বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ।
[তৃতীয় ও শেষ পর্ব]
দারুল ইসলাম ও দারুল হারব : প্রামাণ্য পর্যালোচনা[তৃতীয় ও শেষ পর্ব]
_______________________________________
পঞ্চম অধ্যায় : ‘দারুল ইসলাম’ ও ‘দারুল হারব’-সংক্রান্ত বিভিন্ন বিধান
‘দারুল হারব’-এ বসবাস ও ভ্রমণ :
'দারুল হারব'-এ যদি পরিপূর্ণভাবে ইসলামি বিধিবিধান পালনের সুযোগ না থাকে, ইসলামের সব শিআর (নিদর্শন বা প্রতীক) প্রকাশের অনুমোদন না থাকে, তাহলে স্বেচ্ছায় সে দেশে মুসলমানদের জন্য বসবাস করা হারাম। সামর্থ্য থাকার শর্তে এক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই এমন জায়গায় হিজরত করা আবশ্যক, যেখানে ইসলামের সকল বিধান প্রকাশ্যে মেনে চলা সম্ভব। আর যদি পুরোপুরিভাবে ইসলাম পালন ও শিআর প্রকাশের সুযোগ থাকে, তাহলে দেশের কুফরি ব্যবস্থার প্রতি অন্তরে পরিপূর্ণ ঘৃণা ও বিদ্বেষ রেখে বসবাস করা জায়িজ হলেও তা নিরাপদ ও উত্তম নয়। তবে শরয়ি কোনো কল্যাণের উদ্দেশ্য থাকলে সেক্ষেত্রে থাকাটাই বরং উত্তম। যেমন : অমুসলিমদের দাওয়াত দেওয়া, দ্বীন শিক্ষা দেওয়া, ইসলামি রাষ্ট্রের জন্য প্রচেষ্টা ও তথ্য সংগ্রহ করা ইত্যাদি।
আর ওই সব দেশে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে নীতি হলো, প্রয়োজন ছাড়া বিনোদন ইত্যাদির উদ্দেশ্যে অমুসলিমদের দেশে যাওয়াও নাজায়িজ। কেননা, এতে কোনো প্রয়োজন ছাড়াই নিজের দ্বীন ও চরিত্রকে আশঙ্কার মুখে ফেলা হয়। তবে দ্বীনি বা পার্থিব বৈধ প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে যাওয়া যাবে। যেমন : চিকিৎসা, ব্যবসা, বৈধ শিক্ষা, দ্বীনের দাওয়াত ইত্যাদি। তবে এর বৈধতার জন্য তিনটি শর্ত আছে। এক. তার দ্বীনের ব্যাপারে এতটুকু জ্ঞান থাকতে হবে, যদ্দরুন সে দ্বীনের ব্যাপারে সংশয়ে পড়া থেকে বাঁচতে পারে। দুই. তার এতটুকু চারিত্রিক দৃঢ়তা থাকতে হবে, যার ভিত্তিতে সে সকল অশ্লীলতা ও নোংরামি থেকে নিবৃত্ত থাকতে পারে। তিন. সে দেশে পূর্ণভাবে দ্বীন পালন করার স্বাধীনতা থাকতে হবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺗَﻮَﻓَّﺎﻫُﻢُ ﺍﻟْﻤَﻠَﺎﺋِﻜَﺔُ ﻇَﺎﻟِﻤِﻲ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻬِﻢْ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻓِﻴﻢَ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﻛُﻨَّﺎ ﻣُﺴْﺘَﻀْﻌَﻔِﻴﻦَ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻗَﺎﻟُﻮﺍ ﺃَﻟَﻢْ ﺗَﻜُﻦْ ﺃَﺭْﺽُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻭَﺍﺳِﻌَﺔً ﻓَﺘُﻬَﺎﺟِﺮُﻭﺍ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻣَﺄْﻭَﺍﻫُﻢْ ﺟَﻬَﻨَّﻢُ ﻭَﺳَﺎﺀَﺕْ ﻣَﺼِﻴﺮًﺍ . ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟْﻤُﺴْﺘَﻀْﻌَﻒِﻳﻦَ ﻣِﻦَ ﺍﻟﺮِّﺟَﺎﻝِ ﻭَﺍﻟﻨِّﺴَﺎﺀِ ﻭَﺍﻟْﻮِﻟْﺪَﺍﻥِ ﻟَﺎ ﻳَﺴْﺘَﻄِﻴﻌُﻮﻥَ ﺣِﻴﻠَﺔً ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻬْﺘَﺪُﻭﻥَ ﺳَﺒِﻴﻠًﺎ . ﻓَﺄُﻭﻟَﺌِﻚَ ﻋَﺴَﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻥْ ﻳَﻌْﻔُﻮَ ﻋَﻨْﻬُﻢْ ﻭَﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻔُﻮًّﺍ ﻏَﻔُﻮﺭًﺍ .
‘যারা নিজেদের ওপর জুলুম করে, তাদের প্রাণ হরণের সময় ফেরেশতারা জিজ্ঞাসা করে, তোমরা কী অবস্থায় ছিলে? তারা বলে, আমরা দুনিয়াতে অসহায় ছিলাম। তাঁরা প্রত্যুত্তরে বলেন, আল্লাহর জমিন কি প্রশস্ত ছিল না, যেখানে তোমরা হিজরত করতে? এদেরই আবাসস্থল জাহান্নাম। আর তা কত নিকৃষ্ট আবাস! তবে যেসব অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশু কোনো উপায় অবলম্বন করতে পারে না এবং কোনো পথও খুঁজে পায় না, আল্লাহ অচিরেই তাদের ক্ষমা করবেন। আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।’ (সুরা আন-নিসা : ৯৭-৯৯)
জারির বিন আব্দুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺮِﻱﺀٌ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﻳُﻘِﻴﻢُ ﺑَﻴْﻦَ ﺃَﻇْﻬُﺮِ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ
‘আমি প্রত্যেক ওই মুসলিম থেকে দায়মুক্ত, যে মুশরিকদের মাঝে বসবাস করে।’ (সুনানু আবি দাউদ : ৩/৪৫, হা. নং ২৬৪৫, প্রকাশনী : আল-মাকতাবাতুল আসরিয়্যা, বৈরুত)
ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
ﺇِﺫَﺍ ﺃَﻧْﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﻋَﺬَﺍﺑًﺎ، ﺃَﺻَﺎﺏَ ﺍﻟﻌَﺬَﺍﺏُ ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻴﻬِﻢْ، ﺛُﻢَّ ﺑُﻌِﺜُﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟِﻬِﻢْ
‘আল্লাহ তাআলা যখন কোনো জাতির ওপর আজাব অবতীর্ণ করেন, তখন তাদের মধ্যে যারা থাকে, সবাইকে সেই আজাব গ্রাস করে। অতঃপর তাদের (ভালোমন্দ) আমলের ভিত্তিতে তাদের পুনরুত্থান করা হবে।’ (সহিহুল বুখারি : ৯/৫৬, হা. নং ৭১০৮, প্রকাশনী : দারু তাওকিন নাজাত, বৈরুত)
ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন :
ﻭَﻳُﺴْﺘَﻔَﺎﺩُ ﻣِﻦْ ﻫَﺬَﺍ ﻣَﺸْﺮُﻭﻋِﻴَّﺔُ ﺍﻟْﻬَﺮَﺏِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻜُﻔَّﺎﺭِ ﻭَﻣِﻦَ ﺍﻟﻈَّﻠَﻤَﺔِ ﻟِﺄَﻥَّ ﺍﻟْﺈِﻗَﺎﻣَﺔَ ﻣَﻌَﻬُﻢْ ﻣِﻦْ ﺇِﻟْﻘَﺎﺀِ ﺍﻟﻨَّﻔْﺲِ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﺘَّﻬْﻠُﻜَﺔِ ﻫَﺬَﺍ ﺇِﺫَﺍ ﻟَﻢْ ﻳُﻌِﻨْﻬُﻢْ ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺮْﺽَ ﺑِﺄَﻓْﻌَﺎﻟِﻬِﻢْ ﻓَﺈِﻥْ ﺃَﻋَﺎﻥَ ﺃَﻭْ ﺭَﺿِﻲَ ﻓَﻬُﻮَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻭَﻳُﺆَﻳِّﺪُﻩُ ﺃَﻣْﺮُﻩُ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺑِﺎﻟْﺈِﺳْﺮَﺍﻉِ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺨُﺮُﻭﺝِ ﻣِﻦْ ﺩِﻳَﺎﺭِ ﺛَﻤُﻮﺩَ
‘এ হাদিস থেকে কাফির ও জালিমদের থেকে পালানোর শরয়ি অনুমোদন বুঝা যায়। কারণ, তাদের সাথে বসবাস করা নিজেকে ধ্বংসের মাঝে নিক্ষেপ করার নামান্তর। এ বিধান তখন প্রযোজ্য হবে, যখন সে তাদের সাহায্য করবে না এবং তাদের কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট হবে না। কিন্তু যদি সে তাদের সাহায্য করে অথবা তাদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, তবে সে তাদেরই একজন (অর্থাৎ কাফিরদের অন্তর্গত) বলে গণ্য হবে। সামুদের জনপদ থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর তাড়াতাড়ি বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান এ কথারই সমর্থন করে।’ (ফাতহুল বারি : ১৩/৬১, প্রকাশনী : দারুল মারিফা, বৈরুত)
ইমাম আবু মুহাম্মাদ বিন হাজাম রহ. এ ব্যাপারে বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। তিনি বলেন :
