কোনো সভ্য সমাজে প্রচলিত রীতিনীতি কে সংস্কৃতি বলা হয়। সংস্কৃতি মানুষের শুভ বোধ ও শুচিন্তার বিকাশের জন্য। যেনতেন প্রকারে আনন্দ বিনোদনের জন্য নয়। অসংযত আমোদ ফুর্তিকে তাই সংস্কৃতি বলা যায় না। তাকে বলা যায় অপসংস্কৃতি। ভোগবাদী উশৃঙ্খল জীবনের যে আনন্দ, তা সংস্কৃতি নয়।
সংস্কৃতি প্রসঙ্গে দুটি শব্দ উল্লেখিত হয়েছে-সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি। এখন প্রশ্ন হল, সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতির পার্থক্য কে নির্ধারণ করবে। মানব বিবেক? পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মানব বিবেক সংস্কৃতি-অপসংস্কৃতির সর্বসম্মত কোনো সংজ্ঞা নির্র্ধারণে সক্ষম হয়নি।
স্মরণীয় চিন্তাবিদ আল্লামা মুশাহিদ রহ. যথার্থই লিখেছেন-কোনো মানুষের বিবেক যতই সম্পূর্ণ ও পরিপূর্ণ হোক তা ক্রটিমুক্ত হতে পারে না। সে কারণেই তার বাহ্য ও অন্তর্গত, বস্তুগত ও আত্মিক কোনো শক্তিই পূর্ণাঙ্গ নয়। তাই তার প্রতিটি কাজে শুদ্ধতার সাথে ভুলের, গুণের সাথে ত্রট্টটির এবং স্মৃতির সাথে বিস্মৃতির আশঙ্কা থেকেই যায়। আর তা কেনইবা থাকবে না? পরিবর্তনশীল ক্ষণস্থায়ী ও আধারাবৃত সত্তার তুলনা ত্রট্টটিহীন জ্যোতির্ময় সত্তার সাথে কী করে হতে পারে? মানুষ যেমন বর্ণ ও আকৃতিতে একে অপরের চেয়ে ভিন্ন তেমনিভাবে চিন্তা ও অভ্যন্তরীন শক্তির বিচারেও তারা একে অন্যের চেয়ে ভিন্ন। বিবেকের সর্ব্বোচ্চ শিখরে উপনীত হওয়া সত্ত্বেও দার্শনিকদের পারস্পরিক মতবিরোধের দশা এই ছিল যে, শেষ পর্যন্ত তারা নিজেদের অসম্পূর্ণতার কথা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন। দার্শনিক জয়েনিট বলেন, আমাদের সত্যের সন্ধান লাভের আশা ছেড়ে দেওয়া উচিত। শুধু একটি উপায়েই আমরা সত্যে উপনীত হতে পারি। তা হচ্ছে এ কথা মেনে নেওয়া যে, সত্যের জ্ঞান সরাসরি সেই সত্তার পক্ষ থেকেই প্রদত্ত হয়ে থাকে যিনি সত্যের চিরন্তন উৎস। অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং এক্ষেত্রে এ-ই চুড়ান্ত সমাধান। মিস্টার লিউস বলেন, মানুষের কাছে কোনো নিশ্চিত জ্ঞান নেই। হ্যাঁ তা আছে আল্লাহর কাছে এবং জ্ঞানের দাবীদার অজ্ঞ মানুষ তা আল্লাহর কাছ থেকে এভাবে শিখে যেভাবে শিশুরা বড়দের কাছ থেকে শিখে। (ফাতহুল কারীম ফি ছিয়াছাতিন্নাবিয়্যিল আমীন)
দুটি উদাহরণ দেওয়া যাক। মদ ও মাদক দ্রব্য জীবনের জন্য উপকারী না ক্ষতিকর এ নিয়ে এ আধুনিক যুগেও বিভ্রান্তি লক্ষ করা যায়। পাশ্চাত্যের ভোগবাদী জীবন ব্যবস্থায় মদ মানুষের জীবনের প্রায় নিত্যসঙ্গী। কার্যত এবং আইনত তারা মদের শুদ্ধতা ও বৈধতার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। মদ ও মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ছাড়া পাশ্চাত্যের ভোগবাদীরা তাদের জীবনকে কল্পনা করতে পারে না। তারা মনে করে জীবনের আনন্দ ফুর্তির জন্য মদের বিকল্প নেই। পাশ্চাত্য জীবনবোধে আক্রান্ত আমাদের দেশীয় বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ ঘোষণা দিয়ে মদপান করেছে। প্রয়াত নাস্তিক হুমায়ূন আজাদ প্রকাশ্যে জানিয়েছিল আমি মদ খাই, শামসুর রাহমান মদ খান। সে এতে দোষের কিছু দেখেনি। তাহলে পাশ্চাত্য বিবেকের কাছে মদ কোনো অশুদ্ধ জিনিস নয়। সে কারণেই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বিবেকের পক্ষ থেকে তা অনুমোদিত। এমনিভাবে সমকামিতার মতো একটি চরম অনৈতিক কাজও কথিত সভ্যতার স্বর্র্গরাজ্য আমেরিকায় কোনো অপরাধ নয়। তাই সরকারিভাবে এ অনৈতিক কাজটিও সেদেশে অনুমোদিত। কিছুদিন পূর্বে একজন সিনেটর সমকামিতার বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করলে তা নাকচ হয়ে যায়। তাহলে দেখা যায় যে, মদ্যপান ও সমকামিতার মতো দুটি চরম গর্হিত কাজের ব্যাপারেও শুদ্ধাশুদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে মানুষের বিবেক ভুল করেছে এবং একটি পাশবিক আচার একটি জাতির অনুমোদন লাভ করেছে। অতএব এ কথা স্পষ্ট যে, কোনো কাজের শুদ্ধাশুদ্ধির বিচার মানব, বিবেকের উপর ছেড়ে দেওয়া যায় না। এ বিচারটি এমন এক সত্তার হাতে ছেড়ে দিতে হবে যিনি সকল ভুল বিস্মৃতির উর্ধ্বে মাহা, প্রজ্ঞাবান, তিনিই বলে দেবেন, কোনটি ভালো কোনটি মন্দ। কোনটি শুদ্ধ, কোনটি অশুদ্ধ। তিনি তা বলেও দিয়েছেন পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে। সুতরাং মুক্তবুদ্ধির পথে শুদ্ধাশুদ্ধির বিচার করতে যাওয়ার মতো নিরর্থ ও মূঢ়তার কাজ আর হতেই পারে না।
উল্লিখিত উদাহরণ দুটির ব্যাপারেও মহান বিচারকের সিদ্ধান্ত আমরা জানি। তিনি জানিয়েছেন যে, মদের মধ্যে কিছু উপকারিতা থাকলেও এর ক্ষতি উপকারিতার চেয়ে প্রবল। আর সমকামিতার অপরাধে তিনি কওমে লুতকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলেন। তাই আমরা বুঝতে পারি যে, মদপান ও সমকামিতা মনুষ্যত্বের পরিপন্থী এবং চরম গর্হিত অপরাধ। এ দু’টি কাজ যদি কোনো জাতির জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে পড়ে তাহলে চোখ বন্ধ করে বলা যায় যে, সে জাতির জীবন ক্লেদাক্ত ও অভিশপ্ত। সে জাতির নৈতিকতা ও মানবতা নিহত হয়েছে এবং তারা তাদের অবশ্যম্ভাবী বিনাশের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
দুই.
জীবনের সর্বত্র সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও ওই মূলনীতি অলংঘনীয়। কোনো সংস্কৃতি ওই মূলনীতি মান্য করা না হলে সে সংস্কৃতির যে বিপর্যয় অনিবার্য তাতে সন্দেহের সুযোগ নেই। মহান আল্লাহর দেওয়া রীতি নীতিকে অমান্য করে যে জাতি সংস্কৃতি রচনা করে তাদের শুভ বোধ ও শুভ চিন্তার অপমৃত্যু ঘটে। তাদের জীবনে নেমে আসে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা। তারা নিঃসীম অন্ধকারে হারিয়ে যায়। ভালো মন্দের কোনো ভেদজ্ঞান তাদের আর থাকে না। একদিন যখন সে ভদাভেদ ফিরে আসে তখন আর কোনো ফল হয় না। তখন তাদেরকে বলা হয়, ‘এখন আমি তোমার সম্মুখ হইতে পর্দা উন্মোচন করিয়াছি। অদ্য তোমার দৃষ্টি প্রখর।’
তিন.
