তারা গাড়ির আগে ঘোড়াকে না জুড়ে, ঘোড়ার আগেই গাড়িকে জুড়ে দিতে চান
❑ ১
আসুন একটা অংক মেলানো যাক।
আফ্রিকার দেশগুলোতে অপুষ্টির হার অনেক বেশি।
ইউরোপের দেশগুলোতে অপুষ্টির হার অনেক কম।
আফ্রিকার দেশগুলো গরীব আর ইউরোপের দেশগুলো ধনী।
আফ্রিকার দেশগুলো জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, সুশাসন ও দুর্নীতি দমনের দিক দিয়ে পিছিয়ে আছে, ইউরোপের দেশগুলো এগিয়ে আছে।
অতএব, আফ্রিকার দেশগুলো গরীব হবার কারণ তাদের জনগণের অপুষ্টি হার বেশি হওয়ার কারণে তাদের এ অবস্থান।
অন্যদিকে অপুষ্টির হার কম হবার কারণে ইউরোপের এতো উন্নতি।
সুতরাং যদি আফ্রিকার দেশগুলো তাদের অবস্থার উন্নতি করতে চায় তবে তাদের উচিৎ আগে অপুষ্টির হার কমানো।
[প্রমাণিত]
তাই কি?
মোটামুটি সবাই উপরের অংকের সমীকরণ যে ভুল তা বুঝতে পারার কথা। এখানে ভুলটা হল ইউরোপের অপুষ্টির হার কম হওয়া তাদের ধনী হবার কারণ না, বরং ধনী হবার কারণে তারা তাদের দেশগুলোতে অপুষ্টির হার কমাতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু উপরে অংকে কার্যকরণের দিক উল্টে ফেলা হয়েছে। ফলাফল কে মনে করা হচ্ছে কারণ। আর কারণকে মনে করা হচ্ছে ফলাফল।
যদিও সবাই হয়তো এক বাক্য ভুলটা কোন জায়গায় সেটা বলতে পারবেন না। কিন্তু সহজাত ভাবে আমরা সবাই ভুলটা ধরতে পারি। কিন্তু অন্য অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় আমরা এধরনের অনেক গুলো ভুলকে আকড়ে ধরি। এবং সেই ভুলের ভিত্তির উপর ভুলের স্কাইস্ক্রেইপার বানাই। উপরের উদাহরণের লজিকাল ফ্যালাসি ধরতে পারলেও আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ফ্যালাসির উপর ভর দিয়েই আমরা নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করি।
যখন বিভিন্ন চিন্তক, অ্যাকাডেমিক, পেশাদার বুদ্ধিজীবী কিংবা আলিম বলেন পশ্চিমের সাফল্যের কারণ হল তাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক দর্শন এবং মুসলিম বিশ্বের উন্নতির জন্য এ দর্শনগুলো, যেমন – গণতন্ত্র, সেক্যুলারিযম, নারীবাদ, পশ্চিমা মানবাধিকার ইত্যাদি - গ্রহণ করা উচিৎ, তখন তারা মূলত একই ধরণের একটা লজিকাল ভুল করেন।
যখন কেউ বলেন - মুসলিমদের উচিৎ পশ্চিমের উদাহরণ থেকে শিক্ষা নেয়া। তাদের পদ্ধতির অনুসরণ করা। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিক্ষায় উন্নতি করার মাধ্যমে ইসলামের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনা – তখনো একই রকমের লজিকাল ফ্যালাসিতে তারা পড়ে যান।
যখন প্রাচ্যবিদ, মুসলিম বিশ্বের সেক্যুলাররা কিংবা মুসলিম নামধারীরা বলে ইসলামের কারণেই মুসলিমরা আজ বিশ্ব পিছিয়ে আছে, আর তাই উন্নতির জন্য ইসলামকে বাদ দিয়ে আধুনিক দর্শন ও চিন্তাকে গ্রহণ করতে হবে – তখনো তারা একই ধরণের ভুলের জায়গা থেকেই কথা বলে।