ﻭَﻗَﺪْ ﻋَﻠِﻤْﻨَﺎ ﺃَﻥَّ ﻣَﻦْ ﺧَﺮَﺝَ ﻋَﻦْ ﺩَﺍﺭِ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﺇﻟَﻰ ﺩَﺍﺭِ ﺍﻟْﺤَﺮْﺏِ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﺑَﻖَ ﻋَﻦْ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ، ﻭَﻋَﻦْ ﺇﻣَﺎﻡِ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻭَﺟَﻤَﺎﻋَﺘِﻬِﻢْ، ﻭَﻳُﺒَﻴِّﻦُ ﻫَﺬَﺍ ﺣَﺪِﻳﺜُﻪُ - ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - « ﺃَﻧَّﻪُ ﺑَﺮِﻱﺀٌ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﻳُﻘِﻴﻢُ ﺑَﻴْﻦَ ﺃَﻇْﻬُﺮِ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ » ﻭَﻫُﻮَ - ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ - ﻟَﺎ ﻳَﺒْﺮَﺃُ ﺇﻟَّﺎ ﻣِﻦْ ﻛَﺎﻓِﺮٍ، ﻗَﺎﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ } ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺆْﻣِﻨَﺎﺕُ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﺃَﻭْﻟِﻴَﺎﺀُ ﺑَﻌْﺾٍ { [ ﺍﻟﺘﻮﺑﺔ : 71 ] . ﻓَﺼَﺢَّ ﺑِﻬَﺬَﺍ ﺃَﻥَّ ﻣَﻦْ ﻟَﺤِﻖَ ﺑِﺪَﺍﺭِ ﺍﻟْﻜُﻔْﺮِ ﻭَﺍﻟْﺤَﺮْﺏِ ﻣُﺨْﺘَﺎﺭًﺍ ﻣُﺤَﺎﺭِﺑًﺎ ﻟِﻤَﻦْ ﻳَﻠِﻴﻪِ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ، ﻓَﻬُﻮَ ﺑِﻬَﺬَﺍ ﺍﻟْﻔِﻌْﻞِ ﻣُﺮْﺗَﺪٌّ ﻟَﻪُ ﺃَﺣْﻜَﺎﻡُ ﺍﻟْﻤُﺮْﺗَﺪِّ ﻛُﻠُّﻬَﺎ : ﻣِﻦْ ﻭُﺟُﻮﺏِ ﺍﻟْﻘَﺘْﻞِ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻣَﺘَﻰ ﻗُﺪِﺭَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻭَﻣِﻦْ ﺇﺑَﺎﺣَﺔِ ﻣَﺎﻟِﻪِ، ﻭَﺍﻧْﻔِﺴَﺎﺥِ ﻧِﻜَﺎﺣِﻪِ، ﻭَﻏَﻴْﺮِ ﺫَﻟِﻚَ، ﻟِﺄَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - ﻟَﻢْ ﻳَﺒْﺮَﺃْ ﻣِﻦْ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ . ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﻣَﻦْ ﻓَﺮَّ ﺇﻟَﻰ ﺃَﺭْﺽِ ﺍﻟْﺤَﺮْﺏِ ﻟِﻈُﻠْﻢٍ ﺧَﺎﻓَﻪُ، ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﺤَﺎﺭِﺏْ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ، ﻭَﻟَﺎ ﺃَﻋَﺎﻧَﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ، ﻭَﻟَﻢْ ﻳَﺠِﺪْ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻣَﻦْ ﻳُﺠِﻴﺮُﻩُ، ﻓَﻬَﺬَﺍ ﻟَﺎ ﺷَﻲْﺀَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻟِﺄَﻧَّﻪُ ﻣُﻀْﻄَﺮٌّ ﻣُﻜْﺮَﻩٌ . ﻭَﻗَﺪْ ﺫَﻛَﺮْﻧَﺎ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﺰُّﻫْﺮِﻱَّ ﻣُﺤَﻤَّﺪَ ﺑْﻦَ ﻣُﺴْﻠِﻢ ﺑْﻦِ ﺷَﻬَﺎﺏٍ : ﻛَﺎﻥَ ﻋَﺎﺯِﻣًﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻧَّﻪُ ﺇﻥْ ﻣَﺎﺕَ ﻫِﺸَﺎﻡُ ﺑْﻦُ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟْﻤَﻠِﻚِ ﻟَﺤِﻖَ ﺑِﺄَﺭْﺽِ ﺍﻟﺮُّﻭﻡِ، ﻟِﺄَﻥَّ ﺍﻟْﻮَﻟِﻴﺪَ ﺑْﻦَ ﻳَﺰِﻳﺪَ ﻛَﺎﻥَ ﻧَﺬَﺭَ ﺩَﻣَﻪُ ﺇﻥْ ﻗَﺪَﺭَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻭَﻫُﻮَ ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟْﻮَﺍﻟِﻲ ﺑَﻌْﺪَ ﻫِﺸَﺎﻡٍ ﻓَﻤَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻫَﻜَﺬَﺍ ﻓَﻬُﻮَ ﻣَﻌْﺬُﻭﺭٌ . ﻭَﻛَﺬَﻟِﻚَ : ﻣَﻦْ ﺳَﻜَﻦَ ﺑِﺄَﺭْﺽِ ﺍﻟْﻬِﻨْﺪِ، ﻭَﺍﻟﺴِّﻨْﺪِ، ﻭَﺍﻟﺼِّﻴﻦِ، ﻭَﺍﻟﺘُّﺮْﻙِ، ﻭَﺍﻟﺴُّﻮﺩَﺍﻥِ ﻭَﺍﻟﺮُّﻭﻡِ، ﻣِﻦْ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ، ﻓَﺈِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﺎ ﻳَﻘْﺪِﺭُ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟْﺨُﺮُﻭﺝِ ﻣِﻦْ ﻫُﻨَﺎﻟِﻚَ ﻟِﺜِﻘَﻞِ ﻇَﻬْﺮٍ، ﺃَﻭْ ﻟِﻘِﻠَّﺔِ ﻣَﺎﻝٍ، ﺃَﻭْ ﻟِﻀَﻌْﻒِ ﺟِﺴْﻢٍ، ﺃَﻭْ ﻟِﺎﻣْﺘِﻨَﺎﻉِ ﻃَﺮِﻳﻖٍ، ﻓَﻬُﻮَ ﻣَﻌْﺬُﻭﺭٌ . ﻓَﺈِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﻫُﻨَﺎﻙَ ﻣُﺤَﺎﺭِﺑًﺎ ﻟِﻠْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻣُﻌِﻴﻨًﺎ ﻟِﻠْﻜُﻔَّﺎﺭِ ﺑِﺨِﺪْﻣَﺔٍ، ﺃَﻭْ ﻛِﺘَﺎﺑَﺔٍ : ﻓَﻬُﻮَ ﻛَﺎﻓِﺮٌ - ﻭَﺇِﻥْ ﻛَﺎﻥَ ﺇﻧَّﻤَﺎ ﻳُﻘِﻴﻢُ ﻫُﻨَﺎﻟِﻚَ ﻟِﺪُﻧْﻴَﺎ ﻳُﺼِﻴﺒُﻬَﺎ، ﻭَﻫُﻮَ ﻛَﺎﻟﺬِّﻣِّﻲِّ ﻟَﻬُﻢْ، ﻭَﻫُﻮَ ﻗَﺎﺩِﺭٌ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﻠِّﺤَﺎﻕِ ﺑِﺠَﻤْﻬَﺮَﺓِ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻭَﺃَﺭْﺿِﻬِﻢْ، ﻓَﻤَﺎ ﻳَﺒْﻌُﺪُ ﻋَﻦْ ﺍﻟْﻜُﻔْﺮِ، ﻭَﻣَﺎ ﻧَﺮَﻯ ﻟَﻪُ ﻋُﺬْﺭًﺍ - ﻭَﻧَﺴْﺄَﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺍﻟْﻌَﺎﻓِﻴَﺔَ . ﻭَﻟَﻴْﺲَ ﻛَﺬَﻟِﻚَ : ﻣَﻦْ ﺳَﻜَﻦَ ﻓِﻲ ﻃَﺎﻋَﺔِ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﻜُﻔْﺮِ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﻐَﺎﻟِﻴَﺔِ؛ ﻭَﻣَﻦْ ﺟَﺮَﻯ ﻣَﺠْﺮَﺍﻫُﻢْ، ﻟِﺄَﻥَّ ﺃَﺭْﺽَ ﻣِﺼْﺮَ ﻭَﺍﻟْﻘَﻴْﺮَﻭَﺍﻥ،ِ ﻭَﻏَﻴْﺮَﻫُﻤَﺎ، ﻓَﺎﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡُ ﻫُﻮَ ﺍﻟﻈَّﺎﻫِﺮُ، ﻭَﻭُﻟَﺎﺗُﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺫَﻟِﻚَ ﻟَﺎ ﻳُﺠَﺎﻫِﺮُﻭﻥَ ﺑِﺎﻟْﺒَﺮَﺍﺀَﺓِ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ، ﺑَﻞْ ﺇﻟَﻰ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﻳَﻨْﺘَﻤُﻮﻥَ، ﻭَﺇِﻥْ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻓِﻲ ﺣَﻘِﻴﻘَﺔِ ﺃَﻣْﺮِﻫِﻢْ ﻛُﻔَّﺎﺭًﺍ . ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﻣَﻦْ ﺳَﻜَﻦَ ﻓِﻲ ﺃَﺭْﺽِ ﺍﻟْﻘَﺮَﺍﻣِﻄَﺔِ ﻣُﺨْﺘَﺎﺭًﺍ ﻓَﻜَﺎﻓِﺮٌ ﺑِﻠَﺎ ﺷَﻚٍّ، ﻟِﺄَﻧَّﻬُﻢْ ﻣُﻌْﻠِﻨُﻮﻥَ ﺑِﺎﻟْﻜُﻔْﺮِ ﻭَﺗَﺮْﻙِ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ - ﻭَﻧَﻌُﻮﺫُ ﺑِﺎَﻟﻠَّﻪِ ﻣِﻦْ ﺫَﻟِﻚَ . ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﻣَﻦْ ﺳَﻜَﻦَ ﻓِﻲ ﺑَﻠَﺪٍ ﺗَﻈْﻬَﺮُ ﻓِﻴﻪِ ﺑَﻌْﺾُ ﺍﻟْﺄَﻫْﻮَﺍﺀِ ﺍﻟْﻤُﺨْﺮِﺟَﺔِ ﺇﻟَﻰ ﺍﻟْﻜُﻔْﺮِ، ﻓَﻬُﻮَ ﻟَﻴْﺲَ ﺑِﻜَﺎﻓِﺮٍ، ﻟِﺄَﻥَّ ﺍﺳْﻢَ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﻫُﻮَ ﺍﻟﻈَّﺎﻫِﺮُ ﻫُﻨَﺎﻟِﻚَ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺣَﺎﻝٍ، ﻣِﻦْ ﺍﻟﺘَّﻮْﺣِﻴﺪِ، ﻭَﺍﻟْﺈِﻗْﺮَﺍﺭِ ﺑِﺮِﺳَﺎﻟَﺔِ ﻣُﺤَﻤَّﺪٍ - ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - ﻭَﺍﻟْﺒَﺮَﺍﺀَﺓِ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺩِﻳﻦٍ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﻭَﺇِﻗَﺎﻣَﺔِ ﺍﻟﺼَّﻠَﺎﺓِ، ﻭَﺻِﻴَﺎﻡِ ﺭَﻣَﻀَﺎﻥَ، ﻭَﺳَﺎﺋِﺮِ ﺍﻟﺸَّﺮَﺍﺋِﻊِ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﻫِﻲَ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡُ ﻭَﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥُ - ﻭَﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ . ﻭَﻗَﻮْﻝُ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ - ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ - « ﺃَﻧَﺎ ﺑَﺮِﻱﺀٌ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﻣُﺴْﻠِﻢٍ ﺃَﻗَﺎﻡَ ﺑَﻴْﻦَ ﺃَﻇْﻬُﺮِ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴﻦَ » ﻳُﺒَﻴِّﻦُ ﻣَﺎ ﻗُﻠْﻨَﺎﻩُ، ﻭَﺃَﻧَّﻪُ - ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ - ﺇﻧَّﻤَﺎ ﻋَﻨَﻰ ﺑِﺬَﻟِﻚَ ﺩَﺍﺭَ ﺍﻟْﺤَﺮْﺏِ، ﻭَﺇِﻟَّﺎ ﻓَﻘَﺪْ ﺍﺳْﺘَﻌْﻤَﻞَ - ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡُ - ﻋُﻤَّﺎﻟَﻪُ ﻋَﻠَﻰ ﺧَﻴْﺒَﺮَ، ﻭَﻫُﻢْ ﻛُﻠُّﻬُﻢْ ﻳَﻬُﻮﺩُ . ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﻫْﻞُ ﺍﻟﺬِّﻣَّﺔِ ﻓِﻲ ﻣَﺪَﺍﺋِﻨِﻬِﻢْ ﻟَﺎ ﻳُﻤَﺎﺯِﺟُﻬُﻢْ ﻏَﻴْﺮُﻫُﻢْ ﻓَﻠَﺎ ﻳُﺴَﻤَّﻰ ﺍﻟﺴَّﺎﻛِﻦُ ﻓِﻴﻬِﻢْ - ﻟِﺈِﻣَﺎﺭَﺓٍ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ، ﺃَﻭْ ﻟِﺘِﺠَﺎﺭَﺓٍ - ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ : ﻛَﺎﻓِﺮًﺍ، ﻭَﻟَﺎ ﻣُﺴِﻴﺌًﺎ، ﺑَﻞْ ﻫُﻮَ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ ﺣَﺴَﻦٌ، ﻭَﺩَﺍﺭُﻫُﻢْ ﺩَﺍﺭُ ﺇﺳْﻠَﺎﻡٍ، ﻟَﺎ ﺩَﺍﺭُ ﺷِﺮْﻙٍ، ﻟِﺄَﻥَّ ﺍﻟﺪَّﺍﺭَ ﺇﻧَّﻤَﺎ ﺗُﻨْﺴَﺐُ ﻟِﻠْﻐَﺎﻟِﺐِ ﻋَﻠَﻴْﻬَﺎ، ﻭَﺍﻟْﺤَﺎﻛِﻢُ ﻓِﻴﻬَﺎ، ﻭَﺍﻟْﻤَﺎﻟِﻚُ ﻟَﻬَﺎ . ﻭَﻟَﻮْ ﺃَﻥَّ ﻛَﺎﻓِﺮًﺍ ﻣُﺠَﺎﻫِﺮًﺍ ﻏَﻠَﺐَ ﻋَﻠَﻰ ﺩَﺍﺭٍ ﻣِﻦْ ﺩُﻭﺭِ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ، ﻭَﺃَﻗَﺮَّ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﺑِﻬَﺎ ﻋَﻠَﻰ ﺣَﺎﻟِﻬِﻢْ، ﺇﻟَّﺎ ﺃَﻧَّﻪُ ﻫُﻮَ ﺍﻟْﻤَﺎﻟِﻚُ ﻟَﻬَﺎ، ﺍﻟْﻤُﻨْﻔَﺮِﺩُ ﺑِﻨَﻔْﺴِﻪِ ﻓِﻲ ﺿَﺒْﻄِﻬَﺎ، ﻭَﻫُﻮَ ﻣُﻌْﻠِﻦٌ ﺑِﺪِﻳﻦٍ ﻏَﻴْﺮِ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﻟَﻜَﻔَﺮَ ﺑِﺎﻟْﺒَﻘَﺎﺀِ ﻣَﻌَﻪُ ﻛُﻞُّ ﻣَﻦْ ﻋَﺎﻭَﻧَﻪُ، ﻭَﺃَﻗَﺎﻡَ ﻣَﻌَﻪُ - ﻭَﺇِﻥْ ﺍﺩَّﻋَﻰ ﺃَﻧَّﻪُ ﻣُﺴْﻠِﻢٌ - ﻟِﻤَﺎ ﺫَﻛَﺮْﻧَﺎ .
