স্কুল-কলেজের সরকারী সিলেবাসভুক্ত বইগুলো সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা ও আন্তরিক নিবেদন নিয়ে ধারাবাহিক প্রকাশনাঃ- সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম সিরিজের প্রাসঙ্গিক গবেষণা-প্রবন্ধ ও ফাতওয়া সংকলনঃ- ০১. সহশিক্ষা ও ইসলাম।
ছাত্রসমাজ দেশ ও জাতির ভবিষ্যত কর্ণধার। তাই তাদেরকে অবশ্যই সৎ, মহৎ ও চরিত্রবান করেই গড়ে তুলতে হবে। আদর্শ ও চরিত্রবান মানুষ গড়ে তোলার স্থান হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী শিক্ষা লাভ করেছেন এবং আরো বহুজন শিক্ষানবীস রয়েছেন। যদিও তাদের মাঝে সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিবর্গও রয়েছেন। কিন্তু আবার এদের মাঝে অসৎ চরিত্রের অধিকারী অনেককেও দেখা যায়।
প্রশ্ন হল- উচ্চশিক্ষা লাভ করেও চরিত্রহীন হচ্ছে কেন? যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে চরিত্রবান লোক গঠন হওয়ার কথা ছিল সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হচ্ছে চরিত্রহীন লোক। সে জন্য আজ স্থানে স্থানে চরিত্রহীনদের মহড়া। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যে চরিত্রহীন লোক বের হচ্ছে; এর দায় কার? এর জন্য দায়ী কে? সহজ উত্তর; দায় শিক্ষাব্যবস্থার, এবং দায়ীও শিক্ষাব্যবস্থা ।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সহশিক্ষা চালু আছে। সেই সহশিক্ষা নামক মরণব্যাধিই আমাদেরকে চরমভাবে কলুষিত করছে। সহশিক্ষাই ছাত্রছাত্রীদেরকে অতি অল্প বয়সে চরিত্রহীনতা শিক্ষা দিচ্ছে। সহশিক্ষায় রয়েছে ছাত্রছাত্রীর অবাধ চলাফেরা ও মেলামেশার ব্যবস্থা। ছাত্রীরা যেখানে থাকবে, ছাত্ররাও সেখানেই থাকছে। ছাত্রীরা যেখানে বসবে ছাত্ররাও তাদের পাশাপাশি বসবে -কোন প্রকার পর্দা করা হবে না। সেটাই হচ্ছে সহশিক্ষা।
সহশিক্ষায় ইসলামের পর্দার বিধানকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখা হয়। যারা পর্দা করে চলতে চায় তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। যারা যত নগ্নভাবে চলে তাদেরকে ধন্যবাদ দেয়া হয়। সহশিক্ষা মানেই পর্দাহীনতা। কলেজ-ভার্সিটিতে আজ সুশিক্ষা নেই বললেই চলে। সহশিক্ষা ও সামাজিক বেহায়াপনার কারণে ছাত্রছাত্রীরা আজ নগ্নতা, অশ্লীলতা ও অবৈধ প্রেমপ্রীতি নিয়ে মত্ত। কলেজ-ভার্সিটির ক্যাম্পাসগুলো যেন আজ প্রেমিকদের কেবল একটা আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। প্রকৃত ছাত্রছাত্রীরা মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না। সহশিক্ষার তাণ্ডবলীলায় বিপর্যস্ত আজ আমাদের পুরো শিক্ষাব্যবস্থা।
শিক্ষার মূল হল- চরিত্র গঠন। যে শিক্ষাব্যবস্থা চরিত্র নষ্ট করে, অবাধ যৌনাচারের পথ দেখায় সেই শিক্ষা দ্বারা আমাদের লাভ কি? আত্মিক, নৈতিক, মানবিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে। আর এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সহশিক্ষাকে আমাদের অবশ্যই সর্বদা ‘না’ বলতে হবে। সহশিক্ষা দ্বারা কখনও চরিত্রবান হওয়া যায় না। আর চরিত্রহীন মানুষ দ্বারা দেশ ও জাতির উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না।
মনে রাখতে হবে- সহশিক্ষার সাগর থেকে কখনও মণিমুক্তা পাওয়া যাবে না। সহশিক্ষার কুফল পদে পদে। সহশিক্ষার কুফল অত্যন্ত ভয়াবহ। একজন উত্তম ছাত্রের অনন্য বৈশিষ্ট্য হল-সে সহশিক্ষাকে সব সময় ‘না’ বলবে। সে সহশিক্ষার চরম বিরোধীতা করবে।
উত্তম ছাত্র হওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায় হচ্ছে পাপাচার থেকে বিরত থাকা। পাপ কাজে লিপ্ত থাকলে স্মরণশক্তি লোপ পেয়ে যায়। ইমাম শাফেয়ী র. বলেন- আমার উস্তাদ ইমাম ওয়াকী র.-এর নিকট ইলম স্মরণ না থাকার অভিযোগ করলে তিনি আমাকে গুনাহ ত্যাগ করার অসীয়ত করলেন। তিনি বললেন-‘ইলম হচ্ছে আল্লাহর নূর। সেই নূর আল্লাহপাক কোন গুনাহগারকে দান করেন না।’
সহশিক্ষার কারণে ছাত্রছাত্রীরা অবাধে বেপর্দা চলাফেরা করতে পারে। ছাত্রছাত্রীরা ফ্রি চলাফেরা করার কারণে নানা ধরণের পাপ কাজে লিপ্ত হয়- ফলে তারা স্বাভাবিক বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে বসে। আর এভাবেই সহশিক্ষার কারণে আমাদের সমাজ থেকে সঠিক মেধা লোপ পাচ্ছে এবং মেধাহীন একটি জাতি সৃষ্টি হচ্ছে।
যদি প্রশ্ন করা হয়, ছাত্রছাত্রীরা অবৈধ প্রেম ও অবাধ অনাচারে লিপ্ত হওয়ার কারণ কি? আমি বলবো- এর মূল একটি কারণ হল সহশিক্ষা। যদি প্রশ্ন করা হয়, ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ইভটিজিং নামক ঘৃণ্য পাপের মহড়া হয় কেন? আমি এর জবাবে বলবো-এর কারণ হল সহশিক্ষা।
সুতরাং বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানকালীন ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকার সহাবস্থান হারাম-নিষিদ্ধ। কেননা এটি ফিতনা, অবাধ যৌনতা ও অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করে। এক্ষেত্রে যখন শিক্ষিকারা কিংবা ছাত্রীরা নিজেদের শরীরের কোন অংশ উন্মুক্ত রাখে কিংবা অন্যের সামনে পাতলা পোশাক, অঙ্গভঙ্গী প্রকাশক স্কিন-টাইট ও আঁটসাঁট পোশাক পরিধান করে কিংবা তারা যখন ছাত্র অথবা শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপকালে হাসি-ঠাট্টা ইত্যাদি করে তখন পাপাচার আরো বৃদ্ধি পায় এবং অপরাধ আরো বিশাল হয়ে ওঠে, যা অবৈধ প্রেম, যিনা-ব্যভিচার, সম্ভ্রমহানি ও ইজ্জত লুণ্ঠন পর্যন্ত গড়ায়।
নারীদের উচ্চশিক্ষা লাভ করতে ইসলামের কোনো বাধা নেই। নারীদেরকে উচ্চশিক্ষা লাভ করতে ইসলাম সবসময় উৎসাহিত করে। তবে যে শিক্ষাব্যবস্থায় ইসলামের পর্দার বিধান লঙ্ঘন হয় সেই শিক্ষাব্যবস্থাকে ইসলাম সমর্থন করে না। নারী-পুরুষ আলাদা অবস্থানে থেকে পর্দা রক্ষা করে শিক্ষা অর্জন করবে- এটাই ইসলামের চিরন্তন বিধান।
শিক্ষক ও স্টাফদের জন্য; সহশিক্ষা প্রমোট করে এমন প্রতিষ্ঠানে চাকরী না করে হালাল পেশার চাকরী খুঁজতে হবে। কারণ সহশিক্ষা বা ছাত্র-ছাত্রীদের মিশ্রিত শিক্ষাব্যবস্থা ইসলামে নিষিদ্ধ। মেয়েদের সাথে একত্রে একই স্থানে কিংবা একই বেঞ্চে কিংবা একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্দাহীনভাবে বসে শিক্ষাগ্রহণ নাজায়েয। এটি ফিতনার এবং নৈতিক পদস্খলনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। সেজন্য কোন ছেলে কিংবা মেয়ের জন্য এধরণের সহশিক্ষা জায়েয নেই ।
এই বিষয়ে কিছু গবেষণালব্ধ ফাতওয়া একটি নির্ভরযোগ্য ফাতওয়া সাইট থেকে কালেক্ট করে আপনাদের সামনে পেশ করছি।
ফাতওয়া নং - ০১
সহশিক্ষার হুকুম কী?
প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে নারী পুরুষের সহশিক্ষা কি বৈধ?
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله، أما بعد
সহশিক্ষা ইসলামের অকাট্য বিধান পর্দার পরিপন্থী। এটি বিজাতীয় শিক্ষা-পদ্ধতি। পাশ্চাত্যের অনুকরণে এ সহশিক্ষা চালু করা হয়েছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি সম্পূর্ণ নাজায়েয এবং ইসলামের মূলনীতি পরিপন্থী। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ. –الأحزاب: 53
“আর তোমরা তাঁর (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।” -সুরা আহযাব (৩৩) : ৫৩
ইমাম কুরতুবী রহ. (৬৭১ হি.) উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন,
في هذه الآية دليل على أن الله تعالى أذن في مسألتهن من وراء حجاب، في حاجة تعرض، أو مسألة يستفتين فيها، ويدخل في ذلك جميع النساء بالمعنى، وبما تضمنته أصول الشريعة من أن المرأة كلها عورة، بدنها وصوتها. -تفسير القرطبي (14/ 227)
“উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে পর্দার আড়াল থেকে কোনো প্রয়োজনে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া শরীয়তের মূলনীতির দাবিও এটিই। কারণ, মূলনীতি হলো, নারীর কণ্ঠস্বরসহ গোটা শরীর পর্দার অন্তর্ভুক্ত।” -তাফসীরে কুরতুবী : ১৪/২২৭
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ, তা সহজেই অনুমেয়।
নারী পুরুষের সংশ্রব ফিতনার জনক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ما تركت بعدي فتنة أضر على الرجال من النساء. -صحيح البخاري: 4808، صحيح مسلم:
7122
“আমার পর পুরুষদের জন্য মহিলাদের চেয়ে অধিক ক্ষতিকর কোনো পরীক্ষা রেখে যাইনি।” -সহীহ বুখারি: ৪৮০৮, সহীহ মুসলিম: ৭১২২
অন্য হাদিসে ইরশাদ করেন,
إن الدنيا حلوة خضرة وإن الله مستخلفكم فيها فينظر كيف تعملون فاتقوا الدنيا واتقوا النساء فإن أول فتنة بنى إسرائيل كانت فى النساء. صحيح مسلم :
7124
“দুনিয়া (নয়ন-মন আকর্ষণকারী) সুমিষ্ট ও সুসজ্জিত বস্তু। পূর্ববর্তীদের প্রতিনিধি করে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, দেখতে চান তোমরা কেমন আমল কর। অতএব, দুনিয়ার ফাঁদ থেকে বেঁচে থাকবে। বেঁচে থাকবে নারীদের ফাঁদ থেকে। বনী ইসরাইলের সর্বপ্রথম ফিতনা নারীদের নিয়েই সংঘটিত হয়েছিল।” -সহীহ মুসলিম: ৭১২৪
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) বলেন,
اختلاط أحد الصنفين بالآخر سبب الفتنة فالرجال إذا اختلطوا بالنساء كان بمنزلة اختلاط النار والحطب. -الاستقامة (1/ 361)
“নারী-পুরুষ এ দুই শ্রেণীর পরস্পরের সংমিশ্রণ ফিতনার জনক। যখন বেগানা নারী-পুরুষের পরস্পর সংশ্রব ঘটে, তখন তা আগুন-লাকড়ির সংশ্রবের মতোই ভয়ঙ্কর হয়।” -আল ইস্তেকামা: ১/৩৬১
অতএব, সহশিক্ষা সম্পূর্ণ হারাম। শরীয়ত প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা ও পর্দার ব্যবস্থা রক্ষা করে শিক্ষা প্রদানের নির্দেশ দেয়।
আরও দেখুন, সুরা আহযাব (৩৩): ৫১; সুরা নুর (২৪): ৩১-৩২; রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৬৯-৩৭০; আপকে মাসায়েল আওর ইনকা হল: ৮/১০০; ফাতাওয়া লজনায়ে দায়িমা: ১২/২২৩, ১৭/১৪৭, মাজমুউ ফাতাওয়া বিন বায: ৪/২৪৮-২৫৩; মাজমুআতু আসইলাহ তুহিম্মুল উসরাতাল মুসলিমা, ইবনে উসাইমিন: ৭৫-৭৬; আসইলাতু মিম্বারিত তাওহিদ, প্রশ্ন নং ১১১৩
ফাতওয়া নং - ০২
প্রচলিত সহশিক্ষা পদ্ধতিতে মেডিক্যাল শিক্ষা গ্রহণের হুকুম কি?
মুহতারাম শাইখ, নিম্নোক্ত বিষয়ে আপনার সুচিন্তিত মতামত আশা করছি।
প্রশ্ন ক:
পরিস্থিতি ১: বাবা-মায়ের আদেশ মেডিক্যাল সেক্টরে পড়া এবং ডাক্তার হওয়া। কিন্তু আমি মেডিক্যাল সেক্টরের ভয়াবহ ফিতনাপূর্ণ পরিবেশের কথা ভেবে তাতে আর পড়তে চাচ্ছি না। এগুলোর পরিবর্তে দ্বীনী ইলম অর্জন করতে চাই। আবার মেডিক্যালে পড়তে না চাওয়াটা বাবা-মাকে জানালে তারা খুব কষ্ট পাবেন। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক টাইপের কিছু হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
আবার তাতে পড়লে নিজের উপর জুলুম হচ্ছে। মা-বাবার আদেশ পালনার্থে গুনাহে পরিপূর্ণ পরিবেশে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে। কিন্তু মেডিক্যালে ফিতনার ভয়াবহতা অবর্ণনীয়। একটি মেয়ে ডাক্তারি পড়তে গেলে তাকে অনেক কিছু ফেইস করতে হয়। যেমন: পুরুষ রোগীর রিভিলিং বডি পার্ট (প্রাইভেট এরিয়া) দেখা, বা কোনো পেশেন্টকে বিনা অনুমতিতে বিবস্ত্র দেখা, মর্গে পোস্ট মর্টামের সময় ছেলে-মেয়ে উভয়কে দেখা ও প্রত্যেকটা বডি পার্ট চেক করা। কখনো বা পুরুষ স্যার বা ক্লাসমেটদের সো কোল্ড কুল (অশ্লীল, হারাম জোকস সহ্য করা)।
কখনো আবার শিখার জন্যে নন মাহরামের সামনে হাল্কা হলেও চেহারা দেখানো! মেডিক্যালের বর্তমান পরিবেশে গেলে নিজের গুনাহের আশংকা করছি এবং নিজের ঈমান বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে বলে বোধ করছি। এক্ষেত্রে মা-বাবার আদেশ অমান্য করলে কি গুনাহ হবে?
তাছাড়া শুধু্ এমবিবিএস পাস করার পর কেউ নারীদের বিশেষ চিকিৎসা দিতে পারে না। এমবিবিএস পাস করে শুধু সর্দি, জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি ও সাধারণ মেয়েলি চিকিৎসা হয়তো দিতে পারে। কিন্তু নারীদের সন্তান প্রসব, জরায়ু ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার এই সকল চিকিৎসা দিতে গেলে উচ্চতর ডিগ্রি নিতেই হবে। উচ্চতর ডিগ্রিতে ব্যাপক পরিমাণ সময় পড়াশোনাতে দিতে হয়, যা একজন বিবাহিত নারী; স্বামী, সন্তানের হক সামলানোর পর সাধারণত দিতে পারে না। (অন্যদের পক্ষে সম্ভব হলেও আমি নিজেকে অসমর্থ বলে মনে করছি)।
যারাই এমনটি করেছেন, তাদের স্বামী, সন্তানের হক নষ্ট হয়েছে বলে শুনেছি। তাই উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। আর যদি আমার উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার পরিকল্পনাই না থাকে, তাহলে শুধু এমবিবিএস পাস করার কোনো বিশেষ ফায়দা হচ্ছে না। সর্দি, কাশি, জ্বরের জন্য অনেক ডাক্তার রয়েছেন। তাই উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার ইচ্ছা না থাকলে এগুলো পড়া তো আরও সময় নষ্ট। আর সত্যিকারার্থে আমার পক্ষে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া সম্ভবপর নয়। স্বামীকে রাজি করালে স্বামীর হক আদায়ে না হয় কিছু ছাড় পাবো (তবে সেটিও অনিশ্চিত)।
কিন্তু সন্তানের হকের জবাবদিহিতা নিয়ে ভয় পাচ্ছি। শরীরই চলবে না এত পরিশ্রমে। নিজের মেজাজই যদি খিটখিটে থাকে তাহলে সন্তান কি শিখবে আমাদের থেকে। আর এভাবে মেডিক্যালের চিকিৎসাবিদ্যা অর্জন এবং শর’ঈ ইলম অর্জন একসঙ্গে করতে গেলে দুটার কোনোটাই হয়তো ভালোভাবে না হওয়ার আশংকা করছি।
আমি দ্বীনি ইলম অর্জন করতে চাই, আমার ফরয পরিমাণ ইলম নেই বললেই চলে। আমার যদি ইলমই না থাকে, তাহলে কীভাবে ঠিকভাবে দ্বীন পালন করবো!
মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করা একজন আপু নিজে এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁর কাছে পরামর্শ নিতে গেলে তিনি বলেছেন, “শুধু জিনা-ব্যভিচারই কি ফিতনা!? চোখের ফিতনা, কানের ফিতনা। আরও কত রকম ফিতনা আছে, যাকে আমরা আমলেই নিই না। আমরা সেক্সচুয়াল বিষয়টা ছাড়া আর সব ফিতনাকে পাশ কাটিয়ে যাই। যখন আমি মেডিক্যালে পড়েছি, তখন বেপর্দা, পথভ্রষ্ট ছিলাম। ওখানকার সবকিছুই আমি দেখেছি। সহজ কথায়, পরকালকে অগ্রাধিকার দিলে মেডিক্যালে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। যারা ইতিমধ্যে মেডিক্যালে পড়াশোনা করছেন, তারা পড়ুক। কিন্তু তোমার তাকওয়া বুঝে তুমি সিদ্ধান্ত নাও; তুমি না গেলে নারী ডাক্তার তৈরি হওয়া কমে যাবে না।”
শাইখ, শুধু যে ফিতনা তা-ই নয়, এছাড়াও এই পড়াশোনাতে আমি যাওয়া মানেই আমার স্বামী, সন্তানের হক নষ্ট হওয়া। উল্লেখ্য, আমি অবিবাহিত। ভবিষ্যত হক নষ্টের ব্যাপারে প্রবল আশংকা করছি। এত এত গুনাহ সামাল দেওয়ার মতো ঈমান, তাকওয়া, আত্মশুদ্ধিতা আমার নেই। এক্ষেত্রে আমি যদি পিতা-মাতার কথা না মানি এবং মেডিক্যালে পড়াশোনা না করি, এতে কি আমি পিতা-মাতার অবাধ্য বলে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নিকট অপরাধী গণ্য হবো? (উল্লেখ্য: আমার পিতা-মাতা আমার দুনিয়াবি সফলতার ব্যাপারে খুবই দুর্বল। যদি শোনেন, আমি জেনারেল পড়াশোনা ছেড়ে দিতে যাচ্ছি, তাদের স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।)
পরিস্থিতি ২: (নিম্নোক্ত পরিস্থিতিটি আরেক বোনের)
বাবা-মায়ের আদেশ, মেডিক্যালে পড়াশোনা করতে হবে। কিন্তু আমার সেক্যুলার পড়াশোনা ভাল লাগে না। এই পড়ার প্রতি কোনো আগ্রহ অনুভব করি না; বরং কুরআন ও দ্বীনি পড়াশোনার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ। এখন আমি যদি জেনারেল পড়াশোনা ছেড়ে দিই তাহলে পিতা-মাতার অবাধ্য বলে গণ্য হবো? তাছাড়া আমি মেডিক্যালের ফিতনাপূর্ণ পরিবেশেরও আশংকা করছি। তবে পিতা-মাতার কষ্ট পাওয়ার দিকটি আমাকে অত্যাধিক পীড়া দেয়। কিন্তু যে দিকে আমার আগ্রহ নেই, সে দিকে কন্টিনিউ করাটাও নিজের সঙ্গে যুলুম মনে হচ্ছে। আর দ্বীনের ফরজ পরিমাণ ইলম নেই বলা যায়। একজন ভাল ডাক্তার হওয়া অনেক পরিশ্রমের ব্যাপার। আমার পক্ষে দুইটা একসঙ্গে করাটা অনেক কষ্টসাধ্য। এজন্য উক্ত অবস্থাদৃষ্টে বিজ্ঞ শাইখদের নিকট কি করণীয় বলে মনে হয়?
