[ কুরআন ও হাদীস পড়ার সময় নিজেকে শুধু মাত্র একজন মুসলিম হিসবে ভাববেন ও সত্যকে গ্রহন করার মন মানষিকতা নিয়ে কুরআন হাদিস পড়বেন, তাহলে ইনশাআল্লাহ সত্যকে জানবেন। ]
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেনঃ
اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡہٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ لَذِکۡرُ اللّٰہِ اَکۡبَرُ ؕ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ ﴿۴۵﴾
নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর অবশ্যই আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ।তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন।( সুরা আনকাবুত ৪৫)
মহান আল্লাহ এই আয়াতে বলেছেন যে,নামায মানুষ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর কথা অবশ্যই সত্য,এতে কোন সন্দেহ নাই,। কিন্তু কেউ যদি দিনের পর দিন নামায পড়ার পরেও সে পাপ কাজ থেকে ফিরতে না পারে তাহলে এর দ্বারা সে কি প্রমান করে? এর দ্বারা সে মানুষের নিকট এই দাওয়াত পৌছায় যে, নামায মানুষকে অন্যায় কাজ থেকে ফিরাতে পারে না। যদি নামায অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতো তাহলে আমি নামায পড়ার পরেও কেন অন্যায় ও মন্দ কাজে লিপ্ত?
কিন্তু যদি সে নামায পড়ার পর অন্যায় কাজ থেকে ফিরতো, সমাজে একজন ভালো মানুষে পরিনত হত তাহলে আরো কয়েকজন মানুষও তার এই আমল দ্বারা দাওয়াত পেতো।মুয়াজ্জিন যখন নামাযের দিকে তখন বলে " সফলতার দিকে এসো"। নামাজ পড়লেই মানুষ সফল। সুতরাং কেউ যদি নামায পড়ে সমাজে একজন সফল মানুষে পরিনত হয় তাহলে সমাজে অন্য অনেকেই তার এই সফলতার দিকে আসতো।
ঠিক তেমনি পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বহু জায়গায় মুসলিমদের বিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছেন।
وَ لَا تَہِنُوۡا وَ لَا تَحۡزَنُوۡا وَ اَنۡتُمُ الۡاَعۡلَوۡنَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۳۹﴾
আর তোমরা হীনবল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না, তোমরাই হবে সর্বোপরি (বিজয়ী); যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।(সুরা আলে ইমরান ১৩৯)
মহান আল্লাহ এ আয়াতে মুমিনদের বিজয়ের সংবাদ দিলেন। তবে শর্ত হলো মুমিন হতে হবে।
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَعَدَ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡکُمۡ وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَیَسۡتَخۡلِفَنَّہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ کَمَا اسۡتَخۡلَفَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِہِمۡ ۪ وَلَیُمَکِّنَنَّ لَہُمۡ دِیۡنَہُمُ الَّذِی ارۡتَضٰی لَہُمۡ وَلَیُبَدِّلَنَّہُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ خَوۡفِہِمۡ اَمۡنًا ؕ یَعۡبُدُوۡنَنِیۡ لَا یُشۡرِکُوۡنَ بِیۡ شَیۡئًا ؕ وَمَنۡ کَفَرَ بَعۡدَ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ্ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্যে প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ‘ইবাদত করবে, আমার কোন শরীক করবে না, এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারা তো সত্য-ত্যাগী।
এ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছের ইমান আনলে ও আমলে সলেহ করলে মহান আল্লাহ খিলাফত দিবেন। এটা আল্লাহর ওয়াদা, আল্লাহ স্বয়ং وَعَدَ اللّٰہُশব্দ উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর ওয়াদা অবশ্যই সত্য।
কিন্তু আজ দির্ঘ ৬০/৭০ বছর এই গনতান্ত্রিক পদ্বতিতে খিলাফত লাভের জন্য আমাদের প্রিয় দ্বীনি ভাইরা বিভিন্ন দেশে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।অথচ এক ইঞ্চি ভুমিতেও খিলাফত প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন নি। তাহলে প্রশ্ন হলো, মহান আল্লাহ ওয়াদা দেওয়ার পরেও মুসলিমরা দির্ঘদিন খিলাফত প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্ট করার পরে খিলাফত যখন পেলেন না তখন তাদের এই ব্যর্থ চেষ্টা দ্বারা কি প্রমান করেন?
