প্রাসঙ্গিক গবেষণা-প্রবন্ধ সংকলনঃ- ০৩. নিজের অজান্তে আমরা শিরকে লিপ্ত না তো?
কয়েকটি জরুরি জ্ঞাতব্যঃ-
- নীচের প্রবন্ধটি "সরকারী পাঠ্যবই ও ইসলাম সিরিজের" প্রাসঙ্গিক জরুরি একটি গবেষণাপ্রবন্ধ।
- এই প্রবন্ধটি অসংখ্য লেখা ও আর্টিকেলের নির্বাচিত অংশের সমষ্টি। যে লেখাগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিলো। তাই এগুলো আমার নিজের লেখা নয়; এ হিসেবে আমি উক্ত লেখাগুলোর একজন সংকলক মাত্র। আল্লাহ মূল লেখকবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট সকলকে জাযায়ে খায়র দিন।
- প্রবন্ধটি অসংখ্য আর্টিকেলের সংকলন হলেও এখানে বহুবিদ সম্পাদনার প্রয়োজন ছিল। ভাষাসম্পাদনা, অঙ্গসজ্জা, শারঈ সম্পাদনাসহ সার্বিক সম্পাদনার প্রয়োজন ছিল। সেগুলো আমার করা। এ হিসেবে আমি এ প্রবন্ধের একজন সম্পাদকও বটে।
- শেষে উল্লেখিত ফাতওয়াটি একজন বিজ্ঞ ও মুহাক্কিক মুফতির কাছ থেকে সংগৃহীত। যেহেতু সমগ্র প্রবন্ধজুড়ে ফাতওয়ার শারঈ দলীলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে একবার উল্লেখ করা আছে, তাই ফাতওয়ার নীচে নতুনভাবে আর দলীলগুলো দেওয়া হয়নি।
- প্রবন্ধটি যেহেতু ২১শে ফেব্রুয়ারি ও ভাষাদিবসকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হয়েছে; সেহেতু স্থানে স্থানে শহীদ মিনারের নাম উল্লেখ করে লেখা হয়েছে। তবে এ প্রবন্ধটি সকল প্রকার দিবসের অসারতা প্রমাণের ক্ষেত্রে সমান প্রযোজ্য।
- প্রবন্ধের শুরুতে "ইসলামে দিবস পালনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ০৫টি মূলনীতি উল্লেখ করা হয়েছে, যা জানলে শহীদ মিনারের বৈধতা-অবৈধতা উপলব্ধি করা সহজ হবে।
- "সেদিন মূর্তির সম্মানে যা যা করা হয়ঃ শহীদ মিনারকেন্দ্রিক আচার-অনুষ্ঠানসমূহ: যেগুলো ইসলামে স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ" এই শিরোনামের অধীনে সেদিন পালনকৃত হারাম ও শিরকমিশ্রিত কার্যক্রমগুলোকে লিস্টেড করা হয়েছে। এবং সেগুলো কেন হারাম, সেটাও প্রবন্ধজুড়ে স্পষ্ট করা হয়েছে।
- প্রবন্ধটির শেষে এবিষয়ে শরীয়াহর অবস্থান নিয়ে সংশয়বাদীদের অলীক সংশয়সমূহ ও সেগুলোর জবাব দেওয়া হয়েছে।
- সম্মানিত পাঠক ভাইবোনদের নিকট আবেদন থাকবে, দিবসপালন বিষয়ক জরুরি কোনো লেখা, আর্টিকেল, প্রবন্ধ বা তথ্য আপনার সংগ্রহে থাকলে কমেন্টে পেস্ট করে দিতে পারেন। সবাই আরো জানবে, আরো বেশি সচেতন হবে।
- এ প্রবন্ধে কোনো ভুলত্রুটি থেকে গেলে সেটার দায় একান্তই লেখক ও সম্পাদকের। তখন সেটা আমাদের ব্যক্তিগত মতামত বলে গণ্য হবে।
- একটু দীর্ঘ হওয়ার কারণে সম্পূর্ণ প্রবন্ধটি একইথ্রেডে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাই প্রবন্ধের বাকি অংশ পোস্টের প্রথম কমেন্টে থাকবে।
আশা করি প্রবন্ধটি সকল দ্বীনমুখী ভাইবোন ও দ্বীনবিরোধীদের জন্য সহায়ক হবে। কারো দ্বীনের পথে অটল থাকার; আর কারো দ্বীনের দিকে ফিরে আসার। পরিশেষে একটা আবেদন করতেই পারি, আপনাদের নেক দুআয় আমাদেরকে ভুলবেন না।
-------------------------------
ইসলামে দিবস পালনের বিষয়ে কয়েকটি মূলনীতি জানলেই শহীদ মিনারের বৈধতা-অবৈধতা উপলব্ধি করা সহজ হবে। আমরা কুরআন ও হাদিসের আলোকে মূলনীতিগুলো উল্লেখ করছি। এতে ভাষা শহীদ দিবসসহ অন্যান্য সকল দিবস পালনের অসারতা ও অবৈধতা স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হবে।
১ নং মূলনীতিঃ ইসলামে জাতিগতভাবে উৎসব পালনের জন্য শুধুমাত্র দুটি দিন নির্ধারণ রয়েছে। এক হলো ইদুল ফিতর আর দ্বিতীয়টি হলো ইদুল আজহা। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যই আমি নিয়ম-কানুন নির্ধারণ করে দিয়েছি যা তারা পালন করে। সুতরাং তারা যেন এ ব্যাপারে তোমার সঙ্গে বিতর্ক না করে। [সূরা আল হাজ্ব, আয়াত ৬৭]
আনাস বিন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদিনায় আসলেন তখন তাদের দুটি উৎসবের দিন ছিল। তিনি বললেন, এ দুটি দিনের তাৎপর্য কী? তারা বলল, জাহিলিয়াতের যুগে আমরা এ দুটি দিনে উৎসব পালন করতাম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, এ দিনগুলোর পরিবর্তে আল্লাহ তা’আলা তোমাদের উত্তম দুটি দিন দিয়েছেন; কুরবানির ইদ ও রোজার ইদ। [সুনানু আবি দাউদঃ ১/২৯৫, হাদিস নং ১১৩৪, প্রকাশনীঃ আল মাকতাবাতুল আসরিয়্যা, বৈরুত]
এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ইসলামে জাতীয়ভাবে দুটি উৎসবই নির্ধারিত। আর কুরআনের ভাষ্যমতে মুসলিমদের জন্য নিজ ধর্মের অনুমোদিত উৎসবই শুধু বৈধ, এর বাইরে অন্য কোনো উৎসব-পার্বন পালনের অনুমতি নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদিনায় এসে প্রথমেই যে সকল কুসংস্কৃতি বন্ধ করেন, তন্মধ্য হতে অন্যতম ছিল নববর্ষ পালন উৎসব। ইসলামপূর্ব সময়ে মদিনাতেও নববর্ষ পালনের প্রথা চালু ছিল। কিন্তু ইসলাম এসে তা বন্ধ করে তাদের উৎসবের জন্য নতুন দুটি দিবস দান করে। অতএব, বিধর্মীদের উদযাপিত নববর্ষের পরিবর্তে ইসলাম-প্রদত্ত দুটি দিবস পেয়েও যারা সন্তুষ্ট নয়, এখনও যারা নববর্ষ পালন করতে আগ্রহ দেখায় বা পালন করে, তারা মূলত ইসলামের পূর্ণতাকে অস্বীকার করে পূর্বের সে জাহিলিয়াতের দিকেই ফিরে যেতে চায়। এমনটি করা একজন মুসলিমের পক্ষে কী করে সম্ভব যে, যে দিবসের পরিবর্তে আল্লাহ তাকে উত্তম দিবস দান করলেন, তথাপিও নিষিদ্ধ সে দিবস পালন করার জন্যই সে উদগ্রীব হয়ে থাকে।
২ নং মূলনীতিঃ ইসলামে বিধর্মী ও বদদ্বীন লোকদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে। হুজাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ যে ব্যক্তি অন্য জাতির সঙ্গে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। [মুসনাদুল বাজ্জারঃ ৭/৩৬৮, হাদিস নং ২৯৬৬, প্রকাশনীঃ মাকতাবাতুল উলুম ওয়াল হিকাম, মদিনা]
এ হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয় যে, বিজাতীয় ও বদদ্বীন লোকদের অনুষ্ঠান বা মেলায় শরিক হওয়া, এতে সমর্থন দেওয়া নাজায়িজ ও হারাম। অতএব, যারা এসব বিজাতীয় কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করবে, তারাও এ ক্ষেত্রে তাদের শ্রেণীভুক্ত হয়ে যাবে।
৩ নং মূলনীতিঃ অশ্লীলতাপূর্ণ উৎসব পরিত্যাগ করা মুসলিমদের জন্য একান্ত আবশ্যক। নিজে অশ্লীল কাজ করা বা এর প্রচার কামনা করা জঘন্যতম অপরাধ ও হারাম। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ যারা চায় যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রচার ঘটুক তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না। [সূরা নূর, আয়াত ১৯]
আমাদের কারও অজানা নয় যে, দিন দিন পহেলা বৈশাখে অশ্লীলতা কী পরিমাণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতএব, পহেলা বৈশাখসহ অশ্লীলতাপূর্ণ সকল কর্মকাণ্ড মুসলিমদের জন্য হারাম। তাতে শরিক হওয়া কিংবা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সমর্থন করা সবই নাজায়িজ।
৪ নং মূলনীতিঃ অপচয় ও অনর্থক কাজ থেকে মুসলমানদের বেঁচে থাকা একান্ত কর্তব্য। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আর তোমরা খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা অপচয়কারীদের ভালোবাসেন না। [সূরা আল আরাফ, আয়াত ৩১]
আল্লাহ তা’আলা আরও বলেনঃ নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা হলো শয়তানের ভাই। [সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ২৭]
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ব্যক্তির ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো, অনর্থক বিষয় ত্যাগ করা। [সুনানুত তিরমিজিঃ ৪/১৩৬, হাদিস নং ২৩১৭, প্রকাশনীঃ দারুল গারবিল ইসলামি, বৈরুত]
এসব দিবসে কী পরিমাণ অপচয় হয়, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
৫ নং মূলনীতিঃ সংশয়পূর্ণ বিষয় পরিত্যাগ করে সংশয়মুক্ত বিষয় গ্রহণ করার নির্দেশ রয়েছে। হাসান বিন আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেনঃ যা তোমাকে সন্দেহে নিপতিত করবে তা পরিত্যাগ করো আর যাতে কোনো সন্দেহ নেই সেটিই করো। [সুনানে নাসায়ীঃ ৮/৩২৭, হাদিস নং ৫৭১১, প্রকাশনীঃ মাকতাবুল মাতবুআতিল ইসলামিয়্যা, হালব]
সুতরাং কোনো বিষয়ে মতানৈক্য বা মতবিরোধ থাকলে তা যদি আবশ্যকীয় কাজ না হয়ে থাকে তাহলে একজন মুমিনের কর্তব্য হলো তা পরিত্যাগ করা। কেননা কাজটি বৈধ হলেও তা না করার কারণে তার কোনো গুনাহ হবে না, কিন্তু তা অবৈধ হয়ে থাকলে এতে জড়িত হওয়ার দরুন সে গুনাহগার হয়ে পড়বে, যা কখনো একজন সাচ্চা মুমিনের কামনা হতে পারে না। তাই শরিয়তের অপব্যাখ্যা করে কেউ ভাষাদিবস, পহেলা বৈশাখ পালন জায়িজ হওয়ার কথা বললেও তার কথার দিকে ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না।
সারকথাঃ এ পাঁচটি মূলনীতিকে সামনে রেখে বিশ্লেষণ করলে পরিষ্কারভাবে বুঝে আসে যে, বর্তমানের প্রচলিত পহেলা বৈশাখ, নারী-দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ভ্যালেন্টাইন্স ডে, থার্টি ফার্স্ট নাইট সহ এ জাতীয় দিবসসমূহ পালন করা, এতে শরিক হওয়া ও এর সমর্থন করা হারাম ও নাজায়িজ। কেননা আমাদের মুসলিমদের জন্য কুরআন এবং সুন্নাহর বাহিরে যাওয়ার কোনো অধিকার নেই। আর কুরআন ও সুন্নাহ আমাদের উৎসবের জন্য নির্ধারিত দুটি দিন রেখে অন্যান্য সকল উৎসবকে অবৈধ ঘোষণা করেছে।
--------------------------------------------
এক.