‘আর আমরা জেনেছি যে, যে ব্যক্তি “দারুল ইসলাম” থেকে বের হয়ে “দারুল কুফর”-এ চলে যাবে, সে আল্লাহ থেকে, খলিফা থেকে ও মুসলমানদের দল থেকে পলায়ন করল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর এ হাদিস “তিনি মুশরিকদের মাঝে বসবাসরত মুসলিমের ব্যাপারে দায়মুক্ত।” বিষয়টিকে স্পষ্ট করে দেয়। আর তিনি কেবল কাফির থেকেই দায়মুক্ত ও সম্পর্কহীন হতে পারেন (কোনো মুসলমান থেকে নয়)। আল্লাহ তাআলা বলেন, “ইমানদার পুরুষরা ও ইমানদার নারীরা একে অপরের সুহৃদ।” [সুরা আত-তাওবা : ৭১] সুতরাং এ থেকে বিশুদ্ধভাবে প্রমাণ হয় যে, যে ব্যক্তি নিকটবর্তী মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে স্বেচ্ছায় “দারুল কুফর”-এ যোদ্ধা হিসেবে চলে যায়, সে তার এই অপরাধের কারণে মুরতাদ হয়ে যায়। তার ওপর মুরতাদের সব হুকুম প্রযোজ্য হবে। যেমন : গ্রেফতার করতে সক্ষম হলে তাকে হত্যা করা, তার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা, বিয়ে ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি। কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো মুসলমান থেকে দায়িত্বমুক্তির ঘোষণা করেননি। (অথচ পূর্বের হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে যে, মুশরিকদের মাঝে বসবাসকারী ব্যক্তি থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দায়মুক্ত ও সম্পর্কহীন। অতএব, প্রমাণ হলো যে, “দারুল হারব”-এ চলে যাওয়া ব্যক্তি পূর্বে মুসলিম থাকলেও ওখানে গিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সম্পর্কহীন হওয়ায় মুরতাদ হয়ে গিয়েছে।) আর যে ব্যক্তি নিজের ওপর জুলুমের আশঙ্কায় কোনো “দারুল হারব”-এ পলায়ন করে, আর সে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধও করে না, তাদের বিপরীতে কাফিরদের সাহায্যও করে না এবং মুসলমানদের মধ্যে এমন কাউকে পায় না, যে তাকে আশ্রয় দেবে, তাহলে এতে তার কোনো অসুবিধা নেই। কেননা, সে অপারগ ও বাধ্য। আমরা পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, ইমাম জুহরি রহ. এ সংকল্প করেছিলেন যে, খলিফা হিশাম বিন আব্দুল মালিক মারা গেলে তিনি রোমে চলে যাবেন। কেননা, অলিদ বিন ইয়াজিদ ক্ষমতা পেলে তাঁকে হত্যা করার মান্নত করেছিল। আর হিশামের পর সেই ছিল (নির্ধারিত) খলিফা। অতএব যার অবস্থা এমন হবে, তাকে মাজুর ও ক্ষমাযোগ্য ধরা হবে। তেমনই যেসব মুসলমান ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, তুরস্ক, সুদান, ইতালি ইত্যাদি রাষ্ট্রে বসবাস করে, সে যদি বার্ধক্য, দারিদ্র্য, অসুস্থতা বা দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা ইত্যাদির কারণে চলে আসতে সক্ষম না হয়, তাকে মাজুর হিসাবে গণ্য করা হবে। সে যদি সেখানে কাফিরদের খিদমত, লেখালেখি ইত্যাদির মাধ্যমে মদদ দিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তাহলে সেও কাফির বলে গণ্য হবে। আর যদি সে “দারুল হারব”-এ দুনিয়া উপার্জনের উদ্দেশ্যে আসে এবং তাদের কাছে জিম্মির মতো হয়ে থাকে; অথচ সে মুসলিম সমাজ বা দেশে চলে আসতে সক্ষম, তাহলে সে কুফর থেকে দূরে নয় এবং আমরা তার কোনো ওজর আছে বলে মনে করি না। আমরা আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা কামনা করছি। তবে কুফরকারী শাসক তথা সীমালঙ্ঘনকারী ও এ জাতীয় শাসকদের আনুগত্যে যারা বসবাস করবে, তারা তাদের (কাফিরদের কুফরি রাষ্ট্রে বসবাসকারীদের) মতো নয়। কেননা, মিশর, কাইরাওয়ান প্রমুখ অঞ্চলে ইসলামই বিজয়ী এবং সবকিছুর পরও এসব দেশের শাসকরা প্রকাশ্যে ইসলাম থেকে বারাআতের (দায়মুক্তির) ঘোষণা দেয়নি; বরং ইসলামের সাথেই সম্পৃক্ত হওয়ার দাবি করে; যদিও তাদের কর্মের বাস্তবতায় তারা কাফির। তবে যারা স্বেচ্ছায় কারামতিদের (শিয়াদের মধ্যে অত্যন্ত উগ্র ও নিকৃষ্ট একটি দলের নাম কারামতি। এদের নেতা আবু তাহির কারামতি সে-ই নরাধম, যে ৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কায় আক্রমণ করে এবং অসংখ্য হাজিদের হত্যা করে হাজরে আসওয়াদ পাথর চুরি করে নিয়ে যায়। প্রায় বাইশ বছর পর তা পুনরায় যথাস্থানে প্রতিস্থাপন করা হয়।) দেশে বসবাস করবে, তারা নিঃসন্দেহে কাফির। কেননা, তারা প্রকাশ্যে কুফর ও ইসলাম পরিত্যাগের ঘোষণা দিয়েছে। আল্লাহর কাছে আমরা এ থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি। আর যে ব্যক্তি এমন দেশে বসবাস করবে, যেখানে কুফরি পর্যায়ের কিছু প্রবৃত্তিপূজা প্রকাশ পায়, তাহলে সে (বসবাসকারী) কাফির হবে না। কেননা, সর্বাবস্থায় সেখানে তাওহিদের অস্তিত্ব, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর রিসালাতের স্বীকৃতি, ইসলাম ভিন্ন অন্য সব ধর্ম থেকে মুক্ত ঘোষণা, সালাত প্রতিষ্ঠা, রমজানের সিয়াম পালন এবং ইসলাম ও শরিয়তের সকল বিষয় থাকার ভিত্তিতে ইসলামই বিজয়ী। আর সকল প্রশংসা সারা জগতের প্রতিপালক আল্লাহরই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর বাণী “আমি প্রত্যেক ওই মুসলিম থেকে দায়মুক্ত, যে মুশরিকদের মাঝে বসবাস করে” আমাদের কথাকে স্পষ্ট করে দেয়। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এদ্বারা এখানে “দারুল হারব” উদ্দেশ্য নিয়েছেন। নইলে তো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খাইবারে তাঁর দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন; অথচ ওখানকার সব অধিবাসীই ইহুদি ছিল। যখন জিম্মিগণ তাদের শহরে থাকবে এবং তাদের সাথে অন্যরা মেলামেশা করবে না, তাহলে মুসলামানদের কর্তৃত্ব ও পারস্পরিক ব্যবসায়িক লেনদেনের কারণে তথায় বসবাসকারী (মুসলিম) ব্যক্তিকে কাফিরও বলা যাবে না, গুনাহগারও বলা যাবে না; বরং সে একজন উত্তম মুসলমান। তাদের বসবাসের স্থানকে “দারুল ইসলাম” বলা হবে, “দারুশ শিরক” নয়। কেননা, কোনো দেশের বিজয়ী, শাসক ও মালিকের ভিত্তিতেই (“দারুল ইসলাম” বা “দারুল হারব” বলে) দেশের নাম নির্ধারিত হয়। কোনো প্রকাশ্য কাফির যদি “দারুল ইসলাম”-এর কোনো এলাকা দখল করে নেয় এবং মুসলমানদেরকে তাদের আপন অবস্থায় বহাল রাখে, সে উক্ত এলাকার একচ্ছত্র অধিপতি বনে বসে এবং নিজেকে অমুসলিম হিসেবে ঘোষণা করে, তাহলে তাতে অবস্থানকারী যে-ই তাকে সাহায্য করবে এবং তার সাথে থাকবে, সে কাফির হিসেবে গণ্য হবে; যদিও সে (অবস্থানকারী নাগরিক) নিজেকে মুসলমান বলে দাবি করুক।’ (আল-মুহাল্লা, ইবনু হাজাম : ১২/১২৫-১২৬, প্রকাশনী : দারুল ফিকর, বৈরুত)
জিম্মি, মুআহিদ ও মুসতা’মিন⸻গুরুত
্বপূর্ণ তিনটি পরিভাষা :
বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে আমাদের তিনটি শব্দের অর্থ বুঝে রাখা উচিত। এক : জিম্মি। জিম্মি বলা হয় এমন কাফিরকে, যে ‘দারুল ইসলাম’-এ জিজিয়া দিয়ে মুসলমানদের মতোই নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বসবাস করে। দুই : মুআহিদ বা চুক্তিবদ্ধ। চুক্তিবদ্ধ বলা হয় এমন কাফিরকে, যে তার নিজ দেশ ‘দারুল হারব’-এ বসবাস করে, কিন্তু তার দেশের সাথে খলিফার চুক্তি হয়েছে যে, তারাও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না, আর মুসলিমরাও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে না। তিন : মুসতা’মিন বা নিরাপত্তাপ্রার্থী। মুসতা’মিন বলা হয় এমন কাফিরকে, যার দেশের সাথে মুসলমানদের কোনো চুক্তি নেই। কিন্তু সে খলিফা বা তার কোনো প্রতিনিধির কাছ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিরাপত্তা নিয়ে ‘দারুল ইসলাম’-এ প্রবেশ করেছে; ব্যবসা করা কিংবা দ্বীন শেখা বা অন্য কোনো উদ্দেশ্যে।
মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা-তে বলা হয়েছে :
ﺃَﻫْﻞ ﺍﻟﺬِّﻣَّﺔِ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻜُﻔَّﺎﺭُ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃﻗِﺮُّﻭﺍ ﻓِﻲ ﺩَﺍﺭِ ﺍﻹْﺳْﻼَﻡِ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻔْﺮِﻫِﻢْ ﺑِﺎﻟْﺘِﺰَﺍﻡِ ﺍﻟْﺠِﺰْﻳَﺔِ ﻭَﻧُﻔُﻮﺫِ ﺃَﺣْﻜَﺎﻡِ ﺍﻹْﺳْﻼَﻡِ ﻓِﻴﻬِﻢْ ... ﺃَﻫْﻞ ﺍﻟْﻌَﻬْﺪِ : ﻫُﻢُ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺻَﺎﻟَﺤَﻬُﻢْ ﺇِﻣَﺎﻡُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻋَﻠَﻰ ﺇِﻧْﻬَﺎﺀِ ﺍﻟْﺤَﺮْﺏِ ﻣُﺪَّﺓً ﻣَﻌْﻠُﻮﻣَﺔً ﻟِﻤَﺼْﻠَﺤَﺔٍ ﻳَﺮَﺍﻫَﺎ، ﻭَﺍﻟْﻤُﻌَﺎﻫَﺪُ : ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻌَﻬْﺪِ : ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟﺼُّﻠْﺢُ ﺍﻟْﻤُﺆَﻗَّﺖُ، ﻭَﻳُﺴَﻤَّﻰ ﺍﻟْﻬُﺪْﻧَﺔَ ﻭَﺍﻟْﻤُﻬَﺎﺩَﻧَﺔَ ﻭَﺍﻟْﻤُﻌَﺎﻫَﺪَﺓَ ﻭَﺍﻟْﻤُﺴَﺎﻟَﻤَﺔَ ﻭَﺍﻟْﻤُﻮَﺍﺩَﻋَﺔ.َ .. ﺍﻟْﻤُﺴْﺘَﺄْﻣَﻦُ ﻓِﻲ ﺍﻷْﺻْﻞ : ﺍﻟﻄَّﺎﻟِﺐُ ﻟِﻸْﻣَﺎﻥِ، ﻭَﻫُﻮَ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮُ ﻳَﺪْﺧُﻞ ﺩَﺍﺭَ ﺍﻹْﺳْﻼَﻡِ ﺑِﺄَﻣَﺎﻥٍ، ﺃَﻭِ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻢُ ﺇِﺫَﺍ ﺩَﺧَﻞ ﺩَﺍﺭَ ﺍﻟْﻜُﻔَّﺎﺭِ ﺑِﺄَﻣَﺎﻥٍ .
‘জিম্মি বলা হয় ওই সব কাফিরকে, যাদেরকে জিজিয়া দেওয়া ও তাদের মাঝে ইসলামি বিধিবিধান প্রয়োগ করার শর্তে কাফির অবস্থায় “দারুল ইসলাম”-এ বসবাস করতে দেওয়া হয়। ...মুআহিদ বা চুক্তিবদ্ধ বলা হয় ওই সব কাফিরকে, যাদের সাথে মুসলমানদের খলিফা কোনো কল্যাণকে সামনে রেখে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির চুক্তি করেছে। “মুআহিদ” শব্দটি “আহদ” শব্দ থেকে নির্গত। এর অর্থ সাময়িক চুক্তি। এটাকে হুদনা, মুহাদানা, মুআহাদা, মুসালামা ও মুওয়াদাআও বলা হয়। ...মুসতা’মিন প্রকৃত অর্থে নিরাপত্তাপ্রার্থী। এটা হলো ওই কাফির, যে নিরাপত্তা নিয়ে দারুল ইসলামে প্রবেশ করেছে কিংবা মুসলিম যখন নিরাপত্তা নিয়ে দারুল হারবে প্রবেশ করবে।’ (আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা : ৭/১০৪-১০৫, প্রকাশনী : অজারাতুল আওকাফ, কুয়েত)
এ তিন ধরনের কাফিরই মুসলিমদের হাতে নিরাপদ। চুক্তি ও সবকিছু ঠিক থাকা পর্যন্ত তাদেরকে হত্যা করা যাবে না, তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করা যাবে না এবং তাদের ইজ্জতের ওপর কোনোরূপ আঘাত হানা যাবে না। এ তিন প্রকারের বাইরে যত কাফির আছে, সব অনিরাপদ। তাদের দুনিয়াতেও কোনো নিরাপত্তা নেই, আর আখিরাতে তো নেই-ই। দুনিয়া ও আখিরাতে উভয় জগতে তারা লাঞ্ছিত।
বুঝা গেল, পুরো পৃথিবীতে কাফিরদের মধ্য হতে কেবল তিন শ্রেণির লোকই মুসলমানদের হাতে নিরাপদ। এক : জিম্মি। দুই : সন্ধিচুক্তিতে আবদ্ধ। তিন : নিরাপত্তাপ্রার্থী। পৃথিবীতে এ তিনটি শ্রেণি ছাড়া আর কোনো কাফিরই মুসলমানদের হাতে নিরাপদ নয়। তবে এ মাসআলার ভিত্তিতে যেখানে-সেখানে মারামারি বা যুদ্ধ শুরু করে দেওয়াও কিন্তু জায়িজ হবে না; যেমনটি অনেক বোকা লোক ভেবে থাকে। বরং তাদের সাথে যুদ্ধ করা, বন্দী করা ও সম্পদ লুণ্ঠন করা⸻এগুলো আলাদা মাসআলা, যার জন্য বিস্তারিত বিধান ও নীতিমালা রয়েছে। দুটোকে এক মনে করে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। আমাদের আলোচনা কেবল পৃথিবীতে কোন কোন কাফির নিরাপদ, তাদের লিস্ট দেওয়া। এর বাইরে যারা অনিরাপদ কাফির, তাদের জন্য ভিন্নভাবে বিধান জেনে সে অনুযায়ী আচরণ করতে হবে। মনে চাইলেই যেখানে-সেখানে ইচ্ছেমতো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যাবে না।
বর্তমান বিশ্বে হারবি ও অ-হারবি কাফিরদের অস্তিত্ব :
কোনো সন্দেহ নেই যে, কাফিরদের জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে যে ছাড় ও শিথিলতা রয়েছে, তবে তা সব কাফিরের জন্য প্রযোজ্য নয়। কুরআন-হাদিসে কাফিরদের সাথে যত নম্রতার কথা পাওয়া যায় কিংবা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবিদের জীবনীতে যে উদারতা, নমনীয়তা ও আদর্শের দেখা মেলে, তার প্রায় সবই অ-হারবি তথা জিম্মি বা চুক্তিবদ্ধ বা নিরাপত্তাপ্রার্থী কাফিরদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। আর বলার অবকাশ রাখে না যে, হারবি ও অ-হারবি উভয় শ্রেণির কাফিরদের বিধান এক নয়। পার্থিব বিষয়াদিতে উভয়ের বিধানের ক্ষেত্রে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো, বর্তমান সময়ের কাফিররা হারবি নাকি অ-হারবি? বর্তমান সময়ে জাতিসংঘ বা অন্যান্য কুফফার গোষ্ঠীর সাথে কৃত চুক্তি কি শরয়ি চুক্তি বলে বিবেচিত হবে?
