ট্রান্সজেন্ডারবাদ
বর্তমান বিশ্বে ট্রান্সজেন্ডারবাদ নামে নতুন একটি উদ্ভট মতবাদের সূচনা হয়েছে। যার মূল প্রতিপাদ্য হল, একজন পুরুষের যদি নিজেকে নারী বলে মনে হয় ,তাহলে সে নারী। অনুরূপ কোনো নারীরও যদি নিজেকে পুরুষ মনে হয়, তাহলে সে পুরুষ। সমাজ ও আইন তাদেরকে সে হিসেবেই বিবেচনা করবে। আর তারা চিকিৎসার মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করারও অধিকার রাখে।
ট্রান্সজেন্ডারবাদের সূচনা
মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে ট্রান্সজেন্ডার তথা জেন্ডার আইডেন্টিটি শব্দটি একটি গোষ্ঠী বা আম্ব্রেলা টার্ম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটা নন-বাইনারি ও এলজিবিটি-এর সমার্থক শব্দ। ১৯৬৫ সালে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সাইক্রিয়াটিস্ট প্রফেসর John F. Oliven ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। এটা (Transsexualismus) জার্মান শব্দ হিসেবে ১৯২৩ সালে প্রথম প্রবর্তন হয়। এরপর এই শব্দের বিবর্তন ঘটে Transsexual হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ছিল। শুরুর দিকে ট্রান্সজেন্ডার বলতে যারা লিঙ্গ পরিবর্তন করতে হরমোন ও সার্জারির আশ্রয় নিত, তাদেরকে বোঝানো হত। ট্রান্সজেন্ডারের সংজ্ঞা এখন অনেক ব্যাপক; এমনকি যারা ক্রসড্রেসার (যারা বিপরীত লিঙ্গের পোশাক ও বেশভূষা গ্রহণকারী অর্থাৎ ছেলে যদি মেয়েদের ড্রেস পরতে আকর্ষিত হয়)।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এটা বর্তমানে বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য বা মেডিক্যাল প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে না; মনের ইচ্ছাধীন বিষয়। অর্থাৎ যে কেউ যে কোনো সময় নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার ঘোষণা দিতে পারে। যেদিন থেকে কারো মনে হয় যে, সে জন্মগত লিঙ্গ পরিচয়ে আগ্রহী বা বিশ্বাসী নয়, সেদিন থেকে নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচয় দিতে পারে। ―ট্রান্সজেন্ডারিজম মতবাদ এবং বিশ্ব প্রেক্ষাপট, ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, পৃষ্ঠা : ৭-৮
মতবাদটির প্রভাবশালী এক প্রচারক সংস্থার ভাষায়―
Transgender is a term used to describe people whose gender identity differs from the sex they were assigned at birth. Gender identity is a person’s internal, personal sense of being a man or a woman (or boy or girl.) For some people, their gender identity does not fit neatly into those two choices. For transgender people, the sex they were assigned at birth and their own internal gender identity do not match. ...
As part of the transition process, many transgender people are prescribed hormones by their doctors to change their bodies. Some undergo surgeries as well. But not all transgender people can or will take those steps, and it’s important to know that being transgender is not dependent upon medical procedures.
অর্থ : ট্রান্সজেন্ডার একটি পরিভাষা। যার দ্বারা এমন লোকদের বোঝানো হয়, যাদের লিঙ্গ পরিচয় তাদের জন্মের সময় নির্ধারণ হওয়া লিঙ্গ পরিচয় থেকে ভিন্ন। লিঙ্গ পরিচয় হল, সে কি পুরুষ, না নারী―এ ব্যাপারে তার মানসিক বোধ। আর এই শ্রেণির মানুষের সেই মানসিক বোধ তার জন্মের সময় যে লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণ হয়েছিল এর থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। ...আর কিছু কিছু ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি হরমোন থেরাপি গ্রহণ করে থাকে, আবার তাদের কেউ সার্জারিও করে। তবে সব ট্রান্সজেন্ডার এগুলো করে না বা করতে পারে না। এবং এটি জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তন করে ট্রান্সজেন্ডার হওয়া―কোনো চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণের ওপর নির্ভরশীল নয়। দেখুন― https://glaad.org/transgender/transfaq/
ট্রান্সজেন্ডারবাদের শরয়ী দৃষ্টিকোণ নিয়ে আলোচনার পূর্বে জাগতিক বিচারে এর অসারতা, অযৌক্তিকতা ও মানব সম্প্রদায়ের জন্য এর ভয়াবহতা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা দরকার।
পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত আগত গোটা মানব সম্প্রদায়কে আল্লাহ তাআলা পুরুষ ও নারী দুটি শ্রেণিতে ভাগ করে দিয়েছেন। আবার নারী-পুরুষ সৃষ্টির ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পাশাপাশি প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্যও ভিন্ন করে দিয়েছেন। আর নিজ নিজ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব-কর্তব্যের উপযোগী করে নারী-পুরুষের প্রত্যেককে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভিন্ন করে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেকের জন্য দিয়েছেন পৃথক পৃথক জীবনব্যবস্থা, বিধিবদ্ধ করেছেন শরীয়তে ইসলামীর পৃথক বিধিবিধান। যার ওপর ভিত্তি করেই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রসহ মহাজগতের সবকিছু সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে আবর্তিত হয়ে চলেছে।
বলাবাহুল্য, ট্রান্সজেন্ডারবাদের দাবি অনুযায়ী পৃথিবীতে কোনো লিঙ্গ পরিচয় থাকবে না। শারীরিক লিঙ্গ বিবেচনায় মানুষের পরিচয় নির্ণয় হবে না; বরং মানসিক ইচ্ছাটাই হবে তার প্রধান পরিচয়। কেউ যদি তার জন্মগত লিঙ্গ পরিচয়ে আগ্রহী বা বিশ্বাসী না হয়, তাহলে সে মনের ইচ্ছাধীন যে কোনো সময় নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার ঘোষণা দিতে পারবে। অর্থাৎ একজন পুরুষের যদি নিজেকে নারী বলে মনে হয়, তাহলে সে নারী। অনুরূপ কোনো নারীরও যদি নিজেকে পুরুষ মনে হয়, তাহলে সে পুরুষ।