তাদের এই গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার চেষ্টা করার ফলে মুসলিম উম্মাহ ও কাফেরদের নিকট এই ম্যাসেজ পৌছানো হচ্ছে যে,মুসলিমরা পরাজিত জাতি, তারা ব্যর্থ
আর তাদের কোরআনে বিজয়ের যে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে তাও সত্য নয়। (নাউজুবিল্লাহ) , কথাটা একটু কঠোর হয়ে গেলো কিন্তু বাস্তবতা এটাই।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বিজয়ের যে সুসংবাদ দিয়েছেন, খিলাফতের যে ওয়াদা দিয়েছেন, গনতন্ত্রের মত নিকৃষ্ট একটা কুফরী মতবাদের কারনে মহান আল্লাহর এই বিজয়ের সুসংবাদ, ও খিলাফতের ওয়াদাকে অসত্য হিসেবে সাব্যস্ত করলো। কেননা গনতন্ত্রের মাধ্যমে দিনের পর দিন চেষ্টা করেও খিলাফত পাচ্ছে না।অপরদিকে আল্লাহ খিলাফতের ওয়াদা দিয়েছেন ও বিজয়ের সুসংবাদ দিচ্ছেন। চিন্তা করুন গনতন্ত্র কত ভয়ংঙ্কর।
মুসলিমরা খুলাফায়ে রাশিদিনের সময়ে মত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে রোম ও পারস্য জয় করে ফেলেছিলো। অথচ এগুলো ছিলো তৎকালীন সুপার পাওয়ার। অথচ আজ সুপার পাওয়ারকে পরাজিত করাতো দূরের কথা, নিজেদের ভুমিতে ছোটখাটো দলকেই পরাজিত করতে পারছে না। বরং ছোট খাটো দলগুলোই আরো শক্তি শালী হচ্ছে।
কিন্তু যদি আজ গনতন্ত্র বাদ দিয়ে জিহাদ ও কিতালের পথ বেচে নেওয়া হতো তাহলে গোটা বিশ্বে মুসলিমদের বিজয় দেখতো। বদর যুদ্বে সরাসরি কাফেররা আসমানের ফেরেশতাকে যেভাবে দেখেছিলো, আজ কাফেররা সেরকম মুসলিমদের পক্ষ আসমানি সাহায্য দেখতো। ফলে মুসলিমদের এই দাওয়াত গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে যেত।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ حَرِّضِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ عَلَی الۡقِتَالِ ؕ اِنۡ یَّکُنۡ مِّنۡکُمۡ عِشۡرُوۡنَ صٰبِرُوۡنَ یَغۡلِبُوۡا مِائَتَیۡنِ ۚ وَ اِنۡ یَّکُنۡ مِّنۡکُمۡ مِّائَۃٌ یَّغۡلِبُوۡۤا اَلۡفًا مِّنَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِاَنَّہُمۡ قَوۡمٌ لَّا یَفۡقَہُوۡنَ ﴿۶۵﴾
হে নবী! বিশ্বাসীদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ কর,তোমাদের মধ্যে কুড়িজন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দু’শ জনের উপর বিজয়ী হবে এবং তোমাদের মধ্যে একশ’ জন থাকলে এক হাজার অবিশ্বাসীর উপর বিজয়ী হবে।কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায় যাদের বোধশক্তি নেই।
আজ যদি মুসলিমরা জিহাদ ও কিতালের পথ বেচে নিতো তাহলে আজ কাফেররা দেখতো যে, কুড়ি জন মুসলিম দুশ জনের উপর বিজয় লাভ করছে, আর একশ জন বিজয় লাভ করছে এক হাজারের সাথে।
কাফেররা দেখতো যে, কিভাবে মুসলিমরা আল্লাহর সাহায্য লাভ করছে,কাফেরদের নিকট কুরআনের আয়াত সত্য হিসেবে প্রমানিত হতো,তারা দ্বীনের দাওয়াত পেতো।
কিন্তু আজ গনতন্ত্র কুরআনের আয়াতের সম্পুর্ন বিপরীত, যেখানে বলা হচ্ছে, দুশজন বিজয় লাভ করবে কুড়িজনের বিরুদ্বে, আর এক হাজার বিজয় লাভ করবে একশ জনের বিরুদ্ধে।
মহান আল্লাহ এ আয়াতে বিজয়ের সুসংবাদ দিলেন কিন্তু গনতান্ত্রিক ভোটের পদ্বতিতে মুসলিমরা বারবার হেরে গিয়ে এ আয়াতের ব্যাপারে তারা কি দাওয়াত পৌঁছাচ্ছে? ইসলামকে একটা উপহাসের জায়গায় নিয়ে গেছে। যার ফলে আজ তাগুতের অনেকেই বলে যে,বাংলাদেশের নব্বই ভাগ মুসলিম হলেও তারা দেশে কোরআনের সংবিধান ও ইসলামি দলের ক্ষমতা চায় না।ইতিপূর্বে হাফেজ্জী হুজুর সহ আরো অনেকগুলো শান্তি পূর্ন নির্বাচনেও হেরে গেছে।
তাহলে এগুলো দ্বারা কি ম্যাসেজ যাচ্ছে কাফেরদের নিকট? গনতান্ত্রিক পদ্বতিতে দ্বীন কায়েমের চেষ্টা দ্বারা স্বয়ং কোরআনের আয়াতের ব্যাপারে আপত্তি তোলা হচ্ছে।( নাউজুবিল্লাহ)