প্রথমত, আমাদের জানা থাকা দরকার যে, হারবি কাদেরকে বলা হয়। অনেকের ধারণা, হারবি তাকেই বলে, যে মুসলমানদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত। ‘হারব’ শব্দের একটি অর্থ হলো যুদ্ধ। এ থেকেই মূলত অনেকের এ সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু এর যে আরও অর্থ আছে এবং সে অর্থ অনুসারেই হারবিকে হারবি বলা হয়, তা অনেকেরই জানা নেই। ‘হারব’ শব্দের অর্থ যেমন ‘যুদ্ধ’, তেমনই এর আরেকটি অর্থ হলো, ‘দূরত্ব ও বিদ্বেষ’। এজন্য ফুকাহায়ে কিরাম কেবল যুদ্ধরত কাফিরকেই হারবি বলেন না; বরং আরও ব্যাপক অর্থে তাঁরা ‘হারবি’ শব্দটাকে ব্যবহার করে থাকেন।
ইমাম আবুল ফজল বা’লি রহ. বলেন :
" ﺍﻟﺤَﺮْﺑﻲ " ﻣﻨﺴُﻮﺏٌ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﺤﺮﺏ، ﻭﻫﻮ ﺍﻟﻘِﺘَﺎﻝُ، ﻭﺩﺍﺭ ﺍﻟﺤﺮﺏ، ﺃﻱ : ﺩﺍﺭُ ﺍﻟﺘﺒﺎﻋُﺪ ﻭﺍﻟﺒﻐﻀﺎﺀ، ﻓﺎﻟﺤﺮﺑﻲ ﺑﺎﻻﻋﺘﺒﺎﺭ ﺍﻟﺜﺎﻧﻲ .
‘“হারবি” শব্দটা “হারব”-এর দিকে সম্বন্ধীয়। “হারব” অর্থ যুদ্ধ। আর “দারুল হারব” অর্থ পারস্পরিক দূরত্ব ও বিদ্বেষের রাষ্ট্র। “হারবি”-কে এই দ্বিতীয় অর্থ তথা দূরত্ব ও বিদ্বেষের বিচারেই “হারবি” বলা হয়।’ (আল-মুতলি’ আলা আলফাজিল মুকনি’ : পৃ. নং ২৬৯, প্রকাশনী : মাকতাবাতুস সাওয়াদি)
আর শরয়ি পরিভাষায় যে সকল কাফির-মুশরিক মুসলমানদের খলিফার সাথে জিম্মাচুক্তি, সন্ধিচুক্তি বা নিরাপত্তাচুক্তিতে আবদ্ধ নয়, তাদেরকে হারবি বলা হয়। যেমন ‘আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা’-তে এদের সংজ্ঞায় বলা হয়েছে :
ﺃَﻫْﻞ ﺍﻟْﺤَﺮْﺏِ ﺃَﻭِ ﺍﻟْﺤَﺮْﺑِﻴُّﻮﻥَ : ﻫُﻢْ ﻏَﻴْﺮُ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻟَﻢْ ﻳَﺪْﺧُﻠُﻮﺍ ﻓِﻲ ﻋَﻘْﺪِ ﺍﻟﺬِّﻣَّﺔِ، ﻭَﻻَ ﻳَﺘَﻤَﺘَّﻌُﻮﻥَ ﺑِﺄَﻣَﺎﻥِ ﺍﻟْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻦَ ﻭَﻻَ ﻋَﻬْﺪِﻫِﻢْ
‘হারবিগণ হলো ওই সব অমুসলিম, যারা কোনো জিম্মাচুক্তিতে প্রবেশ করেনি আর না মুসলমানদের কোনো সন্ধি বা নিরাপত্তাচুক্তির মাধ্যমে সুযোগ লাভ করেছে।’ (আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়্যা : ৭/১০৪, প্রকাশনী : অজারাতুল আওকাফ, কুয়েত)
বর্তমান বিশ্বে যেহেতু মুসলিমদের না আছে কোনো খিলাফাব্যবস্থা আর না আছে খলিফা, তাই মুসলমানদের খলিফার সাথে কোনো রাষ্ট্রের জিম্মাচুক্তি, সন্ধিচুক্তি বা নিরাপত্তাচুক্তিও পাওয়া যাচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই বর্তমান বিশ্বের কাফিররা সবাই হারবি। শরয়ি দৃষ্টিতে এরা সবাই হারবি কাফির বলেই বিবেচিত হবে এবং হারবি কাফিরদের জন্য যে বিধিবিধান আছে, তা তাদের ওপর প্রযোজ্য হবে। মুসলিম বিশ্বে খিলাফাহব্যবস্থা না থাকা ও তা পুনরুদ্ধার করতে না পারাটা যদিও বর্তমান মুসলমানদের একটি ব্যর্থতা, কিন্তু এর কারণে কাফিরদেরকে আমরা অ-হারবিও ঘোষণা করতে পারি না। তাছাড়াও মুসলমানদের খিলাফাহব্যবস্থা ধ্বংস ও তা পুনরায় প্রতিষ্ঠা করতে না দেওয়ার পেছনে বর্তমান বিশ্বের তাগুতগোষ্ঠীর সরাসরি হাত রয়েছে, যা সঠিক ইতিহাস পড়ুয়া কারও অজানা নয়। মোটকথা যাই হোক, বর্তমান বিশ্বের কাফিররা যে শরয়ি দৃষ্টিতে হারবি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এসব কাফিরকে অ-হারবি ঘোষণা দিয়ে তাদের জন্য অ-হারবি কাফিরদের বিধান প্রযোজ্য করাটা সুস্পষ্ট ভ্রান্তি বা চরম অজ্ঞতা।
বাকি থেকে যায়, জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক চুক্তির কী বিধান? তো এক্ষেত্রে প্রথম কথা হলো, এসব চুক্তির নিয়ামবলি ও শর্তসমূহের মূল উদ্ভাবক কুফফার গোষ্ঠি। তাদের সুবিধা ও স্বার্থের অনুকূলেই সব তৈরি করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলো, যথা আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স সবগুলো হলো বিশ্বতাগুতের মূল। প্রকৃত অর্থে এরা যা চায়, সেটাই জাতিসংঘের নীতি হিসেবে বিবেচিত হয়। সচেতনদের অজানা নয় যে, বিশ্বে কাফিরদের একাধিক ব্লক থাকলেও ইসলাম বিরোধিতায় তারা এক মেরুতে চলে আসে। তাই তাদের এসব চুক্তি ও নীতিমালার সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। তৃতীয়ত, এসব চুক্তির সাথে মুসলিমদের কোনো সম্পর্ক নেই। এটাকে যদি শরয়ি অর্থে চুক্তিও বলা হয়, তাহলে বস্তুত এসব চুক্তি কাফির ও মুরতাদদের মধ্যে হয়েছে, মুসলিম আমিরের সাথে নয়। স্মর্তব্য যে, কোনো দেশের অধিকাংশ নাগরিক মুসলিম হওয়ার সত্ত্বেও সে দেশে কুফরি সংবিধান চালু থাকলে এবং সরকার সেটাকে উৎখাত না করে যথারীতি বহাল ও শক্তিশালী করলে সে সরকার মুরতাদ হিসেবে বিবেচিত হবে। এটাই ইসলামের শাশ্বত বিধান; কেউ মানুক চাই না মানুক। মুসলিম দেশ আর ইসলামি দেশ এক জিনিস নয়। অধিকাংশ মুসলিম নাগরিকের ভিত্তিতে কোনো দেশকে মুসলিম দেশ বলা গেলেও যতক্ষণ না সে দেশের সংবিধান ও আইন-কানুন ইসলামি হবে ততক্ষণ সে দেশকে ইসলামি দেশ বলা যাবে না। অনেকে এ পার্থক্য করতে না পেরে দুটিকে একসাথে গুলিয়ে ফেলে। চতুর্থত, যদি তারা ইসলামি নীতিমালার আলোকেও চুক্তি ও শর্তাবলি আরোপ করত এবং সবাই সে চুক্তিতে একমত হতো, তবুও বর্তমানে সে চুক্তি বহাল থাকত না। কেননা, অসংখ্যবার তারা নিজেরাই নিজেদের বানানো সেসব চুক্তি ও নিয়ম ভঙ্গ করেছে, যা আজ পুরো বিশ্ববাসীর সামনে সূর্যের আলোর ন্যায় সুস্পষ্ট। দেখুন, হুদাইবিয়ার সন্ধিচুক্তি কাফিররা একবার ভঙ্গ করা মাত্রই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কা আক্রমণ করতে কিন্তু আর কোনো কিছুর অপেক্ষা করেননি। বস্তুত শক্তিই আজ সবকিছুর মূখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। শক্তিই আজ সকল নীতির মূল হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই জুলুম ও শক্তির দাপটে এসব নীতিমালা ও চুক্তির কথা সবই গৌণ।
মোটকথা, জাতিসংঘের এসব ঠুনকো নীতি ও ইসলাম-বিদ্বেষী শর্তাবলী যে ইসলামের দৃষ্টিতে একেবারেই মূল্যহীন, তা বুঝতে বড় ফকিহ বা মুজতাহিদ হওয়ার প্রয়োজন নেই। তাই বর্তমানের যেসব অসচেতন আলিম কিংবা মডারেট মুসলিম জাতিসংঘের নাম দিয়ে আমাদেরকে চুক্তি, নিরাপত্তা ও শান্তির বাণী শোনায়, তাদের অনুরোধ করব, ভালো করে আগে জাতিসংঘকে জানুন, এর প্রেক্ষাপট ও সঠিক ইতিহাস পড়ুন, ইসলামের ক্ষতিসাধন ও মুসলিমদের খিলাফাব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টায় তার জঘন্য সব পদক্ষেপ ও কুকীর্তি দেখুন, তারপর এ ব্যাপারে ফয়সালা করুন। জাতিসংঘের ভয়ংকর নীতিমালা ও গোপন উদ্দেশ্য জানলে চুক্তির নাম নেওয়া তো দূরে থাক, এর নাম নিতেও কলিজা কেঁপে উঠত এবং অন্তরে সৃষ্টি হতো প্রচণ্ড ঘৃণা। তাই বলি কি, জাতিসংঘের নামে চুক্তির অজুহাত তুলে মায়ের কাছে মামাবাড়ির গল্প শোনানোর কোনোই প্রয়োজন নেই! তার চাইতে সে সময়টুকু বিশ্বরাজনীতি, তাদের মোড়লগীরি ও ইসলামের বিরুদ্ধে তাগুতদের বৈশ্বিক ষড়যন্ত্র *নিয়ে পড়াশোনা করুন। আশা করি, বিষয়টি নিজেই বুঝতে পারবেন।
গণতান্ত্রিক দেশগুলোর বিধান :
বর্তমান মুসলমানদের সবচেয়ে বড় একটি সমস্যা হলো, কোনো বিষয়ে ভালো ধারণা না রাখা সত্ত্বেও অনেকে চূড়ান্ত মত বা সিদ্ধান্ত বলে দেয়। দুয়েকটি হাদিস বা লোকমুখে শোনা ইসলামের ব্যাপক কোনো মূলনীতিকে সামনে রেখেই স্পর্শকাতর বিষয়েও হুটহাট মন্তব্য করে বসে! শুধু তাই-ই নয়; বরং অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ইসলামের ব্যাপারে সামান্য নলেজের ওপর ভিত্তি করে জেনারেল লেভেলের একজন লোক প্রাজ্ঞ ও ভালো আলিমের সাথে তর্কে করছে! অথচ তার না জানা আছে ইসলামের মৌলিক জ্ঞান, আর না সে বুঝতে পারবে শরিয়তের মূলনীতি ও স্পর্শকাতর মাসআলাগুলোর সূক্ষ্মতা। তবুও সে নিজের অপূর্ণ ধারণার ওপর ভিত্তি করেই ঝগড়া করে যায়। যেমন, ইসলামের উদারতা নিয়ে একদল উদারমনা লোকের সে কী মানবতার বহিঃপ্রকাশ! দেখে মনে হয়, দরদে সে ফেটে পড়ছে! বিশেষত আমাদের মূর্খ সমাজে কাফিরদের ক্ষেত্রে এসব উদারমনাদের বেশ কদর রয়েছে! কথা ও ভাবে প্রকাশ করে যে, এরাই সত্যিকার ইসলাম বহন করছে, আর এর বিপরীতে যারা স্পষ্ট দলিলের আলোকে কোথাও কঠোর এবং কোথাও নরম হওয়ার কথা বলে, তারা হয়ে যায় উগ্র ও ইসলামের বদনামকারী।
এমনই আরেকটি স্পর্শকাতর মাসআলা হলো গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক দেশগুলোর বিধান। আফসোস যে, এ মাসআলায় শুধু সাধারণ লোকদেরই নয়, অনেক আলিমেরও প্রাথমিক ধারণাটুকু নেই। বেশিরভাগ মানুষের ধারণা, গণতন্ত্র ইসলাম-অনুমোদিত একটি পদ্ধতি। আর এজন্যই অধুনা কালে বিভিন্ন দেশে ‘ইসলামি গণতন্ত্র’ নামে নিকৃষ্ট একটি পরিভাষার কথা শোনা যায়। অনেক আলিমকেও অজ্ঞাতসারে এ পরিভাষা ব্যবহার করতে দেখা যায়। অথচ এটা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত, বাজে ও পরিত্যাক্ত একটি পরিভাষা, যার সাথে ইসলামের ন্যূনতম কোনো সম্পর্ক নেই। বুঝবানদের কেউ কেউ অবশ্য এটাকে হারাম বলতে চান। যার অর্থ দাঁড়ায়, এটা গুনাহের কাজ হলেও এতে ইমান নষ্ট হওয়ার মতো কোনো কারণ নেই। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এটা হালাল বা বৈধ তো দূরে থাক, হারামের স্তরেরও নয়। বরং এটা হলো স্পষ্ট কুফরি ও শিরকি একটি মতবাদ, যার রচয়িতা, সংস্কারক ও ব্যবহারকারী সামগ্রিকভাবে সবাই কাফির। অবশ্য মুসলিম দাবিদারদের মধ্য হতে ব্যক্তিগতভাবে কাউকে কাফির বলতে হলে দেখতে হবে যে, তার মধ্যে ‘মাওয়ানিউত তাকফির’ (কাফির বলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক কারণসমূহ) হতে কোনোটি পাওয়া যায় কিনা। যদি পাওয়া যায় তাহলে তো তাকে মাজুর ধরা হবে এবং কুফরি থাকা সত্ত্বেও তাকে কাফির বলা থেকে বিরত থাকতে হবে, অন্যথায় সে মুরতাদ বা ইসলামত্যাগী বলে বিবেচিত হবে। এ ব্যাপারে আমরা এখানে সামান্য আলোকপাত করছি, যাতে সবার কাছে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, গণতন্ত্র একটি কুফরি মতবাদ।
গণতন্ত্র সম্পর্কে শরয়ি হুকুম জানার পূর্বে প্রথমে এর আভিধানিক ও পারিভাষিক পরিচয় জানা জরুরি। গণতন্ত্রের ইংরেজি হলো, Democracy। শব্দটি মূলত গ্রীকভাষায় Demos এবং kratía শব্দ দু’টির সমন্বয়ে গঠিত। Demos অর্থ জনগণ আর kratía অর্থ শাসন। তাহলে Democracy এর আভিধানিক অর্থ দাঁড়াচ্ছে, জনগণের শাসন।
পারিভাষিক অর্থ :
ইনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকায় গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে :
Democratic System of Government : A system of government based on the principle of majority dicision-making.