সারা পৃথিবীতে দিবস পালনের ব্যাপক রেওয়াজ রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়কে কেন্দ্র করে দিবস পালিত হয়। সব দিবস এক রকম নয়। কিছু দিবস আছে সাধারণ সচেতনতামূলক। কিছু পরামর্শ ও নির্দেশনাদানই ঐসব দিবস পালনের মূল উদ্দেশ্য। কিছু দিবস আছে, যেগুলোতে কিছু সেবামূলক কার্যক্রমও হয়ে থাকে। যেমন পলিও টিকা দিবস। এই সব দিবসের আয়োজন-অনুষ্ঠানের কিছু সুফল আছে। পক্ষান্তরে কিছু দিবস আছে, যেগুলোর প্রতিপাদ্য বিষয়টি নীতি ও আদর্শের সাথে সম্পৃক্ত। এখানে সুফল পাওয়া, না পাওয়াটা নির্ভর করে নৈতিক ও আদর্শিক উন্নতি-অবনতির উপর। শুধু পরামর্শ ও সচেতনতা কেন্দ্রিক আনুষ্ঠানিকতায় যা নেই। নৈতিক ও আদর্শিক উন্নতি-অবনতির উপর নির্ভরশীল দিবসগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হচ্ছে, নারী-দিবস, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, ভ্যালেন্টাইন্স ডে, থার্টি ফার্স্ট নাইট, পহেলা বৈশাখ ইত্যাদি যেগুলো কোনো ভাবেই পালন করা জায়েজ নেই।
যদি কোনো দিবস এমন হয়ে থাকে, যে দিবসগুলো পালন করার মধ্যে অমুসলিমদের সঙ্গে বা ইসলাম ব্যতিত অন্য কোনো কালচার, সংস্কৃতি, সভ্যতা অথবা অন্য কোনো জীবনবিধানের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বা অন্য কোনো সম্পর্ক থাকে, তাহলে এ ধরনের দিবস পালন করা ইসলামী শরিয়তে সুস্পষ্ট হারাম। ইসলামে এই দিবসগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। যেমন : থার্টিফার্স্ট নাইট। এটি বিজাতীয় কালচার ছাড়া আর কিছুই নয়। যেটা অনৈসলামিক সভ্যতা থেকে আমদানি করা হয়েছে। রাসুল (সা.)-এর সময় এ ধরনের একটি দিবসও পালিত হতো না। নবী করিম (সা.), সাহাবা রা. সালাফে সালেহিন এগুলোকে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন।
কিছু দিবস রয়েছে, যেগুলো মানুষকে সচেতন করার জন্য বা সুনির্দিষ্ট কোনো বিষয়ে মেসেজ দেওয়ার জন্য পালন করা হয়ে থাকে। তবে ইবাদতের কোনো ফরম্যাট এর মধ্যে থাকতে পারবে না, অন্যথায় এই কাজটি বিদআত হয়ে যাবে। এবং এই দিবসগুলোও শরীয়তসম্মত পন্থাতেই পালন করতে হবে। শরীয়তসম্মত পন্থার ব্যাখ্যা সামনে আসবে।
যেকোনো ধরণের দিবস পালনে হুকুম সম্পর্কে উলামায়ে কেরামদের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। কিছু উলামায়ে কেরাম বলেন, দিবস পালনের মূল বিষয়টি এসেছে বিধর্মীদের থেকে। সুতরাং বলা যায় এর মূল জিনিসটিই ইসলামে প্রত্যাখ্যাত। তা যে কোনো পদ্ধতিতেই হোক। যে কোনো শিরোনামেই হোক। আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
اتَّبِعُواْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلاَ تَتَّبِعُواْ مِن دُونِهِ أَوْلِيَاء
তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য কোন বন্ধু বা অভিভাবকের অনুসরণ করো না। (সূরা আ’রাফ ৩)
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের অনুরূপ অবলম্বন করে, সে তাঁদেরই দলভুক্ত। (আবূ দাঊদ ৪০৩১)
সুতরাং যারা হিন্দুদের অনুকরণ করবে তারা হিন্দুদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে, যারা ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের অনুকরণ করবে তারা ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের অন্তর্ভুক্ত বলেই গণ্য হবে।
ইমানদার ব্যক্তিগণ বেহুদা কাজ থেকে নিজেদের দূরে রাখবেন। এসব কাজে সময় নষ্ট করার সামান্যতম কোনো সুযোগ তাঁদের নেই। রাসুল (সা.) হাদিসের মধ্যে বলেছেন, ‘একজন মুসলিমের প্রকৃত সৌন্দর্য হচ্ছে সেখানেই, সে এমন কাজ পরিহার করে চলবে, যেটা তার জন্য অপ্রয়োজনীয়।’
একজন গায়রতমান সচেতন মুসলিম লিখেছেন, "কোন বিবেকবান মুসলমান ইট পাথর দিয়ে বানানো শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, মূর্তি, ভাষ্কর্যে ফুল-চন্দন, শ্রদ্ধাঞ্জলি বা পুষ্পার্ঘ্য দিতে পারে? আপনারাই বলুন, কোন বিবেকবান মুসলমান শহীদ মিনারে ফুল-চন্দন দিতে পারে?
আমি যখন ছোট ছিলাম তখন গ্রামে বড় হই। গ্রামে আমাদের বাগানে অনেক ফুল ফুটতো। সেইজন্য মাঝে মাঝে হিন্দুরা আসতো ফুল নিতে। এই ফুল দিয়ে তারা মূর্তিপূজা করতো, তাদের ঠাকুর দেবতাদেরকে শ্রদ্ধা জানাতো। তখন ইসলাম সম্পর্কে এতো কিছু জানতাম না, সেইজন্য আমরা ফুল দিতে তাদেরকে মানা করতাম না। যাই হোক, আমার মনে হয়না কোন মুসলমান এই কথাকে অস্বীকার করতে পারবে যে, ইট-পাথর, মিনার, সৌধ বা স্তম্ভে ফুল দিয়ে পুষ্পাঞ্জলি, শ্রদ্ধাঞ্জলি, পুষ্পার্ঘ দেওয়ার এই সংস্কৃতি হিন্দুদের কাছ থেকে এসেছে। হিন্দুরা মূর্তিকে ফুল দেয় আর অজ্ঞ, নামধারী মুসলমান, মুনাফেক শ্রেণীর রাজনীতিবিদেরা অলি-আওলিয়ার নামে, শহীদের নামে, পাথর, সৌধ বা মিনারের নামে ফুল দেয়। "
দুই.
ধ্বংসপ্রাপ্ত আদ জাতির স্বভাব ছিলো উঁচু উঁচু স্তম্ভ নির্মান করা। তাদের কাছে হুদ আলাইহিস সালাতু আস-সালামকে নবী করে পাঠানো হয়েছিলো। হুদ (আঃ) তার পথভ্রষ্ট জাতির লোকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন,
أتبنون بكل ريع آية تعبثون তোমরা কি প্রতিটি উচ্চস্থানে অযথা নিদর্শন নির্মান করছ? সূরা শুআরা ( 128 )
ইবনে কাসীর র. তাঁর বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থে উক্ত আয়াতের অধীনে বলেনঃ
إلى أن قال : ( أتبنون بكل ريع آية تعبثون ) ، اختلف المفسرون في الريع بما حاصله : أنه المكان المرتفع عند جواد الطرق المشهورة . تبنون هناك بناء محكما باهرا هائلا ; ولهذا قال : ( أتبنون بكل ريع آية ) أي : معلما بناء مشهورا ، تعبثون ، وإنما تفعلون ذلك عبثا لا للاحتياج إليه ; بل لمجرد اللعب واللهو وإظهار القوة ; ولهذا أنكر عليهم نبيهم ، عليه السلام ، ذلك ; لأنه تضييع للزمان وإتعاب للأبدان في غير فائدة ، واشتغال بما لا يجدي في الدنيا ولا في الآخرة .
