"এ যুগ হল ফেতনার যুগ"। খাওয়াছ ও আওয়ামদের লাযেমি এক বক্তব্য। আওয়ামদের নিয়ে আর কী বলবো? যুগের আহবার ও রুহবানরা এদেরকে যা শিখিয়ে দেয়, এরা তোতাপাখির মতো তাই আওড়াতে থাকে। দ্বীন বিক্রেতারা এ-সব জাহেল আওয়ামদেরকে "হুয়া মিন ইনদিল্লাহ" বলে যা মাথায় ঢুকিয়ে দেয়, এরাও কোন বাছবিছার না করে গদগদ করে অনায়াসে তা গিলতে শুরু করে। হাজারে হয়তো এমন একজনও আম-পাবলিক পাওয়া যাবে না, যার ভাগ্যে "তারতীলে কুরআন" মুসলিম দাবিদার সত্ত্বেও নসীব হয়েছে ; সেখানে তাদাব্বুরে কুরআন তো 'বহুত দূরের কথা'!
যে কুরআনে হাকিমকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আওয়াম ও খাওয়াছের হেদায়তের জন্য ভরপুর নসীহা ও চমৎকার তাফসীলের সাথে দুনিয়ার বুকে অবতারণ করেছেন, এরা কুরআনের 'বা' থেকে 'সীন' পর্যন্ত তাদাব্বুর ও তাফাক্কুরের দায়িত্বকেও আলেমদের হাতে তুলে দিয়ে নিজেদের ঈমান ও হিদায়াতের নিশ্চিত কামিয়াবির ব্যপারে পুরোদমে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে রয়েছে। খাওয়াছ ও আওয়ামদের এমন কর্মকীর্তি দেখে যালেম ইয়াহুদ ও নাসারাদের কাহিনীই মনে পড়ে গেল, যা কুরআনের ভাষায়,
এখন ফেতনার যুগ। তো হযরত! এখন আমাদের কী করণীয়? হযরতদের প্রদত্ব এ প্রশ্নের উত্তর বেশ চমকপ্রদ! কারণ, আপনি যখন তাঁদের কাছে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাবেন, তখন কেউ বলবে, 'ফেতনা থেকে বাঁচতে হলে আমাদের বেশি বেশি দোয়া করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই! কেউ বলবে, আমাদের আমলের কারণেই এসব হচ্ছে। অতএব, নিজেদের ইসলাহ ও আত্মশুদ্ধি ছাড়া এ থেকে বাঁচা অসম্ভব! আর কেউ বলবে, এ ফেতনা থেকে বাঁচতে হলে বেশি বেশি করে ইলমে দ্বীন প্রচার-প্রসার করতে হবে। কেউ বলবে, আমাদের উচিত বেশি বেশি দাওয়াত দেওয়া'।
এ-সব আমি শিরোনামগতভাবে উদ্ধৃত করলাম। না হয় দ্বীনের এ-সব ধারক-বাহকরা যে চমকপ্রদ ভঙ্গিতে এ-সব বিষয়বস্তু আলোচনা করে, তাতে একে সত্য ও কুরআন-সুন্নাহ প্রদত্ত করণীয় হিসেবে বিশ্বাস না করে কোনো উপায় থাকে না। ঠিক আহবারে ইয়াহুদ ও রুহবানে নাসারার বিকৃত অনুসরণ, কুরআন যা আমাদের জানিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ বলেন,
কিন্তু এরা কি কিতাব পাঠ করে না? হাদীসে নববী খুলে দেখেনা যে, কিতাব ও কিতাবের শিক্ষাদাতা এ যুগের করণীয় সম্পর্কে কী বাতলে গেছেন? নাকি তাদের বিশ্বাস এমন যে, রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো ফেতনা ও ফেতনার ভবিষ্যদ্বাণী সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তার করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে উম্মতকে সজাগ করে যান নি। মায়াযাল্লাহ!!! হযরত আকদাস সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ থেকে অনেক অনেক মুক্ত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, 'ফেতনার যুগে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যে আল্লাহর শত্রুদের পশ্চাতে অশ্বের লাগাম টেনে অবস্থান নেয়। সেও আল্লাহর শত্রুদের আতঙ্কিত করে তুলে, তারাও তাঁকে শঙ্কিত করে তুলে। অথবা ফেতনার যুগে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যে নিভৃতে মরুপ্রান্তরে অবস্থান করে নিজের উপর আল্লাহর অর্পিত দায়িত্বসমূহ আদায় করে যায়'। —(সহীহু ইবনে হিব্বান, সুনানে তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, নাসায়ী)
