Announcement

Collapse
No announcement yet.

সরকারি চাকরি ও বাঙালির অবসেশন: বাস্তবতা আসলে কী?

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সরকারি চাকরি ও বাঙালির অবসেশন: বাস্তবতা আসলে কী?

    সরকারি চাকরি ও বাঙালির অবসেশন: বাস্তবতা আসলে কী?

    ১.

    দ্বীনের পথের পথিকদের জন্য চলমান বাস্তবতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা অত্যন্ত জরুরি।মুমিন সহজ সরল হবে,কিন্তু বোকা বা নির্বোধ হতে পারে না,যাতে করে যেকোনো স্রোত তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে না পারে।নেক সূরতে ধোকা অনেক মারাত্মক জিনিস যা এই পথের পথিকদের পা ক্ষণে ক্ষণে রক্তাক্ত করেছে।অথচ তখন ফিরে আসারও সহজ কোনো উপায় নেই।তখন শুধু জোর করে নিজের মাজূর প্রমাণ করা ছাড়া আর কোনো রাস্তা বাকি থাকে না।

    কত প্রতিভা এভাবে চাপা পড়ে গেলো,কত জজবা এভাবে নিভে গেলো!

    সেজন্য ভাইদের খেদমতে সরকারি চাকরি এবং এর সাথে দ্বীনের উপর চলার এক সমীকরণ টানার চেষ্টা করব।যাতে করে বাস্তবতা বোঝাটা সহজ হয়।উল্লেখ্য এখানে শরয়ী দিক সম্পর্কে আলোচনা করা হবে না,সেজন্য সম্মানিত আলেমগণ আছেন।

    মোটাদাগে বাংলাদেশে শিক্ষিত সমাজকে ভাগ করলে ৩ ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়:-

    ১.কওমি উলামা ও তলাবাগণ
    ২.আলিয়া শ্রেণীর
    ৩.জেনারেললাইনের

    প্রথম শ্রেণির সাথে সরকারি চাকরি এর সম্পৃক্ততা একদমই নেই। তবুও এর একটা অংশ এরকম সরকারি চাকরিজীবীদের সাথে আত্মীয়তার সম্পর্ক গড়ার সুযোগ হলে নিজেকে অনেক বড় ভাগ্যবান মনে করেন।যেমন নিজের বোন,মেয়ের বিয়ে দেয়ার সময় এরকম কয়েকটা অপশন থাকলে:

    অপশন ক: ছেলে দ্বীনদার+সরকারি চাকরি(বেতন কম)

    অপশন খ: ছেলে দ্বীনদার+কয়েকটি ভালো যায়গায় খেদমত(বেতন সব মিলিয়ে ভালো একাউন্ট এর)

    অপশন গ: ছেলে দ্বীনদার+সাধারণ কোনো খেদমত(বেতন কম)

    তাহলে ইনারা প্রথম অপশনই বেছে নেন চোখ বুজে।যদিও এর পেছনে অনেক তথাকথিত "যৌক্তিক" কারণ আছে;সেগুলোর ইন শা আল্লাহ ধীরে ধীরে ব্যাবচ্ছেদ করা হবে।



    ২.

    মনস্তাত্ত্বিকভাবে সরকারি চাকরির প্রতি দূর্বলতা কওমি ঘরানার একটা শ্রেণির মাঝেও বিদ্যমান তা ভিতরের যে কেও আরো ভালো ভাবে বুঝতে পারবেন।দাওরাকে মাস্টার্স ঘোষণা দেওয়ার সময় আগে দাওরা পাস করা এক শ্রেণীর ত্বলাবারা নতুন করে আবার পরীক্ষায় বসেছিলো কীসের জন্য?
    ছাত্রদের মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে আলিয়ার কিতাবাদি পাঠ করা আর পরীক্ষার সময় পরীক্ষা দেয়াতো ওপেন সিক্রেট।এটা কেনো করা হয় তার কারণ কারোরই অজানা নয়।এই শিকলের শেষ কড়া যে সরকারি চাকরিতে গিয়েই মিলেছে তা বুঝে এসেছে বলেই এই হিল্লা করা হয়।এমনকি যারা এই সিস্টেমে যায় নি,তারাও তাদের সাথীদের এই তরীকায় "সফল" হতে দেখলে ভিতরে চাপা কষ্ট ও ঈর্ষাও কখনো থাবা বসিয়ে ফেলে।

    ভবিষ্যতে যদি সত্যিকারেই মাস্টার্স সমপর্যায়ের মর্যাদা কাগজে কলমে বাস্তবায়ন করা হয়,তখন আপনার কী মনে হয়?

