Announcement

Collapse
No announcement yet.

তাগুত পরিচিতি ও ঈমানের গোড়ার কথা

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • তাগুত পরিচিতি ও ঈমানের গোড়ার কথা

    তাগুত পরিচিতি ও ঈমানের গোড়ার কথা

    আল্লাহ তাআ'লা মানুষের প্রতি প্রথম যে আদেশ করেছেন (মহান রবের পক্ষ থেকে বান্দার প্রতি প্রথম ফরজ বিধান) সেটা হচ্ছে কুফর বিততাগুত বা তাগুত বর্জন করা এবং একমাত্র আল্লাহ তাআলার উপর ঈমান আনা অর্থাৎ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
    আল্লাহ তাআলা বলেন-
    وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ

    "আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে দূরে থাক"সুরা আন-নাহলঃ ৩৬
    কেউ যদি ঈমান গ্রহন করতে চায় তাহলে প্রথমেই তাকে এই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করতে হয় যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহঅতঃপর “ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ”লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তে রয়েছে দুটি অংশ। ১ম অংশ হচ্ছে - লা ইলাহা আর ২য় অংশ হচ্ছে ইল্লাল্লাহ লা ইলাহাঅর্থ হচ্ছে “নেই কোন ইলাহ/মাবুদ/রব/উপাস্য/প্রভু” অর্থাৎ আল্লাহ তাআ'লা প্রথমেই সকল তাগুত বা নকল/বাতিল ইলাহ/মাবুদ/রব/উপাস্য/প্রভুদেরকে অস্বীকার করতে বলছেন। অতঃপর ঈমান বিল্লাহ তথা একমাত্র আল্লাহ তাআলার উপর ঈমান আনতে বলেছেন।
    আল্লাহ তাআলা বলেন - দ্বীন গ্রহনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি নাই নিশ্চয়ই হিদায়াত স্পষ্ট হয়েছে ভ্রষ্টতা থেকে। এখন যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলো, সে এমন এক শক্ত রজ্জু ধারন করলো যা কখনই ছিঁড়ে যাবার নয়আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ” সূরা বাকারাহ-২৫৬

    অস্বীকার ব্যতীত স্বীকার আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। অর্থাৎ তাগুতের অস্বীকৃতি (কুফর বিততাগুত) ব্যতীত ঈমানের স্বীকৃতি (ঈমান বিল্লাহ) আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় যেমন অজু/তায়ামুম ছাড়া নামাজ আল্লাহর কাছে গ্রহনযোগ্য নয়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় তাগুত বর্জন বা অস্বীকার ব্যতীত যে ঈমানই গ্রহনযোগ্য নয় এ বিষয়টি আজকে আমরা মুসলমানরাই জানিনা। হায় আফসোস ! বিদ্যুৎ/ব্যটারী/জ্বালানী ছাড়া বাতি জ্বলবে না এটা আমরা বুঝি, কিন্তু তাগুত বর্জন ব্যতীত ঈমান গ্রহনযোগ্য হবে না এটা বুঝি না ! কোন বিবাহিত মহিলা বর্তমান স্বামীর সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ব্যতীত অন্য কারো সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না - এটা আমরা বুঝি। কিন্তু সকল তাগুত বা নকল/বাতিল ইলাহ/মাবুদ/রব/উপাস্য/প্রভুদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ব্যতীত যে ঈমান গ্রহনযোগ্য হবে না এটা বুঝি না ! মূলত দ্বীন ঈমানের এক খন্ডিত ভার্সনকেই আমরা পূর্ণাঙ্গ ঈমান ভেবে আত্নপ্রবঞ্চনায় ভুগছি। ঈমানের পূর্ণাঙ্গ রূপ না বুঝার কারণে আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ঈমানের সীমানায় প্রবেশই করতে পারছিনা আর বাকীরা কখন যে ঈমানের সীমানা পেরিয়ে শিরক, কুফর, তাগুতের সীমানায় চলে যাচ্ছি তা ঘুনাক্ষরেও টের পাচ্ছিনা। এ কারণেই বোধহয় হুজুর আকরাম () বলে গিয়েছেন
    “---------------- এরপর হচ্ছে অন্ধকারের ফিতনা । তার থেকে কেহই বাচতে পারবে না । ঐ ফিতনার সময় মানুষ সকালে মুসলমান হবে বিকালে কাফের হবে। শেষপর্যন্ত মানুষ দুই দলে বিভক্ত হবে () মুমিনের দল যার মধ্যে বিন্দু মাত্র কপটতা থাকবে না । () মুনাফিকের দল যার মধ্যে বিন্দু মাত্র ইমান থাকবে না । (মুসনাদে আহমদ)

    আসুন এবার আমরা আমাদের উপর আল্লাহ তা’আলার প্রথম আদেশ/ফরজ বিধান অর্থাৎ কুফর বিততাগুত বা তাগুত বর্জন/অস্বীকার করার জন্য তাগুত কাকে বলে জানি, তাগুতকে কিভাবে বর্জন করতে হবে তা জানি এবং প্রধান প্রধান তাগুত গুলোকে চিহ্নিত করি

    তাগুতঃতাগুত আরবী শব্দ তুগইয়ান থেকে উৎসারিত যার অর্থ সীমালঙ্ঘন করা

    কেউ যখন 'বদ (বান্দা/গোলাম/দাস) এর সীমানা লংঘন করে মা'বুদ (ইলাহ/রব/প্রভু/উপাস্য) এর আসনে বসতে চায় বা বসে তখন তাকে তাগুত বলে। আল্লাহ, আল্লাহর রাসূল (), আল্লাহ তা’আলা শরীয়া/আইন/সংবিধান বাদ দিয়ে বা আল্লাহ তা’আলার শরীয়তের মোকাবেলায় যার বা যাদের আনুগত্য করা হয়, ইবাদত করা হয় বা যাদের কাছে বিচার চাওয়া হয় সে বা তারাই হচ্ছে তাগুত

    কারণ আনুগত্য নেওয়া, ইবাদত নেওয়া, বিচার ফায়সালা করা মা'বুদের কাজ। আর আনুগত্য করা/দেওয়া, ইবাদত করা/দেওয়া, বিচার ফায়সালা চাওয়া আ'বদের কাজ।

    কাজেই এমন প্রত্যেক ব্যক্তি/শক্তিই তাগুত যে আল্লাহদ্রোহী হয়েছে এবং সীমালঙ্ঘন করেছে, আর আমাদের রব হিসাবে আল্লাহ্ তাআলার যে বৈশিষ্ট্য বা সিফাত বা ক্ষমতা বা কাজ রয়েছে তার কোন এক বা একাধিক বৈশিষ্ট্য বা সিফাত বা কাজ বা ক্ষমতাকে সে তার নিজের বৈশিষ্ট্য বা সিফাত বা কাজ বা ক্ষমতা হিসাবে দাবী করেছে এবং এভাবে নিজেকে আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে নিয়েছে ইসলামী শরয়াতের পরিভাষায় তাগুত বলা হয় সকল ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গকে আল্লাহর পরিবর্তে যার/যাদের আনুগত্য করা হয়, ইবাদত করা হয় যাদের কাছে বিচার চাওয়া হয় এবং সকল ব্যক্তি/ব্যক্তিবর্গ এটা পছন্দ করে মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে, কেবল তাঁরই ইবাদাত করবে এবং কেবল তাঁরই আইন মেনে চলবে – এটিই আল্লাহর বিধান কিন্তু এই মানুষই যখন আল্লাহর ইবাদত করার বা আল্লাহকে ইবাদত দেওয়ার পরিবর্তে নিজেই ইবাদত নেওয়া শুরু করে এবং আল্লাহর আইন মানার পরিবর্তে নিজেই/নিজেরাই আইন দেয়া/প্রণয়ন করা শুরু করে অর্থাৎ আব্দিয়্যাত বা দাসত্বের সীমা অতিক্রম করে নিজেই/নিজেরাই মাবুদ বা রবের আসনে বসে পড়ে/বসায় তখনই তাকে/তাদেরকে তাগুত বলা হয় আর ইয়াহুদী-খ্রিস্টানরা এভাবেই নিজেদের ধর্মীয় নেতা ও পীর-ফকিরদেরকে তাদের রব/ইলাহ/উপাস্য/মাবুদ/প্রভু বানিয়েছিল যা আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বর্ণনা করেছেন – তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের পাদ্রী ও র্ধম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে (সূরা তাওবা-৩১)