ভাবতে অবাক লাগে, এটিও একটি মতবাদ হতে পারে! আধুনিক বিশ্বেও ট্রান্সজেন্ডারবাদকে মানুষ মেনে নিতে পারে! আরো অবাক হই, যখন দেখি, এই মতবাদটিকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য বিশ্ব মোড়লরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে এবং দেশে দেশে এর স্বীকৃতি আদায়ে রীতিমতো চাপ প্রয়োগ করে।
বস্তুত ট্রান্সজেন্ডারবাদ মতবাদটি এতটাই অসার ও অযৌক্তিক যে, এর ফলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র; বরং গোটা পৃথিবীতেই বিপর্যয় নেমে আসবে। যেমন ধরুন, রফিক সাহেবের ৪ মেয়ে। তাদের একটি ছেলের খুব শখ। অনেক দুআ-প্রার্থনার পর তার ঘরে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হল। রফিক সাহেব তো মহা খুশি। এলাকার সবাইকে তিনি দাওয়াত করে খাইয়েছেন। ছেলের আদর-যত্নের যেন কোনো কমতি নেই। ছেলেকে নিয়ে তাদের কত স্বপ্ন! ছেলেকে একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করাবেন। লেখাপড়া শেষে ভালো একটা চাকরি করবে। এরপর ছেলেকে বিয়ে করিয়ে বউ ঘরে আনবেন। শেষ বয়সে তারা ছেলে ও ছেলের বউ এবং তাদের নাতি-নাতনি নিয়ে মহাসুখে দিন কাটাবেন। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। ছেলেকে নামকরা একটা স্কুলে ভর্তি করালেন। এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেল। ছেলের বন্ধু-বান্ধব, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ এলাকার সবার মুখেই তিনি ছেলের প্রশংসা শোনেন। এমন একটি ছেলের পিতা হতে পেরে নিজেকে তিনি গর্বিত বোধ করেন। কিন্তু ছেলেকে একটা ভালো কলেজে ভর্তি করানোর জন্য রফিক সাহেব যখন খুব উদ্বিগ্ন। ঠিক তখনই যেন তিনি আকাশ থেকে পড়লেন। কারণ একদিন তিনি শুনতে পারলেন, তার ছেলেটি নাকি মেয়ে হয়ে গিয়েছে! এখন থেকে রফিক সাহেবের ছেলের নিজেকে মেয়ে মনে হচ্ছে। তাই আইন ও সমাজসহ সকলের তাকে মেয়ে হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে।
আচ্ছা ধরে নিলাম, সে এখন মেয়ে। সমাজ ও আইনের চোখেও সে এখন থেকে মেয়ে হিসেবেই বিবেচিত হবে। কিন্তু এই বিবেচনাতেই কি সব সমস্যার সমাধান হবে? ধরুন, রফিক সাহেব তাকে মেয়েদের পোশাক পরিয়ে একটা ওমেন্স কলেজে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে গেলেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে আইনী কারণে মেয়ে হিসেবেই বিবেচনা করলেন এবং ভর্তিচ্ছু অন্যান্য মেয়েদের মতো তার শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমাণের জন্য এসএসসির সার্টিফিকেট, মার্কশিট ইত্যাদি কাগজপত্র দেখলেন। কিন্তু সেখানে সবকিছুতেই তো ছেলের নাম লেখা। তাহলে কলেজ কর্তৃপক্ষ কীভাবে নিশ্চিত হবেন যে, এই মেয়েই আগে ছেলে ছিল আর এই সার্টিফিকেট, মার্কশিটসহ সকল কাগজপত্র এই মেয়ের?
হয়তো কেউ সমাধান বাতলে দিতে পারেন যে, কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে তার পূর্বের সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো সংশোধন করে নেবে।
আবার কলেজের পাঠ চুকিয়ে যখন সে ইউনিভার্সিটিতে যাবে, তখন যদি আবার সে নিজেকে ছেলে মনে করে বসে? এমনিভাবে যখন চাকরির সময় হবে তখনো আবার সে নিজেকে মেয়ে মনে করে বসতে পারে। আচ্ছা, তার জীবনের এসব ধাপ ও পর্যায়ের কথা না হয় বাদই দিলাম। ট্রান্সজেন্ডারবাদের দাবি অনুযায়ী, যার যখন নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের মনে হয় তখন থেকেই সে ওই লিঙ্গের বলেই বিবেচিত হবে। এখানে নির্দিষ্ট কোনো সময় বা পর্যায় নেই এবং বিপরীত লিঙ্গের মনে করার নির্দিষ্ট কোনো সীমা-পরিসীমাও নেই। এটাই যদি হয় অবস্থা, তাহলে সবার আগে তার ব্যক্তিগত জীবনটাই প্রভাবিত হবে। কেননা, একটা ছোট্ট ছেলেকে তার বাবা-মা কত যত্ন করে ছেলে হিসেবে প্রতিপালন করেছেন। ছেলেদের যত বিষয়-আশয় থাকে সবকিছু তার জন্য ব্যবস্থা করেছেন। তার কাপড়-চোপড়, পোশাক-আশাক, বন্ধু-বান্ধব ও চলাফেরা সবকিছুই ছিল ছেলেদের মতো। এখন হঠাৎ করে সে মেয়ে হওয়ায় তার পোশাক-পরিচ্ছদ, বন্ধু-বান্ধব, চলাফেরা সবকিছুই পরিবর্তন করতে হবে। আর মেয়ে হিসেবে তার জন্য বাবা-মায়েরও মেয়েদের সকল আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা করতে হবে। কদিন পর যখন আবার সে নিজেকে ছেলে মনে করবে তখন আবার নতুন করে তার জন্য ছেলেদের ব্যবস্থাপনা দরকার হবে।
আচ্ছা, চাকরি-বাকরি কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য করে সে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তার যখন বিয়েশাদির বিষয় আসবে তখন তার অভিভাবকগণ কি তাকে ছেলে মনে করে তার জন্য মেয়ে খুঁজবে, নাকি মেয়ে ভেবে ছেলে খুঁজবে? ধরে নিলাম, অভিভাবকরা বিয়ের সময় তাকে ছেলে মনে করেই তার জন্য পছন্দের একটি মেয়েকে বউ হিসেবে ঘরে আনলেন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর দুয়েকটি বাচ্চা-কাচ্চা হওয়ার পর যদি ছেলের বউ নিজেকে ছেলে মনে করে কিংবা এই ছেলেই আবার নিজেকে মেয়ে মনে করে বসে?
তাহলে দেখা গেল, এতে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন প্রভাবিত হওয়ার পাশাপাশি তার সাথে সমাজ ও রাষ্ট্রের আচার-ব্যবহার নিয়েও জটিলতা তৈরি হবে। কেননা, মহল্লার একটি ছেলে যখন সবার সামনে বেড়ে ওঠে। এলাকার সমবয়সী অন্যান্য ছেলেদের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। এলাকার বড় ভাই, মুরব্বি ও অন্যান্য লোকজনের সাথে তার একটা যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরি হয়। সবাই তাকে একটি ছেলে হিসেবেই তার সাথে ব্যবহার করে। এখন হঠাৎ করে যদি এই ছেলেটি নিজেকে মেয়ে মনে করার কারণে তাকে মেয়ে বিবেচনা করতে হয়, তাহলে তার এতদিনের বন্ধু-বান্ধব, মুরব্বি ও অন্যান্য লোকজনের সাথে তার সম্পর্কের অবস্থা কী দাঁড়াবে? আবার এলাকার একটি মেয়ে যখন হঠাৎ করে নিজেকে ছেলে মনে করে এবং এলাকার অন্যান্য ছেলেদের সাথে ওঠাবসা করতে থাকে, তাহলে কী অবস্থা দাঁড়াবে?