প্রশ্ন খ:
নারীদের ইজ্জত-আব্রু রক্ষার্থে মেডিক্যাল সেক্টরে ফরযে কিফায়া আদায় করার জন্য মুসলিম নারীদের একাংশ এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু বর্তমান মেডিক্যাল সেক্টর এতটাই নোংরা এবং জাহিলিয়্যাতপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, যেখানে নিজেদের ঈমান হারানোর সম্ভাবনা অত্যধিক। এতটা প্রতিকূল অবস্থায় চিকিৎসাবিদ্যা অর্জনে নারীদের কি ফরযে কিফায়া আদায় করার উদ্দেশ্যে যাওয়া উচিত? যদি উচিত না হয়, তবে বর্তমানে নারীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে হুকুম কি হবে?
প্রশ্ন গ:
নারীদের জন্য সহশিক্ষার পরিবেশে থেকে পড়াশোনা করা উচিত কিনা? যদি পড়াশোনা করা উচিত না হয়, তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুসলিম নারীদের কোন ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি এবং কোন ধরনের পরিবেশে অবস্থান করা উচিত?
উত্তর:
এক. প্রিয় বোন! আপনি আল্লাহর শোকর আদায় করুন, আল্লাহ আপনাকে এই পরিমাণ দ্বীনের বুঝ দান করেছেন, যার জন্য আপনি দুনিয়ার নগণ্য কিছু প্রাপ্তি ছেড়ে আল্লাহর পথে অগ্রসর হওয়ার চিন্তা করছেন। দোয়া করি, আল্লাহ আপনাকে সুপথে পরিচালিত করুন, ঈমানের উপর অটল থাকার তাওফীক দান করুন। আপনি নিম্নোক্ত দোয়াগুলো বেশি বেশি পাঠ করবেন,
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ (8) آل عمران: 8
‘’হে আমাদের রব! হেদায়াত দান করার পর আমাদের অন্তরগুলোকে বক্র করে দিও না। তোমার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান কর। নিশ্চয় তুমি মহাদাতা।’’ -সূরা আলে ইমরন: ৮
رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَدْخِلْنِي بِرَحْمَتِكَ فِي عِبَادِكَ الصَّالِحِينَ (19) النمل: 19
‘’হে আমার রব! তুমি আমার ও আমার পিতা-মাতার উপর যেসব নেয়ামত দান করেছ, তার শোকর আদায় করার এবং এমন নেক আমল করার তাওফীক দান কর, যা তুমি পছন্দ কর এবং দয়া করে তুমি আমাকে তোমার সালিহ (নেক) বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো!’’ -সূরা নামল: ১৯
দুই. আসলে একজন মুসলিম ছাত্র বা ছাত্রীর জন্য বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলোর প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় পড়াশোনার ক্ষেত্রে আপনি সমস্যাটি যেভাবে উপলব্ধি করেছেন, এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। সেখানে একজন ছাত্রের জন্য দ্বীন রক্ষা করে পড়াশোনা করা যত কঠিন, একজন ছাত্রীর জন্য তা আরও বেশি কঠিন। বরং অসম্ভবপর প্রায়। শিক্ষাপদ্ধতি সহশিক্ষা হওয়ায়, এখানে পর্দার ফরজ বিধান লঙ্ঘিত হওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য হারামে লিপ্ত হওয়া অনিবার্য। শিক্ষা গ্রহণের জন্য এভাবে প্রতিনিয়ত হারামে লিপ্ত হওয়ার অনুমোদন শরীয়তে নেই।
তিন. আরও গুরুতর বিষয় হচ্ছে, এদেশের প্রচলিত ধারার পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই সেক্যুলার ও বস্তুবাদি কুফরি চিন্তাদর্শনের ভিত্তিতে গড়া এবং এই শিক্ষাব্যবস্থা তাদের কুফরি রাষ্ট্রব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিমূল। এর অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে, একজন মুসলিম নামে মুসলিম থাকলেও, আকীদা বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনায় হয়ে উঠবে একজন বস্তুবাদি সেক্যুলার মুরতাদ কিংবা নাস্তিক। সে নিজেকে মুসলিম দাবি করলেও অন্য সব কুফরি ধর্মকে সম্মান করা জরুরি মনে করবে।
চার. ঈমান রক্ষা করা, পর্দা করা এবং হারাম থেকে বেঁচে থাকা ফরজে আইন। স্বাভাবিক অবস্থায় ফরজে কেফায়া আদায় করার জন্য একটি ফরজে আইনও লঙ্ঘন করা জায়েয নয়। একাধিক ফরজে আইন লঙ্ঘন করা বা ঈমানকে ঝুঁকিতে ফেলার তো প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া বর্তমানে মুসলিমদের মধ্যে কিছু নারী ডাক্তার থাকায় ফরজে কেফায়া পরিপূর্ণরূপে না হলেও মোটামুটি আদায় হওয়ার মতো ব্যবস্থা আছে বলা যায়। বাকিটা পূর্ণ করার জন্য ইতিমধ্যে যারা ডাক্তার হয়ে গেছেন, আপাতত তাদেরকে আমরা দাওয়াত দিয়ে দ্বীনের পথে আনার চেষ্টা করতে পারি।
পাঁচ. পিতা-মাতার আনুগত্য জরুরি। তবে তা শরীয়াহ সম্মত বিষয়ে সীমাবদ্ধ। শরীয়াহ পরিপন্থি বিষয়ে পিতা-মাতার আনুগত্য জায়েয নয়।
হাদীসে এসেছে,
عن علي، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا طاعة لبشر في معصية الله». –صحيح البخاري (7257) ، صحيح مسلم (1840) مصنف ابن أبي شيبة (34998) واللفظ له.
“আলী (রাযি) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালার অবাধ্য হয়ে কোনো মানুষের আনুগত্য করা যাবে না।” –সহীহ বুখারী: ৭২৫৭; সহীহ মুসলিম: ১৮৪০; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: ৩৪৯৯৮
উমারাহ রহ. বলেন,
نزل معضد إلى جنب شجرة، فقال: ما أبالي أطعت رجلا في معصية الله، أو سجدت لهذه الشجرة من دون الله. -مصنف ابن أبي شيبة: 34403
“(বিশিষ্ট তাবেয়ী) মি’দাদ (রহ) একটি গাছের পাশে অবতরণ করেন। অত:পর তিনি বলেন, আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কোন মানুষের আনুগত্য করা, আর আল্লাহর পরিবর্তে এই গাছকে সিজদা করা আমার নিকট বরাবর।” -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: ৩৪৪০৩
ছয়. সুতরাং এ অবস্থায় আপনি আপনার দ্বীন ও ঈমান রক্ষার জন্য পিতা-মাতার কথা অমান্য করে মেডিক্যাল পড়া বাদ দিলে, আল্লাহর কাছে পিতা-মাতার অবাধ্য গণ্য হবেন না। বরং এটাই আপনার জরুরি করণীয় এবং এতে আল্লাহ খুশি হবেন ইনশাআল্লাহ। অতএব আপনি নির্দ্বিধায় আল্লাহর উপর ভরসা করে সাহসিকতার সঙ্গে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন এবং মেডিক্যাল পড়া বন্ধ করে দ্বীনি ইলম অর্জন শুরু করতে পারেন।
আর আপনার পিতা-মাতাকে ধীরে ধীরে বিষয়গুলো বুঝানোর চেষ্টা করুন। আপনি তাদের ব্যাপারে যে আশঙ্কা করছেন যে, তারা আপনার এই সিদ্ধান্তের কথা শুনলে স্ট্রোক কিংবা হার্ট এ্যাটাক করবেন, আল্লাহর কাছে আশা রাখুন, এমনটি হবে না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ অবশ্যই আপনার সাহায্য করবেন ইনশাআল্লাহ। কোরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে,
}وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا (2) وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا (3)} [الطلاق: 2، 3[
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পথ খুলে দেন এবং তাকে এমনভাবে রিযিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করে না। যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হন। আল্লাহ তাঁর বিষয় পূর্ণ করেই ছাড়েন। সবকিছুর জন্যই তিনি একটি সীমা নির্ধারিত করেছেন।” -সূরা তালাক: ২-৩
ইমাম তাবারি (রহ) বর্ণনা করেন,
أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ كَانَ يَقُولُ: ….. أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ: لَا يَقْدِرُ رَجُلٌ عَلَى حَرَامٍ ثُمَّ يَدَعُهُ، لَيْسَ بِهِ إِلَّا مَخَافَةُ اللَّهِ، إِلَّا أَبْدَلَهُ اللَّهُ فِي عَاجِلِ الدُّنْيَا قَبْلَ الْآخِرَةِ مَا هُوَ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ذَلِكَ. – تفسير الطبري = جامع البيان عن تأويل آي القرآن ط هجر 14/ 593
“…রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, যে কোনো ব্যক্তি কোনো হারাম বিষয়ে সক্ষম হয়, তারপর একমাত্র আল্লাহর ভয়ে তা পরিহার করে, তাকে আল্লাহ আখেরাতে যাওয়ার পূর্বে দুনিয়াতেই এমন বস্তু দান করেন, যা তার চেয়ে উত্তম।” -তাফসীরে তাবারী: ১৪/৫৯৩
ইমাম বায়হাকী (রহ) বর্ণনা করেন,
– 832أَخْبَرَنَا أَبُو طَاهِرٍ الْفَقِيهُ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حَمْشَاذٍ، حَدَّثَنَا الْحَارِثُ بْنُ أَبِي أُسَامَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو النَّضْرِ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ، عَنْ حُمَيْدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو قَتَادَةَ، وَأَبُو الدَّهْمَاءِ، قَالا : أَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ ، فَقَالَ الْبَدَوِيُّ : أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِي، فَجَعَلَ يُعَلِّمُنِي مِمَّا عَلَّمَهُ اللَّهُ، وَكَانَ يَقُولُ : إِنَّكَ لَنْ تَدَعَ شَيْئًا اتِّقَاءً لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ إِلاَّ أَعْطَاكَ اللَّهُ خَيْرًا مِنْهُ. الآداب للبيهقي: 2/ 8، بترقيم الشاملة آليا
“… আবু কাতাদা ও আবুদ দাহমা রাহিমাহুমাল্লাহ বলেন, আমরা এক বেদুঈন (সাহাবী)-এর নিকট গেলাম। তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরলেন এবং আল্লাহ তাঁকে যা শিখিয়েছেন, তা থেকে আমাকে শেখাতে লাগলেন। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর ভয়ে যে কোনো বিষয় পরিহার করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন।” -আল-আদাব, বায়হাকী: ২/৮
ফাতওয়া নং - ০৩
বিশ্ববিদ্যালয় ও হাই স্কুলে শিক্ষকতা করার হুকুম কী?
প্রশ্ন:
বিশ্ববিদ্যালয় ও হাই স্কুলে ছাত্র ছাত্রীদেরকে এক সাথে পড়াতে হয়। এতে চোখের পর্দা লঙ্ঘন হয়। তাই জানতে চাই, শরিয়তের দৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও হাই স্কুলে শিক্ষকতা করার হুকুম কী?
উত্তর:
সহশিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকতায় অনেক সমস্যা রয়েছে। একে তো তাতে পর্দার বিধান লঙ্ঘিত হয়। দ্বিতীয়ত আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নানান কুফর শিরক ও নাস্তিক্যবাদ রয়েছে। তৃতীয়ত একজন শিক্ষককে সভ্যতা সংস্কৃতি ও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিভিন্ন অন্যায় ও পাপাচারমূলক কাজে লিপ্ত হতে হয়। এছাড়া এদেশে দুর্নীতি যে মহামারির রূপ ধারণ করেছে, আমাদের ধারণা, কেউ দুর্নীতি না করলে সরকারি চাকরিতে টিকে থাকা তার জন্য প্রায় অসম্ভব। সুতরাং সহশিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলে যদি এসব বিষয় থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব না হয়, তাহলে তা জায়েয হওয়ার প্রশ্নই আসে না; বরং ক্ষেত্রবিশেষে ঈমান হারানোরও আশঙ্কা রয়েছে। হ্যাঁ, কারো পক্ষে যদি এসকল অন্যায় থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হয় এবং পাঠ্য বিষয়ের শরিয়াহ পরিপন্থী ও কুফরি-শিরকি বিষয়গুলো পড়ানোর সময় ছাত্রদের সামনে পরিষ্কার করে দিতে পারেন যে, এগুলো কুফর শিরক এবং ঈমান পরিপন্থী, তাহলে তার জন্য এ চাকরি তাগুতের অধীন হওয়ার কারণে মাকরুহ হলেও জায়েয হবে; যদিও তা অসম্ভব প্রায়।
ফাতওয়া নং - ০৪
পুরুষ শিক্ষকের সামনে চেহারা খোলা রেখে ক্লাস করা কি জায়িয হবে?
প্রশ্ন:
আমার বোন ঢাকার প্রসিদ্ধ একটি স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ে। সেখানে ছেলে-মেয়েদের আলাদা শিফট আছে। মেয়েদের মর্নিং শিফট। ছেলেদের ডে শিফট। এক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। সে সম্পূর্ণ পর্দা মেনেই স্কুলে যায়। কিন্তু সমস্যা হল, পুরুষ শিক্ষকদের সামনে তাকে চেহারা খোলা রেখে ক্লাস করতে হয়। এমতাবস্থায় তার জন্য সেখানে পড়া কি জায়িয হবে?
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله وكفى وسلام علي عباده الذين اصطفى أمابعد
প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক নারীর জন্য বেগানা পুরুষ থেকে পর্দা করা ফরজ। একান্ত প্রয়োজন না থাকলে নারীকে গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করতে বলা হয় এবং সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى.
“তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান কর। আগের জাহিলী যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন কর না।” (সূরা আহযাব ৩৩ : ৩৩)
কখনও নিতান্ত প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে পূর্ণ শরয়ী পর্দা সহকারে বের হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا.
“হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মু`মিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের (মুখের) ওপর নামিয়ে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে (যে, তারা সতী সাধ্বী মু`মিন নারী), ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আহযাব ৩৩ : ৫৯)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবন কাসীর (র) (৭৭৪ হি.) বলেন-
قال علي بن أبي طلحة، عن ابن عباس: أمر الله نساء المؤمنين إذا خرجن من بيوتهن في حاجة أن يغطين وجوههن من فوق رؤوسهن بالجلابيب، ويبدين عينا واحدة. (تفسير ابن كثير: 6/442)
“আলী ইবন আবী তালহা, ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা`আলা মু`মিন নারীদেরকে নির্দেশ দেন যে, তারা যখন নিজ ঘর থেকে কোন প্রয়োজনে বের হয়, তখন তাদের মুখমণ্ডলকে যেন মাথার ওপর থেকে বড় চাদর দিয়ে ঢেকে নেয় এবং এক চোখ খোলা রাখে।” (তাফসিরে ইবন কাসীর: ৬/৪৪২)
ইমাম আবু বকর জাসসাস (র) (৩৭০ হি.) বলেন-
في هذه الآية دلالة على أن المرأة الشابة مأمورة بستر وجهها عن الأجنبيين وإظهار الستر والعفاف عند الخروج لئلا يطمع أهل الريب فيهن. اهـ (احكام القران: 3/486)
“এ আয়াত এ ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণ যে, যুবতী নারী বের হওয়ার সময় নিজ মুখমণ্ডল পরপুরুষ থেকে ঢেকে রাখা এবং পর্দা ও সংযম প্রকাশ করার বিষয়ে আদিষ্ট, যেন অসাধু ব্যক্তিরা তাদের ব্যাপারে কোন লালসা করতে না পারে।” (আহকামুল কুরআন: ৩/৪৮৬)
সুতরাং আপনার বোনের জন্য যদি পর্দার ফরজ বিধান রক্ষা করে ঐ স্কুলে ক্লাস করা সম্ভবপর না হয়, তাহলে তার জন্য সেখানে যাওয়া সম্পূর্ণ নাজায়িয। অবিলম্বে সেখানে যাতায়াত বন্ধ করা জরুরি।
ইমাম মুহাম্মদ বিন শিহাব আল-বাযযায (৮২৭ হি.) (র) বলেন:
ولا يأذن بالخروج إلى المجلس الذي يجتمع فيه الرجال والنساء وفيه من المنكرات.اهـ – الفتاوى البزازية (2/ 26)
“(নারীদের) এমন মজলিসে যেতে অনুমতি দেয়া যাবে না, যেখানে নারী-পুরুষ একত্র হয় ….।” (ফাতওয়া বাযযাযিয়া: ২/২৬)
এ হল শুধু পর্দার বিধানের কথা। এছাড়াও বর্তমান জেনারেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন বিজাতীয় দিবস, সভ্যতা ও সংস্কৃতি ইত্যাদিতে যোগ দেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে, যেগুলোতে অনেক সময়ই একজন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন হারাম ও কুফরি কাজে লিপ্ত হতে হয়।
সুতরাং যেসব প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করলে এমন নাজায়িয, হারাম ও কুফর শিরকে লিপ্ত হওয়া অবশ্যম্ভাবী, সেসব প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করা কোন মু`মিনের জন্য জায়িয নয়। অনেক ক্ষেত্রে ঈমানহারা হওয়ারও আশঙ্কা আছে। অভিভাবকের জন্যও সন্তানকে এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠানো জায়িয নয়। আল্লাহর এমন নাফরমানির কাজে পিতামাতার অনুগত্যও সন্তানের জন্য জায়িয নয়।
হাদীসে এসেছে-
عن علي، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا طاعة لبشر في معصية الله». –صحيح البخاري (7257) ، صحيح مسلم (1840) مصنف ابن أبي شيبة (34998) واللفظ له.
“আলী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা`আলার অবাধ্য হয়ে কোন মানুষের আনুগত্য করা যাবে না।” (সহীহ বুখারী: ৭২৫৭; সহীহ মুসলিম: ১৮৪০; মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা: ৩৪৯৯৮)
উমারাহ (র) বলেন-
نزل معضد إلى جنب شجرة، فقال: ما أبالي أطعت رجلا في معصية الله، أو سجدت لهذه الشجرة من دون الله. -مصنف ابن أبي شيبة: 34403
“(বিশিষ্ট তাবিয়ী) মি’দাদ (র) একটি গাছের পাশে অবতরণ করেন। অত:পর তিনি বলেন, আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কোন মানুষের আনুগত্য করা, আর আল্লাহর পরিবর্তে এই গাছকে সিজদা করা আমার নিকট বরাবর।” (মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা: ৩৪৪০৩)
আল্লাহ তা`আলা আমাদের হিফাজত করুন। আ-মীন।
ফাতওয়া নং - ০৫
বর্তমানে প্রচলিত জেনারেল শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা গ্রহণের বিধান
প্রশ্নঃ
বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রমের পাঠ্য বইগুলো হিন্দু ধর্মের আকীদা ও রীতি-নীতি, নাস্তিক্যবাদ ও কুফর শিরকে ভরপুর। যা দেখলে মনে হয়, মুসলিম শিশুদেরকে কীভাবে নাস্তিক মুরতাদ বানানো যায়, সেই লক্ষ্য পূরণে সরকার উঠে পড়ে লেগেছে। এই অবস্থায় আমার জানার বিষয় হলো,
০১. কুফরী বাক্য লেখা কিংবা পড়ার হুকুম কী?
০২. এই সিলেবাসে লেখাপড়া করার হুকুম কী?