শুধু মাত্র কথা দ্বারাই দাওয়াতি কাজ হয় না, বরং আমল দ্বারাও দাওয়াতি কাজ হয়। মুসলিমরা যদি নববী পদ্বতিতে দ্বীন কায়েমের চেষ্টা করতো তাহলে অবশ্যই বিজয় লাভ করতো, আল্লাহর ওয়াদা গুলো অবশ্যই দেখতে পেত। আর এটাই কাফেরদের নিকট হয়ে যেত দাওয়াত। তারা নিজের চোখে দেখতে যে,তাদের এত বিশাল শক্তি থাকার পরেও তারা হেরে যাচ্ছে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الۡقِتَالُ وَ ہُوَ کُرۡہٌ لَّکُمۡ ۚ وَ عَسٰۤی اَنۡ تَکۡرَہُوۡا شَیۡئًا وَّ ہُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ۚ وَ عَسٰۤی اَنۡ تُحِبُّوۡا شَیۡئًا وَّ ہُوَ شَرٌّ لَّکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ وَ اَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۲۱۶﴾
তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেওয়া হল। যদিও এ তোমাদের কাছে অপছন্দ; কিন্তু তোমরা যা পছন্দ কর না, সম্ভবতঃ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং তোমরা যা পছন্দ কর, সম্ভবতঃ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।
এ আয়াতে বলা হয়েছে, কিতাল তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে, যদিও তা তোমাদের নিকট অপছন্দের।
এর পরে বলা হয়েছে তোমরা যা অপছন্দ করো তা তোমাদের জন্য কল্যান কর।
এবার দেখুন বদরে যখন কাফেরদের বিরুদ্ধে কিতাল করেছিলো তখন কাফেররা দেখেছে, কিভাবে একহাজার সশস্ত্র যোদ্বা মাত্র তিনশত তেরো জন অসহায়,দূর্বলদের কাছে হেরে গেছে।এর এটাই কাফেরদের নিকট অনেক বড় দাওয়াত।শুধু তাই না আফগান নিরীহ মুজাহিদ রা যখন সামান্য রসদ নিয়ে সুপার পাওয়ারের সাথে যুদ্ব করে তাদেরকে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় পরাজিত করলো গোটা বিশ্বে এটাই এক দাওয়াতে পরিনত হলো। সবাই দেখলো কিভাবে একটি শক্তিশালী দল একটি বাহ্যিক দূর্বল, অসহায়দের কাছে হেরে গেলো। এমনকি কাফেররা দেখতো যে,একই সাথে মুসলিম ও কাফেরদের লাশ পড়ে আছে, অথচ মুসলিম ব্যক্তির লাশ অবিকৃত ও ঘ্রান বের হচ্ছে, আর কাফেরের লাস পচে গলে গেছে।এবার আপনি ভাবুন যদি বাংলাদেশ এরকম একটা ঘটনা হয়, তাহলে মানুষ কত শক্তিশালী দাওয়াত পাবে! মানুষ এরকম দৃশ্য দেখার পর কি রকম পরিবর্তন হবে। যে দলের মুজাহিদদের সাথে এমনটি গঠবে সে দলের জনপ্রিয়তা কত বেশি হবে? কিন্তু গনতন্ত্রের মাধ্যমে কি এমন ধরনের কিছু হয়েছে? মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে এই গনতন্ত্রের কারনে , মুসলিমদের জিহাদ ও কিতাল ভুলিয়ে দিছে,মুসলিমদের শিখিয়েছে কিভাবে মিছিল করতে হয়, এবং মিছিলে ছোটখাটো বাহিনীর লাঠির ভয়ে দৌড়ে পালাতে হয়। এই গনতন্ত্র শিখিয়েছে কিভাবে ভোটের মাধ্যমে হেরে গিয়ে লজ্জিত হতে হয়।
গনতন্ত্র শিখিয়েছে মুসলিমরা নির্যাতিত হলে কাফের, মুরতাদ বিচারকের নিকট গিয়ে কিভাবে বিচার চাইতে হয়। এই গনতন্ত্রই মুসলিমদের মাঝে দলাদলি বাড়িয়ে দিয়েছে।
যতদিন মুসলিমরা জিহাদের পথ বেচে না নিবে ততদিন এই দূর্দশাই দেখবে।
যতদিন কিতাল পছন্দ না করবে ততদিন এই লাঞ্ছনা পোহাতে হবে। কেননা আল্লাহ বলেছেন কিতাল তোমরা পছন্দ করো না অথচ কিতাল ই তোমাদের জন্য কল্যান কর।
গনতন্ত্রের এই পথ যতই সুন্দর ও সহজ দেখা যাক না কেন, এতে কোন কল্যান নাই, এটাই যুগের সবচেয়ে বড় ফিতনা। এই গনতন্ত্র হলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট মতবাদ।
এটার কারনে কোরআনের বিজয় সম্পর্কিত আয়াতকে আমলীভাবে অস্বিকার করা হয়। তাই সকলে এই ফেতনা থেকে বের হয়ে আসুন।
তা না হলে মুসলিমদের জান ও সম্পদের অপচয়ের হিসেব মহান রবের নিকট দিতে হবে। একজন মুসলিম যদি এক টাকা দ্বীন কায়েমের জন্য দান করে সেটা তখন গোটা উম্মাহর সম্পদে পরিনত হয়, সেই দান অবশ্যই ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যানে ব্যায় করতে হবে। নিজের ইচ্ছে মত ব্যায় করলেই হবে না।
গনতন্ত্রের কারনে মুসলিমদের কত রক্ত ও মাল যে অপচয় হয়েছে যার কোন হিসেব নাই। বিনিময়ে দির্ঘ ৭০/৮০ বছরে ইসলাম ও মুসলিমরা কি পেলো?