সংস্কৃতির এই মূল্যায়ন মাথায় রেখে এবার আমরা বাংলাদেশের সংস্কৃতির দিকে তাকাতে পারি। দেশটির সংস্কৃতির দিকে তাকালে আমাদের হৃদয় বেদনাহত হয় এবং অপমানবোধে মাথা নত হয়ে আসে। সেই সঙ্গে আসে অপরাধবোধও আমরা মূল্যবোধের পক্ষের শক্তি তাহলে এদেশে এতকাল ধরে করছিটা কী? কিন্তু এই বেদনা, অপমান আর অপরাধ বোধের জন্য অন্তর্ঘাতের পথ বেছে নেওয়াও তো কোনো সমাধান নয়। বিবেক, বাস্তবতা ও ইতিহাসের সত্য এই যে, যেকোনো বৃহত্তর পরিবর্তনের জন্য প্রথম কর্তব্য ও সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ হল মনস্তাত্বিক বিপ্লব। শক্তির অস্ত্র যেখানে অচল বুদ্ধির অস্ত্র সেখানে সচল। তাই মানুষের বিবেকবোধকে নাড়া দেওয়া যদি সম্ভব হয় তাহলে একটি বড় অংশকে সত্যের পক্ষে আনা যায় এবং ঘরে ঘরে সত্যের বিজয়ের পথ উন্মুক্ত হয়। আর তখন অন্যায় ও অসুন্দরে চরমভাবে আক্রান্ত শ্রেণীটিকেও শাসন করা সহজ হয়।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের দিকে তাকালে রুচিবান যে কোনো ব্যক্তি বলতে পারেন যে এ সংস্কৃতি এখন দুর্যোগের এক কলঙ্কিত কাল অতিক্রম করছে। আমাদের দেশের কথিত আধুনিক জীবনে সংস্কৃতির নামে যা কিছু চর্চিত হয় এবং প্রচারমাধ্যমে অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে বাঙ্গালী সংস্কৃতি বলে যা কিছু তুলে ধরা হয় সুস্থ সংস্কৃতি এবং সত্যিকার রুচিবোধের সঙ্গে তার কোনো সংযোগই নেই। এ সংস্কৃতির প্রায় পুরোটাই পাশ্চাত্যের ভোগবাদী উশৃঙ্খল জীবনাচার দ্বারা প্রভাবিত ও লাঞ্ছিত।
উদাহরণ হিসেবে এদেশে সদ্য উদযাপিত বৈশাখী সংস্কৃতির কথাই ধরা যাক। এ সংস্কৃতির কি কোনো নৈতিক মান আছে? পহেলা বৈশাখে এদেশের নারীরা লাল শাদা শাড়ি পড়ে রাজপথে বেরিয়ে আসে। “এসো হে বৈশাখ এসো এসো” এর সুরে সুরে বর্ষবরণের আনন্দে মেতে ওঠে। তরণীরা তো বটেই বয়স্কা গৃহিণীরাও দলে দলে বেরিয়ে আসে এবং ‘মঙ্গল শোভাযাত্রায়’ যোগ দেয়।
আবার এক শ্রেণীর অতি আধুনিক গার্ল মেলায় তুলি হাতে অপেক্ষমান তরুণদের কাছে গিয়ে নিজের সুন্দর গালটি পেতে দেয় কিছু এঁকে দেওয়ার জন্য। তরুণরা তাদের গালে দোযখের তিলক এঁকে দেয়। বৈশাখী অনর্থের স্রোতে অবগাহনকারী সকল নারীদের ব্যাপারেও তো মহান আল্লাহর এই আদেশ ছিল ‘তোমরা মূর্খতার যুগের নারীদের মতো (আব্রুহীন হয়ে) বের হয়ো না’। তাহলে বাংলাদেশি নারীদের এই বৈশাখী সংস্কৃতিকে কী নাম দেওয়া যায়? একে নিরেট ‘বেহায়াপনা’ ছাড়া আর কিছু বলা যায় কি? বস্তুত এসব অনর্থের মূল্যায়নে ‘বেহায়াপনা’র চেয়ে ন্যায়ানুগ শব্দ আর নেই। বৈশাখী অর্নথ উদযাপনের পরের দিন সবগুলো জাতীয় দৈনিকে তার সচিত্র সংবাদ পরিবেশিত হয় এবং বাঙ্গালী সংস্কৃতির জয়ধ্বনি এমনভাবে উচ্চারিত হয় যাতে ওসব অনর্থ আরও উৎসাহিত হয়।