উত্তরঃ
০১. কুফরী বাক্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করা, কুফরী বাক্যকে সমর্থন করা, ভালো মনে করা, কুফরী বাক্যের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া কিংবা সন্তুষ্টি প্রকাশ করা সবই কুফরী। একইভাবে মজা করে কিংবা ঠাট্টাচ্ছলে স্বেচ্ছায় কুফরী বাক্য উচ্চারণ করা কিংবা লেখাও কুফরী। -রদ্দুল মুহতার: ৪/২০৮, ২২৪ (দারুল ফিকর); আল-বাহরুর রায়েক ও মিনহাতুল খালেক: ৫/১৩৩ (দারুল কিতাবিল ইসলামী)
মুফতী রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী রহিমাহুল্লাহ আজ থেকে প্রায় দেড় শত বছর পূর্বে ইংরেজদের স্কুলে পড়া ও তাদের দাওয়াতী মিশনারির প্রোগ্রামে যুক্ত হয়ে কুফরী বাক্য উচ্চারণ করা সম্পর্কে দেওবন্দ ও সাহারানপুরসহ ভারতের ১৯ জন বিজ্ঞ আলেমের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি ফাতওয়া প্রদান করেন।
(سوال) عیسائي مذہب کے پادریوں نے سہارنپور میں آکر نوجوان لڑکیوں کو تو اپنے مدرسوں میں داخل کرکے بہکانا اور بے دین کرنا اور مرتد بنانا شروع کیا ہی تھا ، اب ایک اور فریب وجہل کی راه نكالي وه يه كه مسلمانوں كي چھ چھ، آٹھ آٹھ، دس دس، بیس بیس وغیرہ لڑکیوں اور عورتوں کو اپنے مذہب کی کتابیں پڑھانا شروع کیا ہے، اور وہ لڑکیاں اور عورتیں مطلق اپنے مذہب سے واقعة (واقف) نہیں، ان کو ہر اتوار کو پیسے اور تصویریں اور شیرینی کے لالچ دیۓ جاتے ہیں اور مسیح کو غزلوں اور بھجنوں میں خدا اور خدا کا بیٹا گوایا جاتا ہے، اور لڑکیاں اور عورتیں خصوصا مسلمانوں کی تنخواہ کے لالچ میں کفر والحاد کے جملے بولتے ہوۓ بھی نہیں ڈرتیں، ایسے مکر وفریب سے پادریوں نے ملک پنجاب میں گذشتہ سالوں میں سات سو لڑکیاں عیسائي کی ہیں، سہارنپور میں یہ بلاۓ جانگز اور ایمان ربا اسی سال آئي ہے، نو مدرسے خاص سہارنپور میں مسلمانوں میں جاری ہیں، اور مسلمانوں کی عورتیں اس وجہ سے کہ روپیہ کے لالچ میں آکرخود انتظام کر لیں گی اور لڑکیوں کو جمع کرکے بیدین بے ایمان کرنے کی ڈھنگ ہم کو بتلادیں گی۔ معلمہ مقرر کی گئيں، ان مدرسوں میں پڑھنا اور پڑھانا اور پڑھائی کے واسطے مکان دینا اور پڑھنے والیاں اور پڑھانے والیاں جو اس فعل بد سے راضی ہوں اور جو عورتیں شوہروں کے اس حکم خاص کو نہیں مانتیں اور جو شخص اپنے مکان اور اپنے اہل وعیال کو اس کام سے باز نہیں رکھتا اور اپنی لڑکیوں کا ایسے مدرسہ میں جانے سے مانع نہیں ہوتا عند الشر ع کیا حکم رکھتے ہیں؟ مفصل بحوالۂ آیات و احادیث تحریر فرمایۓ۔ اجر عظیم اللہ سے پایۓ ۔ فقط۔
(جواب) کلمۂ کفر بولنا عمدا اگرچہ اعتقاد اس پر نہ ہو کفر ہے۔ چناچہ رد المحتار میں لکھاہے۔ “قال في البحر: والحاصل: أن من تكلم بكلمة الكفر هازلا أو لاعبا كفر عند الكل ولا اعتبار باعتقاده كما صرح به (في) الخانية، ومن تكلم (بها) مخطئا أو مكرَها لا يكفر عند الكل، ومن تكلم (بها) عامدا (عالما) كفر عند الكل، ومن تكلم بها اختيارا جاهلا بأنها كفر ففيه اختلاف الخ. وفي الفتح: ومن هزل بلفظ كفر ارتد وان لم يعتقد به (وإن لم يعتقده)؛ للاستخفاف، فهو ككفر المعتاد (العناد). قال في رد المحتار: أي تكلم (به) باختياره غير قاصد معناه، وهذا لا ينافي ما مر من أن الإيمان هو التصديق فقط أو(مع) الإقرار؛ لأن التصديق وإن كان موجودا حقيقة لكنه زائل حكما؛ لأن الشارع جعل بعض المعاصي أمارة (على) عدم وجوده كالهزل المذكور، وكما لو سجد لصنم أو وضع مصحفا في قاذورة فإنه يكفر وإن كان مصدقا؛ لأن ذلك في حكم التكذيب كما أفاده في شرح العقائد. انتهى. رجل كفر بلسانه طائعا وقلبه مطمئن على الإيمان يكون كافرا ولا يكون عند الله مؤمنا، كذا في قاضي خان.
پس رویات سے صاف واضح ہے کہ جو کوئي حضرت عیسی عليه السلام کو ابن اللہ راگ میں گاوے یا کوئي کلمۂ کفریہ پادریوں کے کہلانے سے -جو صاحب مدارس کے لڑکے لڑکیاں کہتی ہیں- کہنےسےمرتد کافر ہوا۔ اور اس امر پر رضا دینا بھی کفر ہے۔ قال في شرح العقائد وشرح القاري على الفقه الأكبر: الرضا بالكفر كفر. انتهى. اور ان سخت کلمات پر کچھ پرواہ نہ کرنا اور سہل جاننا بھی کفر ہے۔ الاستهانة بالمعصية بأن يعدها هنيئة (هينة) ويرتكبها من غير مبالاة بها ويجريها مجرى المباهات (المباحات) في ارتكابها كفر، كذا في شرح علي على الفقه الأكبر.
الحاصل اس مدرسے کے لڑکے لڑکیاں جو ایسے کلمات بولتے ہیں سب مرتد ہیں اور جو ان کو بخوشی ایسے کام کے واسطے وہاں بھیجتے ہیں دیدہ ودانستہ وہ بھی مرتد کافر ہیں، اور ان مدارس کی پڑھانے والیاں اور اس کے معین مکان وچندہ کے اگر اس فعل بد سے راضی ہیں سب کافر اور مرتد، اور جو اس امر کو برا جان کر دنیا کی طمع سے یہ کام کرتے ہیں یہ سب فاسق فاجر ہیں۔ سب اہل اسلام کو لازم ہے کہ ایسے لوگوں کو اور اپنے بچوں کو روکیں اور منع کریں۔ لقوله عليه السلام: من رأى منكرا فليغيره بيده، فان لم يستطع فبلسانه، فان لم يستطع فبقلبه، وليس وراء ذلك حبة خردل من إيمان. الحاصل جو شخص استطاعت کسی قسم کے منع کی رکھتا ہے اور پھر منع نہ کرے تو اگر اس فعل کو مستحسن جانتا ہے یا سہل جانتا ہے تو کافر مرتد ہوا، اور جو برا جان کر منع نہ کرے گا وہ مداہن وفاسق ہوا ۔ فقط والله تعالي أعلم۔ كتبه الراجي رحمة ربه رشيد أحمد گنگوہی عفي عنه.
جواب صحيح ہے، محمد مظهر، مدرس مدرسه سهارنپور
الجواب حق والحق متبع، عنايت الہي سهارنپوری
الجواب صحيح، ابو الحسن
جواب صحيح ہے، عزيز حسن عفي عنه
جواب صحيح ہے، مشتاق أحمد عفي عنه
الجواب صحيح، حبيب الرحمن عفي عنه
الجواب صحيح ، محمد حسن، مدرس مدرسه ديوبند
الجواب حق، عبد الرحمن عفي عنه
أصاب المجيب، ذو الفقار علي عفي عنه
الجواب صحيح والمنكر فضيح، أحمد عفي عنه
جواب صحيح ہے، محمد امير باز خان
الجواب صحيح حق، محمد محمود عفي عنه، مدرس مدرسه دار العلوم ديوبند
الجواب صحيح، عزيز الرحمن ديوبندي، مدرس مدرسه عربي ميرٹھ، عفي عنه
هذا الجواب صحيح ، والله أعلم وعلمه أتم، محمد ابراهيم سنبھلي عفي عنه
الجواب صحيح، عبد المومن ديوبندي، عفي عنه
الجواب صحيح، محمد منصب علي عفي عنه
جواب صحيح ہے، محمد محمود حسن عفي عنه، مدرس مدرسه اسلاميہ ديوبند.
الحق اجراۓ کلمۃ الکفرکفر ہے۔ اور آیات کریمہ سے بھی یہ مضمون صراحۃ ثابت ہوتا ہے۔ وهي هذا: من كفر بالله من بعد إيمانه إلا من أكره وقلبه مطمئن بالإيمان ولكن من شرح بالكفر صدرا فعليهم غضب من الله ولهم عذاب عظيم. اس واسطے کہ آیات کریمہ میں صرف حالت اکراہ کا استثنا کیا ہے، اور ما سواۓ اس کے اجراۓ کلمۃ الکفر علی سبیل الا ختیار کفر میں داخل تھا ہی، اور ظاہر ہے کہ اشخاص مذکورہ کا راگ وغیرہ میں کلمات کفر کے زبان سے نکالنا قبیل اکراہ سے نہیں بلکہ با اختیار خود ہے، تو ضرور کفر میں داخل ہوگا، اور اعانت کفر اور تعلیم اس کی اسی قبیل سے ہے۔ والله اعلم بالصواب. الراقم: خليل أحمد ، عفي عنه، مدرس مدرسه عربي، سهارنپور۔
صح الجواب، قال الله تعالى في كتابه: وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ. والله أعلم. حرره الراجي عفو ربه القوي أبو الحسنات محمد عبد الحي، تجاوز الله عن ذنبه الجلي والخفي.
– فتاوى رشيديه، ص: 195-198 ط. دار الاشاعت كراتشي
“প্রশ্ন: (ইতিপূর্বে) খ্রিস্টান পাদরিরা সাহারানপুরে এসে যুবতী মেয়েদেরকে তো তাদের স্কুলে ভর্তি করে প্রতারিত করা এবং বেদীন ও মুরতাদ বানানো শুরু করেছিলোই, এখন তারা ধোঁকা ও অজ্ঞতার নতুন আরেকটি পথ বের করেছে। তা হলো, মুসলমানদের ছয়জন, আটজন, দশজন, বিশজন করে করে মেয়ে ও নারীদের খ্রিস্টান ধর্মের বই পড়ানো শুরু করেছে। সে সকল মেয়ে ও নারীরা নিজ ধর্মের ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ। তাদেরকে প্রতি রবিবার অর্থ, ছবি ও মিষ্টান্নের লোভ দেখিয়ে ঈসা আলাইহিস সালামকে সঙ্গীত ও স্তুতিতে খোদা ও খোদার পুত্র বলানো হয়। মুসলিম নারীরা অর্থের লোভে কুফরী বাক্য উচ্চরণ করতেও ভয় করে না। এভাবে প্রতারণা করে পাদরিগণ বিগত বছরগুলোতে পাঞ্জাবে সাতশত মেয়েকে খ্রিস্টান বানিয়েছে। এই জীবন বিধ্বংসী ও ঈমান বিনষ্টকারী ফিতনা সাহারানপুরে এ বছর এসেছে। শুধু সাহারানপুরে মুসলমানদের মাঝে নয়টি স্কুল বিদ্যমান। এসব স্কুলে মুসলিম নারীদের শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যেন তারা অর্থের লোভে নিজেরাই সব কিছু আঞ্জাম দেয় এবং মেয়েদেরকে একত্রিত করে বেদীন ও বেঈমান বানানোর পদ্ধতি বাতলে দেয়। এ সব স্কুলে পড়া, পড়ানো, অথবা পড়ানোর জন্য জায়গা দেয়ার বিধান কী? শিক্ষক-শিক্ষার্থী যারা এই অপকর্মের প্রতি সন্তুষ্ট, যেসব নারী স্বামীদের আদেশ অমান্য করে তাতে যাবে, যে ব্যক্তি নিজের পরিবার-পরিজনকে এমন কাজ থেকে বিরত রাখবে না, নিজের মেয়েদের এমন প্রতিষ্ঠানে যেতে বাধা দিবে না, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের বিধান কী? আয়াত ও হাদীসের উদ্ধৃতিতে বিস্তারিত লিখবেন। আল্লাহর কাছে বড় প্রতিদান পাবেন।
উত্তর: ইচ্ছকৃত কুফরী বাক্য বলা কুফর; যদিও ওই বাক্যের প্রতি বিশ্বাস না থাকে। ‘ফাতওয়া শামী’তে এসেছে, ‘আল-বাহরুর রায়েকে’ বলা হয়েছে, কেউ ঠাট্টাচ্ছলে কুফরী বাক্য উচ্চারণ করলে, সকলের ঐকমত্যে কাফের হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তার বিশ্বাস ধর্তব্য হবে না, যেমনটি ‘ফাতওয়া খানিয়া’তে সুস্পষ্টরূপে বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে ভুলবশত কিংবা বলপ্রয়োগের কারণে বাধ্য হয়ে কুফরী বাক্য উচ্চারণ করলে কারও মতেই কাফের হবে না। যে ব্যক্তি (জেনে শুনে) স্বেচ্ছায় কুফরী বাক্য বলবে, সে সকলের ঐকমত্যে কাফের হয়ে যাবে। তবে বাক্যটি কুফরী হওয়ার ব্যাপারে তার জানা না থাকলে সে ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছে।’ ‘ফাতহুল কাদীরে’ এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঠাট্টাচ্ছলে কুফরী শব্দ বলবে, (দীনের প্রতি) অবজ্ঞার কারণে সে মুরতাদ হয়ে যাবে; যদিও সে যা বলেছে তাতে বিশ্বাসী না হয়। এটা ‘কুফরুল ইনাদ’ (হক বুঝেও হঠকারিতাবশত না মানার কুফরের) মতোই।’ ‘ফাতওয়া শামী’তে বলা হয়েছে, ‘অর্থাৎ, সে কুফরী শব্দ স্বেচ্ছায়ই উচ্চারণ করেছে, কিন্তু এর অর্থ উদ্দেশ্য নেয়নি (এক্ষেত্রেও কাফের হয়ে যাবে)। এটা পূর্বের কথার বিপরীত নয় যে, ঈমান শুধু সত্যায়ন ও স্বীকারোক্তির নাম। কেননা বাস্তবে সত্যায়ন থাকলেও এখানে তা ধর্তব্য নয়। কারণ শরীয়ত ঠাট্টাচ্ছলে কুফরী বাক্য বলার মতো কিছু গুনাহকে ঈমান না থাকার নিদর্শন হিসাবে নির্ণয় করেছে। যেমন ঠাট্টাচ্ছলে বলা; যা পূর্বে উল্লেখ করা হলো। তেমনি কেউ মূর্তিকে সিজদা করলে অথবা ভাগাড়ে কুরআন নিক্ষেপ করলে কাফের হয়ে যাবে, যদিও সে ইসলামে বিশ্বাসী হয়। কেননা এই কাজটি কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করারই নামান্তর, যেমনটি শরহে আকায়েদে বর্ণনা করা হয়েছে।’ ‘ফাতওয়া কাযীখানে’ বলা হয়েছে ‘কেউ স্বেচ্ছায় কুফরী বাক্য উচ্চারণ করলে কাফের হয়ে যাবে, যদিও তার অন্তর ঈমানে অবিচল থাকে। সে আল্লাহ তাআলার নিকট মুমিন হিসাবে গৃহীত হবে না।’
উপরের বর্ণনাসমূহ থেকে স্পষ্ট, যে কেউ হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে সঙ্গীতে আল্লাহর পুত্র বলবে অথবা পাদরিদের বলানোর কারণে কোনো কুফরী বাক্য বলবে, সে মুরতাদ-কাফের হয়ে যাবে। এ বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করাও কুফর। ‘শরহে আকায়েদ’ এবং মোল্লা আলী কারী রহিমাহুল্লাহ রচিত ‘শরহুল ফিকহুল আকবারে’ এসেছে, ‘কুফরের প্রতি সন্তুষ্টিও কুফর।’ এমন মারাত্মক কথাগুলোর ব্যাপারে কোনো পরোয়া না করা এবং এগুলোকে হালকা মনে করাও কুফর। ‘শরহুল ফিকহুল আকবারে’ বলা হয়েছে, ‘গুনাহকে হালকা ভাবা, বেপরোয়াভাবে তাতে লিপ্ত হওয়া এবং লিপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সেটাকে মুবাহ ও বৈধ বিষয়গুলোরই অনুরূপ জ্ঞান করা কুফর’।
সারকথা হল, এই স্কুলগুলোর ছেলে-মেয়েরা, যারা এসব কুফরী কথা বলে, সবাই মুরতাদ। যে জেনেশুনে এমন কাজের জন্য তাদেরকে সেখানে পাঠাবে সেও কাফের ও মুরতাদ। স্কুলগুলোর শিক্ষক এবং জমি ও চাঁদা প্রদানের মাধ্যমে যারা এর সহায়তা করে তারা যদি এই অপকর্মের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, তারাও কাফের ও মুরতাদ। আর যে এ কাজকে মন্দ মনে করে শুধু পার্থিব স্বার্থে তাতে লিপ্ত হয়, সে ফাসেক ও পাপিষ্ঠ। প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য, এমন লোকদের এবং নিজেদের সন্তানদের বাধা দেওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ অন্যায় দেখলে যেন হাত দিয়ে তা প্রতিহত করে। যদি তা না পারে, সে যেন যবানের মাধ্যমে তা দূর করতে তৎপর হয়। যদি তাও না পারে, তবে সে যেন উক্ত মন্দ কাজকে মনে মনে ঘৃণা করে এবং পরিবর্তনের পরিকল্পনা করে। এর বাইরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই।’
যে ব্যক্তি বাধা দেয়ার কোনো প্রকার সামর্থ্য রাখা সত্ত্বেও বাধা দিলো না, যদি সে ওই কাজকে ভালো মনে করে অথবা হালকা মনে করে, তাহলে সে কাফের-মুরতাদ হয়ে যাবে। আর যে মন্দ মনে করে বাধা না দিবে, সে শৈথিল্যবাদী ও ফাসেক বলে গণ্য হবে। আল্লাহ ভালো জানেন।
ফাতওয়া প্রদানকারী: রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী উফিয়া আনহু।
[বিজ্ঞ আলেমদের দস্তখত ও সংক্ষিপ্ত মন্তব্য]
উত্তর সহীহ। মুহাম্মাদ মাযহার। শিক্ষক, সাহারানপুর মাদরাসা।
উত্তরটি সত্য এবং সত্যই অনুসরণীয়। ইনায়াত ইলাহী সাহারানপুরী।
উত্তরটি সঠিক। আবুল হাসান।
উত্তর সঠিক। আযীয হাসান, উফিয়া আনহু।
উত্তর সঠিক। মুশতাক আহমদ, উফিয়া আনহু।
উত্তরটি সঠিক। হাবীবুর রহমান, উফিয়া আনহু।
উত্তরটি সঠিক। মুহাম্মাদ হাসান। শিক্ষক, দেওবন্দ মাদরাসা।
উত্তরটি সত্য। আবদুর রহমান, উফিয়া আনহু।
উত্তর প্রদানকারী সঠিক উত্তর দিয়েছেন। যুলফিকার আলী, উফিয়া আনহু।
উত্তরটি সঠিক এবং অস্বীকারকারী লাঞ্ছিত। আহমদ, উফিয়া আনহু।
উত্তরটি সঠিক। মুহাম্মাদ আমীর বায খান।
উত্তরটি সত্য, সঠিক। মুহাম্মাদ মাহমুদ, উফিয়া আনহু। শিক্ষক, দেওবন্দ মাদরাসা ।
উত্তরটি সঠিক। আযীযুর রহমান দেওবন্দী, উফিয়া আনহু। শিক্ষক, মাদরাসায়ে আরাবী মিরাঠ।
এই উত্তরটি সঠিক। আল্লাহ ভালো জানেন। তাঁর ইলমই পরিপূর্ণ। মুহাম্মাদ ইবরাহীম সাম্ভলী।
উত্তরটি সঠিক। আবদুল মুমিন দেওবন্দী, উফিয়া আনহু।
উত্তরটি সঠিক। মুহাম্মাদ মানসাব আলী দেওবন্দী, উফিয়া আনহু।
উত্তরটি সঠিক। মুহাম্মাদ মাহমুদ হাসান, উফিয়া আনহু। মাদরাসায়ে ইসলামিয়া, দেওবন্দ।
সঠিক কথা হলো, কুফরী বাক্য আওড়ানোও কুফর। এ বিষয়টি আয়াত থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়। আল্লাহ ইরশাদ করেন:
مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَكِنْ مَنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنَ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ.