গনতন্ত্রের আরো ভয়ংকর দিক হলো, এর দ্বারা পাপিষ্ঠ দের কুফরী ও পাপ কাজে সাহায্য করা হয়,যদিও সাহায্য করার ইচ্ছে থাকে না। যেমনঃ ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত যখন বি এন পি ছিলো তখন তাদের ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য অনেক ইসলামী দলের লোকেও আন্দোলন করেছে। ফলে বিএন পি ক্ষমতা থেকে চলে গেছে। ক্ষমতায় আসলো ইসলামের চরম শত্রু আওয়ামী লীগ। যারা একই সাথে পাপ কাজ ও শিরক কুফর সমাজে বিস্তার করেছিলো। এরপরে আবার আওয়মী লীগ ক্ষমতা থেকে সরে গিয়ে আসলো বিএনপি। তারাও ইসলামের জন্য তেমন কিছুই করে নি।অথচ বি এন পি ক্ষমতায় আসার পিছনে ইসলামী দলগুলোর বিশাল একটা অবদান ছিলো। কিন্তু তারা ক্ষমতায় এসে কুরআন আইন দিয়ে দেশতো চালাই নাই উল্টো দূর্নীতিতে সারা বিশ্বে প্রথম হয়েছে। প্রশ্ন হলো ইসলামী দলগুলো সাহায্য করার কারনে ইসলাম ও মুসলিমদের কি লাভ হল?তারা ইসলাম দলগুলোর অবদানের কারনে ক্ষমতায় এসে যত পাপ করেছে এই পাপের দায়ভার কে নেবে। এভাবেই গনতন্ত্রের কারনে ইসলামের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
এক জালিমের পতন হলে আরেক জালিম ক্ষমতায় আসে। মাঝখান দিয়ে ইসলামী দলগুলোর অবদান থাকে। এভাবেই গনতন্ত্রের কারনে অন্যায় ও কুফরী কাজে সাহায্য করা হচ্ছে । কেউ যদি বলেন যে,এর দ্বারা সাহায্য করা হয় না তাহলে প্রশ্ন হলো ২০০৫ সালে আন্দোলন করে বি এনপিকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে, এবং ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ কে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে বি এন পির সাথে ক্ষমতায় এসে ইসলামের কোন উপকারটা হয়েছে? একটা মদের বিল পর্যন্ত পাশ করা গেলো না। কত বড় আপসোসের কথা।
মনে রাখবেন, নামায ফরয, তাই নামায শুধু আদায় করলেই হবে না, কার পিছনে আদায় করছেন সেটাও দেখতে হবে, জায়গা পাক কিনা, কাপড় পাক কিনা দেখতে হবে।ঠিক তেমনি দ্বীন কায়েম ফরয, তাই যেকোন ভাবেই দ্বীন কায়েম করলেই হবে না, বরং নবীজির দেখানো পদ্বতিতে হতে হবে।
সব সময় একটা কথা রাখবেন, রাসূল সাঃ যে কাজ যেভাবে করেছেন আপনি যদি সেকাজ সেভাবে না করেন তাহলে কোন না কোন ভাবে আপনি ইসলামের ক্ষতি করে বসবেন। যেমনঃ ইমাম ইবনে কাসীরের সময়ে তাতারীরা ইয়াসাক সংবিধান নামক একটা সংবিধান দিয়ে প্রনয়ন করে সে সংবিধান দিয়ে দেশ চালায়। ইবনে কাসীর রহঃ তাদের মুরতাদ ফতুয়া দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কিতাল করার ফতুয়াও দেন।
ঠিক আজ যারা মানবরচিত সংবিধান দিয়ে দেশ চালায় ইসলাম দলগুলো তাদের কে কি তাকফিক করতে পারবে? কারন ইসলাম দলগুলোই তো এই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন করে এমপি মন্ত্রী হয়েছে।
ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম, অথচ ইসলামী দলগুলো কি এটা সবার সামনে বলতে পারবে? কারন তারাওতো নারীর অধীনেই ছিলো।
সুতরাং গনতন্ত্র এমন এক ফেতনা যার অবস্থা হলো মাকাল ফলের মত। দেখতে অনেক সুন্দর দেখা গেলো এটা আসলে বড়ই ভয়ংকর এক ফেতনা। উম্মাহের ইতিহাস,ঐতিহ্য কে এ ফেতনা ভুলিয়ে দিছে।আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুন।
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেনঃ
اِنَّ الصَّلٰوۃَ تَنۡہٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ لَذِکۡرُ اللّٰہِ اَکۡبَرُ ؕ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ مَا تَصۡنَعُوۡنَ ﴿۴۵﴾
নিশ্চয় নামায অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আর অবশ্যই আল্লাহর স্মরণ সর্বশ্রেষ্ঠ।তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন।( সুরা আনকাবুত ৪৫)
মহান আল্লাহ এই আয়াতে বলেছেন যে,নামায মানুষ অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। আল্লাহর কথা অবশ্যই সত্য,এতে কোন সন্দেহ নাই,। কিন্তু কেউ যদি দিনের পর দিন নামায পড়ার পরেও সে পাপ কাজ থেকে ফিরতে না পারে তাহলে এর দ্বারা সে কি প্রমান করে? এর দ্বারা সে মানুষের নিকট এই দাওয়াত পৌছায় যে, নামায মানুষকে অন্যায় কাজ থেকে ফিরাতে পারে না। যদি নামায অন্যায় কাজ থেকে বিরত রাখতো তাহলে আমি নামায পড়ার পরেও কেন অন্যায় ও মন্দ কাজে লিপ্ত?