‘সরকারের গণতান্ত্রিক পদ্ধতি : সংখ্যাগরিষ্ঠ মত গ্রহণের নীতির উপর ভিত্তি করে সরকার ব্যবস্থা।’ (এনকার্টা, ২০০৯, ইনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা, ২০১২)
আধুনিক গণতন্ত্রের রূপদাতা আমেরিকান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন গণতান্ত্রিক সরকারকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন :
Government of the people, by the people, for the people.
‘জনগণের জন্য জনগণের দ্বারা জনগণের সরকার।’ (প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন, দ্যা গেটিসবার্গ আ্যড্রেস, নভেম্বর, ১৯, ১৮৬৩)
উইকিপিডিয়ায় গণতন্ত্রের বিবরণ এভাবে দেওয়া হয়েছে :
‘গণতন্ত্র বলতে কোনো জাতিরাষ্ট্রের (অথবা কোনো সংগঠনের) এমন একটি শাসনব্যবস্থাকে বোঝায়, যেখানে নীতিনির্ধারণ বা সরকারি প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে প্রত্যেক নাগরিক বা সদস্যের সমান ভোটাধিকার থাকে। গণতন্ত্রে আইন প্রস্তাবনা, প্রণয়ণ ও তৈরির ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের অংশগ্রহণের সমান সুযোগ রয়েছে, যা সরাসরি বা নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে হয়ে থাকে।’ (https://bn.wikipedia.org/wiki/গণতন্ত্র )
সুতরাং গনতন্ত্র বলতে জনগনের স্বার্থে জনগনের দ্বারা পরিচালিত শাসনব্যবস্থাকে বুঝানো হয়। তারা নিজেরাই নিজেদের জীবনব্যবস্থা তৈরি করে এবং তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে নিজেদের সার্বভৌমিক ক্ষমতার বলে আইন রচনা করে। এভাবে জনগণ নিজেদের ক্ষমতার অনুশীলন করে এবং নিজেরাই নিজেদের পরিচালনা করে। গণতন্ত্রের দৃষ্টিতে আইন প্রনয়ণ এবং শাসক নির্বাচন করার ক্ষেত্রে প্রত্যেক ব্যক্তির সমান অধিকার রয়েছে।
জনগণই এ ব্যবস্থায় বিধান প্রণয়ন করে এবং তারা নিজেদের তৈরি কর্তৃপক্ষ ব্যতীত অন্য কারও কাছে জবাবদিহি করে না। জনগণই সার্বভৌমত্ব ও সকল ক্ষমতা ধারণ করে এবং জনগণই তাদের সার্বভৌমত্ব চর্চা করতে পারে। তাই বলা যায়, জনগণই এ ব্যবস্থার প্রভু। আর জীবন থেকে ধর্মকে আলাদা করাই হচ্ছে গনতন্ত্রের মূল বিশ্বাস এবং এ বিশ্বাসই গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি। এ বিশ্বাস থেকেই গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছে। ইসলাম এ বিশ্বাস থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। ইসলামি আকিদার ভিত্তি হচ্ছে, জীবন, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল বিষয় আল্লাহ তাআলার আদেশ ও নিষেধই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে এবং আল্লাহ তাআলা যে ব্যবস্থা দিয়েছেন সে অনুযায়ী নিজেদের জীবন পরিচালনা করতে হবে। পক্ষান্তরে গণতন্ত্র হচ্ছে মানুষের মস্তিষ্কপ্রসূত একটি ব্যবস্থা, যার সাথে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কোনো সম্পর্ক নেই। নিজেদের প্রবৃত্তি ও খায়েশ পূরণই এ তন্ত্রের মূলভিত্তি।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় মানুষ প্রবৃত্তির দাসে পরিণত হতে বাধ্য। আল্লাহ তাআলা মানুষের জীবনের সকল ক্ষেত্রে বিধি-বিধান নাজিল করেছেন। কিন্তু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সমাজ ও রাষ্ট্রজীবনে আল্লাহর বিধি-বিধানকে অস্বীকার করা হয়। তাই এটি মূলত আল্লাহর বিধানকে অস্বীকারকারীদের ব্যবস্থা বা এককথায় কুফরি ব্যবস্থা। সুতরাং শরিয়ার বিপরীতে তাদের রচিত ও আবিস্কৃত কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করা যাবে না; বরং সম্পূর্ণভাবে বর্জন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা এ সকল কিছুকে বর্জন করার কঠোর নির্দেশ দিয়ে ইরশাদ করেন :
ﻳُﺮِﻳﺪُﻭﻥَ ﺃَﻥ ﻳَﺘَﺤَﺎﻛَﻤُﻮﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻄَّﺎﻏُﻮﺕِ ﻭَﻗَﺪْ ﺃُﻣِﺮُﻭﺍ ﺃَﻥ ﻳَﻜْﻔُﺮُﻭﺍ ﺑِﻪِ
‘তারা বিচার-ফয়সালার জন্য তাগুতের কাছে যেতে চায়; অথচ তাগুতকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করার জন্য তাদেরকে আদেশ করা হয়েছে।’ (সুরা আন-নিসা : ৬০)
যে আকিদা থেকে এ ব্যবস্থার উদ্ভব হয়েছে, যে ভিত্তির উপর এটি প্রতিষ্ঠিত এবং যে চিন্তা-ধারণার সে জন্ম দেয় তা সম্পূর্ণরূপে মুসলিমদের আকিদা বা বিশ্বাসের বিপরীত। গনতন্ত্রের আকিদা থেকে নিম্নোক্ত দু’টি ধারণার উদ্ভব হয়। এক. সার্বভৌমত্ব জনগণের জন্য। দুই. জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস।
উপরিউক্ত দু’টি ধারণার ওপর ভিত্তি করেই ইউরোপের দার্শনিক ও চিন্তাবিদগণ তাদের ব্যবস্থা প্রণয়ন করে থাকে। এর দ্বারা পাদরিদের কর্তৃত্বকে সম্পূর্ণরূপে বিলীন করে জনগণের হাতে তা সমর্পণ করা হয়। পাদরি ও পোপদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ফসল হিসেবে ধর্মীয় আইন-কানুনের অবসান করা হয়। ফলে সার্বভৌমত্ব হলো জনগণের জন্য এবং জনগণই হলো সকল ক্ষমতার উৎস। রাষ্ট্রব্যবস্থায় এ দু’টি ধারণাই বাস্তবায়ন করা হলো। ফলে জনগণই হয়ে গেল সার্বভৌমত্বের প্রতীক ও সকল ক্ষমতার উৎস।
পক্ষান্তরে ইসলামে সার্বভৌমিক ক্ষমতা হচ্ছে একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য। গনতন্ত্রের সাথে ইসলামের কিছু শাখাগত বিষয় বাহ্যিকভাবে এক মনে হলেও বাস্তবে এই দু’টি দ্বীন বা জীবনব্যবস্থার মধ্যে রয়েছে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। একটি মেনে নিলে অপরটি আপনাপনিই বাতিল হয়ে যেতে বাধ্য। কোনো অবস্থাতেই উভয়টির সংমিশ্রণ হতে পারে না। হয় ইসলাম থাকবে, নচেৎ গণতন্ত্র।
আল্লাহ তাআলা সকল মাখলুকের স্রষ্টা। তাই তাদের জন্য কল্যাণ ও উপযোগী বিধিবিধান তিনিই ভালো জানেন। মানবসত্ত্বা সাধারণত জ্ঞানগরিমা, স্বভাব-চরিত্র ও অভ্যাসের দিক দিয়ে বিভিন্ন শ্রেণির হয়ে থাকে। তারা অন্যদের কল্যাণকর বিষয়াদি সম্পর্কে জানা তো দূরে থাক; স্বয়ং নিজেদের কল্যাণকর বিষয় সম্বন্ধেই অজ্ঞ। এজন্য যে সমাজ ও দেশে জনগণই সংবিধান ও আইন-কানুন প্রণয়ন করে সে দেশে দুর্নীতি, চারিত্রিক অবক্ষয় ও সামাজিক বিপর্যয় একের পর এক পরিদৃষ্ট হতেই থাকে।
সাথে এটাও লক্ষণীয় যে, অনেক দেশে এ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাস্তবতাহীন এক বাহ্যিক অবয়ব ও শুধুই শ্লোগানে পরিণত হয়েছে, যার দ্বারা মানুষকে ধোঁকা দেওয়া হয়। বাস্তবিক অর্থে রাষ্ট্র পরিচালনা করে কেবল ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলের সাংসদরা। জনগণ এদের আদেশের সামনে নত ও পরাজিত থাকে। এ ব্যাপারে এর চেয়ে বড় দলিল আর কী হতে পারে যে, গণতন্ত্রের কোনো আইন যখন রাষ্ট্রের কর্ণধারদের অভিলাষের বিপরীত হয় তখন তাকে তারা পদদলিত করে পিষ্ট করে। নির্বাচনী জালিয়াতি, মানুষের স্বাধীনতাহরণ, সত্য ও ন্যায় প্রকাশকারীদের মুখবন্ধকরণের ঘটনাগুলো এমন কিছু তিক্ত বাস্তবতা, যা বর্তমান সময়ের ছোট-বড় কমবেশি সবাই জানে।
এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ইবাদত ও আনুগত্য কিংবা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে শিরকের নতুন একটি প্রকার। যেহেতু এতে মহান সৃষ্টিকর্তার সার্বভৌমত্ব ও নিঃশর্ত আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে তাঁর অধিকারকে বাতিল করে তা মানুষের অধিকার বলে সাব্যস্ত করা হয়।
গণতন্ত্র কুফরি হওয়ার প্রমাণসমূহ :
গণতন্ত্রের সংজ্ঞা ও গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার স্বরূপ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, মানবজাতির জন্য আল্লাহ-প্রণীত বিধানের পরিবর্তে মানবরচিত সংবিধান দ্বারা রাষ্ট্র পরিচালনাকে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বলে। আর এটা যে সুস্পষ্ট কুফর, তাতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। শরিয়তের সুস্পষ্ট ও অকাট্য দলিলের আলোকে এর কুফরি স্পষ্টভাবে প্রমাণিত। নিম্নে আমরা এর কিছু দলিল উল্লেখ করছি।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
ﺇِﻥِ ﺍﻟْﺤُﻜْﻢُ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻠَّﻪِ ﺃَﻣَﺮَ ﺃَﻟَّﺎ ﺗَﻌْﺒُﺪُﻭﺍ ﺇِﻟَّﺎ ﺇِﻳَّﺎﻩُ ﺫَٰﻟِﻚَ ﺍﻟﺪِّﻳﻦُ ﺍﻟْﻘَﻴِّﻢُ ﻭَﻟَٰﻜِﻦَّ ﺃَﻛْﺜَﺮَ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ ﻟَﺎ ﻳَﻌْﻠَﻤُﻮﻥَ
‘আইন প্রনয়ণের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর তাআলার-ই। তিনি আদেশ দিয়েছেন, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত কোরো না। এটাই সরল পথ, কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।’ (সুরা ইউসুফ : ৪০)
আল্লাহ তাআলা বলেন :
ﻓَﺎﻟْﺤُﻜْﻢُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺍﻟْﻌَﻠِﻲِّ ﺍﻟْﻜَﺒِﻴﺮِ
‘অতএব বিধান দেওয়ার ক্ষমতা কেবল আল্লাহরই, যিনি সর্বোচ্চ ও মহান।’ (সুরা আল-মুমিনুন : ১২)
আল্লাহ তাআলা বলেন :
ﺃَﻟَﻴْﺲَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺑِﺄَﺣْﻜَﻢِ ﺍﻟْﺤَﺎﻛِﻤِﻴﻦَ
‘আল্লাহ তাআলা কি বিচারকদের মধ্যে শ্রেষ্ঠতম বিচারক নন?’ (সুরা আত-তিন : ৮)
আল্লাহ তাআলা বলেন :
ﺇِﻥِ ﺍﻟْﺤُﻜْﻢُ ﺇِﻟَّﺎ ﻟِﻠَّﻪِ
‘আল্লাহ ছাড়া কারও বিধান দেওয়ার ক্ষমতা নেই।’ (সুরা আল-আনআম : ৫৭)
আল্লাহ তাআলা বলেন :
ﻭَﻻ ﻳُﺸْﺮِﻙُ ﻓِﻲ ﺣُﻜْﻤِﻪِ ﺃَﺣَﺪﺍً
‘আর তিনি কাউকে নিজ ক্ষমতা ও কর্তৃত্বে অংশীদার বানান না।’ (সুরা আল-কাহফ : ২৬)
আল্লাহ তাআলা বলেন :
ﺃَﻓَﺤُﻜْﻢَ ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ ﻳَﺒْﻐُﻮﻥَ ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺣْﺴَﻦُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺣُﻜْﻤﺎً ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ﻳُﻮﻗِﻨُﻮﻥَ
‘তারা কি মূর্খতা-যুগের ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসী জাতির জন্য উত্তম ফয়সালাকারী আর কে হতে পারে?’ (সুরা আল-মায়িদা : ৫০)
আল্লাহ তাআলা বলেন :
ﻭَﻣَﻦ ﻟَّﻢْ ﻳَﺤْﻜُﻢ ﺑِﻤَﺎ ﺃَﻧﺰَﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓَﺄُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﻫُﻢُ ﺍﻟْﻜَﺎﻓِﺮُﻭﻥَ
‘আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ করা বিধান অনুযায়ী বিচার করে না সেসব লোকেরাই কাফির।’ (সুরা আল-মায়িদা : ৪৪)
আল্লাহ তাআলা বলেন :
ﻓَﻼ ﻭَﺭَﺑِّﻚَ ﻻ ﻳُﺆْﻣِﻨُﻮﻥَ ﺣَﺘَّﻰ ﻳُﺤَﻜِّﻤُﻮﻙَ ﻓِﻴﻤَﺎ ﺷَﺠَﺮَ ﺑَﻴْﻨَﻬُﻢْ ﺛُﻢَّ ﻻ ﻳَﺠِﺪُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺃَﻧْﻔُﺴِﻬِﻢْ ﺣَﺮَﺟًﺎ ﻣِﻤَّﺎ ﻗَﻀَﻴْﺖَ ﻭَﻳُﺴَﻠِّﻤُﻮﺍ ﺗَﺴْﻠِﻴﻤًﺎ
‘কিন্তু না! তোমার রবের কসম, তারা ইমানদার হবে না; যতক্ষণ না তারা তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে বিচারক নির্ধারণ করে, অতঃপর তোমার কৃত ফয়সালার ব্যাপারে নিজেদের অন্তরে কোনো দ্বিধা-সংকোচ অনুভব না করে এবং পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ করে।’ (সুরা আন-নিসা : ৬৫)
ইমাম জাসসাস রহ. এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন :
ﻭَﻓِﻲ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟْﺂﻳَﺔِ ﺩَﻟَﺎﻟَﺔٌ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻥَّ ﻣَﻦْ ﺭَﺩَّ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻣِﻦْ ﺃَﻭَﺍﻣِﺮِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺃَﻭْ ﺃَﻭَﺍﻣِﺮِ ﺭَﺳُﻮﻟِﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻓَﻬُﻮَ ﺧَﺎﺭِﺝٌ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺈِﺳْﻠَﺎﻡِ ﺳَﻮَﺍﺀٌ ﺭَﺩَّﻩُ ﻣِﻦْ ﺟِﻬَﺔِ ﺍﻟﺸَّﻚِّ ﻓِﻴﻪِ ﺃَﻭْ ﻣِﻦْ ﺟِﻬَﺔِ ﺗَﺮْﻙِ ﺍﻟْﻘَﺒُﻮﻝِ ﻭَﺍﻟِﺎﻣْﺘِﻨَﺎﻉِ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺘَّﺴْﻠِﻴﻢِ , ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﻳُﻮﺟِﺐُ ﺻِﺤَّﺔَ ﻣَﺎ ﺫَﻫَﺐَ ﺇﻟَﻴْﻪِ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔُ ﻓِﻲ ﺣُﻜْﻤِﻬِﻢْ ﺑِﺎﺭْﺗِﺪَﺍﺩِ ﻣَﻦْ ﺍﻣْﺘَﻨَﻊَ ﻣِﻦْ ﺃَﺩَﺍﺀِ ﺍﻟﺰَّﻛَﺎﺓِ ﻭَﻗَﺘْﻠِﻬِﻢْ ﻭَﺳَﺒْﻲِ ﺫَﺭَﺍﺭِﻳِّﻬِﻢْ ; ﻟِﺄَﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﺗَﻌَﺎﻟَﻰ ﺣَﻜَﻢَ ﺑِﺄَﻥَّ ﻣَﻦْ ﻟَﻢْ ﻳُﺴَﻠِّﻢْ ﻟِﻠﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﻀَﺎﺀَﻩُ ﻭَﺣُﻜْﻤَﻪُ ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻞِ ﺍﻟْﺈِﻳﻤَﺎﻥِ .