ভাবানুবাদঃ- ..................... তোমরা তো প্রতিটি উচ্চস্থানে অযথা ইমারত ( স্তম্ভ ) নির্মাণ করছ ( পথিকের সাথে হাসি-তামাশা করার জন্য ) رِيع শব্দটি رِيعَة এর বহুবচন। যার অর্থ উঁচু ভূমি, উঁচু ঢিবি, পাহাড়, উপত্যকা বা রাস্তা। তারা রাস্তার উপর অযথা এমন ইমারত ( বা স্তম্ভ ) তৈরী করত যা উচ্চতায় একটি নিদর্শন হত। কিন্তু তাদের উদ্দেশ্য তাতে বাস করা নয় বরং শুধু খেল-তামাশা করা হত। হূদ ( আঃ ) তাদেরকে এই বলে নিষেধ করলেন যে, তোমরা এমন কাজ করছ, যাতে সময় ও সম্পদ উভয়ই নষ্ট হচ্ছে। আর তার পশ্চাতে উদ্দেশ্যও এমন, যাতে দ্বীন ও দুনিয়ার কোনই উপকার নেই। বরং তার বেকার ও অনর্থক হওয়াতে কোন সন্দেহ নেই।
তারা তাদের শক্তি ও ধনৈশ্বর্যের নিদর্শনরূপে উঁচু উঁচু প্রসিদ্ধ পাহাড়ের উপর উঁচু উঁচু প্রাসাদ নির্মাণ করেছিল। হযরত হূদ ( আঃ ) তাদেরকে এভাবে মাল অপচয় করতে নিষেধ করেছিলেন। কেননা, ওটা শুধু মাল অপচয় করা, সময় নষ্ট করা এবং কষ্ট বাড়ানো ছাড়া কিছুই ছিল না। ওতে না ছিল দ্বীনের কোন উপকার এবং না ছিল কোন উপকার দুনিয়ার। তাদের নবী হযরত হূদ ( আঃ ) তাই তাদেরকে বলেছিলেন, তোমরা কি প্রতিটি উঁচু স্থানে নিরর্থক স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করছো? তোমরা কি মনে করেছে যে, এখানে তোমরা চিরস্থায়ী হবে? দুনিয়া তোমাদেরকে আখিরাতের কথা ভুলিয়ে দিয়েছে। জেনে রাখো যে, তোমাদের এ মনোবাসনা নিরর্থক। দুনিয়া তো নশ্বর।
জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরের উপর বসা ও সৌধ তৈরী করা থেকে নিষেধ করেছেন। [মুসলিম]
তিন.
ইসলামে মূর্তি ও ভাস্কর্য পরিষ্কার হারাম। এতে কোনো প্রকার ব্যাখা বিশ্লেষণ নাই। বরং কুরআন হাদীসের স্পষ্ট নস দ্বারা হারাম। শহীদ মিনার স্থাপন করা ইসলাম সম্মত নয়। তাছাড়া ভাস্কর্য স্থাপন করা বা এতে ফুল অর্পন করা কখনো জায়েয হবে না। এগুলো কুসংস্কার ও পরিত্যাজ্য। তবে শহীদ মিনার বা স্মৃতিসৌধ সুস্পষ্ট মুর্তির হুকুমে পড়বে না। কিন্তু এগুলো নির্মাণ করাও যাবে না। আল্লাহ তা'আলা বলেন,
وَكَذَٰلِكَ أَعْثَرْنَا عَلَيْهِمْ لِيَعْلَمُوا أَنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَأَنَّ السَّاعَةَ لَا رَيْبَ فِيهَا إِذْ يَتَنَازَعُونَ بَيْنَهُمْ أَمْرَهُمْ ۖ فَقَالُوا ابْنُوا عَلَيْهِم بُنْيَانًا ۖ رَّبُّهُمْ أَعْلَمُ بِهِمْ ۚ قَالَ الَّذِينَ غَلَبُوا عَلَىٰ أَمْرِهِمْ لَنَتَّخِذَنَّ عَلَيْهِم مَّسْجِدًا
এমনিভাবে আমি তাদের খবর প্রকাশ করে দিলাম, যাতে তারা জ্ঞাত হয় যে, আল্লাহর ওয়াদা সত্য এবং কেয়ামতে কোন সন্দেহ নেই। যখন তারা নিজেদের কর্তব্য বিষয়ে পরস্পর বিতর্ক করছিল, তখন তারা বললঃ তাদের উপর সৌধ নির্মাণ কর। তাদের পালনকর্তা তাদের বিষয়ে ভাল জানেন। তাদের কর্তব্য বিষয়ে যাদের মত প্রবল হল, তারা বললঃ আমরা অবশ্যই তাদের স্থানে মসজিদ নির্মান করব।
(সূরা কাহফ-২১)
উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরিনে কেরাম অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন, নিম্নে দু'একটি আলোচনা তুলে ধরছি। তাফসীরে কুরতুবীতে উক্ত আয়াতের ব্যখায় নিম্নোক্ত আলোচনা এসেছে - হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাযি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
ﻭﺭﻭﻱ ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺃﻥ ﺍﻟﻠﻪ - ﺗﻌﺎﻟﻰ - ﺃﻋﻤﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺣﻴﻨﺌﺬ ﺃﺛﺮﻫﻢ ﻭﺣﺠﺒﻬﻢ ﻋﻨﻬﻢ ، ﻓﺬﻟﻚ ﺩﻋﺎ ﺇﻟﻰ ﺑﻨﺎﺀ ﺍﻟﺒﻨﻴﺎﻥ ﻟﻴﻜﻮﻥ ﻣﻌﻠﻤﺎ ﻟﻬﻢ . ﻭﻗﻴﻞ : ﺇﻥ ﺍﻟﻤﻠﻚ ﺃﺭﺍﺩ ﺃﻥ ﻳﺪﻓﻨﻬﻢ ﻓﻲ ﺻﻨﺪﻭﻕ ﻣﻦ ﺫﻫﺐ ﻓﺄﺗﺎﻩ ﺁﺕ ﻣﻨﻬﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻨﺎﻡ ﻓﻘﺎﻝ : ﺃﺭﺩﺕ ﺃﻥ ﺗﺠﻌﻠﻨﺎ ﻓﻲ ﺻﻨﺪﻭﻕ ﻣﻦ ﺫﻫﺐ ﻓﻼ ﺗﻔﻌﻞ ; ﻓﺈﻧﺎ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﺮﺍﺏ ﺧﻠﻘﻨﺎ ﻭﺇﻟﻴﻪ ﻧﻌﻮﺩ ، ﻓﺪﻋﻨﺎ
মানুষের সামনে আসহাবে কাহফের চিহ্ন মুছে যাবার পর কিছু মানুষ সেই স্থলে স্মৃতিচারণের জন্য একটি ঘর নির্মাণের প্রস্তাব দিলো।
(কেউ কেউ বলেন) বাদশা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, আসহাবে কাহফের অধিবাসীদেরকে স্বর্ণের তৈরী একটি সিন্দুকে ভরে দাফন করে দিবেন। তখনই তাদের মধ্যকার একজন স্বপ্নযোগে বাদশাকে বললেন, তুমি সিদ্ধান্ত নিয়েছ আমাদেরকে সিন্দুকে ভরে দাফন করার। তুমি এমন করবে না। আমরা মাটির তৈরী এবং আমরা আবার সেথায়ই ফিরে যাবো। সুতরাং আমাদেরকে আমাদের অবস্থার উপর ছেড়ে দাও।
তাফসিরে তাবারীতে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় নিম্নোক্ত রেওয়াত উল্লেখ করা হয়,
حدثنا ابن حميد، قال: ثنا سلمة، عن عبد العزيز بن أبي روّاد، عن عبد الله بن عبيد بن عمير، قال: عمَّى الله على الذين أعثرهم على أصحاب الكهف مكانهم، فلم يهتدوا، فقال المشركون: نبني عليهم بنيانا، فإنهم أبناء آبائنا، ونعبد الله فيها، وقال المسلمون: بل نحن أحق بهم، هم منا، نبني عليهم مسجدا نصلي فيه، ونعبد الله فيه.
ভাবার্থ- আসহাবে কাহফের সন্ধানলাভকারীকে দলকে আল্লাহ তা'আলা সেই স্থান ভুলিয়ে দিলেন। যদ্দরুণ তারা সে স্থানের পরিচয় লাভে সক্ষম হয়নি। তখন মুশরিকরা বলল, আমরা একটি প্রসাদ নির্মাণ করব, কেননা তারা আমাদেরই সন্তান। এবং আমরা সেই প্রসাদে বসে আল্লাহর ইবাদত করব। মুসলমানরা বলল, বরং আমরাই বেশী হকদ্বার, এরা তো আমাদের থেকেই এবং আমাদের মত মুসলমান। আমরা তথায় মসজিদ নির্মাণ করব। যেখানে আমরা নামায আদায় করব। এবং আল্লাহর ইবাদতে মাশগুল থাকব।
চার.