    ইমাম মালেক (اللهرحيمه) তাগুতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন:
    আল্লাহ তাআলাকে বাদ দিয়ে যার ইবাদত করা হয়, এমন প্রত্যেক জিনিসকেই তাগুত বলা হয়।” (ফতহুল ক্বাদীর, আল্লামা শওক্বানী)
    ইমাম ইবনে জারির তাবারি আশ-শাফেয়ী (الله رحيمه) বলেন, “আমাদের মতে সঠিক মত হলো, আল্লাহর উপর সীমালংঘনকারী মাত্রই তাগুত বলে চিহ্নিত, যার অধীনস্থ ব্যক্তিরা চাপের মুখে বা তাকে তোষামোদ করার জন্য বা তার আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য তার ইবাদত করে। এ (তাগুত) উপাস্যটি মানুষ কিংবা শয়তান কিংবা মূর্তি কিংবা প্রতিমা অথবা অন্য যেকোন কিছুর হতে পারে।” (তাফসীর আত্‌ তাবারি, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৫ম খন্ড, সূরা বাকারা: ২৫৬ নং আয়াতের তাফসীর)
    ইমাম ইবন জারির তাবারি আশ-শাফেয়ী (الله رحيمه) আরও বলেন, “ঐ সকল আল্লাহদ্রোহী যারা আল্লাহর নাফরমানী করে সীমালংঘন করেছে এবং মানুষ যাদের আনুগত্য করে। সে মানুষ, জ্বিন, শয়তান, প্রতিমা বা অন্য কিছুও হতে পারে।” (তাফসীর আত্‌ তাবারি: /২১)
    ইমাম নববী আশ-শাফেয়ী (الله رحيمه) বলেন, “আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত করা হয় তারাই তাগুত। এটাই লাইস, আবু উবাইদা, কেসায়ি এবং বেশীরভাগ আরবী ভাষাবিদদের অভিমত।” (শরহে মুসলিম: /১৮)
    ইমাম কুরতুবি আল-মালেকী (الله رحيمه) বলেন, “তাগুত হচ্ছে গণক, যাদুকর, শয়তান এবং পথভ্রষ্ট সকল নেতা।” (আল-জামে লি আহকামিল কুরআন: /২৮২)
    ইমাম ইবনে তাইমিয়া আল-হাম্বলী (الله رحيمه)বলেন, “আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত করা হয় তারাই তাগুত, যদি তারা তাদের এই ইবাদতে অসন্তুষ্ট না হয়। এ কারণেই আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ () মূর্তিকে তাগুত বলেছেন।” (মাজমাআতুল ফাতাওয়া: ২৮/২০০)
    ইমাম ইবনে তাইমিয়া আল-হাম্বলী (الله رحيمه) আরও বলেন, “আল্লাহর কিতাব ছাড়া যার কাছে বিচার ফায়সালা চাওয়া হয়, তাকেই তাগুত নামে আখ্যায়িত করা হয়।” (মাজমাআতুল ফাতাওয়া: ৭০১/৭৮)
    ইমাম ইবনে কাসীর আশ-শাফেয়ী (الله رحيمه) বলেন, “এ আয়াত প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির দুর্নাম ও নিন্দা করছে, যে কিতাব ও সুন্নাহকে ছেড়ে অন্য কোন বাতিলের দিকে স্বীয় ফায়সালা নিয়ে যায়। এখানে এটাই হচ্ছে তাগুতের ভাবার্থ।” (তাফসীর ইবনে কাসির ২/৪৬৩, নিসা: ৬০ এর তাফসীর)
    ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-হাম্বলী (الله رحيمه)বলেন, “তাগুত হচ্ছে এমন যে কেউ যার প্রতি বান্দা (আবদ) সীমালংঘন করে, সেটা কাউকে ইবাদত করা (মাবুদিন) বা অনুসরণ করা (মাতবুইন) বা মান্য করা (মুতাইন) যাই হোক না কেন।” (লামুল মুওয়াক্কিইন)
    ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-হাম্বলী (الله رحيمه) আরও বলেন, “তাগুত হচ্ছে ঐ সকল মাবুদ, নেতা, মুরব্বি যাদের আনুগত্য করতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করা হয়। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে বাদ দিয়ে যাদের কাছে বিচার ফায়সালা চাওয়া হয়, অথবা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করা হয়, অথবা আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন দলিল-প্রমাণ ছাড়া যাদের আনুগত্য করা হয় এরাই হলো পৃথিবীর বড় বড় তাগুত। তুমি যদি এই তাগুতগুলো এবং মানুষের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করো তবে বেশীরভাগ মানুষকেই পাবে যারা আল্লাহর ইবাদতের পরিবর্তে তাগুতের ইবাদত করে। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কাছে বিচার-ফায়সালা চাওয়ার পরিবর্তে তাগুতের কাছে বিচার-ফায়সালা নিয়ে যায়। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার পরিবর্তে তাগুতের আনুগত্য করে।” (লামুল মুওয়াক্কিইন: /৫০)
    উস্তাদ সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ আশ-শাফেয়ী (الله رحيمه) বলেন, “তাগুত বলতে সেইসব ব্যক্তি ও ব্যবস্থাকে বোঝায় যেগুলো ঐশী দ্বীন এবং নৈতিক, সামাজিক ও আইন-শৃঙ্খলাকে অবমাননা করে এবং আল্লাহ নির্দেশিত বা তাঁর দেয়া দিক-নির্দেশনা থেকে উদ্ভূত নয় এমন সব মূল্যবোধ ও রীতিনীতির ভিত্তিতে জীবনব্যবস্থা পরিচালনা করে।” (তাফসীরে ফী যিলালিল কোরআন)
    উস্তাদ সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ আশ-শাফেয়ী (الله رحيمه) আরও বলেন, “যারা সত্যকে অমান্য করে, ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া সীমারেখা অতিক্রম করে, আল্লাহর দেয়া শরীয়তের কোন তোয়াক্কা করে না, ইসলামি আক্বীদাহ-বিশ্বাসের কোন গুরুত্ব রাখে না, যারা ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্ধারিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে অথবা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমোদন ছাড়া ইবাদতের পদ্ধতি তৈরি করে, যারা বিশেষ প্রকার ধ্যান করা অথবা বিশেষ ভঙ্গিমা অথবা কোন ইবাদতের বিশেষ আদব তৈরি করে তারা সকলেই তাগুত। এমনিভাবে যারা বিশেষ কোন ব্যক্তির অন্ধ অনুকরণে জনসাধারণকে বাধ্য করে তারাও তাগুত।” (তাফসীরে ফী যিলালিল কোরআন: /২৯২)
    শাইখ মুহাম্মাদ আমিন শানকিত্বি আল-মালেকী (الله رحيمه) বলেন, “আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত করা হয় তারাই তাগুত। আর এই গাইরুল্লাহর ইবাদতের বড় অংশটাই হচ্ছে শয়তানের জন্য। কেননা শয়তানের আহবানে সাড়া দিয়ে কোন গাইরুল্লাহর ইবাদাত করা পরোক্ষভাবে শয়তানেরই ইবাদতের শামিল। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘হে বনী আদম! আমি কি তোমাদের বলে রাখিনি যে শয়তানের ইবাদাত করোনা ?’ (সূরা ইয়াসিন: ৬০)” (তাফসীরে আদওয়াউল বয়ান: /২২৮)
    মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক আল-হানাফী (الله رحيمه) বলেন, “তাগূতের অর্থ আল্লাহর ঐ বিদ্রোহী বান্দা, যে আল্লাহর মোকাবেলায় নিজেকে বিধানদাতা মনে করে এবং মানুষের উপর তা কার্যকর করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে কোন তাগুত ব্যক্তি বা দলের বানানো আইন-কানুন হচ্ছে সত্য দ্বীন ইসলামের বিপরীতে বিভিন্ন ধর্ম’, যা থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করা ছাড়া ঈমান সাব্যস্ত হয়না। আল্লাহর বিরুদ্ধে কিংবা আল্লাহর উপাসনার পাশাপাশি তাগুতের উপাসনা বা আনুগত্য করা কিংবা তা বৈধ মনে করা, তদ্রুপ আল্লাহর দ্বীনের মোকাবেলায় বা তার সাথে তাগূতের আইন-কানুন গ্রহণ করা বা গ্রহণ করাকে বৈধ মনে করা সরাসরি কুফর ও শিরক। তাগূত ও তার বিধি-বিধান থেকে সম্পর্কচ্ছেদ ছাড়া ঈমানের দাবি নিফাক ও মুনাফিকী।” (ঈমান সবার আগে-, মাসিক আল-কাউসার মে-২০১৩)
    মাওলানা মুহাম্মাদ মাসঊদ আযহার আল-হানাফী(بركتهدابت) বলেন,
    ইসলাম বিরোধী প্রত্যেক শক্তির নামই তাগুত।
    তাছাড়া তাগুত হলো সেইসব ব্যক্তি যারা মানুষকে সত্য দ্বীন থেকে বিপথগামী করে - হোক সে মানুষ অথবা জ্বীন।
    যারা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সেই ধরনের প্রত্যেক ব্যক্তিই তাগুত।
    তাগুত হলো সেইসব সিস্টেম বা পদ্ধতি যার ছত্রছায়ায় কুচক্রী মানুষগুলো একত্রিত হয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষরযন্ত্রে লিপ্ত থাকে অথবা যুদ্ধ করে।
    আরো, তাগুত হচ্ছে সেইসব প্রতিষ্ঠানের নাম যেখানে সত্য দ্বীন বিরোধী নিত্য-নতুন বিভাগ ও ফিরকার উদ্ভব ঘটে।
    শয়তান এবং মিথ্যা উপাস্যগুলোকে (হোক মানুষ অথবা জ্বিন) তাগুতের প্রধান অর্থ বুঝালেও, এর পাশাপাশি তাগুত হচ্ছে পৃথিবীর সেইসকল ক্ষমতাসীন মানুষ যারা তাদের সমস্ত বাতিল শক্তির মাধ্যমে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে, ইসলামী শরীয়তের আইনের বাস্তবায়নকে রুদ্ধ করে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের সাহায্য করে। (আল্লাহই ভালো জানেন)
    ফাতহুল জাওয়াদ ফী মাআরিফ আয়াতুল জিহাদ, পৃ: ৩৭৫-৩৭৬