কিন্তু যদি সে নামায পড়ার পর অন্যায় কাজ থেকে ফিরতো, সমাজে একজন ভালো মানুষে পরিনত হত তাহলে আরো কয়েকজন মানুষও তার এই আমল দ্বারা দাওয়াত পেতো।মুয়াজ্জিন যখন নামাযের দিকে তখন বলে " সফলতার দিকে এসো"। নামাজ পড়লেই মানুষ সফল। সুতরাং কেউ যদি নামায পড়ে সমাজে একজন সফল মানুষে পরিনত হয় তাহলে সমাজে অন্য অনেকেই তার এই সফলতার দিকে আসতো।
ঠিক তেমনি পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বহু জায়গায় মুসলিমদের বিজয়ের সুসংবাদ দিয়েছেন।
وَ لَا تَہِنُوۡا وَ لَا تَحۡزَنُوۡا وَ اَنۡتُمُ الۡاَعۡلَوۡنَ اِنۡ کُنۡتُمۡ مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۱۳۹﴾
আর তোমরা হীনবল হয়ো না এবং দুঃখিত হয়ো না, তোমরাই হবে সর্বোপরি (বিজয়ী); যদি তোমরা বিশ্বাসী হও।(সুরা আলে ইমরান ১৩৯)
মহান আল্লাহ এ আয়াতে মুমিনদের বিজয়ের সংবাদ দিলেন। তবে শর্ত হলো মুমিন হতে হবে।
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেনঃ
وَعَدَ اللّٰہُ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا مِنۡکُمۡ وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ لَیَسۡتَخۡلِفَنَّہُمۡ فِی الۡاَرۡضِ کَمَا اسۡتَخۡلَفَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِہِمۡ ۪ وَلَیُمَکِّنَنَّ لَہُمۡ دِیۡنَہُمُ الَّذِی ارۡتَضٰی لَہُمۡ وَلَیُبَدِّلَنَّہُمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ خَوۡفِہِمۡ اَمۡنًا ؕ یَعۡبُدُوۡنَنِیۡ لَا یُشۡرِکُوۡنَ بِیۡ شَیۡئًا ؕ وَمَنۡ کَفَرَ بَعۡدَ ذٰلِکَ فَاُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡفٰسِقُوۡنَ
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে আল্লাহ্ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি অবশ্যই তাদেরকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব দান করবেন, যেমন তিনি প্রতিনিধিত্ব দান করেছিলেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই তাদের জন্যে প্রতিষ্ঠিত করবেন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়ভীতির পরিবর্তে তাদেরকে অবশ্যই নিরাপত্তা দান করবেন। তারা আমার ‘ইবাদত করবে, আমার কোন শরীক করবে না, এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারা তো সত্য-ত্যাগী।
এ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছের ইমান আনলে ও আমলে সলেহ করলে মহান আল্লাহ খিলাফত দিবেন। এটা আল্লাহর ওয়াদা, আল্লাহ স্বয়ং وَعَدَ اللّٰہُশব্দ উল্লেখ করেছেন। আল্লাহর ওয়াদা অবশ্যই সত্য।
কিন্তু আজ দির্ঘ ৬০/৭০ বছর এই গনতান্ত্রিক পদ্বতিতে খিলাফত লাভের জন্য আমাদের প্রিয় দ্বীনি ভাইরা বিভিন্ন দেশে চেষ্টা করে যাচ্ছেন।অথচ এক ইঞ্চি ভুমিতেও খিলাফত প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন নি। তাহলে প্রশ্ন হলো, মহান আল্লাহ ওয়াদা দেওয়ার পরেও মুসলিমরা দির্ঘদিন খিলাফত প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্ট করার পরে খিলাফত যখন পেলেন না তখন তাদের এই ব্যর্থ চেষ্টা দ্বারা কি প্রমান করেন?
