Announcement

Collapse
No announcement yet.

ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা ও বিবেকের উপলব্ধি

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা ও বিবেকের উপলব্ধি

    ফেসবুক লাইভে আত্মহত্যা ও বিবেকের উপলব্ধি


    ২রা ফেব্রুয়ারি ২০২২। বুধবার রাত ৯টা। রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমণ্ডির ৭ নম্বর রোডের একটি ভবনের ৫ম তলার একটি ফ্ল্যাট। আভিজাত্যের ছোঁয়ায় মোড়ানো বিশাল ফ্ল্যাটের একমাত্র বাসিন্দা আবু মোহসিন খান। বসে আছেন একটি চেয়ারে। টেবিলে থাকা ট্যাবে ফেসবুক লাইভে আছেন তিনি। বার্ধক্যের নিঃসঙ্গতা, ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হওয়া, স্ত্রী-সন্তানদের বিচ্ছিন্নতা, মানসিক অবসাদ আর একাকীত্বের কথা বলছেন ফেসবুক লাইভে। ১৬ মিনিট যাবত তিনি তার জীবনের হতাশার কথা বলে যান। ১৬ মিনিট ২ সেকেন্ডের মাথায় নিজস্ব লাইসেন্স করা পিস্তল মাথায় ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করেন আবু মোহসিন খান। তখনো লাইভ চলছিল। লাইভে দেখা যাচ্ছিল একজন মানুষের মূহূর্তেই জীবিত থেকে মৃত হয়ে যাওয়ার দৃশ্য। লাইভ চলছে। আবু মোহসিন খানের নিথর দেহ পড়ে আছে চেয়ারে। ঠিক ক্যামেরার সামনে। ফেসবুক লাইভটি ১ ঘণ্টা ১৩ মিনিট সচল ছিল।


    আজকে যে ঘটনার কথা বলছি, সে ঘটনার ভুক্তভোগী আবু মোহসিন খান, সম্পর্কে বাংলাদেশের একজন প্রথম সারির চলচ্চিত্র অভিনেতার শ্বশুর হন। তার এক মেয়ে এক ছেলে। একাকী থাকতেন ধানমণ্ডিতে। পাশ্চাত্যের আদর্শে দীক্ষিত সন্তানরা পিতাকে ছেড়ে বেছে নিয়েছে নিজেদের ক্যারিয়ার আর লাইফ। স্বামীর প্রতি দায়বদ্ধতা ছুড়ে ফেলে স্ত্রী চলে গেছেন দূর অস্ট্রেলিয়ায় ছেলের কাছে। বার্ধক্যের একাকীত্ব আর ব্যবসায়িক প্রতারণার শিকার হয়ে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আত্মহত্যার এত পথ থাকতে কেন ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করলেন? এর উত্তর তিনি নিজেই দিয়েছেন তার লাইভে। তিনি বলেন, "আমি জানি আমি মরে পড়ে থাকলে এক সপ্তাহও কেউ জানতে পারবে না যে আমি মারা গেছি। তাই ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করছি, যেন সবাই জানতে পারে আমি মারা গেছি।" জীবনের হাজারো দুঃখ আর কষ্টের সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে না পেরে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটা স্পষ্ট। তার সিদ্ধান্ত যদিও একটি মারাত্মক ভুল ও শরঈ ভাবে একটি মারাত্মক পর্যায়ের অপরাধ। তা তিনি জেনেও এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ক্ষণস্থায়ী অশান্তি থেকে বাঁচতে বেছে নিয়েছেন চিরস্থায়ী অশান্তি।


