[পোস্টটি এক কংগ্রেসপন্থী হিন্দু এক্টিভিষ্ট থেকে নেয়া, এবং ফোরামে প্রকাশের লক্ষ্যে মডিফাই করা]
সম্প্রতি কর্ণাটকে, অরুণ ওয়ার্নিকার নামে এক ব্যক্তি হিন্দুত্ববাদি মোদির জয়ের জন্য একটি বিশেষ ধর্মীয় আচার পালন করছিলো। সে তাদের দেবী কালীকে তার নিজ শরীরের রক্ত উৎসর্গ করার সময় ভুলবশত তার আঙুল কেটে ফেলে। সে মোদির জন্য এতটাই পাগল যে, এর আগে সে নিজের বাড়িতে মোদীর জন্য একটি মন্দিরও তৈরি করেছিলো।
দুর্ভাগ্যক্রমে এমন পাগল সে একা নয়। এক মহিলা রিপোর্টারকে বলছে,
"যদি বিজেপি একটি কুকুরকে তার টিকিট দেয়, আমরা নিশ্চিত করব যেন সেই কুকুরটি-ই জিতে।"
আরেক মহিলা বলছে,
"আমাদের যদি পাঁচ হাজার রুপিতে একটি গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হয়, আমরা কিনবো। আমরা প্রতি লিটার পেট্রোলের জন্য পাঁচশত রুপি দেব। তবুও আবার মোদি সরকারকেই চাই।"
তারা একটি সিলিন্ডারের জন্য পাঁচ হাজার রুপি এবং এক লিটার পেট্রোলের জন্য পাঁচশত রুপি দিতে প্রস্তুত। অর্থাৎ তারা মেনে নিয়েছে যে, মোদি এই উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। তবুও তারা মোদিকেই ভোট দেবে।
আরেক রিপোর্টার মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করায়, ঐ ব্যক্তি বলে যে, সে আন্ডারওয়ার পরা ছেড়ে দিয়েছে। তারপরও সে মনে করে না মোদীর আমলে মুদ্রাস্ফীতি খুব বেশি। পেট্রোলের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে সে বলে, মানুষ যেন মোটরসাইকেলের পরিবর্তে সাইকেল ব্যবহার শুরু করে।
আরেক মোদী সমর্থক কে জিজ্ঞেস করা হয়,
"সরকার আপনাকে যা বলবে আপনি কি বিশ্বাস করবেন? আপনি কি আপনার মস্তিষ্ক ব্যবহার করবেন না?"
তার উত্তর ছিল,
"শিক্ষিত হওয়ার অর্থ এই নয় যে আপনাকে আপনার মস্তিষ্ক ব্যবহার করতে হবে।"
অর্থাৎ সে তার মস্তিষ্কও ব্যবহার করতে চায় না।
এসবকে হাস্যকর মনে হতে পারে, কিন্তু এটি অত্যন্ত মর্মান্তিক যে, কীভাবে ভারতের লক্ষ লক্ষ নাগরিককে ব্রেইনওয়াশ করা হয়েছে।
আপনি কি জানেন, এই ব্রেইনওয়াশিং এর জন্য সত্যিকার অর্থে দায়ী কে?
হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি।
হ্যাঁ, আপনি ঠিকই শুনেছেন।
বিজেপিপন্থী টিভি উপস্থাপক এবং ইউটিউবাররা ভাবতে পারে যে, তাদের কাজকে অসম্মান করা হচ্ছে। যদিও কিছু কৃতিত্ব তাদেরও যায়। তবে হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি এখানে সবচেয়ে বড় দায় বহন করে। হোয়াটসঅ্যাপে খেলা গেমটি সত্যিই একটি ভিন্ন মাত্রার।
যেমন, বিজেপির যুব শাখার একজন রাজনীতিবিদ টিভি টকশোতে এসে বলছে,
"ভারতকে স্বাধীনতা ৯৯ বছরের জন্য লিজ হিসাবে দেওয়া হয়েছিল।"
প্রশ্ন হচ্ছে যে, সে এই 'তথ্য' কোথায় খুঁজে পেয়েছে?