এ হাদীসে উভয় শ্রেণীকেই শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। অন্য হাদীসে প্রথমে মুজাহিদকে শ্রেষ্ঠ এবং নিভৃতচারীকে পরবর্তী পর্যায়ের উত্তম বলা হয়েছে। যেমন সহিহ বুখারীর বর্ণনা, 'এক লোক রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, শ্রেষ্ঠ কে? তিনি বললেন, যে মুমিন আল্লাহর রাহে স্বীয় জান-মাল দিয়ে লড়াই করে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, অতঃপর কে? তিনি বললেন, যে অজানা পর্বতকন্দরে অবস্থান করে। তাকওয়া অবলম্বন করে লোকদেরকে অনিষ্টসাধন থেকে দূরে রাখে'।
কী বুঝলেন, ফেতনা থেকে হেফাজত থাকতে রাসূল প্রথমে জিহাদের প্রতি উম্মতকে উদ্বুদ্ধ করে গেছেন। কারণ, বিরানবাসীরা তো নিজেকে ফেতনা থেকে হেফাজতে রাখে। কিন্তু মুজাহিদ ফি সাবিলিল্লাহ শুধু নিজেকে নয়, বরং উম্মাহর আগে আগে থেকে ফেতনাকে সে পিটিয়ে বেড়ায়। এমনকি হয়তো শেষ পর্যন্ত ফেতনার টুটি চেপে ধরে তাকে নাস্তানাবুদ করে দেয়, নয়তো উম্মাহকে ফেতনার কালো হাত থেকে রক্ষা করার জন্য স্বীয় জানশুদ্ধ কোরবান করে জামে শাহাদাত পান করে নেয়। কিন্তু উম্মাহর গায়ে ফেতনার সামান্য আঁচড় লাগুক এটা তাঁর সহ্য হয় না! সুবহানাল্লাহ! ফেদায়ে দ্বীনের এই নমুনা আর কোনো জাতিগোষ্ঠীর মাঝে আছে কি? "উলায়িকা ইয়াতালাব্বাতুনা ফির গুরফিল উলা মিনাল জান্নাহ, ইয়াদহাকু ইলাইহিম রাব্বুক!!!"—(আহমদ)
ফেতনার শিকড় কর্তনে এমন জানবাজিকে কেন যে কিছু লোক বিস্মৃত হয়ে থাকে তা খোদায়ে আলীমই ভাল জানেন!
বিগত হাদীসদ্বয়ে ফিতনার যুগে জিহাদের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণিত হয়েছে। তবে সরাসরি নির্দেশ সম্বলিত কোনো বাক্য বা শব্দ নেই। এবার দুএকটি হাদীস উল্লেখ করছি, যেখানে রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সরাসরি জিহাদের কাফেলায় শামিল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সওবান রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'যখন তোমরা দেখবে, খোরাসানের ভূমি থেকে কালোপতাকাবাহী দলের আত্মপ্রকাশ করেছে, তখন তাতে শামেল হয়ে যাও ; যদিও (হিজরতের পুরো পথ) হামাগুড়ি দিয়ে আসতে হয়। কেননা, এতে আল্লাহর খলীফা মাহদি —আলাইহিস সালাম— বিদ্যমান'। —(মুসতাদরাক লিল হাকেম)
