নতুন বাংলাদেশ নতুন ফিতনা (02)
আলোচনা চলছিল, নতুন বাংলাদেশে আখেরুযযামানের দাজ্জালী ধোঁকার ফেতনা নিয়ে।
ফেতনা কাকে বলে? ফেতন হলো, মানুষ দ্বীন থেকে দূরে সরে যাওয়া।
পক্ষান্তরে দ্বীনের উপর অটল থেকে দ্বীনের জন্য জীবন দেয়া বা নির্যাতন সওয়া- এটা ফেতনা নয়, কুরবানি। অবশ্য আজ দাজ্জালের ধোঁকায় পড়ে আমরা দ্বীনের জন্য কুরবানি দেয়াকেও ফেতনা মনে করছি। কোনো মুসলিম তরুণ গ্রেফতার হয়ে রিমান্ড– এ গেলে বলতে শোনা যায়: কেন গেল এত কথা বলতে! অল্প বয়সে জীবনটা নষ্ট হলো! - দ্বীনের জন্য জীবন বিসর্জন দেয়াটাকে ফেতনা মনে করা হলো। পক্ষান্তরে দ্বীনের অপমান দেখেও চুপচাপ দুনিয়া কামাই করা, জীবন গড়া, ভোগ করতে থাকা সফলতা। আল্লাহ তাআলা আমাদের দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন।
তো এই যে দ্বীন থেকে দূরে সরে যাওয়া এটা কিভাবে সহজে হবে?
দেখুন জোর-জবরদস্তি শক্তি প্রয়োগ করে মানুষকে তার বিশ্বাস থেকে সরানো সহজ না। মানুষ যতদিন তার আদর্শে বিশ্বাসী থাকে, অটল অবিচল থাকে, বিশ্বাসে চিড় না ধরে: ততদিন তাকে শুধু শক্তিবলে বিচ্যুত করা যায় না।
ইসলামের সোনালী খেলাফতের যামানাগুলোতে মুসলমানরা তাদের আদর্শে অটল ছিল। কাফেরদেরকে ভাবতো দুশমন। আল্লাহ ও রাসূলের দুশমন। দ্বীনে ইসলামের দুশমন। কাফেরদের সাথে চলে আসছিল আপোষহীন জিহাদ-লড়াই। কাফেররা যতই শক্তি নিয়ে আসুক, এমনকি যতই অত্যাচার করুক- মুসলিমদেরকে দ্বীন থেকে সরানো সহজ ছিল না। হাজারে হাজারে লাখে লাখে মুসলমান শহীদ হয়েছে তথাপি ঈমান ছাড়েনি, বরং শহীদ হওয়াকে পরম পাওয়া মনে করতো। জীবন দিতো তবুও ঈমান ছাড়তো না। কারণ তারা ঈমান নিয়ে গর্ব করতো, কাফেরদেরকে দুশমন ভাবতো।
এমনকি এই যে সেদিনও ইংরেজরা এ উপমহাদেশে মুসলিম নির্যাতনের ইতিহাস তৈরি করে গেল, তথাপি মানুষ ঈমান থেকে বিচ্যুত হয়নি। ইংরেজদেরকে দুশমন ভাবতো। তাদের হাতে মরে যাওয়াকে ঈমান ত্যাগ করার চেয়ে প্রিয় মনে করতো। এতো নির্যাতনের পরও উপমহাদেশের মুসলমানদের তারা বেইমান বনাতে পারেনি। ফলে তারা নতুন কৌশল অবলম্বন করলো। দাজ্জালি ধোঁকার কৌশল।
প্রিয় ভাই,
ধরুন দু'জন মুসলিম। একজনকে অস্ত্রের মুখে ঈমান ত্যাগ করতে বলা হলো কিন্তু সে ত্যাগ করলো না, তাকে হত্যা করে দেয়া হলো। আরেকজনের মগজ ধোলাই করা হলো। সে একসময় ইসলামকে বর্বরতা মনে করে বেইমান হয়ে গেল (নাউযুবিল্লাহ)! কাফেররা তাকে বাহবা জানিয়ে বরণ করে নিলো। দুনিয়াবি অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাকে সুখের জীবনের সুযোগ দেয়া হলো। অবশেষে এই কুফর অবস্থায় সে মারা গেল।