তাদের এই গনতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার চেষ্টা করার ফলে মুসলিম উম্মাহ ও কাফেরদের নিকট এই ম্যাসেজ পৌছানো হচ্ছে যে,মুসলিমরা পরাজিত জাতি, তারা ব্যর্থ
আর তাদের কোরআনে বিজয়ের যে সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে তাও সত্য নয়। (নাউজুবিল্লাহ) , কথাটা একটু কঠোর হয়ে গেলো কিন্তু বাস্তবতা এটাই।
মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বিজয়ের যে সুসংবাদ দিয়েছেন, খিলাফতের যে ওয়াদা দিয়েছেন, গনতন্ত্রের মত নিকৃষ্ট একটা কুফরী মতবাদের কারনে মহান আল্লাহর এই বিজয়ের সুসংবাদ, ও খিলাফতের ওয়াদাকে অসত্য হিসেবে সাব্যস্ত করলো। কেননা গনতন্ত্রের মাধ্যমে দিনের পর দিন চেষ্টা করেও খিলাফত পাচ্ছে না।অপরদিকে আল্লাহ খিলাফতের ওয়াদা দিয়েছেন ও বিজয়ের সুসংবাদ দিচ্ছেন। চিন্তা করুন গনতন্ত্র কত ভয়ংঙ্কর।
মুসলিমরা খুলাফায়ে রাশিদিনের সময়ে মত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে রোম ও পারস্য জয় করে ফেলেছিলো। অথচ এগুলো ছিলো তৎকালীন সুপার পাওয়ার। অথচ আজ সুপার পাওয়ারকে পরাজিত করাতো দূরের কথা, নিজেদের ভুমিতে ছোটখাটো দলকেই পরাজিত করতে পারছে না। বরং ছোট খাটো দলগুলোই আরো শক্তি শালী হচ্ছে।
কিন্তু যদি আজ গনতন্ত্র বাদ দিয়ে জিহাদ ও কিতালের পথ বেচে নেওয়া হতো তাহলে গোটা বিশ্বে মুসলিমদের বিজয় দেখতো। বদর যুদ্বে সরাসরি কাফেররা আসমানের ফেরেশতাকে যেভাবে দেখেছিলো, আজ কাফেররা সেরকম মুসলিমদের পক্ষ আসমানি সাহায্য দেখতো। ফলে মুসলিমদের এই দাওয়াত গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে যেত।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
یٰۤاَیُّہَا النَّبِیُّ حَرِّضِ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ عَلَی الۡقِتَالِ ؕ اِنۡ یَّکُنۡ مِّنۡکُمۡ عِشۡرُوۡنَ صٰبِرُوۡنَ یَغۡلِبُوۡا مِائَتَیۡنِ ۚ وَ اِنۡ یَّکُنۡ مِّنۡکُمۡ مِّائَۃٌ یَّغۡلِبُوۡۤا اَلۡفًا مِّنَ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِاَنَّہُمۡ قَوۡمٌ لَّا یَفۡقَہُوۡنَ ﴿۶۵﴾
হে নবী! বিশ্বাসীদেরকে যুদ্ধের জন্য উদ্বুদ্ধ কর,তোমাদের মধ্যে কুড়িজন ধৈর্যশীল থাকলে তারা দু’শ জনের উপর বিজয়ী হবে এবং তোমাদের মধ্যে একশ’ জন থাকলে এক হাজার অবিশ্বাসীর উপর বিজয়ী হবে।কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায় যাদের বোধশক্তি নেই।
আজ যদি মুসলিমরা জিহাদ ও কিতালের পথ বেচে নিতো তাহলে আজ কাফেররা দেখতো যে, কুড়ি জন মুসলিম দুশ জনের উপর বিজয় লাভ করছে, আর একশ জন বিজয় লাভ করছে এক হাজারের সাথে।
কাফেররা দেখতো যে, কিভাবে মুসলিমরা আল্লাহর সাহায্য লাভ করছে,কাফেরদের নিকট কুরআনের আয়াত সত্য হিসেবে প্রমানিত হতো,তারা দ্বীনের দাওয়াত পেতো।
কিন্তু আজ গনতন্ত্র কুরআনের আয়াতের সম্পুর্ন বিপরীত, যেখানে বলা হচ্ছে, দুশজন বিজয় লাভ করবে কুড়িজনের বিরুদ্বে, আর এক হাজার বিজয় লাভ করবে একশ জনের বিরুদ্ধে।
মহান আল্লাহ এ আয়াতে বিজয়ের সুসংবাদ দিলেন কিন্তু গনতান্ত্রিক ভোটের পদ্বতিতে মুসলিমরা বারবার হেরে গিয়ে এ আয়াতের ব্যাপারে তারা কি দাওয়াত পৌঁছাচ্ছে? ইসলামকে একটা উপহাসের জায়গায় নিয়ে গেছে। যার ফলে আজ তাগুতের অনেকেই বলে যে,বাংলাদেশের নব্বই ভাগ মুসলিম হলেও তারা দেশে কোরআনের সংবিধান ও ইসলামি দলের ক্ষমতা চায় না।ইতিপূর্বে হাফেজ্জী হুজুর সহ আরো অনেকগুলো শান্তি পূর্ন নির্বাচনেও হেরে গেছে।
তাহলে এগুলো দ্বারা কি ম্যাসেজ যাচ্ছে কাফেরদের নিকট? গনতান্ত্রিক পদ্বতিতে দ্বীন কায়েমের চেষ্টা দ্বারা স্বয়ং কোরআনের আয়াতের ব্যাপারে আপত্তি তোলা হচ্ছে।( নাউজুবিল্লাহ)