ইবনে হাওয়ালা রাযিয়াল্লাহু আনহুর মাশহুর হাদীস মুসনাদে আহমাদ ও আবু দাউদের বর্ণনায়, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, 'শীঘ্র পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গড়াবে যে, তোমরা কয়েকটি সম্মিলিত সেনাদলে পরিণত হবে। এর একটি শাখা হবে শামে, আরেকটি শাখা হবে ইরাকে এবং অন্য একটি শাখা হবে ইয়ামেনে। ইবনে হাওয়ালা রাযিয়াল্লাহু আনহু আরজ করলেন, আমি যদি সে পরিস্থিতি পেয়ে যাই, তবে কোনদলে শামেল হবো আপনি নির্ধারণ করে দিন না ইয়া রাসুলুল্লাহ! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি শামের সেনাদলকে আঁকড়ে ধরবে। কেননা, এটি আল্লাহর কাছে ভূপৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠশহর। আল্লাহ তজ্জন্যে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ বান্দাদের নির্বাচন করেছেন। তবে তোমাদের যদি এতে দ্বিমত থাকে, তবে তোমরা অবশ্যই ইয়ামেনের সেনাদলে যোগ দেবে এবং ইয়ামেনের কুপসমূহের পানি পান করবে। কেননা, আল্লাহ আমার জন্যে শাম ও শামবাসীদের জামিন হয়েছেন'।
ইয়া রাসুলুল্লাহ, শেষ যুগে কী করবো? খোরাসানের বাহিনীতে শামেল হবে। ফেতনার যুগে কী করবো? শামের সেনাদলে, ইরাকের সেনাদলে, ইয়েমেনের সেনাদলে যোগ দেবে। ফেতনা থেকে বাঁচতে জিহাদ করবে। ঈমানের হেফাজতে কিতাল করবে। ইবনে হাওয়ালা রাযিয়াল্লাহু আনহুর প্রশ্নতে সবাই একটু নজর দিন, তাঁর আরজি কেমন ছিল? ইয়া রাসুলুল্লাহ! দল তো অনেক হবে, কিন্তু আমি কী করবো বা জিহাদ ছাড়া অন্যকোনো উপায় বলে দিন— এমন আরজি কি তিনি করেছেন? না। অসম্ভব! এমন প্রশ্ন-আকুতি তো একমাত্র মুনাফেকদের কুৎসিত অন্তরেই শোভা পায়। একজন মুখলেস মুমিন তো জিহাদের প্রশ্নে একপায়ে খাঁড়া! এমন কুচিন্তা রাসূলের সত্যিকার সহযাত্রীদের মস্তিষ্কে ঢুকতেই পারে না। কারণ, কুরআনে হাকিম তাঁদের মাথায় এ বাস্তবতা ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, ফেতনার পোস্টমর্টেমে তোমরা জিহাদ ব্যতিরেকে আবার কিসের চিন্তা করছো! এই শয়তানিয়্যাতের একমাত্র ঔষধ হল জিহাদ। তাই তিনি এটাই বলেছেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! জিহাদ ছাড়া তো আমরা অন্যকোনো কল্পকাহিনির চিন্তাও করি না। কিন্তু কোন সেনাদলে যোগ দেবো এ বিষয়টাই আমরা আপনার দরবারে জানার আশা রাখি।
শেষ যুগে ও ফিতনার যুগের যুগান্তকারী ও চূড়ান্ত কেন্দ্রবিন্দু কী? মাহদী ও দাজ্জাল। তাই না? আল্লাহর ওয়াহদানিয়্যাতের প্রবক্তারা মাহদী (আ.) থেকে ইস্তেফাদা করার জন্য তার কাফেলায় যোগ দেবে। আর দাজ্জালের ওয়াহদানিয়্যাতের প্রবক্তারা তার শয়তানিয়্যাত গলাধঃকরণ করতে তার বাহিনীতে শামেল হবে । প্রশ্ন হল, ফেতনার যুগে সে মাহদীর দলে আমরা কিভাবে শামেল হবো? এ প্রশ্নের উত্তরে এ উম্মতের গণক ও জ্যোতিষীরা গণনা করে বলবে, "দোয়া করো। আল্লাহ চাইলে ইমাম মাহদীর আগমন ঘটলে আমরাই সবার আগে তার হাতে বাইয়াত নেবো"।
কিন্তু পয়গম্বরে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী ইরশাদ করেছেন? ঈমাম মাহদী (আ.) র আত্মপ্রকাশ ঘটলে তখন গিয়ে তার সাথে যোগ দিতে বলেছেন না তাঁর আত্মপ্রকাশের পূর্বেই তার দলে শামেল হয়ে যেতে বলেছেন? অট্টালিকা আর খানকাসমূহে হাতে চুরি লাগিয়ে দোয়ায় মশগুল থাকতে বলেছেন নাকি জন্মস্থান ছেড়ে গিরিকন্দরে হামাগুড়ি দিয়ে খোরাসানের বাহিনীতে যোগ দিতে বলেছেন?
