শাহাদাতে হুসাইন (রাদি.) এবং ইরাকিদের ব্যাপারে কিছু সত্য কথা
অনেক দিন ধরেই কথাগুলো বলতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু বলা হচ্ছিল না। সামনে আশুরা। এখন বলার মওকা এসেছে বলা যায়।
হুসাইন রাদি.। আল্লাহর রাসূল -সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর আদরের নাতি। জান্নাতী যুবকদের সর্দার। ভাই ভাতিজা ও সন্তানাদীসহ নির্মমভাবে ইরাকের কারবালা প্রান্তরে শহীদ হলেন। পাশেই ফুরাত নদী। এক ফোঁটা পানিও তাদের কপালে জুটলো না।
ইরাকিরাই তাঁকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। কুফায় যাওয়া হলো না। পথিমধ্যেই তাঁকে শহীদ হতে হলো।
আপনি জেনে অবাক হবেন, শত শত চিঠি হুসাইন রাদি.র কাছে এসেছিল ইরাক থেকে। আশি হাজার থেকে এক লাখ লোক তাঁর হাতে বাইয়াত হওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে তাঁকে ইরাকে ডেকে নিলো। কিন্তু উবায়দুল্লাহ বিন যিয়াদ একটু হুমকি ধমকি দিতে না দিতেই, আর কয়টা অর্থকড়ির লোভ দেখাতে না দেখাতেই সবাই কেটে পড়লো। শেষে মুসলিম বিন আকিলকে নিঃসঙ্গ একা শহীদ হতে হলো। অথচ তার হাতে বাইয়াত দিয়েছিল চল্লিশ হাজার লোক। রাতে রাতে সবাই চলে গেল। শেষে একা তিনি ধরা পড়লেন। শহীদ হলেন। আর কারবালা প্রান্তরে সপরিবারে শহীদ হলেন হুসাইন রাদি.।
এই হচ্ছে আহলে ইরাক। যাদের কোনো স্থিতি নেই। গরমকালে গরমের বাহানা, শীতকালে ঠাণ্ডার বাহানা। গাদ্দারি যাদের চিরাচরিত অভ্যাস। স্বার্থের সামনে যারা পরাহত। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ঠিকই বলেছিল, হে ইরাকিরা, তোদের সাথে নিয়ে যদি কেউ ইজ্জত লাভ করতে চায়, তাহলে বেইজ্জতি ছাড়া তার কপালে কিছুই জুটবে না।
শুনতে কটু মনে হলেও ইরাকিদের এই গাদ্দার স্বার্থান্বেষী স্বভাব উম্মতের স্বরণ রাখতে হবে।
***
এই ইরাকিরা আর মিশরিরা মিলেই নির্দোষ খলিফা উসমান রাদি.কে শহীদ করেছিল, যাকে দেখে আসমানের ফেরেশতারা পর্যন্ত লজ্জা পেতো। মিশর ফেরাউনের ভূমি, আর ইরাক নমরুদের ভূমি। উসমান রাদি.কে শহীদ করার পর আল্লাহ তাআলা উম্মতে মুসলিমার নিজেদের মাঝে তরবারি উন্মুক্ত করে দেন, যা কেয়ামত পর্যন্ত আর বন্ধ হবে না।
***
১. ইরাক সেই ভূমি যেখানে আল্লাহর নবী নূহ আলাইহিস সালাম সাড়ে নয়শো বছর দাওয়াত দিয়েও নব্বই জন মানুষকে ঈমানদার বানাতে পারেননি। শেষে আল্লাহ নারাজ হয়ে এদের সমূলে ধ্বংস করে দেন, যা আজও পৃথিবীতে ইতিহাস হয়ে আছে।
২. ইরাক সেই ভূমি, যেখানে আবুল আম্বিয়া ইব্রাহিম আলাইহিস সালামকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার মহা আয়োজন করা হয়েছিল। শেষে আল্লাহ তাদের চক্রান্ত নস্যাৎ করে দেন। আল্লাহর নবী এই ভূমি ছেড়ে আরদে মুকাদ্দাসা, আরদে আম্বিয়া, মুবারক ভূমি শামে হিজরত করেন।
৩. ইরাক সেই জালেম বুখতে নসরের ভূমি, যে নবীদের কিবলা বাইতুল মুকাদ্দাস ধ্বংস করেছিল।
৪. ইরাক সেই ফিতনার ভূমি, যারা আল্লাহর কিতাব প্রত্যাখান করে জিন শয়তানদের শিখানো যাদুর পেছনে পড়েছিল। যে যাদু দিয়ে তারা স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটানো। মানুষের ক্ষতি করতো। ইরাক বিজয়ের পর উমর রাদি. একবার ইরাকে যেতে চেয়েছিলেন। পরে (সম্ভবত) কাবুল আহবার রহ. মানা করেন যে, এটি যাদু আর শয়তানির ভূমি। এখানে যাওয়া আপনার জন্য নিরাপদ না। পরে তিনি আর ইরাকে আসেননি। কিন্তু শাম গিয়েছিলেন।
৫. সাদ বিন আবু ওয়াক্কাস রাদি. জলিলকদর সাহাবি এবং কাদিসিয়ার সেই ঐতিহাসিক সেনাপতি যার হাতে ইরাক বিজয় হয়। যিনি ইসলামের শুরু যামানাতেই ইসলাম গ্রহণ করে আজীবন রাসূলের সোহবতে ছিলেন। শেষে ইরাকিরা তার নামে অপবাদ দেয়, তিনি নামায জানেন না, তিনি যোগ্য শাসক না। পরে অনিচ্ছাসত্ত্বেও উমর রাদি. তাকে বরখাস্ত করেন। সাদ রাদি.র বদদোয়া তাদের পাকড়াও করে।
৬. উসমান রাদি.কে শহীদ করে এই ইরাকিরা আলী রাদি.র হাতে বাইয়াত দিয়ে তাঁকে তাদের ভূমি কুফায় নিয়ে যায়। শেষে তারাই তাকে বেইমান আখ্যায়িত করে নামাযের সময় শহীদ করে। রাসূলের আপন চাচাতো ভাই, আপন জামাতা, ইসলামের খলিফায়ে রাশেদ জান্নাতী সাহাবী তাদের মতে বেইমান হয়ে গেছে। নাউযুবিল্লাহ!