    পাশ্চাত্য সভ্যতার ছাঁচে গড়ে ওঠা রঙ্গিন সমাজের ভেতরটা কতটা বিধ্বংসী তার হাজারো প্রমাণের মাঝে এই ঘটনা একটি প্রমাণ মাত্র। অনলাইন, মাদক আর স্মার্টফোনের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা সমাজের কাছে এই ঘটনা একটি বিনোদন। ঘটনাকে উপজীব্য করে লেখা হবে পোস্টের পর পোস্ট। তৈরি হবে অসংখ্য ইউটিউব ভিডিও। কোনো চলচ্চিত্র পরিচালকের হাতে পড়লে এই ঘটনার উপর নির্মিত হতে পারে কোনো নাটক, যার শুরুতে লেখা থাকবে "বাস্তব ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত"। ফেসবুক স্ক্রলিং এর গোলধাঁধায় আটকে পড়া যুবকের সামনে ঘটনাটি আসলে একটি স্যাড রিয়েক্ট দিয়ে rip লিখে কমেন্ট করে নিচের কোনো ফানি ভিডিও দেখে মূহূর্তেই হাসিতে লুটোপুটি খাবে। পত্র পত্রিকার ফ্রন্ট পেইজে কয়েকদিন চলবে ঘটনার সংবাদের মহড়া। দিন তিনেক পরে পুরো জাতি হারিয়ে যাবে কোনো নায়ক বা নায়িকার পছন্দ অপছন্দের লিড নিউজে অথবা বিপিএল এর চার ছক্কার উল্লাসে। কিছুদিন পর আবার ভাইরাল হবে একটি নিউজ "ফেসবুক লাইভে এসে আত্মহত্যা করলেন অমুক" । এই ঘটনার জন্য অনেকে অনেক কিছুকেই দায়ী করছে বা করবে। সন্তানরা দায়ী পিতাকে একাকী রাখার জন্য। স্ত্রী দায়ী স্বামীকে ত্যাগ করার জন্য। ব্যবসায়িক প্রতারকরা দায়ী প্রতারণার জন্য। কিন্তু প্রকৃত দায়ী আসলে কে? প্রকৃত দায়ী আমাদের এই পশু সমাজব্যবস্থা। যে সমাজব্যবস্থা শিক্ষা দেয়, কাছে আসার অশ্লীল গল্প। যে গল্পের কারণে ডাস্টবিনে পাওয়া যায় মানবশিশুর নিথর দেহ। যে সমাজব্যবস্থা শিক্ষা দেয় হালাল হারাম বিসর্জন দিয়ে, গরিবের রক্ত চুষে সম্পদের পাহাড় বানানো। যে সমাজব্যবস্থা শিক্ষা দেয় নারীদেরকে দ্বীন ও শরিয়তের অধীনতা থেকে বের করে স্বাধীন হওয়ার। যে সমাজব্যবস্থা মানুষকে আল্লাহর আসনে বসিয়ে ভাল মন্দ নির্ধারণের অধিকার তুলে দেয় মানুষের হাতে। যে সমাজব্যবস্থা দ্বীন, শরিয়ত ও ঈমানকে আখ্যা দেয় সেকেলে ও উগ্রবাদ বলে। সেই সমাজব্যবস্থাই এজাতীয় ঘটনার একমাত্র কারণ। যতদিন এই সমাজব্যবস্থা টিকে থাকবে ততদিন হাজারো চেষ্টা তদবির করেও কোনো উপকার হবে না। বিষফল বিলুপ্ত করতে চাইলে বিষবৃক্ষের শিকড় উপড়ে ফেলতে হবে।