স্পষ্টতই, হোয়াটসঅ্যাপ থেকে।
দুর্ভাগ্যবশত, হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটি একটি গভীর সুড়ঙ্গ। এবং এখানে প্রচারিত বেশিরভাগ বার্তাগুলি কেবল মিথ্যাই নয়, প্রায়শই দশগুণ বেশি বিপজ্জনক। এটি একটি সংগঠিত মাফিয়া, যা একটি সিস্টেমের পিছন থেকে সাধারণ জনগণের ব্রেইনওয়াশিং-এর জন্য চালানো হচ্ছে।
কেন বিজেপি'র এই হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির মাফিয়া গোষ্ঠী বিজেপিপন্থি মিডিয়াগুলোর চেয়ে দশগুণ বেশি বিপজ্জনক? এর পেছনে একটি সহজ কারণ রয়েছে। বিজেপিপন্থী টিভি অ্যাঙ্কররা যদিও মিথ্যা খবর ছড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করে, তবুও তারা পুলিশি মামলা ও এফআইআরকে ভয় পায়। তারা হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটির সাথে প্রতিযোগিতা করতে পারছে না। কারণ, তারা ক্রমাগত ফ্যাক্ট-চেকিং এবং এফআইআর নিয়ে চিন্তিত।
কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ ইউনিভার্সিটিতে যারা বিপজ্জনক প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে, তারা কিছুকেই ভয় পায় না।
হোয়াটসঅ্যাপে সাধারণত কেউ তার পরিচিত লোকদের কাছ থেকেই মেসেজ পায়। আর সেটাকে মিস-ইনফরমেশন বললে এবং আসল ঘটনা কি, তা সম্পর্কে বললে, তার উত্তর হয়-
"তাই নাকি? আমি আসলে জানতাম না। আমাকে অন্য একজন মেসেজটি ফরোয়ার্ড করেছিল।"
দেখা যায় সেই ভুয়া হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজটি হাজার হাজার বরং কখনো লক্ষ লক্ষ বার ফরোয়ার্ড করা হয়েছে। কিন্তু এই মেসেজটি প্রথম কে পাঠিয়েছে তা কেউ জানে না। তাহলে কেউ কীভাবে এর জন্য এফআইআর দায়ের করতে পারে? অবশ্যই সরকার চাইলে মেসেজটার সোর্স ট্র্যাক করে ব্যবস্থা নিতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, কর্ণাটকে একজন ৩২ বছর বয়সী কল সেন্টারের কর্মচারী মোহাম্মদ আজমকে ৫০ জন মিলে হত্যা করে ফেলে, 'লোকটি একজন শিশু কিডন্যাপার' এই বলে হোয়াটসঅ্যাপে প্রচারিত একটি ফেইক মেসেজের কারণে। সে ঘটনায় পুলিশ ২৫ জনকে এরেস্ট করে। যে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এই বার্তা ছড়িয়েছে, সেই গ্রুপের অ্যাডমিনকেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। অর্থাৎ, সরকার চাইলেই এই মিথ্যার কারখানা বন্ধ করে দিতে পারে।
কিন্তু সমস্যাটা কি জানেন?
"বনে আগুন লাগলে, বৃষ্টি তা নিভিয়ে দিতে পারে,
কিন্তু বৃষ্টি-ই যদি আগুনের সৃষ্টি করে, তবে তাকে নিভাবে কিসে?"
যখন বিজেপির আইটি সেল-ই এই হোয়াটসঅ্যাপ মাফিয়া চালাচ্ছে। তাহলে বিজেপি সরকার কেন এটা বন্ধ করবে?