পহেলা বৈশাখের আরেকটি অনর্থ এই যে, অনুষ্ঠানের নামে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণ মঞ্চ সাজিয়ে গানের আসর জমানো হয়। আসর মাতিয়ে তোলার জন্য কিন্নরকণ্ঠী গায়িকাদের ভাড়া করে আনা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এসব কথিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য স্থানীয় কর্তাব্যক্তিদের ঢের অনুদান পাওয়া যায় বলেও জানা যায়। আরবের অন্ধকার যুগেও নর্তকী ক্রয় করে গানের আসর জমানোর প্রথা ছিল। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ এই নর্তকীদের বলেছেন ‘লাহ্ওয়াল হাদীস’ বা অসার বাক্য। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য (নর্তকী) ক্রয় করে আনে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করে। তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি’। -সূরা লুকমান ৬
আজ আমাদের সেই শত শত বর্ষের পুরনো অপসংস্কৃতি দেখতে হচ্ছে। তাহলে আমাদের সমাজ কি সেই অন্ধকারের দিকে ফিরে যায়নি? এমন অন্যায় কাজে যারা আর্থিক সহায়তা দেন তারা কি অর্থের বিনিময়ে নিজেদের জন্য আখেরাতের আযাব ক্রয় করছেন না? পবিত্র কুরআন তো আমাদেরকে সে কথাই বলেছে।
চার
অপসংস্কৃতির কালো স্রোতটি যেহেতু প্রচণ্ডবেগে বহমান তাই এ সংস্কৃতির অসারতা স্বীকার করেও অনেকে পরিবেশের দোহাই দিয়ে এর স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। আমাদের পরিচিত ও স্বজনদের যখন আমরা অপসংস্কৃতির অসারতার কথা বলি তখন তারা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার প্রয়োজনীয়তা দাবি করে। তারা বুঝতে চায় না যে আল্লাহ ও রাসূলের বাধ্য থাকা এবং কুরআন হাদীসের মূল্যবোধকে মান্য করা তার চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। বিবেকের কি করুণ দূর্গতি! আমি এসব তরুণ-তরুণীদেরকে আমাদের পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কৈশোরের ঘটনাটি মনে করিয়ে দিতে চাই। মুশরিকরা যখন তাঁকে মেলায় যাওয়ার জন্য আহ্বান করেছিল তখন তিনি তা কৌশলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পবিত্র কুরআনে তাঁর সে ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে- অতঃপর সে তারকারাজির দিকে একবার তাকাল এবং বলল, ‘আমি অসুস্থ’। অতঃপর তারা তাকে পাশ্চাত্যে রেখে চলে গেল। -সূরা সাফ্ফাত ৮৮, ৮৯
যারা অপসংস্কৃতির তা-বে যোগ দিতে অনিচ্ছুক তাদের জন্য হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ওই ঘটনায় রয়েছে চমৎকার শিক্ষা।
পাঁচ
বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে যে অন্ধকার নেমেছে তা যে একটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তাতে সন্দেহ নেই। অপসংস্কৃতির দাপট তো আছেই সেই সঙ্গে আছে এ অনর্থের পক্ষে প্রচারণার তা-ব। বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ প্রায় সবগুলো জাতীয় দৈনিক অপসংস্কৃতির পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। দু’একটি দৈনিক এ অপসংস্কৃতির অবসান কামনা করলেও পত্রিকার কাটতির দিক চিন্তা করে এর বিরুদ্ধে তেমন জোরালো ভূমিকা রাখতে সাহসী হয় না। আমাদের এই রাজধানীতে ধর্মীয় মূল্যবোধের পক্ষে একটি কণ্ঠ সরব হলে তার বিরুদ্ধে অন্তত একশটি কণ্ঠ ঘেউ ঘেউ করে ওঠে এবং সত্যের পক্ষে একটি কলম সচল হলে তার বিরুদ্ধে অন্তত দশটি কলম গজ গজ করে ওঠে। কিন্তু তবুও ভয়ের কিছু নেই। কারণ আলো এলে অন্ধাকার নিঃশব্দে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়াই আঁধারের স্বভাব। সেজন্যেই তো