█ ১
গণতন্ত্রের পাতানো খেলায় বারবার হেরেও গণতান্ত্রিক ইসলামপন্থিরা গণতন্ত্রের সাফাই গেয়ে যান। নিজেদের উন্মাদনার (আইন্সটাইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী) পক্ষে নানা ব্যাখ্যা দেন। আর একসময় তারাও - খেলার মজাটাই মুখ্য, জেতা না – এর মতো একটা কথা বানিয়ে নেন।
ইসলামপন্থী অনেক দল গণতন্ত্রকে প্রথমে গ্রহণ করে একটি কৌশল হিসেবে। তাদের পথচলা শুরু হয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা, খেলাফত প্রতিষ্ঠার এক পাইপ ড্রিম দিয়ে। কিন্তু এক পর্যায়ে গিয়ে তাদের আন্দোলনের ফোকাস চলে যায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার দিকে। টুল বা উপকরণ হিসেবে গণতন্ত্রকে ব্যবহার করার কথা বলে শুরু করলেও এক সময় তারা নিজেরাই স্থুল হাতে ব্যবহৃত-ব্যবহৃত হয়ে বলির পাঁঠা হয়ে যান।
যেমন ইখওয়ানুল মুসলিমীন ও জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংযুক্ত অনেকেই ৭০ ও আশির দশকে – ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্র – এই যুক্তি এনেছিল। কিন্তু এখন অনেকের জন্যই এটা হয়ে গেছে – ইসলাম প্রতিষ্ঠার আগে গণতন্ত্র।
মিশরের সাম্প্রতিক দুঃখজনক ঘটনার পর সবচেয়ে বেশি প্রচার হওয়া কথার মধ্যে একটা হল, ‘মিশরের ইতিহাসের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট…!’ খুব গর্বের সাথে বলা হচ্ছে কথাটা। যেন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হওয়াটা কোন ক্রেডিটের ব্যাপার, বৈধতার পরিমাপক এবং শার’ঈ উদ্দেশ্য। ছবিতে এখন আর ইসলাম নেই। সে জায়গা দখল করে নিয়েছে নির্বাচন আর গণতন্ত্রের দাবি। দেখুন যেটা ‘কৌশল’ সেটা এখন উদ্দেশ্য হয়ে গেছে। খেলার মজাটাই মুখ্য, জেতা না!
পাশাপাশি অনেকে সরাসরি কিংবা ঘুরিয়েপ্যাচিয়ে এটাও বলছে, যে বর্তমানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই হল ইসলাম প্রতিষ্ঠা। এটাই সঠিক পদ্ধতি, আর যে এ পদ্ধতির বিরোধিতা করে সে হয় যায়নিস্টদের এজেন্ট, কিংবা আলে-সাউদের দালাল, অথবা রাজতন্ত্রের পক্ষে প্রচারণাকারী।
যে ঘটনা গণতান্ত্রিক কুফরি পদ্ধতির রূঢ় বাস্তবতা এবং এর হুমকির প্রতি সচেতন হবার একটা ওয়েইক-আপ কল হবার কথা ছিল, সেটা হয়ে গেছে নিজেদের ভ্রান্তি আকড়ে থাকার অজুহাত। আবেগের উদার স্রোতে মহিমান্বিত করা হচ্ছে প্রজন্মের পর প্রজন্মের ভুলকে।
পাড় জুয়াড়ির মতোই ইসলামী গণতান্ত্রিকরা প্রতি পরাজয়ের সাথে আরো বেশি টাকার বাজি ধরে, নামে আরো হাই স্টেইক্সের খেলায়। আর নিজেকে প্রবোধ দেয় - আর একবার মাত্র। এক দানে জিতলেই তুলে নেয়া যাবে লাভে-আসলে সব টাকা।
কৌশল পরিণত হয়েছে উদ্দেশ্যে। জাদু ফিরে গেছে জাদুকরের দিকে। একটা ম্যাকাভিলিয়ান লেভেলে পশ্চিমাদের এই মুন্সীয়ানার প্রশংসা না করার কোন উপায় নেই।
█ ২