সিঙ্গাপুরের একটি নিউজ চ্যানেল সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্র প্রকাশ করেছে যেখানে তারা বিজেপি আইটি সেলের একজন কর্মচারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছে। সেখানে সে স্বীকার করে, তারা একটা টিম কাজ করে শুধু মন্তব্য বিভাগে মন্তব্য করার জন্য। আর এই দলের প্রধান কাজ হল অন্যদের মানহানি করা। কেউ যখন কিছু আপলোড করে বা শেয়ার করে, তারা সেই ব্যক্তির মন্তব্য বিভাগে যেয়ে মানহানিকর মন্তব্য করে।
এই মাফিয়া কার্যক্রম সরাসরি বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে পরিচালিত হচ্ছে।
সম্প্রতি, কেরালা স্টোরি নামে একটি মিথ্যা প্রোপাগান্ডামূলক ফিল্ম মুক্তি পেয়েছে। এই ফিল্মটিতে দাবি করেছে যে কেরালা থেকে ৩২,০০০ হিন্দু এবং খ্রিস্টান মেয়ে আইএস জয়েন করেছে। বিষয়টি মিথ্যা বলে ধরা পড়ার পরে, চলচ্চিত্র নির্মাতারা স্বীকার করেছেন যে তাদের দাবির স্বপক্ষে তাদের কাছে কোন প্রমাণ ছিল না। ৩২,০০০ একটি বানোয়াট সংখ্যা ছিল, এবং আসল সংখ্যাটি ছিল মাত্র তিন। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সিনেমাটির প্রযোজককে সিনেমাটির আগে একটি ডিসক্লেইমার দেখানোর নির্দেশ দেয় যে, এটি শুধুমাত্র একটি কাল্পনিক সংখ্যা। অর্থাৎ গল্পটি বাস্তব নয়।
কিন্তু ভারতের হিন্দুত্ববাদি প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেই তার নির্বাচনী ভাষণে এই মিথ্যা, বানোয়াট, সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক ঘৃণ্য এই সিনেমাটির প্রমোট করেছে। তারউপর বিজেপি সরকার এখন এই সিনেমাটিকে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনেও প্রদর্শন করে যাচ্ছে।
বিজেপির কট্টর হিন্দুত্ববাদি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এক বক্তৃতায় বিজেপি'র আইটি সেলের প্রশংসা করেছিল, যে কীভাবে তারা সারা দেশে প্রতিটি মানুষের মাঝে যেকোনও মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। অমিত শাহ এর বক্তব্যটা ছিল এমন,
"আমরা যেকোন খবর মানুষের মধ্যে প্রচার করতে পারি, চাই তা টক হোক বা মিষ্টি, চাই তা সত্য হোক অথবা মিথ্যা, আমরা এটি করতে পারি। এবং এটি আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়েছে কারণ, আমরা ৩২ লক্ষ মানুষের এক বিশাল হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করেছি।"
তার এই বক্তব্য ২০১৮ সালের। এখন চিন্তা করুন, আজ সেই গ্রুপ কত বড় হয়েছে।
তাহলে যখন প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজেরাই ভারতের মতো রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ২ টি পদে বসে এমন কাজ করতে থাকে, তখন তারা কোন কারণে এসকল প্রোপাগান্ডা ছড়ানো হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলো বন্ধ করবে?
কেউ এই মাফিয়া গোষ্ঠীকে থামায়নি, ফলে এখন এটি একটি দানব হয়ে উঠেছে। এদের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি আরও গভীরভাবে জেনে নেওয়া যাক।
হোয়াটসঅ্যাপ মাফিয়াদের ব্রেইনওয়াশিং-এর ৪টি প্রধান পর্যায় / ধাপ রয়েছে। আর এই ৪টি পর্যায়ে তারা হিন্দুদের টার্গেট করে তাদের প্রোপাগান্ডা পরিচালিত করে।
আপনি জিজ্ঞাসা করতে পারেন, কেন শুধু হিন্দুরাই তাদের প্রোপাগান্ডা ছড়ানোর একমাত্র টার্গেট?