তুচ্ছ দিয়াশলাইয়ের সামান্য আলোয় রাশি রাশি অন্ধকার নিমিষে পালিয়ে যায়। তাই আসুন আমরা আমাদের দুর্বল কণ্ঠ, দুর্বল কলম আর দুর্বল মাধ্যম দিয়েই অসত্য ও অপসংস্কৃতির অন্ধকারে সত্যের আলো জ্বেলে যাই। কুয়াশার জাল দীর্ঘকাল সুর্যের মুখ ঢেকে রাখতে পারে না। কবি বলেছেন ‘মেঘ দেখে তুই করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে’। যদিও আমরা প্রায় সব দিক দিয়েই দুর্বল কিন্তু আমাদের আছে একটি বল। তা হল সত্যের বল। আমরা একটি চিরায়ত নির্ভুল সত্যের পক্ষে। আর অপসংস্কৃতির তল্পীবাহকরা বিকার চিন্তাপ্রসূত কিছু মনগড়া রীতি-নীতির পক্ষে। সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত, মিথ্যার বিনাশ অবশ্যম্ভাবী।
অতএব সংস্কৃতির আলোর নামে অপসংস্কৃতির যে অন্ধকার তা একদিন অপসৃত হবেই ইনশাআল্লাহ। কিন্তু সে অন্ধকার সরাতে আমাদের কদম কদম এগিয়ে যেতে হবে।
__________________________________
তথ্যসূত্র :- মাসিক আলকাউসার
সংস্কৃতি প্রসঙ্গে দুটি শব্দ উল্লেখিত হয়েছে-সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতি। এখন প্রশ্ন হল, সংস্কৃতি ও অপসংস্কৃতির পার্থক্য কে নির্ধারণ করবে। মানব বিবেক? পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত মানব বিবেক সংস্কৃতি-অপসংস্কৃতির সর্বসম্মত কোনো সংজ্ঞা নির্র্ধারণে সক্ষম হয়নি।
স্মরণীয় চিন্তাবিদ আল্লামা মুশাহিদ রহ. যথার্থই লিখেছেন-কোনো মানুষের বিবেক যতই সম্পূর্ণ ও পরিপূর্ণ হোক তা ক্রটিমুক্ত হতে পারে না। সে কারণেই তার বাহ্য ও অন্তর্গত, বস্তুগত ও আত্মিক কোনো শক্তিই পূর্ণাঙ্গ নয়। তাই তার প্রতিটি কাজে শুদ্ধতার সাথে ভুলের, গুণের সাথে ত্রট্টটির এবং স্মৃতির সাথে বিস্মৃতির আশঙ্কা থেকেই যায়। আর তা কেনইবা থাকবে না? পরিবর্তনশীল ক্ষণস্থায়ী ও আধারাবৃত সত্তার তুলনা ত্রট্টটিহীন জ্যোতির্ময় সত্তার সাথে কী করে হতে পারে? মানুষ যেমন বর্ণ ও আকৃতিতে একে অপরের চেয়ে ভিন্ন তেমনিভাবে চিন্তা ও অভ্যন্তরীন শক্তির বিচারেও তারা একে অন্যের চেয়ে ভিন্ন। বিবেকের সর্ব্বোচ্চ শিখরে উপনীত হওয়া সত্ত্বেও দার্শনিকদের পারস্পরিক মতবিরোধের দশা এই ছিল যে, শেষ পর্যন্ত তারা নিজেদের অসম্পূর্ণতার কথা স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন। দার্শনিক জয়েনিট বলেন, আমাদের সত্যের সন্ধান লাভের আশা ছেড়ে দেওয়া উচিত। শুধু একটি উপায়েই আমরা সত্যে উপনীত হতে পারি। তা হচ্ছে এ কথা মেনে নেওয়া যে, সত্যের জ্ঞান সরাসরি সেই সত্তার পক্ষ থেকেই প্রদত্ত হয়ে থাকে যিনি সত্যের চিরন্তন উৎস। অর্থাৎ স্বয়ং আল্লাহর পক্ষ থেকে এবং এক্ষেত্রে এ-ই চুড়ান্ত সমাধান। মিস্টার লিউস বলেন, মানুষের কাছে কোনো নিশ্চিত জ্ঞান নেই। হ্যাঁ তা আছে আল্লাহর কাছে এবং জ্ঞানের দাবীদার অজ্ঞ মানুষ তা আল্লাহর কাছ থেকে এভাবে শিখে যেভাবে শিশুরা বড়দের কাছ থেকে শিখে। (ফাতহুল কারীম ফি ছিয়াছাতিন্নাবিয়্যিল আমীন)