দুজনের মধ্যে যাকে হত্যা করা হলো সে ফেতনাগ্রস্ত হয়নি। সে জীবন দিয়ে দিলো। সে জান্নাতি। পক্ষান্তরে যে ধোঁকায় পড়ে ঈমান ত্যাগ করলো সে ফেতনাগ্রস্ত, ক্ষতিগ্রস্ত, জাহান্নামী। শক্তিবলে দুশমনেরা যে সফলতা পাচ্ছিল না, ধোঁকায় ফেলে তারা সে সফলতা পেয়ে গেল।
ধরুন দু'জন তরুণী। একজন আল্লাহর ভয়ে যিনার প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করলো ফলে তাকে জবরদস্তি ধর্ষণ করা হলো। সে ফেতনাগ্রস্ত হয়নি। সে এই অপমানের বদলা আল্লাহর কাছে পাবে।
আরেকজনের মগজ ধোলাই করা হলো। বুঝানো হলো, পছন্দের যে কারও সাথে বিছানায় যাওয়া তার অধিকার। ফলে সে শুধু যিনায়ই লিপ্ত হতে থাকলো না, যারা তাকে বারণ করে তাদেরকে তার শত্রু ও সেকেলে ভাবতে লাগলো। ইসলামের বেত্রাঘাত ও প্রস্তর নিক্ষেপে হত্যার বিধানকে বর্বরতা ভাবতে লাগলে। সে ফেতনাগ্রস্ত হলো। ঈমান হারালো। চিরস্থায়ী জাহান্নামী হলো।
এরই নাম আখেরুযযামানের দাজ্জালি ধোঁকার ফেতনা। হাজার বছরে অস্ত্র বলে যে সফলতা তারা পায়নি, ধোঁকার রাস্তায় মগজ ধোলাই করে তারা সে সফলতা পেয়ে গেল।
মুজিব ও হাসিনার আওয়ামী নিষ্পেষণের সময় মানুষ যতটা না ফেতনাগ্রস্ত হয়েছে, এখন নতুন স্বাধীন (!!) সম্প্রীতির (!!) বাংলাদেশে তারচেয়ে বড় ফিতনার কালো মেঘ দেখা যাচ্ছে।
ঈমান গড়ি স্লোগান না হয়ে দেশ গড়ি স্লোগান হচ্ছে।
মুসলিম পরিচয় আগে না হয়ে বাংলাদেশি পরিচয় আগে হচ্ছে।
ঈমান ও কুফরের সীমারেখা উঠতে শুরু করেছে।
হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই হয়ে যাচ্ছে।
সংখ্যালঘু নামে কোনো শব্দই আর থাকছে না।
ঈমানের জন্য জীবন দেওয়ার পরিবর্তে দেশের জন্য জীবন দেওয়ার মানসিকতা আসন করে নিতে শুরু করেছে।
তদুপরি যে শাসনব্যবস্থা, যে প্রশাসন ও যে বাহিনিকে এতদিন মানুষ ঘৃণা করতো - এখন আপন ভাবতে শুরু করেছে।
মুসলিমরা আওয়ামীদেরকে ইসলামের দুশমন, ভারতের দালাল ভাবতো। ফলে তাদের অনেক স্লোগানই মুসলিমরা কবুল করেনি। কিন্তু এখন নতুন বাংলাদেশ। এখন সবার বাংলাদেশ। এক মোহ আর এক আবেশের প্রচ্ছন্নতার মধ্য দিয়ে এখন সকল স্লোগান যেন মানুষ অবলীলায় গিলতে শুরু করেছে। এক সময় যেগুলো আওয়ামী স্লোগান ছিল, এখন জনতার স্লোগান হয়ে যাচ্ছে। এরই নাম দাজ্জালি ধোঁকা। সতর্ক থাকো হে মুসলিম ভাই! আল্লাহ তোমার সহায়।
***
Comment