ইন্সটিটিউশন প্রাইড
বর্তমান যুগে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে যে সকল ভ্রান্ত চিন্তাধারা গেড়ে বসেছে তার মধ্যে একটি হল ইন্সটিটিউশন প্রাইড। কুফরী রাষ্ট্রব্যবস্থা ও কুফরী সমাজব্যবস্থার দরুন যে সকল আধ্যাত্মিক ব্যাধি আমাদের জেঁকে ধরেছে তার মধ্যে এটি শীর্ষে অবস্থান করছে। সোজা কথায় বলতে গেলে ‘ইন্সটিটিউশন প্রাইড’ বলতে বোঝায় নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে বড়াই করা ও অন্যের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে খাটো করে উপস্থাপন করা। আপাতত এটাই হলো ব্যবহারিক অর্থ। এটা হতে পারে স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে, কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। সবচেয়ে বেশি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে। কারণ এর সাথে আছে বুর্জোয়া ফ্যান্টাসির সরাসরি সংযোগ। তাই ভার্সিটি ছাত্রদের মধ্যে এই অন্ধত্বের চর্চা সবচেয়ে বেশি। আপনারা হয়তো ইন্টারনেটে কিছুদিন পরপর পাবলিক ভার্সিটি বনাম প্রাইভেট ভার্সিটি, পাবলিকের মধ্যে এই ভার্সিটি বনাম সেই ভার্সিটি, অমুক কলেজ বনাম তমুক কলেজ কে শ্রেষ্ঠ এই নিয়ে বিতর্ক দেখবেন। যদি কখনো অভিভাবকদের কোন এক আসরে দুর্ঘটনা ক্রমেও উপস্থিত হয়ে যান তাহলে অমুক স্কুল বনাম তমুক স্কুলের আলোচনাও পেয়ে যাবেন। এখন এই যে একটা কালচার সেটা তো অসুস্থই, এই যে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই তা যেসব উসুলের ভিত্তিতে হয় সেগুলো আরো অসুস্থ।
এর মধ্যে প্রধান প্রধান কিছু উসুল হলো এই রকমঃ
১) কোথায় পড়লে স্ট্যাটাস বৃদ্ধি পায়।
২) কোথায় স্বাধীনতা চর্চার (হারাম কাজের) সুযোগ বেশি।
৩) কোন ক্যাম্পাস বেশি সুন্দর।
৪) কোন ক্যাম্পাসের আয়তন বেশি।
৫) কোন ক্যাম্পাসে বিনোদনের উপায় উপকরণ বেশি।
৬) কাদের বাসের রঙ কি।
৭) কোন প্রতিষ্ঠানে ইউটিউবাররা পড়ালেখা করে।
৮) কাদের সন্ত্রাসবাদের ইতিহাস বেশি (দুঃখজনক হলেও সত্য যে কিছু ভার্সিটি, কলেজ ও ন্যাশনাল ভার্সিটির ছাত্র শুধু এ বলে গর্ব করে যে তাদের অনেক ক্ষমতা ও তাদের রয়েছে সহিংসতার ইতিহাস)।
৯) কোথায় ধনী পরিবারের সন্তানরা পড়ে।
১০) কোন প্রতিষ্ঠান ঢাকার ভিতরে।
১১) কোন প্রতিষ্ঠান আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
১২) কোথায় পড়লে পুঁজিবাদের সমাজে ভবিষ্যত সুনিশ্চিত।
সুবহানআল্লাহ! এই হল মানুষের চিন্তাধারা। আজ জ্ঞানপিপাসা ও জ্ঞানসাধনা আড়ালে পড়ে যাচ্ছে। আর মুখ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে এই সকল অসুস্থ কিছু মূলনীতি।
তার চেয়েও ভয়াবহ বিষয় যে এ সমস্যাটি দ্বীনি অঙ্গনেও চলে এসেছে। কওমী মাদ্রাসা বনাম আলিয়া মাদ্রাসা, ঢাকার মাদ্রাসা বনাম চট্টগ্রামের মাদ্রাসা, মাদ্রাসা বনাম জেনারেল ইত্যাদি আলোচনা হয়তো আপনারা শুনে থাকবেন।
এটি কেন ক্ষতিকর?