দুটি উদাহরণ দেওয়া যাক। মদ ও মাদক দ্রব্য জীবনের জন্য উপকারী না ক্ষতিকর এ নিয়ে এ আধুনিক যুগেও বিভ্রান্তি লক্ষ করা যায়। পাশ্চাত্যের ভোগবাদী জীবন ব্যবস্থায় মদ মানুষের জীবনের প্রায় নিত্যসঙ্গী। কার্যত এবং আইনত তারা মদের শুদ্ধতা ও বৈধতার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। মদ ও মাদকদ্রব্যের ব্যবহার ছাড়া পাশ্চাত্যের ভোগবাদীরা তাদের জীবনকে কল্পনা করতে পারে না। তারা মনে করে জীবনের আনন্দ ফুর্তির জন্য মদের বিকল্প নেই। পাশ্চাত্য জীবনবোধে আক্রান্ত আমাদের দেশীয় বুদ্ধিজীবীদের কেউ কেউ ঘোষণা দিয়ে মদপান করেছে। প্রয়াত নাস্তিক হুমায়ূন আজাদ প্রকাশ্যে জানিয়েছিল আমি মদ খাই, শামসুর রাহমান মদ খান। সে এতে দোষের কিছু দেখেনি। তাহলে পাশ্চাত্য বিবেকের কাছে মদ কোনো অশুদ্ধ জিনিস নয়। সে কারণেই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বিবেকের পক্ষ থেকে তা অনুমোদিত। এমনিভাবে সমকামিতার মতো একটি চরম অনৈতিক কাজও কথিত সভ্যতার স্বর্র্গরাজ্য আমেরিকায় কোনো অপরাধ নয়। তাই সরকারিভাবে এ অনৈতিক কাজটিও সেদেশে অনুমোদিত। কিছুদিন পূর্বে একজন সিনেটর সমকামিতার বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব উপস্থাপন করলে তা নাকচ হয়ে যায়। তাহলে দেখা যায় যে, মদ্যপান ও সমকামিতার মতো দুটি চরম গর্হিত কাজের ব্যাপারেও শুদ্ধাশুদ্ধির সিদ্ধান্ত নিতে মানুষের বিবেক ভুল করেছে এবং একটি পাশবিক আচার একটি জাতির অনুমোদন লাভ করেছে। অতএব এ কথা স্পষ্ট যে, কোনো কাজের শুদ্ধাশুদ্ধির বিচার মানব, বিবেকের উপর ছেড়ে দেওয়া যায় না। এ বিচারটি এমন এক সত্তার হাতে ছেড়ে দিতে হবে যিনি সকল ভুল বিস্মৃতির উর্ধ্বে মাহা, প্রজ্ঞাবান, তিনিই বলে দেবেন, কোনটি ভালো কোনটি মন্দ। কোনটি শুদ্ধ, কোনটি অশুদ্ধ। তিনি তা বলেও দিয়েছেন পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে। সুতরাং মুক্তবুদ্ধির পথে শুদ্ধাশুদ্ধির বিচার করতে যাওয়ার মতো নিরর্থ ও মূঢ়তার কাজ আর হতেই পারে না।
উল্লিখিত উদাহরণ দুটির ব্যাপারেও মহান বিচারকের সিদ্ধান্ত আমরা জানি। তিনি জানিয়েছেন যে, মদের মধ্যে কিছু উপকারিতা থাকলেও এর ক্ষতি উপকারিতার চেয়ে প্রবল। আর সমকামিতার অপরাধে তিনি কওমে লুতকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিলেন। তাই আমরা বুঝতে পারি যে, মদপান ও সমকামিতা মনুষ্যত্বের পরিপন্থী এবং চরম গর্হিত অপরাধ। এ দু’টি কাজ যদি কোনো জাতির জীবনের অনুষঙ্গ হয়ে পড়ে তাহলে চোখ বন্ধ করে বলা যায় যে, সে জাতির জীবন ক্লেদাক্ত ও অভিশপ্ত। সে জাতির নৈতিকতা ও মানবতা নিহত হয়েছে এবং তারা তাদের অবশ্যম্ভাবী বিনাশের পথে অনেক দূর এগিয়ে গেছে।
দুই.
জীবনের সর্বত্র সংস্কৃতির ক্ষেত্রেও ওই মূলনীতি অলংঘনীয়। কোনো সংস্কৃতি ওই মূলনীতি মান্য করা না হলে সে সংস্কৃতির যে বিপর্যয় অনিবার্য তাতে সন্দেহের সুযোগ নেই। মহান আল্লাহর দেওয়া রীতি নীতিকে অমান্য করে যে জাতি সংস্কৃতি রচনা করে তাদের শুভ বোধ ও শুভ চিন্তার অপমৃত্যু ঘটে। তাদের জীবনে নেমে আসে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা। তারা নিঃসীম অন্ধকারে হারিয়ে যায়। ভালো মন্দের কোনো ভেদজ্ঞান তাদের আর থাকে না। একদিন যখন সে ভদাভেদ ফিরে আসে তখন আর কোনো ফল হয় না। তখন তাদেরকে বলা হয়, ‘এখন আমি তোমার সম্মুখ হইতে পর্দা উন্মোচন করিয়াছি। অদ্য তোমার দৃষ্টি প্রখর।’
তিন.