আর যদি কারো অসৎ উদ্দেশ্য থাকে কিংবা কেউ তার কোনো স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এমনটি করে থাকে, তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রের অবস্থা তো হবে আরো ভয়াবহ। যেমন, কোনো অসাধু ছেলে যদি কোনো মেয়ের সাথে প্রতারণা করে। তার সাথে সম্পর্কে জড়ায়। কৌশলে তার কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয় এবং তাকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়। এরপর মেয়েটি বিয়ের জন্য চাপ তৈরি করলে ছেলেটি নিজেকে মেয়ে দাবি করে বসল এবং মেয়েটির নামে থানায় নারী নির্যাতনের মামলা ঠুকে দিল। তাহলে এর মীমাংসার কোনো পথ বা উপায় কি কেউ একটু বাতলে দিতে পারবেন?!
মোটকথা, কোনো ছেলে বা মেয়ে যখন তখন নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের মনে করলেই যদি তাকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিপরীত লিঙ্গের বলেই মেনে নিতে হয়, তাহলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিপর্যয় কোন্ স্তরে গিয়ে পৌঁছবে, কেউ কি তা একটু ভেবে দেখেছেন?
প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতা এড়ানোর জন্য কেউ হয়তো পরামর্শ দেবেন, যখনই কারো বিপরীত লিঙ্গের মনে হবে তখন সাথে সাথেই তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে লিঙ্গ পরিবর্তনের ঘোষণা দেবেন এবং অন্যান্য তথ্য সংশোধন করে নেবেন। জী, এটাও একটা সহজ(?) সমাধান। ডিজিটাল থেকে স্মার্ট দেশে পদার্পণের দাবিদার বাংলাদেশে বর্তমান জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা স্মার্ট কার্ডে কারো নাম ভুল হলে কিংবা ভুল বানান সংশোধনের জন্য যে সময় ও প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হয়, সেখানে সকাল-বিকাল; বরং যখন তখন একজন নাগরিকের তথ্য সংশোধন ও হালনাগাদকরণ সত্যি অনেক সহজ সমাধানই বটে।
আচ্ছা, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট না হয় বাদই দিলাম। কোনো মুসলিম দেশের কথাও না হয় না-ই বললাম। অবাধ মেলামেশার দেশগুলোর কথাই একটু ভেবে দেখুন তো। যেসব দেশে অবাধ মেলামেশা ও বিকৃত উপায়ে প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার সুযোগ থাকে এবং আইনী ও সামাজিকভাবেই তা বৈধ, ঐসব দেশের অবস্থাটাইবা কী হবে? আর অবাধ মেলামেশার দেশ বা সমকামিতাকে আইনীভাবে বৈধতা দেয়া দেশগুলোতেইবা কেন প্রয়োজন পড়বে ট্রান্সজেন্ডারবাদকে প্রতিষ্ঠা করার? সেসব দেশে তো যে কেউ যথেচ্ছভাবে প্রবৃত্তি চরিতার্থের সুযোগ পায়। এর পরও কেন সেখানে ট্রান্সজেন্ডারবাদ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন থাকে? আর সেসব দেশগুলোতে কি আসলেই ট্রান্সজেন্ডারবাদকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া সম্ভব? না। সেসব দেশেও এটাকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া সম্ভব নয়। কেননা, আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে খুনের দায়ে ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ২৭ বছর বয়সী ডেমি মাইনর নামের এক ট্রান্স নারীকে মহিলা কারাগারে রাখার পর তার দ্বারা সেখানে দুইজন নারী সহবন্দি গর্ভবতী হওয়ার ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের একটি কারাগারে স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়েছেন।
কেউ হয়তো বলবেন, কারা কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল, ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য পৃথক সেলের ব্যবস্থা করা। আচ্ছা, মেনে নিলাম এটিও একটি সহজ ব্যবস্থা। কিন্তু প্রশ্ন হল, ট্রান্সজেন্ডারদের সবাইকে যদি পৃথক সেলেই রাখা হয়, তাহলে কি এতে ট্রান্সজেন্ডারবাদের প্রতিষ্ঠা হল? কারণ ট্রান্সজেন্ডারবাদের দাবি তো হল, কোনো ছেলে নিজেকে মেয়ে মনে করলে তাকে মেয়ে হিসেবে বিবেচনা করতে হবে আর কোনো মেয়ে নিজেকে ছেলে মনে করলে তাকে ছেলে বিবেচনা করতে হবে। তাহলে বাস্তবে তো তাদের দাবি মানা হল না। তাদেরকে বরং তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবেই বিবেচনা করা হল। তাহলে আদৌ কি ট্রান্সজেন্ডারবাদকে সেসব দেশে প্রতিষ্ঠা দেওয়া সম্ভব?
এবার দেখা যাক, যুক্তির বিচারেও কি ট্রান্সজেন্ডারবাদকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া সম্ভব?