    তবে এখানে উল্লেখ্য যে যেহেতু আল্লাহ তা'আলা নিজেই রাসূলুল্লাহ () এবং শরীয়ার সীমানার ভিতরে দায়িত্বপ্রাপ্ত খলিফা/আমির/দায়িত্বশীলদের আনুগত্য করতে বলেছেন এবং আল্লাহ তা'আলার আইন দ্বারা যে বিচারক বিচারকার্য পরিচালনা করেন কেবলমাত্র তার কাছেই বিচার ফায়সালা চাইতে বলেছেন সেহেতু এই আনুগত্য বা বিচার ফায়সালা চাওয়ার দ্বারা আ'দিয়াতের সীমা লঙ্ঘিত হবে না । কাজেই এটা পরিষ্কার বঝা যাচ্ছে যে আল্লাহ তালার পরিবর্তে বা আল্লাহ তালার মোকাবেলায় যাকেই মানবেন বা যার আনুগত্য করবেন বা ইবাদত করবেন বা যার কাছেই বিচার ফায়সালা চাইবেন সেটাই হবে তাগুত কে মান্য করা বা তাগুতের আনুগত্য করা বা তাগুতের ইবাদত করা।

    আরো সহজ করে বলি কোনো সন্তানের যেমন দুইজন পিতা থাকা অসম্ভব, কোন স্ত্রীর যেমন একাধিক বৈধ স্বামী থাকা অসম্ভব তেমনি মুসলমানের একাধিক ইলাহ/রব/মা'বুদ/প্রভু/উপাস্য থাকা অসম্ভব। আমাদের মালিক মহান রাব্বুল আ'লামিন তাঁর যাবতীয় নাম, গুণ, কাজ এবং ক্ষমতায় একক এবং অদ্বিতীয়। তার সমকক্ষ,সদৃশ্য কেউ নেই। দ্বীনের রুজ্জু/রশিকে দুই হাত দ্বারা শক্তভাবে ধরতে হবে। একহাতে দ্বীনের রুজ্জু/রশি আর অন্য হাতে তাগুতের রুজ্জু/রশি ধারণ করে ঈমান দাবি করা আর কারো সাথে শরীরকানায়/অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে পিতৃত্বের দাবি করা সমান কথা।

    আবু জাহেল ও মক্কার অন্যান্য কাফেররা ঈমান বিল্লাহতে অর্থাৎ আল্লাহ তে বিশ্বাসী ছিল। কিন্তু তারা সকল তাগুতকে অস্বীকার পূর্বক আল্লাহকে একমাত্র ইলাহ হিসাবে স্বীকার করতে রাজি ছিল না। তাই তারা আল্লাহতে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও মুশরিক ছিল। তারা একই সঙ্গে তাগুতেরও আনুগত্য/ইবাদত করতো এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলার আনুগত্য/ইবাদত করত।পবিত্র কুরআনেও আল্লাহ তা’আলা বলেন –

    বলুন পৃথিবী এবং পৃথিবীতে যারা আছে, তারা কার ? যদি তোমরা জান, তবে বল এখন তারা বলবেঃ সবই আল্লাহর বলুন, তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না -সুরা মুমিনুন:৮৪,৮৫

    বলুনঃ সপ্তাকাশ মহা-আরশের মালিক কে? এখন তারা বলবেঃ আল্লাহ বলুন, তবুও কি তোমরা ভয় করবে না ? -সুরা মুমিনুন: ৮৬,৮৭

    বলুনঃ তোমাদের জানা থাকলে বল, কার হাতে সব বস্তুর কর্তৃত্ব, যিনি রক্ষা করেন এবং যার কবল থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না? এখন তারা বলবেঃ আল্লাহর বলুনঃ তাহলে কোথা থেকে তোমাদেরকে জাদু করা হচ্ছে? -সুরা মুমিনুন: ৮৮,৮৯

    যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, কে তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তবে অবশ্যই তারা বলবে, আল্লাহ, অতঃপর তারা কোথায় ফিরে যাচ্ছে -সুরা ঝুখরুফ: ৮৭

