Announcement

Collapse
No announcement yet.

নব্য জাহিলিয়্যাতের মূর্তিঃ লিবারেলিজম বা উদারনৈতিকতা (৩) লিবারেল দর্শনের প্রকৃত অর্থ

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • নব্য জাহিলিয়্যাতের মূর্তিঃ লিবারেলিজম বা উদারনৈতিকতা (৩) লিবারেল দর্শনের প্রকৃত অর্থ

    নব্য জাহিলিয়্যাতের মূর্তিঃ লিবারেলিজম বা উদারনৈতিকতা! (৩)
    লিবারেল দর্শনের প্রকৃত অর্থ৷

    উস্তাদ ইয়াহিয়া আব্দুল হাফিজ




    ওহির আলোকে গভীর অধ্যায়ন এবং নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলে, বিভিন্ন সংজ্ঞা, ব্যাখ্যা এবং ভাষার চাতুর্যপূর্ণ ব্যবহারের আড়াল থেকে লিবারেলিজমের প্রকৃত রূপ চিহ্নিত করা যায়।

    বস্তুত লিবারেলিজম এমন এক দর্শন যা মানুষের ওপর দেবত্ব আরোপ করে। লিবারেল দর্শন ‘স্বাধীনতা’ বলতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ইবাদত ও আনুগত্য থেকে বের হয়ে নিজের নফস ও খেয়ালখুশির দাসত্ব করাকে বুঝায়।

    এই দর্শন মনে করে মানুষ স্বাধীন, সার্বভৌম এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ। তার কোনো রব বা প্রতিপালকের প্রয়োজন নেই। রবের নির্দেশনা মানারও প্রয়োজন নেই। সে নিজেই নিজের রব। সে নিজের জন্য যা ভালো মনে করবে তাই হবে ভালো আর যা সে খারাপ মনে করবে তাই হবে মন্দ।

    তাদের দৃষ্টিতে ওই ব্যক্তিই হল স্বাধীন যে সকল বিশ্বাস ও বিধিবিধানের উর্ধে উঠে লিবারেল মূল্যবোধকে আঁকড়ে ধরতে পেরেছে এবং এ মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক সব কিছুকে ছুড়ে ফেলে দিতে পেরেছে।

    এই দর্শনে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার আনুগত্য করা এবং তাঁর আইন মেনে চলার কোনও প্রয়োজন নেই। বরং এমন করা হল এক প্রকারের দাসত্ব। স্বাধীন লিবারেল যে কোন ব্যক্তি এসব কিছুকে প্রত্যাখ্যান করে। সে নিজেই নিজের জন্য আইন বানায়।

    লিবারেল দার্শনিকদের মতে লিবারেল মানুষের রচিত আইনের ওপরে অন্য কোন আইন হতে পারে না। হবস থেকে রুশো পর্যন্ত সকল দার্শনিকদের মধ্যে এ বিশ্বাস বিরাজমান ছিল।

    যা কিছু ব্যক্তির পছন্দ, যা কিছু তার মনকে সুখী করবে, তার খেয়ালখুশিকে পরিতৃপ্ত করবে, লিবারেল দর্শনের মতে তা সবই বৈধ। নিজের সুখ, সন্তুষ্টি, পরিতৃপ্তি হল সবচেয়ে বড় মাপকাঠি। লিবারেলিজম এমন একটি দর্শন যা সকল মূল্যবোধ ও নৈতিকতাকে ব্যক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। লিবারেলিজমের প্রথম ধাপই হল আসমানী ও প্রাকৃতিক বিধানকে অস্বীকার করা।

    লিবারেল দর্শন মানবীয় বুদ্ধি ও বিবেচনাকে সার্বভৌম মনে করে। এই দর্শন মনে করে মানবীয় বিবেচনা, চিন্তা এবং যুক্তির উর্ধে আর কোন সত্য নেই। প্রত্যেক মানুষের জন্য ভালোমন্দ ও নৈতিকতার মাপকাঠি হল তার নিজের মন, তার যুক্তি, তার স্বার্থ। আর সামাজিকভাবে নৈতিকতা ও কল্যাণের মাপকাঠি হল সমাজের সকলের সামষ্টিক সিদ্ধান্ত। তাদের স্বার্থ।

    আধুনিক ব্যক্তি যেসব মূল্যবোধকে পবিত্র মনে করে সেগুলোই চূড়ান্ত। নৈতিকতার মানদন্ড তৈরি হবে সমাজের স্বাধীন ব্যক্তিদের স্বাধীন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে।অন্য সকল নৈতিকতা ও মূল্যবোধকে আধুনিক লোকদের ঠিক করা এই মূল্যবোধের আলোকে যাচাই করতে হবে।

    ধর্মকেও যাচাই করতে হবে আধুনিক লোকদের বাছাই করা এই মূল্যবোধের আলোকে। কাজেই অধিকাংশ লোক কোন কিছুকে বৈধ বললে তা হবে বৈধ এবং অবৈধ বলে তা হবে অবৈধ। অধিকাংশরা কোন কিছুকে ভালো বললে ওটা হবে ভালো। মন্দ বললে হবে মন্দ।