সুতরাং সকল প্রকার দিবস পালন করা সুস্পষ্ট হারাম । বর্তমান যুগে আমরা স্বাধীনতা দিবস, মাতৃভাষা দিবস, বিজয় দিবস, জন্ম দিবস, মৃত্যু দিবস, মা দিবস, বাবা দিবস, ভালোবাসা দিবস ইত্যাদি বিভিন্ন প্রকার দিবস পালন করে থাকি। অথচ ইসলামী শরীয়ত কোন দিবস পালন করা সমর্থন করে না। ইসলামী শরীয়ত যদি দিবস পালন করা সমর্থন করতো তাহলে ৩৬৫ দিনের কোন না কোন একটা দিনকে দিবস হিসেবে পালন করা হতো। ইসলামী ইতিহাস তালাশ করলে আপনি দেখতে পাবেন কত শত স্মরণীয় দিন আছে যেগুলো বর্তমান যুগের দিবসের তুলনায় শত শত গুণ বেশী মর্যাদাসম্পন্ন। অথচ নবী যুগ থেকে সাহাবাদের যুগ অর্থাৎ যে যুগকে সর্বশ্রেষ্ঠ যুগ বলা হয় তাদের কোন যুগে এমন কোন ইতিহাস নেই যে, তারা দিবস পালন করেছেন।
এই হাদীসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ঐ দুটি দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদেরকে দুটি উত্তম দিন প্রদান করেছেন। এখানে যদি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন; তোমাদের ছিল দুটি দিন আর আল্লাহ তোমাদেরকে দিয়েছেন আরো দুটি দিন, তাহলে মুসলিমরা ১৪০০ বছর যাবৎ ৪টি উৎসবের দিন পালন করে আসতো। যেহেতু আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যান্য মানবরচিত দিনগুলো পরিবর্তন করে আল্লাহর পক্ষ থেকে দুটি উত্তম দিন প্রদান করেছেন সেহেতু অন্য যে কোন দিবস পালন করা এমনেতেই বাতিল হয়ে যায়।
তাই মুসলিমদের জন্য অন্য কোন প্রকার দিবস পালন করা বৈধ নয়। হোক সেটা জন্ম দিবস, শোক দিবস, মাতৃভাষা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বিজয় দিবস, নববর্ষ ইত্যাদি যা-ই হোক না কেন, তা পালন করা বৈধ হবে না।
দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে এ ধরণের যত প্রকার দিবস রয়েছে সেগুলোর কোনটাই মুসলিমদের সংস্কৃতি নয়। যদি এগুলো মুসলিমদের সংস্কৃতি হতো তাহলে এগুলো সাহাবাদের যুগ থেকেই পালিত হয়ে আসতো। যেহেতু এগুলো মুসলিমদের সংস্কৃতি নয় তাহলে বুঝাই যাচ্ছে যে, এগুলো কাফের মুশরিক বিজাতীয়দের সংস্কৃতি থেকে এসেছে। আর এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল বা সাদৃশ্য রাখবে সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। [আবু দাউদ, হাদীস নং ৪০৩১]
লোক-সংস্কৃতি বা আঞ্চলিক সংস্কৃতি ততক্ষণ পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য যতক্ষণ না তা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক হয়। যদি কোথাও সংস্কৃতি এবং ইসলাম সাংঘর্ষিক হয়; তাহলে ইসলামই গালেব। ইসলামই গ্রহণযোগ্য। সংস্কৃতির দোহাই দিয়ে ইসলামত্যাগ করা কোনোভাবেই জায়েজ নেই। এটি সর্বস্বীকৃত হারাম এবং অবৈধ।
ইসলাম পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার নাম৷ জন্ম থেকে নিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত সব বিষয়ের নির্দেশনা ইসলাম দিয়েছে৷ ইসলামে শহীদদের কবরে বা শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পনের কোনো রীতি নেই৷ রাসূল সা, থেকে নিয়ে সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈনে ইযামসহ ইসলামের সোনালী যুগে শহীদদের জন্যে ফুল দেয়ার কেনো রীতি ছিলো না৷ আর ইসলামে অনুমোদিত নয় এমন প্রত্যেক বিষয়ই পরিত্যাজ্য৷ ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরা তাদের সম্মানিত স্থাপনায় ফুল দিয়ে সম্মান জানায়৷ আমরা মুসলিম হয়েও তাদের ধর্মীয় উৎসবের ন্যায় যদি আমরাও কোনো স্থাপনায় ফুল দিয়ে সম্মান জানানোর সংস্কৃতি গ্রহণ করি, তাহলে সেটা অবশ্যই ভিন্ন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বনের নামান্তর, যা হাদীসে সেই সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বলে আখ্যা দেয়া হয়েছে৷ হাদীসে এসেছে:
عن ابن عمر رضى الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه و سلم: من تشبه بقوم فهو منهم.
"হযরত ইবনে উমার রাযি. হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কোনো জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করবে সে তাদেরই অন্তর্ভূক্ত। " (সুনানে আবূ দাঊদঃ ৩৫১২)
কেউ আবার এটা বলতে যাবেন না, যে তারা তো শুধু সম্মান করে, আর কিছু তো করে না। একটু শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে, এই তো। আর কিছু তো না। এতে আর এতো ক্ষতি কী? আমরা বলব, এক্ষেত্রে একটি বিষয় কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার ক্ষেত্রে যারা ফুল দেয়, সম্মান করে তাদের বোধ, চেতনা, অনুভূতি, আদর্শ ও আকীদাই যে মূল বিষয়; এটা বাম ঘরানার তাদের অনেকের লেখাতে স্পষ্টতই দেখা যায়। এটা এখন একটি জাজ্জ্বল্যমান সত্য। এটা আদর্শ ও আকীদার বিষয়। এটা আদর্শ ও আকীদার যুদ্ধ। যেমন, তাদের একজন লিখেছেন, "শহীদ স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো প্রতিটি নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। লক্ষ ফুলের সমাবেশ ঘটেছে শহীদ মিনারে। কিন্তু যে বোধ চেতনার কারণে ঐ শ্রদ্ধা নিবেদন, তাই যদি লালন করা না হয়, তাহলে শহীদবেদিতে ফুল দিয়ে লাভ কি?"
আসলে এই হক বাতিলের লড়াইয়ে আমরা যতই ছাড় দেব বাতিল ততই আমাদেরকে আঁকড়ে ধরতে চাইবে। কারণ এটা আকীদা ও আদর্শের লড়াই। এটা সত্য মিথ্যার যুদ্ধ। সুতরাং আমরা তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য যা-ই করি না কেন, তারা কখনোই আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবে না। যেমনটি আল্লাহ আমাদেরকে কুরআনে বলে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ সূরা বাকারার ১২০ নং আয়াতে বলেন,
﴿وَلَن تَرْضَىٰ عَنكَ الْيَهُودُ وَلَا النَّصَارَىٰ حَتَّىٰ تَتَّبِعَ مِلَّتَهُمْ ۗ قُلْ إِنَّ هُدَى اللَّهِ هُوَ الْهُدَىٰ ۗ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُم بَعْدَ الَّذِي جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ ۙ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا نَصِيرٍ﴾ [ البقرة: 120]
ইহুদী ও খ্রীষ্টানরা কখনই আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে না, যে পর্যন্ত না আপনি তাদের ধর্মের অনুসরণ করেন। বলে দিন, যে পথ আল্লাহ প্রদর্শন করেন, তাই হল সরল পথ। যদি আপনি তাদের আকাঙ্খাসমূহের অনুসরণ করেন, ঐ জ্ঞান লাভের পর, যা আপনার কাছে পৌঁছেছে, তবে কেউ আল্লাহর কবল থেকে আপনার উদ্ধারকারী ও সাহায্যকারী নেই। [সূরা বাকারাহ্: 120]তাদের আরো একজন লিখেছেন, - এতটুকু লেখা যার-ই হোক। ওদের মূল বক্তব্য কিন্তু এটাই। ওদের সবার আদর্শ কিন্তু এটাই। মিডিয়ায় তারা এই বিষয়গুলো জোর গলায় বুক ফুলিয়ে বলে থাকে। সুতরাং এই বক্তব্যগুলোকে কেউই অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু মুসলিমদের সচেতন হওয়া উচিত। কুরআনী নির্দেশনার প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত।
তিনি লিখেছেন, "মনে পড়ে একবার শহীদ মিনারে দেখলাম বেশ কিছু মাদরাসার ছাত্র। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় স্লোগান দিচ্ছে ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার’। কেউ কিছু বলছে না। ভাবটা এই রকম যে এই স্লোগান দিয়ে তারা গর্ববোধ করছে। হঠাৎ ওই স্লোগান শহীদ মিনারে দেওয়া হচ্ছে কেন? এই স্লোগান তো ধর্মীয় স্লোগান। মসজিদে ওয়াজ মাহফিলে, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, মুসলমানরা এই স্লোগান দিয়ে থাকে। পরক্ষণেই দেখলাম শহীদ মিনার ছেড়ে যেতে না যেতেই তাদের প্রতিরোধ করেছে, অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ ছাত্রসমাজ। মনে হলো ধর্ম নিয়ে যারা রাজনীতি করে তারা শহীদ মিনারকে বিতর্কিত করতে চায়। কিন্তু তা সফল হয়নি। ...... হৃদয় ওদের পাকিস্তান, বাইরে বাংলাদেশ। তাই জাতীয় সংগীত ও পতাকার মর্যাদা দিবে কীভাবে? বলতে ওরা তাই দ্বিধাবোধ করে না ধর্মভিত্তিতে জাতীয় সংগীত ও পতাকা পাল্টে দিতে। বেশ কয়েক বছর শারীরিক অসুস্থতার কারণে শহীদ মিনারে যেতে পারি না। বাসায় বসে যেসব কথা মনে জাগে তার কিছুটা এখানে প্রকাশ করলাম"
এখানে আমরা শুধু এতোটুকুই বলব, হে মুসলিমগণ! আল্লাহর দিকে ফিরে আসো।
হাদিস শরীফে এসেছে, আবু মালিক আশআ’রী রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
لَيَشْرَبَنَّ نَاسٌ مِنْ أُمَّتِي الْخَمْرَ ، يُسَمُّونَهَا بِغَيْرِ اسْمِهَا ، يُعْزَفُ عَلَى رُءُوسِهِمْ بِالْمَعَازِفِ وَالْمُغَنِّيَاتِ ، يَخْسِفُ اللَّهُ بِهِمْ الْأَرْضَ ، وَيَجْعَلُ مِنْهُمْ الْقِرَدَةَ وَالْخَنَازِيرَ
আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পরিবর্তন করে তা পান করবে। আর তাদের মাথার উপর বাদ্যযন্ত্র ও গায়িকা রমনীদের গান বাজতে থাকবে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে যমীনে ধ্বসিয়ে দিবেন। আর তাদের কিছুকে বানর ও শূকর বানিয়ে দিবেন। (ইবন মাজাহ ৪০২০ সহীহ ইবনে হিব্বান ৬৭৫৮)
আমাদের জানা জরুরি যে, ইসলামের দৃষ্টিতে কোন মুসলিম মৃত বরণ করলে (চাই স্বাভাবিক মৃত্যু হোক বা জিহাদের ময়দানে শাহাদত বরণ করুক অথবা অন্যায়ভাবে জুলুমের শিকার হয়ে মৃত্যু হোক) তার জন্য কী কী করণীয় তা নির্দিষ্ট করা আছে। যেমন: তাদের জন্য দোয়া করা, তাদের পক্ষ থেকে গরিব-অসহায় মানুষকে দান-সদকা করা ও জনকল্যাণ মূলক কাজ করা, সদকায়ে জারিয়া মূলক কার্যক্রম করা, তাদের উদ্দেশ্যে হজ-উমরা আদায় করা ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে তারা কবরে উপকৃত হবে ইনশাআল্লাহ। এটাই উপরোল্লেখিত শরীয়তসম্মত পন্থার ব্যাখ্যা।
পক্ষান্তরে তাদের স্মৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে তথাকথিত স্মৃতিস্তম্ভ ও শহীদ মিনার নির্মাণ করা, তাতে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করা ও সেনাবাহিনী কর্তৃক স্যালুট জানানো, তাদের উদ্দেশ্যে এক মিনিট নীরবতা পালন করা, মোমবাতি জ্বালানো, মশাল জ্বালানো, শিখা অনির্বাণ বা শিখা চিরন্তন প্রজ্বলন ইত্যাদি হল, অমুসলিমদের সংস্কৃতি। যা অমুসলিম সংস্কৃতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ও ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ মুসলিমরা অবলীলাক্রমে তাদের অন্ধ অনুকরণবশত: পালন করে থাকে। ইসলামের সাথে এগুলোর দূরতম কোন সম্পর্ক নাই।
অথচ ইসলামে অমুসলিমদের অনুসরণ-অনুকরণ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ-চাই তা ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক অথবা আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতি-নীতি বা কৃষ্টি-কালচারের ক্ষেত্রে হোক। কেননা হাদিসে এসেছে:
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ
“যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।” [সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ] এছাড়াও হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের পূর্বে অনেক মুসলিম ইহুদি-খৃষ্টানদের রীতি-নীতি অনুসরণ করবে বলে ভবিষ্যতবাণী করেছেন-বর্তমানে যার বাস্তব প্রতিফলন আমরা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি।
সাহাবী আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حذو القذة بالقذة حَتَّى لَوْ دخلوا جُحْرَ ضَبٍّ لَدخلتتُمُوهُ قالوا: يَا رسول الله الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى. قَالَ: فَمَنْ؟»
‘‘তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী উম্মতদের অভ্যাস ও রীতি-নীতির ঠিক ঐ রকম অনুসরণ করবে, যেমন এক তীরের ফলা অন্য এক তীরের ফলার সমান হয়। অর্থাৎ তোমরা পদে পদে তাদের অনুসরণ করে চলবে। এমনকি তারা যদি ষণ্ডা (মরুভূমিতে বসবাসকারী গুই সাপের ন্যায় এক ধরণের জন্তু বিশেষ) এর গর্তে প্রবেশ করে থাকে, তাহলে তোমরাও সেখানে প্রবেশ করবে।”
সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! পূর্ববর্তী উম্মত দ্বারা আপনি কি ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বোঝাচ্ছেন?
