নতুন বাংলাদেশ নতুন ফিতনা 01
আমার কাছে কেন জানি মনে হচ্ছে, মুজিবের বাকশালি একনায়কতান্ত্রিক জালেম শাসনের কবলে দাজ্জালের মিশনের দম বন্ধ হয়ে আসছিল, তাকে হত্যার পর জিয়ার হাতে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েমের দ্বারা দাজ্জালি ফেতনার দ্বার উন্মুক্ত হয়েছে। এইবারও হাসিনার ফ্যাসিবাদি শাসনের কবলে দাজ্জালের মিশনের দম বন্ধ হয়ে আসছিল, তার পতনের পর এবার যে অংশগ্রহণমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েম হতে যাচ্ছে, তাতে করে দাজ্জালের মিশন আরও এগিয়ে হওয়ার দ্বার খুলছে।
আপনাদের কাছে কথাটা আশ্চর্যের মনে হলেও আমার কাছে এমনই মনে হচ্ছে। চলুন একটু ব্যাখ্যা করা যাক।
আমরা যে যামানায় বাস করছি, কিংবা বলা যায় খেলাফত ব্যবস্থার পতন হওয়ার পর নিউ ওয়ার্লড অর্ডার ভিত্তিক যে শাসনব্যবস্থার যুগ শুরু হয়েছে, উলামায়ে কেরামের অনেকেই মনে করেন: এটিই হাদিসে বর্ণিত আখেরুযযামান তথা শেষ যামানা। এই যামানার সবচেয়ে ভয়াবহ বরং পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ফেতনা হচ্ছে দাজ্জালের ফেতনা। আরবিতে দাজ্জাল শব্দের অর্থ: মহা ধোঁকাবাজ। অর্থাৎ আখেরুযযামানের ফেতনাটা হবে ধোঁকার ফেতনা। যেই ফেতনায় মানুষ সামান্য দুনিয়ার বিনিময়ে ঈমান বিক্রি করে দিবে। যেখানে সকালে মুমিন থাকলে সন্ধ্যায় কাফের হয়ে যাবে, সন্ধ্যায় মুমিন থাকলে সকালে কাফের হয়ে যাবে। যে ফেতনায় দলে দলে মানুষ ইসলাম থেকে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে ইসলামের সোনালী যামানায় মানুষ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছিল।
ধোঁকার এই দাজ্জালি ফেতনা কিভাবে হবে? মানুষকে ধোঁকায় ফেলে দেওয়া হবে। যেমন ধরুন, একজন লোক বাজারে গেল দুধ কিনতে। এক দুধ বিক্রেতা দুধে পানি মিশিয়ে পাশাপাশি কিছু আটা আর সরিষার তেল বা এ জাতীয় কিছু একটা মিশিয়ে দুধটাকে ঘন ও লাল বানিয়ে ফেললো, আর লেকচার দিতে লাগলো: খাঁটি চাইলে এদিকে আসেন। ক্রেতা ধোঁকায় পড়ে গেল। মনে করলো এটাই বুঝি খাঁটি দুধ। যে ঘন আর লাল দেখাচ্ছে। কিনে নিলো। ধোঁকাগ্রস্ত হলো।
এমনিভাবে আখেরুযযামানের ফেতনা। মানুষকে বুঝানো হবে, দেখানো হবে একরকম; বাস্তব আরেকরকম। মানুষ ধোঁকায় পড়ে যাবে।
এবার মুজিব আর হাসিনার কথাটা ব্যাখ্যা করি।