    আপনি যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন কে নভোমন্ডল ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছে? তারা অবশ্যই বলবে, এগুলো সৃষ্টি করেছেন পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহ’ -সুরা ঝুখরুফ:

    যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে নভোমন্ডল ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছে, চন্দ্র সূর্যকে কর্মে নিয়োজিত করেছে ? তবে তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহ তাহলে তারা কোথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে
    -সুরা আনকাবুত: ১৬

    যদি আপনি তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন, কে আকাশ থেকে বারি বর্ষণ করে, অতঃপর তা দ্বারা মৃত্তিকাকে তার মৃত হওয়ার পর সঞ্জীবিত করে ? তবে তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ বলুন, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা বোঝে না’ -সুরা আনকাবুত: ৬৩

    সুতরাং দেখা যাচ্ছে তাগুতকে বর্জন না করে আল্লাহতে বিশ্বাসী হলেও ঈমানদার হওয়া যাবে না।
    ইলাহ/রব/মা'বুদ/প্রভু/উপাস্য একজনই । হয় আল্লাহ রাব্বুল আলামীন নয়তো তাগুত ।

    ঈমান ও তাগুতের পথ ও গন্তব্য সম্পূর্ণ আলাদা। আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ ফরমান -

    যারা ঈমান আনে আল্লাহ তাদের সাহায্যকারী ও সহায়তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোর মধ্যে নিয়ে আসেন । আর যারা কুফুরীর পথ অবলম্বন করে তাদের সাহায্যকারী ও সহায় হচ্ছে তাগুতসে তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যায় । এরা আগুনের অধিবাসী, সেখানে এরা চিরকাল থাকবেবাকারাহ ২৫

    আপনি কি তাদেরকে দেখেননি যারা দাবি করে যে, যা আপনার উপরে নাজিল হয়েছে আমরা সে বিষয়ের উপরে ঈমান এনেছি এবং আপনার পুর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতিও ঈমান এনেছি কিন্তু তারা বিবাদপূর্ণ বিষয়ে তাগুতের কাছে বিচারপ্রার্থী হতে চায়, অথচ তাদেরকে নির্দেশ করা হয়েছিলো যেন তারা তাগুতকে মান্য না করেপক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করতে চায় ।আন নিসা ৬০
    যারা ঈমানদার তারাতো যুদ্ধ করে আল্লাহর পথে আর যারা কাফের তারা লড়াই করে তাগুতের পক্ষেনিসা-৭৬
    তাগুতের সাথে কুফরির ধরণ হলো: আল্লাহ ছাড়া অন্য সবকিছুর উপাসনা/ইবাদত/আনুগত্য/দাসত্ব/হুকুম/আদেশ/ আইন/বিধান/সংবিধান বাতিল বলে বিশ্বাস করা, তা ত্যাগ করা, ঘৃণা ও অপছন্দ করা, এবং যারা এসব নকল বা বাতিল ইলাহ/মাবুদ/উপাস্য/প্রভুদের উপাসনা/ইবাদত/আনুগত্য/দাসত্ব/হুকুম/আদেশ/আইন/বিধান/সংবিধান পালনরে তাদেরকে অস্বীকার করা, তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা।
    কিন্তু বাস্তবে আমরা কি করছি ? তাগুতকে অস্বীকার বা বর্জন করছি নাকি তাগুতের আনুগত্য/ইবাদত করছি ? আসুন আমরা নিজেরাই একটু নিজেদের কর্মের হিসাব নিই।
    ১। আমরা রাষ্ট্র/সরকার পরিচালনা করছি কার আইন/বিধান/ সংবিধান/হুকুম দিয়ে ?
    আল্লাহ তাআলার আইন/বিধান/সংবিধান/হুকুম বা শরীয়াহ দিয়ে ? নাকি
    আল্লাহ তাআলার শরীয়াহ বাতিল পূর্বক মানুষের তৈরীকৃত আইন/বিধান/সংবিধান/হুকুম বা শরীয়াহ দিয়ে ?

    ২। আমরা বিচারকার্য পরিচালনা করছি কার আইন/বিধান/হুকুম/দন্ডবিধি বা শরীয়াহ দিয়ে ?
    আল্লাহ তাআলার আইন/বিধান/হুকুম/দন্ডবিধি বা শরীয়াহ দিয়ে ? নাকি
    আল্লাহ তাআলার শরীয়াহ বাতিল পূর্বক মানুষের তৈরীকৃত আইন/বিধান/দন্ডবিধি/কার্যবিধি দিয়ে ?
    আমরা কি একমাত্র আল্লাহ তাআলারই ইবাদত করি নাকি আল্লাহ তাআলার পাশাপাশি তাগুতেরও ইবাদত করি ? অবশ্য এটা বুঝতে হলে আগে ইবাদত কাকে বলে তা আগে বুঝতে হবে। ইবাদতের সংজ্ঞা আমাদের অনেকের কাছেই পরিস্কার নয়। যে কারনে আমরা ইবাদত বলতে শুধু বুঝে থাকি নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, তাসবিহ-তাহলিল ইত্যাদি কর্মকাণ্ডকে। ইবাদতের সংজ্ঞা না জানার কারনে হুদুদ, কিসাস যে ফরজ ইবাদত আমরা এটা বুঝি না। আফসোস ! হায় আফসোস ! যাইহোক আসুন এবার শরীয়াহর আলোকে জেনে নিই ইবাদত কাকে বলে ।
    ‘ইবাদাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হলো:- চূড়ান্ত বিনয়, আনুগত্য, বশ্যতা, উপাসনা, আরাধনা।
    কিন্তু পারিভাষিক অর্থে ইবাদত বলতে কি বুঝায় তা পবিত্র কুরআনের একটি আয়াত থেকেই আমাদের সামনে পরিস্কার হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ্‌আল্লাহ তাআলা বলেন, “ তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের পাদ্রী ও ধর্ম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে এবং মারিয়ামের পুত্র মাসীহকেও, অথচ তাদের প্রতি শুধু এই আদেশ করা হয়েছিল যে তারা শুধু এক মা’বুদের ইবাদত করবে যিনি ব্যতীত কোন সত্য উপাস্য নেইতিনি তাদের অংশী স্থির করা হতে পবিত্র ’’-(সূরা তাওবা: ৩১)

    উপরোক্ত আয়াতটি থেকে স্বাভাবিকভাবে একটি ব্যাপার বুঝে আসে না - তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের পাদ্রী ও ধর্ম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে।’ অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা বলছেন মানুষ মানুষকে (পাদ্রী ও ধর্ম-যাজকদেরকে) তাদের প্রভু (ইলাহ) বানিয়ে নিয়েছে ! নিম্নের হাদিস থেকেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ ।

    হাদীস শরীফে এসেছে ইমাম বুখারী রহ. বর্ণনা করেন:

    আদী ইবনে হাতেম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি গলায় একটি ক্রুশ ঝুলন্ত অবস্থায় রসূলুল্লাহ () এর নিকট এলে তিনি বলেন, হে আদী এই র্মূতিটি তুমি তোমার গলা থেকে ছুঁড়ে ফেল ফলে আমি তা খুলে ফেললাম, অতঃপর রসূলুল্লাহ () এর নিকট এসে দেখতে পেলাম, তিনি সূরা তাওবা তিলাওয়াত করছেন: “তারা আল্লাহকে ছেড়ে নিজেদের পাদ্রী ও র্ধম-যাজকদেরকে প্রভু বানিয়ে নিয়েছে আমি বললাম, আমরা তো তাদের ইবাদত করতাম না রসূলুল্লাহ () বললেন, আল্লাহ তায়ালা যা হালাল করেছেন তারা তা হারাম করতো আর তোমরাও তা হারাম মানতে এবং আল্লাহ তায়ালা যা হারাম করেছেন তারা তা হালাল করতো আর তোমরাও তাকে হালাল ভাবতে আমি বললাম, হ্যাঁ এমনটি তিনি () বললনে, এটিই তাদের ইবাদত [তারিখুল কাবীর লিল ইমাম বুখারী ৭ম খন্ড ৪৭১ নং হাদীস; সুনানে তিরমিযি: ৩০৯৫; মু‘জামুল কাবীর লিত তাবারানী: ১৭/৯২/২১৮,২১৯; সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী: ২০৩৫০ (সনদ: হাসান সহীহ)