[“কেউ ঈমান আনার পর আল্লাহর সাথে কুফরী করলে এবং কুফরীর জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি; তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়, কিন্তু তার চিত্ত ঈমানে অবিচল।” –সূরা নাহল ১৬: ১০৬]
আয়াতে শুধু ইকরাহ (বাধ্যকরণের) অবস্থাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ইকরাহ ব্যতীত সেচ্ছায় কুফরী বাক্য বলা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত ছিলই। স্পষ্ট যে, উল্লিখিত গান-সঙ্গীত ইত্যাদিতে কুফরী বাক্য উচ্চারণ ইকরাহের কারণে নয়; বরং স্বেচ্ছায়। তাই তা নিশ্চয়ই কুফরের অন্তর্ভুক্ত হবে। কুফরের সহযোগিতা এবং কুফর শিক্ষা দেয়ার বিধান একই। আল্লাহই সঠিক জানেন। লিখেছেন, খলীল আহমদ, উফিয়া আনহু। শিক্ষক, মাদরাসায়ে আরাবী সাহারানপুর।
উত্তর সঠিক হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ.
[“নেককাজ ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পর সাহায্য করবে এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না। আর তোমরা আল্লাহর ভয় অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।” –সূরা মায়েদা ০৫: ০২]
আল্লাহ ভালো জানেন। লিখেছেন, আবুল হাসানাত মুহাম্মাদ আবদুল হাই।”
-ফাতাওয়ায়ে রশীদিয়া, পৃ: ১৯৫-১৯৮ )দারুল ইশাআত, করাচি(
হ্যাঁ, কেউ যদি কুফরী বাক্যের কুফর ও অসারতা বুঝানোর জন্য কথায় বা লিখায় কোনো কুফরী বাক্য উদ্ধৃত করে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।-আলবাহরুর রায়েক: ৫/১৩৪; রদ্দুল মুহতার: ৪/২২৪; ইকফারুল মুলহিদীন: ৫৯
উল্লেখ্য, যেকোনো কুফরী বাক্য লেখা কিংবা উচ্চারণ করা যদিও কুফরী, তবে কেউ কুফরী বাক্য উচ্চারণ করলে কিংবা লিখলেই তাকে কাফের আখ্যায়িত করা যায় না। বরং কাফের আখ্যায়িত করার জন্য কিছু শর্তের (شرائط التكفير) উপস্থিতি ও কিছু প্রতিবন্ধকের (موانع التكفير) অনুপস্থিতি নিশ্চিত হতে হয়, যা একজন বিজ্ঞ আলেমের পক্ষেই সম্ভব। কোনো বিজ্ঞ আলেমের সিদ্ধান্ত ছাড়া সাধারণ মানুষের জন্য এবিষয়ে অগ্রগামী হওয়া অন্যায় এবং নিজের ঈমানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
০২. কারও যদি শরীয়তের এই পরিমাণ ইলম এবং সামর্থ্য থাকে, যার ফলে সিলেবাসের হারাম ও কুফরী বিষয়গুলো চিহ্নিত করে, প্রতিষ্ঠানের ঈমান ও শরীয়াহ বিরোধী বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও পরীক্ষাসহ সকল স্তরে সেই সব হারাম ও কুফর শিরক থেকে বেঁচে থাকতে পারে, তার জন্য এমন সিলেবাসে পড়ালেখা করা নাজায়েয না হলেও অনুত্তম ও পরিত্যাজ্য অবশ্যই। পক্ষান্তরে যার এই পরিমাণ শরীয়তের ইলম অথবা সামর্থ্য নেই, তার জন্য এই সিলেবাসে পড়াশোনা করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। এই অবস্থায় কেউ পড়াশোনা করলে, তাকে বিভিন্ন নাজায়েয কাজে যেমন জড়াতে হবে, তেমনি যেকোনো সময় নিজের অজান্তেই কুফর-শিরকে লিপ্ত হয়ে ঈমানও হারাতে হতে পারে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এক হাদীসে এসেছে,
عن جابر بن عبد الله، أن عمر بن الخطاب، أتى النبي صلى الله عليه وسلم بكتاب أصابه من بعض أهل الكتب، فقرأه على النبي صلى الله عليه وسلم فغضب وقال: ” أمتهوكون فيها يا ابن الخطاب، والذي نفسي بيده لقد جئتكم بها بيضاء نقية، لا تسألوهم عن شيء فيخبروكم بحق فتكذبوا به، أو بباطل فتصدقوا به، والذي نفسي بيده لو أن موسى كان حيا، ما وسعه إلا أن يتبعني ” – مسند الإمام أحمد: 15156؛ الحديث حسنه الشيخ الألباني رحمه الله في إرواء الغليل (6\37) بشواهده، قال: الحديث قوي ، فإن له شواهد كثيرة. اهـ
“জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু একদিন আহলে কিতাবের কারও থেকে পাওয়া একটা কিতাব নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলেন। এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিতাবটি পড়ে শোনাতে লাগলেন। এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাগান্বিত হয়ে উঠলেন এবং বললেন, দীনের ব্যাপারে কি তোমরা জ্ঞানশূন্য দিশাহীনতায় দিগ্বিদিক ছুটছো হে খাত্তাবের বেটা? ওই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কাছে আমি শুভ্র স্বচ্ছ ও পরিষ্কার দীন নিয়ে এসেছি। আহলে কিতাবের কাছে কোনো কিছুই জিজ্ঞেস করবে না। হতে পারে তারা সত্য বললে তোমরা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে বসবে কিংবা মিথ্যা বললেও বিশ্বাস করে বসবে। ওই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, স্বয়ং মূসা আলাইহিস সালামও যদি জীবিত থাকতেন, আমার অনুসরণ ছাড়া তাঁর কোনো গত্যন্তর থাকতো না।” –মুসনাদে আহমাদ: ১৫১৫৬
হাফেজ ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ (৮৫২ হি.) বলেন,
وَالْأَوْلَى فِي هَذِهِ الْمَسْأَلَةِ التَّفْرِقَةُ بَيْنَ مَنْ لَمْ يَتَمَكَّنْ وَيَصِرْ مِنَ الرَّاسِخِينَ فِي الْإِيمَانِ فَلَا يَجُوزُ لَهُ النَّظَرُ فِي شَيْءٍ مِنْ ذَلِكَ بِخِلَافِ الرَّاسِخِ فَيَجُوزُ لَهُ وَلَا سِيَّمَا عِنْدَ الِاحْتِيَاجِ إِلَى الرَّدِّ عَلَى الْمُخَالِفِ وَيَدُلُّ عَلَى ذَلِكَ نَقْلُ الْأَئِمَّةِ قَدِيمًا وَحَدِيثًا مِنَ التَّوْرَاةِ وَإِلْزَامُهُمُ الْيَهُود -فتح الباري، الناشر: دار المعرفة – بيروت: 13/ 525
“এই মাসআলার বিশ্লেষণে উত্তম মত হল, যারা ইলম ও ঈমানে মজবুত এবং যারা মজবুত নয় উভয়ের মাঝে পার্থক্য করা। যারা মজবুত নয়, তাদের জন্য এগুলো পড়া জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যাদের ইলম ও ঈমান মজবুত, তাদের জন্য পড়া জায়েয। বিশেষত যখন বাতিলের খণ্ডন করার প্রয়োজন পড়ে। এর প্রমাণ হল, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উলামায়ে কেরামের কর্ম। তাঁরা তাওরাতের উদ্ধৃতি দিয়ে ইহুদীদের খণ্ডন করেছেন।” –ফাতহুল বারী: ১৩/৫২৫
আরও দেখুন: কাশশাফুল কিনা: ১/৪৩৪; আল মাউসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আল কুয়েতিয়াহ: ৩৪/১৮৫
বলা বাহুল্য, একটি মুসলিম জাতির জন্য এমন একটি সিলেবাস মেনে নেওয়া এবং চলতে দেওয়ার ন্যূনতম অবকাশ শরীয়তে নেই। প্রত্যেক মুসলিমের ফরয দায়িত্ব, সামর্থ্য অনুযায়ী বয়কট, অসহযোগিতা, আন্দোলন, বাধা প্রদান ইত্যাদির মতো যেকোনো উপায়ে তা বন্ধ করার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। আরও বড় দায়িত্ব এসব কুফর শিরকের উদ্ভাবক, আমদানিকারক, বাস্তবায়নকারী এবং জোরপূর্বক মুসলিমদের উপর প্রয়োগকারী শাসক শ্রেণিকে উৎখাত করে রাষ্ট্রীয়ভাবে শরীয়াহ আইন ও শরীয়াহ সম্মত শিক্ষা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা। শাসক শ্রেণিতে থাকা মুসলিম দাবিদার, আলেম সম্প্রদায়, সমাজের কর্ণধার এবং এই সিলেবাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের দায়িত্ব এখানে সবচেয়ে বেশি।
ফাতওয়া নং - ০৬
প্রশ্ন:
আমি নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মোটিভেশন লেটার লিখে দেই। বিদেশের বিশ্যবিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স আবেদনের জন্য এটি লাগে। আবেদনকারীর যোগ্যতার ওপর এক পেজের একটা রচনা বলতে পারেন। আমি আবেদনকারী থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে কথা গুছিয়ে লিখে দেই। সে এর জন্য আমাকে কিছু পারিশ্রমিক দেয়। এভাবে অর্থ উপার্জন করা কি হারাম হবে?
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
যেখানে পশ্চিমাদের থেকে আমদানিকৃত মুসলিম বিশ্বের তথাকথিত আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করাই আজকাল ঈমানের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে ইউরোপ আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কী অবস্থা, তা আমাদের কারো অজানা থাকার কথা নয়। যে সকল মুসলিম তরুণ তরুণী সেখানে শিক্ষা গ্রহণ করতে যায়, তারা এখান থেকে নিয়ে যাওয়া ঈমানের ছিটে ফোঁটাও সেখানে রেখে আসে। তাদের শিক্ষা কারিকুলামের মূল ভিত্তিই কুফর শিরক। নাস্তিকতা, ধর্মহীনতা, সেক্যুলারিজম, পুঁজিবাদ, বিবর্তনবাদসহ অসংখ্য কুফরী শিক্ষা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিপাদ্য। তাছাড়া কাফেরদের দেশে অবস্থান এবং কাফেরদের সংশ্রবের কুপ্রভাব তো আছেই, যা স্বতন্ত্র একটি নিষিদ্ধ ও নাজায়েয কাজ। সহশিক্ষা ও নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা, প্রকাশ্য অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা, লাগামহীন যৌনতার ছড়াছড়ি সেখানকার নিত্যজীবনের অপরিহার্য ও সমাদৃত অনুসঙ্গ।
যাদের এই অবস্থা হয়, তাদের জন্য যে সেখানে যাওয়া এবং সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়াশোনা করা সবই নাজায়েয, তাও বলার অপেক্ষা রাখে না।
সুতরাং আপনার জন্য মোটিভেশন লেটার লিখে তাদের এই নাজায়েয কাজে সহযোগিতা করাও নাজায়েয। অবিলম্বে তা পরিহার করা জরুরি। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ (2). المائدة
“সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দ কর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর।” -সূরা মায়েদা (৫): ২
অবশ্য মোটিভেশন লেটার লিখে যে উপার্জন করেছেন, তা ভোগ করা আপনার জন্য হারাম নয়। -তাতারখানিয়া ১৫/৮৫, ১৩০-১৩৪, রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৯১-১৯২, এলাউস সুনান: ১৭/৪৩৩
এই প্রবন্ধে উল্লেখিত সকল ফাতওয়া একটি নির্ভরযোগ্য ফাতওয়া সাইট থেকে কালেক্ট করে আপনাদের সামনে পেশ করেছি। সুতরাং এই প্রবন্ধের ফাতওয়া শিরোনামের ০৬ টি ফাতওয়া collected এবং সংগৃহীত।
প্রশ্ন হল- উচ্চশিক্ষা লাভ করেও চরিত্রহীন হচ্ছে কেন? যেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে চরিত্রবান লোক গঠন হওয়ার কথা ছিল সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে বের হচ্ছে চরিত্রহীন লোক। সে জন্য আজ স্থানে স্থানে চরিত্রহীনদের মহড়া। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে যে চরিত্রহীন লোক বের হচ্ছে; এর দায় কার? এর জন্য দায়ী কে? সহজ উত্তর; দায় শিক্ষাব্যবস্থার, এবং দায়ীও শিক্ষাব্যবস্থা ।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় সহশিক্ষা চালু আছে। সেই সহশিক্ষা নামক মরণব্যাধিই আমাদেরকে চরমভাবে কলুষিত করছে। সহশিক্ষাই ছাত্রছাত্রীদেরকে অতি অল্প বয়সে চরিত্রহীনতা শিক্ষা দিচ্ছে। সহশিক্ষায় রয়েছে ছাত্রছাত্রীর অবাধ চলাফেরা ও মেলামেশার ব্যবস্থা। ছাত্রীরা যেখানে থাকবে, ছাত্ররাও সেখানেই থাকছে। ছাত্রীরা যেখানে বসবে ছাত্ররাও তাদের পাশাপাশি বসবে -কোন প্রকার পর্দা করা হবে না। সেটাই হচ্ছে সহশিক্ষা।
সহশিক্ষায় ইসলামের পর্দার বিধানকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখা হয়। যারা পর্দা করে চলতে চায় তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করা হয়। যারা যত নগ্নভাবে চলে তাদেরকে ধন্যবাদ দেয়া হয়। সহশিক্ষা মানেই পর্দাহীনতা। কলেজ-ভার্সিটিতে আজ সুশিক্ষা নেই বললেই চলে। সহশিক্ষা ও সামাজিক বেহায়াপনার কারণে ছাত্রছাত্রীরা আজ নগ্নতা, অশ্লীলতা ও অবৈধ প্রেমপ্রীতি নিয়ে মত্ত। কলেজ-ভার্সিটির ক্যাম্পাসগুলো যেন আজ প্রেমিকদের কেবল একটা আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে। প্রকৃত ছাত্রছাত্রীরা মানসম্মত শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে না। সহশিক্ষার তাণ্ডবলীলায় বিপর্যস্ত আজ আমাদের পুরো শিক্ষাব্যবস্থা।
শিক্ষার মূল হল- চরিত্র গঠন। যে শিক্ষাব্যবস্থা চরিত্র নষ্ট করে, অবাধ যৌনাচারের পথ দেখায় সেই শিক্ষা দ্বারা আমাদের লাভ কি? আত্মিক, নৈতিক, মানবিক ও আধ্যাত্মিক উৎকর্ষ সাধনের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে। আর এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সহশিক্ষাকে আমাদের অবশ্যই সর্বদা ‘না’ বলতে হবে। সহশিক্ষা দ্বারা কখনও চরিত্রবান হওয়া যায় না। আর চরিত্রহীন মানুষ দ্বারা দেশ ও জাতির উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না।
মনে রাখতে হবে- সহশিক্ষার সাগর থেকে কখনও মণিমুক্তা পাওয়া যাবে না। সহশিক্ষার কুফল পদে পদে। সহশিক্ষার কুফল অত্যন্ত ভয়াবহ। একজন উত্তম ছাত্রের অনন্য বৈশিষ্ট্য হল-সে সহশিক্ষাকে সব সময় ‘না’ বলবে। সে সহশিক্ষার চরম বিরোধীতা করবে।
সুশিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। যোগ্য শিক্ষক ব্যতিত শিক্ষার বাস্তব উন্নয়ন সম্ভব নয়। শিক্ষক হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর। শিক্ষার উন্নয়নে উত্তম শিক্ষকের বিকল্প নেই। উত্তম শিক্ষকের জন্য জরুরি হচ্ছে আগে উত্তম ছাত্র হওয়া। উত্তম ছাত্র ব্যতীত উত্তম শিক্ষক হওয়া যায় না।
সহশিক্ষার কারণে ছাত্রছাত্রীরা অবাধে বেপর্দা চলাফেরা করতে পারে। ছাত্রছাত্রীরা ফ্রি চলাফেরা করার কারণে নানা ধরণের পাপ কাজে লিপ্ত হয়- ফলে তারা স্বাভাবিক বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে বসে। আর এভাবেই সহশিক্ষার কারণে আমাদের সমাজ থেকে সঠিক মেধা লোপ পাচ্ছে এবং মেধাহীন একটি জাতি সৃষ্টি হচ্ছে।
যদি প্রশ্ন করা হয়, ছাত্রছাত্রীরা অবৈধ প্রেম ও অবাধ অনাচারে লিপ্ত হওয়ার কারণ কি? আমি বলবো- এর মূল একটি কারণ হল সহশিক্ষা। যদি প্রশ্ন করা হয়, ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ইভটিজিং নামক ঘৃণ্য পাপের মহড়া হয় কেন? আমি এর জবাবে বলবো-এর কারণ হল সহশিক্ষা।
সুতরাং বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানকালীন ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকার সহাবস্থান হারাম-নিষিদ্ধ। কেননা এটি ফিতনা, অবাধ যৌনতা ও অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করে। এক্ষেত্রে যখন শিক্ষিকারা কিংবা ছাত্রীরা নিজেদের শরীরের কোন অংশ উন্মুক্ত রাখে কিংবা অন্যের সামনে পাতলা পোশাক, অঙ্গভঙ্গী প্রকাশক স্কিন-টাইট ও আঁটসাঁট পোশাক পরিধান করে কিংবা তারা যখন ছাত্র অথবা শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপকালে হাসি-ঠাট্টা ইত্যাদি করে তখন পাপাচার আরো বৃদ্ধি পায় এবং অপরাধ আরো বিশাল হয়ে ওঠে, যা অবৈধ প্রেম, যিনা-ব্যভিচার, সম্ভ্রমহানি ও ইজ্জত লুণ্ঠন পর্যন্ত গড়ায়।
“শুধু জিনা-ব্যভিচারই কি ফিতনা!? চোখের ফিতনা, কানের ফিতনা। আরও কত রকম ফিতনা আছে, যাকে আমরা আমলেই নিই না। আমরা সেক্সচুয়াল বিষয়টা ছাড়া আর সব ফিতনাকে পাশ কাটিয়ে যাই। সহজ কথায়, পরকালকে অগ্রাধিকার দিলে সহশিক্ষায় যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না।"
শিক্ষক ও স্টাফদের জন্য; সহশিক্ষা প্রমোট করে এমন প্রতিষ্ঠানে চাকরী না করে হালাল পেশার চাকরী খুঁজতে হবে। কারণ সহশিক্ষা বা ছাত্র-ছাত্রীদের মিশ্রিত শিক্ষাব্যবস্থা ইসলামে নিষিদ্ধ। মেয়েদের সাথে একত্রে একই স্থানে কিংবা একই বেঞ্চে কিংবা একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পর্দাহীনভাবে বসে শিক্ষাগ্রহণ নাজায়েয। এটি ফিতনার এবং নৈতিক পদস্খলনের সবচেয়ে বড় মাধ্যম। সেজন্য কোন ছেলে কিংবা মেয়ের জন্য এধরণের সহশিক্ষা জায়েয নেই ।
এই বিষয়ে কিছু গবেষণালব্ধ ফাতওয়া একটি নির্ভরযোগ্য ফাতওয়া সাইট থেকে কালেক্ট করে আপনাদের সামনে পেশ করছি।
ফাতওয়া নং - ০১
সহশিক্ষার হুকুম কী?
প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে নারী পুরুষের সহশিক্ষা কি বৈধ?
