমা মেরে মরে উড়িয়ে দিত, বাগরাম কারাগারে চরম নির্যাতনের মুখে মুসলিমরা যখন ধুকে ধুকে মরতো তখন মানবাধিকার লঙ্ঘন হতো না। কারণ এরা মানব নয়, এদের কোনো অধিকার নেই।
আমি মুসলিম এর কি অর্থ?
ইসলাম অর্থ আত্মসমর্পণ করা, আনুগত্য বরণ করে নেয়া। যদি আপনি মুসলিম হন আপনাকে সম্পূর্ণভাবেই আল্লাহর সামনে আত্মসমর্পণ করতে হবে। আল্লাহর নাযিলকৃত দ্বীনকে জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করে নিতে হবে।[1]
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
{فَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ فَلَهُ أَسْلِمُوا} [الحج: 34]
তোমাদের (সকলের) ইলাহ একই ইলাহ (যিনি আল্লাহ)। সুতরাং তোমরা (সকলে) তারই সামনে আত্মসমর্পণ কর। -হাজ্ব ৩৪
তোমাদের (সকলের) ইলাহ একই ইলাহ (যিনি আল্লাহ)। সুতরাং তোমরা (সকলে) তারই সামনে আত্মসমর্পণ কর। -হাজ্ব ৩৪
আরও ইরশাদ করেন,
{يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا ادْخُلُوا فِي السِّلْمِ كَافَّةً (208)} [البقرة: 208]
হে ঈমানদারগণ! ইসলামে তোমরা পুরাপুরি প্রবেশ কর। -বাকারা ২০৮
হে ঈমানদারগণ! ইসলামে তোমরা পুরাপুরি প্রবেশ কর। -বাকারা ২০৮
আপনাকে হতে হবে যেমনটা আল্লাহ তাআলা ইব্রাহিম আলাইহিস সালামের ব্যাপারে বলেছেন,
{إِذْ قَالَ لَهُ رَبُّهُ أَسْلِمْ قَالَ أَسْلَمْتُ لِرَبِّ الْعَالَمِينَ (131)} [البقرة: 131]
যখন তার রব তাকে বললেন, (হে ইব্রাহিম) আত্মসমর্পণ কর, তখন তিনি (সঙ্গে সঙ্গে) বললেন, আমি রাব্বুল আলামিনের (প্রতিটি হুকুমের সামনে) আত্মসমর্পণ করলাম। -বাকারা ১৩১
যখন তার রব তাকে বললেন, (হে ইব্রাহিম) আত্মসমর্পণ কর, তখন তিনি (সঙ্গে সঙ্গে) বললেন, আমি রাব্বুল আলামিনের (প্রতিটি হুকুমের সামনে) আত্মসমর্পণ করলাম। -বাকারা ১৩১
যদি আপনি আপনার সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের উপর বিশ্বাস রাখেন বলে দাবি করেন, যদি দাবি করেন আপনি তার আনুগত্য মেনে নিয়েছেন; তাহলে আপনার সামনে হালাল হারাম, ভাল মন্দ, নীতি দুর্নীতি, ন্যায় অন্যায়, অধিকার অনধিকার সব কিছুর একমাত্র মানদণ্ড হবে আল্লাহর হুকুম।[2]
যে ব্যক্তি আল্লাহকে রব স্বীকার করেও হালাল হারাম, ন্যায় অন্যায়ের ভিন্ন মানদণ্ড খোঁজে তার ব্যাপারে ফায়সালা সেটাই যা কুরআনে কারীম করে রেখেছে-
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُوا بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَنْ يَتَحَاكَمُوا إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُوا أَنْ يَكْفُرُوا بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَنْ يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا • وَإِذَا قِيلَ لَهُمْ تَعَالَوْا إِلَى مَا أَنْزَلَ الله وَإِلَى الرَّسُولِ رَأَيْتَ الْمُنَافِقِينَ يَصُدُّونَ عَنْكَ صُدُودًا . –النساء 60-61
(হে নবী) আপনি কি সেসব লোককে দেখেননি, যারা (মুখে তো) দাবী করে, আপনার উপর যে কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে এবং যে কিতাব আপনার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে, তারা তার উপর ঈমান এনেছে; অথচ (তাদের হাল হলো) তারা তাগুতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ ছিল, তারা যেন তাকে না মানে। আর শয়তান ইচ্ছা করছে তাদেরকে (সঠিক রাস্তা থেকে) বিচ্যুত করে বহুদূর নিয়ে যেতে। যখন ওদের বলা হয়, ‘আস সে বিধানের দিকে যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং আস রাসূলের দিকে (যেন তিনি সে ইলাহি বিধান মতে ফায়সালা করে দেন)’, তখন আপনি মুনাফিকদের দেখবেন, ওরা আপনার থেকে সম্পূর্ণ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। -নিসা ৬০-৬১
(হে নবী) আপনি কি সেসব লোককে দেখেননি, যারা (মুখে তো) দাবী করে, আপনার উপর যে কিতাব অবতীর্ণ হয়েছে এবং যে কিতাব আপনার পূর্বে অবতীর্ণ হয়েছে, তারা তার উপর ঈমান এনেছে; অথচ (তাদের হাল হলো) তারা তাগুতের কাছে বিচার নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ ছিল, তারা যেন তাকে না মানে। আর শয়তান ইচ্ছা করছে তাদেরকে (সঠিক রাস্তা থেকে) বিচ্যুত করে বহুদূর নিয়ে যেতে। যখন ওদের বলা হয়, ‘আস সে বিধানের দিকে যা আল্লাহ নাযিল করেছেন এবং আস রাসূলের দিকে (যেন তিনি সে ইলাহি বিধান মতে ফায়সালা করে দেন)’, তখন আপনি মুনাফিকদের দেখবেন, ওরা আপনার থেকে সম্পূর্ণ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। -নিসা ৬০-৬১
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا. –النساء 65
কিন্তু না (হে নবী!), আপনার রবের কসম, তারা ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মাঝে সৃষ্ট বিবাদের বিষয়ে আপনাকে বিচারক নির্ধারণ করবে, অতঃপর আপনি যে ফায়সালা দেন সে ব্যাপারে নিজেদের অন্তরে কোন দ্বিধা-সংকোচ অনুভব করবে না এবং পরিপূর্ণ শিরধার্য করে মেনে নিবে। -নিসা ৬৫
কিন্তু না (হে নবী!), আপনার রবের কসম, তারা ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মাঝে সৃষ্ট বিবাদের বিষয়ে আপনাকে বিচারক নির্ধারণ করবে, অতঃপর আপনি যে ফায়সালা দেন সে ব্যাপারে নিজেদের অন্তরে কোন দ্বিধা-সংকোচ অনুভব করবে না এবং পরিপূর্ণ শিরধার্য করে মেনে নিবে। -নিসা ৬৫
***
[1] فالإسلام يتضمن الاستسلام لله وحده؛ فمن استسلم له ولغيره كان مشركا ومن لم يستسلم له كان مستكبرا عن عبادته والمشرك به والمستكبر عن عبادته كافر والاستسلام له وحده يتضمن عبادته وحده وطاعته وحده. فهذا دين الإسلام الذي لا يقبل الله غيره. -مجموع الفتاوى (3/ 91)
[2] الحلال ما أحله الله ورسوله والحرام ما حرمه الله ورسوله. -إعلام الموقعين عن رب العالمين (1/ 39)
Comment