এর একটা সহজ কারণ আছে। যদি কোনো স্বৈরশাসক দেশকে স্বৈরাচারে পরিণত করতে চায় তাহলে তাকে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়কে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাকে তার দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের লোকদের ব্রেইনওয়াশ করতে হবে। জার্মান ডিক্টেটর হিটলারের এর উদাহরণ নিন, যে কিনা সংখ্যাগরিষ্ঠ জার্মানিদের মাঝে শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা বপন করার পাশাপাশি সেখানকার ইহুদিদের সম্পর্কে একধরনের ভয়ের পরিবেশ তৈরি করেছিল। সে বলেছিল, ইহুদিরা তাদের দেশের জন্য বড় হুমকি। এই বলে জার্মানিদের ইহুদিদের বিরুদ্ধে উস্কে দেয়।
বিজেপির আদর্শিক রোল মডেল হল সাভারকার এবং গোলওয়ালকারের মতো মানুষ। আর তারা দুজনেই হিটলারের স্ব-ঘোষিত ফ্যানবয়। তাদের মতে, মুসলিম এবং খ্রিস্টানরা ছাড়া বাকি সকল হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন এরা সবাই মূলত হিন্দু।
এই হোয়াটসঅ্যাপ মাফিয়া তাই ভারতের সংখ্যাঘরিষ্ঠ হিন্দুদের টার্গেট করেছে। বিশেষ করে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের।
এবার ব্রেইন ওয়াশিং এর সেই ৪ টি পর্যায় / ধাপ কি, আসুন একে একে এর প্রতিটিকে বুঝি।
প্রথম পর্যায়, জাতিগত বা ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্বের প্রচার।
সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার জন্য, হোয়াটসঅ্যাপে বিদ্বেষপূর্ণ বার্তাগুলি প্রচার করলে, তা শুরুতেই কাজ করবে না। আর তাই প্রাথমিক বার্তাগুলি দেয়া হয় জাতিগত বা ধর্মীয় শ্রেষ্ঠত্ব / গর্ব / অহংকারের উপর ফোকাস করে। যাতে সাধারণ মানুষ তাদের ফাঁদে আটকা পড়ে। প্রথম দিকে বলা হবে যে, আপনার জাতি বা ধর্ম পরিচয় নিয়ে আপনার গর্ব করা উচিত। "দেখুন আমরা হিন্দুরা কত মহান ছিলাম। আমরা সবই জানতাম। আমাদের ইতিহাস পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম। আর আমাদের সংস্কৃতি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সংস্কৃতি।" ইত্যাদি।
দ্বিতীয় পর্যায়, ভিকটিমাইজেশন।