আমি স্পষ্ট ভাষায় বলছি, এরা হল যুগের আহবারে ইয়াহুদ ও রুহবানে নাসারা, যাদের একেকজন একেক স্থানে ঘাঁটি গেড়ে আল্লাহর রাসূলের মাসুম উম্মতকে —ইমাম রাযীর ভাষায়— পথভ্রষ্ঠ আহলে কিতাবদের মতো গোমরাহ করে যাচ্ছে। —(তাফসিরে কবির, 'ওয়া লা তাকুনু কাল্লাযিনা তাফাররাকু...') অন্যথায়, ফেতনার যুগ সম্পর্কে রাসূলের এমন পবিত্র নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তারা তা বলে না কেন? ফেতনার যুগে করণীয় সম্পর্কে আল্লাহর নবীর এসব নির্দেশনা তারা উম্মাহকে জানায় না কেন? বাস্তবতা হল, কিতমানে ইলম যাদের আজন্ম অভ্যাস, তাদের কাছে খায়র ও হেদায়াতের কিইবা মূল্য আছে! দ্বীনের খাতিরে কোরবানি উঠানোর পরিবর্তে যাদের কাছে পেট ও পিঠের ধান্ধাই বেশি মনজুর, এমন ধান্ধাবাজদের কাছে আখেরাতের কিইবা ভয় আছে! বুঝে নাও, আল্লাহ এদের অন্তরেই মহর মেরে দিয়েছেন। ফলে কোনটা হেদায়ত আর কোনটা গোমরাহি তা তদের মাথাতেই ধরে না।
হাদীস বিশারদ ইমাম তিরমিজি কা'ব বিন উজরা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'সত্বরই আমার পর কিছু শাসকের আবির্ভাব ঘটবে। যে তাদের কাছে যাবে, তাদেরকে তাদের মিথ্যার ব্যপারে সত্যায়ন করবে এবং তাদের জুলুমের ব্যাপারে সহায়তা করবে, সে আমার নয় এবং আমিও তার নই। তদুপরি আমার হাওজে কাউসারের পানি পান করার সুযোগও তার হবে না। আর যে তাদের কাছে যাবে না, তাদেরকে তাদের মিথ্যার ব্যপারে সত্যায়ন করবে না এবং তাদের জুলুমের ব্যপারে সহায়তা করবে না, সে আমার এবং আমিও তার। তদুপরি সে আমার হাওজে কাওসারের পানি পান করবে'। —(সুনানে তিরমিজি)
ওরাছাতে আম্বিরা দাবিদারদের একটাকেও দেখলাম না, ফেতনার যুগের এ বর্জনীয়কে পূঙ্খানুপুঙ্খ নিজেদের আমলে পরিণত করতে! অন্যদের এ শিক্ষার তালীম দিতে। এরাই সেই খাওয়াছ, যারা করণীয়কে বর্জনীয় আর বর্জনীয়কে করণীয় স্থির করে ইতোপূর্বে নিজেরা-ও গোমরাহ হয়েছে এবং আরো হাজারো মানুষকে প্রতিনিয়ত গোমরাহ করে যাচ্ছে। এর চেয়ে বড় ফেতনা আর কী যে, কতক নিজেদেরকে ওয়ারিছুল আম্বিয়া দাবি করে, কিন্তু শয়তানিয়্যাত ছাড়া নিজেদের মস্তিষ্কে আর কিছুই ধারণ করে না!
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, 'আম্বিয়ায়ে কেরাম দীনার ও দেরহাম মিরাছ দেন না'। —(সহিহ ইবনে হিব্বান, তিরমিজি) তাহলে আজ আমরা যাদেরকে নিজ চোখে দেখছি যে, এরা দীনার ও দেরহাম ভরে ভরে নিচ্ছে, এই স্বল্পমূল্যের জন্য নিজের দ্বীনকেই গড়গড় করে উগরিয়ে দিচ্ছে, কিভাবে বলবো যে, এরাই সেই ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদের প্রশংসা মনখুলে করতেন? (ওহে রাসূল! আপনার জন্য আমার পিতামাতা কোরবান হোক!!!)
আজ এ সমাজ এমন ওয়ারাছাতুল আম্বিয়াকে চায় যারা মানুষকে নয়, মানুষের খালেককে ভয় করবে। যারা দীনার-দেরহাম নয়, ইলমে ইলাহীর ওয়ারেছ বলবে। যারা 'হুব্বুদ দুনিয়া' নয়, 'খওফে আখেরাত' বহন করবে। যারা 'কারাহিয়াতুল মাউত' নয়, 'যওকে শাহাদাত' বয়ে বেড়াবে। সুদিন আসবে, ফেতনার অবসান হবে এবং একদিন ইনশাআল্লাহ ভূপৃষ্ঠের আনাচে-কানাচে বিধান একমাত্র আল্লাহর-ই চলবে!!!