না। সাধারণ যুক্তির বিচারেও ট্রান্সজেন্ডারবাদকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া সম্ভব নয়। কেননা আমরা দেখি, মানুষ সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। পুরুষ ও নারী। প্রত্যেকের শরীর ও মন ভিন্ন ভিন্ন। মেয়েরা নিজেকে যতই পুরুষের সমান বলে দাবি করুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তা কখনও সম্ভব নয়। কারণ শারীরিক গঠন, শক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও মন-মানসিকতায় নারীর পক্ষে কখনও পুরুষের সমান হওয়া সম্ভব নয়। এছাড়াও মেয়েদের রয়েছে বহুবিধ দুর্বলতা। এতকিছুর পরও একজন মেয়ে নিজেকে ছেলে দাবি করলে বা মনে করলেই সে ছেলে হয়ে যেতে পারে না। এমনকি সার্জারি করে ছেলেদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করলেও এবং হরমোনের পাওয়ারফুল ঔষধ সেবনের পরও তার পক্ষে ছেলের সমান হওয়া সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে একজন ছেলে সার্জারির মাধ্যমে মেয়েদের সকল অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে নিলেও সে মেয়ে হয়ে যায় না। আর এ কারণেই দেখা যায়, ট্রান্স নারীর সাথে সাধারণ নারীরা পেরে উঠতে পারে না। যেমন, আউট স্পোর্টস নামের একটি ওয়েব সাইটে ২৩ জন ট্রান্স নারীর উল্লেখ করা হয়েছে। যারা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় মেয়েদের ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে জয়ী হয়েছে। ―আউট স্পোর্টস, ৬ আগস্ট ২০২১
এ কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে, একজন ট্রান্স নারী নারীদের ইভেন্টে অংশগ্রহণ করলেও বাস্তবে সে তো পুরুষ। তাই সাধারণ নারীরা তার সাথে পেরে উঠবে কীভাবে? ফলে স্বাভাবিকভাবেই মহিলা ইভেন্টে ট্রান্স নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
আর সঙ্গত কারণেই অবাধ মেলামেশা ও সমকামিতার দেশ এবং পশ্চিমা দেশগুলোতেও ট্রান্সজেন্ডারবাদকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ঘোষণা দিয়েছেন, কেউ চাইলেই লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারে না। ―দৈনিক প্রথম আলো, ০৬ অক্টোবর ২০২৩
রাশিয়ার সর্বোচ্চ আদালত ‘আন্তর্জাতিক এলজিবিটি পাবলিক মুভমেন্ট’কে একটি চরমপন্থী সংগঠন ঘোষণা করেছে এবং দেশজুড়ে এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। ―বিবিসি, ৩০ নভেম্বর ২০২৩; সিএনএন, ৩০ নভেম্বর ২০২৩; দ্য গার্ডিয়ান, ৩০ নভেম্বর ২০২৩
ফেব্রুয়ারিতে সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে রঙধনু পতাকা বিতরণের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়। ―দ্য ডিপ্লোমেট, ২৮ এপ্রিল ২০২৩; নিউ ইয়র্ক টাইমস, ৩ জুন ২০২৩
উগান্ডায় সমকামিতা আগে থেকেই অবৈধ ছিল। কিন্তু মে মাসে নতুন আইনের মাধ্যমে এর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নির্ধারণ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক উগান্ডার নতুন ঋণ স্থগিত করেছে। ―বিবিসি নিউজ, ৯ আগস্ট ২০২৩; রয়টার্স, ৯ আগস্ট ২০২৩
মালয়েশিয়ায় সমকামিতা নিষিদ্ধ। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মে মাসে দেশের ১১টি শপিং মলের সোয়াচ স্টোরে এলজিবিটি উপাদান সম্বলিত টাইমপিস উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কেউ এ ধরনের সামগ্রী মুদ্রণ, আমদানি, উৎপাদন করলে ... অথবা কারো কাছে এ ধরনের সামগ্রী পাওয়া গেলে তার ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। আর কেউ এ ধরনের ঘড়ি পরলে বা বিতরণ করলে তার ২০ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা হতে পারে। ―দ্য গার্ডিয়ান, ১০ আগস্ট ২০২৩
কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে ট্রান্সজেন্ডারদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ―সিএনএন, ১৯ নভেম্বর ২০২২; দ্য গার্ডিয়ান, ১৩ মে ২০২২
১৯ মে ২০২৩ শুক্রবার পাকিস্তানের ফেডারেল শরীয়ত কোর্ট (এফএসসি) কোনো ব্যক্তি ইচ্ছামতো তার লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারবেন না এবং ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি (অধিকার সুরক্ষা) আইন, ২০১৮-এর কয়েকটি ধারা শরীয়া পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে।
ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি (অধিকার সুরক্ষা) আইন, ২০১৮ পাশের পর সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে দায়ের করা পিটিশনের জবাবে আদালত এই রায় প্রদান করেন।
বিস্তারিত রায়ে বলা হয়েছে, আমরা এই উপসংহারে পৌঁছেছি যে, কুরআন ও সুন্নাহর ইসলামী বিধান অনুসারে একজন ব্যক্তির লিঙ্গ তার জৈবিক লিঙ্গের অধীন। সুতরাং একজন ব্যক্তির লিঙ্গ অবশ্যই তার জৈবিক লিঙ্গের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।...
রায়ে আরো উল্লেখ করা হয় যে, আমরা লক্ষ্য করেছি, ধারা-২ (এন) ও ইমপ্লিমেন্টেড অ্যাক্টের পাঁচটি ভিন্ন পরিভাষা; যথা (১) উভলিঙ্গ, (২) নপুংসক (৩) রূপান্তরকামী পুরুষ, (৪) রূপান্তরকামী নারী এবং (৫) খাজাসিরা ব্যক্তিদেরকে ‘হিজড়া ব্যক্তি’র একই সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ উভলিঙ্গ, নপুংসক ও খাজাসিরা শব্দগুলি কোনো ব্যক্তির যৌন বৈশিষ্ট্যের জৈবিক বৈচিত্র্যকে বোঝায়, যা পুরুষ বা মহিলা শ্রেণিবিন্যাসের সাথে খাপ খায় না। অন্যদিকে রূপান্তরকামী পুরুষ ও রূপান্তরকামী নারী বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝায়, যার স্ব-অনুভূত লিঙ্গ পরিচয় তাদের জন্মের সময় নির্ধারিত লিঙ্গ বা জৈবিকভাবে তাদের লিঙ্গ থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। ―ডন, ১৯ মে ২০২৩
বোঝা গেল, সাধারণ যুক্তির বিচারেও ট্রান্সজেন্ডারবাদের মতো একটি উদ্ভট ও অসার মতবাদের প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব নয়।