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله والصلاة والسلام على رسول الله، أما بعد
সহশিক্ষা ইসলামের অকাট্য বিধান পর্দার পরিপন্থী। এটি বিজাতীয় শিক্ষা-পদ্ধতি। পাশ্চাত্যের অনুকরণে এ সহশিক্ষা চালু করা হয়েছে। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি সম্পূর্ণ নাজায়েয এবং ইসলামের মূলনীতি পরিপন্থী। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ. –الأحزاب: 53
“আর তোমরা তাঁর (অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।” -সুরা আহযাব (৩৩) : ৫৩
ইমাম কুরতুবী রহ. (৬৭১ হি.) উক্ত আয়াতের তাফসীরে বলেন,
في هذه الآية دليل على أن الله تعالى أذن في مسألتهن من وراء حجاب، في حاجة تعرض، أو مسألة يستفتين فيها، ويدخل في ذلك جميع النساء بالمعنى، وبما تضمنته أصول الشريعة من أن المرأة كلها عورة، بدنها وصوتها. -تفسير القرطبي (14/ 227)
“উক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের কাছে পর্দার আড়াল থেকে কোনো প্রয়োজনে কিছু চাওয়া বা কোনো মাসআলা জিজ্ঞাসা করার অনুমতি দিয়েছেন। সাধারণ নারীরাও উপরোক্ত হুকুমের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া শরীয়তের মূলনীতির দাবিও এটিই। কারণ, মূলনীতি হলো, নারীর কণ্ঠস্বরসহ গোটা শরীর পর্দার অন্তর্ভুক্ত।” -তাফসীরে কুরতুবী : ১৪/২২৭
নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীগণ হলেন সকল মুমিনের মা। অথচ তাঁদের সাথেই লেনদেন বা কথা-বার্তা বলতে হলে পর্দার আড়াল থেকে করতে বলা হয়েছে। তাহলে অন্যান্য সাধারণ বেগানা নারীদের ক্ষেত্রে হুকুমটি কত গুরুত্বপূর্ণ, তা সহজেই অনুমেয়।
নারী পুরুষের সংশ্রব ফিতনার জনক। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
ما تركت بعدي فتنة أضر على الرجال من النساء. -صحيح البخاري: 4808، صحيح مسلم:
7122
“আমার পর পুরুষদের জন্য মহিলাদের চেয়ে অধিক ক্ষতিকর কোনো পরীক্ষা রেখে যাইনি।” -সহীহ বুখারি: ৪৮০৮, সহীহ মুসলিম: ৭১২২
অন্য হাদিসে ইরশাদ করেন,
إن الدنيا حلوة خضرة وإن الله مستخلفكم فيها فينظر كيف تعملون فاتقوا الدنيا واتقوا النساء فإن أول فتنة بنى إسرائيل كانت فى النساء. صحيح مسلم :
7124
“দুনিয়া (নয়ন-মন আকর্ষণকারী) সুমিষ্ট ও সুসজ্জিত বস্তু। পূর্ববর্তীদের প্রতিনিধি করে আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন, দেখতে চান তোমরা কেমন আমল কর। অতএব, দুনিয়ার ফাঁদ থেকে বেঁচে থাকবে। বেঁচে থাকবে নারীদের ফাঁদ থেকে। বনী ইসরাইলের সর্বপ্রথম ফিতনা নারীদের নিয়েই সংঘটিত হয়েছিল।” -সহীহ মুসলিম: ৭১২৪
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. (৭২৮ হি.) বলেন,
اختلاط أحد الصنفين بالآخر سبب الفتنة فالرجال إذا اختلطوا بالنساء كان بمنزلة اختلاط النار والحطب. -الاستقامة (1/ 361)
“নারী-পুরুষ এ দুই শ্রেণীর পরস্পরের সংমিশ্রণ ফিতনার জনক। যখন বেগানা নারী-পুরুষের পরস্পর সংশ্রব ঘটে, তখন তা আগুন-লাকড়ির সংশ্রবের মতোই ভয়ঙ্কর হয়।” -আল ইস্তেকামা: ১/৩৬১
অতএব, সহশিক্ষা সম্পূর্ণ হারাম। শরীয়ত প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে মেয়ের জন্য সম্পূর্ণ আলাদা ও পর্দার ব্যবস্থা রক্ষা করে শিক্ষা প্রদানের নির্দেশ দেয়।
উল্লেখ্য, বর্তমান সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থায় পর্দার লঙ্ঘন ছাড়াও অসংখ্য কুফর শিরক ও নাস্তিকতা রয়েছে। একজন মুমিনের জন্য যে এসব শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ একদমই নেই এবং ক্ষেত্রবিশেষে ঈমান হারিয়ে মুরতাদ হয়ে যেতে হয়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ফাতওয়া নং - ০২
প্রচলিত সহশিক্ষা পদ্ধতিতে মেডিক্যাল শিক্ষা গ্রহণের হুকুম কি?
মুহতারাম শাইখ, নিম্নোক্ত বিষয়ে আপনার সুচিন্তিত মতামত আশা করছি।
প্রশ্ন ক:
পরিস্থিতি ১: বাবা-মায়ের আদেশ মেডিক্যাল সেক্টরে পড়া এবং ডাক্তার হওয়া। কিন্তু আমি মেডিক্যাল সেক্টরের ভয়াবহ ফিতনাপূর্ণ পরিবেশের কথা ভেবে তাতে আর পড়তে চাচ্ছি না। এগুলোর পরিবর্তে দ্বীনী ইলম অর্জন করতে চাই। আবার মেডিক্যালে পড়তে না চাওয়াটা বাবা-মাকে জানালে তারা খুব কষ্ট পাবেন। হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক টাইপের কিছু হয়ে যাওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে।
আবার তাতে পড়লে নিজের উপর জুলুম হচ্ছে। মা-বাবার আদেশ পালনার্থে গুনাহে পরিপূর্ণ পরিবেশে বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে। কিন্তু মেডিক্যালে ফিতনার ভয়াবহতা অবর্ণনীয়। একটি মেয়ে ডাক্তারি পড়তে গেলে তাকে অনেক কিছু ফেইস করতে হয়। যেমন: পুরুষ রোগীর রিভিলিং বডি পার্ট (প্রাইভেট এরিয়া) দেখা, বা কোনো পেশেন্টকে বিনা অনুমতিতে বিবস্ত্র দেখা, মর্গে পোস্ট মর্টামের সময় ছেলে-মেয়ে উভয়কে দেখা ও প্রত্যেকটা বডি পার্ট চেক করা। কখনো বা পুরুষ স্যার বা ক্লাসমেটদের সো কোল্ড কুল (অশ্লীল, হারাম জোকস সহ্য করা)।
কখনো আবার শিখার জন্যে নন মাহরামের সামনে হাল্কা হলেও চেহারা দেখানো! মেডিক্যালের বর্তমান পরিবেশে গেলে নিজের গুনাহের আশংকা করছি এবং নিজের ঈমান বাঁচানো কঠিন হয়ে যাবে বলে বোধ করছি। এক্ষেত্রে মা-বাবার আদেশ অমান্য করলে কি গুনাহ হবে?
তাছাড়া শুধু্ এমবিবিএস পাস করার পর কেউ নারীদের বিশেষ চিকিৎসা দিতে পারে না। এমবিবিএস পাস করে শুধু সর্দি, জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি ও সাধারণ মেয়েলি চিকিৎসা হয়তো দিতে পারে। কিন্তু নারীদের সন্তান প্রসব, জরায়ু ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার এই সকল চিকিৎসা দিতে গেলে উচ্চতর ডিগ্রি নিতেই হবে। উচ্চতর ডিগ্রিতে ব্যাপক পরিমাণ সময় পড়াশোনাতে দিতে হয়, যা একজন বিবাহিত নারী; স্বামী, সন্তানের হক সামলানোর পর সাধারণত দিতে পারে না। (অন্যদের পক্ষে সম্ভব হলেও আমি নিজেকে অসমর্থ বলে মনে করছি)।
যারাই এমনটি করেছেন, তাদের স্বামী, সন্তানের হক নষ্ট হয়েছে বলে শুনেছি। তাই উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার ইচ্ছা আমার নেই। আর যদি আমার উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার পরিকল্পনাই না থাকে, তাহলে শুধু এমবিবিএস পাস করার কোনো বিশেষ ফায়দা হচ্ছে না। সর্দি, কাশি, জ্বরের জন্য অনেক ডাক্তার রয়েছেন। তাই উচ্চতর ডিগ্রি নেয়ার ইচ্ছা না থাকলে এগুলো পড়া তো আরও সময় নষ্ট। আর সত্যিকারার্থে আমার পক্ষে উচ্চতর ডিগ্রি নেয়া সম্ভবপর নয়। স্বামীকে রাজি করালে স্বামীর হক আদায়ে না হয় কিছু ছাড় পাবো (তবে সেটিও অনিশ্চিত)।
কিন্তু সন্তানের হকের জবাবদিহিতা নিয়ে ভয় পাচ্ছি। শরীরই চলবে না এত পরিশ্রমে। নিজের মেজাজই যদি খিটখিটে থাকে তাহলে সন্তান কি শিখবে আমাদের থেকে। আর এভাবে মেডিক্যালের চিকিৎসাবিদ্যা অর্জন এবং শর’ঈ ইলম অর্জন একসঙ্গে করতে গেলে দুটার কোনোটাই হয়তো ভালোভাবে না হওয়ার আশংকা করছি।
আমি দ্বীনি ইলম অর্জন করতে চাই, আমার ফরয পরিমাণ ইলম নেই বললেই চলে। আমার যদি ইলমই না থাকে, তাহলে কীভাবে ঠিকভাবে দ্বীন পালন করবো!
মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করা একজন আপু নিজে এই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁর কাছে পরামর্শ নিতে গেলে তিনি বলেছেন, “শুধু জিনা-ব্যভিচারই কি ফিতনা!? চোখের ফিতনা, কানের ফিতনা। আরও কত রকম ফিতনা আছে, যাকে আমরা আমলেই নিই না। আমরা সেক্সচুয়াল বিষয়টা ছাড়া আর সব ফিতনাকে পাশ কাটিয়ে যাই। যখন আমি মেডিক্যালে পড়েছি, তখন বেপর্দা, পথভ্রষ্ট ছিলাম। ওখানকার সবকিছুই আমি দেখেছি। সহজ কথায়, পরকালকে অগ্রাধিকার দিলে মেডিক্যালে যাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব না। যারা ইতিমধ্যে মেডিক্যালে পড়াশোনা করছেন, তারা পড়ুক। কিন্তু তোমার তাকওয়া বুঝে তুমি সিদ্ধান্ত নাও; তুমি না গেলে নারী ডাক্তার তৈরি হওয়া কমে যাবে না।”
শাইখ, শুধু যে ফিতনা তা-ই নয়, এছাড়াও এই পড়াশোনাতে আমি যাওয়া মানেই আমার স্বামী, সন্তানের হক নষ্ট হওয়া। উল্লেখ্য, আমি অবিবাহিত। ভবিষ্যত হক নষ্টের ব্যাপারে প্রবল আশংকা করছি। এত এত গুনাহ সামাল দেওয়ার মতো ঈমান, তাকওয়া, আত্মশুদ্ধিতা আমার নেই। এক্ষেত্রে আমি যদি পিতা-মাতার কথা না মানি এবং মেডিক্যালে পড়াশোনা না করি, এতে কি আমি পিতা-মাতার অবাধ্য বলে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার নিকট অপরাধী গণ্য হবো? (উল্লেখ্য: আমার পিতা-মাতা আমার দুনিয়াবি সফলতার ব্যাপারে খুবই দুর্বল। যদি শোনেন, আমি জেনারেল পড়াশোনা ছেড়ে দিতে যাচ্ছি, তাদের স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক হতে পারে।)
পরিস্থিতি ২: (নিম্নোক্ত পরিস্থিতিটি আরেক বোনের)
বাবা-মায়ের আদেশ, মেডিক্যালে পড়াশোনা করতে হবে। কিন্তু আমার সেক্যুলার পড়াশোনা ভাল লাগে না। এই পড়ার প্রতি কোনো আগ্রহ অনুভব করি না; বরং কুরআন ও দ্বীনি পড়াশোনার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ। এখন আমি যদি জেনারেল পড়াশোনা ছেড়ে দিই তাহলে পিতা-মাতার অবাধ্য বলে গণ্য হবো? তাছাড়া আমি মেডিক্যালের ফিতনাপূর্ণ পরিবেশেরও আশংকা করছি। তবে পিতা-মাতার কষ্ট পাওয়ার দিকটি আমাকে অত্যাধিক পীড়া দেয়। কিন্তু যে দিকে আমার আগ্রহ নেই, সে দিকে কন্টিনিউ করাটাও নিজের সঙ্গে যুলুম মনে হচ্ছে। আর দ্বীনের ফরজ পরিমাণ ইলম নেই বলা যায়। একজন ভাল ডাক্তার হওয়া অনেক পরিশ্রমের ব্যাপার। আমার পক্ষে দুইটা একসঙ্গে করাটা অনেক কষ্টসাধ্য। এজন্য উক্ত অবস্থাদৃষ্টে বিজ্ঞ শাইখদের নিকট কি করণীয় বলে মনে হয়?
প্রশ্ন খ:
নারীদের ইজ্জত-আব্রু রক্ষার্থে মেডিক্যাল সেক্টরে ফরযে কিফায়া আদায় করার জন্য মুসলিম নারীদের একাংশ এগিয়ে আসা উচিত। কিন্তু বর্তমান মেডিক্যাল সেক্টর এতটাই নোংরা এবং জাহিলিয়্যাতপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে, যেখানে নিজেদের ঈমান হারানোর সম্ভাবনা অত্যধিক। এতটা প্রতিকূল অবস্থায় চিকিৎসাবিদ্যা অর্জনে নারীদের কি ফরযে কিফায়া আদায় করার উদ্দেশ্যে যাওয়া উচিত? যদি উচিত না হয়, তবে বর্তমানে নারীদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে হুকুম কি হবে?
প্রশ্ন গ:
নারীদের জন্য সহশিক্ষার পরিবেশে থেকে পড়াশোনা করা উচিত কিনা? যদি পড়াশোনা করা উচিত না হয়, তবে বর্তমান প্রেক্ষাপটে মুসলিম নারীদের কোন ধরনের শিক্ষা গ্রহণ করা জরুরি এবং কোন ধরনের পরিবেশে অবস্থান করা উচিত?
উত্তর:
এক. প্রিয় বোন! আপনি আল্লাহর শোকর আদায় করুন, আল্লাহ আপনাকে এই পরিমাণ দ্বীনের বুঝ দান করেছেন, যার জন্য আপনি দুনিয়ার নগণ্য কিছু প্রাপ্তি ছেড়ে আল্লাহর পথে অগ্রসর হওয়ার চিন্তা করছেন। দোয়া করি, আল্লাহ আপনাকে সুপথে পরিচালিত করুন, ঈমানের উপর অটল থাকার তাওফীক দান করুন। আপনি নিম্নোক্ত দোয়াগুলো বেশি বেশি পাঠ করবেন,
رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا وَهَبْ لَنَا مِنْ لَدُنْكَ رَحْمَةً إِنَّكَ أَنْتَ الْوَهَّابُ (8) آل عمران: 8
‘’হে আমাদের রব! হেদায়াত দান করার পর আমাদের অন্তরগুলোকে বক্র করে দিও না। তোমার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান কর। নিশ্চয় তুমি মহাদাতা।’’ -সূরা আলে ইমরন: ৮
رَبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ الَّتِي أَنْعَمْتَ عَلَيَّ وَعَلَى وَالِدَيَّ وَأَنْ أَعْمَلَ صَالِحًا تَرْضَاهُ وَأَدْخِلْنِي بِرَحْمَتِكَ فِي عِبَادِكَ الصَّالِحِينَ (19) النمل: 19
‘’হে আমার রব! তুমি আমার ও আমার পিতা-মাতার উপর যেসব নেয়ামত দান করেছ, তার শোকর আদায় করার এবং এমন নেক আমল করার তাওফীক দান কর, যা তুমি পছন্দ কর এবং দয়া করে তুমি আমাকে তোমার সালিহ (নেক) বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করো!’’ -সূরা নামল: ১৯
দুই. আসলে একজন মুসলিম ছাত্র বা ছাত্রীর জন্য বর্তমান ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রগুলোর প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় পড়াশোনার ক্ষেত্রে আপনি সমস্যাটি যেভাবে উপলব্ধি করেছেন, এমনটি হওয়াই স্বাভাবিক। সেখানে একজন ছাত্রের জন্য দ্বীন রক্ষা করে পড়াশোনা করা যত কঠিন, একজন ছাত্রীর জন্য তা আরও বেশি কঠিন। বরং অসম্ভবপর প্রায়। শিক্ষাপদ্ধতি সহশিক্ষা হওয়ায়, এখানে পর্দার ফরজ বিধান লঙ্ঘিত হওয়ার পাশাপাশি অসংখ্য হারামে লিপ্ত হওয়া অনিবার্য। শিক্ষা গ্রহণের জন্য এভাবে প্রতিনিয়ত হারামে লিপ্ত হওয়ার অনুমোদন শরীয়তে নেই।
তিন. আরও গুরুতর বিষয় হচ্ছে, এদেশের প্রচলিত ধারার পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই সেক্যুলার ও বস্তুবাদি কুফরি চিন্তাদর্শনের ভিত্তিতে গড়া এবং এই শিক্ষাব্যবস্থা তাদের কুফরি রাষ্ট্রব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিমূল। এর অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে, একজন মুসলিম নামে মুসলিম থাকলেও, আকীদা বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনায় হয়ে উঠবে একজন বস্তুবাদি সেক্যুলার মুরতাদ কিংবা নাস্তিক। সে নিজেকে মুসলিম দাবি করলেও অন্য সব কুফরি ধর্মকে সম্মান করা জরুরি মনে করবে।
মসজিদে গিয়ে জামাআতের সঙ্গে সালাত আদায় করলেও; সমাজ, রাষ্ট্র ও আইন আদালতে ইসলামকে অচল মনে করবে। ইসলামের বিধানকে উন্নতি ও অগ্রগতির অন্তরায় মনে করবে। ইসলাম ধর্ম ও কুফরি ধর্মকে সমমর্যাদার মনে করবে। ইসলামের অনেক বিধানকে সেকেলে, অচল, পশ্চাতপদ ও বর্বর মনে করবে। ইসলামী বিধানের মোকাবেলায় পশ্চিমাদের বিধানকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও কল্যাণকর মনে করবে। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার এসব ফলাফল আজ আমাদের চোখের সামনে। যারাই এই শিক্ষাব্যবস্থার কাছে নিজেকে সঁপে দিচ্ছেন, তারাই আজ ঈমানহারা হচ্ছেন। আল্লাহর বিশেষ করুণায় কেউ বেঁচে গেলে ভিন্ন কথা।
পাঁচ. পিতা-মাতার আনুগত্য জরুরি। তবে তা শরীয়াহ সম্মত বিষয়ে সীমাবদ্ধ। শরীয়াহ পরিপন্থি বিষয়ে পিতা-মাতার আনুগত্য জায়েয নয়।
হাদীসে এসেছে,
عن علي، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا طاعة لبشر في معصية الله». –صحيح البخاري (7257) ، صحيح مسلم (1840) مصنف ابن أبي شيبة (34998) واللفظ له.