    বলাবাহুল্য লিবারেল সমাজে অধিকাংশের চিন্তাভাবনা চালিত হয় লিবারেল মূল্যাবোধের কাঠামোর ভিতরে। লিবারেল দর্শন কার্যত শাসনব্যবস্থা, রাষ্ট্র, ও সমাজ থেকে নৈতিকতাকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ভালোমন্দ, ন্যায়-অন্যায়ের সকল বোধ জনপরিসর থেকে অপসারিত হয়। সেই জায়গা দখল করে লিবারেল মূল্যবোধ।

    লিবারেলিজম তার নিজস্ব নৈতিকতা, মূল্যবোধ, শিল্প, ফ্যাশন, সাহিত্য, আইন এবং বিশ্বাসের মাধ্যমে এক নতুন বাস্তবতা তৈরি করে।

    অধিকাংশ জনগণের চাহিদা অনুযায়ী লিবারেল সমাজে কখনো সমকামিতা অবৈধ হতে পারে আবার কখনো বৈধ। কখনো মদ অবৈধ হতে পারে, কখনো বৈধ। আবার কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে যিনা বৈধ হলেও লিবারেল মূল্যবোধের সাথে সাংঘর্ষিক হবার কারণে ১৮ কিংবা ১৬ বছরের নিচে বিয়ে অবৈধ।

    বহুগামীতা, লিভ টুগেদার এবং একাধিক বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড কালচার ব্যক্তিস্বাধীনতার অন্তর্ভূক্ত হলেও আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বহুবিবাহ অপরাধ। গণতন্ত্র কিংবা নারী অধিকার চাপিয়ে দেয়ার জন্য যুদ্ধ করা মহৎ কাজ হলেও আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করা সন্ত্রাস।

    মধ্যযুগে ইউরোপের খ্রিস্টানরা খ্রিষ্ট ধর্ম রক্ষা ও প্রচারের নামে মুসলিমদের ওপর আক্রমণ করেছিল। ইতিহাসের পাতায় ইউরোপের এ আগ্রাসন ক্রুসেড নামে পরিচিত। মধ্যুযগের ক্রুসেডের অনুকরণে আধুনিক যুগের নব্য ক্রুসেডাররা তাদের লিবারেল ধর্ম চাপিয়ে দেয়ার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মুসলিমদের ওপর আক্রমণ করছে। গণতন্ত্র, নারী অধিকার, স্বাধীনতা আর সেকুলারিজম প্রতিষ্ঠার জন্য তারা বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মুসলিমকে হত্যা করছে।

    বাস্তবতা হল লিবারেলিজম এমন এক দর্শন যা মানুষকে ইলাহ বানায়। এই দর্শন প্রত্যেক মানুষকে তার নিজের ইলাহ বানায়। নিজের খেয়াল, নিজের বুঝ, নিজের বিবেকই সব। বাকি আর কিছুই ধর্তব্য নয়। এভাবে লিবারেলিজম মূলত মানুষের প্রবৃত্তি ও নফসের ওপর উলুহিয়াত আরোপ করে।

    তাই ওহির আলোকে দেখলে আমরা লিবারেলিজমের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোকে এভাবে লিখতে পারি –

    ১। মহান আল্লাহর আনুগত্য প্রত্যাখ্যান করে নিজের খেয়ালখুশিকে ইলাহ হিসাবে গ্রহণ করা।

    ২। সমাজ ও রাষ্ট্রে আল্লাহর আনুগত্য ও বিধান প্রত্যাখ্যান করা। লিবারেল মূলনীতি অনুযায়ী অধিকাংশের খেয়ালখুশিকে বিধানদাতা হিসাবে গ্রহণ করা।

    ৩। স্বাধীন হওয়ার নামে আকিদা, আমল এবং মূল্যবোধের ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্ধারিত পথকে প্রত্যাখ্যান করা।

    ৪। ন্যায়-অন্যায় এবং ভালো-মন্দের কোন ধ্রুব মাপকাঠি নেই। যে যুগের মানুষের কাছে যা ভালো লাগবে তাই তারা গ্রহণ করবে।
    চলবে ইন শা আল্লাহ...

  • #2
    এখান থেকে বুঝা গেল লিবারেলিজম হল আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে তাদের তৈরি কিছু আইন কানুন এবং এই আইন কানুন গুলো তাদের ইচ্ছে মত হওয়ায় তার নাম দেওয়া হয়েছে লেবারেলিজম বা উদারনৈতিকতা অর্থাৎ অন্যায়ের প্রতি ছাড় দেওয়া এবং ভালো কাজে বাধা দেওয়ার নাম লিবারেলিজম।
    পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

    Comment


    • #3
      Originally posted by mahmud123 View Post
      এখান থেকে বুঝা গেল লিবারেলিজম হল আল্লাহর বিধানের পরিবর্তে তাদের তৈরি কিছু আইন কানুন এবং এই আইন কানুন গুলো তাদের ইচ্ছে মত হওয়ায় তার নাম দেওয়া হয়েছে লেবারেলিজম বা উদারনৈতিকতা অর্থাৎ অন্যায়ের প্রতি ছাড় দেওয়া এবং ভালো কাজে বাধা দেওয়ার নাম লিবারেলিজম।

      জী ভাই
      এর পরবর্তী পর্ব হচ্ছে
      লিবারেল
      আল্লাহ দ্রোহী

      Comment

      Working...
      X