তিনি বললেন: তবে আর কারা?
[বুখারি, অধ্যায়: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী: ”তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী লোকদের রীতি-নীতির অনুসরণ করবে।” তবে বুখারির বর্ণনায় حذو القذة بالقذة – এই শব্দসমূহ নেই। তার স্থলে شبرا بشبر وذراعا بذراع শব্দগুলো রয়েছে। অর্থাৎ এক হাতের বিঘত যেমন অন্য হাতের বিঘতের সমান হয় এবং এক হাতের বাহু অন্য হাতের বাহুর সমান হয়।]
এমন কি সরাসরি মৃতদের কবরেও এসব কার্যক্রম করা দীনের মধ্যে চরম গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ। আর শহিদ মিনার বা স্মৃতি সম্ভে ফুল দেয়া সরাসরি শিরক না হলেও তা শিরকের দিকে ধাবিত হওয়ার মাধ্যম। কাফেরদের অন্ধ অনুকরণ তো বটেই। সব দিক থেকেই তা পালন করা হারাম। (আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন)
অনুরূপভাবে মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে শবিনা খানি, কুলখানি, ইসালে সওয়াব, মিলাদ মাহফিল, মৃত্যু বার্ষিকী পালন, স্মরণ সভা, ওরশ মাহফিল ইত্যাদি হল দীনের মধ্যে নব সংযোজিত বিদআত। আর বিদআত হল, ভ্রষ্টতা এবং জাহান্নামের পথ। ইসলামের লেবাস পরা ‘দেখিত সুন্দর’ প্রতিটি বেদআতই হল, শয়তানের দেখানো সুসজ্জিত পথ।
কেউ যদি বিশ্বাস করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীনের মধ্যে কোনও কমতি রেখে গেছেন তাহলে সে প্রকারান্তরে ইসলামকে অপূর্ণ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘রেসালাতের দায়িত্ব পালনে অবহেলাকারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করল। (নাউযুবিল্লাহ) অথচ ইসলাম পরিপূর্ণ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ণাঙ্গভাবে তা উম্মতের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। সুতরাং তাতে সামান্যতম সংযোজন ও বিয়োজনের কোনও সুযোগ নাই।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই হওয়া সাল্লাম দ্বীনের ভিতর নতুন নতুন বিদআত তৈরি করার ব্যাপারে কঠিন ভাবে সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেন,
وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلالَةٌ
“দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্ট বিষয়াদি থেকে সাবধান! কারণ প্রতিটি নতুন আবিষ্কৃত বিষয়ই গোমরাহি। [মুসতাদরাক, কিতাবুল ইলম, আলবানী রা. হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন: সিলসিলা সাহীহা (সহীহ হাদিস সিরিজ) হাদিস নং ২৭৩৫]
তিনি সা. বিভিন্ন সময় খুতবা দেয়ার শুরুতে বলতেন:
أَمَّا بَعْدُ: فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ
“অতঃপর,সর্বোত্তম বাণী হল আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম নির্দেশনা হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশনা। সবচেয়ে নিকৃষ্ট জিনিস হল দ্বীনের মধ্যে নতুন আবিষ্কৃত বিষয়াদি। আর প্রতিটি নতুন বিষয়ই ভ্রষ্টতা। [সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদ: নামায এবং খুতবা সংক্ষিপ্ত করা।]
সারকথা হলো, শহিদ মিনারে ফুল দেয়া সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন ও তাদের অন্ধ অনুকরণের কারণে হারাম। কোনও মুসলিমের জন্য কথিত শহিদদের বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা এবং এর সাথে সম্পৃক্ত কোনও কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা জায়েজ নাই। কেউ অজ্ঞতাবশত: এমনটি করে থাকলে তার উচিৎ, অনতিবিলম্বে আল্লাহর নিকট তওবা করা। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী।
পাঁচ.
পৃথিবীতে প্রথম শিরক এর ঘটনা :
দুনিয়াতে প্রথম শিরক সংঘটিত হয়েছিল নূহ (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের মধ্যে। আর তা হয়েছিল সৎ ও বুযর্গ লোকদের মাধ্যমে। কুরআনে এসেছে, মুশরিকরা বলে, (খবরদার!) ‘তোমরা তোমাদের পূর্বপুরুষদের পূজিত উপাস্য ওয়াদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়াঊক্ব, নাস্র-কে কখনোই পরিত্যাগ করবে না’। (এভাবে) ‘তারা বহু লোককে পথভ্রষ্ট করে এবং (তাদের ধনবল ও জনবল দিয়ে) নূহ-এর বিরুদ্ধে ভয়ানক সব চক্রান্ত শুরু করে’ (নূহ ৭১/২১-২৩) ।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মহানবী (ছাঃ) বলেছেন, এ আয়াতে যে ক’টি নাম এসেছে এগুলো নূহ (আঃ) এর কওমের বুযর্গ লোকদের নাম। তাদের মৃত্যুর পর শয়তান ঐ সম্প্রদায়ের লোকদের প্ররোচিত করল, তারা যেন ঐসব বুযর্গগণ যেসব আসরে বসতেন সেখানে তাদের প্রতিমা বানিয়ে রাখে এবং তাদের নামে এগুলোর নামকরণ করে। তারা তাই করল। তবে এগুলোর উপাসনা হত না। এসব লোক মৃত্যুবরণ করার পর ক্রমান্বয়ে তাওহীদের জ্ঞান বিস্মৃত হল, তখন এগুলোর উপাসনা ও পূজা হতে লাগল (বুখারী, হা/৪৯২০)।
ইমাম বুখারী (রহঃ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস(রাঃ) হ’তে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন যে, এই লোকগুলি হযরত নূহ (আঃ)-এর যুগের নেককার ব্যক্তি ছিলেন। তাদের মৃত্যুর পর শয়তান তাদের অনুসারীদের এই মর্মে ধোঁকা দিল যে, এঁদের বসার স্থানগুলিতে এক একটি মূর্তি বানাও ও তাদের নামে নামকরণ কর। লোকেরা তাই করল।
আদম (আঃ)-এর সময়ে ঈমানের সাথে শিরক ও কুফরের মুকাবিলা ছিল না। তখন সবাই তওহীদের অনুসারী একই উম্মতভুক্ত ছিল (বাক্বারাহ ২/২১৩) । তাঁর শরী‘আতের অধিকাংশ বিধানই ছিল পৃথিবী আবাদকরণ ও মানবীয় প্রয়োজনাদির সাথে সম্পৃক্ত। কিন্তু কালের বিবর্তনে মানুষের মধ্য শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটে। নূহের কওম ওয়াদ, সুওয়া‘, ইয়াগূছ, ইয়াঊক্ব ও নাস্র প্রমুখ মৃত নেককার লোকদের অসীলায় আখেরাতে মুক্তি পাবার আশায় তাদের পূজা শুরু করে। এই পূজা তাদের কবরেও হ’তে পারে, কিংবা তাদের মূর্তি বানিয়েও হ’তে পারে। মুহাম্মাদ ইবনু ক্বায়েস বলেন, আদমও নূহ (আঃ)-এর মধ্যবর্তী সময়কালের এই পাঁচজন ব্যক্তি নেককার ও সৎকর্মশীল বান্দা হিসাবে প্রসিদ্ধ ছিলেন। তাঁদের মৃত্যুর পর ভক্ত অনুসারীগণকে শয়তান এই বলে প্ররোচনা দেয় যে, এইসব নেককার মানুষের মূর্তি সামনে থাকলে তাদের দেখে আল্লাহর প্রতি ইবাদতে অধিক আগ্রহ সৃষ্টি হবে। ফলে তারা তাদের মূর্তি বানায়। অতঃপর উক্ত লোকদের মৃত্যুর পরে তাদের পরবর্তীগণ শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ঐ মূর্তিগুলিকেই সরাসরি উপাস্য হিসাবে পূজা শুরু করে দেয়। তারা এইসব মূর্তির অসীলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করত’। আর এভাবেই পৃথিবীতে প্রথম মূর্তিপূজার শিরকের সূচনা হয়।
এই মূর্তিগুলি পরবর্তীকালে আরবদের মধ্যেও চালু ছিল। ‘ওয়াদ’ ছিল বনু কালবের জন্য দূমাতুল জান্দালে, সুওয়া‘ ছিল বনু হোযায়েলের জন্য, ইয়াগূছ ছিল বনু গুত্বায়েফ-এর জন্য জুরুফ নামক স্থানে, ইয়া‘ঊক্ব ছিল বনু হামদানের জন্য এবং নাস্র ছিল হিমইয়ার গোত্রের বনু যি-কালা এর জন্য’।