    তিনি চলে গিয়েছেন। তার ভুল ও অপরাধ তার সাথে চলে গিয়েছে। সেটা আমাদের আলোচ্যবিষয় নয়। আমাদের আলোচ্যবিষয় হল সেই সমাজব্যবস্থা যা তাকে এই অপরাধ করতে উৎসাহিত করল। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একজন মানুষ আত্মিক প্রশান্তি না পেয়ে হতাশায় ভুগে আত্মহত্যা করে ফেলছে। যে সমাজব্যবস্থা আমাদের সন্তানদের স্বার্থপর হিসেবে গড়ে তোলে, পারিবারিক বন্ধন চুরমার করে দিতে যে সমাজব্যবস্থা সকল পন্থা অবলম্বন করে, সে সমাজের পরিণতি এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক। মানুষের সকল হতাশা, বিষণ্ণতা, ব্যর্থতার একমাত্র সমাধান হল ইসলাম। যখন মানুষের ব্যক্তিগত জীবনে, পারিবারিক জীবনে, সাংসারিক জীবনে, সামাজিক জীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে একমাত্র আল্লাহ ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে, আমাদের সন্তানদের শিক্ষাদীক্ষার মাধ্যম হবে ইসলাম। কেবল তখনই শান্তি ও স্থিরতা অর্জন হতে পারে। দ্বীন ও ঈমানের সাথে যুদ্ধ ঘোষণাকারী সমাজব্যবস্থায় থেকে শান্তি লাভের একমাত্র উপায় হল এই সমাজব্যবস্থার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করা। পাশ্চাত্য সভ্যতার বানানো জীবনব্যবস্থা যতই আকর্ষণীয় হোক না কেনো এর ভেতরটা অশান্তি আর বিশৃঙ্খলায় ভরপুর। এই ধরণের ঘটনাগুলো আমাদেরকে বারবার মনে করিয়ে দেয় আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু আমরা বুঁদ হয়ে থাকি নিত্যনতুন ইস্যু আর ট্রেন্ড নিয়ে। আর দোষারোপ করতে থাকি নিজের ভাগ্যকে।


    "হে বুদ্ধিমান লোকেরা, তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।"
    মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে আত্মহত্যা করতে প্রস্তুত লোকটি জানেই না আর এক মিনিট পরে সে কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে। সে জানে না এই জগত ছাড়ার সাথে সাথে সে কোন জগতে প্রবেশ করবে। ফেসবুক লাইভ দেখতে থাকা হাজারো মানুষ ভুলে থাকে তার কী হবে? পিস্তল দিয়ে গুলি করে দুনিয়া ছেড়ে চলে যাওয়া লোকটির স্থানে আমরা নিজেকে কল্পনা করে দেখি। দুচোখ বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে আমার রুহ কাদের হাতে যাবে? দুনিয়া ছেড়ে যাওয়ার পর যে জগতে প্রবেশ করব সে জগত কি আমার শান্তির জগত হবে নাকি শাস্তির? ফিরিশতাদের জামাত কি আমাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য অপেক্ষমান থাকবে নাকি শাস্তির ফিরিশতা আমাকে পাকড়াও করবে? আমার আমলের এই দুরবস্থা নিয়ে আল্লাহর সামনে দাঁড়ানোর সাহস হবে কি? কবরের নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে আমার কোনো আমল কি আলো হয়ে দেখা দিবে??
    এই ঘটনাগুলো থেকে আমরা শিক্ষা নিতে না পারলে আর কোন ঘটনা থেকে শিক্ষা নিব?
    আমরা চাই না, মুসলিম উম্মাহর কোনো সদস্যের সাথে এমন ঘটনা ঘটুক। চাই না, কোনো কালেমাওয়ালা মুসলিম এভাবে নিজেকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করুক। কাফেরদের সাংস্কৃতিক এই আগ্রাসনের শিকার অজ্ঞ মুসলিম সমাজকে বাঁচানোর জন্য আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে। আমার পিতা, মাতা, ভাই, বোন, ছেলে, মেয়েকে কাফেরদের আগ্রাসী ছোবল থেকে বাঁচাতে আমাকেই কিছু করতে হবে। এই আগ্রাসী ছোবল থেকে বাঁচার একটাই পথ। ففروا إلى الله দৌঁড়াও আল্লাহর দিকে। পরিবার ও সমাজ সংশোধনের লক্ষ্যে সংস্কারমূলক কাজ করতে হবে। পরিবারে দ্বীন ও ঈমানের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। পাশ্চাত্য সমাজব্যবস্থার কুফল ও ভয়ংকর পরিণতি সম্পর্কে সকলকে সতর্ক করে ইসলামে ফিরিয়ে আনতে হবে। সর্বোপরি ইসলামি সমাজ প্রতিষ্ঠায় সহযোগী হতে হবে। অন্যথায় সময়ের পাতায় পাতায় এমন অসংখ্য ঘটনা জায়গা করে নিতে থাকবে।