ইন্সটিটিউশন প্রাইডের ক্ষতি হল এটা যুবক শ্রেণীকে বিভক্ত করে দেয়। ঐক্যবদ্ধভাবে সামনে এগিয়ে যেতে বাঁধা দেয়। এই অনৈক্যই আমাদের জাতি হিসেবে উন্মেষ ঘটাতে দেয় না। ফলে দুশমনের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতার বদলে আমরা একজন আরেকজনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছি। বড় আজিব বাত! আমাদের মধ্যে কি কোন অনুভূতি নেই? এ কাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি আমরা? নিজ দেশের, স্বজাতিরই ভাইদের বিরুদ্ধে? নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক, আল ওয়ালা ওয়াল বারা এর আক্বীদার অনুপস্থিতির ফলে আজ দেশী, বিদেশী বিভিন্ন নায়ক, গায়ক, খেলোয়াড়, ফুটবল টিম ইত্যাদি আমাদের নিকট প্রিয় হয়ে উঠছে আর দুশমন হয়েছে অন্য প্রতিষ্ঠানে পড়া আমারই কোন ভাই।
নিজ কওমের লোকেরাই যদি আমাদের দুশমন হয়ে ওঠে তাহলে যুবসমাজ বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে, সামনে এগিয়ে চলা মুশকিল হয়ে যাবে, সর্বোপরি ক্ষতিগ্রস্থ হবে দেশ। তার উপরে এটা পুঁজিবাদেরও অনেক বড় হাতিয়ার। বস্তুবাদী দৃষ্টিভঙ্গিটা হল এমন যে এতে রিসোর্সই মুখ্য। এটা হল এমন একটা বিশ্বাস যা মানুষকে পেট, পিঠ ও লজ্জাস্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। আর বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কেউ পড়ালেখা করলে মনে করা হয় তার রিসোর্স সংগ্রহের পথ সুগম হয়েছে। সে-ই হল এলাকার ভবিষ্যত ‘রঈস’। এই ভেবে পুরো এলাকাবাসী ও আত্মীয়স্বজন তাকে তোয়াজ করে। কারণ এটা একদিন পুঁজিবাদী সমাজে তার জন্য বড় সাফল্য (বড় অঙ্কের বেতন) বয়ে আনবে। এই দৃষ্টিভঙ্গি বিপ্লবের জন্য ক্ষতিকর। এটা ছাত্রসমাজের ভেতরে এলিটতন্ত্রের চর্চা সৃষ্টি করে। কোন জাতির নিকট যখন রিসোর্স অর্জনই জীবনের মুখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়, বড় চাকরি পাওয়াকেই জীবনের সফলতা মনে করা হয় তখন তারা মুজাহিদ জন্ম দিতে পারে না, জন্ম দেয় মুনাফিকের যারা তাদের দৃষ্টিতে পেট, পিঠ ও লজ্জাস্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে নিজেদের বিক্রি করে দেবে।
তারপরও প্রতি যুগেই প্রতি জনপদে কিছু না কিছু মুজাহিদ থাকেই, কিন্তু তাদের সংগ্রাম সফল হবে না ব্যর্থ হবে তার নিশ্চয়তা নেই। মুনাফিকদের ষড়যন্ত্রে তা ভেস্তে যেতে পারে। মনে রাখবেন ভারত উপমহাদেশে সেই ইংরেজ শাসনের শুরু থেকে এই পর্যন্ত দ্বীন প্রতিষ্ঠার যত আন্দোলন হয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই বাধ সেধেছে কোন না কোন মুনাফিক শ্রেণী। যারা নিজ কওমের স্বার্থের উপরে প্রাধান্য দিয়েছে কমফোর্ট জোনকে।
আর ইন্সটিটিউশন প্রাইডের চেতনা আসে কমফোর্ট জোন থেকেই। সবচেয়ে বড় মর্মান্তিক বিষয় হল এটি তৈরি করেছে আত্মহত্যার প্রবণতা।
ইন্সটিটিউশন প্রাইড জিনিসটা এমন যে এটা যেমন একদিকে কিছু ছাত্রের মধ্যে তৈরি করেছে সুপিরিওরিটি কমপ্লেক্স, অন্যদিকে কিছু ছাত্রের মধ্যে তৈরি করেছে ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স। কোন ছাত্র যখন কোন বড় প্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ না পায় তখন নিজেকে তুচ্ছ মনে করে। এই মুহূর্তে যারা এই লেখা পড়ছেন তাদের কাছে প্রশ্ন যে, কোন ব্যক্তি পুজিবাদী দুনিয়ায় উপরে ওঠার ট্রেনিং প্লেসে বা মনস্তাত্ত্বিক দাস বানানোর কারখানায় চান্স পেল কি না পেল এতে কি তার মূল্য নির্ধারণ করে?