আমরা হয়ত মনে করি এই যে শহিদ মিনার বা স্মৃতিসৌধ এগুলোকে তো আমরা পূজা করি না বা ইবাদতের উদ্দেশ্যে ফুল দেই না, এগুলো শুধুমাত্র দেশের সংস্কৃতি। এগুলোর সাথে অহেতুক ধর্মকে সংযুক্ত করা ঠিক নয়। অহেতুক ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি না করে সময়ের সাথে এগুলোকে মেনে নিয়েই আমাদের চলতে হবে! যখন এগুলো সম্পর্কে ইসলামের বিধি নিষেধ মানুষের সামনে উপস্থাপন করা হয় অধিকাংশ শিক্ষিত শ্রেণী ঠিক এই প্রশ্নটিই করে থাকে যে, আমরা তো ইবাদতের জন্য এগুলো করি না, তাহলে সমস্যা কোথায়? সমস্যা আছে। শুনুন তাহলে।
শহিদ মিনার স্মৃতিসৌধ ইত্যাদির ইতিহাস শুরু হয়েছে সেই নুহ (আঃ) এর সময় থেকে! শুনে অবাক লাগছে? সেই মজার শিক্ষণীয় ইতিহাসের কিঞ্চিতাংশ গল্পাকারে আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আশা করি এটি সম্মানিত পাঠকবৃন্দের জন্য আলোচ্য বিষয় বুঝতে সহায়ক হবে, ইনশা আল্লাহ। এবং খুব সহজেই ধারনা লাভ করতে পারবেন যে আলেম ওলামা মোল্লা মুন্সিরা কেন শহিদ মিনার, স্মৃতিসৌধ বা পাকা কবর মাজারের বিরুদ্ধে কথা বলেন।
আদম (আঃ) ও নুহ (আঃ) এর মধ্যে ব্যবধান ছিল ১০ করন বা যুগ। এখানে যুগ বলতে প্রজন্মকে বুঝানো হয়েছে। আমাদের মত ১২ বছরে ১ যুগ নয়। এই যুগের সকলেই ছিলেন ইসলামের অনুসারী। এই সৎকর্মশীলদের যুগের পর নুহ (আ. এর সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যার ফলে যুগের অধিবাসীরা ধীরে ধীরে শিরকে লিপ্ত হতে শুরু করে।
আমি পাঠকদের অনুরোধ করব, লেখাটি পড়ার সাথে সাথে বর্তমান অবস্থার সাথে লেখার ভাব মেলানোর চেষ্টা যেন অবশ্যই করেন। তাহলে লেখাটির শিক্ষণীয় দিকটি পেতে সুবিধা হবে।
নুহ আঃ এর সম্প্রদায়ের যুগের পূর্বযুগে কয়েকজন পুণ্যবান ব্যক্তি ছিলেন। ওয়াদ, সুওয়া, ইয়াগুছ ইত্যাদি। ইনারা ছিলেন সে যুগের পুণ্যবান ব্যক্তি। মানুষ তাদেরকে শ্রদ্ধা সম্মান ও মান্য করত। তখনও সেখানে ইসলাম বিদ্যমান ছিল। এ সকল ব্যক্তিবর্গের মৃত্যু হলে তাদের অনুসারীদের কাছে মানুষের বেশে হাজির হয়ে শয়তান তাদেরকে পরামর্শ দেয় যে এসকল পুণ্যবান ব্যক্তিদের বসার জায়গায় তাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ বা প্রতিকৃতি তৈরি করে রাখার জন্য। শয়তান তাদেরকে মন্ত্রণা দেয় যে এই স্মৃতিস্তম্ভ দেখলে তাদের সেই সকল পুণ্যবান ব্যক্তিদের কথা স্মরণ হবে, এতে তারা বেশি বেশি ইবাদতের প্রতি আগ্রহী হবে।
এই প্রজন্মের লোকদের মৃত্যুর পর পরবর্তি প্রজন্মের লোকদের ইলম বা জ্ঞান লোপ পায়। শয়তান আবার তাদের কাছে এসে হাজির হয় এবং তাদের কাছে বলে যে তোমাদের পূর্ব প্রজন্মের লোকেরা ওই সকল পুণ্যবান ব্যক্তিকে অসিলা হিসেবে গ্রহণ করত। শয়তান একই সাথে তাদেরকে এই প্ররোচনা দেয় যে পুণ্যবানদের নামে স্তম্ভের নামকরণ করার। তার কিছু কাল পরে প্ররোচনা দেয় স্তম্ভের জায়গায় পূর্ববর্তূ নেককারদের মুর্তিস্থাপনে। এতে তাদের ওসিলা গ্রহণ সুবিধা হবে। লোকেরা শয়তানের প্ররোচনায় ওইসকল পুণ্যবানদের নামে মুর্তিস্থাপন করে। এবং সেই সকল মুর্তিকে প্রথমে ওসিলা বানানো শুরু করে এবং ধীরে ধীরে পূজা করা শুরু করে।
ইবনে জারীর (র) মুহাম্মদ ইবনে কায়স (র) এর বরাতে বলেন-
তারা ছিলেন আদম আঃ ও নুহ আঃ এর মধ্যবর্তি পুণ্যবান লোক। তাদের বেশ কিছু অনুসারী ছিল। তারপর যখন তাদের মৃত্যু হয়, তখন তাদের অনুসারীরা বলল, ”আমরা যদি এদের প্রতিকৃতি নির্মাণ করে রাখি তাহলে তাদের কথা স্মরণ করে আমাদের ইবাদতের আগ্রহ বাড়বে।”
তখন তারা তাদের প্রতিকৃতি নির্মান করে রাখে। তারপর যখন তাদের মৃত্যু হয় এবং তাদের পরের প্রজন্ম আসে, তখন শয়তান তাদের এ বলে প্ররোচনা দেয় যে লোকজন তাদের উপাসনা করত এবং তাদের ওসিলায় বৃষ্টি প্রার্থনা করত। তখন তারা তাদের পূজা শুরু করে দেয়।
ইবনে আবু হাতিম উরওয়া ইবনে জুবায়র সুত্রে বর্ননা করে, ‘ওয়াদ’ ছিলেন এদের বয়সে সকলের চাইতে প্রবীণ এবং সর্বাধিক পুণ্যবান ব্যক্তি।
‘ওয়াদ’ এর মৃত্যুর পর তার কবরের চতুর্পার্শ্বে পাশে সমবেত হয়ে জনতা শোক প্রকাশ শুরু করে। ইবলিশ তা দেখে মানুষের রূপ ধারণ করে তাদের কাছে এসে বলে, এ ব্যক্তির জন্য তোমাদের হা-হুতাশ আমি লক্ষ করছি। আমি কি তোমাদের জন্য তাঁর অনুরূপ প্রতিকৃতি তৈরি করে দেবো? তা তোমাদের মজলিশে থাকবে আর তোমরা তাঁকে স্মরণ করবে। তারা বলল, হ্যাঁ, দিন। ইবলিশ তাদেরকে তার অনুরূপ প্রতিকৃতি তৈরি করে দিল। আর তারা তা তাদের মজলিশে স্থাপন করে তাকে স্মরণ করতে শুরু করে।
ইবলিশ তাদেরকে তাঁকে স্মরণ করতে দেখে এবার বলল, আমি তোমাদের প্রত্যেক ঘরে ঘরে এর একটি মুর্তি স্থাপন করে দেই ? তাহলে নিজের ঘরে বসেই তোমরা তাঁকে স্মরণ করতে পারবে। তখন ইবলিশ প্রত্যেক গৃহবাসীর জন্য তাঁর একটি করে মুর্তি স্থাপন করে দেয় এবং তারা তাঁর স্মরণ করতে থাকে। এভাবে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম তাঁকে দেবতা সাব্যস্ত করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাঁকে পূজা করতে শুরু করে।
কালক্রমে সেই প্রতিকৃতিগুলোকে দেহবিশিষ্ট মুর্তিতে পরিণত করে এবং তারপর আল্লাহর পরিবর্তে ওইসকল মুর্তির পূজা শুরু করে।
হাবশায় অবস্থিত ‘মারিয়া’ নামক গির্জা ও তাতে স্থাপিত প্রতিকৃতি সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) বলেন, তাদের নিয়ম ছিল তাদের মধ্যে কোন সৎকর্ম পরায়ণ কেউ মারা গেলে তার কবরের উপর তারা একটি উপাসনালয় নির্মান করত। তারপর তার উপর তাঁর প্রতিকৃতি স্থাপন করে রাখত। আল্লাহর নিকট তারা সৃষ্টির সবচাইতে নিকৃষ্ট জাতি। – বুখারী ও মুসলিম।
এখন আমরা দেখব সেই যুগের সাথে বর্তমান যুগের মিল। এবং এর ক্ষতিকর দিক।
*১ শয়তান মন্ত্রণা দেয় পুণ্যবানদের প্রতিকৃতি স্থাপন করলে তাদের স্মরণে ইবাদতের আগ্রহ বাড়বে!
হুবহু একই ধারনা থেকে আমরা সমাজের সম্মানিত মানুষদের বা নেতাদের বা উল্লেখযোগ্য মানুষদের প্রতিকৃতি নির্মান করেছি তাদেরকে শ্রদ্ধা জানানোর উদ্দেশ্যে। শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতে এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে ফুল দেয়া হয়। তার কবরে মাজার তৈরি হয়েছে। জিয়াউর রহমানের কবরে দলীয়ভাবে ফুল দেয়া হয়! কাজী নজরুল ইসলামের কবরেও একইভাবে ফুল দেয়া হয়।
*২ শহীদ মিনার, স্মৃতি সৌধ নির্মান করা হয়েছে ভাষা শহীদ ও স্বাধীনতার শহীদদের স্মরণের জন্য ও শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য!
শয়তান মন্ত্রণা দিয়েছে যে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধার জন্য তোমরা কিছু স্তম্ভ বানাও এবং তাতে তাদের সম্মানে ফুল দাও! স্বাধীনতার যুদ্ধে যারা প্রাণ দিয়েছে তাদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ, শিখা অনির্বান তৈরী কর, এতে ফুল দাও। হুবহু একই সুত্র ! আমরাও ঠিক সেই রূপ করছি যেরূপে নুহ (আঃ) এর সম্প্রদায় শিরকে পতিত হয়েছিল!