বস্তুত এটা কোনো মতবাদই নয়; বরং স্রেফ কোনো পাগলের পাগলামি ও তার বিকৃত মন-মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
তথ্যসূত্র: মাসিক আলকাউসার
==========================
প্রথম পর্ব:-
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফ...ব#post197824
তৃতীয় পর্ব:-
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফ...ব#post197884
বর্তমান বিশ্বে ট্রান্সজেন্ডারবাদ নামে নতুন একটি উদ্ভট মতবাদের সূচনা হয়েছে। যার মূল প্রতিপাদ্য হল, একজন পুরুষের যদি নিজেকে নারী বলে মনে হয় ,তাহলে সে নারী। অনুরূপ কোনো নারীরও যদি নিজেকে পুরুষ মনে হয়, তাহলে সে পুরুষ। সমাজ ও আইন তাদেরকে সে হিসেবেই বিবেচনা করবে। আর তারা চিকিৎসার মাধ্যমে লিঙ্গ পরিবর্তন করারও অধিকার রাখে।
ট্রান্সজেন্ডারবাদের সূচনা
মূলত ১৯৯০ সালের পর থেকে ট্রান্সজেন্ডার তথা জেন্ডার আইডেন্টিটি শব্দটি একটি গোষ্ঠী বা আম্ব্রেলা টার্ম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটা নন-বাইনারি ও এলজিবিটি-এর সমার্থক শব্দ। ১৯৬৫ সালে কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সাইক্রিয়াটিস্ট প্রফেসর John F. Oliven ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। এটা (Transsexualismus) জার্মান শব্দ হিসেবে ১৯২৩ সালে প্রথম প্রবর্তন হয়। এরপর এই শব্দের বিবর্তন ঘটে Transsexual হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ছিল। শুরুর দিকে ট্রান্সজেন্ডার বলতে যারা লিঙ্গ পরিবর্তন করতে হরমোন ও সার্জারির আশ্রয় নিত, তাদেরকে বোঝানো হত। ট্রান্সজেন্ডারের সংজ্ঞা এখন অনেক ব্যাপক; এমনকি যারা ক্রসড্রেসার (যারা বিপরীত লিঙ্গের পোশাক ও বেশভূষা গ্রহণকারী অর্থাৎ ছেলে যদি মেয়েদের ড্রেস পরতে আকর্ষিত হয়)।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এটা বর্তমানে বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য বা মেডিক্যাল প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভর করে না; মনের ইচ্ছাধীন বিষয়। অর্থাৎ যে কেউ যে কোনো সময় নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার ঘোষণা দিতে পারে। যেদিন থেকে কারো মনে হয় যে, সে জন্মগত লিঙ্গ পরিচয়ে আগ্রহী বা বিশ্বাসী নয়, সেদিন থেকে নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচয় দিতে পারে। ―ট্রান্সজেন্ডারিজম মতবাদ এবং বিশ্ব প্রেক্ষাপট, ড. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, পৃষ্ঠা : ৭-৮
মতবাদটির প্রভাবশালী এক প্রচারক সংস্থার ভাষায়―
Transgender is a term used to describe people whose gender identity differs from the sex they were assigned at birth. Gender identity is a person’s internal, personal sense of being a man or a woman (or boy or girl.) For some people, their gender identity does not fit neatly into those two choices. For transgender people, the sex they were assigned at birth and their own internal gender identity do not match. ...
As part of the transition process, many transgender people are prescribed hormones by their doctors to change their bodies. Some undergo surgeries as well. But not all transgender people can or will take those steps, and it’s important to know that being transgender is not dependent upon medical procedures.
অর্থ : ট্রান্সজেন্ডার একটি পরিভাষা। যার দ্বারা এমন লোকদের বোঝানো হয়, যাদের লিঙ্গ পরিচয় তাদের জন্মের সময় নির্ধারণ হওয়া লিঙ্গ পরিচয় থেকে ভিন্ন। লিঙ্গ পরিচয় হল, সে কি পুরুষ, না নারী―এ ব্যাপারে তার মানসিক বোধ। আর এই শ্রেণির মানুষের সেই মানসিক বোধ তার জন্মের সময় যে লিঙ্গ পরিচয় নির্ধারণ হয়েছিল এর থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। ...আর কিছু কিছু ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি হরমোন থেরাপি গ্রহণ করে থাকে, আবার তাদের কেউ সার্জারিও করে। তবে সব ট্রান্সজেন্ডার এগুলো করে না বা করতে পারে না। এবং এটি জেনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তন করে ট্রান্সজেন্ডার হওয়া―কোনো চিকিৎসাব্যবস্থা গ্রহণের ওপর নির্ভরশীল নয়। দেখুন― https://glaad.org/transgender/transfaq/
ট্রান্সজেন্ডারবাদের শরয়ী দৃষ্টিকোণ নিয়ে আলোচনার পূর্বে জাগতিক বিচারে এর অসারতা, অযৌক্তিকতা ও মানব সম্প্রদায়ের জন্য এর ভয়াবহতা নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করা দরকার।
পৃথিবী সৃষ্টির শুরু থেকে কিয়ামত পর্যন্ত আগত গোটা মানব সম্প্রদায়কে আল্লাহ তাআলা পুরুষ ও নারী দুটি শ্রেণিতে ভাগ করে দিয়েছেন। আবার নারী-পুরুষ সৃষ্টির ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের পাশাপাশি প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্যও ভিন্ন করে দিয়েছেন। আর নিজ নিজ লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও দায়িত্ব-কর্তব্যের উপযোগী করে নারী-পুরুষের প্রত্যেককে শারীরিক ও মানসিকভাবে ভিন্ন করে সৃষ্টি করেছেন। প্রত্যেকের জন্য দিয়েছেন পৃথক পৃথক জীবনব্যবস্থা, বিধিবদ্ধ করেছেন শরীয়তে ইসলামীর পৃথক বিধিবিধান। যার ওপর ভিত্তি করেই ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রসহ মহাজগতের সবকিছু সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে আবর্তিত হয়ে চলেছে।
বলাবাহুল্য, ট্রান্সজেন্ডারবাদের দাবি অনুযায়ী পৃথিবীতে কোনো লিঙ্গ পরিচয় থাকবে না। শারীরিক লিঙ্গ বিবেচনায় মানুষের পরিচয় নির্ণয় হবে না; বরং মানসিক ইচ্ছাটাই হবে তার প্রধান পরিচয়। কেউ যদি তার জন্মগত লিঙ্গ পরিচয়ে আগ্রহী বা বিশ্বাসী না হয়, তাহলে সে মনের ইচ্ছাধীন যে কোনো সময় নিজেকে ট্রান্সজেন্ডার ঘোষণা দিতে পারবে। অর্থাৎ একজন পুরুষের যদি নিজেকে নারী বলে মনে হয়, তাহলে সে নারী। অনুরূপ কোনো নারীরও যদি নিজেকে পুরুষ মনে হয়, তাহলে সে পুরুষ।