    তাহলে এখানে হুজুর আকরাম () এর হাদীস থেকে আমরা বুঝলাম কারো হুকুম/আদেশ/আইন/বিধান মানার নামই হচ্ছে ইবাদত ।
    আর বলাই বাহুল্য নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত এসবই আল্লাহর হুকুম/আদেশ/আইন/বিধান তাই এগুলো ইবাদত। এরকম আর কতগুলো হুকুম/আদেশ/আইন/বিধান আল্লাহ তাআলা আমাদের উপর জারী করেছেন বা ফরজ করেছেন তা কি আমরা জানি ? যদি না জানি তাহলে কি আমরা প্রতিনিয়ত কবিরা গুনাহে/আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত থাকব না ? আর বিশেষ করে ঈমান/আকিদা সংক্রান্ত আল্লাহর জারীকৃত হুকুম/আদেশ/আইন/বিধান যদি আমাদের জানা না থাকে তাহলে কি আমরা মুসলিম থাকতে পারব বা আমাদের ঈমান কি থাকবে ? আল্লাহর জমিন তথা পুরো পৃথিবী আল্লাহ তাআলার হুকুম/আদেশ/আইন/বিধান দ্বারা পরিচালনা করা যে ফরজ এবং আল্লাহর এই ফরজ বিধান লঙ্ঘন করে মানবরচিত বিধান দ্বারা আল্লাহর জমিন শাসন করলে বা বিচারকার্য পরিচালনা করলে বা এইসমস্ত আল্লাহদ্রোহী কাজ যারা করে তাদেরকে সমর্থন করলে যে ঈমান চলে যাবে এবিষয়ে আমাদের কি কোন খবর আছে ?
    আল্লাহর উপর ঈমানের অর্থ : আল্লাহ তাআলাই একমাত্র হক ইলাহ/রব/মাবুদ/উপাস্য/প্রভু অন্য কেউ নয় -কথা বিশ্বাস করা, আর সবরকম ইবাদতকে নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট করা যাতে এর কোন অংশ অন্য কোন বাতিল বা নকল ইলাহ/রব/মাবুদ/উপাস্য/প্রভুর জন্য নির্দিষ্ট না হয়আর মুখলিস বা নিষ্ঠাবানদের সাথে ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপন করা, মুশরিকদেরকে ঘৃণা ও অপছন্দ করা, তাদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করাআর এটাই ইবরাহীম আলাইহিস্‌সালাম এর প্রতিষ্ঠিত দ্বীন বা মিল্লাত, যে ব্যক্তি তার থেকে বিমুখ হবে সে নিজ আত্মাকে বোকা বানাবে, আর এটাই হলো সে আদর্শ (أسوة) বা Model যার কথা আল্লাহ তাআলা তাঁর বাণীতে বলেছেন: “অবশ্যই তোমাদের জন্য রয়েছে ইবরাহীম ও তার সাথীদের মাঝে সুন্দর আদর্শ, যখন তারা তাদের জাতিকে বলেছিল: আমরা তোমাদের এবং আল্লাহ ছাড়া তোমাদের অপরাপর উপাস্য দেবতাদের থেকে সম্পূর্ণ সম্পর্কমুক্ত, আমরা তোমাদের সাথে সম্পর্ক স্থাপনে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করলাম, আর আমাদের ও তোমাদের মাঝে চিরদিনের জন্য শত্রুতা ও ঘৃণার সম্পর্ক প্রকাশ হয়ে পড়ল, যে পর্যন্ত তোমরা শুধু এক আল্লাহর উপর ঈমান স্থাপন না করছ।” [সূরা আল-মুমতাহিনা: ]
    তাগুতের প্রকারভেদঃ
    প্রকৃতিগতভাবে তাগুত দুই প্রকার। ১) বেসরকারী তাগুত ২) সরকারী বা রাজনৈতিক তাগুত

    ১) বেসরকারী তাগুতঃ বেসরকারী তাগুত হচ্ছে এমন তাগুত আল্লাহর পরিবর্তে আমরা যার বা যাদের হুকুম/আদেশ/বিধান/আইন/সংবিধান বাধ্য হয়ে নয় বরং স্বেচ্ছায়, অনুগত হয়ে মান্য করি এবং তাতে তারা খুশী হয়/সন্তুষ্ট হয় যার বর্ণনা আল্লাহ তা’আলা সূরা তাওবার ৩১ নাম্বার আয়াতে করেছেন এবং যার ব্যাখ্যা আমরা উপরে বিস্তারিত আলোচনা করেছি এই কাতারে আছে আল্লাহ তাআলার শরীয়ার সাথে সাংঘর্ষিক বিভিন্ন দল/সংগঠন/নেতা-নেত্রী/প্রতিষ্ঠান/তরিকা/ফিরকা (আহলে হাদিস, সুন্নী জামাত ইত্যাদি) /দর্শন /স্কলার/ আকাবির / পীর/ বুজুর্গ/ শাইখ ইত্যাদি ।