যে কুরআনে হাকিমকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আওয়াম ও খাওয়াছের হেদায়তের জন্য ভরপুর নসীহা ও চমৎকার তাফসীলের সাথে দুনিয়ার বুকে অবতারণ করেছেন, এরা কুরআনের 'বা' থেকে 'সীন' পর্যন্ত তাদাব্বুর ও তাফাক্কুরের দায়িত্বকেও আলেমদের হাতে তুলে দিয়ে নিজেদের ঈমান ও হিদায়াতের নিশ্চিত কামিয়াবির ব্যপারে পুরোদমে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে রয়েছে। খাওয়াছ ও আওয়ামদের এমন কর্মকীর্তি দেখে যালেম ইয়াহুদ ও নাসারাদের কাহিনীই মনে পড়ে গেল, যা কুরআনের ভাষায়,
و منهم أميُّون لا يعلمون الكتاب إلا أماني و إن هم إلا يظنُّون
"তাদের কতক অজ্ঞ-নিরক্ষর, নিছক কিছু আশা-আকাঙ্ক্ষা ছাড়া যারা ধর্মগ্রন্থের আর কোনো খবরই রাখে না। আন্দাজ-অনুমান ছাড়া এদের আর কিছুই নেই"। —(বাকারা ; ৭৮) এখন ফেতনার যুগ। তো হযরত! এখন আমাদের কী করণীয়? হযরতদের প্রদত্ব এ প্রশ্নের উত্তর বেশ চমকপ্রদ! কারণ, আপনি যখন তাঁদের কাছে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাবেন, তখন কেউ বলবে, 'ফেতনা থেকে বাঁচতে হলে আমাদের বেশি বেশি দোয়া করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই! কেউ বলবে, আমাদের আমলের কারণেই এসব হচ্ছে। অতএব, নিজেদের ইসলাহ ও আত্মশুদ্ধি ছাড়া এ থেকে বাঁচা অসম্ভব! আর কেউ বলবে, এ ফেতনা থেকে বাঁচতে হলে বেশি বেশি করে ইলমে দ্বীন প্রচার-প্রসার করতে হবে। কেউ বলবে, আমাদের উচিত বেশি বেশি দাওয়াত দেওয়া'।
এ-সব আমি শিরোনামগতভাবে উদ্ধৃত করলাম। না হয় দ্বীনের এ-সব ধারক-বাহকরা যে চমকপ্রদ ভঙ্গিতে এ-সব বিষয়বস্তু আলোচনা করে, তাতে একে সত্য ও কুরআন-সুন্নাহ প্রদত্ত করণীয় হিসেবে বিশ্বাস না করে কোনো উপায় থাকে না। ঠিক আহবারে ইয়াহুদ ও রুহবানে নাসারার বিকৃত অনুসরণ, কুরআন যা আমাদের জানিয়ে দিয়েছে। আল্লাহ বলেন,
و إن منهم لفريقا يلوُون ألسنتهم بالكتاب لتحسبوه من الكتاب وما هو من الكتاب ، و يقولون هو من عند الله و ما هو من عند الله ، و يقولون على الله الكذب و هم يعلمون
" আর নিঃসন্দেহে তাদের একদল এমন আছে, যারা মুখ বাঁকিয়ে( চরম কণ্ঠস্বর ও চিত্তাকর্ষক উচ্চারণশৈলি) কিতাব পাঠ করে, যাতে তোমরা একে কিতাবের অংশ বলে বিশ্বাস করে নাও। অথচ তা কিতাবের অংশ নয়। আরও বলে, এসব আল্লাহরই কথা। অথচ তা আল্লাহর প্রেরিত নয়। কিন্তু এরা জেনেশুনে আল্লাহর বিরুদ্ধে মিথ্যে বলছে"। কিন্তু এরা কি কিতাব পাঠ করে না? হাদীসে নববী খুলে দেখেনা যে, কিতাব ও কিতাবের শিক্ষাদাতা এ যুগের করণীয় সম্পর্কে কী বাতলে গেছেন? নাকি তাদের বিশ্বাস এমন যে, রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তো ফেতনা ও ফেতনার ভবিষ্যদ্বাণী সবিস্তারে বর্ণনা করেছেন, কিন্তু তার করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে উম্মতকে সজাগ করে যান নি। মায়াযাল্লাহ!!! হযরত আকদাস সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ থেকে অনেক অনেক মুক্ত।