গণতন্ত্রের সমালোচনার মোকাবেলার জন্য আমাদের গণতন্ত্রমুগ্ধ ইসলামিস্ট ভাইদের কিছু ডিফল্ট জবাব আছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যাপারে কেউ কোন কথা বললেই এ মুখস্থ কথাগুলো নিয়ে তারা হাজির হন। এর মধ্যে সর্বাধিক প্রচলিত জবাব হল – গণতন্ত্রের বিকল্প কী? এতো যখন সমালোচনা করছেন তখন বিকল্প একটি পথ দেখিয়ে দেন না! ইসলাম কায়েমের সঠিক পথ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে দেখান তো! – ইত্যাদি।
এধরণের প্রশ্ন যারা করেন তাদের অধিকাংশ উত্তর জানার জন্য প্রশ্ন করেন না। কারণ এমন প্রশ্ন করা অনেককেই আপনি দেখবেন অন্যান্য আলোচনায় প্রস্তাবিত বিভিন্ন বিকল্প পদ্ধতির ব্যাপারে ‘জ্ঞানগর্ভ’ সমালোচনা (সেটাও মুখস্থ) পেশ করছে। বিসাইডস, যে বিষয়টা নিয়ে এতো আলোচনা হয়েছে, যে আলোচনার কথা কাফিররাও জানে, মুরতাদরাও জানে, সেটা তারা কোনভাবেই খুঁজে পাচ্ছেন না, এটা বিশ্বাসযোগ্য না।
আসলে এ এধরণের প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য হল যে গণতন্ত্রের সমালোচনা করছে তাঁকে হয় চুপ করানো, বা বেকায়দায় ফেলা। আমরা সবাই জানি, ‘ইসলাম কায়েমের পদ্ধতি কী হবে?’ - এ প্রশ্নের এমন কিছু উত্তর আছে যেগুলো অ্যামেরিকা-অনুমোদিত (যেমন গণতন্ত্র মুগ্ধ ভাইদের পছন্দের উত্তর)। আবার এমন কিছু উত্তর আছে যেগুলো চিন্তাপরাধ। এসব উত্তরকে সঠিক মনে করলেই মুসলিমদের বন্দী, গুম, হত্যা ইত্যাদি করা জায়েজ হয়ে যায়। একারণে অনেকেই অনেক পরিস্থিতিতে বিপদজনক উত্তরগুলোর সরাসরি আলোচনা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন। মুখস্থ প্রশ্ন নিয়ে গণতন্ত্রমুগ্ধ ভাইরা তাঁদের বেকায়দায় ফেলে নিজেদের মনে মনে আদর্শিক বিজয়ের আনন্দ খোজেন।
তো এই কূটতর্কের দিকটা একটু ঘুরিয়ে দেয়া যাক। যারা গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম কায়েমের পদ্ধতিতে বিশ্বাস করেন, তাদের কাছে প্রশ্ন রাখা যাক – কিভাবে এই পদ্ধতিতে আপনারা ইসলাম কায়েম করবেন? মেহেরবানি করে বিস্তারিত এবং স্পষ্ট আলোচনা করুন।
• একটি ইসলামী দল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতায় আসলো।
• ধরে নিলাম, নির্বাচনে জেতার আগেই আলজেরিয়ার মতো সেনাবাহিনী নামিয়ে দেয়া হলো না।
• আরো ধরে নিলাম যে তাদের অবস্থা বাংলাদেশ, পাকিস্তানের জামায়াত ইসলামীর মতো না। কোন জোট না করে তারা নিজে নিজে ক্ষমতায় আসতে পারে (বা জোট হলেও তারা জোটের প্রধান দল, পার্শ্বচরিত্র না)।
• আরো ধরে নিলাম যে, মিশরের মতো সামরিক অভ্যুত্থান করে গণহত্যা চালানো হল না। ক্ষমতায় আসার পর তারা টিকেও গেলেন।
• আরো ধরে নিলাম যে, তারা গণতন্ত্রের পাইপ ড্রিমের হাল আমলের জনপ্রিয়তম ফেরিওয়ালা এরদোগানের মতো বারো-পনেরো বছর ক্ষমতায় টিকেও থাকলেন, এক ইঞ্চি মাটিতেও ইসলাম কায়েম না করে।
প্রশ্নের ফ্রেইমওয়ার্ক বোঝা গেল?
আচ্ছা, তারপর কী?
পরের স্টেপগুলো কী?
এ পদ্ধতির এন্ডগেইমটা কী?
