অধঃপতিত জাতির অবাস্তব আশা
পুরো বিশ্বে আজ সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হচ্ছে মুসলিম জাতি। সংখ্যায় কত বেশি; অথচ বীরত্বে ও শৌর্য-বীর্যে কত দুর্বল! উম্মাহর ক্ষুদ্র একটি দল তবুও নিজেদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে লড়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমাদের মুসলিম দেশগুলোর শাসকেরা সব নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে। শয়ে শয়ে, হাজারে হাজারে শহীদ হচ্ছে, তবুও সবাই চুপ। সদ্যভূমিষ্ট শিশু থেকে নিয়ে বালক, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ কেউই বাদ যাচ্ছে না। অসুস্থ থেকে নিয়ে অসহায় অবলা নারীরা পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না। তবুও কারও ঘুম ভাঙছে না। সকলেই ব্যস্ত নিজেদের বিলাসিতার জীবন নিয়ে। শাসকশ্রেণীর পাশাপাশি জনগণের অধঃপতনও কম নয়। উম্মাহর এ সঙিন কালে তারা ব্যতিব্যস্ত খেলাধুলার আপডেট আর মুভি-সিনেমার গল্প নিয়ে।মূলত পঁচন ধরেছে একেবারে শেকড়ে, তাই আগায় পানি ঢেলে গাছ বাচানোর প্রচেষ্টা বৃথাই। এমন অধঃপতিত, উদাসীন আর কাপুরুষ উম্মাহ ইতিহাসে কখনো গত হয়নি। দিনে দিনে অনেক ঋণ জমেছে। এ ঋণ পরিশোধ হবে একমাত্র রক্ত দিয়ে। যত দেরি, দেনার পরিমাণ ততই বাড়বে। সন্দেহ নেই যে, এ জাতি যে রক্তিম পথ ধরে সম্মানিত হয়েছিল, তাদেরকে সে পথ ধরেই সম্মানের সিংহাসন উদ্ধার করতে হবে। এ ভিন্ন তাদের সামনে দ্বিতীয় কোনো পথ খোলা নেই।
স্বৈরাচারী কুফফার নেতৃত্বের পতন ও জায়নিস্ট ই.হু.দি.দের নিধনে অনেকে হাজ্জাজ বিন ইউসুফ, মু’তাসিম বিল্লাহ, এমনকি কেউ কেউ হিটলারের আগমন পর্যন্ত কামনা করে বসে আছে। অথচ এতে মুল সমস্যার কোনোই সমাধান হবে না। কেননা, যেখানে মুসলিমরা গভীর ঘুমে নিমজ্জিত এবং চরম উদাসীনতার চাদরে আচ্ছাদিত, সেখানে তাদের পক্ষ হয়ে লড়ে শত্রুদের নিধনে তাদের কী লাভ? তাদের ইমান-আকিদার সংশোধন কে করবে? তাদের ইবাদত-আমলের বৃদ্ধি কে ঘটাবে?? আর সোনালী অতীত স্মরণ করিয়ে তাদের হারানো শৌর্য-বীর্যই বা কে ফিরিয়ে আনবে??? অনেকে আবার অপেক্ষায় আছে আবাবিলের (ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিদের) আগমনের, যারা নুড়ি পাথর দিয়ে শত্রুদের ধ্বংস করে দেবে। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি যে, এটা কতটুকু বাস্তবসম্মত চিন্তা? আব্দুল মুত্তালিবের জামানায় তো বাইতুল্লাহর পক্ষে দাঁড়ানোর মতো জনবল ছিল না, কিন্তু আজকের যুগে দুই বিলিয়ন মুসলিমের অস্তিত্ব থাকতে আমরা কেন আকসার পক্ষে দাঁড়াতে পারছি না? কেন আমরা হারামাইনের মিম্বর থেকে প্রতিরোধের ডাক দিতে পারছি না?? কেন হাজার হাজার দারুল ইফতা থেকে জালিমদের বিরুদ্ধে ফতোয়া প্রকাশ করতে পারছি না???