কিন্তু আমাদের দেশে যখন কেউ ডাক্তারিতে চান্স না পায় তখন পরিবার-পরিজন, সমাজ, আত্মীয়-স্বজন সবার কাছে অবহেলিত হয়ে পরে। সবাই তাকে তাচ্ছিল্য করে। সর্বোপরি, তার জীবনটি বিষিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলাফলটা কি হচ্ছে? ফলাফল হল প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষার সময় আসলে দেখা যায় ব্যাপক পরিমাণ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে আত্মহত্যা করছে। ইন্সটিটিউশন প্রাইড জিনিসটা এভাবেই ছাত্রসমাজের ক্ষতি করে চলেছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি পুঁজিবাদী সমাজে উপরে ওঠার একটি আত্মতৃপ্তি ছাড়া কিছুই নয়। এখন তো পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে একটি বড় প্রতিষ্ঠানে পড়া মানুষ অন্যদের সাথে ভালো করে মিশতেও পারে না। এক্ষেত্রে তার অহংকার ও আত্মগরিমা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।
এমনকি দ্বীনি অঙ্গনেও কোন কারখানায় কাজ করা শ্রমিক ভাই যখন অন্যদেরকে কোন বিষয়ে নসীহত করে তখন তেমন কেউই গুরুত্ব দেয় না। সেই একই কথা যখন কোন মেডিকেল পড়ুয়া বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র বলে তখন সেটা ছোট ভাইদের নিকট খুবই পছন্দ হয়। তাহলে অবস্থাটা লক্ষ্য করুন। এখনো কি বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ আছে?
সমস্যার মূলে কি?
এই সমস্যাটি সাধারণত ছাত্রদের মধ্যে সেই ছোটবেলা থেকেই বপন করে দেওয়া হয়। কোন খারাপ বৈশিষ্ট্যই মানুষ জন্ম থেকে শিখে আসে না। এগুলো শৈশবে, কৈশোরে তাদের ভেতর ইন্সটল করে দেওয়া হয়। আপনারা হয়তো দেখেছেন যে পাশাপাশি বাড়ির দুই শিশু একত্রে খেলাধুলা করছে, একই স্কুলে যাচ্ছে, একই আলো বাতাসে বড় হচ্ছে। তাদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ নেই, কোন হিংসা-বিদ্বেষ নেই, কোন ঘৃণার চর্চা নেই। কিন্তু তাদের বাবাদের মধ্যে রয়েছে জমি সংক্রান্ত বিরোধ। তাদের পরিবার তাদেরকে মিশতে বাঁধা দেয়। এই বাচ্চাগুলোর মাথায় ছোট থেকেই ঢুকিয়ে দেওয়া হয় যে, ‘ওরা ভালো নয়’। এভাবেই ঘৃণার মধ্য দিয়ে সন্তানকে বড় করে এক পর্যায়ে তাদেরকে জমি দখলের সৈনিকে পরিণত করা হয় ও উভয়কে পরস্পরের শত্রু বানিয়ে দেওয়া হয়। ইন্সটিটিউশন প্রাইড জিনিসটাও এমন। যখন আমরা একটা বাচ্চাকে শেখাই যে পাশের ফ্ল্যাটের বাচ্চার সাথে মেশা যাবে না কারণ সে ভালো ছাত্র নয়, সে ভালো স্কুলে পড়ে না তার সাথে মিশলে তুমিও খারাপ হয়ে যাবে; তখন তার ভেতরে এই আত্মিক ব্যধিটা প্রবেশ করে। আবার যখন একাধিক অভিভাবক একত্রিত হয়ে এই গল্প জুড়ে দেন যে, অমুকের সন্তান তমুক প্রতিষ্ঠানে পড়ে তখন এই সকল আলোচনা শুনে বাচ্চাদের মনে ধারনা হয় যে, বড় প্রতিষ্ঠানে পড়ার উপরে নির্ভর করে মানুষের সম্মান।
এভাবে আল্লাহর আবদ মানুষ মূল্যায়িত হয় কে পুঁজিপতির দাস ও কে কত নামকরা দাস কারখানার প্রোডাক্ট তার মাধ্যমে।
এমনকি মাদ্রাসা ছাত্রদের পরিস্থিতিও আজকাল এর চেয়ে ব্যতিক্রম নয়। এক মাদ্রাসার মানুষ অন্য মাদ্রাসাকে খাটো করে কথা বলছে এমন দৃশ্য মোটেই বিরল নয়। আজ দ্বীনি ইলম শিক্ষাকেও পুঁজি অর্জনের হাতিয়ার বানিয়ে ফেলেছে। অনেক মানুষই আজ দিন গুজার করছে দ্বীন বেচে। তাই অবধারিত ভাবেই চলে আসে ইন্সটিটিউশন প্রাইড। এর সাথে আবার ইলমী হামবড়াই তো আছেই।
ইসলাম কি বলে?