‘এ আয়াতই প্রমাণ করে, যে ব্যক্তি আল্লাহ বা তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশ-নিষেধসমূহ থেকে কোনো একটি বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। চাই সে সন্দেহবশত প্রত্যাখ্যান করুক কিংবা গ্রহণ না করে আত্মসমর্পণ করা থেকে বিরত থাকুক। আয়াতটি সাহাবায়ে কিরাম কর্তৃক জাকাত আদায়ে অস্বীকারকারীদেরকে মুরতাদ আখ্যা দিয়ে তাদেরকে হত্যা করা এবং তাদের পরিবার পরিজনদেরকে বন্দী করার সিদ্ধান্তকে সঠিক বলে সাব্যস্ত করে। কেননা, আল্লাহ তাআলা ফয়সালা দিয়েছেন, যে ব্যক্তি রাসলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিচার ও বিধানকে মেনে নেবে না সে ইমানদার নয়।’ (আহকামুল কুরআন, জাসসাস : ২/২৬৮, প্রকাশনী : দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যা, বৈরুত)
আবু বকর রা.-এর যুগে কিছু লোক আল্লাহ তাআলার বিধান জাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে পুরোপুরি আত্মসমর্পণ না করায় সাহাবায়ে কিরাম তাদেরকে মুরতাদ আখ্যা দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। সন্দেহ নেই যে, এটা ছিল কুফর উৎখাতের ঐতিহাসিক এক লড়াই, যা কিয়ামত পর্যন্ত আগত সবার জন্য সুস্পষ্ট দলিল যে, শরিয়তের অকাট্য কোনো বিধান মেনে নিতে গড়িমসি করলে কিংবা অস্বীকার করলে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাবে। অতএব যে শাসনব্যবস্থা পুরো রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করে দিয়ে এ শ্লোগান প্রচার করছে, ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’ এবং আল্লাহপ্রদত্ত হালালগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে অবৈধ আর হারামগুলোকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈধ করছে, তা কি সুস্পষ্ট কুফর নয়? এটাও যদি কুফর না হয়ে থাকে, তাহলে পৃথিবীতে কুফর আর কোনটাকে বলা হবে?
অনেকেরই ধারণা, ‘গণতন্ত্র’ শব্দটি ইসলামের ‘শুরা’ এর সমার্থক। কিন্তু অনেকগুলো কারণে এটা একটি ভ্রান্ত ধারণা। কতিপয় কারণ নিম্নরূপ :
১. শুরা বা পরামর্শ হয় শুধুমাত্র নিত্যনতুন সমসাময়িক বিষয়াদি এবং কুরআন-সুন্নাহয় যে বিষয়গুলোর বিশদ বিবরণ নেই, সেগুলো নিয়ে। কিন্তু গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা দ্বীনের অকাট্য প্রমাণিত বিধিবিধানেরও বিরোধিতা করে। অতএব সে নিষিদ্ধ বিষয়ের নিষেধাজ্ঞা বাতিল করে দেয় কিংবা আল্লাহ তাআলা যেটা অনুমোদন বা আবশ্যক করেছেন, তা নিষিদ্ধ করে দেয়। মদ বিক্রির লাইসেন্স এ সংবিধানের দ্বারাই দেওয়া হয়েছে। পতিতাবৃত্তি ও সুদি লেনদেনেরও একই অবস্থা। এ সংবিধানের দ্বারাই বিভিন্ন ইসলামি প্রতিষ্ঠান ও আল্লাহর রাস্তার পথিকদের ওপর সঙ্কীর্ণতা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের ওপর করা হচ্ছে কঠিন জুলুম। অতএব শরিয়তের সাথে এর সাংঘর্ষিকতা যখন সুস্পষ্ট, তাহলে এটা শুরা হয় কী করে?
২. শুরা মজলিস গঠিত হয় দ্বীনের পাণ্ডিত্য, ইলম, বিবেক, মেধা, চরিত্র ইত্যাদি বিবেচনায় উত্তীর্ণ একদল যোগ্য লোকের সমন্বয়ে। অতএব এখানে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও নির্বোধ শ্রেণির সাথে পরামর্শ করার কোনো সুযোগ নেই; কাফির বা নাস্তিকদের ব্যাপার তো দূরে থাক! কিন্তু গণতান্ত্রিক পার্লামেন্ট বোর্ডে এগুলোর কোনোই গুরুত্ব নেই। এজন্য এখানে একজন কাফির, নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী ও নির্বোধও প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। তাহলে বুঝাই যাচ্ছে, মৌলিকভাবে ইসলামি শুরাব্যবস্থার সাথে এর কত ব্যবধান!
৩. শুরা মজলিস রাষ্ট্রপ্রধানকে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করতে পারে না। প্রমাণ ও যুক্তির ভিত্তিতে এবং অন্য সদস্যদের তুলনায় কারও মতকে অধিক সঠিক মনে করায় তিনি কখনো একজনের মতকেও প্রাধান্য দিতে পারেন। এর বিপরীত সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংখ্যাগরিষ্ঠদের ঐক্যমত-সমর্থিত সিদ্ধান্ত জাতির জন্য অবশ্যপালনীয় আইনে পরিণত হয়ে যায়, যা কেউই প্রত্যাখ্যান করতে পারে না; এমনকি সরকারপ্রধানও নয়।
এ ধরনের আরও বিভিন্ন পার্থক্য রয়েছে, যা স্পষ্ট করে দেয় যে, শুরাব্যবস্থা ও গণতন্ত্র কখনো এক জিনিস নয়। উভয়ের মাঝে বাহ্যত কিছু মিল দেখা গেলেও মৌলিকভাবে উভয়ের মাঝে রয়েছে বৈপরীত্য ও সুস্পষ্ট ব্যবধান। মোটকথা, গণতন্ত্র হলো স্পষ্ট শিরকি ও কুফরি একটি ব্যবস্থা, আর বিপরীতে শুরা হলো শরিয়া-সমর্থিত ও ইসলামি শাসনব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। তাই উভয়টির মাঝে সমন্বয় করার চেষ্টা করা এবং দুটিকে এক বলে সাব্যস্ত করা মূর্খতা ও গোয়ার্তুমি বৈ কিছু নয়।
আমাদের অসংখ্য আলিম ও বিজ্ঞ ফকিহ গণতন্ত্রকে ইসলাম পরিপন্থী ও কুফরি তন্ত্র বলে অভিহিত করেছেন। এদেরকে আমরা অনেকেই আকাবির মানি, কিন্তু দলীয় স্বার্থের এ জায়গায় এসে নিজের নেতার মতকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে এসব আকাবিরকে আমরা ঠিকই ছুড়ে ফেলতে পারি! আমরা অসুবিধা দেখলে সত্যটাকেও লুকিয়ে রাখতে চাই, আর স্বার্থের বেলায় শত জোড়াতালি দিয়ে হলেও নিজেদের মত প্রতিষ্ঠিত করার অপচেষ্টা করি! এই হলো আমাদের স্বভাব, যা আমাদের হক পথের দিশা পেতে অন্যতম এক অন্তরায়। যাই হোক, কেউ মানুক চাই না মানুক, আমরা এখানে গণতন্ত্রের অসারতা ও এর কুফরি নিয়ে কতিপয় বিজ্ঞ আলিমের উদ্ধৃতি তুলে ধরছি। নিশ্চয়ই এতে হকপ্রত্যাশীদের জন্য রয়েছে উত্তম খোরাক।
হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলি থানবি রহ. বলেন :
ﻏﺮﺽ ﺍﺳﻼﻡ ﻣﯿﮟ ﺟﻤﮩﻮﺭﯼ ﺳﻠﻄﻨﺖ ﮐﻮﺋﯽ ﭼﯿﺰ ﻧﮩﯿﮟ ... ﯾﮧ ﻣﺨﺘﺮﻋﮧ ﻣﺘﻌﺎﺭﻓﮧ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﻣﺤﺾ ﮔﮭﮍﺍ ﮨﻮﺍ ﮈﮬﮑﻮﺳﻠﮧ ﮨﮯ، ﺑﺎﻟﺨﺼﻮﺹ ﺍﯾﺴﯽ ﺟﻤﮩﻮﺭﯼ ﺳﻠﻄﻨﺖ ﺟﻮ ﻣﺴﻠﻢ ﻭ ﮐﺎﻓﺮ ﺍﺭﮐﺎﻥ ﺳﮯ ﻣﺮﮐﺐ ﮨﻮ ﻭﮦ ﺗﻮﻏﯿﺮﻣﺴﻠﻢ ﺳﻠﻄﻨﺖ ﮨﯽ ﮨﻮﮔﯽ .
‘মোটকথা, ইসলামে গণতান্ত্রিক শাসন নামে কিছু নেই। ...এই নবআবিষ্কৃত প্রচলিত গণতন্ত্র শুধুই মনগড়া প্রতারণা। বিশেষত এমন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা, যা মুসলিম ও কাফের সদস্যদের নিয়ে গঠিত, সেটাকে তো অমুসলিম শাসনব্যবস্থাই বলতে হবে।’ (মালফুজাতে থানবি : ২৫২)
২. মাওলানা ইদরিস কান্ধলবি রহ. বলেন :
ﻭﮦ ﻟﻮﮒ ﯾﮧ ﮐﮩﺘﮯ ﮨﯿﮟ ﮐﮧ ﯾﮧ ﻣﺰﺩﻭﺭ ﺍﻭﺭ ﻋﻮﺍﻡ ﮐﯽ ﺣﮑﻮﻣﺖ ﮨﮯ ،ﺍﯾﺴﯽ ﺣﮑﻮﻣﺖ ﺑﻼﺷﺒﮧ ﺣﮑﻮﻣﺖ ﮐﺎﻓﺮﮦ ﮨﮯ۔
‘ওই সব লোক একথা বলে যে, এটি জনসাধারণ ও শ্রমিক মজদুরদের রাষ্ট্র। এমন রাষ্ট্র নিঃসন্দেহে কুফুরি রাষ্ট্র।’ (আকায়িদুল ইসলাম: ২৩০, প্রকাশনী : ইদারায়ে ইসলামিয়্যাত, করাচি)
৩. আল্লামা সাইয়িদ সুলাইমান নদবি রহ. বলেন:
ﮨﻤﯿﮟ ﺗﻮ ﺍﺳﻼﻡ ﻣﯿﮟ ﮐﮩﯿﮟ ﺑﮭﯽ ﻣﻐﺮﺑﯽ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﻧﻈﺮ ﻧﮩﯿﮟ ﺁﺋﯿﺎﻭﺭ ﺍﺳﻼﻣﯽ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﺗﻮ ﮐﻮﺋﯽ ﭼﯿﺰ ﮨﯽ ﻧﮩﯿﮟ ، ﻣﻌﻠﻮﻡ ﻧﮩﯿﮟ ﺍﻗﺒﺎﻝ ﻣﺮﺣﻮﻡ ﮐﻮ ﺍﺳﻼﻡ ﮐﯽ ﺭﻭﺡ ﻣﯿﮟ ﯾﮧ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﮐﮩﺎﮞ ﺳﮯ ﻧﻈﺮ ﺍٓﮔﺌﯽ؟ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﺍ ﯾﮏ ﺧﺎﺹ ﺗﮩﺬﯾﺐ ﻭ ﺗﺎﺭﯾﺦ ﮐﺎ ﺛﻤﺮﮦ ﮨﮯ، ﺍﺳﮯ ﺍﺳﻼﻣﯽ ﺗﺎﺭﯾﺦ ﻣﯿﮟ ﮈﮬﻮﻧﮉﻧﺎ ﻣﻌﺬﺭﺕ ﺧﻮﺍﮨﯽ ﮨﮯ .