ভাবতে অবাক লাগে, এটিও একটি মতবাদ হতে পারে! আধুনিক বিশ্বেও ট্রান্সজেন্ডারবাদকে মানুষ মেনে নিতে পারে! আরো অবাক হই, যখন দেখি, এই মতবাদটিকে প্রতিষ্ঠা দেওয়ার জন্য বিশ্ব মোড়লরা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে এবং দেশে দেশে এর স্বীকৃতি আদায়ে রীতিমতো চাপ প্রয়োগ করে।
বস্তুত ট্রান্সজেন্ডারবাদ মতবাদটি এতটাই অসার ও অযৌক্তিক যে, এর ফলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র; বরং গোটা পৃথিবীতেই বিপর্যয় নেমে আসবে। যেমন ধরুন, রফিক সাহেবের ৪ মেয়ে। তাদের একটি ছেলের খুব শখ। অনেক দুআ-প্রার্থনার পর তার ঘরে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম হল। রফিক সাহেব তো মহা খুশি। এলাকার সবাইকে তিনি দাওয়াত করে খাইয়েছেন। ছেলের আদর-যত্নের যেন কোনো কমতি নেই। ছেলেকে নিয়ে তাদের কত স্বপ্ন! ছেলেকে একটা ভালো স্কুলে ভর্তি করাবেন। লেখাপড়া শেষে ভালো একটা চাকরি করবে। এরপর ছেলেকে বিয়ে করিয়ে বউ ঘরে আনবেন। শেষ বয়সে তারা ছেলে ও ছেলের বউ এবং তাদের নাতি-নাতনি নিয়ে মহাসুখে দিন কাটাবেন। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। ছেলেকে নামকরা একটা স্কুলে ভর্তি করালেন। এসএসসিতে জিপিএ ফাইভ পেল। ছেলের বন্ধু-বান্ধব, স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাসহ এলাকার সবার মুখেই তিনি ছেলের প্রশংসা শোনেন। এমন একটি ছেলের পিতা হতে পেরে নিজেকে তিনি গর্বিত বোধ করেন। কিন্তু ছেলেকে একটা ভালো কলেজে ভর্তি করানোর জন্য রফিক সাহেব যখন খুব উদ্বিগ্ন। ঠিক তখনই যেন তিনি আকাশ থেকে পড়লেন। কারণ একদিন তিনি শুনতে পারলেন, তার ছেলেটি নাকি মেয়ে হয়ে গিয়েছে! এখন থেকে রফিক সাহেবের ছেলের নিজেকে মেয়ে মনে হচ্ছে। তাই আইন ও সমাজসহ সকলের তাকে মেয়ে হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে।
আচ্ছা ধরে নিলাম, সে এখন মেয়ে। সমাজ ও আইনের চোখেও সে এখন থেকে মেয়ে হিসেবেই বিবেচিত হবে। কিন্তু এই বিবেচনাতেই কি সব সমস্যার সমাধান হবে? ধরুন, রফিক সাহেব তাকে মেয়েদের পোশাক পরিয়ে একটা ওমেন্স কলেজে ভর্তি করানোর জন্য নিয়ে গেলেন। কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে আইনী কারণে মেয়ে হিসেবেই বিবেচনা করলেন এবং ভর্তিচ্ছু অন্যান্য মেয়েদের মতো তার শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমাণের জন্য এসএসসির সার্টিফিকেট, মার্কশিট ইত্যাদি কাগজপত্র দেখলেন। কিন্তু সেখানে সবকিছুতেই তো ছেলের নাম লেখা। তাহলে কলেজ কর্তৃপক্ষ কীভাবে নিশ্চিত হবেন যে, এই মেয়েই আগে ছেলে ছিল আর এই সার্টিফিকেট, মার্কশিটসহ সকল কাগজপত্র এই মেয়ের?
হয়তো কেউ সমাধান বাতলে দিতে পারেন যে, কলেজে ভর্তি হওয়ার আগে তার পূর্বের সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো সংশোধন করে নেবে।
আবার কলেজের পাঠ চুকিয়ে যখন সে ইউনিভার্সিটিতে যাবে, তখন যদি আবার সে নিজেকে ছেলে মনে করে বসে? এমনিভাবে যখন চাকরির সময় হবে তখনো আবার সে নিজেকে মেয়ে মনে করে বসতে পারে। আচ্ছা, তার জীবনের এসব ধাপ ও পর্যায়ের কথা না হয় বাদই দিলাম। ট্রান্সজেন্ডারবাদের দাবি অনুযায়ী, যার যখন নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের মনে হয় তখন থেকেই সে ওই লিঙ্গের বলেই বিবেচিত হবে। এখানে নির্দিষ্ট কোনো সময় বা পর্যায় নেই এবং বিপরীত লিঙ্গের মনে করার নির্দিষ্ট কোনো সীমা-পরিসীমাও নেই। এটাই যদি হয় অবস্থা, তাহলে সবার আগে তার ব্যক্তিগত জীবনটাই প্রভাবিত হবে। কেননা, একটা ছোট্ট ছেলেকে তার বাবা-মা কত যত্ন করে ছেলে হিসেবে প্রতিপালন করেছেন। ছেলেদের যত বিষয়-আশয় থাকে সবকিছু তার জন্য ব্যবস্থা করেছেন। তার কাপড়-চোপড়, পোশাক-আশাক, বন্ধু-বান্ধব ও চলাফেরা সবকিছুই ছিল ছেলেদের মতো। এখন হঠাৎ করে সে মেয়ে হওয়ায় তার পোশাক-পরিচ্ছদ, বন্ধু-বান্ধব, চলাফেরা সবকিছুই পরিবর্তন করতে হবে। আর মেয়ে হিসেবে তার জন্য বাবা-মায়েরও মেয়েদের সকল আয়োজন ও ব্যবস্থাপনা করতে হবে। কদিন পর যখন আবার সে নিজেকে ছেলে মনে করবে তখন আবার নতুন করে তার জন্য ছেলেদের ব্যবস্থাপনা দরকার হবে।
আচ্ছা, চাকরি-বাকরি কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য করে সে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর তার যখন বিয়েশাদির বিষয় আসবে তখন তার অভিভাবকগণ কি তাকে ছেলে মনে করে তার জন্য মেয়ে খুঁজবে, নাকি মেয়ে ভেবে ছেলে খুঁজবে? ধরে নিলাম, অভিভাবকরা বিয়ের সময় তাকে ছেলে মনে করেই তার জন্য পছন্দের একটি মেয়েকে বউ হিসেবে ঘরে আনলেন। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পর দুয়েকটি বাচ্চা-কাচ্চা হওয়ার পর যদি ছেলের বউ নিজেকে ছেলে মনে করে কিংবা এই ছেলেই আবার নিজেকে মেয়ে মনে করে বসে?
তাহলে দেখা গেল, এতে ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবন প্রভাবিত হওয়ার পাশাপাশি তার সাথে সমাজ ও রাষ্ট্রের আচার-ব্যবহার নিয়েও জটিলতা তৈরি হবে। কেননা, মহল্লার একটি ছেলে যখন সবার সামনে বেড়ে ওঠে। এলাকার সমবয়সী অন্যান্য ছেলেদের সাথে তার বন্ধুত্ব হয়। এলাকার বড় ভাই, মুরব্বি ও অন্যান্য লোকজনের সাথে তার একটা যোগাযোগ ও সম্পর্ক তৈরি হয়। সবাই তাকে একটি ছেলে হিসেবেই তার সাথে ব্যবহার করে। এখন হঠাৎ করে যদি এই ছেলেটি নিজেকে মেয়ে মনে করার কারণে তাকে মেয়ে বিবেচনা করতে হয়, তাহলে তার এতদিনের বন্ধু-বান্ধব, মুরব্বি ও অন্যান্য লোকজনের সাথে তার সম্পর্কের অবস্থা কী দাঁড়াবে? আবার এলাকার একটি মেয়ে যখন হঠাৎ করে নিজেকে ছেলে মনে করে এবং এলাকার অন্যান্য ছেলেদের সাথে ওঠাবসা করতে থাকে, তাহলে কী অবস্থা দাঁড়াবে?