    ২) সরকারী বা রাজনৈতিক তাগুতঃ এই প্রকার তাগুত হল রাষ্ট্রীয় বা সরকারী শক্তি বা হুকুমত এরা আল্লাহর পরিবর্তে এদের হুকুম/আদেশ/বিধান/আইন মানতে এদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে জনগণকে বাধ্য করে এবং আল্লাহর হুকুম/আদেশ/বিধান/আইন এর মোকাবেলায় এদের হুকুম/আদেশ/বিধান/আইন/সংবিধান না মানলে জনগণকে শাস্তি প্রদান করেতবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে বর্তমানে মুসলিম জনগোষ্ঠীর একটা বিরাট অংশ বাধ্য হয়ে নয় বরং একান্ত অনুগত হয়েই আল্লাহর পরিবর্তে এসকল সরকারী বা রাজনৈতিক তাগুতের হুকুম/আদেশ/বিধান/আইন মান্য করেএক্ষত্রে তাদেরকে কেউ বাধ্য করেনা। নিজেদের অজান্তেই তারা তাগুতের আনুগত্য করে। যেমন ধরেন বর্তমান বিশ্বে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বা মুসলিম কান্ট্রি দাবীদার রাষ্ট্রের সংখ্যা হচ্ছে ৫৭ টি। কিন্তু একমাত্র আফগানিস্তান ছাড়া (তালিবান মুজাহিদীন কর্তৃক বিজিত হওয়ার পর থেকে) বাকি ৫৬ টি মুসলিম রাষ্ট্রেরই সংবিধান এবং অন্যান্য আইন-কানুন মানবরচিত। এসব মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রগুলোতে আল্লাহ তাআলার আইন/বিধান/সংবিধানের পরিবর্তে গণতান্ত্রিক, সমাজতান্ত্রিক, রাজতান্ত্রিক বা একনায়কতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিদ্যমান। এর মধ্যে রাজতান্ত্রিক বা একনায়কতান্ত্রিক তাগুতদেরকে জনগণের একটা ক্ষুদ্র সুবিধাবাদী/দরবারী অংশ ছাড়া বাকী সকল জনগণই বাধ্য হয়ে মান্য করে বা তাদেরকে মানতে বাধ্য করা হয়। কিন্তু গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক তাগুতদেরকে অধিকাংশ জনতা স্বেচ্ছায় একান্ত অনুগত হয়েই মান্য করে। গণতান্ত্রিক ও সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলো পরিচালিত হয় মূলত রাজনৈতিক দল দ্বারা। এই রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি/নেতারাই সরকার পরিচালনা করে। এসব দলের এমপিরাই সংসদ/আইনসভা পরিচালনা করে, আইন প্রণয়ন করে। এসব দলের নেতা/প্রতিনিধি/এমপিরাই আল্লাহ তাআলার দেওয়া আইন/বিধান/সংবিধান বাতিল করে নিজেরা আইন/বিধান/সংবিধান প্রণয়ন ও বলবত করে। আর জনগণ স্বেচ্ছায় একান্ত অনুগত হয়ে এইসব রাজনৈতিক দল যেমন- আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জমিয়ত, খিলাফত, জাসদ, বাসদ, কম্যুনিস্ট পার্টি, এ.কে পার্টি, পিপলস পার্টি, মুসলিম লীগ ইত্যাদি দলের সদস্য হয়, এসব দলের পক্ষে স্বেচ্ছায় (ক্ষেত্র বিশেষ নিজের অর্থ খরচ করে) প্রচার-প্রচারণা চালায়, সদস্য সংগ্রহ করে, মিছিল-মিটিং করে এমনকি মারামারি-কাটাকাটি করে একে অপরকে হত্যা পর্যন্ত করে। আফসোস ! যে আনুগত্যটা থাকার কথা ছিল আল্লাহ তাআলার জন্য সেই আনুগত্য করছে এরা রাজনৈতিক দলের জন্য ! যে চেষ্টা-প্রচেষ্টা, সংগ্রাম, যুদ্ধ/জিহাদ করার কথা ছিল দ্বীন/ইসলাম কায়েম/প্রতিষ্ঠার জন্য। সেই চেষ্টা-প্রচেষ্টা, সংগ্রাম, যুদ্ধ/জিহাদ চলছে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, পিপলস পার্টি, মুসলিম লীগ ইত্যাদি দলকে ক্ষমতায় বসানোর/টিকানোর জন্য ! একবারও কি আমাদের মনে এই বিষয়টা দাগ কাটেনা যে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, পিপলস পার্টি, মুসলিম লীগ ইত্যাদি দল কি আল্লাহ তাআলার আইন/বিধান/সংবিধান দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে নাকি তারা আল্লাহ তাআলার আইন/বিধান/সংবিধান/শরীয়াহ বাতিল ঘোষণা করে মানবরচিত আইন/বিধান/সংবিধান/শরীয়াহ দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা করে ? একবারের জন্যও আমাদের ভাবনায় এই বিষয়টা আসেনা যে এইসব দল ও দলের নেতা/নেত্রী/প্রতিনিধি/এমপিরা শুধুমাত্র আল্লাহ তাআলার আইন/বিধান/সংবিধান/শরীয়াহ বাতিল ঘোষণা করেই ক্ষান্ত হয়নি উপরন্তু তারা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক ঘোষিত হালালকে হারাম ঘোষণা করেছে আর হারামকে হালাল ঘোষণা করেছে। আল্লাহ তাআলা মদ, সুদ, জুয়া, জিনা ইত্যাদিকে হারাম ঘোষণা করেছেন কিন্তু জনতার ভোটে/সমর্থনে ক্ষমতায় থাকা দলের সরকার/সংসদ এসকল কবিরা গুনাহকে হালাল/বৈধ ঘোষণা করেছে। শুধু তাই নয় আল্লাহ তাআলা যে জিনাকে চরম শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসাবে হারাম ঘোষণা করেছেন জনতার দলের সরকার/সংসদ সেই জিনাকে তো বৈধ ঘোষণা করেছেই উপরন্তু জিনার ব্যবসাকে পর্যন্ত হালাল/বৈধ ঘোষণা করেছে। আল্লাহ তাআলা তাঁর বিধান/শরীয়াহ দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনা বাধ্যতামূলক করেছেন এবং মানুষের আইন করার ক্ষমতাকে হারাম ঘোষণা করেছেন। কিন্তু জনতার দলের সরকার/সংসদ আল্লাহ তাআলার আইন/বিধান/সংবিধান/শরীয়াহ বাতিল ঘোষণা করে মানুষকে আইন/বিধান/সংবিধান/শরীয়াহ রচনা/প্রনয়ণের ক্ষমতা দিয়েছে। আল্লাহ তাআলার তাঁর জারিকৃত আইন/বিধান/সংবিধান/শরীয়াহ দ্বারা বিচার-ফায়সালা করা ফরজ করেছেন। আর জনতার দলের সরকার/সংসদ আল্লাহ তাআলার আইন/বিধান/সংবিধান/শরীয়াহ বাতিল ঘোষণা করে মানবরচিত আইন/বিধান/সংবিধান/শরীয়াহ দ্বারা বিচার-ফায়সালা করা বাধ্যতামূলক করেছে। নাউযুবিল্লাহ ! অথচ আমরা স্বেচ্ছায় এসকল রাজনৈতিক দল/সরকারের আনুগত্য করে চলেছি। এ যেন এক হাতে ঈমান আর অন্য হাতে শিরক, কুফর, নিফাক নিয়ে চলার এক ভয়াবহ মহরা ! মূলত তাগুত না চিনার কারণে এবং ঈমানের সঠিক মর্ম না বুঝার কারনেই আজকে আমাদের ঈমানের এই দুরাবস্থা !

    এখানে উল্লেখ্য যে জামায়াত, জমিয়ত, খিলাফত বা অন্যান্য দল যারা ইসলামিক রাজনৈতিক দল হিসাবে পরিচিত তারাও দায়মুক্ত থাকতে পারবেন না। কারণ তারা কি আজ পর্যন্ত কোনদিন সংসদে এই বিষয়টি উত্থাপন করেছেন যে আইন/বিধান/সংবিধান রচনা করার ক্ষমতা মানুষের নেই, এই ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তাআলার বা আল্লাহর আইন/বিধান/সংবিধান বাদ দিয়ে যে বা যারা আইন/বিধান/সংবিধান রচনা করার দুঃসাহস দেখাবে তাঁর ঈমান চলে যাবে যার পরিণতিতে সে বা তারা মুরতাদ হয়ে যাবে ? বা সংসদের বাইরে মিম্বার থেকে বা দরসগাহ থেকে বা ওয়াজের মঞ্চ থেকে বা রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি কি জনগণের সামনে পরিস্কার করা হয়েছে ? যদি পরিস্কার করা হত তাহলে কি মুসলিম জনতা এইভাবে পঙ্গপালের মত এই তাগুতী রাজনৈতিক ব্যবস্থায় নিজেদের সম্পৃক্ত করত ?