‘পশ্চিমা গণতন্ত্রের নমুনা ইসলামের কোথাও আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় না আর ইসলামি গণতন্ত্র বলতে কোনো জিনিসই নেই। জানি না, মরহুম ইকবাল ইসলামি আদর্শের মধ্যে এই গণতন্ত্র কোথায় পেলেন? গণতন্ত্র একটি বিশেষ ইতিহাস ও সভ্যতার ফল। ইসলামি ইতিহাসে তার অনুসন্ধান করাই অনর্থক।’ (মাসিক সানাবিল, করাচি : ৮/২৭-২৮, সংখ্যা : ১১-ই মে, ২০১৩ ইং)
৪. হাকিমুল ইসলাম কারি তাইয়িব রহ. বলেন :
ﯾﮧ ( ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ) ﺭﺏ ﺗﻌﺎﻟﯽ ﮐﯽ ﺻﻔﺖ ﻣﻠﮑﯿﺖ ﻣﯿﮟ ﺑﮭﯽ ﺷﺮﮎ ﮨﮯ ﺍﻭﺭ ﺻﻔﺖ ﻋﻠﻢ ﻣﯿﮟ ﺑﮭﯽ ﺷﺮﮎ ﮨﮯ۔
‘এ গণতন্ত্র আল্লাহ তাআলার রাজত্বের গুণের মধ্যেও শিরক এবং তাঁর ইলম গুণের মধ্যেও শিরক।’ (আদইয়ান কি জঙ্গ : পৃ. নং ৫৪, প্রকাশনী : ইদারায়ে হিত্তিন, পাকিস্তান)
৫. মুফতী রশিদ আহমদ লুধইয়ানবি রহ.বলেন :
ﯾﮧ ﺗﻤﺎﻡ ﺑﺮﮒ ﻭﺑﺎﺭ ﻣﻐﺮﺑﯽ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﮐﮯ ﺷﺠﺮ ۂ ﺧﺒﯿﺜﮧ ﮐﯽ ﭘﯿﺪﺍﻭﺍﺭ ﮨﮯ۔ ﺍﺳﻼﻡ ﻣﯿﮟ ﺍﺱ ﮐﺎﻓﺮﺍﻧﮧ ﻧﻈﺎﻡ ﮐﯽ ﮐﻮﺋﯽ ﮔﻨﺠﺎﺋﺶ ﻧﮩﯿﮟ , ﻧﮧ ﮨﻲ ﺍﺱ ﻃﺮﻳﻘﮯ ﺳﮯ ﻗﻴﺎﻣﺖ ﺗﻚ ﺍﺳﻼﻣﯽ ﻧﻈﺎﻡ ﺁﺳﻜﺘﺎ ﮨﯿﮟ .
‘বিশ্বময় অস্থিতিশীল ও বিশৃঙ্খলাময় এ পরিবেশ পশ্চিমা গণতন্ত্রের নিকৃষ্ট বৃক্ষের ফসল। ইসলামে এ ধরনের কুফুরি ব্যবস্থাপনার কোনোই অবকাশ নেই। আর না এ পদ্ধতিতে কিয়ামত পর্যন্ত ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে।’ (আহসানুল ফাতাওয়া : ৬/২৬, প্রকাশনী : এইচ. এম. সাইদ. কোম্পানি, করাচি)
৬. মাওলানা ইউসুফ লুধইয়ানবি রহ. বলেন :
ﺑﻌﺾ ﻏﻠﻂ ﻧﻈﺮﯾﺎﺕ ﻗﺒﻮﻟﯿﺖِ ﻋﺎﻣﮧ ﮐﯽ ﺍﯾﺴﯽ ﺳﻨﺪ ﺣﺎﺻﻞ ﮐﺮﻟﯿﺘﮯﮨﯿﮟ ﮐﮧ ﺑﮍﮮ ﺑﮍﮮ ﻋﻘﻼﺀ ( ﺍﻭﺭ ﻋﺎﻟﻢ ﮐﮩﻼﻧﮯ ﻭﺍﻟﮯ ﺑﮭﯽ ) ﺍﺱ ﻗﺒﻮﻟﯿﺖِ ﻋﺎﻣﮧ ﮐﮯ ﺁﮔﮯ ﺳﺮﮈﺍﻝ ﺩﯾﺘﮯ ﮨﯿﮟ ،ﻭﮦ ﯾﺎ ﺗﻮ ﺍﻥ ﻏﻠﻄﯿﻮﮞ ﮐﺎﺍﺩﺭﺍﮎ ﮨﯽ ﻧﮩﯿﮟ ﮐﺮﭘﺎﺗﮯ ﯾﺎ ﺍﮔﺮ ﺍﻥ ﮐﻮ ﻏﻠﻄﯽ ﮐﺎﺍﺣﺴﺎﺱ ﮨﻮﺑﮭﯽ ﺟﺎﺋﮯ ﺗﻮ ﺍﺱ ﮐﮯ ﺧﻼﻑ ﻟﺐ ﮐﺸﺎﺋﯽ ﮐﯽ ﺟﺮﺍٔﺕ ﻧﮩﯿﮟ ﮐﺮﺳﮑﺘﮯ۔ﺩﻧﯿﺎ ﻣﯿﮟ ﺟﻮ ﺑﮍﯼ ﺑﮍﯼ ﻏﻠﻄﯿﺎﮞ ﺭﺍﺋﺞ ﮨﯿﮟ، ﺍﻥ ﮐﮯ ﺑﺎﺭﮮ ﻣﯿﮟ ﺍﮨﻞ ﻋﻘﻞ ﺍﺳﯽ ﻟﺌﮯ ﺍﻟﻤﯿﮯ ﮐﺎ ﺷﮑﺎﺭ ﮨﯿﮟ ! ﺍﺳﯽ ﻏﻠﻂ ﻗﺒﻮﻟﯿﺖِ ﻋﺎﻣﮧ ﮐﺎ ﺳﮑﮧ ﺁﺝ ’’ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ‘‘ ﻣﯿﮟ ﭼﻞ ﺭﮨﺎﮨﮯ ۔ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﺩﻭﺭِ ﺟﺪﯾﺪ ﮐﺎ ﻭﮦ ’’ ﺻﻨﻢِ ﺍﮐﺒﺮ ‘‘ ﮨﮯ ﺟﺲ ﮐﯽ ﭘﺮﺳﺘﺶ ﺍﻭﻝ ﺍﻭﻝ ﺩﺍﻧﺎﯾﺎﻥِ ﻣﻐﺮﺏ ﻧﮯ ﺷﺮﻭﻉ ﮐﯽ۔ﭼﻮﻧﮑﮧ ﻭﮦ ﺁﺳﻤﺎﻧﯽ ﮨﺪﺍﯾﺖ ﺳﮯﻣﺤﺮﻭﻡ ﺗﮭﮯ،ﺍﺱ ﻟﺌﮯ ﺍﻥ ﮐﯽ ﻋﻘﻞِ ﻧﺎﺭﺳﺎ ﻧﮯ ﺩﯾﮕﺮ ﻧﻈﺎﻡ ﮨﺎﺋﮯ ﺣﮑﻮﻣﺖ ﮐﮯ ﻣﻘﺎﺑﻠﮯ ﻣﯿﮟ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﮐﺎ ﺑﺖ ﺗﺮﺍﺵ ﻟﯿﺎﺍﻭﺭ ﭘﮭﺮ ﺍﺱ ﮐﻮﻣﺜﺎﻟﯽ ﻃﺮﺯِ ﺣﮑﻮﻣﺖ ﻗﺮﺍﺭ ﺩﮮ ﮐﺮ ﺍﺱ ﮐﺎ ﺻﻮﺭ ﺑﻠﻨﺪ ﺁﮨﻨﮕﯽ ﺳﮯﭘﮭﻮﻧﮑﺎ ﮐﮧ ﭘﻮﺭﯼ ﺩﻧﯿﺎ ﻣﯿﮟ ﺍﺱ ﮐﺎﻏﻠﻐﻠﮧ ﺑﻠﻨﺪﮨﻮﺍ،ﯾﮩﺎﮞ ﺗﮏ ﮐﮧ ﻣﺴﻠﻤﺎﻧﻮﮞ ﻧﮯ ﺑﮭﯽ ﺗﻘﻠﯿﺪِﻣﻐﺮﺏ ﻣﯿﮟ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﮐﯽ ﻣﺎﻻ ﺟﭙﻨﯽ ﺷﺮﻭﻉ ﮐﺮﺩﯼ۔ﮐﺒﮭﯽ ﯾﮧ ﻧﻌﺮﮦ ﺑﻠﻨﺪ ﮐﯿﺎ ﮔﯿﺎ ﮐﮧ ’’ ﺍﺳﻼﻡ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﮐﺎ ﻋﻠﻢ ﺑﺮﺩﺍﺭ ﮨﮯ ‘‘ ﺍﻭﺭ ﮐﺒﮭﯽ ’’ ﺍﺳﻼﻣﯽ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ )‘‘ ﺟﯿﺴﯽ ﺧﺒﯿﺚ ﺍﺻﻄﻼﺡ ) ﻭﺿﻊ ﮐﯽ ﮔﺌﯽ۔ﺣﺎﻻﻧﮑﮧ ﻣﻐﺮﺏ ’’ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ‘‘
ﮐﮯ ﺟﺲ ﺑﺖ ﮐﺎ ﭘﺠﺎﺭﯼ ﮨﮯ ،ﺍﺱ ﮐﺎ ﻧﮧ ﺻﺮﻑ ﯾﮧ ﮐﮧ ﺍﺳﻼﻡ ﺳﮯﮐﻮﺋﯽ ﺗﻌﻠّﻖ ﻧﮩﯿﮟ ﺑﻠﮑﮧ ﻭﮦ ﺍﺳﻼﻡ ﮐﮯ ﺳﯿﺎﺳﯽ ﻧﻈﺮﯾﮧ ﮐﯽ ﺿﺪ ﮨﮯ۔ﺍﺱ ﻟﺌﮯ ﺍﺳﻼﻡ ﮐﮯﺳﺎﺗﮫ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ( ﯾﺎ ﺍﺱ ﮐﯽ ﺍﺻﻄﻼﺣﺎﺕ ) ﮐﺎ ﭘﯿﻮﻧﺪ ﻟﮕﺎﻧﺎ ﺍﻭﺭ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﮐﻮ ﻣﺸﺮﻑ ﺑﮧ ﺍﺳﻼﻡ ﮐﺮﻧﺎﺻﺮﯾﺤﺎً ﻏﻠﻂ ﮨﮯ۔
‘কিছু কিছু ভুল দর্শন অনেক সময় এমন গ্রহণযোগ্যতা পেয়ে যায় যে, বড় বড় বুদ্ধিজীবী (ও আলিম নামধারীরাও) তা অবনত মস্তকে মেনে নেয়। তারা হয়তো এ ভুল অনুধাবনই করতে পারে না কিংবা অনুধাবন করলেও তার বিরূদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পায় না। পৃথিবীতে যত বড় বড় ভুল প্রচলিত আছে সেগুলোর জন্যই জ্ঞানীদের ভোগান্তির শিকার হতে হয়। এ ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার ভুলের ধারা আজ গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে চলছে। গণতন্ত্র অধুনা সময়ের ওই বড় মূর্তি, প্রথম প্রথম যার পুজা পশ্চিমা বিশ্বের বুদ্ধিজীবীরা শুরু করেছিল। যেহেতু তারা আসমানি হিদায়াতের আলো থেকে বঞ্চিত ছিল, তাই তাদের অপরিপক্ক বিবেক অন্যান্য শাসনব্যবস্থার পরিবর্তে গণতন্ত্রের মূর্তি বেছে নিল। এরপর এটাকে আদর্শ শাসনব্যবস্থা আখ্যা দিয়ে পুরো বিশ্বে এর আওয়াজ উঁচু করল। এতে সারাবিশ্বে সাড়া পড়ে গেল; এমনকি মুসলামনরাও পশ্চিমাদের তালে তালে তাদের গুণগান গাওয়া শুরু করল। কখনো এ আওয়াজ তুলল যে, ইসলাম হলো গণতন্ত্রের পতাকা বাহক। আবার কখনো ইসলামি গণতন্ত্র জাতীয় জঘন্য পরিভাষা তৈরি করল। অথচ পশ্চিমাবিশ্ব যে গণতন্ত্রের পুজা করে, ইসলামের সাথে তা কেবল সম্পর্কহীনই নয়; বরং তা ইসলামি রাজনৈতিক ও শাসনব্যবস্থার সাথে সাংঘর্ষিক। এজন্য ইসলামের সাথে গণতন্ত্র বা তার পরিভাষাগুলো মিলানো এবং গণতন্ত্রকে ইসলামের সাথে মিশ্রিত করা স্পষ্ট ভুল।’ (আপকে মাসায়িল আওর উনকা হল : ৭/৬৫৭, সিয়াসাত অধ্যায়, প্রকাশনী : মাকতাবা লুধিয়ানবি, করাচি)
৭. মুফতি মাহমুদ রহ. বলেন :
ﮨﻢ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﭘﺮ ﻟﻌﻨﺖ ﺑﮭﯿﺠﺘﮯ ﮨﯿﮟ۔ ﺍﺱ ﻣﯿﮟ ﺗﻮ ﺩﻭ ﻣﺮﺩﻭﮞ ﮐﯽ ﺁﭘﺲ ﻣﯿﮟ ﺷﺎﺩﯼ ﮐﯽ ﺍﺟﺎﺯﺕ ﮨﮯ۔ﺟﯿﺴﺎ ﮐﮧ ﺑﺮﻃﺎﻧﯿﮧ ﻧﮯ ﺍﺱ ﮐﺎ ﺑﻞ ﮐﺜﺮﺕِ ﺭﺍﺋﮯ ﺳﮯ ﭘﺎﺱ ﮐﯿﺎﮨﮯ۔
‘আমরা গণতন্ত্রের ওপর অভিশাপ বর্ষণ করি। এ তন্ত্রে তো পুরুষদের পরম্পরে সমকামী বিবাহের বৈধতা রয়েছে। যেমন ব্রিটেনে অধিকাংশের ভোটে এর পক্ষে বিল পাশ হয়েছে।’ (ইসলামি খিলাফত : পৃ. নং ১৭৭)
৮. মাওলানা আশিকে ইলাহি বুলন্দশহরি রহ. বলেন :
ﺍﻥ ﮐﯽ ﻻﺋﯽ ﮨﻮﺋﯽ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﺑﺎﻟﮑﻞ ﺟﺎﮨﻼﻧﮧ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﮨﮯ ﺟﺲ ﮐﺎ ﺍﺳﻼﻡ ﺳﮯ ﮐﻮﺋﯽ ﺗﻌﻠﻖ ﻧﮩﯿﮟ۔
‘এদের আনিত গণতন্ত্র সম্পূর্ণ জাহিলি একটি ব্যবস্থাপনা, ইসলামের সাথে যার কোনোই সম্পর্ক নেই।’ (তাফসিরে আনওয়ারুল বয়ান : ১/৫১৮)
৯. মুফতি নিজামুদ্দিন শামজায়ি শহিদ রহ. বলেন :