মুহতারাম ভাই, এই যামানায় সবচে বড় দাজ্জালি ফেতনা হলো: স্বাধীনতা। স্বাধীনতার স্লোগানের আড়ালে মানুষকে করা হলো পরাধীন। আল্লাহর দাসত্বের আশ্রয় থেকে বের করে মানুষরুপী শয়তানদের দাসত্বের জিঞ্জির পরানো হলো মানবজাতীর গলায়। অজান্তেই কেড়ে নেওয়া হলো ঈমান। তাও করা হলো স্বাধীনতার স্লোগানের আড়ালে। মানুষ স্বাধীন। তার উপর কেউ কিছু চাপাতে পারে না। কোনো ধর্ম তার উপর কোনো বিধি নিষেধ চাপাতে পারে না, তা হয়ে যাবে মুক্তচিন্তার পরিপন্থী। পশ্চিমারা এসেছে স্বাধীনতার ফেরি করতে। রাব্বুল আলামীনের বিধি নিষেধ থেকে স্বাধীন করে নফস, কুপ্রবৃত্তি ও শয়তানের দাস বানাতে। তারই মতো আরও কতক মানুষরুপী শয়তানের দাস বানাতে। স্বাধীনতার নামে পরাধীনতা। স্বাধীনভাবে জাহান্নামে পৌঁছে যাওয়ার প্রতিযোগিতা।
স্বাধীনতার এই স্লোগান মানুষের কুপ্রবৃত্তির চাহিদার সাথে মিলে গেল শতভাগ। দলে দলে মানুষ সাড়া দিল এই ডাকে। মানুষ গা ভাসিয়ে দিল স্বাধীনতায়। শুধু তাই নয়, এই স্বাধীনতার বুলিকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবেও প্রতিষ্ঠা করা হলো দার্শনিক, কবি সাহিত্যিক ও মিডিয়ার মাধ্যমে। রাজনৈতিকভাবেও চাপিয়ে দেওয়া হলো এই মতবাদ। প্রতিষ্ঠা করা হলো, স্বাধীন (!!) গণতন্ত্রের শাসন। মত প্রকাশের (!!) শাসন। ধর্ম মানুষের নাকি টুটি চেপে ধরেছিল, গণতন্ত্র দিল স্বাধীনতা। মানুষ স্বাধীন থাকতে চায়, ধর্মের পোপতন্ত্রে (!!) ফিরে যেতে চায় না। এখন ধর্মীয় শাসনের কথা বললে জঙ্গি সন্ত্রাসী।
এভাবে এই বৈশ্বিক নিউ ওয়ার্লড অর্ডার মানুষকে স্বাধীনতা ও মুক্তির নামে ধর্মের বন্ধন থেকে বের করে বেইমান বানানোর মিশনে নামলো। এর জন্য প্রয়োজন ছিল মানুষকে স্বাধীনভাবে বিচরণ করার সুযোগ দেওয়া এবং স্বাধীনভাবে নিরাপত্তার সাথে প্রবৃত্তির সকল চাহিদা পূরণের সুযোগ দেওয়া, মত প্রকাশের নামে সকল ধর্মহীনতা চর্চার নিরাপদ ব্যবস্থা করে দেওয়া। এমন একটা শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা, যেখানে একটা মানুষ তার সকল হারাম চাহিদা পূরণের অবাধ সুযোগ পাবে, সকল কুফরি ও নাস্তিকতা বলার ও প্রকাশ করার সুযোগ পাবে এবং তা করবে স্বাধীনতার নামে। তাকে বুঝতে দিতে হবে সে স্বাধীন আর স্বাধীনভাবে সে সব করার সুযোগ পাচ্ছে। এই স্বাধীনতা তার অধিকার। এই ধরনের স্বাধীন শাসনের বিরুদ্ধে মানুষ কেন যাবে? তাকে শুধু প্রবৃত্তির চাহিদা পূরণে ব্যস্ত রাখতে পারলেই হলো।
স্পষ্ট যে, মুজিবের মতো বাকশালী ও হাসিনার মতো ফ্যাসিবাদি শাসনে মানুষকে এভাবে ধোঁকা দেওয়া সম্ভব না। এসব শাসনব্যবস্থায় মানুষ নিজেকে পরাধীন ভাবে। এই পরাধীনতায় সে ধর্ম-কর্মে স্বাধীনতা খোঁজে। উলামায়ে কেরাম মানুষকে বুঝাতে পারে যে, এই শাসনে তারা পরাধীন, আর ইসলামে রয়েছে তাদের স্বাধীনতা। কাজেই এই বাকশালি আর ফ্যাসিবাদি শাসনব্যবস্থা দাজ্জালের মিশনের পথে অনেক বড় অন্তরায়।
Comment