    একটু কল্পনার জগৎকে নাড়া দেই।আসুন।

    কত জন তলাবা বিসিএস পরীক্ষা দেয়া থেকে বাদ থাকবে?

    কত জন তলাবা নিবন্ধন পরীক্ষা দেয়া থেকে বাদ থাকবে?

    কত জন তলাবা পুলিশ,আর্মি,নেভি,এয়ার ফোর্সে এসপি,আইজি,লেফটেন্যান্ট,মেজর,ব্রিগেডিয়ার, জেনারেল, ফ্লাইট মার্শাল হওয়া থেকে নিজেদের দমিয়ে রাখবে?

    কত জন তলাবা ডাক্তার,ইঞ্জিনিয়ার,ভার্সিটিতে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া থেকে বিরত থাকবে?

    কত জন তলাবা........

    আরো কত দুনিয়াবি সরকারি শাখা প্রশাখায় বিচরণ করা থেকে গুটিয়ে থাকবে?

    আচ্ছা "হুসনে যন" এর আমল করি।চলেন।

    এই সার্টিফিকেট কে কাজে লাগিয়ে কতজন উচ্চশিক্ষার জন্য আযহার,মক্কা,মদীনায় পড়তে যাবে?
    আর কত জন উপরোক্ত সরকারি চাকরিতে দাখেল হবে?

    একটু অনুমান করুণ তো।কোন দিকের পাল্লাটা ভারি লাগে??

    যদিও মুখলিস মানুষের সংখ্যাও কম নয়,যারা দুনিয়া থেকে দ্বীনকে প্রাধান্য দেয়।আমার আলোচ্য বিষয় আপাতত এটা না।

    কথা টানলে আরো বড় হবে,আরো কদর্যতা ছড়াবে। আশা করি সরকারি চাকরির প্রতি বুভুক্ষু মনোভাব কিছুটা হলেও বুঝা গেছে।



    ৩.

    এবার আসি আলিয়া নিয়ে।

    একটা জীবন দর্শন প্রচলিত আছে,তা হলো-মা বাবারা যেটা নিজেরা জীবনে করতে পারেননি তারা সেটা সন্তানের দ্বারা বাস্তবায়ন করাতে চান।

    কওমি ঘরানা থেকে উঠে আসা কোনো ত্বলিবুল ইলম ভাই বা আলেমের যখন এই জীবনের হাকীকত সম্পর্কে পুরোপুরি জানা হয়ে উঠে;কষ্টের দিকটা নিজ চোখে যখন দেখে আসেন তখন পিতৃহৃদয় তার সন্তানের অনাগত কণ্টকাকীর্ণ ভবিষ্যতের চিন্তায় ব্যাথাতুর হয়ে উঠে।এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক।বরং চিন্তা না হওয়াই অস্বাভাবিক।তখন কোনো সান্ত্বনাই যেনো মন নিতে চায় না,কোনো বুযুর্গের জ্ঞানগর্ভ নাসীহাহ বিষস্বরূপ মনে হয়। তবে এর মাঝেও অনেক হিম্মতওয়ালা মা বাবা আছেন যারা দ্বীনের তরে সন্তানদের বিলিয়ে দেন,আমার আলোচনা আপাতত এদের নিয়ে না।

    যাই হোক;একদিকে হলো ঐশী পয়গামের গুরুদায়িত্ব বহনের জিম্মাদারি,যার মর্যাদা হলো আকাশছোয়া বরং আকাশকেও টপকিয়ে,অপরদিকে এক অনিশ্চিত কষ্টকর ভবিষ্যতের আশংকায় নিজের কলিজার টুকরাকে ফেলে যাওয়া-এক দোটানার মুখোমুখি হন।

    এর সমাধান তিনি তার দীর্ঘজীবনের সরল অভিজ্ঞতায় আলিয়া মাদ্রাসা সিস্টেমের মাঝেই দেখতে পান।

    এখানে মূলত কয়েকটি শ্রেণীর দেখা পাওয়া যায়-

    *যার কথা বলা হলো অর্থাৎ এক শ্রেণীর ক্বওমী/আলিয়া গার্জিয়ান।

    *সাধারণ মানুষ যারা সন্তানদের নেক নিয়তে কওমীতে ভর্তি করিয়েছিলো,কিন্তু হিফজ বা কয়েক জামাত পর অন্য মানুষের কথার প্রভাবে বা অন্য ছেলেদের দুনিয়াবি উন্নতি দেখে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আলিয়াতে ভর্তি করে দেওয়া।

