জিহাদ হচ্ছে পবিত্রকারী
ফুকাহায়ে কেরাম সাধারণত জিহাদের আলোচনা হুদুদের সাথে করেন।
ফুকাহাগণ যখন দু’টো অধ্যায়ের আলোচনা এক সাথে করেন, একটা অধ্যায়ের পাশে আরেকটা অধ্যায় আনেন- বিশেষ এক রকমের মুনাসাবাত, এক রকমের মিল লক্ষ করেই আনেন।
যেমন সালাত আলোচনা দিয়ে কিতাব শুরু করেন। এরপর কেউ যাকাত, কেউ সাওমের আলোচনা করেন। তারপর করেন হজ্বের আলোচনা। যেহেতু ঈমান আনার পরই সালাত-যাকাত-সাওম-হজ্ব এগুলো ইসলামের মূল বুনিয়াদ তাই এগুলোর আলোচনা আগে করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুকন হচ্ছে সালাত। সালাত সবার উপর ফরয, তাই এর বিধি বিধান সবারই জানা দরকার। এজন্য এটি দিয়ে শুরু করেন। সালাত সহীহ হওয়ার জন্য যেহেতু পবিত্রতা শর্ত, তাই তাহারাত (অজু-গোসল সংক্রান্ত বাব)- এর আলোচনা সালাতের আগে করে নেন, তারপর সালাতের আলোচনা শুরু করেন।
এভাবে পাশাপাশি আলোচিত যেকোনো দু’টি অধ্যায়ের মধ্যে এক রকম মিল লক্ষ রাখেন।
বিশেষত যে দু’টি অধ্যায়ের মধ্যে মিল খুব ঘনিষ্ট- সেগুলোর আলোচনা প্রায় জনই পাশাপাশি করেন। হুদুদ-জিহাদ এই দু’টি অধ্যায়ের বেলায়ও আমরা এমনটা দেখতে পাই। দেখবেন প্রায় সব কিতাবেই হুদুদের আলোচনা, তারপরই জিহাদের আলোচনা। তার অর্থ হচ্ছে: তারা এই দু’টি অধ্যায়ের মধ্যে ঘনিষ্ট মিল দেখতে পাচ্ছেন যার কারণে প্রায় জনই অধ্যায় দু’টিকে আলোচনা পাশাপাশি করেছেন।
কি মিল আছে হুদুদ জিহাদে?
মিল খুব ঘনিষ্ট। যদি আমরা বুঝতাম!
হুদুদ এবং জিহাদ এ দু’টি এমন মহৌষধ যা দুনিয়াকে সর্বপ্রকার ফাসাদ থেকে পবিত্র রাখবে। إخْلَاءُ الْأَرْضِ مِنْ الْفَسَادِ – যমিনকে ফাসাদ থেকে সুরক্ষা দানকারী মহৌষধ এই হুদুদ আর জিহাদ।[1]
যিনার হদ: বংশধারা নষ্ট হওয়া থেকে মানবজাতিকে রক্ষা করবে।
মদ্যপানের হদ: মানুষের আসল সম্পদ আকল-বুদ্ধিকে হেফাজতে রাখবে।
চুরি ডাকাতির হদ: মানুষের জান ও সম্পদের নিরাপত্তা এবং মানুষের নির্বিঘ্নে চলাফেরার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
কযফ তথা যিনার অপবাদের হদ: মানুষের ইজ্জত সম্মানে আঘাত হানা ও বদনাম করা থেকে নিরাপত্তা দেবে।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, আহকামুল হাকিমীন কর্তৃক নির্ধারিত সুমহান এই হদের বিধানগুলোর দ্বারা মানুষের জান, মাল, বিবেক-বুদ্ধি, বংশধারা ও ইজ্জত-আব্রু পবিত্র ও নিরাপদ থাকবে। আপনি নীরবে বসে একবার ভাববেন: যদি এই বিধানগুলো বাস্তবায়ন হলো, আল্লাহর যমিনটা কেমন পবিত্র হতো?