শুধু মাত্র কথা দ্বারাই দাওয়াতি কাজ হয় না, বরং আমল দ্বারাও দাওয়াতি কাজ হয়। মুসলিমরা যদি নববী পদ্বতিতে দ্বীন কায়েমের চেষ্টা করতো তাহলে অবশ্যই বিজয় লাভ করতো, আল্লাহর ওয়াদা গুলো অবশ্যই দেখতে পেত। আর এটাই কাফেরদের নিকট হয়ে যেত দাওয়াত। তারা নিজের চোখে দেখতে যে,তাদের এত বিশাল শক্তি থাকার পরেও তারা হেরে যাচ্ছে।
মহান আল্লাহ বলেনঃ
کُتِبَ عَلَیۡکُمُ الۡقِتَالُ وَ ہُوَ کُرۡہٌ لَّکُمۡ ۚ وَ عَسٰۤی اَنۡ تَکۡرَہُوۡا شَیۡئًا وَّ ہُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ۚ وَ عَسٰۤی اَنۡ تُحِبُّوۡا شَیۡئًا وَّ ہُوَ شَرٌّ لَّکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ یَعۡلَمُ وَ اَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۲۱۶﴾
তোমাদের জন্য যুদ্ধের বিধান দেওয়া হল। যদিও এ তোমাদের কাছে অপছন্দ; কিন্তু তোমরা যা পছন্দ কর না, সম্ভবতঃ তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং তোমরা যা পছন্দ কর, সম্ভবতঃ তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।
এ আয়াতে বলা হয়েছে, কিতাল তোমাদের উপর ফরয করা হয়েছে, যদিও তা তোমাদের নিকট অপছন্দের।
এর পরে বলা হয়েছে তোমরা যা অপছন্দ করো তা তোমাদের জন্য কল্যান কর।
এবার দেখুন বদরে যখন কাফেরদের বিরুদ্ধে কিতাল করেছিলো তখন কাফেররা দেখেছে, কিভাবে একহাজার সশস্ত্র যোদ্বা মাত্র তিনশত তেরো জন অসহায়,দূর্বলদের কাছে হেরে গেছে।এর এটাই কাফেরদের নিকট অনেক বড় দাওয়াত।শুধু তাই না আফগান নিরীহ মুজাহিদ রা যখন সামান্য রসদ নিয়ে সুপার পাওয়ারের সাথে যুদ্ব করে তাদেরকে মহান আল্লাহর ইচ্ছায় পরাজিত করলো গোটা বিশ্বে এটাই এক দাওয়াতে পরিনত হলো। সবাই দেখলো কিভাবে একটি শক্তিশালী দল একটি বাহ্যিক দূর্বল, অসহায়দের কাছে হেরে গেলো। এমনকি কাফেররা দেখতো যে,একই সাথে মুসলিম ও কাফেরদের লাশ পড়ে আছে, অথচ মুসলিম ব্যক্তির লাশ অবিকৃত ও ঘ্রান বের হচ্ছে, আর কাফেরের লাস পচে গলে গেছে।এবার আপনি ভাবুন যদি বাংলাদেশ এরকম একটা ঘটনা হয়, তাহলে মানুষ কত শক্তিশালী দাওয়াত পাবে! মানুষ এরকম দৃশ্য দেখার পর কি রকম পরিবর্তন হবে। যে দলের মুজাহিদদের সাথে এমনটি গঠবে সে দলের জনপ্রিয়তা কত বেশি হবে? কিন্তু গনতন্ত্রের মাধ্যমে কি এমন ধরনের কিছু হয়েছে? মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্ষতি করেছে এই গনতন্ত্রের কারনে , মুসলিমদের জিহাদ ও কিতাল ভুলিয়ে দিছে,মুসলিমদের শিখিয়েছে কিভাবে মিছিল করতে হয়, এবং মিছিলে ছোটখাটো বাহিনীর লাঠির ভয়ে দৌড়ে পালাতে হয়। এই গনতন্ত্র শিখিয়েছে কিভাবে ভোটের মাধ্যমে হেরে গিয়ে লজ্জিত হতে হয়।
গনতন্ত্র শিখিয়েছে মুসলিমরা নির্যাতিত হলে কাফের, মুরতাদ বিচারকের নিকট গিয়ে কিভাবে বিচার চাইতে হয়। এই গনতন্ত্রই মুসলিমদের মাঝে দলাদলি বাড়িয়ে দিয়েছে।
যতদিন মুসলিমরা জিহাদের পথ বেচে না নিবে ততদিন এই দূর্দশাই দেখবে।
যতদিন কিতাল পছন্দ না করবে ততদিন এই লাঞ্ছনা পোহাতে হবে। কেননা আল্লাহ বলেছেন কিতাল তোমরা পছন্দ করো না অথচ কিতাল ই তোমাদের জন্য কল্যান কর।
গনতন্ত্রের এই পথ যতই সুন্দর ও সহজ দেখা যাক না কেন, এতে কোন কল্যান নাই, এটাই যুগের সবচেয়ে বড় ফিতনা। এই গনতন্ত্র হলো সবচেয়ে নিকৃষ্ট মতবাদ।
এটার কারনে কোরআনের বিজয় সম্পর্কিত আয়াতকে আমলীভাবে অস্বিকার করা হয়। তাই সকলে এই ফেতনা থেকে বের হয়ে আসুন।
তা না হলে মুসলিমদের জান ও সম্পদের অপচয়ের হিসেব মহান রবের নিকট দিতে হবে। একজন মুসলিম যদি এক টাকা দ্বীন কায়েমের জন্য দান করে সেটা তখন গোটা উম্মাহর সম্পদে পরিনত হয়, সেই দান অবশ্যই ইসলাম ও মুসলিমদের কল্যানে ব্যায় করতে হবে। নিজের ইচ্ছে মত ব্যায় করলেই হবে না।
গনতন্ত্রের কারনে মুসলিমদের কত রক্ত ও মাল যে অপচয় হয়েছে যার কোন হিসেব নাই। বিনিময়ে দির্ঘ ৭০/৮০ বছরে ইসলাম ও মুসলিমরা কি পেলো?