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, 'ফেতনার যুগে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যে আল্লাহর শত্রুদের পশ্চাতে অশ্বের লাগাম টেনে অবস্থান নেয়। সেও আল্লাহর শত্রুদের আতঙ্কিত করে তুলে, তারাও তাঁকে শঙ্কিত করে তুলে। অথবা ফেতনার যুগে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে, যে নিভৃতে মরুপ্রান্তরে অবস্থান করে নিজের উপর আল্লাহর অর্পিত দায়িত্বসমূহ আদায় করে যায়'। —(সহীহু ইবনে হিব্বান, সুনানে তিরমিজি, মুসনাদে আহমাদ, নাসায়ী)
এ হাদীসে উভয় শ্রেণীকেই শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। অন্য হাদীসে প্রথমে মুজাহিদকে শ্রেষ্ঠ এবং নিভৃতচারীকে পরবর্তী পর্যায়ের উত্তম বলা হয়েছে। যেমন সহিহ বুখারীর বর্ণনা, 'এক লোক রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করল, শ্রেষ্ঠ কে? তিনি বললেন, যে মুমিন আল্লাহর রাহে স্বীয় জান-মাল দিয়ে লড়াই করে। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, অতঃপর কে? তিনি বললেন, যে অজানা পর্বতকন্দরে অবস্থান করে। তাকওয়া অবলম্বন করে লোকদেরকে অনিষ্টসাধন থেকে দূরে রাখে'।
কী বুঝলেন, ফেতনা থেকে হেফাজত থাকতে রাসূল প্রথমে জিহাদের প্রতি উম্মতকে উদ্বুদ্ধ করে গেছেন। কারণ, বিরানবাসীরা তো নিজেকে ফেতনা থেকে হেফাজতে রাখে। কিন্তু মুজাহিদ ফি সাবিলিল্লাহ শুধু নিজেকে নয়, বরং উম্মাহর আগে আগে থেকে ফেতনাকে সে পিটিয়ে বেড়ায়। এমনকি হয়তো শেষ পর্যন্ত ফেতনার টুটি চেপে ধরে তাকে নাস্তানাবুদ করে দেয়, নয়তো উম্মাহকে ফেতনার কালো হাত থেকে রক্ষা করার জন্য স্বীয় জানশুদ্ধ কোরবান করে জামে শাহাদাত পান করে নেয়। কিন্তু উম্মাহর গায়ে ফেতনার সামান্য আঁচড় লাগুক এটা তাঁর সহ্য হয় না! সুবহানাল্লাহ! ফেদায়ে দ্বীনের এই নমুনা আর কোনো জাতিগোষ্ঠীর মাঝে আছে কি? "উলায়িকা ইয়াতালাব্বাতুনা ফির গুরফিল উলা মিনাল জান্নাহ, ইয়াদহাকু ইলাইহিম রাব্বুক!!!"—(আহমদ)
ফেতনার শিকড় কর্তনে এমন জানবাজিকে কেন যে কিছু লোক বিস্মৃত হয়ে থাকে তা খোদায়ে আলীমই ভাল জানেন!
বিগত হাদীসদ্বয়ে ফিতনার যুগে জিহাদের শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণিত হয়েছে। তবে সরাসরি নির্দেশ সম্বলিত কোনো বাক্য বা শব্দ নেই। এবার দুএকটি হাদীস উল্লেখ করছি, যেখানে রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সরাসরি জিহাদের কাফেলায় শামিল হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সওবান রাযিয়াল্লাহু আনহু বলেন, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'যখন তোমরা দেখবে, খোরাসানের ভূমি থেকে কালোপতাকাবাহী দলের আত্মপ্রকাশ করেছে, তখন তাতে শামেল হয়ে যাও ; যদিও (হিজরতের পুরো পথ) হামাগুড়ি দিয়ে আসতে হয়। কেননা, এতে আল্লাহর খলীফা মাহদি —আলাইহিস সালাম— বিদ্যমান'। —(মুসতাদরাক লিল হাকেম)