*৩ সমাজের একটা অংশ বিশেষ করে সংস্কৃতিকর্মিরা নিহতের বা মৃত ব্যক্তির স্মরণে এবং নেতাদের সমর্থক তাদের নেতাদের স্মরণে এই ধরনের প্রতিকৃতি নির্মান বা এসকল কাজে বেশি আগ্রহী থাকে। এই প্রজন্মের পরের প্রজন্ম তাদের আগ্রহের আর বিকৃত রূপ করে নিবে।
দেখেন বাংলাদেশের আদালত শহিদ মিনাদের পাদদেশকে পবিত্র বলে ঘোষণা দিয়েছে সেখানে জুতা পায়ে উঠা অবমাননা বা বেয়াদবি!
এখনো আশ্চর্য হোন নি?
জুতা পায়ে দিয়ে শহীদমিনারে ফুল দেওয়ায় পত্রিকায় রিপোর্ট করে তিরস্কার করা হচ্ছে!
কলাগাছ, ইট ইত্যাদি দিয়ে অস্থায়ী শহিদ মিনার বানিয়ে তাতে ফুল দেওয়া হচ্ছে!
সমাজের যেকোন উল্লেখযোগ্য কেউ মারা গেলে তার নামে স্তম্ভ বানানোর হিড়িক লেগে আছে!
পীর বুজুর্গের অনুসারীরা তাদের পীর বা বুজুর্গের কবরে মাজার তৈরি করা শুরু করেছে!
আজকাল ঠিক একইভাবে শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধে আমরা ঠিক একই কাজ করছি। আমরা মৃতদের স্মরণে খাম্বা বানিয়েছি প্রাচীর তুলেছি । তারপরেও কিছু লোক প্রশ্ন খুঁজে ফিরে কি করে এই শহীদ মিনার, স্মৃতি সৌধ হারাম হতে পারে? বাংলাদেশের আদালত শহীদ মিনারকে উপাসনালয়ের মতই পবিত্র ঘোষণা করেছে । যার প্রেক্ষিতে মাঝেমধ্যেই সংবাদপত্রে লিখে থাকে- ”পবিত্র বেদিতে জুতা নিয়ে চলাচল- দেখার কেউ নেই”; নাউজুবিল্লাহ। তারপরেও মানুষ অবাক হয়ে প্রশ্ন করে এখানে শিরক হলো কোথায়? নুহ (আঃ) সম্প্রদায়ের মতই কিছুকাল পরে না জানি আরো কতকিছু ঘোষিত হয়।
খলীফা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু এর সময় তাকে সংবাদ দেওয়া হল যে, কতিপয় মানুষ ঐ বৃক্ষের উদ্দেশ্যে যাতায়াত করে যে বৃক্ষের নিচে সাহাবীগণ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাতে বায়াআত করেছিলেন। অতঃপর তিনি ঐ বৃক্ষকে কেটে ফেলার নির্দেশ দিলেন। [ফাতহুল বারী, ৭/৪৪৮]
বর্তমানে স্কুল, কলেজ, সরকারী মাদ্রাসা সহ প্রত্যেকটি সরকারী, আধা সরকারী প্রতিষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর ছবি টাঙিয়ে রাখা বাধ্যতামূলক । আমাদের যুগে ছবির ব্যাপক ব্যবহারের কারণে এসব বিষয় কারো চোখে পড়েনা। এই চোখে না পরাটাই শয়তানের ফিতনা। অমুসলিমদের দিকে দেখুন, তারা ঘরে -দোকানে-অফিসে মুর্তির পরিবর্তে তাদের দেবতাদের ছবিও টাঙিয়ে রাখে। যেকোন ছবিকে যদি পূজা, বশ্যতা কিংবা রাজনৈতিক আনুগত্যের প্রতীক হিসেবে রাখা হয় তবে তা নিশ্চয় মুর্তিপূজা। কয়দিন পর ত্রিমাত্রিক ভাস্কর্য বানিয়ে ফুল দিবে।
একুশে ফেব্রুয়ারি উদযাপনে যারা অংশগ্রহণ করেন তাদের প্রায় নব্বই শতাংশ মুসলমান। কিন্তু এ দিবস উদযাপন উপলক্ষে যা করা হয় তা মুসলমানদের আকিদা-বিশ্বাসের সাথে কতটুকু সঙ্গতিপূর্ণ, তা ভেবে দেখার প্রয়োজন আছে। শহীদ মিনারকেন্দ্রিক অনুষ্ঠানের অনেক কিছুরই মিল আছে হিন্দুদের পূজা-পার্বণের সাথে। কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি :
১. হিন্দু দেবদেবীর প্রতিমাকে যে উঁচু স্থানে স্থাপন করা হয় সে স্থানকে বলা হয় বেদী, শহীদ মিনারের পদমূলকেও বলা হয় বেদী। বেদী শব্দটির অর্থ ‘হিন্দুদের যজ্ঞ বা পূজার জন্য প্রস্তুত উচ্চভূমি।’ (সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান, বাংলা একাডেমী)
২. প্রতিমা বা মূর্তির বেদীমূলকে পবিত্র মনে করা হয়, তাই সেখানে যেতে হয় নগ্নপদে। শহীদ মিনারের মূলকেও পবিত্র মনে করার কারণেই সেখানে নগ্নপদে যেতে হয়।
৩. হিন্দু দেবদেবীর পূজার সময় কয়েকটি বিষয় অপরিহার্য। এগুলো হল : লগ্ন, অর্ঘ্য বা নৈবেদ্য, স্তব বা স্তুতি, পুরোহিত, দেবতা ও অর্চনা। এসবের সাথেও একুশে ফেব্রুয়ারির আচার-আচরণের সাদৃশ্য আছে। যেমন, অনুষ্ঠান জিরো আওয়ারে শুরু করা (লগ্ন), নির্দিষ্টভাবে আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো … ’ গান গেয়ে কাজ করা (স্তব/স্তুতি), শহীদ মিনার (জড়পদার্থ)-কে নীরবে শ্রদ্ধা জানানো (অর্চনা)।
আবুল হাইয়াজ আল আসাদী থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেছেন: আলী বিন আবু তালিব রাদি আল্লাহু আনহু আমাকে বলেন যে, আমি কি তোমাকে সেই দায়িত্ব দিয়ে প্রেরণ করব না, যে দায়িত্ব দিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে প্রেরণ করেছিলেন? তা হলো যেখানেই প্রতিমা ও ভাস্কর্য দেখবে ভেঙ্গে ফেলবে এবং যেখানেই সুউচ্চ কবর দেখবে সমান করে দেবে’
অনুরূপ ভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরে চুনকাম করা ও সৌধ তৈরী করা থেকে নিষেধ করেছেন। জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরের উপর বসা ও সৌধ তৈরী করা থেকে নিষেধ করেছেন। [মুসলিম]
ছয়.
কারো মৃত্যুতে নীরবতা পালন করা এটা অমুসলিমদের সংস্কৃতি।
--------------------------
অমুসলিমদের অনুকরণে মৃত ব্যক্তির কবরে দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা, মৃত ব্যক্তির কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা শরীয়তসম্মত নয়। এগুলো বিজাতীয় সংস্কৃতি। বিধর্মীদের আবিষ্কার। আর বিজাতিদের অনুসরণের ব্যাপারে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন- যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য অবলম্বন করবে-সে তাদের দলভুক্ত হবে। -সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ৪০৩১
সুতরাং মুসলমানদের কর্তব্য এসব অহেতুক মনগড়া কাজ সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা।
কারো মৃত্যুতে নীরবতা পালন করা,স্ত্রী ব্যাতিত অন্য কাহারো জন্য ৩ দিনের চেয়ে বেশি শোক পালন,শোক দিবস পালন,জাতীয় পতাকাকে স্যালুট দেয়া, শহীদ মিনারে ফুল দেয়া, ইসলাম কখনোই এগুলোর অনুমোদন দেয়না।
এক মিনিট নীরবতা পালনঃ এটা হারাম
--------------
কায়েস ইবনু আবী হাযেম বলেন, “আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) (হজের মওসুমে) যায়নাব নামক আহমাস গোত্রীয় এক মহিলার নিকট গেলেন। তিনি দেখলেন, সে কথা বলে না। তিনি বললেন, সে কথা বলে না কেন? লোকেরা বলল- তার হজটি এমন যাতে সে নীরবতা পালন করছে। আবু বকর তাকে বললেন,তুমি কথা বল। তোমার এ নীরবতা পালন অবৈধ। এটি জাহেলিয়াতের (শিরক ও অজ্ঞতা) যুগের কাজ। অতঃপর সে মহিলাটি কথা বলল [বুখারী]
--------------
কায়েস ইবনু আবী হাযেম বলেন, “আবু বকর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) (হজের মওসুমে) যায়নাব নামক আহমাস গোত্রীয় এক মহিলার নিকট গেলেন। তিনি দেখলেন, সে কথা বলে না। তিনি বললেন, সে কথা বলে না কেন? লোকেরা বলল- তার হজটি এমন যাতে সে নীরবতা পালন করছে। আবু বকর তাকে বললেন,তুমি কথা বল। তোমার এ নীরবতা পালন অবৈধ। এটি জাহেলিয়াতের (শিরক ও অজ্ঞতা) যুগের কাজ। অতঃপর সে মহিলাটি কথা বলল [বুখারী]
শোক দিবস বলতে ইসলামে কিছুই নেই
--------------------------------
ইসলামে যদি শোকদিবস বলতে কিছু থাকতো, তাহলে রাসূল সা. এর ইন্তিকালের দিনটি হত সবচেয়ে শোকের দিন। কারণ তাঁর মৃত্যুতে বিশ্ব-চরাচরের যে বিপুল পরিমাণ ক্ষতি হয়ে গিয়েছিলো তা ছিলো অপূরণীয়। কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের যুগে তার মৃত্যুবার্ষিকী পালন করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।
রাসূল সা. এর জীবদ্দশায় তার সন্তান ও মা ইন্তিকাল করেছেন, তিনি তাদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট দিবসে কোনো কিছুর ইন্তিজাম করেননি ।এছাড়া মৃত ব্যক্তির জন্য 'নিয়াহা' বা শোক অনুষ্ঠান পালনের ব্যাপারে সরাসরি রাসূল সা. থেকে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তিনি বলেন,
المَيِّتُ يُعَذَّبُ في قَبْرِهِ بِما نِيحَ عليه. "
শোক অনুষ্ঠান করার কারণে মৃত ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়া হয়"(বুখারী)।
শোক অনুষ্ঠান রাসূল সা. এর যুগেও ছিলো। তবে এটি কোনো ইসলামী রীতি তো ছিলোই না। বরং ছিল মুশরেকদের মধ্যে প্রচলিত জাহেলি যুগের একটি রীতি। রাসূল সা. একে কুফরি বলে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন,
اثنتانِ في الناسِ هما بهم كفرٌ : الطعنُ فيالأنسابِ ، و النِّياحةُ على الميِّتِ.