প্রথম ধাপের প্রোপাগান্ডায় বিভ্রান্ত হয়ে যখন কেউ নিজেকে মহান ভাবতে শুরু করে। তার ভিতর গর্ব এবং অহংকার সৃষ্টি হয়, তখন শুরু হয় দ্বিতীয় ধাপ ভিকটিমাইজেশনের। এই পর্যায়ে এমন বার্তাগুলো দেয়া হয়, যাতে উল্লেখ থাকে, "হিন্দুরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অত্যাচারিত হয়েছে। এই লোকেরা (মুসলিমরা) আমাদের হাজার হাজার বছর ধরে সফল হতে দেয়নি।"
একবার কেউ এটিতে বিশ্বাস করা শুরু করলে চলে আসে তারপরের ধাপটি।
তৃতীয় পর্যায়, "ইউ আর ইন ডেইঞ্জার - আপনি বিপদে আছেন।"
এবার মেসেজ পাঠায় এমন, "আপনার উপর যে শুধু শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে অত্যাচার করা হয়েছে, এটাই শেষ না, বরং আপনি এখনও বিপদের মধ্যে আছেন।"
প্রতি সপ্তাহে, প্রতিদিন, এভাবে মিথ্যা মেসেজের বৃষ্টি বর্ষণ করা হয়।
"এই দেখুন, তারা এভাবে আপনাকে আপনার বাড়ির ভিতরে ঢুকে মারবে।"
"দেখুন সেখানে কি হয়েছে।"
"দেখুন কিভাবে তারা সেখানে সাধু সন্ন্যাসীদের মেরে ফেলছে।"
"এটা একদিন তোমার সাথেও হতে পারে।"
"দেখুন সেখানে কি হয়েছে।"
"দেখুন কিভাবে তারা সেখানে সাধু সন্ন্যাসীদের মেরে ফেলছে।"
"এটা একদিন তোমার সাথেও হতে পারে।"
"আর কারা এই লোকগুলো, যারা আপনাকে মারার জন্য উদগ্রীব? এরা অন্য ধর্মের লোক। মুসলিমরা, খ্রিস্টানরা। আর প্রত্যেক বিজেপি-বিরোধী ব্যক্তি এদের সাথে মিলে কাজ করছে। তাদের সাথে মিলে হিন্দুদের ধ্বংসের জন্য কাজ করছে কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি, বামপন্থী, আরবান নকশাল, জর্জ সোরোস, পাকিস্তান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, সমস্ত আন্তর্জাতিক এজেন্সিগুলো। সবাই আপনার বিরুদ্ধে। আপনি ভয়ঙ্কর বিপদে আছেন।"
এভাবে মেসেজের পর মেসেজ পাঠিয়ে যখন একজনের ভিতর এমন মিথ্যা ভয় তৈরি করা হয়ে যায়, তারপর আসে চতুর্থ ধাপ।
চতুর্থ পর্যায়, মোদীর ব্যক্তিত্ব আর শ্রেষ্ঠত্বের প্রচার।
একজনের মধ্যে এভাবে মিথ্যা ভয় তৈরি করার পর, এবার মেসেজ পাঠায় মোদির ব্যক্তিত্ব আর শ্রেষ্ঠত্বের।
এবার হোয়াটসঅ্যাপের মেসেজ হয় এমন,
"মোদীজি আমাদের প্রভু।"
"মোদি মানুষ নন। তিনি কৃষ্ণ ও রাম এর অবতার।"
"কে আমাদের বাঁচাবে এসব থেকে? মোদীজি আমাদের বাঁচাবে।" (নাউযুবিল্লাহ)
"মোদি মানুষ নন। তিনি কৃষ্ণ ও রাম এর অবতার।"
"কে আমাদের বাঁচাবে এসব থেকে? মোদীজি আমাদের বাঁচাবে।" (নাউযুবিল্লাহ)
যেকোনো নির্বাচনের ঠিক আগে এই তৃতীয় ও চতুর্থ বিভাগ সবচেয়ে সক্রিয় থাকে। ঠিক এসময় WhatsApp বার্তা পাঠায়.