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে দুনিয়া ও আখিরাতের অমঙ্গল থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
    لن تركع أمة قائدها محمد (صلى الله عليه و سلم)

  • #2
    আল্লাহ্ আমাদেরকে হেফাজত করুন।

    Comment


    • #3
      এর একমাত্র কারণ হল আল্লাহর বিধান থেকে বিমুখতা প্রদর্শন করা তাই এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি ছিল কিন্তু যদি সে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী চলত তাহলে অত্যন্ত আন্তরিক প্রফুল্লতায় দিনাতিপাত করত এবং আল্লাহ তার জন্য উত্তম সহচরের ব্যবস্থা করে দিতেন এবং তাকে তার বিভীষিকাময় জীবন থেকে আল্লাহ রক্ষা করতেন।কারণ আল্লাহর সিদ্ধান্ত হল এমন।وَالَّذينَ ءامَنوا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَنُدخِلَنَّهُم فِى الصّٰلِحينَ
      [9] যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকাজ করে, আমি অবশ্যই তাদেরকে সৎকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করবمَن عَمِلَ صٰلِحًا مِن ذَكَرٍ أَو أُنثىٰ وَهُوَ مُؤمِنٌ فَلَنُحيِيَنَّهُ حَيوٰةً طَيِّبَةً ۖ وَلَنَجزِيَنَّهُم أَجرَهُم بِأَحسَنِ ما كانوا يَعمَلونَ
      [97] যে সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং সে ঈমাণদার, পুরুষ হোক কিংবা নারী আমি তাকে পবিত্র জীবন দান করব এবং প্রতিদানে তাদেরকে তাদের উত্তম কাজের কারণে প্রাপ্য পুরষ্কার দেব যা তারা করত।

      [124] وَمَن أَعرَضَ عَن ذِكرى فَإِنَّ لَهُ مَعيشَةً ضَنكًا وَنَحشُرُهُ يَومَ القِيٰمَةِ أَعمىٰ
      [124] এবং যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জীবিকা সংকীর্ণ হবে এবং আমি তাকে কেয়ামতের দিন অন্ধ অবস্থায় উত্থিত করব।وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجعَل لَهُ مَخرَجًا
      আর যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্যে নিস্কৃতির পথ করে দেবেন।وَيَرزُقهُ مِن حَيثُ لا يَحتَسِبُ ۚ وَمَن يَتَوَكَّل عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسبُهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ بٰلِغُ أَمرِهِ ۚ قَد جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيءٍ قَدرًا
      [3] এবং তাকে তার ধারণাতীত জায়গা থেকে রিযিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। আল্লাহ তার কাজ পূর্ণ করবেন। আল্লাহ সবকিছুর জন্যে একটি পরিমাণ স্থির করে রেখেছেন।الَّذينَ ءامَنوا وَتَطمَئِنُّ قُلوبُهُم بِذِكرِ اللَّهِ ۗ أَلا بِذِكرِ اللَّهِ تَطمَئِنُّ القُلوبُ
      [28] যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর যিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে; জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়

      Comment


      • #4
        এই আগ্রাসী ছোবল থেকে বাঁচার একটাই পথ।

        ففروا إلى الله

        দৌঁড়াও আল্লাহর দিকে।
        মিডিয়ার সাফল্য অনেকাংশেই তার প্রচারণার উপর নির্ভরশীল।

        Comment

        Working...
        X