    দ্বীন কায়েমের নববী পন্থা বাদ দিয়ে কুফরী গণতান্ত্রিক বা সমজতান্ত্রিক পন্থার চর্চা আমাদেরকে কেবল কুফরির দিকেই নিয়ে যাবে। এই পন্থায় কিয়ামতের আগে কোনদিন দ্বীন কায়েম হবে না, হতে পারে না। বিশ্বাস না হলে ৩৬০ ডিগ্রী এঙ্গেলে একটু চিন্তা করে দেখুন –

    ১। গণতন্ত্র আবিস্কার হওয়ার পর থেকে আজ পর্যন্ত কোথাও কি এই কুফরী পন্থায় দ্বীন কায়েম হয়েছে ?
    ২। এরদোগান সাহেব গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় এসে বিগত প্রায় দুই যুগ যাবত ক্ষমতায় থেকে কি তুরস্কে দ্বীন কায়েম করতে পেরেছেন ? নাকি এখনও তুরস্ক সেক্যুলার রাষ্ট্রই রয়ে গেছে ? গণতান্ত্রিক পন্থায় এরদোগান সাহেব কি তুরস্কে মদ নিষিদ্ধ করতে পেরেছেন ? বা সর্বশেষ ইসলামী খিলাফার কেন্দ্রভূমি তুরস্ককে কি তিনি বিশ্বব্যাপী মুসলিম নিধনের কুফফার সামরিক জোট ন্যাটো থেকে বের করে আনতে পেরেছেন ?
    ৩। রক্তের নদী পেরিয়ে এই কুফরী গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় এসে দ্বীন কায়েম তো দূরের কথা ডঃ মুরসি কি ৩৬৫ দিন ক্ষমতায় থাকতে পেরেছিলেন ?
    ৪। তাগুতি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশীদার হয়ে ইসলামিক সালভেশন ফ্রন্ট বিপুল জনসমর্থন থাকা সত্ত্বেও কি ১৯৯২ সালে আলজেরিয়ার ক্ষমতার মসনদের দেখা পেয়েছিল ?
    ৫। এক মিনিটের জন্য তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই যে তাগুতি গণতান্ত্রিক পন্থায় কোনদিন ক্ষমতায় যাওয়া যাবে বা ক্ষমতায় গিয়ে দ্বীন কায়েম করা যাবে তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায়-

    প্রথমতঃ যেসব রাষ্ট্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সে সব রাষ্ট্রের সব মুসলিম নাগরিক যদি সম্মিলিতভাবে ইসলামের পক্ষে ভোট দেয়ও তবুও ইসলামের বিজয় কি সম্ভব ? উত্তর হচ্ছে না কারণ কোন রাষ্ট্রেই মুসলমানদের কোন একক রাজনৈতিক দল নেই। সব জায়গাতেই অসংখ্য ইসলামী রাজনৈতিক দাবীদার দল দ্বীন কায়েমের কথা বলে রাজনীতি করে। ফলে একক প্লাটফর্ম না থাকার কারণে মুসলমানদের ভোট ভাগ হয়ে যাবে আর বিরোধী পক্ষ সহজেই জিতে যাবে।

    দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ তাআলা কি শুধু মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় দ্বীন কায়েম ফরজ করেছেন নাকি পৃথিবীর প্রতিটা ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে দ্বীন কায়েম ফরজ করেছেন ? যদি সারা দুনিয়ায় দ্বীন কায়েম ফরজ করে থাকেন তাহলে এক মিনিটের জন্য তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় আলাদীনের চেরাগ দিয়ে তাগুতি গণতান্ত্রিক পন্থায় ক্ষমতায় গিয়ে দ্বীন কায়েম করে ফেলব তাহলে ভারত, চীন, আমেরিকা, রাশিয়া, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া বা এধরনের কাফের, মুশরিক, নাস্তিক সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রে দ্বীন কিভাবে কায়েম হবে ?

    তৃতীয়তঃ হুজুর আকরাম () এর ইন্তেকালের পর থেকে নিয়ে মাত্র ১৩ বছরের মধ্যে (হযরত উমর রাঃ এর খিলাফতকালে) অর্ধজাহানে দ্বীন কায়েম হয়েছিল কোন পন্থায় ? গণতান্ত্রিক পন্থায় জনসমর্থন লাভের মাধ্যমে নাকি তাগুত শাসককে ৩ টি অপশন প্রদানের মাধ্যমে ? অর্থাৎ
    ১। ইসলাম গ্রহন কর ।
    অথবা
    ২। যদি ইসলাম গ্রহন করতে না চাও তাহলে জিজিয়া প্রদান করে ইসলামের কর্তৃত্ব মেনে নিয়ে এই এলাকায় বসবাস কর। অথবা
    ৩। যদি প্রথম দুটি অপশন গ্রহন না কর তাহলে যুদ্ধের ময়দানে এসো তরবারীই ফায়সালা করবে এই ভূমিতে কার আইন ও শাসন চলবে আল্লাহর নাকি গায়রুল্লাহর ?

    সবচেয়ে বড় কথা হল গণতান্ত্রিক পন্থায় আল্লাহর শরীয়াহ/আইন/বিধান/সংবিধান কায়েম/বলবত করতে হলে জনগণের অনুমতি/মতামত নেওয়া বাধ্যতামূলক অর্থাৎ সংসদে হ্যাঁ জয়যুক্ত না হলে ইসলাম বাতিল ! নাউযুবিল্লাহ ! এখন সম্মানিত পাঠক আপনিই বলুন আল্লাহর শরীয়াহ/আইন/বিধান/সংবিধান কি কারো অনুমতি/মতামত এর মুখপেক্ষী নাকি তামাম সৃষ্টি জগত মহান রাব্বুল আলামিনের শরীয়াহ/আইন/বিধান/সংবিধান এর অনুমতির মুখাপেক্ষী ?

    যাইহোক নিবন্ধের প্রসঙ্গে ফিরে আসিপ্রকৃতিগতভাবে তাগুত দুই প্রকার হলেও বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়ে তাগুতের সংখ্যা অনেক। তার মধ্য থেকে প্রধান কয়েক প্রকার তাগুতের বিবরণ উল্লেখ করা হলোঃ

    (১)ইবলিশ/শয়তানঃ সে গাইরুল্লাহ বা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদতের দিকে আহবান করে। আল্লাহ তাআ’লা বলনে, “হে বনী-আদম! আমি কি তোমাদেরকে বলে রাখিনি যে, শয়তানের ইবাদত করোনা, সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? এবং আমার ইবাদত কর। এটাই হচ্ছে ‘সিরাতাল মুস্তাক্বীম’ (অর্থাৎ, সরল-সঠিক পথ)।” সুরা ইয়া সীনঃ ৬০-৬১।
    সুতরাং, আল্লাহ ছাড়া যা কিছুর উপাসনা করা হয় এর মূলে রয়েছে ইবলিশ। সে ই হচ্ছে সমস্ত শিরকের হোতা। অনেকের ধারণা তাগুত মানে হলো শয়তান। এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। বরং শয়তান একটি তাগুত। একমাত্র তাগুত নয়।
    (২)আল্লাহর আইন পরিবর্তনকারীশাসকঃ ঐ সকল শাসক যারা নিজেরা সার্বভৌমত্বের দাবী করে আল্লাহর আইন-কানুন ও বিধি-বিধানকে অস্বীকার করে বা বাতিল করে বা তার মাঝে বিকৃতি বা পরিবর্তন করে এবং মানুষের বানানো শাসনতন্ত্র/সংবিধান কায়েম করে সে তাগুত ।
    যেমন- আফগানিস্তান ছাড়া (তালিবান মুজাহিদীন কর্তৃক বিজিত হওয়ার পর থেকে) বাকি ৫৬ টি মুসলিম রাষ্ট্রেরই সংবিধান এবং অন্যান্য আইন-কানুন মানবরচিত। অন্যান্য কুফর রাষ্ট্রগুলোর (দারুল কুফর) মতো এই সকল মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রগুলোও রাষ্ট্রীয় সংবিধান হিসাবে আল্লাহর দেওয়া আইন/সংবিধান বাতিল ঘোষণা করে তদস্থলে মানবরচিত আইন/সংবিধান দ্বারা রাষ্ট্র প্রচালনা করছে এবং সকল মুসলমানকে এই কুফরী আইন/সংবিধান মানতে বাধ্য করছে। শুধু এতটুকু করেই তারা ক্ষান্ত হয়নি উপরন্তু তারা আল্লাহর জারীকৃত হালাল/বৈধ কে হারাম ঘোষণা করেছে আর হারাম/অবৈধ কে হালাল/বৈধ ঘোষণা করেছেনাউযুবিল্লাহ। সম্মানিত পাঠক লক্ষ্য করুন মহান রাব্বুল আলামিন সুদ, মদ, জিনা, মূর্তি/প্রানীর ভাস্কর্য, গান-বাজনা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, সহশিক্ষা, নারীর বেপর্দা চলাফেরা কে হারাম ঘোষণা করেছেন। কিন্তু মুসলিম অধ্যুষিত এবং মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত এইসব রাষ্ট্রের মুসলিম দাবীদার শাসক এবং সংসদ আল্লাহর হারামকৃত সুদ, মদ, জিনাসহ এরকম আরও অনেক হারাম বিষয়কে হালাল/বৈধ হারাম ঘোষণা করেছে