"হিন্দুদের বাঁচাতে চাইলে, বিজেপিকে ভোট দিন।"
এসবের ন্যায্যতা তৈরি করতে এসময় অগণিত মিথ্যা কাহিনী / বয়ান তৈরি করা হয়। প্রয়োজনে কোথাও এমন ঘটনা ঘটানো হয়।
আসুন আরেকবার সংক্ষেপে পুরো ঘটনাক্রমটি বুঝি।
- প্রথম পর্যায়, আপনি মহান, কারণ আপনি একজন হিন্দু।
- দ্বিতীয় পর্যায়, আপনি শতাব্দী ধরে নির্যাতিত হয়েছেন।
- তৃতীয় পর্যায়, আপনি বিপদে আছেন।
- চতুর্থ পর্যায়, মোদী এবং বিজেপি আপনাকে বাঁচাবে। সুতরাং মোদী এবং বিজেপিকে ভোট দিন।
হোয়াটসঅ্যাপ মাফিয়াগোষ্ঠী হিন্দুদেরকে যে আবেগপূর্ণ রোলার কোস্টারের মধ্য দিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, তা কতটা বিপজ্জনক সেটা দেখুন।
- প্রথমে অহংকার, ঔদ্ধত্য, আবেগ তৈরি করে,
- তারপর আত্ম করুণাবোধ তৈরি করে,
- এবং তারপর মনের মধ্যে ঘৃণা ও ভয় তৈরি করে।
আশ্চর্যের কিছু নেই যে, এই সব দেখার এবং শোনার পর একজন সাধারণ মানুষ মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ে।
হিটলারের রাজত্বকালেও এই অবস্থা ছিল। যদিও তখন হোয়াটসঅ্যাপের অস্তিত্ব ছিল না। তখন সংবাদপত্র, রেডিও এবং চলচ্চিত্রের মাধ্যমে এই চারটি ধাপে লোকেদের ব্রেইন ওয়াশ করা হত।
- প্রথমত, জার্মান আর্যদের বলা হয়েছিল যে তারা সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। এবং মানবজাতির সবচেয়ে বিশুদ্ধতম বংশধারা।
- দ্বিতীয়ত, কিন্তু আজ জার্মান জাতিই সবচেয়ে বড় ভিক্টিম। আমাদের অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে, আমাদের দেশ অনেক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে এবং এসবের জন্য ইহুদিরা দায়ী।
- তৃতীয়ত, আপনি বিপদে আছেন। ইহুদিরা আমাদের দেশকে ধ্বংস করবে। তারা আপনার বাড়িতে প্রবেশ করবে এবং আপনাকে হত্যা করবে।
- চতুর্থত, ভয়ের কিছু নেই। আমাদের সর্বোচ্চ নেতা এসে আমাদের রক্ষা করবেন। হিটলার ঈশ্বরের অবতার, তিনি আমাদের সমস্ত সমস্যা থেকে আমাদের মুক্ত করবেন।
সেই সময়ে যে কৌশলগুলি ব্যবহার করা হয়েছিল, আপনি দেখতে পাবেন কীভাবে সেগুলিই আজকে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে হিন্দু জনসাধারণের ব্রেইনওয়াশ করতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
একবার এই প্রক্রিয়াটি শেষ হয়ে গেলে, তারপর কেবলমাত্র হোয়াটসঅ্যাপের নিয়মিত ডোজ প্রয়োজন। তখন ব্যক্তি সকালে একটি হোয়াটসঅ্যাপ বার্তা পায়, সন্ধ্যায় আরেকটি। এই জিনিসগুলি বারবার ক্রমাগত চলতে থাকে। তারপরে ভারতে মুদ্রাস্ফীতির কারণে কেউ অন্তর্বাস পরা বন্ধ করে দিক, অথবা কেউ ছিদ্রযুক্ত অন্তর্বাস পরুক, অথবা পেট্রোলের দাম ৫০০ রুপি লিটার হয়ে যাক, অথবা সিলিন্ডারের দাম ৫০০০ রুপি হয়ে যাক, অথবা বেকারত্ব চলতে থাক, অথবা মণিপুর জ্বলতে থাক, অথবা কেউ বন কেটে সাফ করে ফেলুক, অথবা লাদাখ বিপদে পড়ে থাকুক, অথবা কৃষকরা MSP না পাক, অথবা ভারতের ঋণ ২০ ট্রিলিয়ন রুপিতে পৌঁছাক, অথবা সরকারী স্কুলগুলি ধ্বংস হয় হোক, এগুলির কোনটিই এই ব্যক্তির নিকট আর গুরুত্বপূর্ণ নয়। যত কিছুই হোক, সে মোদীকেই ভোট দেবে।
কেন? কারণ এই হোয়াটসঅ্যাপ মাফিয়া গোষ্ঠী তাকে মানসিক গোলামে পরিণত করেছে। তাকে মধ্যে এই বিশ্বাস সৃষ্টি করিয়েছে যে, একমাত্র মোদিই তাকে বাঁচাতে পারবে।
Comment