“আলী (রাযি) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তায়ালার অবাধ্য হয়ে কোনো মানুষের আনুগত্য করা যাবে না।” –সহীহ বুখারী: ৭২৫৭; সহীহ মুসলিম: ১৮৪০; মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: ৩৪৯৯৮
উমারাহ রহ. বলেন,
نزل معضد إلى جنب شجرة، فقال: ما أبالي أطعت رجلا في معصية الله، أو سجدت لهذه الشجرة من دون الله. -مصنف ابن أبي شيبة: 34403
“(বিশিষ্ট তাবেয়ী) মি’দাদ (রহ) একটি গাছের পাশে অবতরণ করেন। অত:পর তিনি বলেন, আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কোন মানুষের আনুগত্য করা, আর আল্লাহর পরিবর্তে এই গাছকে সিজদা করা আমার নিকট বরাবর।” -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা: ৩৪৪০৩
ছয়. সুতরাং এ অবস্থায় আপনি আপনার দ্বীন ও ঈমান রক্ষার জন্য পিতা-মাতার কথা অমান্য করে মেডিক্যাল পড়া বাদ দিলে, আল্লাহর কাছে পিতা-মাতার অবাধ্য গণ্য হবেন না। বরং এটাই আপনার জরুরি করণীয় এবং এতে আল্লাহ খুশি হবেন ইনশাআল্লাহ। অতএব আপনি নির্দ্বিধায় আল্লাহর উপর ভরসা করে সাহসিকতার সঙ্গে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে নিন এবং মেডিক্যাল পড়া বন্ধ করে দ্বীনি ইলম অর্জন শুরু করতে পারেন।
আর আপনার পিতা-মাতাকে ধীরে ধীরে বিষয়গুলো বুঝানোর চেষ্টা করুন। আপনি তাদের ব্যাপারে যে আশঙ্কা করছেন যে, তারা আপনার এই সিদ্ধান্তের কথা শুনলে স্ট্রোক কিংবা হার্ট এ্যাটাক করবেন, আল্লাহর কাছে আশা রাখুন, এমনটি হবে না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ অবশ্যই আপনার সাহায্য করবেন ইনশাআল্লাহ। কোরআনে কারীমে ইরশাদ হচ্ছে,
}وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا (2) وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ وَمَنْ يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا (3)} [الطلاق: 2، 3[
“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার পথ খুলে দেন এবং তাকে এমনভাবে রিযিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করে না। যে আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করে, আল্লাহ তার জন্য যথেষ্ট হন। আল্লাহ তাঁর বিষয় পূর্ণ করেই ছাড়েন। সবকিছুর জন্যই তিনি একটি সীমা নির্ধারিত করেছেন।” -সূরা তালাক: ২-৩
ইমাম তাবারি (রহ) বর্ণনা করেন,
أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ كَانَ يَقُولُ: ….. أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ: لَا يَقْدِرُ رَجُلٌ عَلَى حَرَامٍ ثُمَّ يَدَعُهُ، لَيْسَ بِهِ إِلَّا مَخَافَةُ اللَّهِ، إِلَّا أَبْدَلَهُ اللَّهُ فِي عَاجِلِ الدُّنْيَا قَبْلَ الْآخِرَةِ مَا هُوَ خَيْرٌ لَهُ مِنْ ذَلِكَ. – تفسير الطبري = جامع البيان عن تأويل آي القرآن ط هجر 14/ 593
“…রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন, যে কোনো ব্যক্তি কোনো হারাম বিষয়ে সক্ষম হয়, তারপর একমাত্র আল্লাহর ভয়ে তা পরিহার করে, তাকে আল্লাহ আখেরাতে যাওয়ার পূর্বে দুনিয়াতেই এমন বস্তু দান করেন, যা তার চেয়ে উত্তম।” -তাফসীরে তাবারী: ১৪/৫৯৩
ইমাম বায়হাকী (রহ) বর্ণনা করেন,
– 832أَخْبَرَنَا أَبُو طَاهِرٍ الْفَقِيهُ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حَمْشَاذٍ، حَدَّثَنَا الْحَارِثُ بْنُ أَبِي أُسَامَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو النَّضْرِ، حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْمُغِيرَةِ، عَنْ حُمَيْدٍ، حَدَّثَنَا أَبُو قَتَادَةَ، وَأَبُو الدَّهْمَاءِ، قَالا : أَتَيْنَا عَلَى رَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الْبَادِيَةِ ، فَقَالَ الْبَدَوِيُّ : أَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِيَدِي، فَجَعَلَ يُعَلِّمُنِي مِمَّا عَلَّمَهُ اللَّهُ، وَكَانَ يَقُولُ : إِنَّكَ لَنْ تَدَعَ شَيْئًا اتِّقَاءً لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ إِلاَّ أَعْطَاكَ اللَّهُ خَيْرًا مِنْهُ. الآداب للبيهقي: 2/ 8، بترقيم الشاملة آليا
“… আবু কাতাদা ও আবুদ দাহমা রাহিমাহুমাল্লাহ বলেন, আমরা এক বেদুঈন (সাহাবী)-এর নিকট গেলাম। তিনি বললেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরলেন এবং আল্লাহ তাঁকে যা শিখিয়েছেন, তা থেকে আমাকে শেখাতে লাগলেন। তিনি বললেন, তুমি আল্লাহর ভয়ে যে কোনো বিষয় পরিহার করবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে তার চেয়ে উত্তম কিছু দান করবেন।” -আল-আদাব, বায়হাকী: ২/৮
ফাতওয়া নং - ০৩
বিশ্ববিদ্যালয় ও হাই স্কুলে শিক্ষকতা করার হুকুম কী?
প্রশ্ন:
বিশ্ববিদ্যালয় ও হাই স্কুলে ছাত্র ছাত্রীদেরকে এক সাথে পড়াতে হয়। এতে চোখের পর্দা লঙ্ঘন হয়। তাই জানতে চাই, শরিয়তের দৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয় ও হাই স্কুলে শিক্ষকতা করার হুকুম কী?
উত্তর:
সহশিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকতায় অনেক সমস্যা রয়েছে। একে তো তাতে পর্দার বিধান লঙ্ঘিত হয়। দ্বিতীয়ত আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় নানান কুফর শিরক ও নাস্তিক্যবাদ রয়েছে। তৃতীয়ত একজন শিক্ষককে সভ্যতা সংস্কৃতি ও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিভিন্ন অন্যায় ও পাপাচারমূলক কাজে লিপ্ত হতে হয়। এছাড়া এদেশে দুর্নীতি যে মহামারির রূপ ধারণ করেছে, আমাদের ধারণা, কেউ দুর্নীতি না করলে সরকারি চাকরিতে টিকে থাকা তার জন্য প্রায় অসম্ভব। সুতরাং সহশিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করলে যদি এসব বিষয় থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব না হয়, তাহলে তা জায়েয হওয়ার প্রশ্নই আসে না; বরং ক্ষেত্রবিশেষে ঈমান হারানোরও আশঙ্কা রয়েছে। হ্যাঁ, কারো পক্ষে যদি এসকল অন্যায় থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হয় এবং পাঠ্য বিষয়ের শরিয়াহ পরিপন্থী ও কুফরি-শিরকি বিষয়গুলো পড়ানোর সময় ছাত্রদের সামনে পরিষ্কার করে দিতে পারেন যে, এগুলো কুফর শিরক এবং ঈমান পরিপন্থী, তাহলে তার জন্য এ চাকরি তাগুতের অধীন হওয়ার কারণে মাকরুহ হলেও জায়েয হবে; যদিও তা অসম্ভব প্রায়।
ফাতওয়া নং - ০৪
পুরুষ শিক্ষকের সামনে চেহারা খোলা রেখে ক্লাস করা কি জায়িয হবে?
প্রশ্ন:
আমার বোন ঢাকার প্রসিদ্ধ একটি স্কুলে ক্লাস নাইনে পড়ে। সেখানে ছেলে-মেয়েদের আলাদা শিফট আছে। মেয়েদের মর্নিং শিফট। ছেলেদের ডে শিফট। এক্ষেত্রে কোন সমস্যা নেই। সে সম্পূর্ণ পর্দা মেনেই স্কুলে যায়। কিন্তু সমস্যা হল, পুরুষ শিক্ষকদের সামনে তাকে চেহারা খোলা রেখে ক্লাস করতে হয়। এমতাবস্থায় তার জন্য সেখানে পড়া কি জায়িয হবে?
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
الحمد لله وكفى وسلام علي عباده الذين اصطفى أمابعد
প্রাপ্তবয়স্ক প্রত্যেক নারীর জন্য বেগানা পুরুষ থেকে পর্দা করা ফরজ। একান্ত প্রয়োজন না থাকলে নারীকে গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করতে বলা হয় এবং সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়।
আল্লাহ তায়ালা বলেন-
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى.
“তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান কর। আগের জাহিলী যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন কর না।” (সূরা আহযাব ৩৩ : ৩৩)
কখনও নিতান্ত প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হলে পূর্ণ শরয়ী পর্দা সহকারে বের হতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يَاأَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا.
“হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মু`মিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দাংশ নিজেদের (মুখের) ওপর নামিয়ে দেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজতর হবে (যে, তারা সতী সাধ্বী মু`মিন নারী), ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা আহযাব ৩৩ : ৫৯)
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবন কাসীর (র) (৭৭৪ হি.) বলেন-
قال علي بن أبي طلحة، عن ابن عباس: أمر الله نساء المؤمنين إذا خرجن من بيوتهن في حاجة أن يغطين وجوههن من فوق رؤوسهن بالجلابيب، ويبدين عينا واحدة. (تفسير ابن كثير: 6/442)
“আলী ইবন আবী তালহা, ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা`আলা মু`মিন নারীদেরকে নির্দেশ দেন যে, তারা যখন নিজ ঘর থেকে কোন প্রয়োজনে বের হয়, তখন তাদের মুখমণ্ডলকে যেন মাথার ওপর থেকে বড় চাদর দিয়ে ঢেকে নেয় এবং এক চোখ খোলা রাখে।” (তাফসিরে ইবন কাসীর: ৬/৪৪২)
ইমাম আবু বকর জাসসাস (র) (৩৭০ হি.) বলেন-
في هذه الآية دلالة على أن المرأة الشابة مأمورة بستر وجهها عن الأجنبيين وإظهار الستر والعفاف عند الخروج لئلا يطمع أهل الريب فيهن. اهـ (احكام القران: 3/486)
“এ আয়াত এ ব্যাপারে স্পষ্ট প্রমাণ যে, যুবতী নারী বের হওয়ার সময় নিজ মুখমণ্ডল পরপুরুষ থেকে ঢেকে রাখা এবং পর্দা ও সংযম প্রকাশ করার বিষয়ে আদিষ্ট, যেন অসাধু ব্যক্তিরা তাদের ব্যাপারে কোন লালসা করতে না পারে।” (আহকামুল কুরআন: ৩/৪৮৬)
সুতরাং আপনার বোনের জন্য যদি পর্দার ফরজ বিধান রক্ষা করে ঐ স্কুলে ক্লাস করা সম্ভবপর না হয়, তাহলে তার জন্য সেখানে যাওয়া সম্পূর্ণ নাজায়িয। অবিলম্বে সেখানে যাতায়াত বন্ধ করা জরুরি।
ইমাম মুহাম্মদ বিন শিহাব আল-বাযযায (৮২৭ হি.) (র) বলেন:
ولا يأذن بالخروج إلى المجلس الذي يجتمع فيه الرجال والنساء وفيه من المنكرات.اهـ – الفتاوى البزازية (2/ 26)
“(নারীদের) এমন মজলিসে যেতে অনুমতি দেয়া যাবে না, যেখানে নারী-পুরুষ একত্র হয় ….।” (ফাতওয়া বাযযাযিয়া: ২/২৬)
এ হল শুধু পর্দার বিধানের কথা। এছাড়াও বর্তমান জেনারেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে রাষ্ট্রীয় ও জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন বিজাতীয় দিবস, সভ্যতা ও সংস্কৃতি ইত্যাদিতে যোগ দেয়ার বাধ্যবাধকতা আছে, যেগুলোতে অনেক সময়ই একজন শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন হারাম ও কুফরি কাজে লিপ্ত হতে হয়।
আরও গুরুতর সমস্যা হচ্ছে, এদেশের প্রচলিত ধারার পুরো শিক্ষাব্যবস্থাই সেক্যুলার ও বস্তুবাদী কুফরি চিন্তাদর্শনের ভিত্তিতে গড়া এবং এ শিক্ষাব্যবস্থা তাদের কুফরি ও ত্বাগুতি রাষ্ট্রব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তিমূল। এর অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে, একজন মুসলিম নামে মুসলিম থাকলেও, আকীদা বিশ্বাস ও চিন্তা-চেতনায় হয়ে উঠবে একজন সেক্যুলার মুশরিক কিংবা বস্তুবাদী নাস্তিক।
সে নামে মুসলিম হলেও অন্য সব কুফরি ধর্ম ও ধর্মবিশ্বাসকে সম্মান করা জরুরি মনে করবে। মসজিদে গিয়ে জামা`আতের সঙ্গে সালাত আদায় করলেও; সমাজ, রাষ্ট্র ও আইন আদালতে ইসলামকে অচল মনে করবে। ইসলামের বিধানকে উন্নতি ও অগ্রগতির অন্তরায় মনে করবে। ইসলাম ধর্ম ও কুফরি ধর্মকে সমমর্যাদার মনে করবে। ইসলামের অনেক বিধানকে সেকেলে, অচল, পশ্চাতপদ ও বর্বর মনে করবে।
ইসলামী বিধানের মোকাবেলায় পশ্চিমাদের বিধানকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও কল্যাণকর মনে করবে। এগুলোর প্রত্যেকটিই সুস্পষ্ট কুফর। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার এসব ফলাফল আজ আমাদের চোখের সামনে। এমন অসংখ্য উদাহরণের মাঝে লড়াই করেই আজ আমাদেরকে সমাজে কোন রকম ঈমান বাঁচিয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে। যারা এ শিক্ষাব্যবস্থার কাছে নিজেদেরকে সঁপে দিচ্ছেন, তারা আজ শুধু ঈমানহারা হচ্ছেন তাই নয়; বরং ঈমান, ইসলাম ও ইসলামী শরীয়াহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠছেন। আল্লাহর বিশেষ করুণায় কেউ বেঁচে গেলে ভিন্ন কথা।
সে নামে মুসলিম হলেও অন্য সব কুফরি ধর্ম ও ধর্মবিশ্বাসকে সম্মান করা জরুরি মনে করবে। মসজিদে গিয়ে জামা`আতের সঙ্গে সালাত আদায় করলেও; সমাজ, রাষ্ট্র ও আইন আদালতে ইসলামকে অচল মনে করবে। ইসলামের বিধানকে উন্নতি ও অগ্রগতির অন্তরায় মনে করবে। ইসলাম ধর্ম ও কুফরি ধর্মকে সমমর্যাদার মনে করবে। ইসলামের অনেক বিধানকে সেকেলে, অচল, পশ্চাতপদ ও বর্বর মনে করবে।
ইসলামী বিধানের মোকাবেলায় পশ্চিমাদের বিধানকে যুগোপযোগী, আধুনিক ও কল্যাণকর মনে করবে। এগুলোর প্রত্যেকটিই সুস্পষ্ট কুফর। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার এসব ফলাফল আজ আমাদের চোখের সামনে। এমন অসংখ্য উদাহরণের মাঝে লড়াই করেই আজ আমাদেরকে সমাজে কোন রকম ঈমান বাঁচিয়ে টিকে থাকতে হচ্ছে। যারা এ শিক্ষাব্যবস্থার কাছে নিজেদেরকে সঁপে দিচ্ছেন, তারা আজ শুধু ঈমানহারা হচ্ছেন তাই নয়; বরং ঈমান, ইসলাম ও ইসলামী শরীয়াহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে উঠছেন। আল্লাহর বিশেষ করুণায় কেউ বেঁচে গেলে ভিন্ন কথা।
হাদীসে এসেছে-
عن علي، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «لا طاعة لبشر في معصية الله». –صحيح البخاري (7257) ، صحيح مسلم (1840) مصنف ابن أبي شيبة (34998) واللفظ له.
“আলী (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা`আলার অবাধ্য হয়ে কোন মানুষের আনুগত্য করা যাবে না।” (সহীহ বুখারী: ৭২৫৭; সহীহ মুসলিম: ১৮৪০; মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা: ৩৪৯৯৮)
উমারাহ (র) বলেন-
نزل معضد إلى جنب شجرة، فقال: ما أبالي أطعت رجلا في معصية الله، أو سجدت لهذه الشجرة من دون الله. -مصنف ابن أبي شيبة: 34403
“(বিশিষ্ট তাবিয়ী) মি’দাদ (র) একটি গাছের পাশে অবতরণ করেন। অত:পর তিনি বলেন, আল্লাহর অবাধ্য হয়ে কোন মানুষের আনুগত্য করা, আর আল্লাহর পরিবর্তে এই গাছকে সিজদা করা আমার নিকট বরাবর।” (মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা: ৩৪৪০৩)
আল্লাহ তা`আলা আমাদের হিফাজত করুন। আ-মীন।
ফাতওয়া নং - ০৫
বর্তমানে প্রচলিত জেনারেল শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা গ্রহণের বিধান
প্রশ্নঃ
বর্তমানে বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষাক্রমের পাঠ্য বইগুলো হিন্দু ধর্মের আকীদা ও রীতি-নীতি, নাস্তিক্যবাদ ও কুফর শিরকে ভরপুর। যা দেখলে মনে হয়, মুসলিম শিশুদেরকে কীভাবে নাস্তিক মুরতাদ বানানো যায়, সেই লক্ষ্য পূরণে সরকার উঠে পড়ে লেগেছে। এই অবস্থায় আমার জানার বিষয় হলো,
০১. কুফরী বাক্য লেখা কিংবা পড়ার হুকুম কী?
০২. এই সিলেবাসে লেখাপড়া করার হুকুম কী?
উত্তরঃ
০১. কুফরী বাক্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করা, কুফরী বাক্যকে সমর্থন করা, ভালো মনে করা, কুফরী বাক্যের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়া কিংবা সন্তুষ্টি প্রকাশ করা সবই কুফরী। একইভাবে মজা করে কিংবা ঠাট্টাচ্ছলে স্বেচ্ছায় কুফরী বাক্য উচ্চারণ করা কিংবা লেখাও কুফরী। -রদ্দুল মুহতার: ৪/২০৮, ২২৪ (দারুল ফিকর); আল-বাহরুর রায়েক ও মিনহাতুল খালেক: ৫/১৩৩ (দারুল কিতাবিল ইসলামী)
মুফতী রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী রহিমাহুল্লাহ আজ থেকে প্রায় দেড় শত বছর পূর্বে ইংরেজদের স্কুলে পড়া ও তাদের দাওয়াতী মিশনারির প্রোগ্রামে যুক্ত হয়ে কুফরী বাক্য উচ্চারণ করা সম্পর্কে দেওবন্দ ও সাহারানপুরসহ ভারতের ১৯ জন বিজ্ঞ আলেমের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি ফাতওয়া প্রদান করেন।
(سوال) عیسائي مذہب کے پادریوں نے سہارنپور میں آکر نوجوان لڑکیوں کو تو اپنے مدرسوں میں داخل کرکے بہکانا اور بے دین کرنا اور مرتد بنانا شروع کیا ہی تھا ، اب ایک اور فریب وجہل کی راه نكالي وه يه كه مسلمانوں كي چھ چھ، آٹھ آٹھ، دس دس، بیس بیس وغیرہ لڑکیوں اور عورتوں کو اپنے مذہب کی کتابیں پڑھانا شروع کیا ہے، اور وہ لڑکیاں اور عورتیں مطلق اپنے مذہب سے واقعة (واقف) نہیں، ان کو ہر اتوار کو پیسے اور تصویریں اور شیرینی کے لالچ دیۓ جاتے ہیں اور مسیح کو غزلوں اور بھجنوں میں خدا اور خدا کا بیٹا گوایا جاتا ہے، اور لڑکیاں اور عورتیں خصوصا مسلمانوں کی تنخواہ کے لالچ میں کفر والحاد کے جملے بولتے ہوۓ بھی نہیں ڈرتیں، ایسے مکر وفریب سے پادریوں نے ملک پنجاب میں گذشتہ سالوں میں سات سو لڑکیاں عیسائي کی ہیں، سہارنپور میں یہ بلاۓ جانگز اور ایمان ربا اسی سال آئي ہے، نو مدرسے خاص سہارنپور میں مسلمانوں میں جاری ہیں، اور مسلمانوں کی عورتیں اس وجہ سے کہ روپیہ کے لالچ میں آکرخود انتظام کر لیں گی اور لڑکیوں کو جمع کرکے بیدین بے ایمان کرنے کی ڈھنگ ہم کو بتلادیں گی۔ معلمہ مقرر کی گئيں، ان مدرسوں میں پڑھنا اور پڑھانا اور پڑھائی کے واسطے مکان دینا اور پڑھنے والیاں اور پڑھانے والیاں جو اس فعل بد سے راضی ہوں اور جو عورتیں شوہروں کے اس حکم خاص کو نہیں مانتیں اور جو شخص اپنے مکان اور اپنے اہل وعیال کو اس کام سے باز نہیں رکھتا اور اپنی لڑکیوں کا ایسے مدرسہ میں جانے سے مانع نہیں ہوتا عند الشر ع کیا حکم رکھتے ہیں؟ مفصل بحوالۂ آیات و احادیث تحریر فرمایۓ۔ اجر عظیم اللہ سے پایۓ ۔ فقط۔
(جواب) کلمۂ کفر بولنا عمدا اگرچہ اعتقاد اس پر نہ ہو کفر ہے۔ چناچہ رد المحتار میں لکھاہے۔ “قال في البحر: والحاصل: أن من تكلم بكلمة الكفر هازلا أو لاعبا كفر عند الكل ولا اعتبار باعتقاده كما صرح به (في) الخانية، ومن تكلم (بها) مخطئا أو مكرَها لا يكفر عند الكل، ومن تكلم (بها) عامدا (عالما) كفر عند الكل، ومن تكلم بها اختيارا جاهلا بأنها كفر ففيه اختلاف الخ. وفي الفتح: ومن هزل بلفظ كفر ارتد وان لم يعتقد به (وإن لم يعتقده)؛ للاستخفاف، فهو ككفر المعتاد (العناد). قال في رد المحتار: أي تكلم (به) باختياره غير قاصد معناه، وهذا لا ينافي ما مر من أن الإيمان هو التصديق فقط أو(مع) الإقرار؛ لأن التصديق وإن كان موجودا حقيقة لكنه زائل حكما؛ لأن الشارع جعل بعض المعاصي أمارة (على) عدم وجوده كالهزل المذكور، وكما لو سجد لصنم أو وضع مصحفا في قاذورة فإنه يكفر وإن كان مصدقا؛ لأن ذلك في حكم التكذيب كما أفاده في شرح العقائد. انتهى. رجل كفر بلسانه طائعا وقلبه مطمئن على الإيمان يكون كافرا ولا يكون عند الله مؤمنا، كذا في قاضي خان.