তারা গাড়ির আগে ঘোড়াকে না জুড়ে, ঘোড়ার আগেই গাড়িকে জুড়ে দিতে চান। আর ফলে দেখা যায় সামনের দিকে এগোনো আর হয় না, কেবল আরো পেছনের দিকে যাওয়া হয়।
এনলাইটেনমেন্ট, শিল্প বিপ্লব, জ্ঞান-বিজ্ঞানে অগ্রগতি, জীবনযাত্রা উন্নত মান - এগুলো ফলাফল। কারণ না। পশ্চিমের উত্থানের পেছনে মূল কারণ হল তাদের ঔপনিবেশিক লুটপাট। সামরিক শক্তি আর কূটনীতি। কাব্য, সাহিত্য আর শিল্প প্রতিভা না, আর্মচেয়ার কল্পনাবিলাস না। বহুত্ববাদ আর সহনশীলতার চর্চা না। ধর্মনিরপেক্ষতা না। অপরের অনুকরণের মাধ্যমে জগাখিচুড়ী পাকানো, আর নিজের মনে নিজেকে বড় মনে করা না। যদি পশ্চিমকে অনুসরণ করেই পশ্চিমের মোকাবেলা করার জেদ কেউ ধরে, তবে আগে উচিৎ পশ্চিমের উত্থানের মূল চালিকা শক্তিকে সঠিক ভাবে চেনা। ডিলিউশান দিয়ে সমাধান হয় না, সমস্যা আরো প্রকট হয়
সিম্পটম নিয়ে চিৎকার না করে মূল অসুখের চিকিৎসা করি!
❑ ২
Lesser of two evils - বা মন্দের ভালো নীতির অনুসরনের অবশ্যম্ভাবী রেসাল্ট হল দীর্ঘ মেয়াদে সমাজে, রাষ্ট্রে, বিশ্বে মন্দ বা evil বৃদ্ধি পাওয়া।*সিম্পল গেইম থিওরি দিয়ে এটা ম্যাথমেটিকালি প্রমান করা সম্ভব। আমরা যদি সবসময় মন্দের ভালো - কেই বেছে নেয়ার মূলনীতি নেই তাহলে বাই ডেফিনিশান আমরা সবসময় মন্দকে বেছে নিচ্ছি।
এই নীতির সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এটা প্রতিটা প্রেক্ষাপটকে একটা নির্দিষ্ট বাইনারী চয়েসের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দেয়। হয় আওয়ামী লীগ নয় বিএনপি। হয় গণতন্ত্র নয় সমাজতন্ত্র। হয় অ্যামেরিকা নইলে রাশিয়া...
গণতন্ত্র, ব্যাংকিং, লিমিটেড লায়াবিলিটি কোম্পানি, লাইফ ইনশুরেন্সসহ বর্তমান পৃথিবীর বিভিন্ন মন্দকে ইসলামাইয করার যে প্রবণতার (যার সবচেয়ে নগ্ন ও কুৎসিত ম্যানিফেস্টেইশান হল পশ্চিমা মডারেট "ইসলাম) আদর্শিক ভিত্তি হল "মন্দের ভালো" গ্রহনের এই নীতি।
বর্তমানে "ইসলামিক টিভি সিরিয" নামে যে ফিতনা দেখা দিচ্ছে, সেটা* উমার সিরিয হোক ইউসুফ-জুলেখা হোক, কিংবা হালের "আসহাবে কাহফ" -তার পেছনেও একটা বড় কারন হল এই নীতি। সমস্যাটা এটা এই সিরিযগুলো ঐতিহাসিক বা তথ্যগতভাবে সঠিক হওয়া, বা এগুলোতে সঠিকভাবে পর্দা মানা হচ্ছে কি না - সেটা নিয়ে না। সমস্যা হল এই ধরনের Depiction শারীয়াহ সম্মত না। কিন্তু "সবাই যখন টিভি সিরিয দেখছেই তখন ইসলামী টিভি সিরিয দেখুক" - এই লজিকের ফাঁদে আটকে গেলে এই সহজ ও স্পষ্ট সত্যটা অনুধাবন করা খুব কঠিন হয়ে যায়।
যতোক্ষণ পর্যন্ত আরেকজনের ঠিক করে দেওয়া বাইনারি কাঠামোর ভেতরে থেকে আপনি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য ততোক্ষণ - আপনি নিজে যাই মনে করুন না কেন - বাস্তবতা হল, আপনি পরাধীন। যতোক্ষণ পর্যন্ত আপনি নিজের মূলনীতি বিসর্জন দিয়ে আরেকজনের মূলনীতিকে অনুসরন করবেন ততোক্ষণ আপনি অন্যের আদর্শের অনুসরনই করছেন। আপনি সেটার উপর যতো বড়, সুন্দর এবং ইন্ট্রিকেইট ডিযাইনের "ইসলামী" সাইনবোর্ড লাগান না কেন - এই বাস্তবতা বদলাবে না।