● কিভাবে এ অবস্থা থেকে এখন ইসলাম কায়েম করা হবে? ● কিভাবে এখন ধাপে ধাপে আল্লাহর আইন দিয়ে শাসন করা হবে? ● শরীয়াহ বাস্তবায়ন করা হবে? ● শরীয়াহ অনুযায়ী পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারন ও বাস্তবায়ন করা হবে? ● মযলুম মুসলিমদের সাহায্য করা হবে?
প্রশ্নগুলোর স্পষ্ট ও বিস্তারিত উত্তর পেলে উপকৃত হই।
‘আমরা না আমাদের সন্তানেরা ইসলাম কায়েম করবে’, ‘আমরা চারা লাগাবো আমাদের নাতিরা ফল খাবে’ – এ জাতীয় কর্মী ভুলানো কথা না। বিভিন্ন বিদেশী পত্রিকার আনতর্জাতিক সেকশানের খবর মিলিয়ে ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ জাতীয় কিছুও চাচ্ছি না।
স্পষ্ট, আবেগহীন, রেটোরিকমুক্ত, নিরস, প্র্যাগম্যাটিক এবং কম্প্রিহেনসিভ উত্তর চাচ্ছি। এবং সাথে এটাও জানতে চাচ্ছি কোন ধরণের আক্রমনের স্বীকার না হয়ে সে উত্তর নিয়ে নির্মোহ বিশ্লেষনের অধিকার অন্যদের আছে কি না। যেহেতু এ প্রশ্ন তাদের মুখের ডগায় থাকে, তাই আশা করা যায় উত্তরও কাছাকাছি কোথাও থাকার কথা।
█ ৩
যে সংস্থা আমাদের মাটি চুরি করে সেখানে সন্ত্রাসী ইস্রায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বৈধতা তৈরি করে, সেই জাতিসংঘের কাছেই আমরা দেনদরবার করি বিচারের জন্য। আমাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, ইসলামী শরীয়াহ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়ার যে গণতন্ত্র চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, তার মাঝেই আমরা ইসলামের উত্তরণের পথ খুঁজি। ঈমান ও কুফরের সংঘাতের প্রশ্ন আমাদের চিন্তিত করে না। ইসলামের সাথে পশ্চিমা তন্ত্রমন্ত্রের সাংঘর্ষিকতা নিয়ে ভাবার সময়টুকুও আমাদের হয় না। যেকোনো মূল্যে আমরা শুধু ওদের মতো হতে চাই। জাতে উঠতে চাই। চন্দ্রাহতের মতো ঘোরলাগা চোখে আমরা জীবনভর ছুটে চলি ফিরিঙ্গিদের হলুদ, বাদামি কিংবা কালো প্রতিরূপ হবার চেষ্টায়।
.
ফিরিঙ্গি আগ্রাসন আমাদের সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি করেছে তা হলো এই মানসিক দাসত্ব। সম্পদ, কাঠামো, ইত্যাদির ক্ষতি সাময়িক; কিন্তু মানসিক দাসত্ব দীর্ঘমেয়াদি। ফিরিঙ্গিরা যেখানেই গেছে চেষ্টা করেছে বিজিতদের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং তাদের চেতনায় পশ্চিমা বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গিকে গেঁথে দিতে। সেনা মোতায়েন না করে, শেকলে না বেঁধেও আজও পশ্চিমারা আমাদের দূরনিয়ন্ত্রিত পাপেটের মতো চালাতে পারছে কারণ সব দখলদারির সাফল্য দিন শেষে নির্ভর করে বিজিত জাতির জ্ঞান, আদর্শ ও আকিদাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারার ওপর। সাদা মানুষদের পরানো কালো শিকলগুলো শরীর থেকে খুলে এলেও চিন্তার শেকলগুলো এখনো খুলতে পারিনি আমরা। অদৃশ্য এ উপনিবেশের জন্যই হাজার হাজার মাইল দূরে বসে চাবি দেয়া পুতুলের মতো পশ্চিমা লেন্সে পৃথিবীকে দেখতে শেখা এই আমাদের আজও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ফিরিঙ্গিরা।