আলী রাদি. বিরক্ত হয়ে বলেছিলেন, আল্লাহ আমাকে তাড়াতাড়ি উঠিয়ে নাও। তারা আমাকে বিরক্ত করেছে, আমিও তাদের কাছে বিরক্তের পাত্র। তারা আমার অপছন্দ, আমিও তাদের কাছে অপছন্দ। আর সাকিফ গোত্রের যে যুবকটিকে তুমি তাদের উপর চাপাবে বলে ওয়াদা করেছো (অর্থাৎ হাজ্জাজ বিন ইউসুফ), শীঘ্রই তার প্রকাশ ঘটাও।
৭. আলী রাদি.র শাহাদাতের পর তারাই হাসান রাদি.কে বাইয়াত দিয়ে খলিফা বানায়। তিনি চাননি কারও বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে। কিন্তু তারা তাঁকে মুআবিয়া রাদি.র বিরুদ্ধে অভিযানে বের হতে বাধ্য করে। দুঃখের কথা: পরে পথিমধ্যে তারাই তাঁর গায়ে হাত। তাঁকে আহত করে। তাঁর মাল সামানা লুণ্ঠন করে। তিনি এতই ব্যথিত হয়েছিলেন যে, এদের সাথে নিয়ে মুসলিম উম্মাহর খলিফা হয়ে থাকতেও তিনি পছন্দ করেননি। মুআবিয়া রাদি.র হাতে খেলাফত তুলে দেন।
৮. এরপর হুসাইন রাদি.কে ডেকে নিয়ে কারবালার প্রান্তরে নিঃসঙ্গ অবস্থায় শহীদ করে।
৯. আব্দুল মালেক বিন মারওয়ান ইরাকের নেতাদের কাছে গোপনে চিঠি পাঠায়: আমার পক্ষে আসলে আব্দুল্লাহ বিন যুবায়ের পরাস্ত হলে আমি তোমাদের বড় বড় পদে আসীন করবো। স্বার্থের সামনে নত হলো ইরাকবাসী। গাদ্দারী করে আব্দুল্লাহ বিন যুবায়েরের বাইয়াত ভঙ্গ করে আব্দুল মালেক বিন মারওয়ানের দলে যোগ দেয়। মুসআব রহ. শহীদ হন। ইবনুয যুবায়েরের খেলাফতের সোনালী শাসনের অবসান হয়।
১০. ইরাক খাওয়ারেজদের ভূমি। শিয়া, কদরিয়াসহ সকল ফেতনার আখড়া।
***
এদের উপর আলী রাদির. অভিশাপ। রাসূলের আদরের নাতির অভিশাপ। অভিশাপ উমর রাদি.র এবং মুস্তাজাবুদ দাওয়াহ সেনাপতি সাদ বিন আবু ওয়াক্কাসের। শেষে আল্লাহ তাআলা নারাজ হয়ে চাপিয়ে দেন জালেম হাজ্জাজকে তাদের উপর। হাসান বসরি রহ. বলেছিলেন, হাজ্জাজ আল্লাহর গজব। আল্লাহর গজবের মোকাবেলা কেউ করতে পারবে না, যদি আল্লাহ নিজে তা উঠিয়ে না নেন। গাদ্দারির শাস্তি কেমন হয় হাজ্জাজের হাতে আল্লাহ কিছুটা তাদের আস্বাদন করিয়ছিলেন।
***
উসমান রাদি., আলী রাদি. ও হুসাইন রাদি.কে শহীদ করা, আব্দুল্লাহ বিন যুবায়েরের বাইয়াত ভঙ্গ করা গাদ্দার সেই ইরাক ভূমিতেই জন্ম নেয় বর্তমান যামানার খাওয়ারেজ গাদ্দার আইএস। এরা এদের পূর্ব পুরুষদের পদাঙ্কই অনুসরণ করে। আলকায়েদা তালেবানের বাইয়াত ভঙ্গ করে। তাকফির করে নির্মমভাবে শহীদ করে হাজারো মুসলমানকে। গোটা দুনিয়ার জিহাদকে বিশৃঙ্খলার দিকে ঠেলে দেয়। ভয়ানক ফিতনার সম্মুখীন করে মুসলিম উম্মাহকে। ভাল হয় যদি ইরাকিদের এই গাদ্দার স্বভাব উম্মাহর মুসলিম ও মুজাহিদরা স্বরণ রাখে এবং সতর্ক থাকে।
***
Comment