শাসন ব্যবস্থায় ইসলামকে নিচ্ছে না কেন তারা?
বাংলাদেশ এখন এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় পর করছে, যখন সবাই একটি জুলুমমুক্ত ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক শাসনব্যবস্থা ও সংবিধান চাচ্ছে। এবং ব্যবস্থাটি এমনই টেকসই ও স্থায়ী হোক চাচ্ছে যে, পরবর্তীতে যেন আর জুলুম কখনও ফিরে আসতে না পারে।
এখানে এসে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, ন্যায়ভিত্তিক যে সুন্দর ও স্থায়ী শাসনব্যবস্থাটি চাওয়া হচ্ছে, সে রকম কোনো শাসনব্যবস্থা এবং বিধি বিধান আসলে এই পৃথিবীতে আছে কি? নাকি এটি নতুন করে গবেষণা করে বের করতে হবে?
আপনি যদি এই প্রশ্নটি এদেশের মানুষের সামনে পেশ করেন, তাহলে দেশের প্রতিটি মুসলমান বলবে: আছে এবং সেটি হচ্ছে কুরআনের শাসন। চৌদ্দশ বছর আগেই রাব্বুল আলামীন মানবজাতিকে এই শাসনব্যবস্থা দিয়ে রেখেছেন এবং এর দিকে আহ্বান করছেন। এই শাসন ব্যবস্থায় দুনিয়াতেও শান্তি আসবে, আখেরাতের চিরকালের সফলতাও এই শাসনব্যবস্থার সাথেই জড়িত। সকল মানুষের চিরস্থায়ী শান্তি ও শাস্তির ফায়সালা কেয়ামতের দিন রাব্বুল আলামীন এই আইন দিয়েই করবেন। সেখানে মানুষের রচিত কোনো আইন কাজে আসবে না।
এখন প্রশ্ন, এই বিশ্বাস পোষণকারী মানুষের সংখ্যা এদেশে কত? উত্তর আসবে: শতকরা নব্বই ভাগ বা একটু কম বেশ। মুসলিম নামধারী কিছু স্যাকুলারকে যদি বাদ দেন, তাহলে এই সংখ্যা একটু কমতে পারে হয়তো।
এখন আরেকটি প্রশ্ন: গণতন্ত্রে একটি সরকার ক্ষমতায় আসতে শতকরা কত ভাগ ভোটের দরকার হয়?
ধরুন দেশে দুইটি জনপ্রিয় দলের মাঝে সুষ্ঠ নির্বাচন হলো। তাহলে যে দলটি পাশ করবে তারা অবশ্যই ষাট সত্তর ভাগের বেশি ভোট পাবে না? আর যদি তিনটি হয় তাহলে চল্লিশ পঞ্চাশ ভাগের বেশি পাবে না?
তাহলে দেখতে পাচ্ছি: চল্লিশ থেকে ষাট সত্তর ভাগ ভোটে একটা দল বৈধভাবে ক্ষমতায় আসতে পারে। তাহলে প্রশ্ন, নব্বই ভাগ লোক একটি শাসন ব্যবস্থার পক্ষে থাকার পরও সেটিকে রাষ্ট্রে স্থান দেয়া হচ্ছে না কেন? প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বর্তমান দেশে যারা একটি ন্যায়ভিত্তিক শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দায়িত্বে আছেন – এবং তাদের বেশির ভাগ নিজেদের মুসলমান দাবি করেন- তাদের কাছে প্রশ্ন: আপনারা কি বিশ্বাস করেন পৃথিবীতে একটি ন্যায়ভিত্তিক শাসন ব্যবস্থার কারিকুলাম আগে থেকে আছে?
যদি বলেন, নাই; তাহলে আপনি কাফের, তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
যদি থেকে থাকে তাহলে সেটি কোনটি? আপনি কি বিশ্বাস করেন সেটি রাব্বুল আলামীনের নাযিলকৃত কুরআনের শাসন?
যদি বলেন, না, সেটি কুরআনের শাসন নয়; তাহলে আপনি কাফের, তাতে কোনো সন্দেহ নাই।
আর যদি বলেন, সেটি কুরআনের শাসন; তাহলে প্রশ্ন: আপনারা সেটি নিচ্ছেন না কেন? এর বিপরীতে ইয়াহুদ নাসারাদের থেকে শাসনব্যবস্থা আমদানি করছেন কেন? তাহলে কি আপনি মুনাফেক? মুখে দাবি করছেন কুরআনের শাসন ন্যায়ভিত্তিক, কিন্তু আসলে আপনি সেটি বিশ্বাস করেন না, বরং আপনার বিশ্বাস হচ্ছে: কুরআনের শাসন বর্বর, সেকেলে, পশ্চাৎপদ; এর বিপরীতে পশ্চিমাদের তৈরি শাসন হচ্ছে ন্যায়ভিত্তিক?
সময় এসেছে পরিচয় দেয়ার: আপনি মুমিন না মুনাফেক!
***
আর যদি বলেন- যদিও তারা এটি কখনও বলে না- যে, আমরা কুরআনের শাসন চাই, কিন্তু আমেরিকা ও জাতিসংঘের কাছে আমরা যিম্মি, তারা আমাদেরকে কুরআনের শাসন নিতে দিচ্ছে না; তাহলে আপনি সরে পড়ুন। যারা কুরআনের শাসনের জন্য লড়াই করতে ও জীবন দিতে প্রস্তুত তাদের জায়গা করে দিন। আপনি যেটি পারেন না অহেতুক সেখানে আপনি গেলেন কেন এবং সেখানে থাকছেন কেন?
জাতি যদি আমেরিকা জাতিসংঘের হাতে যিম্মি হয়ে থাকে, তাহলে জাতিকে সেটি বুঝতে দিন। তা না করে জাতিকে বুঝানো যে, আমরা স্বাধীন- এটি জাতির সাথে গাদ্দারি। যদি পারেন জাতীয় বীর হোন, না হয় জাতিকে সিদ্ধান্ত নিতে দিন: তারা আমেরিকার হাতে যিম্মি হয়ে লাঞ্ছনার যিন্দেগী গ্রহণ করবে, নাকি তারা দ্বীন ও ঈমানের জন্য জিহাদ ও শাহাদাতের পথ বেছে নিবে।
এর আগে ইংরেজরা এসেছিল। মুসলমানরা বুঝেছিল, এরা আমাদের শত্রু, আমরা তাদের হাতে যিম্মি। উপমহাদেশের মুসলমানরা তখন জীবন দিয়ে হলেও ইংরেজদের বিতাড়িত করেছিল। বর্তমান উম্মাহর যুবকরা জিহাদ ও শাহাদাতের রাস্তা ও স্বাদ পেয়ে গেছে। এখনকার যুবকদের প্রতিরোধ ইংরেজদের সময়কার চেয়ে হাজারগুণে ভয়াবহ হবে। এখন এ পথে তারা অভ্যস্ত।
কাজেই যদি সৎ হয়ে থাকেন, সত্যিকারই মুসলমান হয়ে থাকেন, তাহলে হয় ইসলামের জন্য লড়াই করুন, সাহস না থাকলে সরে পড়ুন। জাতিকে উল্টা বুঝাবেন না, দাজ্জালী করবেন না, কাফেরদের দালালী করবেন না। নয়তো উম্মাহ আপনাদেরকে জাতীয় মুনাফেক এবং জাতীয় গাদ্দার হিসেবেই স্মরণ করবে।
***
Comment