Collected
গণতন্ত্রের পাতানো খেলায় বারবার হেরেও গণতান্ত্রিক ইসলামপন্থিরা গণতন্ত্রের সাফাই গেয়ে যান। নিজেদের উন্মাদনার (আইন্সটাইনের সংজ্ঞা অনুযায়ী) পক্ষে নানা ব্যাখ্যা দেন। আর একসময় তারাও - খেলার মজাটাই মুখ্য, জেতা না – এর মতো একটা কথা বানিয়ে নেন।
ইসলামপন্থী অনেক দল গণতন্ত্রকে প্রথমে গ্রহণ করে একটি কৌশল হিসেবে। তাদের পথচলা শুরু হয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় গিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা, খেলাফত প্রতিষ্ঠার এক পাইপ ড্রিম দিয়ে। কিন্তু এক পর্যায়ে গিয়ে তাদের আন্দোলনের ফোকাস চলে যায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার দিকে। টুল বা উপকরণ হিসেবে গণতন্ত্রকে ব্যবহার করার কথা বলে শুরু করলেও এক সময় তারা নিজেরাই স্থুল হাতে ব্যবহৃত-ব্যবহৃত হয়ে বলির পাঁঠা হয়ে যান।
যেমন ইখওয়ানুল মুসলিমীন ও জামায়াতে ইসলামীর সাথে সংযুক্ত অনেকেই ৭০ ও আশির দশকে – ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য গণতন্ত্র – এই যুক্তি এনেছিল। কিন্তু এখন অনেকের জন্যই এটা হয়ে গেছে – ইসলাম প্রতিষ্ঠার আগে গণতন্ত্র।
মিশরের সাম্প্রতিক দুঃখজনক ঘটনার পর সবচেয়ে বেশি প্রচার হওয়া কথার মধ্যে একটা হল, ‘মিশরের ইতিহাসের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট…!’ খুব গর্বের সাথে বলা হচ্ছে কথাটা। যেন গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হওয়াটা কোন ক্রেডিটের ব্যাপার, বৈধতার পরিমাপক এবং শার’ঈ উদ্দেশ্য। ছবিতে এখন আর ইসলাম নেই। সে জায়গা দখল করে নিয়েছে নির্বাচন আর গণতন্ত্রের দাবি। দেখুন যেটা ‘কৌশল’ সেটা এখন উদ্দেশ্য হয়ে গেছে। খেলার মজাটাই মুখ্য, জেতা না!
পাশাপাশি অনেকে সরাসরি কিংবা ঘুরিয়েপ্যাচিয়ে এটাও বলছে, যে বর্তমানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই হল ইসলাম প্রতিষ্ঠা। এটাই সঠিক পদ্ধতি, আর যে এ পদ্ধতির বিরোধিতা করে সে হয় যায়নিস্টদের এজেন্ট, কিংবা আলে-সাউদের দালাল, অথবা রাজতন্ত্রের পক্ষে প্রচারণাকারী।
যে ঘটনা গণতান্ত্রিক কুফরি পদ্ধতির রূঢ় বাস্তবতা এবং এর হুমকির প্রতি সচেতন হবার একটা ওয়েইক-আপ কল হবার কথা ছিল, সেটা হয়ে গেছে নিজেদের ভ্রান্তি আকড়ে থাকার অজুহাত। আবেগের উদার স্রোতে মহিমান্বিত করা হচ্ছে প্রজন্মের পর প্রজন্মের ভুলকে।
পাড় জুয়াড়ির মতোই ইসলামী গণতান্ত্রিকরা প্রতি পরাজয়ের সাথে আরো বেশি টাকার বাজি ধরে, নামে আরো হাই স্টেইক্সের খেলায়। আর নিজেকে প্রবোধ দেয় - আর একবার মাত্র। এক দানে জিতলেই তুলে নেয়া যাবে লাভে-আসলে সব টাকা।
কৌশল পরিণত হয়েছে উদ্দেশ্যে। জাদু ফিরে গেছে জাদুকরের দিকে। একটা ম্যাকাভিলিয়ান লেভেলে পশ্চিমাদের এই মুন্সীয়ানার প্রশংসা না করার কোন উপায় নেই।
█ ২