আর যদি কারো অসৎ উদ্দেশ্য থাকে কিংবা কেউ তার কোনো স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এমনটি করে থাকে, তাহলে সমাজ ও রাষ্ট্রের অবস্থা তো হবে আরো ভয়াবহ। যেমন, কোনো অসাধু ছেলে যদি কোনো মেয়ের সাথে প্রতারণা করে। তার সাথে সম্পর্কে জড়ায়। কৌশলে তার কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয় এবং তাকে মিথ্যা আশ্বাস দেয়। এরপর মেয়েটি বিয়ের জন্য চাপ তৈরি করলে ছেলেটি নিজেকে মেয়ে দাবি করে বসল এবং মেয়েটির নামে থানায় নারী নির্যাতনের মামলা ঠুকে দিল। তাহলে এর মীমাংসার কোনো পথ বা উপায় কি কেউ একটু বাতলে দিতে পারবেন?!
মোটকথা, কোনো ছেলে বা মেয়ে যখন তখন নিজেকে বিপরীত লিঙ্গের মনে করলেই যদি তাকে সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বিপরীত লিঙ্গের বলেই মেনে নিতে হয়, তাহলে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের বিপর্যয় কোন্ স্তরে গিয়ে পৌঁছবে, কেউ কি তা একটু ভেবে দেখেছেন?
প্রাতিষ্ঠানিক জটিলতা এড়ানোর জন্য কেউ হয়তো পরামর্শ দেবেন, যখনই কারো বিপরীত লিঙ্গের মনে হবে তখন সাথে সাথেই তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট অফিসে গিয়ে লিঙ্গ পরিবর্তনের ঘোষণা দেবেন এবং অন্যান্য তথ্য সংশোধন করে নেবেন। জী, এটাও একটা সহজ(?) সমাধান। ডিজিটাল থেকে স্মার্ট দেশে পদার্পণের দাবিদার বাংলাদেশে বর্তমান জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা স্মার্ট কার্ডে কারো নাম ভুল হলে কিংবা ভুল বানান সংশোধনের জন্য যে সময় ও প্রক্রিয়ার মুখোমুখি হতে হয়, সেখানে সকাল-বিকাল; বরং যখন তখন একজন নাগরিকের তথ্য সংশোধন ও হালনাগাদকরণ সত্যি অনেক সহজ সমাধানই বটে।
আচ্ছা, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট না হয় বাদই দিলাম। কোনো মুসলিম দেশের কথাও না হয় না-ই বললাম। অবাধ মেলামেশার দেশগুলোর কথাই একটু ভেবে দেখুন তো। যেসব দেশে অবাধ মেলামেশা ও বিকৃত উপায়ে প্রবৃত্তি চরিতার্থ করার সুযোগ থাকে এবং আইনী ও সামাজিকভাবেই তা বৈধ, ঐসব দেশের অবস্থাটাইবা কী হবে? আর অবাধ মেলামেশার দেশ বা সমকামিতাকে আইনীভাবে বৈধতা দেয়া দেশগুলোতেইবা কেন প্রয়োজন পড়বে ট্রান্সজেন্ডারবাদকে প্রতিষ্ঠা করার? সেসব দেশে তো যে কেউ যথেচ্ছভাবে প্রবৃত্তি চরিতার্থের সুযোগ পায়। এর পরও কেন সেখানে ট্রান্সজেন্ডারবাদ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন থাকে? আর সেসব দেশগুলোতে কি আসলেই ট্রান্সজেন্ডারবাদকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া সম্ভব? না। সেসব দেশেও এটাকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া সম্ভব নয়। কেননা, আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে খুনের দায়ে ৩০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত ২৭ বছর বয়সী ডেমি মাইনর নামের এক ট্রান্স নারীকে মহিলা কারাগারে রাখার পর তার দ্বারা সেখানে দুইজন নারী সহবন্দি গর্ভবতী হওয়ার ঘটনায় কারা কর্তৃপক্ষ তাকে তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের একটি কারাগারে স্থানান্তর করতে বাধ্য হয়েছেন।
কেউ হয়তো বলবেন, কারা কর্তৃপক্ষের উচিত ছিল, ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য পৃথক সেলের ব্যবস্থা করা। আচ্ছা, মেনে নিলাম এটিও একটি সহজ ব্যবস্থা। কিন্তু প্রশ্ন হল, ট্রান্সজেন্ডারদের সবাইকে যদি পৃথক সেলেই রাখা হয়, তাহলে কি এতে ট্রান্সজেন্ডারবাদের প্রতিষ্ঠা হল? কারণ ট্রান্সজেন্ডারবাদের দাবি তো হল, কোনো ছেলে নিজেকে মেয়ে মনে করলে তাকে মেয়ে হিসেবে বিবেচনা করতে হবে আর কোনো মেয়ে নিজেকে ছেলে মনে করলে তাকে ছেলে বিবেচনা করতে হবে। তাহলে বাস্তবে তো তাদের দাবি মানা হল না। তাদেরকে বরং তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবেই বিবেচনা করা হল। তাহলে আদৌ কি ট্রান্সজেন্ডারবাদকে সেসব দেশে প্রতিষ্ঠা দেওয়া সম্ভব?
এবার দেখা যাক, যুক্তির বিচারেও কি ট্রান্সজেন্ডারবাদকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া সম্ভব?