    () বিচারক আল্লাহর নাযিলকৃত আইন-বিধান বাদ দিয়ে মানব রচিত আইন দিয়ে বিচার- ফয়সালাকারী বিচারক।

    আল্লাহ তাআলা বলেন- “আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে আপনার প্রতি যা অবর্তীর্ণ করা হয়েছে, আমরা সে বিষয়ের উপর ঈমান এনেছি, এবং আপনার পূর্বে যা অবর্তীণ হয়েছে তার উপরেও। কিন্তু তারা বিচার-ফয়সালার বিষয়কে তাগুতের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ হয়েছে, তারা যেন তাগুতকে অস্বীকার করবে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়। আর আপনি যখন তাদেরকে বলবেন, আল্লাহর নির্দেশের দিকে এসো, যা তিনি রাসুলের উপর নাযিল করেছেন, তখন আপনি মুনাফেকদের দেখবেন ওরা আপনার কাছ থেকে সম্পূর্ণভাবে দূরে সরে যাচ্ছে।” নিসাঃ ৬০-৬১।

    আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেন, “অতএব, (হে নবী!) আপনার পালনকর্তার কসম! সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে (অর্থাৎ নবীকে) ন্যায় বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে তা কবুল করে নেবে।” সুরা আন-নিসাঃ ৬৫।

    অন্যত্র আল্লাহ তাআ’লা বলেন, “যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই হচ্ছে কাফের।” সুরা আল-মায়ি’দাহঃ ৪৪।

    বর্তমান বিশ্বে আফগানিস্তান ছাড়া (তালিবান মুজাহিদীন কর্তৃক বিজিত হওয়ার পর থেকে) বাকি ৫৬ টি মুসলিম রাষ্ট্রের বিচারকার্যই আল্লাহর আইনের পরিবর্তে মানব রচিত কুফরী আইন দ্বারা পরিচালিত হচ্ছেআল্লাহর দেওয়া হুদুদ, কিসাস, তাজির এরা বাতিল ঘোষণা করেছেআল্লাহ তাআলা হত্যার বদলে হত্যার বিধান জারী করেছেনএক্ষেত্রে শুধুমাত্র নিকট আত্নীয়/ওয়ারিসদেরকে রক্তপণের বিনিময়ে অথবা বিনা রক্তপণে হত্যাকারীকে ক্ষমার বিধান দিয়েছেন কিন্তু আমাদের মুসলিম নামধারী মুরতাদ শাসক এবং বিচারকরা আল্লাহর দেওয়া এই পবিত্র বিধানকে বাতিল ঘোষণা করে রাষ্ট্রপতি নামক তাগুত প্রধানকে দন্ড মওকুফের ক্ষমতা প্রদান করেছে আল্লাহ তাআলা চুরি, ডাকাতি, জিনা, মদপান সহ বিভিন্ন অপরাধের যে শাস্তি/দন্ড ঘোষণা করেছেন মুসলিম অধ্যুষিত এবং মুসলিম রাষ্ট্র হিসাবে পরিচিত এইসব রাষ্ট্রের মুসলিম দাবীদার শাসক এবং সংসদ আল্লাহ প্রদত্ত এসকল দন্ড পরিবর্তন করে নিজেদের মনমত শাস্তি নির্ধারণ করেছে নাউযুবিল্লাহ !
    ()যে ব্যক্তি অদৃশ্যের জ্ঞান দাবী করেঃ যে ব্যক্তিইলমে গায়েববা অদৃশ্য জ্ঞানের দাবী করে সে তাগুত। এদের মাঝে রয়েছে জ্যোতিষী, গণক, যারা রাশি-চক্র দেখে ভবিষ্যৎবানী করে, জিনের মাধ্যমে বা মোরাকাবার মাধ্যমে গায়েবের খবর জানার দাবী করে এমন শ্রেণীর সূফী, পীর, ফকির
    আল্লাহ তাআলা বলেন, “তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এগুলো তিনি ছাড়া আর কেউ জানেনা। স্থলে ও জলে যা আছে, একমাত্র তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না, কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না, কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে।সুরা আনআমঃ ৫৯
    (৫)মিথ্যা মাবূদঃ আল্লাহ ছড়া যার ইবাদত, পূজা বা উপাসনা করা হয়, বা সিজদা করা হয় এবং সে বা তারা যদি এতে রাজী-খুশি থাকে তাহলে তাকেও তাগুত বলা হয়এদের মধ্যে রয়েছে সেইন্ট, মাদার, ঠাকুর, পুরোহিত, কোয়ান্টামের গুরুজী, এক শ্রেণীর সূফীদাবীদার পীর-ফকির, ধর্মীয় গুরু, নেতা, মাজার ইত্যাদি যাদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ বানিয়ে পূজা করা হয়। যেমন আল্লাহ বলেছেন, “তাদের মধ্যে যে বলে যে, তিনি (আল্লাহ) ব্যতীত আমিই উপাস্য, তাকে আমি জাহান্নামের শাস্তি দেব। আমি জালেমদেরকে এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি।” সুরা আল-আম্বিয়াঃ ২৯।

    এখানে উল্লেখ্য যে খ্রিস্টানরা ঈসা (আঃ) কে আল্লাহ তাআলার সমকক্ষ মনে করে, আল্লাহ তাআলার পুত্র মনে করে, ঈসা (আঃ) এর ইবাদত করে। কিন্তু ঈসা (আঃ) তাগুত নন। কারণ খ্রিস্টানদের এসকল অপকর্মে তিনি সন্তুষ্ট নন। তাই খ্রিস্টানদের কোন অপকর্মের দায় তাঁর উপর বর্তাবে না।

    (৬) আল-হাওয়া : আল্লাহর হুকুম পালনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণকারী আল-হাওয়া ওয়ান নাফস্ (প্রবৃত্তি)

    (৭) তাক্বলিদে-আবা : কুরআন-সুন্নাহ বাদ দিয়ে বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষের দোহাই দিয়ে যেসকল গায়রুলাহর ইবাদত করা হয় সেসকল বাপ-দাদা ও পূর্বপুরুষরাও তাগুত। যদি তারা এটা পছন্দ করে থাকেন।


    মহান রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে ঈমান বিধ্বংসী সকল কর্মকাণ্ড ও চিন্তা চেতনা থেকে হেফাযত করুনআমিন



    এসো জিহাদ শিখি

  • #2
    সংক্ষেপে বেশ ভাল লেখা ।

    Comment


    • #3
      ماشاء الله
      ماشاء الله

      Comment

      Working...
      X