একটা বিষয় খুব ভালোভাবে অনুধাবন করা দরকার যে, বদরের যুদ্ধে আসমান থেকে ফেরেশতারা তখনই নেমে এসেছিল, যখন জমিনের বান্দারা নিজেদের সর্বোচ্চ শক্তি-সামর্থ্য নিয়ে ময়দানে অবতীর্ণ হয়েছিল। বস্তুত নিজেদের জান-মাল কুরবানির নজরানা পেশ না করে কেবল আসমানি সাহায্যের অপেক্ষায় বসে থাকা হলো অনেকটা পাত্র ছাড়া বৃষ্টির পানি সংগ্রহের আশায় বসে থাকার মতো। কোনো কিছু করার সামর্থ্য না থাকার কারণে বসে থাকা আর স্রেফ খালিদ-তারিক ও সালাহুদ্দিনদের অপেক্ষায় বসে থাকার মাঝে পার্থক্য আছে। প্রথম অবস্থায় চিন্তাগত সমস্যা নেই; বরং সেখানে ওজর আছে। সে ওজর গ্রহণযোগ্য কি-না, সেটা ভিন্ন আলোচনা। কিন্তু দ্বিতীয় অবস্থায় আমাদের চিন্তাতেই সমস্যা। প্রথমে আমাদের চিন্তাগত দুর্বলতা খুঁজে বের করে সেটা দূর করার চেষ্টা করা উচিত। যদি দুর্বলতাই চিহ্নিত না হয় তাহলে সংশোধন কীভাবে হবে? মূল বিষয় হলো খালিদরা তো প্রতিটি যুগেই আসে, কিন্তু সমস্যা হলো, আমরা চিনতে ভুল করি। অতীত ইতিহাস নিয়ে আমরা খুব গর্ব করি, কিন্তু সে অতীতকে ধারণ করে যারা লড়াই করে, তাদেরকেই আমরা টেরোরিস্ট বলে গালি দিই! তাহলে এ জাতি কীভাবে খালিদ-তারিকদের চিনবে? আর কীভাবেই-বা তাদের নেতৃত্বে লড়বে??
আমাদের বোধদয় হবে কবে !!!
গত কয়েক মাসে ফিলিস্তিনের গাজায় যা ঘটছে, তা এককথায় অকল্পনীয়, অসহনীয় ও মানবতার সর্বোচ্চ লঙ্ঘন। ছোট্ট ছোট্ট শিশুদের ক্ষতবিক্ষত দেহ এবং একই মঞ্চে শত শত লাশ দেখার পর না কাজে মন বসে, আর না ভালোভাবে খাবার খাওয়ার রুচি থাকে। চোখ বেয়ে কেবলই তপ্ত অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। কখনোবা সিজদায় গিয়ে, আর কখনোবা হাত তুলে মহান রবের শাহি দরবারে কেবল ফরিয়াদটুকুই জানানো হয়। নিজেকে এতটা অসহায় লাগে, যা বলে বুঝানো সম্ভব নয়! ডায়াপার পরিহিত কয়েক মাস বয়সী শিশুদের খণ্ডিত ও ক্ষতবিক্ষত দেহ দেখে কারই-বা মাথা ঠিক থাকে! নিজেদের সন্তানদের কথা কল্পনা করলেও শরীর কেঁপে ওঠে। এরা কত আরামে ঘুম যায়, আর ওরা কতটা অসহায় অবস্থায় দিন কাটায়! আমরা রাতে পিঠ লাগাই নরম বিছানায়, আর তারা তপ্ত ইট-পাথরে ঘুমিয়ে রয়!! তবুও যেন আমাদের অভিযোগের অন্ত নেই!!! আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করুন এবং আমাদের অক্ষমতাকে প্রবল বিক্ষুব্ধ ঝঞ্ঝায় পরিণত করুন। (আমীন)
✍️
Collected
Comment