    *সাধারণ শিক্ষিত কিছু চৌকস মানুষ,দ্বীন দুনিয়া উভয়ই কামানোর স্কোপ থাকায়।

    *বাড়ির কাছে মাদ্রাসা হওয়ায় একটা সার্টিফিকেট এর জন্য পরীক্ষা দেওয়া।

    যাই হোক,নিয়ত ঠিক কিন্তু তরীকা তো গলত।
    আলিয়াতে আসার পর কী কোনো ছেলের ইলমে ওহি অর্জন ই একমাত্র লক্ষ্য থাকে?এই দাবি আলিয়ার কয়জন ছাত্র করতে পারবে??

    নাকি সারা বছর ইংরেজি,গণিত,পদার্থ,রসায়ন প্রাইভেট পড়ে শেষ সময়ে নামকাওয়াস্তে আরবি সাবজেক্ট গুলো চোখ বুলিয়ে পরীক্ষা পার পেয়ে যাওয়াটাই মুখ্য হয়?
    যাতে করে দাখিল আলিম ফাজিল কামিল এগুলো সার্টিফিকেট পেয়ে আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক বা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি, সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বসার যোগ্যতা অর্জন হয়।

    ঘুরে ফিরে তো সেই সরকারি চাকরিতেই দেহ মন বন্ধক হয়ে আছে।খুবই অল্প কিছু মানুষ আছেন যারা এখান থেকেও উঠে আসেন ইলমি আমলি লাইনে।তবে তা একদমই নগণ্য।



    ৪.

    শেষোক্ত শ্রেণী,অর্থাৎ জেনারেল লাইনের;যারা সংখায় সর্বাধিক।

    এদের কথা কি আর বলা,এদের জন্মই যেন হয়েছে সরকারি চাকুরে হয়ে মরার জন্য।
    কথাটা তিক্ত শোনালেও বাস্তবতা সমাজের দিকে তাকালেও একদম পরিষ্কার হয়ে যায়।যে ছেলে/মেয়ে কোনো ভাবে একটা সরকারি চাকরি যোগাড় করতে পেরেছে;সেটা যে সিস্টেমেই হোক আর বেতন যত কমই হোক তার মর্যাদা সম্মান চাকরি পাওয়ার আগে পরে আকাশ পাতাল পার্থক্য হয়ে যায়।পরিবারে তার কথাকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হিসেবে ধরা হয়,যদিও আরেক ভাই হালাল উপায়ে কম পয়সা কামায় তার সিদ্ধান্তকে গুরুত্বের সাথে নেওয়া হয় না,বিয়ের বাজারে তার দাম আকাশচুম্বি হয়ে যায়,কোন মেয়ের বাবা কত বেশী যৌতুক দিয়ে এমন জামাইকে ঘরে আনতে পারে তার প্রতিযোগিতা চলে।

    তাঁর মা তাকে পেটে ধরে পেলে পুষে তাঁর জীবন সার্থক হয়েছে,তার বাবার সারাজীবনের রক্ত পানি করা উপার্জনের পয়সার উপযুক্ত প্রতিদান সন্তান এইবার যেনো করতে পেরেছে।পরিবার এলাকার আত্মীয়স্বজনের আনন্দের চোখের পানি আর বাধা মানে না!

    এগুলো কোনো গোপন কথা না,এসব দৃশ্যপট একদম প্রকাশ্যেই ঘটে।বিশ্বাস না হলে কোনো সরকারি চাকরি ফলাফল।ঘোষণার দিন চাকরি পাওয়া ছেলে/মেয়েটার বাড়ির আঙ্গিনা সেইদিন একটু ঘুরে আসুন।অথচ আল্লাহ মর্যাদা সম্মানের ভিত্তি শুধুমাত্র এবং শুধুমাত্র তাকওয়ার উপরই রেখেছেন।

    ২০ বছর আগের আপনার জেলার "সরকারি উচ্চ পদের চাকুরে" ডিসি,এসপি,ম্যাজিস্ট্রেট এর নাম আপনি বা আপনার এলাকার কেও না জানলেও হাজার বছরের পুরনো আল্লাহওয়ালাদের নাম জানে না এমন কেও নেই!