জিহাদ:
আর জিহাদ? এই মহান বিধানটি আল্লাহর যমিনকে কুফরের অপবিত্রতা থেকে পাক করতো।
আজ দেখুন ৯০% এই মুসলিমের দেশে ট্রান্সজেন্ডার নামে একটা কুফরি মতবাদ পাঠ্য বইয়ে চলে এসেছে। কোমলমতি অবুঝ ছেলেমেয়েদেরকে এগুলো শিখানো হবে। মুক্তচিন্তা, স্বাধীনতা, উন্নতির নামে সমাজটা পশু হয়ে যাচ্ছে। এই কুফরের জন্ম পশ্চিমা দেশে, এখন মুসলিমদের মাঝে ছড়াচ্ছে।
গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমকামিতা, ফ্রি-সেক্সের চেতনাসহ যত কুফরি চেতনা আছে, সবগুলো কাফেরদের হাতে কাফেরদের দেশে জন্ম, তাদের হাতে লালিত-পালিত, তাদের হাতে প্রতিষ্ঠা। শেষে মুসলিমদের মাঝে ছড়িয়েছে বা ছড়াচ্ছে।
এসমস্ত কুফর থেকে যমিনকে মুক্ত রাখার পথ কি ছিল?
তা ছিল জিহাদ। আমরা যদি জিহাদ করতাম আমেরিকা আমাদের হাতে বিজয় হতো। এরপর তারা আমাদের অধীনে যিম্মি হয়ে বাস করতো। আমরা তাদের নিয়ন্ত্রণ করতাম। তাদের থেকে কোনো কুফরি মতবাদ জন্ম নেয়ার আগেই আমরা দমন করতাম। কুফরি কোনো চিন্তা মাথায় আসবে আর তা দশের সামনে বলে বেড়াবে- এই সুযোগই আমরা দিতাম না। উল্টো বরং তারা আমাদের অধীনে থেকে ইসলামের সৌন্দর্য দেখে দেখে উদ্বুদ্ধ হতো। তাওহিদ গ্রহণ করতো।
কিন্তু আমরা জিহাদ ছেড়ে দিয়েছি। কাফেরগুলো তাদের দেশে বসে বসে মাথা খাটিয়ে নতুন নতুন কুফর আবিষ্কার করেছে। যেখানে তারা আমাদের হাতে শাসিত হতো, সেখানে শুধু এতটুকুই নয় যে তাদেরকে আমরা অধীন করতে পারিনি, বরং তারা তাদের কুফরগুলো আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। এ হচ্ছে জিহাদ ছেড়ে দেয়ার শাস্তি। আমরা আমাদের দুনিয়া হারিয়েছি। এখন ঈমান হারানোর উপক্রম। আল্লাহর পানাহ। এই কুফর থেকে দুনিয়াকে পবিত্র করার ঔষধ একটাই: জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ।
وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّه لِلّهِ.
“তোমরা তাদের বিরুদ্ধে কিতাল কর, যতক্ষণ না ফিতনার অবসান হয় এবং আনুগত্য পূর্ণরূপে আল্লাহর হয়ে যায়।”- আনফাল: ৩৯
***
***
[1] الدر المختار وحاشية ابن عابدين (رد المحتار) (4/ 120): أَوْرَدَهُ بَعْدَ الْحُدُودِ لِاتِّحَادِ الْمَقْصُودِ، وَوَجْهُ التَّرَقِّي غَيْرُ خَفِيٍّ. ... (قَوْلُهُ لِاتِّحَادِ الْمَقْصُودِ) وَهُوَ إخْلَاءُ الْأَرْضِ مِنْ الْفَسَادِ ح (قَوْلُهُ وَوَجْهُ التَّرَقِّي) أَيْ مِنْ الْحُدُودِ إلَى الْجِهَادِ (قَوْلُهُ غَيْرُ خَفِيٍّ) ؛ لِأَنَّ الْحُدُودَ إخْلَاءٌ عَنْ الْفِسْقِ وَالْجِهَادَ إخْلَاءٌ عَنْ الْكُفْرِ ح. اهـ
Comment