চোখ খোলার পর এ ভূমিতে আমরা বিজয়ী ইসলামকে পাইনি। যেহেতু ইসলাম বিজয়ী নয় তাই এর সবগুলো কাঠামোর প্রায়োগিক রুপও আমরা কখনো দেখিনি৷ আমরা বেড়ে উঠেছি এমন এক ব্যবস্থার অধীনে, যা ইসলামকে অস্বীকার করে৷ এর সামগ্রিক কাঠামোর প্রতি চুড়ান্ত অবজ্ঞা প্রদর্শন করে এবং নিজেদের জন্য হুমকি মনে করে। ফলে আমাদের মনে বিজয়ী ইসলামের কোনো চিত্র অংকিত হয়নি, ইসলামের যে চিত্র আমাদের মনে গেঁথেছে তাতে রয়েছে আড়ষ্টতা, দ্বিধা-সংশয় ও পিছু হটার মানসিকতা।
পরাজিত জাতী পরাজিত মানসিকতা থেকে বের হতে পারে না। তাদের চিন্তার জগতেও রাজত্ব চলে বিজয়ীদের। আমাদের চিন্তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করলেই এর সত্যতার প্রমাণ মিলবে। যদিও আমরা চিন্তার এই পরাজয়কে লুকানোর চেষ্টা করেছি নানাভাবে। দ্বিধা সংশয়কে নাম দিয়েছি সতর্কতা, পিছু হটাকে বলেছি হিকমাহ।
পরাজিত মানসিকতার জন্যই আজ আমরা নিজেদের কাজে কুফফারদের সন্তুষ্টির দিকটিও বিবেচনা করি। যে কোনো ইস্যু সামনে আসলেই আগে চিন্তা করি, এই কাজ কুফফাররা কীভাবে নিবে? তারা সন্তুষ্ট হবে তো? এই পরাজিত চিন্তাকে লুকানোর জন্য সুন্দর একটি মোড়ক ব্যবহার করা হয়।এই মোড়কের গায়ে লেখা থাকে 'কাফেরদের কাছে ইসলামের ব্যাপারে ভুল মেসেজ যাবে'।
কোথাও শাতেমে রাসুলকে হত্যা করা হলে একদল বিরাট চিন্তিত হয়ে পড়েন। তাদের চিন্তার মূল বিষয় একটাই, এই হত্যার দ্বারা মাই ডিয়ার টাইপ কাফেরগুলো ইসলামের ব্যাপারে ভুল মেসেজ পাবে। ইসলামের সঠিক বার্তা তাদের সামনে যাবে না।
অথচ, শাতেমে রাসুলের জীবনের কোনো মূল্য নেই, এটাই ইসলামের সঠিক বার্তা। যে ব্যক্তি রাসুলের সম্মানে আঘাত করে তার কোনো নিরাপত্তা পৃথিবীর কোনো ভূমিতে নেই। এই কথাটা কুফফারদের কানে পৌছে দেয়ার মানেই হলো, ইসলামের সঠিক বার্তা তাদের কাছে পৌছে দেয়া।
কিন্তু পরাজিত মানসিকতার দরুণ আমরা ভেবে বসি, এই হত্যা তাদের সামনে ইসলামের ব্যাপারে ভুল বার্তা দিচ্ছে!!
এভাবে পরাজিত মানসিকতার কারণে আমরা ইতিবাচককে নেতিবাচক ভেবে বসি। ইসলামি ফিকহকে একপাশে রেখে নিজেদের আকলনির্ভর বুদ্ধিবৃত্তিকতাকে পুঁজি করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি এবং সেটা অন্যের উপর চাপিয়ে দেই।
পরাজিত মানসিকতা থেকেই আমরা শিরক ও কুফরকে বান্দার অধিকার ধরে নিয়ে একে ভিন্নমত বলে চালিয়ে দেই এবং এর প্রতি শ্রদ্ধা রাখার কথা বলি৷ অথচ এটা বান্দার অধিকার নয়, বরং রবের প্রতি চরম অবাধ্যতা।
পরাজিত মানসিকতা আমাদেরকে ইসলামি ফিকহ থেকে দূরে থেকে আকলনির্ভর বুদ্ধিবৃত্তিক আলাপ-সালাপের প্রতি উৎসাহিত করে। কারণ, ফিকহ দেখে সিদ্ধান্ত নিলে কুফফারদের গায়ে লাগবে এবং আমাদের ধারণা, এই গায়ে লাগা থেকে কুফফাররা ইসলামকে খারাপ ভেবে বসবে। অথচ বাস্তব সত্য হলো, কুফফাররা কখনোই ইসলামকে পছন্দ করেনি, এর বিধানগুলো মেনে নেয়নি। যদি মেনেই নিতো তাহলে তো তারা মুমিনদের কাতারেই থাকতো।
আল্লাহ তাআলা নিজেই আমাদের জানিয়েছেন, কাফেরদের ধর্ম অনুসরণ করা ছাড়া কখনো তাদের সন্তুষ্ট করা সম্ভব নয়।
وَلَن تَرْضَى عَنكَ الْيَهُودُ وَلاَ النَّصَارَى حَتَّى تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ قُلْ إِنَّ هُدَى اللّهِ هُوَ الْهُدَى
ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন, তাই হল সরল পথ। (সুরা বাকারাহ, ১২০)
তাই কথা বলতে হবে, কাফেররা কখনো সন্তুষ্ট হবে না এই চিরন্তন সত্য মেনে নিয়েই। তাদের সন্তুষ্ট করা কিংবা খুশি করার দায়িত্ব আমাদের নয়। আমাদের দায়িত্ব ইসলামের সঠিক বার্তা প্রচার করা। এই বার্তা যদি কাফেরদের গায়ে লাগে, লাগুক, যদি তাদের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে, ফেলুক।
আমাদের কাজ নিজেকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করা, কাফেরদের মন রক্ষার কাজটি তো আমাদের নয়।
Collected
Comment