    এখানে একটা বিষয় বলে রাখা দরকার।একটু পিছন থেকে চিন্তাকরি।
    যে ছেলে বা মেয়েটা জেনারেলে পড়ে সে কিন্তু নিজের ইচ্ছায় এটা শুরু করে নি,তদ্রুপ যে ভাই ক্বওমীতে পড়ছেন তিনিও কিন্তু নিজের ইচ্ছায় এটা করেননি।সেই ছোটবেলায় যখন তার বয়স ৪/৫ বছর তখনই তার মা বাবার সিদ্ধান্তই অনেকটা তার জীবনের পথ ঠিক করে দেয়।এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, জেনারেল লাইনের বলে নাক সিটকানো আর ইলমের লাইনে চলে নিজেকে উচু পর্যায়ের ভাবা ভাইয়েরা আশা করি এটাও মাথায় রাখবেন।ঠিক তদ্রুপ দুনিয়াবি নাম যশ টাকা কামানো জেনারেল ভাইরাও উলামাদের আর্থিক দীনতাকে তাচ্ছিল্য করার আগেও বিষয়টি মাথায় রাখবেন।



    ৫.

    উপরোক্ত শ্রেণির মানুষের বাইরেও আরেকটি প্রকার আছে আমাদের সমাজে।
    গ্রামীণ ও শহুরে শিক্ষার আলো থেকে দূরে থাকা সমাজ অথাবা দুই এক বছর পড়াশোনার পর বাদ দিয়ে দেওয়া।

    এদের যিন্দেগি আসলে কীভাবে পেট চালাবে এই ফিকিরেই কেটে যায়।অন্য কোনো চিন্তাভাবনা এরা করেও না,করতেও চায় না।কীভাবে ভাত ডাল নুন যোগাবে এর পিছনেই তারা পরে থাকতে পছন্দ করে।

    খেলাফত আসলেই কী বা নাস্তিক কম্যুনিস্ট রা ক্ষমতায় আসলেই কী,এদের জীবনে এর কোনো প্রভাব নেই।

    তবে এরাও সুযোগ পেলে নিজেদের ছেলেদের ঘুষ দিয়ে সরকারি চাকরির ব্যাবস্থা করতে পারলে তা ছাড়ে না।পিয়ন,আর্মি,পুলিশ,বিজিবি ইত্যাদিতে এদের সবিশেষ ঝোক থাকে।

    পাশাপাশি গ্রামীণ সমাজেও এরকম সরকারি চাকুরে থাকলে তার প্রভাব ভালোই পড়ে।কোনো সালিসে তার উপস্থিতি প্রাণবন্ত করে তুলে,মসজিদ কমিটির সভাপতি জোর করেই বানিয়ে দেয়া হয় ইত্যাদি ইত্যাদি......

    কিছু প্রাইভেট বা বেসরকারি চাকরি আছে সেখানেও উচ্চ বেতনে নানা সুযোগ সুবিধা দিয়ে লোক রাখা হয়।সেসব ক্ষেত্রে অবশ্য অনেক যোগ্য ও দক্ষ হতে হয় কাজে।এদের ক্ষেত্রেও সরকারি চাকরির মতো মোটামুটি একই অবস্থা থাকে সমাজে।

    যাইহোক, এগুলো আমাদের সমাজের সাফ বাস্তবতা। সেগুলোরই সংক্ষিপ্ত আকারে একটা চিত্র আকা হলো।অনেক ভাই এই বাস্তবতাকে অস্বীকার করে জ্বাজ্জল্যমান সূর্যকে হাত দিয়ে আড়াল করতে চান নিজেদের অতিরিক্ত ভালো মানুষ প্রমাণ করার জন্য।যা আত্মপ্রবঞ্চনা ব্যাতীত আর কিছু না।

    কিছু আল্লাহর বান্দা ব্যাতিক্রম সব যায়গায় ই আছেন,কিন্তু ব্যাতিক্রম কখনো উদাহরণ হতে পারে না।

    আরো দুটি বিষয়ে রেখাপাত করে এই লেখা সমাপ্ত করব।
    এখন সামনে আমরা আলোচনার মূল অংশে যাব।এতক্ষণ সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ।​



    ৬.