মানুষের মধ্যে এমন দুইটি বিষয় রয়েছে যা কুফরি। এক: বংশ নিয়ে অপবাদ দেয়া। দুই: নিয়াহা বা শোক অনুষ্ঠান পালন করা। (সহীহ মুসলিম)
স্বামী ছাড়া অন্য কারো মৃত্যুতে নারীদের জন্য তিনদিন শোক পালন করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন অথবা গর্ভবতী হলে প্রসব পর্যন্ত শোকপালন করা ওয়াজিব। এসময় তারা রঙিন পোশাক, অলংকার, মেহেদী, সুরমা ইত্যাদি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে। এবং স্বামীর বাড়ী ছাড়া অন্য কোথাও যেতে পারবে না। তবে পুরুষের জন্য এধরনের কোনো বিধানও নেই। অর্থাৎ পুরুষরা নির্দিষ্ট কোনো আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শোক পালন করতে পারবে না।
রাসূল সা. বলেন,
لا يحل لامرأة تؤمن بالله واليوم الآخر أن تحد على ميت فوق ثلاث إلا على زوج فإنها تحد عليه أربعة أشهر وعشرا
আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য তার স্বামী ব্যতীত অন্য কারো মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি সময় হিদাদ (শোক করা ও সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা) বৈধ নয়। আর স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন হিদাদ পালন করবে। (সহীহ বুখারী ১২৮০)
সাত.
নিজের মা-বাবা হোক কিংবা অন্যের মা-বাবা। যে কোনো মৃত ব্যক্তির জন্য কিছু করতে চাইলে তা যদি আমরা ইসলামি নিয়ম মেনে করি তাহলে আমাদের উদ্দেশ্যও অর্জিত হবে। টাকাগুলোও নষ্ট হবে না। মৃত ব্যক্তির জন্য আমরা কি করতে পারি চলুন তা দেখে নেই।
১- কোনো দিন বা সময় নির্দিষ্ট না করে দুয়া করা।
.
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ
আর যারা পরবর্তীতে আসবে, তারা বলবে, হে আমাদের রব! আপনি আমাদের ক্ষমা করুন, এবং আমাদের সেসকল ঈমানদার ভাইদের ক্ষমা করুন যারা আমাদের পূর্বে গত হয়েছে। {সূরা হাশর-১০}
২. সদকায়ে জারিয়া বা এমন সাদকা যা থেকে মানুষ মৃত্যুর পরও উপকৃত হতে থাকে। যতদিন মানুষ উপকৃত হবে ততদিন সাওয়াব পৌঁছাতে থাকবে
৩- এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়। সেই জ্ঞান একজন থেকে আরেকজন যতদিন পৌঁছাতে থাকবে ততদিন সাওয়াব জারী থাকবে।
৪. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দু‘আ করে।
২,৩, ও ৪ এর দলীল...
إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ
মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩ টি আমল বন্ধ হয় না-১. সদকায়ে জারিয়া ২. এমন জ্ঞান-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দু‘আ করে। (সহিহ মুসলিম)
৫. সাধারণ সাদাকা।
দলীল...- أنَّ رجُلًا قال للنَّبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ:إنَّ أُمِّي افتُلِتَتْ نفْسُها (أي: ماتت فجأةً)، وأَظُنُّها لو تكَلَّمَتْ تصَدَّقَتْ، أفأتَصدَّقُ عنها؟ قال: نعَمْ، تصَدَّقْ عنها. وفي روايةٍ: فهلْ لهاأجْرٌ إنْ تصَدَّقْتُ عنها
"এক ব্যক্তি রাসূল সা. কে বলল, আমার মা হঠাৎ করে মারা গেছে। আমার ধারণা সে কথা বলার সুযোগ পেলে দান করতে বলত। আমি কি তার পক্ষ থেকে দান করতে পারবো? তিনি বললেন হ্যাঁ। তার পক্ষ থেকে সাদাকা করো। (তাখরীজুল মুসনাদ, হাদীসের মান: সহীহ)
৬. সিয়াম পালন করা। নফল সিয়ামের দলীল না থাকলেও ওয়াজিব সিয়ামের ব্যপারে অনুমোদন রয়েছে।
দলীল... مَن مَاتَ وعليه صِيَامٌ صَامَ عنْه ولِيُّهُ. ‘আয়িশাহ্ (রাযি.) হতে বর্ণিত যে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: সওমের কাযা যিম্মায় রেখে যদি কোন ব্যক্তি মারা যায় তাহলে তার অভিভাবক তার পক্ষ হতে সওম আদায় করবে। (সহীহ বুখারী)
৭. মাদ্রাসায় কুরআন শরীফ বা দ্বীনী কিতাবাদী কিনে দেয়া।
৮. মসজিদ নির্মাণ করা
৯. মুসাফিরখানা বা পান্থশালা নির্মাণ করা
১০. খাল-বিল, নালা, ইত্যাদিতে পানি প্রবহিত করার ব্যবস্থা করা
১১. কূপ খনন করা। (অথবা টিউবওয়েল, মোটর ইত্যাদি বসিয়ে দেয়া)
৭,৮,৯,১০ ও ১১ এর দলীল...
أنَّ أمَّهُ ماتتْ فقال لرسولِ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلم إنَّ أُمي ماتت أفأَتصدَّقُ عنها ؟ قال : نعمْ . قال : فأيُّ الصدقةِ أفضلُ ؟ قال : سقيُ الماءِ
" এক ব্যক্তি রাসূল সা.কে বলেন, আমার মা ইন্তিকাল করেছেন আমি কি তার জন্য সাদাকা করতে পারবো? রাসূল সা. বললেন হ্যাঁ। সে বলল, উত্তম সাদাকা কী? মৃত ব্যক্তির জন্য সর্বোত্তম সাদাকা হলো পানি পান করানো।" (আস সুনান ওয়াল আহকাম)
أنه صلى الله عليه وسلم قال:" إن مما يلحق المؤمن من عمله وحسناته بعد موته، علماً علمه ونشره، أو ولداً صالحاً تركه أو مصحفاً ورثه، أو مسجداً بناه، أو بيتاً بناه لابن السبيل أو نهراً أجراه أو صدقة أخرجها من ماله في صحته وحياته، تلحقه من بعد موته "
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, মুমিন ব্যক্তির আমলনামায় তার মৃত্যুর পর যেসব আমল যুক্ত হয় তা হচ্ছে এমন ইলম যা সে প্রচার-প্রসার করেছে, এমন সৎ সন্তান যে তার মৃত্যুর পর বিদ্যমান রয়েছে, কোরআন মাজীদ যা সে দান করেছে, মসজিদ ও পান্থশালা যা সে নির্মাণ করেছে, এমন সাদাকা যা সে সুস্থাবস্থায় বা জীবদ্দশায় করে গেছে।
১২. হজ্ব পালন করা। যদি ওয়াজিব হয়ে থাকে। দলীল...
أن امرأة من جهينة جاءت إلى النبي صلى الله عليه وسلم فقالت : إن أمي نذرت أن تحج فلم تحج حتى ماتت أفأحج عنها ؟ قال : "حجي عنها أرأيت لو كان على أمك دين أكنت قاضيته ؟ اقضوا فالله أحق بالقضاء" .
"জুহাইনা গোত্রের একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে আগমণ করে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার মা হজ্ব করার মান্নত করেছিলেন কিন্তু তিনি হজ্ব সম্পাদন না করেই মারা গেছেন। এখন আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করতে পারি? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি তোমার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ কর। তোমার মার উপর ঋণ থাকতো তবে কি তুমি তা পরিশোধ করতে না ? সুতরাং আল্লাহর জন্য তা আদায় কর। কেননা আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করার অধিক উপযোগী’’ (সহীহ বুখারী)
১৩. কবর যিয়ারত করা।
زوروا موتاكم وسلِّموا عليهم فإنَّ لكم فيهم عِبرة
রাসূল সা. বলেন, মৃতদের কবর যিয়রাত করো এবং তাদেরকে সালাম করো কেননা তার মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে শিক্ষা। (তাখরীজুল ইহয়া, মুরসাল ও হাসান)
১৪. মৃত ব্যক্তির প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করা
১৫. মৃত ব্যক্তির বন্ধু বান্ধবদের সাথে সদাচার করা।
১৬. মৃত ব্যক্তির রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয় দের সাথে সুসম্পর্ক রাখা।
১৩,১৪ ১৫ ও ১৬ এর দলীল...
بينما أنا جالسٌ عند رسولِ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّمَ إذ جاءه رجُلٌ مِن الأنصارِ، فقال: يا رسولَ اللهِ، هل بَقِيَ علَيَّ مِن بِرِّ أبوَيَّ شيءٌ بعد موتِهما أبَرُّهما به؟ قال: نَعمْ، خصالٌ أربعةٌ: الصلاةُ عليهما، والاستغفارُ لهما، وإنفاذُ عهدِهما، وإكرامُ صديقِهما، وصلةُ الرَّحِمِ التي لا رَحِمَ لك إلا مِن قِبَلِهما؛ فهو الذي بَقِيَعليك مِن بِرِّهما بعد موتِهما.
হজরত আবুল আসাদ আস সায়িদি মালিক বিন রবীয়া রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা একবার রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর নিকট বসা ছিলাম। হঠাৎ আনসারদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি আসলেন। তিনি বললেন ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মাতা পিতার ইন্তেকালের পরও তাদের জন্য কিছু করার আছে কি? তিনি বললেন হ্যাঁ, তাদের জন্য দোয়া ও ইস্তেগফার, তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণ, তাদের বন্ধুবান্ধবদের সাথে সদাচার এবং তাদের রক্ত সম্পর্কীয় আত্মীয়দের সাথে সুসম্পর্ক রাখা। (আবু দাঊদ)
বাকি অংশ নীচে কমেন্টবক্সে দেখুন।
Comment