না। সাধারণ যুক্তির বিচারেও ট্রান্সজেন্ডারবাদকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া সম্ভব নয়। কেননা আমরা দেখি, মানুষ সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। পুরুষ ও নারী। প্রত্যেকের শরীর ও মন ভিন্ন ভিন্ন। মেয়েরা নিজেকে যতই পুরুষের সমান বলে দাবি করুক না কেন, প্রকৃতপক্ষে তা কখনও সম্ভব নয়। কারণ শারীরিক গঠন, শক্তি, বুদ্ধিমত্তা ও মন-মানসিকতায় নারীর পক্ষে কখনও পুরুষের সমান হওয়া সম্ভব নয়। এছাড়াও মেয়েদের রয়েছে বহুবিধ দুর্বলতা। এতকিছুর পরও একজন মেয়ে নিজেকে ছেলে দাবি করলে বা মনে করলেই সে ছেলে হয়ে যেতে পারে না। এমনকি সার্জারি করে ছেলেদের অঙ্গ প্রতিস্থাপন করলেও এবং হরমোনের পাওয়ারফুল ঔষধ সেবনের পরও তার পক্ষে ছেলের সমান হওয়া সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে একজন ছেলে সার্জারির মাধ্যমে মেয়েদের সকল অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে নিলেও সে মেয়ে হয়ে যায় না। আর এ কারণেই দেখা যায়, ট্রান্স নারীর সাথে সাধারণ নারীরা পেরে উঠতে পারে না। যেমন, আউট স্পোর্টস নামের একটি ওয়েব সাইটে ২৩ জন ট্রান্স নারীর উল্লেখ করা হয়েছে। যারা বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় মেয়েদের ইভেন্টে অংশগ্রহণ করে জয়ী হয়েছে। ―আউট স্পোর্টস, ৬ আগস্ট ২০২১
এ কথা তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে, একজন ট্রান্স নারী নারীদের ইভেন্টে অংশগ্রহণ করলেও বাস্তবে সে তো পুরুষ। তাই সাধারণ নারীরা তার সাথে পেরে উঠবে কীভাবে? ফলে স্বাভাবিকভাবেই মহিলা ইভেন্টে ট্রান্স নারীর অংশগ্রহণ নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
আর সঙ্গত কারণেই অবাধ মেলামেশা ও সমকামিতার দেশ এবং পশ্চিমা দেশগুলোতেও ট্রান্সজেন্ডারবাদকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়নি। সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ঘোষণা দিয়েছেন, কেউ চাইলেই লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারে না। ―দৈনিক প্রথম আলো, ০৬ অক্টোবর ২০২৩
রাশিয়ার সর্বোচ্চ আদালত ‘আন্তর্জাতিক এলজিবিটি পাবলিক মুভমেন্ট’কে একটি চরমপন্থী সংগঠন ঘোষণা করেছে এবং দেশজুড়ে এর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করেছে। ―বিবিসি, ৩০ নভেম্বর ২০২৩; সিএনএন, ৩০ নভেম্বর ২০২৩; দ্য গার্ডিয়ান, ৩০ নভেম্বর ২০২৩
ফেব্রুয়ারিতে সিংহুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাসে রঙধনু পতাকা বিতরণের দায়ে গ্রেপ্তার করা হয়। ―দ্য ডিপ্লোমেট, ২৮ এপ্রিল ২০২৩; নিউ ইয়র্ক টাইমস, ৩ জুন ২০২৩
উগান্ডায় সমকামিতা আগে থেকেই অবৈধ ছিল। কিন্তু মে মাসে নতুন আইনের মাধ্যমে এর শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নির্ধারণ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক উগান্ডার নতুন ঋণ স্থগিত করেছে। ―বিবিসি নিউজ, ৯ আগস্ট ২০২৩; রয়টার্স, ৯ আগস্ট ২০২৩
মালয়েশিয়ায় সমকামিতা নিষিদ্ধ। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা মে মাসে দেশের ১১টি শপিং মলের সোয়াচ স্টোরে এলজিবিটি উপাদান সম্বলিত টাইমপিস উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কেউ এ ধরনের সামগ্রী মুদ্রণ, আমদানি, উৎপাদন করলে ... অথবা কারো কাছে এ ধরনের সামগ্রী পাওয়া গেলে তার ৩ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে। আর কেউ এ ধরনের ঘড়ি পরলে বা বিতরণ করলে তার ২০ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা হতে পারে। ―দ্য গার্ডিয়ান, ১০ আগস্ট ২০২৩
কাতার ফুটবল বিশ্বকাপে ট্রান্সজেন্ডারদের প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি। ―সিএনএন, ১৯ নভেম্বর ২০২২; দ্য গার্ডিয়ান, ১৩ মে ২০২২
১৯ মে ২০২৩ শুক্রবার পাকিস্তানের ফেডারেল শরীয়ত কোর্ট (এফএসসি) কোনো ব্যক্তি ইচ্ছামতো তার লিঙ্গ পরিবর্তন করতে পারবেন না এবং ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি (অধিকার সুরক্ষা) আইন, ২০১৮-এর কয়েকটি ধারা শরীয়া পরিপন্থী আখ্যা দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে।
ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি (অধিকার সুরক্ষা) আইন, ২০১৮ পাশের পর সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে দায়ের করা পিটিশনের জবাবে আদালত এই রায় প্রদান করেন।
বিস্তারিত রায়ে বলা হয়েছে, আমরা এই উপসংহারে পৌঁছেছি যে, কুরআন ও সুন্নাহর ইসলামী বিধান অনুসারে একজন ব্যক্তির লিঙ্গ তার জৈবিক লিঙ্গের অধীন। সুতরাং একজন ব্যক্তির লিঙ্গ অবশ্যই তার জৈবিক লিঙ্গের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।...
রায়ে আরো উল্লেখ করা হয় যে, আমরা লক্ষ্য করেছি, ধারা-২ (এন) ও ইমপ্লিমেন্টেড অ্যাক্টের পাঁচটি ভিন্ন পরিভাষা; যথা (১) উভলিঙ্গ, (২) নপুংসক (৩) রূপান্তরকামী পুরুষ, (৪) রূপান্তরকামী নারী এবং (৫) খাজাসিরা ব্যক্তিদেরকে ‘হিজড়া ব্যক্তি’র একই সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ উভলিঙ্গ, নপুংসক ও খাজাসিরা শব্দগুলি কোনো ব্যক্তির যৌন বৈশিষ্ট্যের জৈবিক বৈচিত্র্যকে বোঝায়, যা পুরুষ বা মহিলা শ্রেণিবিন্যাসের সাথে খাপ খায় না। অন্যদিকে রূপান্তরকামী পুরুষ ও রূপান্তরকামী নারী বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝায়, যার স্ব-অনুভূত লিঙ্গ পরিচয় তাদের জন্মের সময় নির্ধারিত লিঙ্গ বা জৈবিকভাবে তাদের লিঙ্গ থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে। ―ডন, ১৯ মে ২০২৩
বোঝা গেল, সাধারণ যুক্তির বিচারেও ট্রান্সজেন্ডারবাদের মতো একটি উদ্ভট ও অসার মতবাদের প্রতিষ্ঠা পাওয়া সম্ভব নয়।
বস্তুত এটা কোনো মতবাদই নয়; বরং স্রেফ কোনো পাগলের পাগলামি ও তার বিকৃত মন-মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ।
তথ্যসূত্র: মাসিক আলকাউসার
==========================
প্রথম পর্ব:-
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফ...ব#post197824
তৃতীয় পর্ব:-
https://dawahilallah.com/forum/মূল-ফ...ব#post197884
Comment