    সরকারি চাকরির প্রতি এই ঝোঁক এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে।এর মাঝে মৌলিক কারণ হলো একটি,বাকি গুলো হল এর শাখা।
    নিচে পর্যায়ক্রমে তা আলোচনা করা হলো:-

    ১.মূল কারণ হলো "রিযিকের মালিক আল্লহ" এই সহজ সরল কথাটার উপর ইমান দূর্বল হয়ে যাওয়া।খালেক থেকে মাখলুকের উপর তাওয়াক্কুল বেশী হয়ে যাওয়া।যখন বান্দা দেখে মাসে মাসে নির্ধারিত বেতন আসছে,যত অন্যায় কাজ ধোকাবাজি করুক না কেনো চাকরি যাচ্ছে না, চাকরি শেষে মোটা অঙ্কের পেনশন পাচ্ছে,মাঝে সাঝে কিছু উপরি ইনকামের সুযোগ পাচ্ছে,নিজে মরে গেলেও নমিনি হিসেবে বউ বাচ্চারা মাসে মাসে টাকা পাচ্ছে ইত্যাদি ইত্যাদি সুবিধার বিপরীতে আল্লাহর গায়েবি ওয়াদা দূর্বল ঠেকে।মুখে মুখে বললেও যে রিযিকের মালিক আল্লাহ,বাস্তবতায় সে সরকারি চাকরিকেই রিযিকের মালিক বানিয়ে নিয়েছে।তাওয়াক্কুলের মত কঠিন ইবাদতের প্রয়োজন পড়ছে না,কারণ সে তো জানেই মাস গেলে পয়সা আসবে দুনিয়া উলটে গেলেও। কারণ সরকারও তার কর্মী বাহিনীকে অনুগত রাখতে বেতন ক্লিয়ার রাখে,নাহলে বিদ্রোহ এর সূচনা এখান থেকে শুরু হলে তা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে সহজেই গড়াবে।তাই সে এ পথ বেছে নেয়।

    ২.প্রথাগত ভাবে চলে আসা এই সিস্টেমে সম্মান, চাকরির সিকিউরিটি দেখে অবচেতন মন অটোমেটিক সেদিকে ঝুকে যায়।যুগের পর যুগ এর এই শিকলে আবদ্ধ মস্তিষ্ক ভিন্ন কিছু চিন্তাই করতে পারে না আর।

    ৩.অকর্মণ্যতা, অদক্ষতা,ভীরুতা,কাপুরুষতা।
    আপনি দেখবেন যারা এই চাকরি নিয়ে খুব বেশি আগ্রহী উত্তেজিত;তারা নিজেরাই একটা অপদার্থ। বিষয়টি বুঝিয়ে বলি,ধরুন একজন সরকারি অফিসে বড়-ছোট কোনো একটা পোস্ট এ আছে।এখন তাকে যদি বলা হয় -ধরো তোমার চাকরি নাই হয়ে গেলো,এখন তুমি কীভাবে তোমার নিজের খরচ সংসারের খরচ যোগাবে?

    অধিকাংশের কথা শেষ হওয়ার আগেই দেখবেন তার মুখ ফ্যাকাশে হয়ে গেছে।কারণ সে নিজেও জানে তার মাঝে এমন কোনো স্কিল,সাহস,দক্ষতা,যোগ্যতা নেই যার বলে সে কিছু একটা করতে পারবে জীবনে।অবশ্য শিক্ষাব্যবস্থা এমনি এখন,একগাদা অহেতুক গার্বেজ মাথায় ঢুকিয়ে বের করা ছাড়া আর কিছুই করে না।চাকরিতে ঢুকার পর গতানুগতিক কাজ করা ছাড়া আর কিছু সে পারে না।এই শ্রেণির মানুষরাই দেখবেন সরকারি চাকরি ছাড়া কিছু বুঝে না। অথচ নিজে করে খাওয়ার মত কোনো একটা কাজ জানা থাকলে বা কাজ জানা না থাকলেও অন্তত সাহস থাকলেও এমন গোলাম হয়ে থাকা লাগতো না।

    ৪.সমাজের প্রেশার।
    যারা হয়তো দক্ষ,সাহসী বা তাওয়াক্কুলওয়ালা তারাও এখানে দূর্বল হয়ে যান।মা-বাবা,আত্মীয়স্বজন,প্রতিবেশী এদের চাহিদা হলো-"বাবা/মা তুমি খালি একটা সরকারি চাকরি যোগাড় করো,আমাদের আর কোনো চাহিদা নাই।জীবনের শেষ একটা ইচ্ছা...."।