গণতন্ত্রের সমালোচনার মোকাবেলার জন্য আমাদের গণতন্ত্রমুগ্ধ ইসলামিস্ট ভাইদের কিছু ডিফল্ট জবাব আছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতির ব্যাপারে কেউ কোন কথা বললেই এ মুখস্থ কথাগুলো নিয়ে তারা হাজির হন। এর মধ্যে সর্বাধিক প্রচলিত জবাব হল – গণতন্ত্রের বিকল্প কী? এতো যখন সমালোচনা করছেন তখন বিকল্প একটি পথ দেখিয়ে দেন না! ইসলাম কায়েমের সঠিক পথ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করে দেখান তো! – ইত্যাদি।
এধরণের প্রশ্ন যারা করেন তাদের অধিকাংশ উত্তর জানার জন্য প্রশ্ন করেন না। কারণ এমন প্রশ্ন করা অনেককেই আপনি দেখবেন অন্যান্য আলোচনায় প্রস্তাবিত বিভিন্ন বিকল্প পদ্ধতির ব্যাপারে ‘জ্ঞানগর্ভ’ সমালোচনা (সেটাও মুখস্থ) পেশ করছে। বিসাইডস, যে বিষয়টা নিয়ে এতো আলোচনা হয়েছে, যে আলোচনার কথা কাফিররাও জানে, মুরতাদরাও জানে, সেটা তারা কোনভাবেই খুঁজে পাচ্ছেন না, এটা বিশ্বাসযোগ্য না।
আসলে এ এধরণের প্রশ্ন করার উদ্দেশ্য হল যে গণতন্ত্রের সমালোচনা করছে তাঁকে হয় চুপ করানো, বা বেকায়দায় ফেলা। আমরা সবাই জানি, ‘ইসলাম কায়েমের পদ্ধতি কী হবে?’ - এ প্রশ্নের এমন কিছু উত্তর আছে যেগুলো অ্যামেরিকা-অনুমোদিত (যেমন গণতন্ত্র মুগ্ধ ভাইদের পছন্দের উত্তর)। আবার এমন কিছু উত্তর আছে যেগুলো চিন্তাপরাধ। এসব উত্তরকে সঠিক মনে করলেই মুসলিমদের বন্দী, গুম, হত্যা ইত্যাদি করা জায়েজ হয়ে যায়। একারণে অনেকেই অনেক পরিস্থিতিতে বিপদজনক উত্তরগুলোর সরাসরি আলোচনা এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করেন। মুখস্থ প্রশ্ন নিয়ে গণতন্ত্রমুগ্ধ ভাইরা তাঁদের বেকায়দায় ফেলে নিজেদের মনে মনে আদর্শিক বিজয়ের আনন্দ খোজেন।
তো এই কূটতর্কের দিকটা একটু ঘুরিয়ে দেয়া যাক। যারা গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম কায়েমের পদ্ধতিতে বিশ্বাস করেন, তাদের কাছে প্রশ্ন রাখা যাক – কিভাবে এই পদ্ধতিতে আপনারা ইসলাম কায়েম করবেন? মেহেরবানি করে বিস্তারিত এবং স্পষ্ট আলোচনা করুন।
• একটি ইসলামী দল গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতায় আসলো।
• ধরে নিলাম, নির্বাচনে জেতার আগেই আলজেরিয়ার মতো সেনাবাহিনী নামিয়ে দেয়া হলো না।
• আরো ধরে নিলাম যে তাদের অবস্থা বাংলাদেশ, পাকিস্তানের জামায়াত ইসলামীর মতো না। কোন জোট না করে তারা নিজে নিজে ক্ষমতায় আসতে পারে (বা জোট হলেও তারা জোটের প্রধান দল, পার্শ্বচরিত্র না)।
• আরো ধরে নিলাম যে, মিশরের মতো সামরিক অভ্যুত্থান করে গণহত্যা চালানো হল না। ক্ষমতায় আসার পর তারা টিকেও গেলেন।
• আরো ধরে নিলাম যে, তারা গণতন্ত্রের পাইপ ড্রিমের হাল আমলের জনপ্রিয়তম ফেরিওয়ালা এরদোগানের মতো বারো-পনেরো বছর ক্ষমতায় টিকেও থাকলেন, এক ইঞ্চি মাটিতেও ইসলাম কায়েম না করে।
প্রশ্নের ফ্রেইমওয়ার্ক বোঝা গেল?
আচ্ছা, তারপর কী?
পরের স্টেপগুলো কী?
এ পদ্ধতির এন্ডগেইমটা কী?