ইবনে হাওয়ালা রাযিয়াল্লাহু আনহুর মাশহুর হাদীস মুসনাদে আহমাদ ও আবু দাউদের বর্ণনায়, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, 'শীঘ্র পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গড়াবে যে, তোমরা কয়েকটি সম্মিলিত সেনাদলে পরিণত হবে। এর একটি শাখা হবে শামে, আরেকটি শাখা হবে ইরাকে এবং অন্য একটি শাখা হবে ইয়ামেনে। ইবনে হাওয়ালা রাযিয়াল্লাহু আনহু আরজ করলেন, আমি যদি সে পরিস্থিতি পেয়ে যাই, তবে কোনদলে শামেল হবো আপনি নির্ধারণ করে দিন না ইয়া রাসুলুল্লাহ! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি শামের সেনাদলকে আঁকড়ে ধরবে। কেননা, এটি আল্লাহর কাছে ভূপৃষ্ঠের শ্রেষ্ঠশহর। আল্লাহ তজ্জন্যে তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ বান্দাদের নির্বাচন করেছেন। তবে তোমাদের যদি এতে দ্বিমত থাকে, তবে তোমরা অবশ্যই ইয়ামেনের সেনাদলে যোগ দেবে এবং ইয়ামেনের কুপসমূহের পানি পান করবে। কেননা, আল্লাহ আমার জন্যে শাম ও শামবাসীদের জামিন হয়েছেন'।
ইয়া রাসুলুল্লাহ, শেষ যুগে কী করবো? খোরাসানের বাহিনীতে শামেল হবে। ফেতনার যুগে কী করবো? শামের সেনাদলে, ইরাকের সেনাদলে, ইয়েমেনের সেনাদলে যোগ দেবে। ফেতনা থেকে বাঁচতে জিহাদ করবে। ঈমানের হেফাজতে কিতাল করবে। ইবনে হাওয়ালা রাযিয়াল্লাহু আনহুর প্রশ্নতে সবাই একটু নজর দিন, তাঁর আরজি কেমন ছিল? ইয়া রাসুলুল্লাহ! দল তো অনেক হবে, কিন্তু আমি কী করবো বা জিহাদ ছাড়া অন্যকোনো উপায় বলে দিন— এমন আরজি কি তিনি করেছেন? না। অসম্ভব! এমন প্রশ্ন-আকুতি তো একমাত্র মুনাফেকদের কুৎসিত অন্তরেই শোভা পায়। একজন মুখলেস মুমিন তো জিহাদের প্রশ্নে একপায়ে খাঁড়া! এমন কুচিন্তা রাসূলের সত্যিকার সহযাত্রীদের মস্তিষ্কে ঢুকতেই পারে না। কারণ, কুরআনে হাকিম তাঁদের মাথায় এ বাস্তবতা ঢুকিয়ে দিয়েছে যে, ফেতনার পোস্টমর্টেমে তোমরা জিহাদ ব্যতিরেকে আবার কিসের চিন্তা করছো! এই শয়তানিয়্যাতের একমাত্র ঔষধ হল জিহাদ। তাই তিনি এটাই বলেছেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! জিহাদ ছাড়া তো আমরা অন্যকোনো কল্পকাহিনির চিন্তাও করি না। কিন্তু কোন সেনাদলে যোগ দেবো এ বিষয়টাই আমরা আপনার দরবারে জানার আশা রাখি।
শেষ যুগে ও ফিতনার যুগের যুগান্তকারী ও চূড়ান্ত কেন্দ্রবিন্দু কী? মাহদী ও দাজ্জাল। তাই না? আল্লাহর ওয়াহদানিয়্যাতের প্রবক্তারা মাহদী (আ.) থেকে ইস্তেফাদা করার জন্য তার কাফেলায় যোগ দেবে। আর দাজ্জালের ওয়াহদানিয়্যাতের প্রবক্তারা তার শয়তানিয়্যাত গলাধঃকরণ করতে তার বাহিনীতে শামেল হবে । প্রশ্ন হল, ফেতনার যুগে সে মাহদীর দলে আমরা কিভাবে শামেল হবো? এ প্রশ্নের উত্তরে এ উম্মতের গণক ও জ্যোতিষীরা গণনা করে বলবে, "দোয়া করো। আল্লাহ চাইলে ইমাম মাহদীর আগমন ঘটলে আমরাই সবার আগে তার হাতে বাইয়াত নেবো"।
কিন্তু পয়গম্বরে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কী ইরশাদ করেছেন? ঈমাম মাহদী (আ.) র আত্মপ্রকাশ ঘটলে তখন গিয়ে তার সাথে যোগ দিতে বলেছেন না তাঁর আত্মপ্রকাশের পূর্বেই তার দলে শামেল হয়ে যেতে বলেছেন? অট্টালিকা আর খানকাসমূহে হাতে চুরি লাগিয়ে দোয়ায় মশগুল থাকতে বলেছেন নাকি জন্মস্থান ছেড়ে গিরিকন্দরে হামাগুড়ি দিয়ে খোরাসানের বাহিনীতে যোগ দিতে বলেছেন?