    একটা রম্য্য গল্প মনে পড়ে গেলো,গ্রামের এক ছেলে অনেক পড়াশোনা করে স্কুল কলেজ এ সব ক্লাসে ফার্স্ট হয়ে উত্তীর্ণ হলো,তারপর বাংলাদেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম হয়ে আমেরিকা ইংল্যান্ড উচ্চতর পড়াশোনার জন্য গেলো,সেখানেও সর্বোচ্চ রেজাল্ট করে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর হয়ে গেলো বা কোটি ডলারের স্যালারিতে সম্মানের সহিত চাকরি করতো।ঈদে একসময় গ্রামে বেড়াতে আসলে, দূরসম্পর্কের এক চাচা সে কী করে জানতে চাইলো।তো সে ছেলে যথাসম্ভব বুঝানোর পর সেই চাচার কথা ছিলো-ভাইস্তা যাই করো বিসিএস তো হলো না!

    এই হলো বাংলার সমাজের অধিকাংশের অবস্থা।
    তো তাদের চাহিদা, প্রেশারের জন্য ইনারাও সেদিকে চলে যান।

    মোটামুটি এগুলো কারণেই সরকারি চাকরি ফার্স্ট চয়েসে থাকে।তবে মূল কারণ সেটাই "রিযিক আল্লাহ থেকেই আসে" এর উপর ঈমান দূর্বল হয়ে যাওয়া।যারা তাওয়াক্কুলের সাথে হিম্মতের সাথে অগ্রসর হয়েছে তাদেরকে আল্লাহ সেসব সরকারি চাকুরে থেকেও সুখে রাখেন।দেখা যায়,অনেকেরে সরকারি চাকুরের বেতন অফিস থেকে বাসা পর্যন্ত আনতে আনতেই শেষ, অমুকে যায়গায় কিস্তি,তমুকে যায়গার বন্ধক,এখানের ধার,সেখানের আরো নানা খরচে বাজার করার টাকাও থাকে না;যদিও বেতন লাখ টাকা!

    অথচ তাওয়াক্কুল ওয়ালার নিজেরা খেয়ে আরো মানুষকেও খাওয়ান আলহামদুলিল্লাহ। এর নাম ই বরকত,এরই নাম নুসরত।



    ৭.

    আমাদের লেখার সর্বশেষ অংশের দিকে আমরা চলে এসেছি।
    এখন এই সরকারি চাকরি কী দ্বীনের পথের মুজাহিদের জন্য আশীর্বাদ না বিষস্বরূপ?

    এই সরকারি চাকরি কী দাওয়াহ ইদাদ হিজরত ও জিহাদের মারহালায় সহযোগী হবে নাকি প্রতিবন্ধক হবে?

    অনেক ভাই বলবেন,আপাতত সরকারি চাকরি চলতে থাকুক,পরবর্তীতে তাকাজায় সেটা বাদ দেয়া যাব।কিন্তু বাস্তবেই তা এত সহজ হয়? চাকুরির নানা প্রকার সুযোগ সুবিধা,চাকরির জন্য মা বাবা স্ত্রী আত্মীস্বজন পাড়াপ্রতিবেশি এদের ক্রমাগত প্রশংসা, সম্মান, ভালোবাসা পাওয়ার পর কী নফস পূর্বের অবস্থানেই থাকে?

    আর যে নফস এত মজবুত সে তো শুরু থেকেই এর খারাবি দেখে দূরে থাকবে।দূর্বলতার দরুণ ই তো নিরাপদ জীবন গ্রহণের মানসিকতা আকঁড়ে ধরে থাকে,দ্বীনের জন্য রিস্ক নিতে চায় না।যা পরবর্তীতে আরো দূর্বল হয়ে পড়ে।

    বরং আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা তো বলে এভাবে ক্রমাগত নফস চাকরির প্রতি দূর্বল হয়ে যায়।নানা রকম বাহানা খুজে জিহাদ থেকে পালিয়ে বেড়ানোর।১০০ ভাগ কাজ যাদের দ্বারা সম্ভব ছিলো সে ১০ ভাগ করেই আত্মতৃপ্তিতে ভুগে।

    অবশ্য এই সরকারি জিন্দেগীতে আপনি প্রচলিত দ্বীনের যেকোনো মেহনত মৃত্যু পর্যন্ত করে যেতে পারবেন,এতে কোনো সমস্যাই হবে না।বরং আরো সুবিধা হবে।

    কিন্তু যে ভাই ৬০ বছরের জন্য জীবনকে সরকারের নিকট বিক্রি করে দেন,তার থেকে কীভাবে আশা করা যায়-

    তিনি শায়খ ওসামা বিন লাদেন রহি: এর মতো রাজপুত্রের আয়েশী জিন্দেগী ছেড়ে দূর্গম পাথুরে আফগান ভূমিতে হিজরত করবেন?