সংস্কৃতির এই মূল্যায়ন মাথায় রেখে এবার আমরা বাংলাদেশের সংস্কৃতির দিকে তাকাতে পারি। দেশটির সংস্কৃতির দিকে তাকালে আমাদের হৃদয় বেদনাহত হয় এবং অপমানবোধে মাথা নত হয়ে আসে। সেই সঙ্গে আসে অপরাধবোধও আমরা মূল্যবোধের পক্ষের শক্তি তাহলে এদেশে এতকাল ধরে করছিটা কী? কিন্তু এই বেদনা, অপমান আর অপরাধ বোধের জন্য অন্তর্ঘাতের পথ বেছে নেওয়াও তো কোনো সমাধান নয়। বিবেক, বাস্তবতা ও ইতিহাসের সত্য এই যে, যেকোনো বৃহত্তর পরিবর্তনের জন্য প্রথম কর্তব্য ও সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ হল মনস্তাত্বিক বিপ্লব। শক্তির অস্ত্র যেখানে অচল বুদ্ধির অস্ত্র সেখানে সচল। তাই মানুষের বিবেকবোধকে নাড়া দেওয়া যদি সম্ভব হয় তাহলে একটি বড় অংশকে সত্যের পক্ষে আনা যায় এবং ঘরে ঘরে সত্যের বিজয়ের পথ উন্মুক্ত হয়। আর তখন অন্যায় ও অসুন্দরে চরমভাবে আক্রান্ত শ্রেণীটিকেও শাসন করা সহজ হয়।
বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিপর্যয়ের দিকে তাকালে রুচিবান যে কোনো ব্যক্তি বলতে পারেন যে এ সংস্কৃতি এখন দুর্যোগের এক কলঙ্কিত কাল অতিক্রম করছে। আমাদের দেশের কথিত আধুনিক জীবনে সংস্কৃতির নামে যা কিছু চর্চিত হয় এবং প্রচারমাধ্যমে অত্যন্ত দাপটের সঙ্গে বাঙ্গালী সংস্কৃতি বলে যা কিছু তুলে ধরা হয় সুস্থ সংস্কৃতি এবং সত্যিকার রুচিবোধের সঙ্গে তার কোনো সংযোগই নেই। এ সংস্কৃতির প্রায় পুরোটাই পাশ্চাত্যের ভোগবাদী উশৃঙ্খল জীবনাচার দ্বারা প্রভাবিত ও লাঞ্ছিত।
উদাহরণ হিসেবে এদেশে সদ্য উদযাপিত বৈশাখী সংস্কৃতির কথাই ধরা যাক। এ সংস্কৃতির কি কোনো নৈতিক মান আছে? পহেলা বৈশাখে এদেশের নারীরা লাল শাদা শাড়ি পড়ে রাজপথে বেরিয়ে আসে। “এসো হে বৈশাখ এসো এসো” এর সুরে সুরে বর্ষবরণের আনন্দে মেতে ওঠে। তরণীরা তো বটেই বয়স্কা গৃহিণীরাও দলে দলে বেরিয়ে আসে এবং ‘মঙ্গল শোভাযাত্রায়’ যোগ দেয়।
আবার এক শ্রেণীর অতি আধুনিক গার্ল মেলায় তুলি হাতে অপেক্ষমান তরুণদের কাছে গিয়ে নিজের সুন্দর গালটি পেতে দেয় কিছু এঁকে দেওয়ার জন্য। তরুণরা তাদের গালে দোযখের তিলক এঁকে দেয়। বৈশাখী অনর্থের স্রোতে অবগাহনকারী সকল নারীদের ব্যাপারেও তো মহান আল্লাহর এই আদেশ ছিল ‘তোমরা মূর্খতার যুগের নারীদের মতো (আব্রুহীন হয়ে) বের হয়ো না’। তাহলে বাংলাদেশি নারীদের এই বৈশাখী সংস্কৃতিকে কী নাম দেওয়া যায়? একে নিরেট ‘বেহায়াপনা’ ছাড়া আর কিছু বলা যায় কি? বস্তুত এসব অনর্থের মূল্যায়নে ‘বেহায়াপনা’র চেয়ে ন্যায়ানুগ শব্দ আর নেই। বৈশাখী অর্নথ উদযাপনের পরের দিন সবগুলো জাতীয় দৈনিকে তার সচিত্র সংবাদ পরিবেশিত হয় এবং বাঙ্গালী সংস্কৃতির জয়ধ্বনি এমনভাবে উচ্চারিত হয় যাতে ওসব অনর্থ আরও উৎসাহিত হয়।
পহেলা বৈশাখের আরেকটি অনর্থ এই যে, অনুষ্ঠানের নামে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণ মঞ্চ সাজিয়ে গানের আসর জমানো হয়। আসর মাতিয়ে তোলার জন্য কিন্নরকণ্ঠী গায়িকাদের ভাড়া করে আনা হয়। অনেক ক্ষেত্রে এসব কথিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য স্থানীয় কর্তাব্যক্তিদের ঢের অনুদান পাওয়া যায় বলেও জানা যায়। আরবের অন্ধকার যুগেও নর্তকী ক্রয় করে গানের আসর জমানোর প্রথা ছিল। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ এই নর্তকীদের বলেছেন ‘লাহ্ওয়াল হাদীস’ বা অসার বাক্য। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘মানুষের মধ্যে কেউ কেউ অজ্ঞতাবশত আল্লাহর পথ হতে বিচ্যুত করার জন্য অসার বাক্য (নর্তকী) ক্রয় করে আনে এবং আল্লাহর প্রদর্শিত পথ নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রূপ করে। তাদের জন্য রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি’। -সূরা লুকমান ৬