যতোক্ষণ মূল অসুখের চিকিৎসা করা হবে না, ততোক্ষণ সিম্পটম নিয়ে যতোই চিৎকার-চেচামেচি করুন না কেন লাভ নেই।
যাদের মূলনীতি ঠিক নেই তাদের থেকে আপেক্ষিক আদল ও ভালো মন্দের তত্ত্ব নয়
❑ ৩
একবার শহরের এক ভদ্র মহিলা তার সন্তানকে খুন করে ফেলে। শাসন কর্তৃপক্ষ এই অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করে যে; শহরের সমস্ত প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষেরা তাকে ধর্ষণ করবে। পরদিন সকালে ধর্ষণের সিরিয়ালে অনেক মানুষ। তো ঠিক কী কারণে তারা এই মহিলাকে ধর্ষণ করতে সিরিয়ালে দাঁড়িয়েছে এ বিষয়ে তাদের মাঝে মোটামুটি তিন ধরণের মতামত পাওয়া যায়।
প্রথম সারির সর্বাগ্রে কিছু উঠতি বয়সী যুবক পাওয়া গেছে। তারা জানাচ্ছে যে, তারা আসছে প্রবৃত্তির চাহিদা মেটাতে। দ্বিতীয় সারির মানুষেরা বলছে; তারা এই চেতনা থেকে একাজে অংশ গ্রহণ করছে যে, যদি আজ এই মহিলাকে তার প্রাপ্ত শাস্তি না দেয়া হয়, তাহলে আগামীতে শহরের নারীরা তাদের সন্তানকে নিয়মিত খুন করবে। সুতরাং এর শাস্তি হওয়া উচিত। তৃতীয় আরেক শ্রেণী পাওয়া গেছে যারা বলছে; আল্লাহ শাসন কর্তৃপক্ষের আইন মানা ফরজ করেছেন। তাই আল্লাহর হুকুম পালনার্থে এই ফরজ কাজটিই আদায় করতে এসেছি। কথার ফাঁকে এদের একজন কুরআনুল কারীমের একটি আয়াত শুনিয়ে দিয়েছে; যেখানে বলা আছে উলূল আমরের আনুগত্য করা ফরজ।
এখন যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় যে, এই তিনটি মতামতের মাঝে কোন মতটি সর্বোত্তম? তাহলে আপনি নিশ্চই এই প্রশ্নের উত্তর নির্ধারণ করবেন আপনার চিন্তাগত অবস্থানের আলোকে।
• আপনি যদি মনোবৃত্তি ও প্রবৃত্তির পূজারী হন তাহলে দ্বীতিয় মতের যুক্তি ও তৃতীয় মতের ফরজ আপনার কাছে অর্থহীন। আপনি বরং প্রথম মতটিকেই প্রাধান্য দেবেন। এর উদাহরণ হলো প্রচলিত স্যাকুলার রাজনৈতিক ধারাগুলো।
• আর আপনি যদি রাজনৈতিক তাত্ত্বিক ও ইসলাম বিহীন ইনসাফ ও কল্যাণ রাষ্ট্রের প্রবক্তা হন; তাহলে আপনার মনে হবে দ্বিতীয় মতটিই ভালো। এর উদাহরণ হলো আমাদের মাদরাসা ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেও বখে যাওয়া ও আধুনিক ফিকহের নামে পশ্চিমা কনসেপ্টে লাতিত দাওয়াহ ও ইল্টেলেকচুয়াল মুভমেন্টের সদস্যবৃন্দ।
• তবে আপনি যদি গোবেচারা টাইপের হন এবং সহীহ আনুগত্যের ধ্বজাধারী হন, তাহলে আপনার মনে হবে শেষ মহামতটিই ভালো। আপনি একটি ফরজের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এর উদারহণ হলো; অরাজনৈতিক কওমী বুজুর্গ ও সহীহ মুরজিয়া সালাফিজম।
যাই হোক আমি এই গল্পের মাধ্যমে মূলত আপনাদের ভিন্ন একটা দিক দেখাতে চাই। তা হলো; এই যে এখানে বাইন্ডিংস করা আপেক্ষিক তিনটা মতামত দেয়া হলো, অত:পর আপনার সামনে তা পেশ করে এখান থেকেই ভালো মন্দের তত্ত্ব বিষয়ে প্রশ্ন হাজির করা হলো এর বৈধতা কী?