ﺟﯿﺴﺎ ﮐﮧ ﭘﯿﺸﺎﺏ ﮐﮯ ﺫﺭﯾﻌﮯ ﮐﺒﮭﯽ ﻭﺿﻮﻧﮩﯿﮟ ﮨﻮ ﺳﮑﺘﺎ ﺍﻭﺭ ﺟﯿﺴﺎ ﮐﮧ ﻧﺠﺎﺳﺖ ﮐﮯ ﺫﺭﯾﻌﮯ ﺳﮯ ﮐﺒﮭﯽ ﻃﮩﺎﺭﺕ ﺍﻭﺭ ﭘﺎﮐﯽ ﺣﺎﺻﻞ ﻧﮩﯿﮟ ﮐﯽ ﺟﺎﺳﮑﺘﯽ۔ﺍﺳﯽ ﻃﺮﺡ ﺳﮯ ﻻﺩﯾﻨﯽ ﺍﻭﺭﻣﻐﺮﺑﯽ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﮐﮯ ﺫﺭﯾﻌﮯ ﺳﮯ ﮐﺒﮭﯽ ﺍﺳﻼﻡ ﻏﺎﻟﺐ ﻧﮩﯿﮟ ﺁﺳﮑﺘﺎ۔۔۔۔ﺩﻧﯿﺎ ﻣﯿﮟ ﺟﺐ ﺑﮭﯽ ﺍﺳﻼﻡ ﻏﺎﻟﺐ ﮨﻮﮔﺎ ﺗﻮ ﺍﺱ ﮐﺎﻭﺍﺣﺪ ﺭﺍﺳﺘﮧ ﻭﮨﯽ ﮨﮯ۔۔۔ﺟﻮﺭﺍﺳﺘﮧ ﺍﻟﻠﮧ ﮐﮯ ﻧﺒﯽ ﺣﻀﺮﺕ ﻣﺤﻤﺪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﮧ ﻋﻠﻴﮧ ﻭﺳﻠﻢ ﻧﮯ ﺍﺧﺘﯿﺎﺭ ﮐﯿﺎ ﺗﮭﺎ۔۔۔۔ﺍﻭﺭ ﻭﮦ ﺟﮩﺎﺩﮐﺎﺭﺳﺘﮧ ﮨﮯ ﮐﮧ ﺟﺲ ﮐﮯ ﺫﺭﯾﻌﮯﺳﮯ ﺍﺱ ﺩﻧﯿﺎ ﻣﯿﮟ ﺍﻟﻠﮧ ﺗﺒﺎﺭﮎ ﻭ ﺗﻌﺎﻟﯽٰ ﮐﺎ ﺩﯾﻦ ﻏﺎﻟﺐ ﮨﻮﮔﺎ۔
‘যেমন পেশাবের দ্বারা কখনো অজু হয় না এবং নাপাকের দ্বারা কখনো পবিত্রতা অর্জন হয় না, তেমন ধর্মহীনতা ও পশ্চিমা গণতন্ত্রের মাধ্যমে কখনো ইসলামের বিজয় আসতে পারে না। পৃথিবীতে ইসলামের বিজয় অর্জনের একটিই উপায়, যে উপায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গ্রহণ করেছেন। আর সেটা হলো জিহাদের রাস্তা, যার মাধ্যমে এ পৃথিবীতে আল্লাহর দ্বীন বিজয়ী হবে।’ (মাসিক সানাবিল, করাচি : ৮/৩৩, সংখ্যা: ১১-ই মে, ২০১৩ ইং)
১০. মুফতি তাকি উসমানি হাফি. বলেন :
ﻣﻐﺮﺑﯽ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﺟﺴﮑﯽ ﺑﻨﯿﺎﺩ " ﻋﻮﺍﻡ ﮐﯽ ﺣﮑﻤﺮﺍﻧﯽ " ﮐﮯ ﺗﺼﻮﺭ ﭘﺮ ﮨﮯ ، ﺍﺳﻼﻡ ﮐﮯ ﻗﻄﻌﯽ ﺧﻼﻑ ﮨﮯ ، ﮐﯿﻮﻧﮑﮧ ﺍﺳﻼﻡ ﮐﯽ ﺑﻨﯿﺎﺩ " ﺍﻟﻠﻪ ﮐﯽ ﺣﺎﮐﻤﯿﺖ ﺍﻋﻠﯽ " ﮐﮯ ﻋﻘﯿﺪﮮ ﭘﺮ ﮨﮯﺟﺴﮯ ﻗﺮﺁﻥ ﮐﺮﯾﻢ ﻧﮯ " ﺇﻥ ﺍﻟﺤﻜﻢ ﺇﻻ ﻟﻠﻪ " ﮐﮯ ﻣﺨﺘﺼﺮ ﺟﻤﻠﮯ ﻣﯿﮟ ﺍﺭﺷﺎﺩ ﻓﺮﻣﺎﯾﺎﮨﮯ ، ﻟﮩﺬﺍ ﻣﻐﺮﺑﯽ ﺟﻤﮩﻮﺭﯾﺖ ﮐﻮ ﺍﭘﻨﮯ ﺗﻤﺎﻡ ﺗﺼﻮﺭﺍﺕ ﮐﮯ ﺳﺎﺗﮫ ﺑﺮﺣﻖ ﺳﻤﺠﻬﻨﺎ ﻋﺼﺮ ﺣﺎﺿﺮ ﮐﯽ ﺑﺪﺗﺮﯾﻦ ﮔﻤﺮﺍﮨﯿﻮﮞ ﻣﯿﮟ ﺳﮯ ﮨﮯ .
‘পশ্চিমা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, যার ভিত্তি জনগণের শাসনক্ষমতার চেতনার ওপর, তা সুনিশ্চিতভাবে ইসলাম পরিপন্থী। কেননা, ইসলামের ভিত্তি হলো “আল্লাহ সর্বোচ্চ ক্ষমতার মালিক” এ বিশ্বাসের ওপর। কুরআন মাজিদে যা সংক্ষেপে ﺇﻥ ﺍﻟﺤﻜﻢ ﺇﻻ ﻟﻠﻪ তথা “শাসনক্ষমতা একমাত্র আল্লাহর-ই জন্য” বলে ইরশাদ হয়েছে। সুতরাং সার্বিক বিবেচনায় পশ্চিমা গণতন্ত্রকে হক মনে করা বর্তমান যুগের জঘন্যতম ভ্রান্তিগুলোর অন্যতম।’ (ফাতাওয়ায়ে উসমানি : ৩/৫০৭, প্রকাশনী : মাকতাবা মাআরিফুল কুরআন, করাচি)
এছাড়াও আর অসংখ্য আলিমের ফতোয়া আছে, যা পরিষ্কারভাবে সাব্যস্ত করে যে, গণতন্ত্র হলো সুস্পষ্ট ইসলামবিরোধী ও কুফরি একটি মতবাদ। অতএব এ ব্যবস্থার অধীনে পরিচালিত শাসন্যব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে কুফরি শাসনব্যবস্থা বলেই বিবেচিত হবে। আর ইতিপূর্বে আমরা আলোচনা করে এসেছি যে, কোনো রাষ্ট্রে যদি কুফরি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত থাকে, তাহলে অধিকাংশ ফকিহদের মতানুসারে সেটা 'দারুল হারব' হবে; যদিও তার অধিকাংশ নাগরিক মুসলিম হোক। সুতরাং এর ভিত্তিতে বর্তমানের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর বিধান বুঝাটাও আমাদের জন্য সহজ হয়ে গেল।
আল্লামা আব্দুল কাদির বিন আব্দুল আজিজ রহ. ‘দারুল হারব’-এর একটি প্রকার আলোচনা করতে গিয়ে বলেন :
ﺩﺍﺭ ﺍﻟــﺮﺩﺓ : ﻭﻫﻰ ﻓﺮﻉ ﻣﻦ ﺩﺍﺭ ﺍﻟﻜﻔﺮ ﺍﻟﻄﺎﺭﻱﺀ، ﻭﻫﻰ ﺍﻟﺘﻲ ﻛﺎﻧﺖ ﺩﺍﺭ ﺇﺳــﻼﻡ ﻓﻲ ﻭﻗــﺖٍ ﻣﺎ ﺛﻢ ﺗﻐﻠّــﺐ ﻋﻠﻴﻬﺎ ﺍﻟﻤــﺮﺗﺪﻭﻥ ﻭﺃﺟﺮﻭﺍ ﻓﻴﻬﺎ ﺃﺣﻜﺎﻡ ﺍﻟﻜﻔﺎﺭ، ﻣﺜﻞ ﺍﻟﺪﻭﻝ ﺍﻟﻤﺴﻤﺎﺓ ﺍﻟﻴﻮﻡ ﺑﺎﻹﺳﻼﻣﻴﺔ
‘“দারুর রিদ্দা”। এটা বস্তুত "তারি দারুল কুফর"-এরই একটি প্রকার ও শাখা। এটা ওই দেশ, যা কোনো এক সময় “দারুল ইসলাম” ছিল। অতঃপর মুরতাদরা (যারা বংশসূত্রে মুসলিম হলেও পরে নানা কুফরি কর্মকাণ্ড করায় প্রকৃত অর্থে কাফির) তা জবরদখল করে সেখানে কাফিরদের আইনকানুন চালু করেছে। যেমন : বর্তমানের নামসর্বস্ব ইসলামি রাষ্ট্রগুলো।' (আল-জামিউ ফি তালাবিল ইলম : ২/৬৪৫, প্রকাশ, দ্বিতীয় মুদ্রণ)
এ থেকে বুঝা যায়, বর্তমানে আমরা যেসব গণতান্ত্রিক দেশকে মুসলিম দেশ বলে থাকি, সেগুলো শরয়ি দৃষ্টিতে ‘দারুর হারব’-এর অন্তর্ভুক্ত। এসব দেশকে শরয়ি পরিভাষায় ‘দারুর রিদ্দা’ বলা হবে, যা মূলত ‘দারুর হারব’-এরই একটি প্রকার। মুসলিম দেশ বলা হয় তার নাগরিকদের দিকে লক্ষ করে। কেননা, এসব দেশের অধিকাংশ নাগরিক মুসলিম। তাই এ ধরনের দেশকে মুসলিম দেশ বলা যাবে, কিন্তু ইসলামি দেশ বলা যাবে না।
উল্লেখ্য যে, গণতন্ত্র কুফরি মতবাদ হলেও সাধারণ নাগরিক যারা এ ব্যাপারে ইসলামের বিধান না জানায় অজ্ঞাতসারে গণতান্ত্রিক সিস্টেমে ভোট দেয়, এ ব্যবস্থাকে সাপোর্ট করে, জীবনকে এ পথেই পরিচালিত করে, অন্যদিকে আবার সে ইসলামের বাহ্যিক কিছু ইবাদতও পালন করে, তাদের নির্দিষ্ট কাউকে শুধু গণতন্ত্র চর্চার কারণে কাফির বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা, কুফর ও তাকফির (কাফির বলা) এক জিনিস নয়। কারও মধ্যে নিশ্চিত কুফর থাকা সত্ত্বেও মাওয়ানিউত তাকফির (কাফির বলার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক কারণসমূহ) হতে কোনো একটি থাকলে তাকে আর কাফির অভিধায় অভিহিত করা যায় না। এ ব্যাপারে ‘তাকফিরের মূলনীতি’ নামে আমাদের একটি বই আছে, যাতে এ ব্যাপারে বিশদ আলোচনা রয়েছে। তবে যারা গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠাতা, রক্ষাকর্তা ও ধারকবাহক, তাদের বিধান ভিন্ন। এ ব্যাপারে আমাদের অন্যান্য আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য এটা যে, আমরা যেন কুফর ও তাকফিরকে এক না ভেবে বসি। উভয়ের মাঝে অনেক পার্থক্য আছে। মোটকথা, গণতান্ত্রিক দেশগুলো যে কুফরি ব্যবস্থায় পরিচালিত, যার ভিত্তিতে দেশগুলো ‘দারুল হারব’-এর অন্তর্গত, তা বুঝানোই আমাদের উদ্দেশ্য। এর অতিরিক্ত গণতন্ত্রে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে কারা কাফির, আর কারা কাফির নয়, তা আমাদের এ আলোচনার অন্তর্গত নয়। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক বিষয় সঠিকভাবে বুঝার তাওফিক দান করুন এবং সদাসর্বদা হক ও ন্যায়ের ওপর অটল রাখুন। আমীন
------------------------------------------------------------------
দারুল ইসলাম ও দারুল হারব : প্রামাণ্য পর্যালোচনা [প্রথম পর্ব]
https://dawahilallah.com/showthread....A7%8D%E0%A6%AC
দারুল ইসলাম ও দারুল হারব :-প্রামাণ্য পর্যালোচনা। [দ্বিতীয় পর্ব]
https://dawahilallah.com/showthread....B%26%232476%3B
দারুল ইসলাম ও দারুল হারব :-প্রামাণ্য পর্যালোচনা। [দ্বিতীয় পর্ব]
https://dawahilallah.com/showthread....B%26%232476%3B
Comment