আজ আমাদের সেই শত শত বর্ষের পুরনো অপসংস্কৃতি দেখতে হচ্ছে। তাহলে আমাদের সমাজ কি সেই অন্ধকারের দিকে ফিরে যায়নি? এমন অন্যায় কাজে যারা আর্থিক সহায়তা দেন তারা কি অর্থের বিনিময়ে নিজেদের জন্য আখেরাতের আযাব ক্রয় করছেন না? পবিত্র কুরআন তো আমাদেরকে সে কথাই বলেছে।
চার
অপসংস্কৃতির কালো স্রোতটি যেহেতু প্রচণ্ডবেগে বহমান তাই এ সংস্কৃতির অসারতা স্বীকার করেও অনেকে পরিবেশের দোহাই দিয়ে এর স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়। আমাদের পরিচিত ও স্বজনদের যখন আমরা অপসংস্কৃতির অসারতার কথা বলি তখন তারা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার প্রয়োজনীয়তা দাবি করে। তারা বুঝতে চায় না যে আল্লাহ ও রাসূলের বাধ্য থাকা এবং কুরআন হাদীসের মূল্যবোধকে মান্য করা তার চেয়ে অনেক বেশি প্রয়োজনীয়। বিবেকের কি করুণ দূর্গতি! আমি এসব তরুণ-তরুণীদেরকে আমাদের পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের কৈশোরের ঘটনাটি মনে করিয়ে দিতে চাই। মুশরিকরা যখন তাঁকে মেলায় যাওয়ার জন্য আহ্বান করেছিল তখন তিনি তা কৌশলে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। পবিত্র কুরআনে তাঁর সে ঘটনাটি বর্ণিত হয়েছে এভাবে- অতঃপর সে তারকারাজির দিকে একবার তাকাল এবং বলল, ‘আমি অসুস্থ’। অতঃপর তারা তাকে পাশ্চাত্যে রেখে চলে গেল। -সূরা সাফ্ফাত ৮৮, ৮৯
যারা অপসংস্কৃতির তা-বে যোগ দিতে অনিচ্ছুক তাদের জন্য হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ওই ঘটনায় রয়েছে চমৎকার শিক্ষা।
পাঁচ
বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে যে অন্ধকার নেমেছে তা যে একটি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তাতে সন্দেহ নেই। অপসংস্কৃতির দাপট তো আছেই সেই সঙ্গে আছে এ অনর্থের পক্ষে প্রচারণার তা-ব। বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ প্রায় সবগুলো জাতীয় দৈনিক অপসংস্কৃতির পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। দু’একটি দৈনিক এ অপসংস্কৃতির অবসান কামনা করলেও পত্রিকার কাটতির দিক চিন্তা করে এর বিরুদ্ধে তেমন জোরালো ভূমিকা রাখতে সাহসী হয় না। আমাদের এই রাজধানীতে ধর্মীয় মূল্যবোধের পক্ষে একটি কণ্ঠ সরব হলে তার বিরুদ্ধে অন্তত একশটি কণ্ঠ ঘেউ ঘেউ করে ওঠে এবং সত্যের পক্ষে একটি কলম সচল হলে তার বিরুদ্ধে অন্তত দশটি কলম গজ গজ করে ওঠে। কিন্তু তবুও ভয়ের কিছু নেই। কারণ আলো এলে অন্ধাকার নিঃশব্দে পালিয়ে যায়। পালিয়ে যাওয়াই আঁধারের স্বভাব। সেজন্যেই তো তুচ্ছ দিয়াশলাইয়ের সামান্য আলোয় রাশি রাশি অন্ধকার নিমিষে পালিয়ে যায়। তাই আসুন আমরা আমাদের দুর্বল কণ্ঠ, দুর্বল কলম আর দুর্বল মাধ্যম দিয়েই অসত্য ও অপসংস্কৃতির অন্ধকারে সত্যের আলো জ্বেলে যাই। কুয়াশার জাল দীর্ঘকাল সুর্যের মুখ ঢেকে রাখতে পারে না। কবি বলেছেন ‘মেঘ দেখে তুই করিসনে ভয় আড়ালে তার সূর্য হাসে’। যদিও আমরা প্রায় সব দিক দিয়েই দুর্বল কিন্তু আমাদের আছে একটি বল। তা হল সত্যের বল। আমরা একটি চিরায়ত নির্ভুল সত্যের পক্ষে। আর অপসংস্কৃতির তল্পীবাহকরা বিকার চিন্তাপ্রসূত কিছু মনগড়া রীতি-নীতির পক্ষে। সত্য সমাগত মিথ্যা অপসৃত, মিথ্যার বিনাশ অবশ্যম্ভাবী।
অতএব সংস্কৃতির আলোর নামে অপসংস্কৃতির যে অন্ধকার তা একদিন অপসৃত হবেই ইনশাআল্লাহ। কিন্তু সে অন্ধকার সরাতে আমাদের কদম কদম এগিয়ে যেতে হবে।
__________________________________
তথ্যসূত্র :- মাসিক আলকাউসার
Comment