پس رویات سے صاف واضح ہے کہ جو کوئي حضرت عیسی عليه السلام کو ابن اللہ راگ میں گاوے یا کوئي کلمۂ کفریہ پادریوں کے کہلانے سے -جو صاحب مدارس کے لڑکے لڑکیاں کہتی ہیں- کہنےسےمرتد کافر ہوا۔ اور اس امر پر رضا دینا بھی کفر ہے۔ قال في شرح العقائد وشرح القاري على الفقه الأكبر: الرضا بالكفر كفر. انتهى. اور ان سخت کلمات پر کچھ پرواہ نہ کرنا اور سہل جاننا بھی کفر ہے۔ الاستهانة بالمعصية بأن يعدها هنيئة (هينة) ويرتكبها من غير مبالاة بها ويجريها مجرى المباهات (المباحات) في ارتكابها كفر، كذا في شرح علي على الفقه الأكبر.
الحاصل اس مدرسے کے لڑکے لڑکیاں جو ایسے کلمات بولتے ہیں سب مرتد ہیں اور جو ان کو بخوشی ایسے کام کے واسطے وہاں بھیجتے ہیں دیدہ ودانستہ وہ بھی مرتد کافر ہیں، اور ان مدارس کی پڑھانے والیاں اور اس کے معین مکان وچندہ کے اگر اس فعل بد سے راضی ہیں سب کافر اور مرتد، اور جو اس امر کو برا جان کر دنیا کی طمع سے یہ کام کرتے ہیں یہ سب فاسق فاجر ہیں۔ سب اہل اسلام کو لازم ہے کہ ایسے لوگوں کو اور اپنے بچوں کو روکیں اور منع کریں۔ لقوله عليه السلام: من رأى منكرا فليغيره بيده، فان لم يستطع فبلسانه، فان لم يستطع فبقلبه، وليس وراء ذلك حبة خردل من إيمان. الحاصل جو شخص استطاعت کسی قسم کے منع کی رکھتا ہے اور پھر منع نہ کرے تو اگر اس فعل کو مستحسن جانتا ہے یا سہل جانتا ہے تو کافر مرتد ہوا، اور جو برا جان کر منع نہ کرے گا وہ مداہن وفاسق ہوا ۔ فقط والله تعالي أعلم۔ كتبه الراجي رحمة ربه رشيد أحمد گنگوہی عفي عنه.
جواب صحيح ہے، محمد مظهر، مدرس مدرسه سهارنپور
الجواب حق والحق متبع، عنايت الہي سهارنپوری
الجواب صحيح، ابو الحسن
جواب صحيح ہے، عزيز حسن عفي عنه
جواب صحيح ہے، مشتاق أحمد عفي عنه
الجواب صحيح، حبيب الرحمن عفي عنه
الجواب صحيح ، محمد حسن، مدرس مدرسه ديوبند
الجواب حق، عبد الرحمن عفي عنه
أصاب المجيب، ذو الفقار علي عفي عنه
الجواب صحيح والمنكر فضيح، أحمد عفي عنه
جواب صحيح ہے، محمد امير باز خان
الجواب صحيح حق، محمد محمود عفي عنه، مدرس مدرسه دار العلوم ديوبند
الجواب صحيح، عزيز الرحمن ديوبندي، مدرس مدرسه عربي ميرٹھ، عفي عنه
هذا الجواب صحيح ، والله أعلم وعلمه أتم، محمد ابراهيم سنبھلي عفي عنه
الجواب صحيح، عبد المومن ديوبندي، عفي عنه
الجواب صحيح، محمد منصب علي عفي عنه
جواب صحيح ہے، محمد محمود حسن عفي عنه، مدرس مدرسه اسلاميہ ديوبند.
الحق اجراۓ کلمۃ الکفرکفر ہے۔ اور آیات کریمہ سے بھی یہ مضمون صراحۃ ثابت ہوتا ہے۔ وهي هذا: من كفر بالله من بعد إيمانه إلا من أكره وقلبه مطمئن بالإيمان ولكن من شرح بالكفر صدرا فعليهم غضب من الله ولهم عذاب عظيم. اس واسطے کہ آیات کریمہ میں صرف حالت اکراہ کا استثنا کیا ہے، اور ما سواۓ اس کے اجراۓ کلمۃ الکفر علی سبیل الا ختیار کفر میں داخل تھا ہی، اور ظاہر ہے کہ اشخاص مذکورہ کا راگ وغیرہ میں کلمات کفر کے زبان سے نکالنا قبیل اکراہ سے نہیں بلکہ با اختیار خود ہے، تو ضرور کفر میں داخل ہوگا، اور اعانت کفر اور تعلیم اس کی اسی قبیل سے ہے۔ والله اعلم بالصواب. الراقم: خليل أحمد ، عفي عنه، مدرس مدرسه عربي، سهارنپور۔
صح الجواب، قال الله تعالى في كتابه: وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ. والله أعلم. حرره الراجي عفو ربه القوي أبو الحسنات محمد عبد الحي، تجاوز الله عن ذنبه الجلي والخفي.
– فتاوى رشيديه، ص: 195-198 ط. دار الاشاعت كراتشي
“প্রশ্ন: (ইতিপূর্বে) খ্রিস্টান পাদরিরা সাহারানপুরে এসে যুবতী মেয়েদেরকে তো তাদের স্কুলে ভর্তি করে প্রতারিত করা এবং বেদীন ও মুরতাদ বানানো শুরু করেছিলোই, এখন তারা ধোঁকা ও অজ্ঞতার নতুন আরেকটি পথ বের করেছে। তা হলো, মুসলমানদের ছয়জন, আটজন, দশজন, বিশজন করে করে মেয়ে ও নারীদের খ্রিস্টান ধর্মের বই পড়ানো শুরু করেছে। সে সকল মেয়ে ও নারীরা নিজ ধর্মের ব্যাপারে একেবারেই অজ্ঞ। তাদেরকে প্রতি রবিবার অর্থ, ছবি ও মিষ্টান্নের লোভ দেখিয়ে ঈসা আলাইহিস সালামকে সঙ্গীত ও স্তুতিতে খোদা ও খোদার পুত্র বলানো হয়। মুসলিম নারীরা অর্থের লোভে কুফরী বাক্য উচ্চরণ করতেও ভয় করে না। এভাবে প্রতারণা করে পাদরিগণ বিগত বছরগুলোতে পাঞ্জাবে সাতশত মেয়েকে খ্রিস্টান বানিয়েছে। এই জীবন বিধ্বংসী ও ঈমান বিনষ্টকারী ফিতনা সাহারানপুরে এ বছর এসেছে। শুধু সাহারানপুরে মুসলমানদের মাঝে নয়টি স্কুল বিদ্যমান। এসব স্কুলে মুসলিম নারীদের শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে, যেন তারা অর্থের লোভে নিজেরাই সব কিছু আঞ্জাম দেয় এবং মেয়েদেরকে একত্রিত করে বেদীন ও বেঈমান বানানোর পদ্ধতি বাতলে দেয়। এ সব স্কুলে পড়া, পড়ানো, অথবা পড়ানোর জন্য জায়গা দেয়ার বিধান কী? শিক্ষক-শিক্ষার্থী যারা এই অপকর্মের প্রতি সন্তুষ্ট, যেসব নারী স্বামীদের আদেশ অমান্য করে তাতে যাবে, যে ব্যক্তি নিজের পরিবার-পরিজনকে এমন কাজ থেকে বিরত রাখবে না, নিজের মেয়েদের এমন প্রতিষ্ঠানে যেতে বাধা দিবে না, শরীয়তের দৃষ্টিতে তাদের বিধান কী? আয়াত ও হাদীসের উদ্ধৃতিতে বিস্তারিত লিখবেন। আল্লাহর কাছে বড় প্রতিদান পাবেন।
উত্তর: ইচ্ছকৃত কুফরী বাক্য বলা কুফর; যদিও ওই বাক্যের প্রতি বিশ্বাস না থাকে। ‘ফাতওয়া শামী’তে এসেছে, ‘আল-বাহরুর রায়েকে’ বলা হয়েছে, কেউ ঠাট্টাচ্ছলে কুফরী বাক্য উচ্চারণ করলে, সকলের ঐকমত্যে কাফের হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে তার বিশ্বাস ধর্তব্য হবে না, যেমনটি ‘ফাতওয়া খানিয়া’তে সুস্পষ্টরূপে বলা হয়েছে। পক্ষান্তরে ভুলবশত কিংবা বলপ্রয়োগের কারণে বাধ্য হয়ে কুফরী বাক্য উচ্চারণ করলে কারও মতেই কাফের হবে না। যে ব্যক্তি (জেনে শুনে) স্বেচ্ছায় কুফরী বাক্য বলবে, সে সকলের ঐকমত্যে কাফের হয়ে যাবে। তবে বাক্যটি কুফরী হওয়ার ব্যাপারে তার জানা না থাকলে সে ক্ষেত্রে মতভেদ রয়েছে।’ ‘ফাতহুল কাদীরে’ এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঠাট্টাচ্ছলে কুফরী শব্দ বলবে, (দীনের প্রতি) অবজ্ঞার কারণে সে মুরতাদ হয়ে যাবে; যদিও সে যা বলেছে তাতে বিশ্বাসী না হয়। এটা ‘কুফরুল ইনাদ’ (হক বুঝেও হঠকারিতাবশত না মানার কুফরের) মতোই।’ ‘ফাতওয়া শামী’তে বলা হয়েছে, ‘অর্থাৎ, সে কুফরী শব্দ স্বেচ্ছায়ই উচ্চারণ করেছে, কিন্তু এর অর্থ উদ্দেশ্য নেয়নি (এক্ষেত্রেও কাফের হয়ে যাবে)। এটা পূর্বের কথার বিপরীত নয় যে, ঈমান শুধু সত্যায়ন ও স্বীকারোক্তির নাম। কেননা বাস্তবে সত্যায়ন থাকলেও এখানে তা ধর্তব্য নয়। কারণ শরীয়ত ঠাট্টাচ্ছলে কুফরী বাক্য বলার মতো কিছু গুনাহকে ঈমান না থাকার নিদর্শন হিসাবে নির্ণয় করেছে। যেমন ঠাট্টাচ্ছলে বলা; যা পূর্বে উল্লেখ করা হলো। তেমনি কেউ মূর্তিকে সিজদা করলে অথবা ভাগাড়ে কুরআন নিক্ষেপ করলে কাফের হয়ে যাবে, যদিও সে ইসলামে বিশ্বাসী হয়। কেননা এই কাজটি কুরআনকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করারই নামান্তর, যেমনটি শরহে আকায়েদে বর্ণনা করা হয়েছে।’ ‘ফাতওয়া কাযীখানে’ বলা হয়েছে ‘কেউ স্বেচ্ছায় কুফরী বাক্য উচ্চারণ করলে কাফের হয়ে যাবে, যদিও তার অন্তর ঈমানে অবিচল থাকে। সে আল্লাহ তাআলার নিকট মুমিন হিসাবে গৃহীত হবে না।’
উপরের বর্ণনাসমূহ থেকে স্পষ্ট, যে কেউ হযরত ঈসা আলাইহিস সালামকে সঙ্গীতে আল্লাহর পুত্র বলবে অথবা পাদরিদের বলানোর কারণে কোনো কুফরী বাক্য বলবে, সে মুরতাদ-কাফের হয়ে যাবে। এ বিষয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করাও কুফর। ‘শরহে আকায়েদ’ এবং মোল্লা আলী কারী রহিমাহুল্লাহ রচিত ‘শরহুল ফিকহুল আকবারে’ এসেছে, ‘কুফরের প্রতি সন্তুষ্টিও কুফর।’ এমন মারাত্মক কথাগুলোর ব্যাপারে কোনো পরোয়া না করা এবং এগুলোকে হালকা মনে করাও কুফর। ‘শরহুল ফিকহুল আকবারে’ বলা হয়েছে, ‘গুনাহকে হালকা ভাবা, বেপরোয়াভাবে তাতে লিপ্ত হওয়া এবং লিপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সেটাকে মুবাহ ও বৈধ বিষয়গুলোরই অনুরূপ জ্ঞান করা কুফর’।
সারকথা হল, এই স্কুলগুলোর ছেলে-মেয়েরা, যারা এসব কুফরী কথা বলে, সবাই মুরতাদ। যে জেনেশুনে এমন কাজের জন্য তাদেরকে সেখানে পাঠাবে সেও কাফের ও মুরতাদ। স্কুলগুলোর শিক্ষক এবং জমি ও চাঁদা প্রদানের মাধ্যমে যারা এর সহায়তা করে তারা যদি এই অপকর্মের প্রতি সন্তুষ্ট থাকে, তারাও কাফের ও মুরতাদ। আর যে এ কাজকে মন্দ মনে করে শুধু পার্থিব স্বার্থে তাতে লিপ্ত হয়, সে ফাসেক ও পাপিষ্ঠ। প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য, এমন লোকদের এবং নিজেদের সন্তানদের বাধা দেওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের কেউ অন্যায় দেখলে যেন হাত দিয়ে তা প্রতিহত করে। যদি তা না পারে, সে যেন যবানের মাধ্যমে তা দূর করতে তৎপর হয়। যদি তাও না পারে, তবে সে যেন উক্ত মন্দ কাজকে মনে মনে ঘৃণা করে এবং পরিবর্তনের পরিকল্পনা করে। এর বাইরে সরিষার দানা পরিমাণও ঈমান নেই।’
যে ব্যক্তি বাধা দেয়ার কোনো প্রকার সামর্থ্য রাখা সত্ত্বেও বাধা দিলো না, যদি সে ওই কাজকে ভালো মনে করে অথবা হালকা মনে করে, তাহলে সে কাফের-মুরতাদ হয়ে যাবে। আর যে মন্দ মনে করে বাধা না দিবে, সে শৈথিল্যবাদী ও ফাসেক বলে গণ্য হবে। আল্লাহ ভালো জানেন।
ফাতওয়া প্রদানকারী: রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী উফিয়া আনহু।
[বিজ্ঞ আলেমদের দস্তখত ও সংক্ষিপ্ত মন্তব্য]
উত্তর সহীহ। মুহাম্মাদ মাযহার। শিক্ষক, সাহারানপুর মাদরাসা।
উত্তরটি সত্য এবং সত্যই অনুসরণীয়। ইনায়াত ইলাহী সাহারানপুরী।
উত্তরটি সঠিক। আবুল হাসান।
উত্তর সঠিক। আযীয হাসান, উফিয়া আনহু।
উত্তর সঠিক। মুশতাক আহমদ, উফিয়া আনহু।
উত্তরটি সঠিক। হাবীবুর রহমান, উফিয়া আনহু।
উত্তরটি সঠিক। মুহাম্মাদ হাসান। শিক্ষক, দেওবন্দ মাদরাসা।
উত্তরটি সত্য। আবদুর রহমান, উফিয়া আনহু।
উত্তর প্রদানকারী সঠিক উত্তর দিয়েছেন। যুলফিকার আলী, উফিয়া আনহু।
উত্তরটি সঠিক এবং অস্বীকারকারী লাঞ্ছিত। আহমদ, উফিয়া আনহু।
উত্তরটি সঠিক। মুহাম্মাদ আমীর বায খান।
উত্তরটি সত্য, সঠিক। মুহাম্মাদ মাহমুদ, উফিয়া আনহু। শিক্ষক, দেওবন্দ মাদরাসা ।
উত্তরটি সঠিক। আযীযুর রহমান দেওবন্দী, উফিয়া আনহু। শিক্ষক, মাদরাসায়ে আরাবী মিরাঠ।
এই উত্তরটি সঠিক। আল্লাহ ভালো জানেন। তাঁর ইলমই পরিপূর্ণ। মুহাম্মাদ ইবরাহীম সাম্ভলী।
উত্তরটি সঠিক। আবদুল মুমিন দেওবন্দী, উফিয়া আনহু।
উত্তরটি সঠিক। মুহাম্মাদ মানসাব আলী দেওবন্দী, উফিয়া আনহু।
উত্তরটি সঠিক। মুহাম্মাদ মাহমুদ হাসান, উফিয়া আনহু। মাদরাসায়ে ইসলামিয়া, দেওবন্দ।
সঠিক কথা হলো, কুফরী বাক্য আওড়ানোও কুফর। এ বিষয়টি আয়াত থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয়। আল্লাহ ইরশাদ করেন:
مَنْ كَفَرَ بِاللَّهِ مِنْ بَعْدِ إِيمَانِهِ إِلَّا مَنْ أُكْرِهَ وَقَلْبُهُ مُطْمَئِنٌّ بِالْإِيمَانِ وَلَكِنْ مَنْ شَرَحَ بِالْكُفْرِ صَدْرًا فَعَلَيْهِمْ غَضَبٌ مِنَ اللَّهِ وَلَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ.
[“কেউ ঈমান আনার পর আল্লাহর সাথে কুফরী করলে এবং কুফরীর জন্য হৃদয় উন্মুক্ত রাখলে তার উপর আপতিত হবে আল্লাহর গযব এবং তার জন্য রয়েছে মহাশাস্তি; তবে তার জন্য নয়, যাকে কুফরীর জন্য বাধ্য করা হয়, কিন্তু তার চিত্ত ঈমানে অবিচল।” –সূরা নাহল ১৬: ১০৬]
আয়াতে শুধু ইকরাহ (বাধ্যকরণের) অবস্থাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ইকরাহ ব্যতীত সেচ্ছায় কুফরী বাক্য বলা কুফরীর অন্তর্ভুক্ত ছিলই। স্পষ্ট যে, উল্লিখিত গান-সঙ্গীত ইত্যাদিতে কুফরী বাক্য উচ্চারণ ইকরাহের কারণে নয়; বরং স্বেচ্ছায়। তাই তা নিশ্চয়ই কুফরের অন্তর্ভুক্ত হবে। কুফরের সহযোগিতা এবং কুফর শিক্ষা দেয়ার বিধান একই। আল্লাহই সঠিক জানেন। লিখেছেন, খলীল আহমদ, উফিয়া আনহু। শিক্ষক, মাদরাসায়ে আরাবী সাহারানপুর।
উত্তর সঠিক হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ.