● কিভাবে এ অবস্থা থেকে এখন ইসলাম কায়েম করা হবে? ● কিভাবে এখন ধাপে ধাপে আল্লাহর আইন দিয়ে শাসন করা হবে? ● শরীয়াহ বাস্তবায়ন করা হবে? ● শরীয়াহ অনুযায়ী পররাষ্ট্রনীতি নির্ধারন ও বাস্তবায়ন করা হবে? ● মযলুম মুসলিমদের সাহায্য করা হবে?
প্রশ্নগুলোর স্পষ্ট ও বিস্তারিত উত্তর পেলে উপকৃত হই।
‘আমরা না আমাদের সন্তানেরা ইসলাম কায়েম করবে’, ‘আমরা চারা লাগাবো আমাদের নাতিরা ফল খাবে’ – এ জাতীয় কর্মী ভুলানো কথা না। বিভিন্ন বিদেশী পত্রিকার আনতর্জাতিক সেকশানের খবর মিলিয়ে ভূ-রাজনৈতিক বিশ্লেষণ জাতীয় কিছুও চাচ্ছি না।
স্পষ্ট, আবেগহীন, রেটোরিকমুক্ত, নিরস, প্র্যাগম্যাটিক এবং কম্প্রিহেনসিভ উত্তর চাচ্ছি। এবং সাথে এটাও জানতে চাচ্ছি কোন ধরণের আক্রমনের স্বীকার না হয়ে সে উত্তর নিয়ে নির্মোহ বিশ্লেষনের অধিকার অন্যদের আছে কি না। যেহেতু এ প্রশ্ন তাদের মুখের ডগায় থাকে, তাই আশা করা যায় উত্তরও কাছাকাছি কোথাও থাকার কথা।
█ ৩
যে সংস্থা আমাদের মাটি চুরি করে সেখানে সন্ত্রাসী ইস্রায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বৈধতা তৈরি করে, সেই জাতিসংঘের কাছেই আমরা দেনদরবার করি বিচারের জন্য। আমাদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য, ইসলামী শরীয়াহ থেকে দূরে সরিয়ে নেয়ার যে গণতন্ত্র চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, তার মাঝেই আমরা ইসলামের উত্তরণের পথ খুঁজি। ঈমান ও কুফরের সংঘাতের প্রশ্ন আমাদের চিন্তিত করে না। ইসলামের সাথে পশ্চিমা তন্ত্রমন্ত্রের সাংঘর্ষিকতা নিয়ে ভাবার সময়টুকুও আমাদের হয় না। যেকোনো মূল্যে আমরা শুধু ওদের মতো হতে চাই। জাতে উঠতে চাই। চন্দ্রাহতের মতো ঘোরলাগা চোখে আমরা জীবনভর ছুটে চলি ফিরিঙ্গিদের হলুদ, বাদামি কিংবা কালো প্রতিরূপ হবার চেষ্টায়।
.
ফিরিঙ্গি আগ্রাসন আমাদের সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি করেছে তা হলো এই মানসিক দাসত্ব। সম্পদ, কাঠামো, ইত্যাদির ক্ষতি সাময়িক; কিন্তু মানসিক দাসত্ব দীর্ঘমেয়াদি। ফিরিঙ্গিরা যেখানেই গেছে চেষ্টা করেছে বিজিতদের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে এবং তাদের চেতনায় পশ্চিমা বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গিকে গেঁথে দিতে। সেনা মোতায়েন না করে, শেকলে না বেঁধেও আজও পশ্চিমারা আমাদের দূরনিয়ন্ত্রিত পাপেটের মতো চালাতে পারছে কারণ সব দখলদারির সাফল্য দিন শেষে নির্ভর করে বিজিত জাতির জ্ঞান, আদর্শ ও আকিদাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারার ওপর। সাদা মানুষদের পরানো কালো শিকলগুলো শরীর থেকে খুলে এলেও চিন্তার শেকলগুলো এখনো খুলতে পারিনি আমরা। অদৃশ্য এ উপনিবেশের জন্যই হাজার হাজার মাইল দূরে বসে চাবি দেয়া পুতুলের মতো পশ্চিমা লেন্সে পৃথিবীকে দেখতে শেখা এই আমাদের আজও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে ফিরিঙ্গিরা।
Collected
Comment