    তিনি শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরীর মতো চিকিৎসকের সম্মানিত পেশা ছেড়ে ময়দানেই জীবন যৌবন কাটিয়ে দিবেন?

    তিনি শাইখ আনোয়ার আল আওলাকি রহি: এর মতো সম্মানিত স্কলারের পদ ছেড়ে কাফেরদের চোখে চোখ রেখে লড়ে যাবেন?

    তিনি শত শত আরব আজম মুজাহিদের মতো দুনিয়ার প্রতিষ্ঠিত জীবন ছেড়ে জীবনকে আল্লাহর রাহে বিক্রি করে দিয়ে জান্নাতের নেশায় দিগ্বিদিক ছুটে বেড়াবেন?

    আল্লাহর এই দুনিয়ায় উদাহরণ দিতে গেলে শেষ হবে না,যে কত আল্লাহর প্রিয় বান্দারা নিজেদের পরিপূর্ণ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও এই কঠিন তাওয়াক্কুল ওয়ালা জিন্দেগী বেছে নিয়েছেন এবং শেষ পর্যন্ত সবরের সাথে চলে আল্লাহর নিকট পৌঁছে গেছেন।
    রহিমাহুমুল্লাহ।

    তাই প্রত্যেক মুজাহিদের জন্য এই ফিতনা সম্পর্কে যথাযথ ইলম থাকা অত্যন্ত জরুরি।নাহলে সে নিজের ক্ষতি নিজেই করবে,আল্লাহর দ্বীনের কোনো কমতি সে করতে পারবে না। আল্লাহ এমন বান্দাদের এই জিহাদের নিয়ামত দিয়ে ধন্য করবেন যারা কোনো নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করবে না।

    যাইহোক, নিজেকে সেরকম তাওয়াক্কুল ওয়ালা করে গড়ে তুলাই হলো করণীয়। এজন্য উচিত বেশী বেশী মুজাহিদদের জীবনী পড়া,এমন তাওয়াক্কুল ওয়ালাদের সংস্পর্শে থাকা বেশী, আল্লাহর নিকট দোয়া করা,অন্যের কথায় প্রভাবিত না হওয়া।

    আল্লাহ তা'লা সর্বপ্রথম আমাকে এর উপর আমল করার তৌফিক দিন,সকল মুমিন মুজাহিদ ভাইদেরকেও তৌফিক দিন।
    আমিন​
    Last edited by Rakibul Hassan; 2 weeks ago.

  • #2
    সরকারি চাকরি করা কি বৈধ?
    শায়খ হাবিবুল্লাহ নাদিম হাফিজাহুল্লাহ



    আরো দেখতে পারেন-


    তাগুতের শাসন থেকে মুক্তির ঘোষণা || মাওলানা সদরুদ্দীন ইসলাহী রহ.|| আল হিকমাহ মিডিয়া পরিবেশিত
    https://dawahilallah.com/forum/%E0%A...AC%E0%A7%87-24
    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 2 weeks ago.
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ ভাই। গতকাল আমার আব্বু আম্মু আমাকে চাকরির ব্যাপার এইটা সেটা বলে দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছিলেন এবং জিহাদ থেকে দূরে রাখার জন্য অযৌক্তিক কথাবার্তা বলছিলেন। আলহামদুলিল্লাহ ভাই আপনার এই লেখা আমার ঈমানকে আরো মজবুত করে দিলো। আল্লাহ আপনার লেখায় প্রচুর বরকত দান করুন আমীন। আর ভাই শায়েখ ওসামা বিন লাদেন (রাহ্) এর জীবনী এবং অন্য মুজাহিদীন ভাইদের জীবনী কোথায় পাবো যদি একটু বলে দিতেন।

      Comment


      • #4
        জাযাকাল্লাহ খাইরান ভাই
        খুব সুন্দর করে পয়েন্ট ধরে এই সমাজের বাস্তবতা তুলে ধরেছেন
        আল্লাহ্‌ তাআলা আপনার ইলম ও হায়াতে বারাকাহ দান করুন, আমীন
        এমন লিখা আরও লিখে আমাদের উপকৃত করবেন ইনশাআল্লাহ্‌
        আল্লাহ্‌ তাআলা আপনাকে তাওফিক দান করুন, আমীন