গনতন্ত্রের আরো ভয়ংকর দিক হলো, এর দ্বারা পাপিষ্ঠ দের কুফরী ও পাপ কাজে সাহায্য করা হয়,যদিও সাহায্য করার ইচ্ছে থাকে না। যেমনঃ ২০০১ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত যখন বি এন পি ছিলো তখন তাদের ক্ষমতা থেকে নামানোর জন্য অনেক ইসলামী দলের লোকেও আন্দোলন করেছে। ফলে বিএন পি ক্ষমতা থেকে চলে গেছে। ক্ষমতায় আসলো ইসলামের চরম শত্রু আওয়ামী লীগ। যারা একই সাথে পাপ কাজ ও শিরক কুফর সমাজে বিস্তার করেছিলো। এরপরে আবার আওয়মী লীগ ক্ষমতা থেকে সরে গিয়ে আসলো বিএনপি। তারাও ইসলামের জন্য তেমন কিছুই করে নি।অথচ বি এন পি ক্ষমতায় আসার পিছনে ইসলামী দলগুলোর বিশাল একটা অবদান ছিলো। কিন্তু তারা ক্ষমতায় এসে কুরআন আইন দিয়ে দেশতো চালাই নাই উল্টো দূর্নীতিতে সারা বিশ্বে প্রথম হয়েছে। প্রশ্ন হলো ইসলামী দলগুলো সাহায্য করার কারনে ইসলাম ও মুসলিমদের কি লাভ হল?তারা ইসলাম দলগুলোর অবদানের কারনে ক্ষমতায় এসে যত পাপ করেছে এই পাপের দায়ভার কে নেবে। এভাবেই গনতন্ত্রের কারনে ইসলামের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।
এক জালিমের পতন হলে আরেক জালিম ক্ষমতায় আসে। মাঝখান দিয়ে ইসলামী দলগুলোর অবদান থাকে। এভাবেই গনতন্ত্রের কারনে অন্যায় ও কুফরী কাজে সাহায্য করা হচ্ছে । কেউ যদি বলেন যে,এর দ্বারা সাহায্য করা হয় না তাহলে প্রশ্ন হলো ২০০৫ সালে আন্দোলন করে বি এনপিকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে, এবং ২০০০ সালে আওয়ামী লীগ কে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে বি এন পির সাথে ক্ষমতায় এসে ইসলামের কোন উপকারটা হয়েছে? একটা মদের বিল পর্যন্ত পাশ করা গেলো না। কত বড় আপসোসের কথা।
মনে রাখবেন, নামায ফরয, তাই নামায শুধু আদায় করলেই হবে না, কার পিছনে আদায় করছেন সেটাও দেখতে হবে, জায়গা পাক কিনা, কাপড় পাক কিনা দেখতে হবে।ঠিক তেমনি দ্বীন কায়েম ফরয, তাই যেকোন ভাবেই দ্বীন কায়েম করলেই হবে না, বরং নবীজির দেখানো পদ্বতিতে হতে হবে।
সব সময় একটা কথা রাখবেন, রাসূল সাঃ যে কাজ যেভাবে করেছেন আপনি যদি সেকাজ সেভাবে না করেন তাহলে কোন না কোন ভাবে আপনি ইসলামের ক্ষতি করে বসবেন। যেমনঃ ইমাম ইবনে কাসীরের সময়ে তাতারীরা ইয়াসাক সংবিধান নামক একটা সংবিধান দিয়ে প্রনয়ন করে সে সংবিধান দিয়ে দেশ চালায়। ইবনে কাসীর রহঃ তাদের মুরতাদ ফতুয়া দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কিতাল করার ফতুয়াও দেন।
ঠিক আজ যারা মানবরচিত সংবিধান দিয়ে দেশ চালায় ইসলাম দলগুলো তাদের কে কি তাকফিক করতে পারবে? কারন ইসলাম দলগুলোই তো এই সংবিধানের অধীনে নির্বাচন করে এমপি মন্ত্রী হয়েছে।
ইসলামে নারী নেতৃত্ব হারাম, অথচ ইসলামী দলগুলো কি এটা সবার সামনে বলতে পারবে? কারন তারাওতো নারীর অধীনেই ছিলো।
সুতরাং গনতন্ত্র এমন এক ফেতনা যার অবস্থা হলো মাকাল ফলের মত। দেখতে অনেক সুন্দর দেখা গেলো এটা আসলে বড়ই ভয়ংকর এক ফেতনা। উম্মাহের ইতিহাস,ঐতিহ্য কে এ ফেতনা ভুলিয়ে দিছে।আল্লাহ আমাদের সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুন।
Comment