[“নেককাজ ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পর সাহায্য করবে এবং পাপ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সাহায্য করবে না। আর তোমরা আল্লাহর ভয় অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তিদানে কঠোর।” –সূরা মায়েদা ০৫: ০২]
আল্লাহ ভালো জানেন। লিখেছেন, আবুল হাসানাত মুহাম্মাদ আবদুল হাই।”
-ফাতাওয়ায়ে রশীদিয়া, পৃ: ১৯৫-১৯৮ )দারুল ইশাআত, করাচি(
হ্যাঁ, কেউ যদি কুফরী বাক্যের কুফর ও অসারতা বুঝানোর জন্য কথায় বা লিখায় কোনো কুফরী বাক্য উদ্ধৃত করে, তাহলে কোনো সমস্যা নেই।-আলবাহরুর রায়েক: ৫/১৩৪; রদ্দুল মুহতার: ৪/২২৪; ইকফারুল মুলহিদীন: ৫৯
উল্লেখ্য, যেকোনো কুফরী বাক্য লেখা কিংবা উচ্চারণ করা যদিও কুফরী, তবে কেউ কুফরী বাক্য উচ্চারণ করলে কিংবা লিখলেই তাকে কাফের আখ্যায়িত করা যায় না। বরং কাফের আখ্যায়িত করার জন্য কিছু শর্তের (شرائط التكفير) উপস্থিতি ও কিছু প্রতিবন্ধকের (موانع التكفير) অনুপস্থিতি নিশ্চিত হতে হয়, যা একজন বিজ্ঞ আলেমের পক্ষেই সম্ভব। কোনো বিজ্ঞ আলেমের সিদ্ধান্ত ছাড়া সাধারণ মানুষের জন্য এবিষয়ে অগ্রগামী হওয়া অন্যায় এবং নিজের ঈমানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
০২. কারও যদি শরীয়তের এই পরিমাণ ইলম এবং সামর্থ্য থাকে, যার ফলে সিলেবাসের হারাম ও কুফরী বিষয়গুলো চিহ্নিত করে, প্রতিষ্ঠানের ঈমান ও শরীয়াহ বিরোধী বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও পরীক্ষাসহ সকল স্তরে সেই সব হারাম ও কুফর শিরক থেকে বেঁচে থাকতে পারে, তার জন্য এমন সিলেবাসে পড়ালেখা করা নাজায়েয না হলেও অনুত্তম ও পরিত্যাজ্য অবশ্যই। পক্ষান্তরে যার এই পরিমাণ শরীয়তের ইলম অথবা সামর্থ্য নেই, তার জন্য এই সিলেবাসে পড়াশোনা করা সম্পূর্ণ নাজায়েয। এই অবস্থায় কেউ পড়াশোনা করলে, তাকে বিভিন্ন নাজায়েয কাজে যেমন জড়াতে হবে, তেমনি যেকোনো সময় নিজের অজান্তেই কুফর-শিরকে লিপ্ত হয়ে ঈমানও হারাতে হতে পারে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
এক হাদীসে এসেছে,
عن جابر بن عبد الله، أن عمر بن الخطاب، أتى النبي صلى الله عليه وسلم بكتاب أصابه من بعض أهل الكتب، فقرأه على النبي صلى الله عليه وسلم فغضب وقال: ” أمتهوكون فيها يا ابن الخطاب، والذي نفسي بيده لقد جئتكم بها بيضاء نقية، لا تسألوهم عن شيء فيخبروكم بحق فتكذبوا به، أو بباطل فتصدقوا به، والذي نفسي بيده لو أن موسى كان حيا، ما وسعه إلا أن يتبعني ” – مسند الإمام أحمد: 15156؛ الحديث حسنه الشيخ الألباني رحمه الله في إرواء الغليل (6\37) بشواهده، قال: الحديث قوي ، فإن له شواهد كثيرة. اهـ
“জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, উমর ইবনুল খাত্তাব রাযিয়াল্লাহু আনহু একদিন আহলে কিতাবের কারও থেকে পাওয়া একটা কিতাব নিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আসলেন। এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কিতাবটি পড়ে শোনাতে লাগলেন। এতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাগান্বিত হয়ে উঠলেন এবং বললেন, দীনের ব্যাপারে কি তোমরা জ্ঞানশূন্য দিশাহীনতায় দিগ্বিদিক ছুটছো হে খাত্তাবের বেটা? ওই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কাছে আমি শুভ্র স্বচ্ছ ও পরিষ্কার দীন নিয়ে এসেছি। আহলে কিতাবের কাছে কোনো কিছুই জিজ্ঞেস করবে না। হতে পারে তারা সত্য বললে তোমরা তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে বসবে কিংবা মিথ্যা বললেও বিশ্বাস করে বসবে। ওই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ, স্বয়ং মূসা আলাইহিস সালামও যদি জীবিত থাকতেন, আমার অনুসরণ ছাড়া তাঁর কোনো গত্যন্তর থাকতো না।” –মুসনাদে আহমাদ: ১৫১৫৬
হাফেজ ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ (৮৫২ হি.) বলেন,
وَالْأَوْلَى فِي هَذِهِ الْمَسْأَلَةِ التَّفْرِقَةُ بَيْنَ مَنْ لَمْ يَتَمَكَّنْ وَيَصِرْ مِنَ الرَّاسِخِينَ فِي الْإِيمَانِ فَلَا يَجُوزُ لَهُ النَّظَرُ فِي شَيْءٍ مِنْ ذَلِكَ بِخِلَافِ الرَّاسِخِ فَيَجُوزُ لَهُ وَلَا سِيَّمَا عِنْدَ الِاحْتِيَاجِ إِلَى الرَّدِّ عَلَى الْمُخَالِفِ وَيَدُلُّ عَلَى ذَلِكَ نَقْلُ الْأَئِمَّةِ قَدِيمًا وَحَدِيثًا مِنَ التَّوْرَاةِ وَإِلْزَامُهُمُ الْيَهُود -فتح الباري، الناشر: دار المعرفة – بيروت: 13/ 525
“এই মাসআলার বিশ্লেষণে উত্তম মত হল, যারা ইলম ও ঈমানে মজবুত এবং যারা মজবুত নয় উভয়ের মাঝে পার্থক্য করা। যারা মজবুত নয়, তাদের জন্য এগুলো পড়া জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যাদের ইলম ও ঈমান মজবুত, তাদের জন্য পড়া জায়েয। বিশেষত যখন বাতিলের খণ্ডন করার প্রয়োজন পড়ে। এর প্রমাণ হল, পূর্ববর্তী ও পরবর্তী উলামায়ে কেরামের কর্ম। তাঁরা তাওরাতের উদ্ধৃতি দিয়ে ইহুদীদের খণ্ডন করেছেন।” –ফাতহুল বারী: ১৩/৫২৫
আরও দেখুন: কাশশাফুল কিনা: ১/৪৩৪; আল মাউসূআতুল ফিকহিয়্যাহ আল কুয়েতিয়াহ: ৩৪/১৮৫
আমাদের জানা মতে বস্তুত উপর্যুক্ত শর্ত পূরণ করে এই সিলেবাসে পড়া এবং ঈমান রক্ষা করার সম্ভাবনা নিতান্তই ক্ষীণ; বরং বলা ভালো অসম্ভব প্রায়। বাস্তবেও আমরা দেখছি, এই সিলেবাসে পড়ে অধিকাংশ ছেলে মেয়েই ইসলাম ও ইসলামী শরীয়াহর প্রতি বীতশ্রদ্ধ ও বিদ্বেষী হয়ে ওঠে। ইসলামের পরিবর্তে পশ্চিমাদের ঈমান বিধ্বংসী, আকীদা-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনা এবং সভ্যতা ও সংস্কৃতির একনিষ্ঠ ধারক, রক্ষক ও প্রচারকে পরিণত হচ্ছে। আলাদা দীনী তালীম তারবিয়াহ ও নেগরানি না থাকলে এই সিলেবাসের প্রতিটি শিক্ষার্থী ন্যূনতম যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তা হচ্ছে, ঈমান কুফর, হালাল হারাম ও ফরয ওয়াজিবের মতো শরীয়তের অনেক বিধানকে হালকা মনে করে, দীনী ইলম ও দীনদার শ্রেণিকে তুচ্ছ, সেকেলে ও পশ্চাৎপদ জ্ঞান করে, অপরদিকে নিজেদেরকে এবং নিজেদের চর্চিত জাগতিক জ্ঞানকে উত্তম মনে করে, যা কারও কারও ক্ষেত্রে ঈমান ভঙ্গ পর্যন্ত গড়ায় নাউযুবিল্লাহ। আশা করি যারা সমাজ ও জগৎ সম্পর্কে কিছুমাত্র ধারণা রাখেন, তারা এই বিষয়ে আমাদের সঙ্গে দ্বিমত করবেন না।
ফাতওয়া নং - ০৬
প্রশ্ন:
আমি নির্দিষ্ট পারিশ্রমিকের বিনিময়ে মোটিভেশন লেটার লিখে দেই। বিদেশের বিশ্যবিদ্যালয়গুলোতে মাস্টার্স আবেদনের জন্য এটি লাগে। আবেদনকারীর যোগ্যতার ওপর এক পেজের একটা রচনা বলতে পারেন। আমি আবেদনকারী থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে কথা গুছিয়ে লিখে দেই। সে এর জন্য আমাকে কিছু পারিশ্রমিক দেয়। এভাবে অর্থ উপার্জন করা কি হারাম হবে?
উত্তর:
بسم الله الرحمن الرحيم
যেখানে পশ্চিমাদের থেকে আমদানিকৃত মুসলিম বিশ্বের তথাকথিত আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করাই আজকাল ঈমানের প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেখানে ইউরোপ আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কী অবস্থা, তা আমাদের কারো অজানা থাকার কথা নয়। যে সকল মুসলিম তরুণ তরুণী সেখানে শিক্ষা গ্রহণ করতে যায়, তারা এখান থেকে নিয়ে যাওয়া ঈমানের ছিটে ফোঁটাও সেখানে রেখে আসে। তাদের শিক্ষা কারিকুলামের মূল ভিত্তিই কুফর শিরক। নাস্তিকতা, ধর্মহীনতা, সেক্যুলারিজম, পুঁজিবাদ, বিবর্তনবাদসহ অসংখ্য কুফরী শিক্ষা এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিপাদ্য। তাছাড়া কাফেরদের দেশে অবস্থান এবং কাফেরদের সংশ্রবের কুপ্রভাব তো আছেই, যা স্বতন্ত্র একটি নিষিদ্ধ ও নাজায়েয কাজ। সহশিক্ষা ও নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা, প্রকাশ্য অশ্লীলতা ও বেহায়াপনা, লাগামহীন যৌনতার ছড়াছড়ি সেখানকার নিত্যজীবনের অপরিহার্য ও সমাদৃত অনুসঙ্গ।
আসলে মুসলিম ছেলে-মেয়েদের এসব ধর্মহীন কুফরী রাষ্ট্রের স্কলারশীপ প্রদানের প্রধানতম উদ্দেশ্যই তাদের ঈমান ধ্বংস করা। অন্যথায় যাদেরকে পবিত্র কুরআনে আমাদের শত্রু বলা হয়েছে এবং কুরআনের ভাষায়, আমরা কষ্টে থাকলেই যারা আনন্দিত হয়, তাদের জন্য মুসলিম ছেলে-মেয়েদের সুশিক্ষা ও কল্যাণের প্রতি এমন আগ্রহের কোনো কারণ থাকতে পারে না।
বস্তুত এর মাধ্যমে ওরা এমন একটি মুসলিম প্রজন্ম তৈরি করতে চায়, যারা নামে মুসলিম হলেও, চিন্তা ও কর্মে, চেতনা ও আদর্শে হবে সম্পূর্ণ ইউরোপিয়ান। যার কারণে এসব বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মুসলিমদের বেশির ভাগকেই দেখা যায়, ফেরার পর তারা অন্য মানুষে রূপান্তরিত হয়ে যায়। হয় সম্পূর্ণ ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক মুরতাদে পরিণত হয়, না হয় বড় জোর মডারেট ইসলামের নামে এক নতুন ইসলামের উদার দাঈতে রূপান্তরিত হয়।
বস্তুত এর মাধ্যমে ওরা এমন একটি মুসলিম প্রজন্ম তৈরি করতে চায়, যারা নামে মুসলিম হলেও, চিন্তা ও কর্মে, চেতনা ও আদর্শে হবে সম্পূর্ণ ইউরোপিয়ান। যার কারণে এসব বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মুসলিমদের বেশির ভাগকেই দেখা যায়, ফেরার পর তারা অন্য মানুষে রূপান্তরিত হয়ে যায়। হয় সম্পূর্ণ ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক মুরতাদে পরিণত হয়, না হয় বড় জোর মডারেট ইসলামের নামে এক নতুন ইসলামের উদার দাঈতে রূপান্তরিত হয়।
যাদের এই অবস্থা হয়, তাদের জন্য যে সেখানে যাওয়া এবং সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে পাড়াশোনা করা সবই নাজায়েয, তাও বলার অপেক্ষা রাখে না।
সুতরাং আপনার জন্য মোটিভেশন লেটার লিখে তাদের এই নাজায়েয কাজে সহযোগিতা করাও নাজায়েয। অবিলম্বে তা পরিহার করা জরুরি। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন,
وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ (2). المائدة
“সৎকর্ম ও তাকওয়ায় তোমরা পরস্পরের সহযোগিতা কর। মন্দ কর্ম ও সীমালঙ্ঘনে পরস্পরের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে কঠোর।” -সূরা মায়েদা (৫): ২
অবশ্য মোটিভেশন লেটার লিখে যে উপার্জন করেছেন, তা ভোগ করা আপনার জন্য হারাম নয়। -তাতারখানিয়া ১৫/৮৫, ১৩০-১৩৪, রদ্দুল মুহতার: ৬/৩৯১-১৯২, এলাউস সুনান: ১৭/৪৩৩
.
এপর্যায়ে আমি স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিপড়ুয়া সম্মানিত ভাই-বোনদের সমীপে বিনীত আরো কিছু প্রশ্ন রাখছি। আশা করি সকলেই বিষয়গুলো নিয়ে সঠিকভাবে চিন্তা-ভাবনা করবেন, ইনশা-আল্লাহ।
- প্রচলিত এই শিক্ষাব্যবস্থা কাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রীত?
- বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধারায় থেকে ইসলাম অনুযায়ী চলা অনেক সহজ নাকি কঠিন?
- এই শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে ইসলাম ও আল্লাহমুখী করছে নাকি ইসলাম ও আল্লাহ থেকে বিমুখ করে রেখেছে?
- বর্তমান ধারায় থেকে আমার দ্বীনের ফরয-আবশ্যক ইলমগুলো হাসিল হচ্ছে কি?
- এই শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে কলেজ-ভার্সিটি ক্যাম্পাসে নামায আদায় করতে বাধা দিচ্ছে কি না?
- এই শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে ক্যাম্পাসে পর্দা রক্ষা করতে বাধা দিচ্ছে কি না? এবং পর্দারক্ষার উপর অটল থাকার কারণে আমাদেরকে অসংখ্যবার অপমানিত করেছে কি না?
- বাসা থেকে বাসে, সিএনজিতে, রেলে জার্নি করে ক্যাম্পাসে যাওয়াটা প্রতিদিন পর্দানুযায়ী হচ্ছে? নাকি হচ্ছে না? তখন পাশে কোনো ছেলে মানুষ বসে পরতে পারে? নাকি পারে না?
তো সুপ্রিয় ভাই ও বোন আমার! সহশিক্ষা হারাম। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা না-জায়েয। এটা এখন প্রায় আমরা সবাই জানি। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে বিষয়গুলো পড়ানো হয় সেগুলোকে আমরা অনেকেই না-জেনে বৈধ এবং ইসলাম-সমর্থিত মনে করতে থাকি। কিন্তু এখানে আসলে হাকীকতটা কী? বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার পাঠ্যবইগুলোকে কি ইসলাম সমর্থন করে? নাকি করে না? এবিষয়ে সঠিক সমাধানটা আসলে কী? এব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পড়ুন -
স্কুল-কলেজের সরকারী সিলেবাসভুক্ত বইগুলো সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা ও আন্তরিক নিবেদন নিয়ে ধারাবাহিক প্রকাশনাঃ- সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম সিরিজের ১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ফিতনা/196254
স্কুল-কলেজের সরকারী সিলেবাসভুক্ত বইগুলো সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা ও আন্তরিক নিবেদন নিয়ে ধারাবাহিক প্রকাশনাঃ- সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম সিরিজের ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ফিতনা/196306
স্কুল-কলেজের সরকারী সিলেবাসভুক্ত বইগুলো সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা ও আন্তরিক নিবেদন নিয়ে ধারাবাহিক প্রকাশনাঃ- সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম সিরিজের ৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ফিতনা/196384
স্কুল-কলেজের সরকারী সিলেবাসভুক্ত বইগুলো সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা ও আন্তরিক নিবেদন নিয়ে ধারাবাহিক প্রকাশনাঃ- সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম সিরিজের ৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ফিতনা/196457
স্কুল-কলেজের সরকারী সিলেবাসভুক্ত বইগুলো সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা ও আন্তরিক নিবেদন নিয়ে ধারাবাহিক প্রকাশনাঃ- সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম সিরিজের ৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ফিতনা/196625
.
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল “ﷺ” ইরশাদ করেন,
চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহ্বার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭}
https://dorar.net/hadith/sharh/11177
এপর্যায়ে আমি স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিপড়ুয়া সম্মানিত ভাই-বোনদের সমীপে বিনীত আরো কিছু প্রশ্ন রাখছি। আশা করি সকলেই বিষয়গুলো নিয়ে সঠিকভাবে চিন্তা-ভাবনা করবেন, ইনশা-আল্লাহ।
- প্রচলিত এই শিক্ষাব্যবস্থা কাদের দ্বারা নিয়ন্ত্রীত?
- বর্তমান পরিস্থিতিতে এই ধারায় থেকে ইসলাম অনুযায়ী চলা অনেক সহজ নাকি কঠিন?
- এই শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে ইসলাম ও আল্লাহমুখী করছে নাকি ইসলাম ও আল্লাহ থেকে বিমুখ করে রেখেছে?
- বর্তমান ধারায় থেকে আমার দ্বীনের ফরয-আবশ্যক ইলমগুলো হাসিল হচ্ছে কি?
- এই শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে কলেজ-ভার্সিটি ক্যাম্পাসে নামায আদায় করতে বাধা দিচ্ছে কি না?
- এই শিক্ষাব্যবস্থা আমাদেরকে ক্যাম্পাসে পর্দা রক্ষা করতে বাধা দিচ্ছে কি না? এবং পর্দারক্ষার উপর অটল থাকার কারণে আমাদেরকে অসংখ্যবার অপমানিত করেছে কি না?
- বাসা থেকে বাসে, সিএনজিতে, রেলে জার্নি করে ক্যাম্পাসে যাওয়াটা প্রতিদিন পর্দানুযায়ী হচ্ছে? নাকি হচ্ছে না? তখন পাশে কোনো ছেলে মানুষ বসে পরতে পারে? নাকি পারে না?
তো সুপ্রিয় ভাই ও বোন আমার! সহশিক্ষা হারাম। প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা না-জায়েয। এটা এখন প্রায় আমরা সবাই জানি। কিন্তু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে বিষয়গুলো পড়ানো হয় সেগুলোকে আমরা অনেকেই না-জেনে বৈধ এবং ইসলাম-সমর্থিত মনে করতে থাকি। কিন্তু এখানে আসলে হাকীকতটা কী? বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থার পাঠ্যবইগুলোকে কি ইসলাম সমর্থন করে? নাকি করে না? এবিষয়ে সঠিক সমাধানটা আসলে কী? এব্যাপারে বিস্তারিত জানতে পড়ুন -
স্কুল-কলেজের সরকারী সিলেবাসভুক্ত বইগুলো সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা ও আন্তরিক নিবেদন নিয়ে ধারাবাহিক প্রকাশনাঃ- সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম সিরিজের ১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ফিতনা/196254
স্কুল-কলেজের সরকারী সিলেবাসভুক্ত বইগুলো সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা ও আন্তরিক নিবেদন নিয়ে ধারাবাহিক প্রকাশনাঃ- সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম সিরিজের ২য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ফিতনা/196306
স্কুল-কলেজের সরকারী সিলেবাসভুক্ত বইগুলো সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা ও আন্তরিক নিবেদন নিয়ে ধারাবাহিক প্রকাশনাঃ- সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম সিরিজের ৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ফিতনা/196384
স্কুল-কলেজের সরকারী সিলেবাসভুক্ত বইগুলো সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা ও আন্তরিক নিবেদন নিয়ে ধারাবাহিক প্রকাশনাঃ- সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম সিরিজের ৪র্থ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ফিতনা/196457
স্কুল-কলেজের সরকারী সিলেবাসভুক্ত বইগুলো সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা ও আন্তরিক নিবেদন নিয়ে ধারাবাহিক প্রকাশনাঃ- সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম সিরিজের ৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফোরাম/ফিতনা/196625
.
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূল “ﷺ” ইরশাদ করেন,
فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُما النَّظَرُ، وَالأُذُنَانِ زِنَاهُما الاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الكَلَامُ، وَالْيَدُ زِنَاهَا البَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذلكَ الفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ.
চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহ্বার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭}
https://dorar.net/hadith/sharh/11177
فقط، والله تعالى أعلم بالصواب
Comment