        Comment


        • #5
          জাযাকাল্লাহু খাইরান মুহতারাম ভাই।
          সমাজের ও আমাদের প্রকৃত হালত তুলে ধরেছেন। লেখাটা সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে।
          বারাকাল্লাহু ফিকুম।

          Comment


          • #6
            আল্লাহ আপনাকে জাযায়ে খাইর দান করুন। আমীন
            ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

            Comment


            • #7
              Originally posted by tasfiq hossain khan View Post
              .... ভাই শায়েখ ওসামা বিন লাদেন (রাহ্) এর জীবনী এবং অন্য মুজাহিদীন ভাইদের জীবনী কোথায় পাবো যদি একটু বলে দিতেন।
              মুহতারাম ভাই,সেরকম নির্দিষ্ট করে জীবনী সংকলন আমার জানা নেই।
              আপনি ফোরামের জীবনী অংশে গিয়ে পেতে পারেন,এছাড়াও আমাদের মুজাহিদ হযরত দের লেখা আর্টিকেল গুলোর শুরুতেও সংক্ষেপে উনাদের জীবনী থাকে।মুজাহিদ শায়খদের লিখা বেশি থেকে বেশী পড়লে অনেক কিছু অর্জন হবে ইন শা আল্লাহ। এজন্য gazwah.net ফলো করতে পারেন।
              জাঝাকাল্লাহ।

              Comment


              • #8
                মাশাআল্লাহ ভাই চমৎকার লিখেছেন।
                Last edited by Rakibul Hassan; 1 week ago.

                Comment


                • #9
                  "এই চাকরি নিয়ে খুব বেশি আগ্রহী উত্তেজিত;তারা নিজেরাই একটা অপদার্থ " - কথাটা চমৎকার লাগছে।

                  দেশের এই অতি মেধাবি লোকদের বেশিরভাগই আবার ঘুষ নিয়ে চলে। প্রতিটা সরকারি ফিল্ডে দূর্নীতি আর দূর্নীতি। আর আমাদের দেশের মুরব্বিরা এসব জানা সত্বেও বিসিএস বা সরকারি চাকরি এর পিছনে ছুটে।

                  Comment


                  • #10
                    সব চাকরির মধ্যেই এক ধরনের পরাধীনতা কাজ করে। বিশেষ মাদ্রাসাগুলোতে যারা আবাসিক থাকে তাদের অধিকার খুব করে ক্ষুণ্ণ করা হয়। ২৪ঘন্টাই ডেউটি মাস শেষে বেতনের বেলায় লুকোচুরি। মাস শেষ হয়ে ১০ তারিখ এসে গেলেও শিক্ষকের বেতনের সময় আসে না।
                    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 1 day ago.

                    Comment


                    • #11
                      Originally posted by Rafi313 View Post
                      সব চাকরির মধ্যেই এক ধরনের পরাধীনতা কাজ করে। বিশেষ মাদ্রাসাগুলোতে যারা আবাসিক থাকে তাদের অধিকার খুব করে ক্ষুণ্ণ করা হয়। ২৪ঘন্টাই ডেউটি মাস শেষে বেতনের বেলায় লুকোচুরি। মাস শেষ হয়ে ১০ তারিখ এসে গেলেও শিক্ষকের বেতনের সময় আসে না।
                      মুহতারাম ভাই,
                      তবুও শুকরিয়া আদায় করা উচিত। মসজিদ মাদ্রাসার খেদমত এর সাথে যারা জড়িত আছেন,একমাত্র তারাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাতের সাথে সুন্দরভাবে আদায় করতে পারেন,সব সময় দ্বীনি পরিবেশে থাকায় নফস গুনাহের দিকে প্রবলভাবে ধাবিত করতে পারে না। আপনি এর বাইরে আসেন,দেখবেন নামাজ কাযা ঠেকাতেই জানপ্রাণ বেরিয়ে যাবে,যত বড় বুযুর্গই হোন না কেন। এদিক চিন্তা করে হলেও সবর এর সাথে লেগে থাকা উচিত। অন্তত দ্বীনের জন্য।

                      বিকল্প ভালো কিছু খুজতে গেলে অন্তত এরকমই আরেক যায়গায় খেদমত তালাশ করা ভালো হবে।

                      Comment

                      Working...
                      X