আমি স্পষ্ট ভাষায় বলছি, এরা হল যুগের আহবারে ইয়াহুদ ও রুহবানে নাসারা, যাদের একেকজন একেক স্থানে ঘাঁটি গেড়ে আল্লাহর রাসূলের মাসুম উম্মতকে —ইমাম রাযীর ভাষায়— পথভ্রষ্ঠ আহলে কিতাবদের মতো গোমরাহ করে যাচ্ছে। —(তাফসিরে কবির, 'ওয়া লা তাকুনু কাল্লাযিনা তাফাররাকু...') অন্যথায়, ফেতনার যুগ সম্পর্কে রাসূলের এমন পবিত্র নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও তারা তা বলে না কেন? ফেতনার যুগে করণীয় সম্পর্কে আল্লাহর নবীর এসব নির্দেশনা তারা উম্মাহকে জানায় না কেন? বাস্তবতা হল, কিতমানে ইলম যাদের আজন্ম অভ্যাস, তাদের কাছে খায়র ও হেদায়াতের কিইবা মূল্য আছে! দ্বীনের খাতিরে কোরবানি উঠানোর পরিবর্তে যাদের কাছে পেট ও পিঠের ধান্ধাই বেশি মনজুর, এমন ধান্ধাবাজদের কাছে আখেরাতের কিইবা ভয় আছে! বুঝে নাও, আল্লাহ এদের অন্তরেই মহর মেরে দিয়েছেন। ফলে কোনটা হেদায়ত আর কোনটা গোমরাহি তা তদের মাথাতেই ধরে না।
হাদীস বিশারদ ইমাম তিরমিজি কা'ব বিন উজরা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, 'সত্বরই আমার পর কিছু শাসকের আবির্ভাব ঘটবে। যে তাদের কাছে যাবে, তাদেরকে তাদের মিথ্যার ব্যপারে সত্যায়ন করবে এবং তাদের জুলুমের ব্যাপারে সহায়তা করবে, সে আমার নয় এবং আমিও তার নই। তদুপরি আমার হাওজে কাউসারের পানি পান করার সুযোগও তার হবে না। আর যে তাদের কাছে যাবে না, তাদেরকে তাদের মিথ্যার ব্যপারে সত্যায়ন করবে না এবং তাদের জুলুমের ব্যপারে সহায়তা করবে না, সে আমার এবং আমিও তার। তদুপরি সে আমার হাওজে কাওসারের পানি পান করবে'। —(সুনানে তিরমিজি)
ওরাছাতে আম্বিরা দাবিদারদের একটাকেও দেখলাম না, ফেতনার যুগের এ বর্জনীয়কে পূঙ্খানুপুঙ্খ নিজেদের আমলে পরিণত করতে! অন্যদের এ শিক্ষার তালীম দিতে। এরাই সেই খাওয়াছ, যারা করণীয়কে বর্জনীয় আর বর্জনীয়কে করণীয় স্থির করে ইতোপূর্বে নিজেরা-ও গোমরাহ হয়েছে এবং আরো হাজারো মানুষকে প্রতিনিয়ত গোমরাহ করে যাচ্ছে। এর চেয়ে বড় ফেতনা আর কী যে, কতক নিজেদেরকে ওয়ারিছুল আম্বিয়া দাবি করে, কিন্তু শয়তানিয়্যাত ছাড়া নিজেদের মস্তিষ্কে আর কিছুই ধারণ করে না!
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, 'আম্বিয়ায়ে কেরাম দীনার ও দেরহাম মিরাছ দেন না'। —(সহিহ ইবনে হিব্বান, তিরমিজি) তাহলে আজ আমরা যাদেরকে নিজ চোখে দেখছি যে, এরা দীনার ও দেরহাম ভরে ভরে নিচ্ছে, এই স্বল্পমূল্যের জন্য নিজের দ্বীনকেই গড়গড় করে উগরিয়ে দিচ্ছে, কিভাবে বলবো যে, এরাই সেই ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদের প্রশংসা মনখুলে করতেন? (ওহে রাসূল! আপনার জন্য আমার পিতামাতা কোরবান হোক!!!)
আজ এ সমাজ এমন ওয়ারাছাতুল আম্বিয়াকে চায় যারা মানুষকে নয়, মানুষের খালেককে ভয় করবে। যারা দীনার-দেরহাম নয়, ইলমে ইলাহীর ওয়ারেছ বলবে। যারা 'হুব্বুদ দুনিয়া' নয়, 'খওফে আখেরাত' বহন করবে। যারা 'কারাহিয়াতুল মাউত' নয়, 'যওকে শাহাদাত' বয়ে বেড়াবে। সুদিন আসবে, ফেতনার অবসান হবে এবং একদিন ইনশাআল্লাহ ভূপৃষ্ঠের আনাচে-কানাচে বিধান একমাত্র আল্লাহর-ই চলবে!!!
Comment