মূলত এখানে প্রশ্নতো এটা নয় যে উপস্থিত তিন মতামতের কোনটা ভালো। কে কোন উদ্দেশ্যে হাজির হয়েছে, তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো; যে বিচার প্রক্রিয়া বাস্তায়ন করতে জনগণ এখানে হাজির হয়েছে, এই বিচার পক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা। মানবতার জন্য এই আইনের উৎস ও সমৃদ্ধির গন্তব্য নিয়ে চিন্তা করা।
তবে খেয়াল করলে দেখবেন যে, আপনি এই বিচার ব্যবস্থার নৈতিকতা নিয়ে মৌলিক প্রশ্নটি তুলতে পারছেন না। ভাবতে পারছেন না যে, এখানে এই বিচার ব্যবস্থাটিই একটি অনৈতিক ব্যবস্থা। এটা আপনার হিম্মতের অভাব নয় বরং পশ্চিমা দাসত্বের পেস্ট করা বুদ্ধি ও চিন্তার কাঠামোগত বন্ধ্যাত্ব। তাদের ক্ষমতার প্রোপাগাণ্ডা ও মিডিয়া ক্যামরাবাজি আপনার চিন্তা ও দৃষ্টি শক্তিকে ইতিমধ্যে পঙ্গু করে দিয়েছে। আপনার *"আকলে সলীমের" উপর ইতিমধ্যে আপেক্ষিকতাবাজীর একটা হালকা আবরণ লেপে দেয়া হয়েছে। ফলে আপনি যুগের পর যুগ এই চিন্তার বন্ধ্যান্ত বয়ে চলেছেন আর ভাবছেন আপনি দ্বিতীয় সারির বুদ্ধিজীবী অথবা তৃতীয় সারির আনুগত্যজীবী।
আপনি একথা বুঝতে ব্যর্থ হচ্ছেন যে, ঐ তিন মতামতকে জাস্টিফাই করার জন্য ইসলামী রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা, তাত্বিকতা ও রাস্ট্রের আইন মানা ফরজের বিধান এর কোনটিই এখানে প্রযোজ্য নয়। এর প্রত্যেকটি স্ব-স্ব স্থানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু একটি অবৈধ ও অনৈতিক বিচার ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখতে এর কোনটিই কোন ধরণের ভূমিকা রাখবে না। দু:খের বিষয় হলো তারপরো আপনি আপনার নেতিয়ে পড়া চিন্তাশক্তি দিয়ে কুরআন হাদিস চষে আমাকে উলূল আমরের আনুগত্যের বয়ান করছেন, তৃতীয় শ্রেনিতে অংশ নেবার জন্য আহ্বান করছেন। আর বলছেন আপনি হক্কের উপর আছেন। ওহ!! এই জুলুমকে বৈধতা দানের জন্য আপনি ইসলামে আমিরের আনুগত্য করার বিধান বয়ান করছেন। আর যে আপনার মতের বিপরীতে এখানে চতুর্থ মতামত দিচ্ছে ও এই বর্বর আইন ও বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলছে আপনি তাকে বলছেন খারেজি।
“খন্দকার ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ.”কে প্রশ্ন করা হয়েছিলো; “ইসলাম গণতন্ত্র সাপোর্ট করে কী?
তিনি এর উত্তর দিয়েছেন এভাবে যে---
"সাপোর্ট নয়, ইসলাম যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা দিয়েছে এটা গণতন্ত্রের কাছাকাছি। প্রচলিত গণতন্ত্রের সাথে শতভাগ মিল নেই। তন্ত্র দুটো‘গণতন্ত্র’, ‘সৈরতন্ত্র’ আর কোন তন্ত্র আছে বলে আমার জানা নেই। ‘সৈর’র চেয়ে ‘গণ’ ভালো। ইসলাম যে নির্দেশগুলো দিয়েছে আমানতদারিতা, দূর্ণীতিমুক্ত হওয়া এগুলো গণতান্ত্রিক পরিবেশে ভালো হয়। কাজেই ইসলাম সৈরতন্ত্রের বিরোধী। মুলত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দিয়েছে, তবে প্রাশ্চাত্যের গণতন্ত্রের সাথে কিছু মিল অমিল আছে।"
প্রথমেই প্রশ্নটি খেয়াল করুন।প্রশ্ন করা হয়েছিলো “ইসলাম গণতন্ত্র সাপোর্ট করে কী?
আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ. প্রথমেই এখানে মৌলিক প্রশ্নটা ঘুরিয়ে দিয়েছেন এই বলে যে, “প্রশ্নটা সার্পোটের নয়”। অর্থাত এই যে *"গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা" এর সার্পোটের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করো না। প্রশ্ন করো এর আপেক্ষিক আদল ও ভালো মন্দের তত্ত্ব নিয়ে।
এই যে, ‘সৈরতন্ত্রের’ বিপরীতে ‘গণতন্ত্রান্ত্রিক’ ব্যবস্থার একটা আপেক্ষিক ইতিবাচক আঙ্গিক পেশ করা হলো এবং ইসলামী নির্দেশাবলী পালনের একটা সুযোগ হিসেবে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে উপস্থাপন করা হলো; এটাই হলো জ্ঞান ও চিন্তার ক্ষেত্রে পশ্চিমা কলোনিজমের প্রভাব। এ যুগে যে এই বুদ্ধির দাসত্ব থেকে মুক্তি চায় ও আপেক্ষিক নয়, বরং স্বতন্ত্র দ্বীন হিসেবে ইসলামকে রিপ্রেজেন্ট করতে চায় তাকে বলা হয় উগ্রবাদ।
আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর রহ. যা বলেছেন; এক দিক থেকে বিচার করলে এগুলো অতি সহী কথা। কিন্তু এখানে প্রশ্নতো ইসলামের সাথে গণতন্ত্রের মিল অমিলের নয়, প্রশ্ন হচ্ছে সাপোর্ট ও অনুমোদনের। তাঁকে প্রশ্নই করা হয়েছিলো ইসলাম গণতন্ত্র সাপোর্ট করে কী? অর্থাত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সম্পর্কে ইসলামের মতামত কী?। তিনি সে দিকে যান নি এবং 'গণতন্ত্রের' ঐ দিকগুলো এড়িয়ে গেছেন যেগুলো ইসলামের সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক এবং প্রশ্নের অনেক কাছাকাছি। তারপর সৈরতন্ত্রের সাথে তুলনা করে দেখিয়েছেন ‘সৈর’র চেয়ে ‘গণ’ ভালো। তিনি দুই তত্বের আপেক্ষিকতায় ডুকে গেলেন এবং খুশি করার মতো একটা জবাব দিলেন।
বিষয়টা অনেকটা এমন যে, মুশরিকদের চেয়ে আহলে কিতাবরা ইসলামের অনেক কাছাকাছি। কিন্তু আমি যখন প্রশ্ন করলাম ইসলাম খ্রিষ্টানধর্ম সাপোর্ট করে কী? তখন খ্রিষ্টান ধর্মের সাথে ইসলামের মিল অমিল দেখানোর কী অর্থ?
এই যে, চোখের সামনে তুলে ধরা আপেক্ষিত তত্বের বাইরে গিয়ে চতুর্থ মতামতটি তুলে আনা যাচ্ছে না, প্রশ্ন করা যাচ্ছেনা খোদ বিচার ব্যবস্থা নিয়েই। আমাদের এই বুদ্ধির বন্ধাত্ব থেকে বের হতে হবে। যতদিন আমরা মিল অমিল নয় বরং একটি স্বতন্ত্র জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে উপস্থাপন করতে অপারগ হবো- ততোদিন আমাদের ইসলামী খাহেশাত পুরণ হবে, রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, আধুনিক দাওয়াত ও ফিকহের পশ্চিমা কনসেপ্ট ও ইল্টেলেকচুয়াল মুভমেন্টের কাজও চলতে থাকবে, আমরা করতো থাকবো সহীহ আনুগত্য। কিন্তু মুক্তি? মুক্তি অসম্ভব।
Collected
Comment