ইসলামে শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি ভিন্ন। সাহাবায়ে কেরামের আমলে সেই সকল সাহাবীরা সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী ছিলেন যারা ছিলেন ‘বদরী‘ সাহাবী। অর্থাৎ, যারা বদরের যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। দ্বীনের স্বার্থে নিজের জান-মাল বিসর্জন দিয়ে যারা জিহাদে অংশগ্রহণ করেছেন ইসলাম এর সোনালী যুগে তারাই ছিলেন সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। আর আজকের এই পুঁজিবাদের যুগে মুজাহিদরাই হয়েছে সবচেয়ে বড় এতিম। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা আজ অবহেলিত ও উপেক্ষিত। বাংলাদেশে এত আলেমের মুক্তির দাবীতে মিছিল মিটিং ও আন্দোলন হয়, অথচ মুজাহিদরা রয়েছে অবহেলিত হয়ে। তাদের জন্য কোন মিছিল মিটিং নেই, শোক তাপ নেই, নেই কোন উদ্যোগ। তারাও কি আমাদের মনযোগ, আমাদের চেষ্টা-তদবিরের হকদার নয়? আপনাদের বিবেক কি বলে? বলছিলাম ‘ইন্সটিটিউশন প্রাইড‘ নামক একটি আধ্যাত্মিক ব্যাধির কথা। এ সম্পর্কে একটি উদাহরণ পেশ করতে চাচ্ছি। ইমাম শাফেঈ রহিমাহুল্লাহ, যিনি ছিলেন ইসলামের ইতিহাসের একজন শ্রেষ্ঠ আলেম। তিনি জনৈক আবেদ রাখালের নিকট গিয়ে এমনভাবে হাঁটু গেড়ে বসতেন যেভাবে মক্তবের ছাত্ররা উস্তাদের নিকট বসে এবং তার কাছ থেকে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে পরামর্শ নিতেন যে অমুক কাজটি আমি কিভাবে করবো? তখন অনেকেই তাকে জিজ্ঞেস করতো যে, “হুজুর, এই জংলী লোকটির সাথে আপনার এরূপ আচরণের কারণ কি?” তখন তিনি বলতেন, “আল্লাহ তাকে যে ইলম দিয়েছেন তা আর কাউকে দেননি।”১ এই হলো ইসলামের প্রকৃত অবস্থান। এখানে কোন ইন্সটিটিউশন প্রাইড নেই।
ইসলাম একটি জামাআত ভিত্তিক ধর্ম। যারা দ্বীনের বিজয় চায় তারা কখনো নিজের ছেলেকে ভালো প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর স্বপ্ন দেখে না। তাদের চিন্তা হয় কওম সামষ্টিক ভাবে এগিয়ে গেল কিনা। তাদের চিন্তাধারা হয় সামষ্টিক, ব্যাক্তিকেন্দ্রিক নয়। অন্যদিকে পুঁজিবাদী সমাজে মানুষের চিন্তা হয় কেবল পেট, পিঠ ও লজ্জাস্থান কেন্দ্রিক। যতদিন শরীয়াহ শাসিত ইনসাফ ভিত্তিক একটি সমাজ প্রতিষ্ঠিত না হবে ততদিন এটি সমাজ থেকে দূর হবে না।
সূত্রঃ
১ এহইয়াউ উলুমিদ্দীন, প্রথম খণ্ড, মদিনা পাবলিকেশান্স
Comment